ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি,পর্ব:৭

0
535

#ধাঁধার_থেকেও_জটিল_তুমি
( শেষ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১১>

এইসবের পরের দিন আন্তরিকের বাবা ফিরে এসেছিলো ট্রিপ থেকে | তাই মেঘনার আবার নিজেকে আড়ালে নিয়ে আসতে অসুবিধা ছিল না কোনো ! সেদিন আবার ও সকাল বেলা ব্যালকনিতে গাছে জল দেয়ার সময় দেখেছিলো আরাত্রিকা উল্টোদিকের রাস্তায় নিজের গাড়িটা পার্ক করে নামলো একটু অন্ধকার মুখে | তারপর বেশ তাড়াতাড়িই পা চালিয়ে ওদের এপার্টমেন্টে ঢুকলো | সেই মুহূর্তে মেঘনার বুকের কাছে একটা জমা কষ্ট আবার এসে ধাক্কা দিয়েছিলো | মনে হয়েছিল ওর আর কি দরকার ! চলেই তো এসেছে সব নিজের লোক আন্তরিকের | তাই সেই আগের মতন না দেখা দূরত্ব তৈরী করাটাই ঠিক | তাই আর আন্তরিকদের ফ্ল্যাটে যায়নি ও এরপর | তবে এর পরের দিনগুলোতে সমরজেঠুর কাছ থেকে সকাল সন্ধ্যে নিয়মিত খোঁজ নিয়েছে আন্তরিকের | সমরজেঠুর হাতেই ও আন্তরিকের জন্য আসা অফিশিয়াল পার্সেলটাও পাঠিয়ে দিয়েছিলো একদিন | যদিও আন্তরিকের এইসব দেখে বেশ অবাক লেগেছিলো প্রথমে | মানে যেই মেয়েটা ওর জ্বর হয়েছে বলে সারা দুপুর ওর পাশে বসে থাকলো , সে আবার ওর বাবা চলে আসার পরেই কি অদ্ভুত একটা মাপা দূরত্ব নিয়ে এসেছে দুজনের মধ্যে ! মেঘনা দরজার বাইরে থেকে না কি আন্তরিকের খোঁজ নেয় , এমন কি পার্সেলটাও নিজে এসে দেয়নি | সেটাও বাবার হাত দিয়ে পাঠিয়েছে | এইসবের মানে ঠিক আন্তরিক খুঁজে পায় না কিছুতেই | এর মধ্যে ও মেঘনাকে মেসেজও করেছে বেশ কয়েকবার | কিন্তু সেই মেসেজগুলোর উত্তর মেঘনা শুধুমাত্র একটা শব্দে দিয়েছে | এইসব দেখে শুনে ওর বেশ রাগই হয়েছে মেয়েটার ওপর | বাবার সাথে তো চিরকাল দেখেছে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবক করে যায় | কখনো এই বই , কখনোই ওই সিনেমার গল্প , কিছুই তো বাদ থাকে না ! আর আন্তরিকের সাথেই যত হিসেব | ও কি ভাবে , আন্তরিক সিরিয়াস বলে কথা বলতে জানে না ! গল্প করতে জানে না ! না কি নিজে রাইটার বলে ভাবে আন্তরিকের মতন সারাক্ষন পড়াশোনা কাজ নিয়ে থাকা লোক ওর কথা বুঝতে পারবে না ! আচ্ছা , এই মেয়েটা কি বোঝে না যে আন্তরিকের আজকাল কথা বলতে ইচ্ছে করে ! ওর কাজের মধ্যে , ল্যাপটপ খুলে , ল্যাপটপ বন্ধ করে , সকালে বিকেলে রাতে , মাঝে মাঝেই এই মেয়েটাকে মনে পরে ! ওর বড়ো বড়ো চোখ , ওর আলতো ঘুরে তাকানো , ওর আলতো গম্ভীর কথা , আর সেই মিষ্টি হাসিটাকে মনে পরে ! আন্তরিক সব কিছু কথা দিয়ে সাজিয়ে বলতে পারে না ঠিক , কিন্তু কিছু না বলেও কি মেঘনাকে কখনো বোঝাতে পারলো না ওর মনকথা ! ওর এই হঠাৎ বদলে যাওয়ার কারণটা !

সেদিন কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আনমনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছিল কলেজের জন্য | আজ প্রায় দেড় সপ্তাহ হলো কলেজ যাচ্ছে ও | এক্সিডেন্টের পর তো বেশ কিছুদিন যেতে পারেনি ! তবে পুজো প্রায় চলেই এলো | দুদিন বাদে পঞ্চমী | কলেজের ছুটি শুরু হয়ে যাবে তখন থেকেই | | এইসব ভাবনার ভিড়েই এপার্টমেন্ট থেকে একটু এগিয়েছিল গাড়ি নিয়ে , কিন্তু থমকে গেলো মেঘনাকে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে | যদিও মেঘনা এতটাই নিজের মনে যাচ্ছিলো যে আন্তরিকের গাড়িটাকে খেয়াল করেনি ! আসলে আজ বইয়ের হার্ড কপি রেডি | সেই কিছু কপিস কোলেকশনের জন্যই যাচ্ছিলো প্রকাশকের অফিস | কিন্তু আচমকা আন্তরিকের গাড়িটা ওর রাস্তা আটকে দাঁড় হওয়াতেই মেঘনার সম্ভিত ফিরলো | মানে যার সাথে দেখা হওয়ার না , সে যে আবার এইভাবে সকাল সকাল সামনে চলে আসবে , ভাবেনি ! কথাগুলো মনে হতেই আজ আন্তরিক গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এসে একদম ওর সামনে দাঁড়ালো | তারপর কোনো রকম সাজানো কথা না বলে একেবারে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করে উঠলো ,

———- ” তোমার ব্যাপার কি ? এইভাবে ভ্যানিশ হয়ে গেলে কেন এতদিন ? আর আমার খোঁজ নেয়ার জন্য বাবাকে জিজ্ঞেস না করে কখনো সময় করে দু পা এগিয়ে আমার ঘরে কি আসা যেত না ? না কি একটা ফোন করা যেত না ?”

মেঘনা এই মুহূর্তে এতো ডিরেক্ট প্রশ্ন শুনে কিরকম যেন থম মেরে গেলো কয়েক সেকেন্ড | চোখ দুটোও বড়ো বড়ো হয়ে গেলো ওর | আন্তরিক , যে কি না সব সময় এতো মেপে চলে , মেপে কথা বলে , সে হঠাৎ এইভাবে বেহিসাবি প্রশ্ন করবে , এটা আসলে ঠিক এক্সপেক্ট করেনি ! তাই একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠলো ,

———— ” না মানে ওই আমার বই এর কাজ ছিল তো ! তাই | মানে আজ পাবলিশ হয়েছে | ঐসব লেখা আর কি ব্যস্ত ! সেই জন্য !”

কথাগুলো ঠিক সাজিয়ে গুছিয়ে কমপ্লিট করতে পারলো না মেঘনা | আসলে উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে থাকে আন্তরিক | তার ঘরে গিয়ে একটু শরীরের খোঁজ করতে যে দশ ঘন্টা সময় লাগবে না , এটা স্বাভাবিক | আর ও যে ভালোবাসে , তাই যায়নি নিজে থেকে আন্তরিকের কাছে , এই সত্যিটা যে কিছুতেই বলতে পারবে না মেঘনা ! সেই জন্য মিথ্যেই ভাবতে হলো | তবে রাইটার হয়েও মিথ্যেটা ঠিক ম্যানেজ করে বলতে পারলো না ও ! কথাগুলো আনমনেই মনে হলো ওর | সেই সময়ই আন্তরিক একটু কঠিন গলায় বলে উঠলো ,

————– ” বুঝলাম | তুমি এখন যেখানে যাচ্ছ সেখানে কি আমি ছেড়ে দিতে পারি ? না কি তাতেও কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে !”

কথাগুলো যে আন্তরিক মেঘনাকে শুনিয়ে বললো , এটা মেঘনা স্পষ্ট বুঝলো | আর ওর মুখে জমানো রাগটা দেখে এটাও বুঝলো যে এই ছেলেটার কোথাও একটা খুব খারাপ লেগেছে মেঘনার ব্যবহারে | সেই জন্য এইভাবে রিয়্যাক্ট করছে | তাই মেঘনা আর রাগটাকে না বাড়িয়েই বলে উঠলো এবার ,

—————- ” না না , আমি আসলে প্রকাশকের অফিসেই যাচ্ছিলাম | তোমাদের কলেজের রাস্তাতেই পরে | তোমার অসুবিধা না থাকলে একসাথে যাওয়াই যায় |”

কথাগুলো আসলে ও মন থেকেই বলে উঠলো যেন | যতই আন্তরিকের সাথে দূরত্বটাই সত্যি বলে মনে হোক , কিন্তু এই ছেলেটা যে ওর জন্য খারাপ ফিল করবে , এটা ঠিক মেঘনা আজও ভাবতে পারে না | তাই মুখের ওপর ‘না’ বলতে পারলো না আন্তরিককে | আর আন্তরিক যে রেগে গেছে , এটা তো খালি চোখে দেখলে স্বাভাবিকই | ওর ওরকম একটা একসিডেন্ট হলো | মেঘনা দুদিন সব রকমভাবে সঙ্গে থাকলো তারপর , কিন্তু হঠাৎ তিনদিনের দিন থেকে আজ অব্দি ওকে একটা কল করেও দেখলো না ও ! আন্তরিকের সঙ্গে কথা বলে একবারও খোঁজ নিলো না ওর ! এই রকম ব্যবহার যদি মেঘনার সাথে কেউ করতো , তাহলে মেঘনারও রাগ হতো | হয়তো দেখা হলে কথাই বলতো না আর ! সেখানে আন্তরিক তো নিজে যেচে পরে গাড়ি থামিয়ে লিফ্ট দিতে চাইছে | হয়তো প্রতিবেশী হিসেবে মেঘনাকে অন্য চোখেই দেখে আন্তরিক ! না কি বন্ধু ভাবে নিজের ! কথাগুলো বেখেয়ালে ভাবতে ভাবতেই আন্তরিকের গাড়িতে গিয়ে বসেছিল সেদিন | তবে আন্তরিক সারা রাস্তা জুড়ে কিরকম চুপ আর গম্ভীর ছিল | মেঘনা এরপর একবার জিজ্ঞেস করেছিল নিজে থেকে , ————— ” শরীর কেমন আছে তোমার ?কলেজ জয়েন করেছো কবে ?”

আন্তরিক এই কথার এক কথায়ই উত্তর দিয়েছিলো , ————- ” কদিন হলো জয়েন করেছি | শরীর আছে ! ঠিকঠাক |”

কিন্তু এর বেশি আর আন্তরিক কিছু বলেনি ওকে | আর মেঘনাও ঠিক কথা বাড়ানোর মতন কিছু খুঁজে পায়নি |

এইভাবে নিঃস্তব্ধতার মাঝে একটা সময় মেঘনার প্রকাশকের অফিসের রাস্তাটাও চলে এলো | মেঘনা তখন নিজেই বলে উঠলো ,

—————- ” চলে এসেছে | গাড়িটা থামাও |”

কথাটা শুনে আন্তরিক গাড়িটা দাঁড় করালো সেই মুহূর্তে | মেঘনা তখন একটু কথা সাজিয়ে বলে উঠলো ,

————– ” থ্যাঙ্কস ফর দ্যা লিফ্ট … আসি | সাবধানে যেও কলেজ |”

কথাটা শেষ করেই ও গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিলো , তখনই আন্তরিক হঠাৎ বলে উঠলো কিছু অন্য কথা | ও কিরকম নিজের মনেই যেন বললো ,

————- ” মেঘনা , তুমি কি ভাবো জানি না | কিন্তু আমার কাছে তুমি ইম্পর্টেন্ট | হ্যাঁ , আগে কখনো আমি তোমার সঙ্গে বেশি কথা বলিনি , মিশিনি | কিন্তু এই লাস্ট দু তিনটে মাসে ইউ বিকম আ পার্ট অফ মাই লাইফ … তাই এইভাবে হঠাৎ করে যোগাযোগ শেষ করে দিয়ো না | আমার খারাপ লাগে |”

কথাগুলো সেদিন আন্তরিক খুব মন থেকে বলেছিলো | মেঘনাও কয়েক সেকেন্ড থমকে ছিল তাই | বুঝতে পারছিলো কিছু না বলে ঐভাবে কথা থামিয়ে দেয়াতে সত্যি ছেলেটার খারাপ লেগেছে ! নইলে ওর মতন ইন্ট্রোভার্ট চাপা স্বভাবের কেউ এইভাবে নিজের মনের কথা বলবে না ! তাই কিছু না ভেবেই যেন মেঘনা বলে উঠলো উত্তরে ,

———— ” আই এম সরি .. আমি তোমাকে খারাপ লাগাতে চাইনি !”

কথাটা শুনে আন্তরিক একটু যেন জোর করে হেসেই বললো ,

————– ” ইট’স ওকে … তুমি যাও প্রকাশকের অফিস | নইলে দেরি হয়ে যাবে | ”

কথাটায় মেঘনা নিজেও একটু জোর করে হেসে গাড়ি থেকে নেমে গেলো | কিন্তু সেই মুহূর্তে ওর চোখটা ভিজে এলো হঠাৎ | নিজেকে কিরকম অসহায় লাগলো নিজের মনের কাছে | আন্তরিকের থেকে অনেক বেশি মেঘনা চায় আন্তরিকের সঙ্গে কথা বলতে , যোগাযোগ রাখতে ! ভালোবাসে ও ছেলেটাকে ! কিন্তু শুধু এই কারণটার জন্যই নিজেকে দূরে রাখে | হিসাব করে চলে | আন্তরিক হয়তো ওকে খুব ভালো বন্ধু ভাবে আজকাল , কিন্তু মেঘনার পক্ষে এটা কখনোই সম্ভব না ! একবার কাউকে ভালোবাসলে তাকে বন্ধু ভাবা যায় না | কিছুতেই নিজের মনকে বোঝানো যায় না | তাই দূরে থাকাটাই নিয়ম | কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘ্যশ্বাস আপনাআপনি চলে এলো ওর | তবে একটা কথা আজ মনে হলো | এইভাবে না বলে দূরে থাকা যাবে না আর | আসল কারণটা বলেই সরে যেতে হবে মেঘনাকে | ওকে বলতে হবে যে ও ফিল করে আন্তরিকের জন্য | আর এই একতরফা ফিলিংস এর জন্যই ওরা কখনো ভালো বন্ধু হতে পারবে না ! আন্তরিকও এরপর এইসব শুনে মেঘনাকে ভুল ভাববে না ! ওর নিজের তো বিয়ের ঠিক | এই সময় এইসব কথা অন্য কোনো মেয়ের মুখে শুনলে আন্তরিকও নিজে দূরেই থাকবে তার থেকে ! আবার ইচ্ছে করেই হয়তো মেঘনার সঙ্গে সেই মাপা দূরত্বের দেয়ালটা তৈরী করে নেবে নিজে | শুধু মাঝখান থেকে মেঘনার ভেতরে একটা লজ্জা তৈরী হবে | কাউকে ভালোবাসার লজ্জা | একতরফা ভালোবাসার লজ্জা | এরপর কখনো ফ্ল্যাটের দরজা খুলে আন্তরিককে সামনে দেখলে , অথবা লিফ্টে , রাস্তায় , কখনো কোথাও কোনোভাবে আন্তরিকের সঙ্গে মুখোমুখি হলে মেঘনা আর চোখ তুলে তাকাতে পারবে না ! একটা কারোর কাছে ‘না’ শোনার হালকা অপমান , কারোর ওকে ভালো না বাসার কষ্ট , আর নিজের এই ফিলিংসগুলোকে নিজে থেকে তার সামনে এক্সপেট করার জন্য অদ্ভুত একটা লজ্জা , সব এসে ঘিরে ধরবে ওকে ! মনে হবে আন্তরিক ওকে দেখে কি ভাবছে এখন ! ভাবছে হয়তো খুব বোকা ! কদিনের আলাপে নইলে কেউ এইভাবে ফিল করে ! না কি ভাববে মেঘনা হয়তো একদম ইম্প্র্যাক্টিকাল | নিজে একজন সাধারণ রাইটার , যার কি না কেরিয়ারের কোনো ঠিকঠিকানা নেই এখনো ! সে ওর মতন এরকম স্কলার , প্রফেসরকে ভালোবাসে ! এইভাবে না বুঝে ফিল করে ! এইসব ভেবে হয়তো আন্তরিক নিজেই দেখা হওয়ার পর , মুখোমুখি হওয়ার পর , ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে ! কথাগুলো সেইদিনের সকাল থেকে পঞ্চমীর রাত অব্দি দুদিন ধরে মেঘনাকে ভাবিয়ে চললো ! কাল ষষ্ঠী | ওর এই পুজোর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান আছে সকালবেলা | ওর সঙ্গে আরো দুজন রাইটারের বই প্রকাশ হবে কাল | এই প্রকাশক বেশ বড়ো | দুজন নিউজপেপার থেকেও লোক আসবে ওদের এই বই প্রকাশের অনুষ্ঠানটাকে কভার করার জন্য ! কথাগুলো ভেবে মেঘনার আজ খুশি থাকার কথা ! কিন্তু ওর মনে যেই ঝড়টা উঠেছে , সেই ঝড়টা যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে , ততক্ষন ওর অন্য কোনো ব্যাপারে ভালো থাকার কথা না | সেদিন রাত্রে এইসব কথাগুলো ভেবেই ও শক্ত করলো নিজের মনকে | কাল পুজোর শুরু | কাল ও কোনো মিথ্যে ফিলিংসকে লুকিয়ে কষ্ট পাবে না ! যে যার না , তার কথা ভেবে কষ্ট পাবে না | আন্তরিকের সঙ্গে যখন গল্পটা শুধু ওরই , তাই শেষটাও ওকেই করতে হবে | কথাগুলো ভেবেই ও মেসেজের ইনবক্সটা খুললো | তারপর আন্তরিকের নাম্বারটা টাইপ করে কিছু কথা লিখে পাঠালো | একদম সত্যি কথা | আড়ালহীন কিছু কথা |

—————- ” আন্তরিক , সরি , কিন্তু আমার পক্ষে তোমার সঙ্গে কোনোদিন কথা বলা সম্ভব না | বন্ধুত্ব রাখাও সম্ভব না | কারণ আমি তোমাকে বন্ধুর থেকে বেশি কেউ ভাবি | ফিল করি তোমার জন্য | কিন্তু আমি এটা জানি যে তুমি কোনোদিন কখনো আমাকে ঐভাবে দেখোনি ! আর সেই নিয়ে আমার কোনো রাগও নেই তোমার ওপর ! আমি বুঝি , ফিলিংস সব সময় সবার জন্য আসে না | আর আমি তো তোমার থেকে একদমই আলাদা একটা মানুষ | আমাদের প্রফেশন , চিন্তাধারা , স্বভাব , কিছুই বিশেষ মেলে না | তাই তোমার সঙ্গে কোনোদিনই আমার কিছু হওয়া সম্ভব না | তবে আমি যেহেতু ফিল করি , আমি তোমার সঙ্গে এরপর কথা বললে আরো বেশি জরিয়ে যাবো | আমার কষ্ট হবে | আর আমি আসলে নিজেকে হার্ট করতে চাই না | প্লিজ কিছু মাইন্ড কোরো না , এইসব বললাম বলে ! ভালো থেকো | বাই … ”

কথাগুলো একটুও না ভেবেই টাইপ করলো মেঘনা এই মুহূর্তে | তারপর চোখ বন্ধ করে সেন্ড বটন টা টিপে দিলো মোবাইলের | সেই সময়ে চোখটা ভিজে এলো হঠাৎ ওর আনমনে | এই পুজোর সময়ে কত হ্যাপি এন্ডিং এর গল্প লিখেছে মেঘনা নিজের হাতে ! আর আজ সেই পুজো শুরুর একদিন আগেই নিজের গল্পের শেষটা লিখতে হলো ওকে এইভাবে ! বাস্তবটা এতো কঠিন কেন ! প্রশ্নটা যেন নিজেকেই আনমনে করে উঠলো ও সেদিন ! মনে হলো এরপর তো আর কোনোদিন এই ছেলেটার সাথে ‘কেমন আছো’ ‘ভালো আছি’ অব্দিও কথা বলে পারবে না ও ! শব্দহীনভাবে থাকতে হবে সারা জীবন ! আর আন্তরিক , ও এটা পড়ে সত্যি মেঘনার সম্বন্ধে কি ভাববে ! ও কি ছোট হয়ে গেলো নিজে ভালোবাসাটাকে একসেপ্ট করে ! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই দু তিন ঘন্টা কেটে গেলো আনমনে , কিরকম অন্ধকারের ভিড়ে | বাইরে এপার্টমেন্টের পুজোয় ঠাকুর এসেছে এখন | ঢাক বাজছে তাই | কিন্তু মেঘনার মনে হলো ওর চারিদিকে কিরকম একটা দম বন্ধ করা নিঃস্তব্ধতা ছড়িয়ে আছে এখন ! কিরকম শান্ত হয়ে গেছে চারিদিক ! কিন্তু এই মুহূর্তেই হঠাৎ ওর ফোন এ মেসেজ ঢোকার একটা আওয়াজ এলো এখন | মেঘনা ভেজা চোখে ঘুরে তাকাতেই আন্তরিকের নাম্বারটা দেখতে পেলো ! আন্তরিক ! ও মেসেজ করে কি লিখেছে এখন ! নিশ্চই কিছু স্বান্তনার কথা ! যে ‘সরি , আমি আসলে এইভাবে ভাবিনি কখনো , হার্ট করতে চাইনি তোমাকে ! আই এম সরি !”

কিন্তু মেঘনা তো এইসব স্বান্তনা চায় না | ও ভালোবেসে কোনো চ্যারিটি কেস হতে চায় না ! কথাগুলো ভেবেই কিরকম অজানা অভিমানে যেন মেসেজটা খুললো | কিন্তু মেসেজে লেখা ছিল অন্য কিছু কথা সেই সময়ে | কিরকম অর্ডার করার মতন করেই যেন লিখেছিলো আন্তরিক ,

—————- ” আমার তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে | কাল আমি ওয়েট করবো বিকেলবেলা ফ্ল্যাটের ছাদে | আর তোমার মেসেজের উত্তর আমি কাল সামনাসামনিই দেব |”

কথাগুলো কিরকম নিস্পলক ভাবে পড়লো মেঘনা ! কেমন যেন মনে হলো কেস খেয়ে গেছে ও ! ইশ , তাহলে আন্তরিক একদম দেখা করে মুখের ওপর ‘না’ বলবে ! এইভাবে রিজেক্ট করবে ওকে ! না কি স্বান্তনা দেবে ! বোঝাবে যে এই ফিলিংটাকে ভুলে ভালো বন্ধু হয়েও থাকা যায় ! কিন্তু মেঘনা তো এতো কথা বুঝতেই চায় না কখনো ! এতকিছু শুনতেই চায় না ও | আন্তরিকের কাছ থেকে কোনো বন্ধুত্ব , কোনো স্বান্তনা , কোনো ‘না’ কিছুই শোনার নেই ওর ! কথাগুলো ভেবে কিরকম যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো ও | মনে হলো এর থেকে তো না বলেই এভয়েড করা ভালো ছিল ! এইভাবে একটা অস্বস্তিকর সিচুয়েশনের মধ্যে পড়তে হতো না তাহলে ওকে ! আর না ও তো করতে পারবে না আন্তরিককে ! তাহলে হয়তো ফ্ল্যাটেই চলে আসবে ও | না , কোনোভাবেই কালকের দিনটাকে আন্তরিককে এড়াতে পারবে না মেঘনা | এটাই সত্যি | আন্তরিকের মুখোমুখি হয়েই এখন সব শেষ করতে হবে | একটা ‘না’ কিছু স্বান্তনার বাণী , এইসব শুনতে হবে |

কথাগুলো সেদিন সারারাত ভাবতে ভাবতে ঘুমই এলো না আর মেঘনার | ষষ্ঠীর সকালটাও কাটলো কেমন যেন ঘোরের মধ্যে | ঘর থেকে বেড়োতে ইচ্ছে না করলেও কিরকম জোর করেই বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে যেতে হলো | তারপর সেইসব মিটিয়ে কলকাতার ভিড় রাস্তা পার করে অবশেষে ফিরতেই হলো এপার্টমেন্টে | এই সময় অন্য ফ্ল্যাটের কত লোক আজ বেসমেন্টে পুজো মন্ডপে বসে | অন্য বছর হলে মেঘনাও আজ থেকেই মণ্ডপে গিয়ে বসে থাকতো | কিন্তু আজ আর কিছুতেই এইসব মন চাইলো না | শুধু মনে হলো আর মাত্র দু ঘন্টা বাকি পাঁচটা বাজতে ! তারপরই সেই ছেলেটার মুখোমুখি হতে হবে | সেই ছেলেটার কাছ থেকে ফেরত চলে আসতে হবে সারা জীবনের জন্য ! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ও নিজের ঘরে গিয়ে বসে ছিল চুপচাপ | অপেক্ষা করছিলো ঘড়ির কাঁটাদের এগোনোর | তারপর একটা সময় ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো মেসেজের আড়ালে | আন্তরিক কিছু শব্দ এখন লিখে পাঠিয়েছে ওকে |

———– ” আমি অপেক্ষা করছি | ছাদে এস |”

না , কথাটা পড়ে মেঘনাও আর এবার বসে থাকলো না | ফেস যখন করতেই হবে তখন আর দেরি করে লাভ নেই ! যা হওয়ার হবে | শুধু যেন ছেলেটার সামনে কেঁদে না ফেলে ! কারণ এই কান্নাটার ওর ভীষণ নিজের | এই ভেজা চোখ দেখিয়ে কারোর কাছ থেকে সিম্প্যাথি পাওয়ার নেই মেঘনার | কথাগুলো ভেবে নিজেকে একটু দৃঢ় করে ও গেলো আজ ছাদে | আন্তরিক একটা লাল রঙের পাঞ্জাবি পড়ে অপেক্ষা করছিলো ওর জন্য | তবে মেঘনাকে অবাক করে আজ ও আলতো হাসলো এখন এই মুহূর্তে ! মেঘনা ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না ! এই পরিস্থিতিতে আন্তরিক এর তো গম্ভীর থাকার কথা ! মেঘনাকে এখন কত সাজানো গোছানো কথা বলতে হবে ! বোঝাতে হবে যে ও মেঘনার প্রতি ইন্টারেস্টেড না । ওর জীবনে আরাত্রিকা আছে । বিয়ের ঠিক । আরো কত কথা ! যেগুলো আন্তরিক ভাবে মেঘনা জানে না ! অথচ মেঘনা সেই সব সত্যি গুলোকে এতদিনে নিজের জীবনে প্রায় মুখস্ত করে নিয়েছে ! তো যাইহোক , এইরকম এলোমেলো ভাবনার ভিড়েই ও এগিয়ে গেল আন্তরিক এর কাছে । তবে সেই সময়ে আন্তরিক নিজে কিছু এলোমেলো কথা বলে উঠলো হঠাৎ ! ও একটু স্থির গলায় বললো ,

———- ” তোমার মোবাইলের রিংটোনের মানেটা আজ আমি বুঝি । এখন আমিও গানের কথাগুলোকে ফিল করি ! ‘ ওরা মনের গোপন চেনে না ! ওরা হৃদয়ের রং জানে না ।’ কথাগুলো আসলেই খুব সত্যি । ”

কথাটার মেঘনা কোন মানে খুঁজে পেল না ঠিক এখন ! ও কিরকম নিস্পলক দৃষ্টিতেই তাই তাকিয়ে রইলো আন্তরিক এর দিকে । তখন আন্তরিক আবার বলে উঠলো বেশ দৃঢ় গলায় ,

———— ” মেঘনা , আই ফিল ফর ইউ .. কবে থেকে ঠিক জানি না ! হয়ত হঠাৎ করেই ! আসলে বাবার ওই শরীর খারাপটার পর আস্তে আস্তে যতদিন তোমাকে জানতে লাগলাম , কিরকম যেন নতুন করে চিনলাম মনে হলো ! আর নিজেকে চেনানোর ও একটা অদ্ভুত চেষ্টা শুরু হলো আমার , এই প্রথম , অন্য কাউকে । মনে হলো দরকার ছাড়াই তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার ! তবে মাঝখানে তরঙ্গ কে দেখে মনে হয়েছিল তোমার হয়তো ওর মতন ছেলে পছন্দ ! মানে যে গান টান করে ! সুন্দরভাবে কথা বলে অনেক ! তবে সেদিন তুমি হসপিটাল এ তরঙ্গকে যেভাবে রাগ দেখিয়ে অত কিছু বললে , তখন বুঝলাম যে আমি ভূল ভেবেছিলাম । তুমি ওকে লাইক করলে কখনোই ঐভাবে কথা বলতে না ! তবে তুমি যেহেতু আমার সাথেও সব সময় মেপে হিসেব করে মিশতে , তাই এটা নিয়েও সিওর ছিলাম না যে তুমি আমাকে নিয়ে ঠিক কি ফিল করো ! তবে কালকের মেসেজটা আমাকে সব উত্তর দিয়ে দিয়েছে । আমি আসলে তোমাকে সামনাসামনি দেখে নিজের ফিলিংসটা বলতে চেয়েছিলাম ; সেই জন্য কাল রাতে কিছু মেসেজে লিখিনি । তুমি বুঝলে তো আমি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছি ? আসলে এত কথা একসঙ্গে তো শুধু সেমিনারে ই বলি ! তাই !”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো এবার আন্তরিক , মেঘনার রিয়্যাকশন এর অপেক্ষায় । তবে মেঘনা এবার অবাক হয়ে অন্য কথা বলে উঠলো হঠাৎ ! ও যেন আকাশ থেকে পড়ার মতন মুখ করেই বললো ,

———– ” কি বলছো এইসব ? তাহলে আরাত্রিকার কি হবে ! তোমার সাথে আরাত্রিকার রিলেশনটা !”

আন্তরিক কথাটার ঠিক কিছুই মানে বুঝতে না পেরে বলে উঠলো এবার , ———– ” কি ! মানে ! আরাত্রিকা র সঙ্গে আমার রিলেশন কবে হলো ! কিসব বলছো ?”

মেঘনা তখন রাগটা মনে আর না রেখে গলায় এনেই বললো , ———– ” রিলেশন নেই মানে ! বিয়ের ঠিক ! ওর মা বাবা যেদিন তোমার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে এলো বাড়িতে , আমি গেছিলাম সেদিন হঠাৎ কাকুর কাছে , একটা বই ফেরৎ নিতে । আমি নিজের হাতে ওদের চা করে দিয়েছি ।”

কথাগুলো মেঘনা খুব জোর দিয়েই বললো ।কিন্তু আন্তরিক নিজের মাথায় হাত দিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো , ———– ” সত্যি ! মানে তুমি এতদিন ভাবতে আরাত্রিকা র সাথে আমি ! মাই গড ! মেঘনা , ওর আমাকে পছন্দ ঠিকই ! সেদিন বাড়িতে আমাকে না জানিয়েই তাই সম্বন্ধটা নিয়ে এসেছিল ওর মা বাবা । আসলে আমাকে তার আগেরদিন নিজের জন্মদিন এ নেমন্তন্ন করেছিল আরাত্রিকা। ওর মা বাবারও আমাকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছিল । তারপর আমাকে একবারও না জিজ্ঞেস করেই এইসব করেছে আরাত্রিকা । ভেবেছিল বাবা নিজে থেকে যদি আমাকে বিয়ের ব্যাপারে বলে , আমি হ্যাঁ বলে দেব । কিন্তু সেদিন সন্ধ্যেবেলা কলেজ থেকে ফিরে এসে এইসব শুনেই আমি না বলে দিয়েছিলাম বাবাকে । আরাত্রিকা কে ও কল করে বুঝিয়েছিলাম , যে এইসব পসিবেল না ! তবে ও রিকুয়েস্ট করেছিল শুধু বন্ধুত্বটা না ভাঙতে ! আর সেই কথাটায় আমি কখনোই ওকে না বলতে পারিনি । বিশ্বাস না হলে বাবাকে জিজ্ঞেস করো । সব সত্যি জানতে পেরে যাবে !”

কথাগুলো এক টানা বলে গেছিল আন্তরিক । তখন মেঘনা কিরকম নিজের ঘোর এ ই বলে উঠেছিল , ————- ” মানে ! তুমি আরাত্রিকা কে লাইক করো না তার মানে !”

আন্তরিক এবার যেন একটু ক্লান্ত গলায় বলে উঠেছিল , ————- ” যদি লাইক করতাম তাহলে আমি তোমার সাথে এখন এখানে কি করছি ! অদ্ভুত কোয়েশ্চেন !”

কথাটা শুনে মেঘনা এবার কেঁদে ফেললো হঠাৎ ।

আন্তরিক ওর কান্না দেখে ঘাবড়ে গেলো কিরকম সেই মুহূর্তে ! মানে ও আজকের বিকেলটাকে একটু অন্য রকমভাবে ভেবেছিলো | মেঘনার রিয়্যাকশনটাও ভেবেছিলো অন্য কিছুই হবে ! সেখানে এরকম কান্নাকাটি এক্সপেক্ট করেনি | তাই একটু এলোমেলোভাবেই কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল ,

———– ” কি হলো ? কাঁদছো কেন ? আমি কি কিছু ভুল বলেছি ? আচ্ছা সরি !”

মেঘনা এর উত্তরে কান্নার সঙ্গে একটু রাগ দেখিয়েই বলেছিলো , ———— ” তো কি করবো ! কাঁদবো না ! জানো এই কদিন কিরকম লেগেছে আমার ! আমি তো ভাবছিলাম তোমার বিয়েতে নেমন্তন্ন খেতে যেতে হবে , তাও আবার গিফ্ট হাতে | ভাবতে পারছো কিরকম ফিল হয় তখন ! আর কালকের মেসেজ পাওয়ার পর আমার তো আরোও অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ! আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছাদে ডাকছো ‘না’ বলতে | স্বান্তনা দিতে | কাল সারা রাত ঘুম হয়নি আমার এইসব ভেবে ভেবে ! ”

কথাগুলো শুনে আন্তরিক যেন হতাশ হয়েই বললো এবার , ———– ” সত্যি তুমি রাইটার ! বর্ন রাইটার !”

কথাটার উত্তরে মেঘনা বেশ অবাক হয়েই ভেজা চোখে জিজ্ঞেস করে উঠলো , ———- ” মানে ?”

তাতে আন্তরিক একটু যেন মজা করেই বললো , ———— ” মানে এতো কল্পনা শক্তি তো আমাদের মতন সাধারণ লোকের থাকে না ! একটা ছেলে একটা মেয়েকে শুধু ‘না’ বলার জন্য পরেরদিন অব্দি অপেক্ষা করবে ! তাও এমন ছেলে , যার না কি আবার বিয়ের ঠিক একর্ডিং টু ইউ ! তাই বলছিলাম | এতো লেভেলের ভাবার ক্ষমতা আমার অন্তত নেই !”

কথাটা শুনে মেঘনা এই মুহূর্তে ঠিক কিছু বলে উঠতে পারলো না আর ! সত্যিই কি ও রাইটার বলেই একটু বেশি ভাবে ! একটু বেশি এনালিসিস করে লোকের কথার ! আর ঠিকই তো , বিয়ের সম্বন্ধ আসলেই কি বিয়ের ঠিক হয় ! ওর মনে মনে এতো কিছু না ভেবে একবার সমরজেঠুকে জিজ্ঞেস করে নিলেই তো পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যেত | শুধু শুধু এতদিন এতো কষ্ট পেতে হতো না অকারণে ! কথাগুলো আনমনে ভাবতে ভাবতে চুপ হয়ে গেছিলো ও | তখন আন্তরিকই আবার বলে উঠলো ,

————— ” কি ভাবছো ? আমার এখনো পছন্দ তো ! না কি নতুন কিছু কারণ ভেবে ক্যানসেল করে দিলে সব কিছু ?”

কথাটা শুনে মেঘনা এবার চোখে জল নিয়েই হেসে ফেলেছিলো হঠাৎ | আন্তরিকও এবার কনফার্মলি বুঝেছিলো ওর উত্তরটা ! মেঘনা হেসেছে যখন , তার মানে হ্যাঁ | যাক , মনে শান্তি এখন অবশেষে | কথাটা ভেবেই আজ ওর হাতটা আন্তরিক আলতো করে ধরেছিলো হঠাৎ নিজে থেকে | মেঘনা এই মুহূর্তে গোধূলি বিকেলের আলোতে আরো একটু ভালোভাবে যেন দেখেছিলো ছেলেটাকে ! হয়তো একদম নতুনভাবেই ! আসলে দূরত্বের বাইরেও যে একটা গল্প হতে পারে এর সাথে , এটা তো ভাবেনি কখনো ! তাই নতুনই লাগছিলো আন্তরিককে এই ষষ্ঠীতে | কথাটা আনমনে ভাবতেই কানে এসেছিলো দুজনের ওই দূরে বাজতে থাকা ঢাকের আওয়াজ | একটা শরতের বিকেল যেন বসন্ত নিয়ে এসেছিলো আন্তরিক আর মেঘনার জীবনে ! মনে হয়েছিল , পুজো চলে এসেছে | সঙ্গে অনেক মন ভালো করা গল্প নিয়ে |

<সমাপ্ত >

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here