দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ পর্ব ৬+৭+বোনাস

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ৬

জানালা দিয়ে হালকা সূর্যের একটা আলো ওদের গায়ের উপর এসে পড়লো।পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনা যাচ্ছে।কিনারার ঘুমটা ভেঙে গেলো,ও দেখলো সাদিত ওকে জাপ্টে ধরে শোয়ে আছে,সাদিতের গরম নিশ্বাস কিনারার ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।সাদিত একদম কিনারার কাঁধের কাছে নিজের মুখটা রেখে ঠিক ওর পাশেই ওকে জড়িয়ে ধরে শোয়ে আছে। সাদিত যেভাবে কিনারাকে নিজের কাছে৷ টেনে নিয়েছে,তাতে কিনারার ছোট্ট শরীরটা আরও গুটিয়ে-শুটিয়ে ছোট্ট শিশুর মতো হয়ে আছে। সাদিতের প্রতিটা নিশ্বাস যখন কিনারার কাঁধের উপর আছড়ে পড়ছে তখন মনে হচ্ছে কেউ নিজের আঙুল দিয়ে, কিনারার কাঁধে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কিনারা একটু নড়ে উঠতেই, সাদিত ঘুমের ঘোরে ওকে বুকের কাছে টেনে এনে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

কিনারা ভাবলো সাদিত হয়তো জেগে আছে, তাই ওকে ছাড়ানোর জন্য আস্তে করে ডাক দিলো,মিস্টার চৌধুরী, মিস্টার চৌধুরী। বাট সাদিতের কোনো রেসপন্স পেলো না,কিনারা দেখলো সাদিত তখনো কিনারাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েই আছে,হয়তো সত্যিই ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরেছে।

কিনারা দেখলো সাদিতের ব্রাউন কালারের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালের সাথে লেপ্টে আছে,তারপর হঠাৎই কিনারার চোখ পড়লো সাদিতের চেরির মতো লাল টুকটুকে ঠোঁটের উপর।ইসস একটা ছেলের এতো সুন্দর ঠোঁট কখনো হয় নাকি।শুধু ঠোঁট কেন উনার সবকিছুই সুন্দর, কিনারা নিজেও যথেষ্ট সুন্দরী, যে কেউ দেখলেই পাগল হবে,তবুও সাদিতের সৌন্দর্যের কাছে কিনারা যেনো কিছুই না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে কিনারার হাতটা সাদিতের ঠোঁটের উপর চলে গেছে কিনারা বুঝতেই পারলো না।যখন কিনারার হুস ফিরলো তখন সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে নিলো,তারপর মনে মনে ভাবলো,এই রে কি করতে যাচ্ছিলাম।মিস্টার চৌধুরী যদি জেগে যেতেন,তাহলে তো৷ আমাকে আবার লজ্জায় ফেলতেন।।যাই বাবা ভালোয় ভালোয় এখন উঠে পড়ি, উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন।এই ভেবে কিনারা আস্তে করে নিজের উপর থেকে সাদিতের হাতটা সরালো,তারপর খুব সাবধানের সাথে উঠে বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

বাথরুম থেকে বের হতেই কিনারা দেখলো সাদিত কার সাথে জানি ফোনে কথা বলছেন।কিনারা অতো গুরুত্ব না দিয়ে বারান্দায় গিয়ে তোয়ালেটা মেলে দিলো,তারপর রুমে প্রবেশ করতেই সাদিত বলে উঠলো — কিনারা

জি বলুন মিস্টার চৌধুরী।

বলছি কি আজ বাবা মা লন্ডন থেকে দেশে ব্যাক করবেন। আমি চাই আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক উনারা যেনো তা জানতে না পারে।আমি উনাদের জানিয়েছি আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি আর উনারা তা মেনে নিয়েছেন।তো তুমি উনাদের নিজের বাবা মার মতো সম্মান করবে।

কিনারা মাথা নেড়ে হুম বলল।তারপর কিনারা নিচে চলে গেলো।

সাদিত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো,এমন সময় কিনারা কফি নিয়ে রুমে ঢুকলো।তারপর সাদিতকে উদ্দেশ্য করে বলল আপনার কফি। বলে কফির মগটা টেবিলের উপর রাখলো।

সাদিত কফির মগটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে —
সাদিত ওর ডেবিট কার্ডটা কিনারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে। স্নেহের সঙ্গে কিনারার হাতের মুঠোর উপর চুমু খেলো। খেয়ে বলল এই কার্ড টা তোমার কাছে রাখো,আজ থেকে এটা তোমার।এটা দিয়ে তুমি যত খুশি খরচ করতে পারবে,তোমার যখন যা প্রয়োজন হবে এটা দিয়ে খরচ করতে পারবে।যদি আরও দরকার পড়ে অবশ্যই আমাকে জানিও কেমন।

কিনারা কার্ডটার দিকে তাকিয়ে বলল মিস্টার চৌধুরী এটা আপনার কাছে রাখুন। আমার প্রয়োজন নেই। আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো।আমার তেমন দরকার পড়বে না,তার থেকে বরং আপনি এটা আপনার কাছে রেখে দিন।

দেখো কিনারা তুমি যদি আমার টাকা পয়সা খরচ করতে না চাও তাহলে আমি এরকম একজনকে রাখতে পারি যে তোমাকে শিখিয়ে দিবে কিভাবে ব্যয়বহুল হতে হয়।

সাদিতের এধরণের কথা শুনে কিনারা একটি চমকে গেলো,, মনে মনে ভাবলো–এটা এবার কি ধরনের কথা আমাকে এখন অন্যের থেকে শিখতে হবে যে কিভাবে ব্যয়বহুল হতে হয়।

কিনারাকে চুপ করে থাকতে দেখে সাদিত বলে উঠলো — দেখো কিনারা একজন পুরুষ এটা ভেবে উপার্জন করে যে,,,তার উপার্জনের উপর তার স্ত্রী যাতে সম্পূর্ণ অধিকারটা থাকে।সে যাতে নিজের জন্য কিছু খরচা করতে পারে।আর এখন যদি তুমি সে উপার্জন থেকে খরচা না করো।তাহলে আমার মনে হবে, আমি আমার জীবনে যে টুকু অর্থ উপার্জন করেছি তা হয়তো যথেষ্ট নয়,তার পাশাপাশি আমার এটাও মনে হবে যে তুমি হয়তো এখনো আমাকে স্বামী হিসেবে এখনো মেনেই নিতে পারোনি।

সাদিতের কথা শুনে কিনারা যে ঠিক কি উত্তর দিবে।ভেবে পেলো না।তাই কিনারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

সাদিত কিনারাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে, সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে কিনারার মাথাটা বুকে টেনে নিলো।সাদিত ওকে কাছে টেনে নিতেই কিনারা সাদিতের শরীরের সেই উষ্ণতা আবারো অনুভব করলো। সাদিতের শরীরের সেই সুবাস আবারো কিনারার নাকে পৌঁছাতেই যেনো কিনারাকে উম্মাদ বানিয়ে দিলো।

কিছুক্ষন পরে কিনারা সাদিতের এক্ট্রাকটিভ গলার আওয়াজে ধ্যান ফিরল।

সাদিত বলল তুমি ঘাবড়ে যাবে না, তুমি এখন সাদিত চৌধুরীর স্ত্রী। তুমি এসব কিছুর যোগ্য,তুমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে তুমি কাকে বিয়ে করেছো।তোমার এখনো অনেক কিছু পাওয়ার বাকি।আমার যা আছে সবই তোমার।আস্তে আস্তে ব্যাপার গুলো সয়ে যাবে তোমার।কথা গুলো যেনো সাদিত কিনারার একদম কানের কাছে গিয়ে বলল।সাদিতের নরম ঠোঁট দুটো কিনারার কানকে স্পর্শ করলো।

কথা গুলো বলার সময় সাদিতের গরম নিশ্বাস কিনারার কাঁধের উপর এসে পড়লো।কিনারার কানে সাদিতের ঠোঁট দুটোর ছোঁয়া লাগতেই, কিনারার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ যেগে উঠলো।

সাদিত আর কিনারা একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকার কারণে, সাদিতের শরীর থেকে এক সুন্দর সুবাস কিনারার নাকে এসে পৌঁছলো, গন্ধটা পেতেই কিনারা যেনো মাতোয়ারা হয়ে গেলো। কিনারা ভাবতে লাগলো সাদিত ঠিক কোন পারফিউম ইউস করে।গন্ধটা যেনো কিনারাকে এক্কে বারে পাগল করে দিচ্ছে।

সাদিত এতো কাছে আসায় কিনারা যেনো নিজেকে সামলাতে পারছিলো না।কিনারার হার্টবিট এতো জোরে ছুটছিলো যে কিনারা নিজেরই তার গতি ফিল করতে পারছিলো না।কিনারার নিজের বুকেরই ধরফরানি যেনো কিনারার কানে এসে পৌঁছে ছিলো।কিনারা এ অবস্থায় নিজেকে ঠিক কিভাবে সামলাবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না।কিনারা একটু ঘুরে গিয়ে সাদিতকে সরে যেতে বলবে।ঠিক এমন সময় একটা কান্ড ঘটলো।সাদিত কিনারার এতোটাই কাছে ছিলো।কিনারা সাদিতের দিকে ঘুরতেই কিনারার ঠোঁট গিয়ে পড়লো সাদিতের গালে।ব্যাপারটা যদিও অনিচ্ছাকৃত তবুও সাদিতের কাছে ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগলো।

কিনারা ঘাবড়ে গিয়ে এক লাফে খাটে গিয়ে বসলো।কিনারা খুব অবাক হয়ে গেলো ওর মুখ থেকে আর একটা কথাও বের হলো না।—–
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ৭

যবে থেকে সাদিত কিনারাকে জানিয়েছে যে ওর বাবা মা আসবে। তখন থেকেই কিনারা কেমন জানি নার্ভাস ফিল করছে।মনের ভিতর কেমন জানি ধুকপুক করছে।সন্ধ্যার পর কিনারা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ফল খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।এমন সময়,কলিং বেলটা বেজে উঠলো।সঙ্গে সঙ্গে কিনারার মনে ধক করে উঠলো।ফলের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে ঘুরে তাকালো,দেখলো একজন মধ্য বয়সের একটা লোক, বয়স খুব জোর বেশি হলে ৬০ হলেও দেখতে খুবই ইয়াং।খুব সুন্দর ভাবে সেজে রয়েছে ভদ্রলোকটি।টিকালো নাকের উপর একজুড়া সোনালি ফ্রেমের চশমা,কালো সুট সাদা শার্ট।ভিষন জেন্টাল।
তার পিছু পিছু একটা ভদ্র মহিলা এসে দাঁড়ালেন।উনার বয়স হবে ৫০ কিংবা তার একটু বেশি।বয়স বাদ দিয়ে দেখলে ভদ্র মহিলা খুবই সুন্দরী বলা যায়।এ বয়সে যেমন সুন্দর উনার মুখ, তেমন সুন্দর উনার ত্বক।কিনারা জীবনে অনেক মধ্য বয়ষ্ক মহিলা দেখেছে কিন্তু এনার মতো কাউকে দেখে নি।এ বয়সে উনার সৌন্দর্য আর ফিট খুব কম মানুষেরই হয়।

এনাদের পিছনে সাদিত এসে দাঁড়াতেই কিনারার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এনারা সাদিতের বাবা মা।

উনারা কিনারার কাছে এসে দাঁড়াতেই কিনারা মিস্টার সাইফ চৌধুরী (সাদিতের বাবা) আর সাদিয়া চৌধুরীকে (সাদিতের মাকে) সালাম করলো।আসসালামু আলাইকুম আব্বু। আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

উনারা কিনারাকে দেখে ভ্রুরু কুচকে সালামের উত্তর দিলেন ওয়ালাইকুম আসসালাম।

কিনারা উনাদের মুখের এক্সপ্রেসন দেখে ঘাবড়ে গেলো।কিনারা কেমন জানি আনইজি ফিল করতে শুরু করলো।

কিনারাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে মিস্টার সাইফ চৌধুরী আর সাদিয়া চৌধুরী হেসে উঠলেন।

সাদিয়া চৌধুরী বলে উঠলেন — বাহ আমার ছেলেটার চয়েস আছে বলতে হবে।এতোদিন বিয়ে না করে দেখছি ভালোয় করেছিস।এতো দিন এতো বিয়ে করার জন্য এত্তো তাড়া দিয়েছি,বলেছি আমাদের বিজনেসের জন্য তোর পাপার সাথে বাইরে থাকতে হয়।একা একা তুই, তোকে টেককেয়ার করার জন্য কাউকে প্রয়োজন বিয়ে কর।কিন্তু ছেলেটা যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতো তা আমরা বুঝতে পারিনি।

ঠিক বলেছো সাদিয়া,সাদিত কিনারার ব্যাপারে যা বলেছিলো,ও তার থেকে বেশি মিষ্টি একটা মেয়ে। আমাদের কাজ পাগল ছেলে এতোদিনে একটা কাজের কাজ করেছে।

উনাদের কথা শুনে কিনারা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।

সাদিত বলল হয়েছে হয়েছে, এসে যখন পড়েছো কথা বলার অনেক টাইম পাবে,এখন উপরে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

তারপর উনারা উপরে চলে গেলেন।

🍁🍁🍁🍁🍁

সবাই রাতে খেতে বসলো। খেতে খেতে সাদিতের বাবা সাদিতের উদ্দেশ্যে বলল——- সাদিত তোরা হঠাৎই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলি হুট করে। আমাদের তো জানাতে পারতি।আমরা কি মেনে নিতাম না। আমরা তোদের ধুমধামে বিয়ে দিতাম।আমাদের একমাত্র ছেলে তুই তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের কত্ত স্বপ্ন।কত্ত লোকজনকে ইনভাইট করা হতো৷ বলতো।সেখানে কেউই জানেনা। আমার ছেলে বিয়ে করেছে।

সাদিত বলল সমস্যা নেই, সামনে বছর বিয়ের আর আমাদের বাচ্চার একসাথে ধুমধামে সেলিব্রেট করবা।

সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল–বলে খাবার মুখে দিলো।

এদিকে সাদিতের এমন কথা শুনে কিনারা বিষম খেলো।আর মনে মনে বলল মিস্টার চৌধুরী কি একটুও ভদ্র ভাবে কথা বলতে পারেনা।মুখে যা আসে তাই বলে দেই।একবার বুঝতে ও পারেনা।এতে সবাই কি ভাববে।কিনারা বিষম খেয়ে কাশতে কাশতে সাদিতের দিকে একটু ভ্রুরু কুঁচকে তাকালো।

সাদিয়া চৌধুরী একবার কিনারার দিকে তাকিয়ে আবার সাদিতের দিকে তাকালো তাকিয়ে বলল– সাদিত একটু নরমাল ভাবে কথা বলা যায়না।এতো বড়ো হয়েছিস আর এটা জানিস না যে কখন কোথায় কি কথা বলতে হয় বুঝিস না নাকি।

সাদিত খেতে খেতে বলল — কেন আমি কিছু ভুল বললাম নাকি।বিয়ে যেহেতু করেছি আজ না হয় কাল বাচ্চা তো হবেই।এটাকে নরমাল ভাবে নিলেই তো হয়।

সাদিত কিনারার দিকে তাকাতেই দেখলো,কিনারা একটু রেগে গেছে।রাগে কিনারার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। তাও ওকে খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।

সাদিত খেতে খেতে কিছুক্ষন একভাবে কিনারার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

মিসেস সাদিয়া চৌধুরী বিষয়টা ঠিক বুঝতে পেয়ে,কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলেন।

খাবার শেষে কিনারা রুমে এসে রাগে গজগজ করছে।আসলে সাদিতের বাবা মার সামনে বাচ্চার কথাটা বলাই
কিনারা ভিষণ লজ্জা পেয়েছে,সাদিত উনাদের সামনে কিনারাকে লজ্জায় ফেলায়, সাদিতের উপর রেগে যায় কিনারা।

সাদিত রুমে এসে দেখলো কিনারা পায়চারি করছে,আর একা-একা বকবক করছে। কিনারার রাগীলুক দেখে সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে এক টানে কাছে টেনে নিলো।সাদিত কিনারাকে কাছে টেনে নিতেই কিনারার খোপা খোলে সারা পিঠ চুলে ভরে গেলো।কিনারার লম্বা হালকা কার্লি চুল কোমড় ছড়িয়ে গেছে।যা কিনারাকে খুবই মায়াময়ী লাগছে।সাদিত কিনারার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে, ওর একটা হাতের আঙুল দিয়ে কিনারার মুখের উপর আসা চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল কিনারা তুমি কি জানো রাগলে তোমায় ভিষণ মিষ্টি লাগে।

কিনারা নিজেও জানে ও যতই রেগে যাক না কেন ওকে দেখতে মিষ্টি লাগে ।ও যেনো ছোট্ট এক বিড়াল ছানার মতো, যতই রেগে থাকুক,লোকজন তাও ওকে আদর করবে।

সাদিত আবার বলে উঠলো — ইচ্ছে করে তোমার ওই লাল টুসটুসে গাল দুটো আপেলের মতো কামড়ে খেয়ে ফেলি।

এসব কথা শুনে কিনারার মুখখানা আরও লাল হয়ে গেলো।খুব লজ্জামিশ্রিত একটা স্বরে কিনারা নিজের মুখ লুকিয়ে উত্তর দিলো উফফ প্লিজ— আপনি এসব ঠোঁট কাঁটা কথা বলা প্লিজ বন্ধ করুন।

সাদিত যেভাবে কিনারাকে ধরে, এসব কথা বলছিলো তাতে কিনারা খুব লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলো।

সাদিত আর একটা কথা না বলে, কিনারাকে ছেড়ে দিলো।

সাদিত গিয়ে শোয়ে পড়লো,কিছুক্ষন পর কিনারাও মুখ ঘুরিয়ে বেডসীট টা গায়ে জড়িয়ে শোয়ে পড়লো।কিনারা শোতেই সাদিত ওকে টেনে একদম নিজের কাছে এনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল বাব-বাহ্ বউটার দেখছি অনেক লজ্জা।

কিনারা কিছু না বলে সরে যেতে নিলেই, সাদিত কিনারার হাত ধরে আটকায়।।আটকিয়ে বলে উঠলো— চুপচাপ আমাার বুকে ঘুমাও।

কিনারা বলল — আপনি ছাড়ুন, আমার এভাবে ঘুম আসতে কমফোর্টেবল না।ঘুম আসবে না আমার।ছাড়ুন আমাকে।

হিসসস—চুপ একদম নড়বে না,,তুমি এখানেই ঘুমাবে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।না ঘুমালে অভ্যাস হবে কি করে।তো চুপচাপ ঘুমাও।

কিনারা এতোবার বলার পরও সাদিত ওকে ছাড়লো না।

কিছুক্ষন পর সাদিতের প্রতিটা নিশ্বাসের আওয়াজ কিনারার কানে ভাসছে। তার সাথে হালকা ড্রিম লাইটের আলোটা যেনো আরও স্বপ্নের মতো করে দিয়েছে।

কিনারা সাদিতের দিকে লক্ষ্য করে দেখলো সাদিতের হাতের যে ওজন,তা মনে হচ্ছে কিনারাকে পুরোপুরি পিষে ফেলবে।সাদিতের হাতের মাসলগুলোর কতো ওজন হবে তা কিনারা গননা ও করতে পারলো না।কিছুক্ষন একভাবে দেখে,কিনারার মনে হলো এভাবে কেউ ঘুমায়,আমাকে জড়িয়ে ধরার সময় উনার একবারও মনে হয়নি যে ওর হাতের ওজন কতখানি, কিনারা আদৌও সহ্য করতে পারবে কিনা।

কিনারার মনে হলো সাদিতকে এক ধাক্কায় ঠেলে সারিয়ে দিতে,বাট সাদিতের যা বডি ওর হাতটা সরানোর শক্তিটাও কিনারার নেই।

তাই কিনারা সাদিতকে ডাক দিলো মিস্টার চৌধুরী — ঘুমিয়ে পড়েছেন।কিনারা আবার ডেকে উঠলো।

বাট সাদিতের কোনো হেলদোল নেই।

কিনারা সাদিতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ মেলে দেখতে থাকলো।কিনারা দেখলে সাদিতের এই শরীরের কাছে অন্যান্য ছেলের জিম করা বডিও হার মানবে।তারপর সাদিতের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বুঝলো সত্যিই সাদিত হয়তো ঘুমিয়ে গেছেন।উনার কোনো রকম হেলদোল নেই। দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এমন শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে।

কিনারা কিছুক্ষন ওভাবেই থেকে সাদিতের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো।
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃবোনাস_পার্ট

পরদিন সাদিত রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।কিনারা সাদিতকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।সাদিত একটা দামী সুট পড়ে নিচে নামলো।ওই সুট টা সাদিতকে খুবই অ্যাট্রাক্টিভ লাগছিলো।ওর থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিলো না।ওর কাঁধ, কোমড়,পা সবকিছু যেনো একদম পারফেক্ট লাগছিলো।ঠিক যেরকম মডেলদের দেখতে লাগে। সাদিতের সুন্দর মুখটার দিকে তাকাতেই কিনারার৷ আবার হার্টবিট বেড়ে গেলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে ড্রাইভার এসে বলল,স্যার গাড়ি রেডি আছে।সাদিত সুটের বোতাম লাগাতে লাগাতে কিনারার কাছে এসে বলল— চল বেরোনো যাক, তোমাকে আমি হসপিটালে ছেড়ে দিচ্ছি।

কিনারা মিসেস সাদিয়া চৌধুরীকে বলে বেরিয়ে পড়লো। আজ কিনারা হসপিটাল থেকে কায়ানের সাথে ওদের বাসায় যাবে,আজ থাকবে ওখানে।

সাদিত ছাড়া রাস্তা চোখ বন্ধ করে রইলো।কিনারা বুঝতে পারলো না সাদিত কেন চোখ বন্ধ করে রয়েছে।কাল রাতে কি ঘুমাতে পারেনি নাকি অন্য কোনো কারণ আছে।

সাদিতকে ওভাবে চোখ বন্ধ করতে দেখে, কিনারা বার বার সাদিতের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।

গাড়িটা হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ালো।গাড়ি থামতেই কিনারা সাদিতকে বাই বলার জন্য তাকালো— দেখলো সাদিত আস্তে আস্তে ওর চোখটা খুলছে।

সাদিত চোখটা খুলে খুব আস্তে করে বলল — আমরা পৌঁছে গেছি।

কিনারা মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ।পৌঁছে গেছি।আমি তাহলে আসছি।এক্কেবারে কাল দেখা হবে।কথাটা বলে কিনারা গাড়ির দরজাটা খুলতে যাবে।ঠিক সেই সময় সাদিত গম্ভীরভাবে বলল— আমি তোমাকে যেতে বলেছি।

কিনারা সাদিতের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। কি বলবে বুঝতে না পেয়ে, খুব আস্তে করে বলল তাহলে—

সাদিত ওর হাত বাড়িয়ে বলল– এদিকে এসো।

কিনারা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলো।কিন্তু তাও কিনারা নিজের অজান্তেই সাদিতের কাছে নিজের শরীরটা এগিয়ে দিলো।

কিনারা একটু এগোতেই সাদিত কিনারার হাতটা ধরে টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

কিনারা কিছু বুঝার আগেই সাদিতের ঠোঁট কিনারার ঠোঁটের উপর এসে পড়লো। কিনারার দম বন্ধ হওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে সাদিত ওকে ছেড়ে দিলো।সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলল ইট ওয়াজ এ গুড বাই কিস।

তারপর সাদিত আবার বলল একটু পর ড্রাইভার পাঠিয়ে দিচ্ছি, তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিবে।

কিনারা আস্তে করে বলল ওকে তারপর কিনারা কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।

কিনারাকে চলে যেতে দেখে সাদিত অন্য মনস্ক হয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলো,স্যার আমরা কি অফিসের দিকে যাবো।

সাদিত গম্ভীর হয়ে বলল হ্যাঁ চলো।

🍁🍁🍁🍁

কিনারা কায়ানকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো৷সাদিত কায়ানের বাসার জন্য এক্সট্রা নার্স আর ডাক্তার ঠিক করে রেখেছে।কায়ান পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবদি সেবা করবেন এনারা।।কায়ানকে রুমে শোয়ে দেওয়া হলো।

কিছুক্ষন পর কায়ান বলে উঠলো আচ্ছা আপু—একটা কথা বলার ছিলো। সাদিত ভাইয়ার সাথে তোমার কতদিনের সম্পর্ক।তোমরা কি আগে থেকেই পরিচিত আর উনার সাথে তোমার আলাপই বা হলো কি করে। কায়ানের মনের ভিতর যে পরিমাণ কৌতূহল জেগে উঠেছে।কারণ কায়ান তার জামাইবাবুর ব্যাপারে সব জানতে চাই।

কিনারা ওর ভাইয়ের জন্য কিছু ফল কেটে দিচ্ছিলো।এসব শুনে কিনারা কায়ানকে ফলগুলো দেওয়ার আগে একটু ইতস্ততবোধ করে সব বলল কায়ানকে।

কায়ান যা শুনলো– ও ভাবতে পারেনি তার আপু তাকে সুস্থ করার জন্য নিজের কথা না ভেবে এরকম একটা ডিসিশন নিয়ে নিবে।সাদিতের মতো বড়ো মাপের কাউকে বিয়ে করে ফেলবে।বড় বড় মানুষের আবার বড় বড় ব্যাপার লুকিয়ে থাকে।যা সব সময় প্রকাশ্যে আসে না।তাই কায়ানের নিজের বোনের জন্য চিন্তাটা আরও বেড়ে গেলো। কায়ান সুস্থ হয়ে উঠলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

কিনারা কায়ানকে ভাবতে দেখে বলল– তোকে এসব ব্যাপারে একদম চিন্তা করতে হবে না। আমার কাছে যেটা সব থেকে বেশি চিন্তার ব্যাপার সেটা হলো তোর সুস্থতা। তোকে কিভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ করা যাবে এটা নিয়েই আমি গুটা দিনরাত চিন্তা করছি।

কায়ান ওর আপুকে বলার মতো আর৷ কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। ওর আপু ওর জন্য এতো বড় সেক্রিফাইস করলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here