ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি,পর্ব:৬

#ধাঁধার_থেকেও_জটিল_তুমি
( ষষ্ঠ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৯>

সেদিনের পর থেকে মেঘনার মনে সত্যি মেঘ জমেছিলো যেন কালো | ও এরপর হোয়াটস এপ-টাই আনইন্সটল করে দিয়েছিলো | আর কোনোভাবেই আন্তরিকের সাথে যাতে কথা না হয় , তার পুরোপুরি চেষ্টা করেছিল নিজে থেকে | ওর মনে হচ্ছিলো এই আড়ালটা থাকাই দরকার ছিল ! এতো বছর বাদে একে ওপরের সঙ্গে কথা , একে অপরকে চেনাটা সত্যি ভুল হয়েছিল ! কিছু মানুষ আসলে দূরেরই হয় | কথাগুলো মনে নিয়েই পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছিলো নিজের বইয়ের কাজে | আর পঁচিশ দিন বাদেই দূর্গা পুজো | এখনো ওর শেষ উপন্যাসের দুটো অধ্যায় লেখা বাকি ছিল | আর আসল কথা হলো কাজের মধ্যে থাকলে আর আলাদা করে মন খারাপ এসে ঘিরে ধরবে না ওকে ! এর মাঝে নয়ন , তরঙ্গ দুজনেই বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। তবে সত্যি আর কারোর সাথে কথা বলার মন নেই ঠিক মেঘনার | ভেতর থেকে কষ্টটা যেন মনের মধ্যে থিতিয়ে আছে আজকাল | তাই আর কারোর সাথেই কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই ওর । আসলে ছোটবেলা থেকেই মেঘনা এরকমই । ওর যদি কখনো মন খারাপ হয় , তাহলে নিজের চারিদিকে একটা শক্ত দেয়াল তৈরি করে নেয় কাউকে কিছু না বলে । আর সেই দেয়াল ভেদ করে না নিজে বেরোয় , না অন্য কাউকে ঢুকতে দেয় । এখনও ওর চারিদিকে সেই ওরকমই একটা দেয়াল আছে অদৃশ্য । যার জন্য এইভাবে সবার আড়ালে চলে গেছে মেঘনা । সেদিন আনমনে এইসব ভাবতে ভাবতেই হ্যান্ড কপিটা ব্যাগের মধ্যে ঢোকাচ্ছিল মেঘনা । আজ সারাদিন ধরে লিখে ওর পুজোর বই এর শেষ উপন্যাসটা কমপ্লিট করেছে | সেগুলোই জমা দিতে যাবে এই বিকেলবেলা প্রকাশকের অফিসে । সেই সময়ই মা হঠাৎ ঘরে এলো । হাতে একটা রেজিস্ট্রি পার্সেল । মেঘনা ঠিক বুঝতে পারলো না কিসের পার্সেল এটা ! তখন মা ই বলে উঠলো ,

———— ” আন্তরিক এর নামে এই পার্সলটা এসেছে। সমরদা তো কদিনের জন্য ঘুরতে গেছে পুজোর আগে জানিসই । তাই আমি যখন ক্যুরিয়ার বয় কে দেখলাম , নিজেই রেখে দিলাম পার্সেল টা । তুই একটু ফোন করে বলে দে তো ছেলেটাকে ,যে কলেজ থেকে ফেরার সময় একবার যেন এসে এটা নিয়ে যায় এখান থেকে ।”

কথাগুলো শুনে মেঘনা অবাক হয়েই বললো এবার , ————- ” অদ্ভুত ! অন্যের জিনিস তুমি কেনো নিতে গেলে নিজে থেকে ! আর আমি ফোন করবো আন্তরিক কে ! পসিবেল না ।”

মেঘনার এরকম অকারণ রাগে মা এবার নিজেও অবাক হয়ে গেলো যেন । তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে উঠলো,

————- ” কি হয়েছে বল তো তোর ? এইরকম রিয়্যাক্ট করছিস কেন একটা সাধারণ ব্যাপারে ! আর আন্তরিক এর সাথে তো কদিন আগেও দেখতাম কথা বলতিস ! আচ্ছা তুই কি ওর ওপর রেগে গেছিস ? তাই এভোয়েড করছিস না কি ! সেই জন্যই ছেলেটা পরশুদিন যখন করিডোরে দেখা হলো , তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল । বলেছিল তোর শরীর ঠিক আছে কি না ! কাজের চাপ না কি ! ”

কথাগুলো শুনে মেঘনা এবার থমকে গেল । আন্তরিক ওর কথা জিজ্ঞেস করছিল ! কিন্তু কেন ! কি দরকার ওর কথা জেনে ! আরাত্রিকার মতন মেয়ে যখন লাইফে আছে , তখন অন্য কারোর ব্যাপারে তো ইন্টারেস্ট থাকার কথা না । আর যেখানে মেঘনা তো ওর স্ট্যান্ডার্ড এর ই না ! একজন সাধারণ মূল্যহীন রাইটার ! কথাগুলো যেন বেখেয়ালে মনে এসে জড়ো হলো হঠাৎ , আর একটা অজানা অভিমান এসে ভিড় করলো চারিদিকে । তবে মা কে তো এতসব বলা যাবে না । আর এটাও আর বলা যাবে না যে ও ফোন করতে পারবে না ! তাহলে আরো প্রশ্ন শুরু করে দেবে ! যার উত্তর মেঘনা দিতে পারবে না । সেই জন্য কথাগুলো কে থামিয়ে বলে উঠলো,

———– ” আচ্ছা ঠিক আছে , করবো ফোন । শান্তি ?”

এর উত্তরে মায়ের মুখে হাসি । মা ও আর কথা না বাড়িয়ে তাই বললো , ——— ” হ্যাঁ, ভীষণ শান্তি ।”

সেদিন এরপর মা চলে যাওয়ার পর কিন্তু কিন্তু করেও একটা ফোন করেছিল মেঘনা । কিন্তু আন্তরিক এর নম্বরটায় রিং হয়ে হয়েও থেমে গিয়েছিল কিছুক্ষণে । কে জানে ! হয়ত বিজি, তাই ধরেনি ! না কি মেঘনার কলটা আনইম্পর্টেন্ট ভেবে আর ধরার প্রয়োজন বোধ করেনি ! শেষ কথাটা অবশ্য ওই জমানো অভিমান থেকেই মনে হয়েছিল মেঘনার । তবে আন্তরিক কে নিয়ে ভাবনাটা কে আর বাড়তে না দিয়ে মেঘনা ওকে একটা এসএমএস করে বেরিয়ে পড়েছিল নিজের কাজে ।
সেদিন এরপর সন্ধ্যের দিকে আন্তরিকের নাম্বার থেকে মেঘনার কাছে কল এসেছিলো একটা | ও তখন সবে প্রকাশকের অফিস থেকে বেড়িয়েছে | হঠাৎ ফোন কেন করলো আন্তরিক ! ও তো টেক্সট করে যা বলার বলেই দিয়েছে ! কথাটা ভাবতে ভাবতেই আনমনে ফোনটা ধরলো , আর তখনই কানে এলো একটা অজানা লোকের গলা ! লোকটা নিজের কোনো পরিচয় না দিয়েই বলে উঠলো ,

————– ” হ্যালো , আপনি কে বলছেন ? আসলে এটা যার মোবাইল তার একটা একসিডেন্ট হয়েছে | আপনার নাম্বার থেকেই লাস্ট কলটা এসেছিলো বলে আপনাকে জানালাম | আমরা মেডিক্যাল কলেজ সামনে বলে ওখানেই নিয়ে যাচ্ছি | আপনি আসুন পারলে |”

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে গেলো হঠাৎ | আর মেঘনার চারিদিকের ভিড়টাও যেন কেমন থেমে গেলো এই মুহূর্তে ! হাত পা স্থির হয়ে গেলো ওর | গলাটা শুকিয়ে এলো যেন | ও ঠিক কি করবে এই মুহূর্তে ভেবো পেলো না ! শুধু খোলা চোখেই আন্তরিকের মুখটা দেখতে পেলো হঠাৎ | মেঘনা আর নিজেকে ঠিক আটকে রাখতে পারলো না | এতদিনের তৈরী করা সমস্ত দেয়াল ভেঙে সামনের আসা বাসটায় উঠে পড়লো | কে জানে কি হয়েছে ওর ! কতটা লেগেছে ! ও ঠিক আছে তো ! বেঁচে আছে তো ! কথাগুলো যেন আনমনেই ভেবে উঠলো মেঘনা ! শরীরটা হালকা হয়ে গেলো যেন ওর এই সময়ে | এতটা ভয় ওর শেষ কবে লেগেছিলো মনে নেই ! হয়তো ওই ক্লাস ফাইভে, বাবার যখন সাইকেলে করে অফিস যাওয়ার সময় একটা একসিডেন্ট হয়েছিল , ও স্কুল এ যাওয়ার আগে খবরটা পেয়েছিলো পাড়ার একজন কাকুর মুখে | তখন মনে হয়েছিল ! তখনও এইভাবে হাত পা অবশ হয়ে এসেছিলো ওর ! বাবাকে তারপর যখন হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে বসে থাকতে দেখেছিলো , শুধু হাতে একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে , তখন যেন শরীরে প্রাণটা ফিরে এসেছিল মেঘনার | কিন্তু আজ আন্তরিককে গিয়ে দেখতে পাবে তো ও ! কথা বলতে পারবে তো আবার ! কথাগুলো ভেবেই কিরকম থমকে যাচ্ছিলো মেঘনা ভেতরে ভেতরে | তবে বাসটা যখন কলেজস্ট্রিটের মোড়ে এসে দাঁড়ালো , ও প্রায় হুড়মুড়িয়ে নামলো বাস থেকে | তারপর জোর পা এ মেডিক্যাল কলেজের দিকে যেতে যেতে আরেকবার আন্তরিকের নাম্বারে ফোন করলো | আগের মতনই কোনো অচেনা লোক ফোন ধরে ওকে গেট নাম্বারটা বলে দিলো এরপর | মেঘনা আর দেরি না করে প্রায় দৌড়েই এবার রাস্তা পার হয়ে তাড়াতাড়ি বই পাড়া ক্রস করে হসপিটালে এলো | কিন্তু ইমার্জেন্সিতে এসে পা টা থেমে গেলো হঠাৎ | উল্টোদিকের বেঞ্চে আন্তরিক বসে | মাথায় একটা ব্যান্ডেজ বাঁধা | হাতেও ব্যান্ডেজ | তবে ও কথা বলছে আসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের সাথে | ঠিক আছে | দৃশ্যটা দেখে যেন মেঘনার শরীরেও এবার প্রাণ এলো | ও এরপর আর না দাঁড়িয়ে প্রায় দৌড়েই গেলো আন্তরিকের সামনে | ছেলেটাও ওকে দেখে যেন থমকে গেলো ! মেঘনা এই সময়ে মুখটা অন্ধকার করেই বলে উঠলো ,

———— ” কি করে হলো এইসব ? কিভাবে একসিডেন্ট হলো ?”

কথাটার উত্তরে আন্তরিক কিছু বলার আগেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো , ————- ” আরে উনি তো নিজের মতন ড্রাইভ করছিলেন । হঠাৎ একটা গাড়ি এসে পেছন থেকে ধাক্কা মারলো । গাড়ি যে চালাচ্ছিল সে তো আবার ফেমাস সিঙ্গার ! ড্রিংক করে স্পিডে চালাচ্ছিল । উনি একটুর জন্য বেঁচে গেছেন । খুব বড়ো একটা ক্ষতি হয়ে যেত নইলে ! ওই যে চালাচ্ছিল , আর ওই গাড়িটা য় যারা ছিল , তাদেরও তো লেগেছে । এখানেই এসেছে ট্রিটমেন্ট এর জন্য । পাশের ঘরে আছে । আমরা তো স্যার কে বলছি , ওই সিঙ্গার এর এগেনস্ট এ লিগ্যাল একশন নিতে ! কিন্তু উনি বলছেন আমরা যেই পুলিশ কমপ্লেন টা করেছি , সেটা উনি না কি তুলে নেবেন ! ভাবুন একবার !”

কথাগুলো শুনে মেঘনা অবাক হয়ে গেলো ! আন্তরিক এর এতোটা লেগেছে ! হাতে , মাথায় ! তার পরেও ও কোনো লিগাল স্টেপ নেবে না ! অদ্ভুত তো ! কথাটা ভেবেই ও আন্তরিক কে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাবে , তখনই পাশের ঘর থেকে একটা চেনা মুখ হুড়মুড়িয়ে প্রায় ওদের সামনে এসে হাজির হলো । তরঙ্গ ! ও এখানে কি করছে ! আর ওর হতেও ব্যান্ডেজ বাঁধা কেনো ! মেঘনা এই মুহূর্তে এইসব দৃশ্য দেখে প্রায় কিছুই বুঝলো না । তখন তরঙ্গই প্রায় কেঁদে ফেললো আন্তরিক সামনে । ওর পা এর কাছে বসে হাতটা ধরে বলে উঠলো , —————- ” প্লিজ আন্তরিক , প্লিজ আমার এগেনস্ট এ লিগ্যাল একশন নিও না । একবার মিডিয়ায় জানাজানি হয়ে গেলে আমার কেরিয়ার পুরো শেষ হয়ে যাবে ! লোকজন খুব বাজে কথা বলবে । ফ্যানদের কাছেও পুরো রেপুটেশন নীচে নেমে যাবে আমার ! প্লিজ আন্তরিক , রিয়্যালি সরি । আর কখনো এইভাবে ড্রাইভ করবো না ।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ও এবার মেঘনার দিকে তাকালো । তারপর ওকেও রিকুয়েস্ট করার মতন করে বললো , ———— ” প্লিজ মেঘনা , তুমি তো আন্তরিক এর বন্ধু । তুমি ওকে একটু বোঝাও। আমার কেরিয়ার পুরো শেষ হয়ে যাবে পুলিশ ইনভলব হলে । প্লিজ ওকে একটু বোঝাও !”

কথাগুলো শুনে মেঘনার একটা ধাক্কা লাগলো যেন । এতোটা নির্লজ্জ কোন মানুষ হতে পারে ! একজনের এইভাবে এক্সিডেন্ট করেছে নিজের দোষে । তারপরও শুধু নিজের কথা ভেবে যাচ্ছে ! কথাটা মনে হতেই মাথা প্রচণ্ড গরম হয়ে গেল ওর । ও তাই বেশ কঠিন গলায় কেটে কেটে বললো ,

————- ” তুমি কি ধরনের মানুষ ! একে তো ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছিলে ! আজ তোমার জন্য আন্তরিক হসপিটালে ! মাথায় সেলাই পড়েছে ওর ! হাতে চোট লেগেছে ! তুমি ওকে সরি বলবে কোথায় ! তা না নিজের ব্যাপারেই ভেবে যাচ্ছো ! ছিঃ । আর আন্তরিক কেন পুলিশ কমপ্লেন করবে না ! তোমার মতন একটা ছেলের এখন জেলেই থাকা উচিত । ওটাই তোমার জন্য ঠিক ।”

কথাগুলো শুনে এবার তরঙ্গ ডুকরে কেঁদে উঠলো হঠাৎ ! তবে আন্তরিক এবার নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে বললো ,————- ” আমি কোনো কেস করবো না তোমার ওপর তরঙ্গ | ডোন্ট ওরি .. তবে আমি জানি না আজ আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক করছি কি না ! ইন ফিউচার , যদি তুমি এইভাবে ড্রিংক করে গাড়ি চালিয়ে আর একটা একসিডেন্ট করো , তাহলে তার দ্বায় আমারও হবে | কারণ আজ আমি তোমার এগেনস্টে কোনো স্টেপ না নিয়ে সেটা করারই একটা সুযোগ করে দিচ্ছি হয়তো !”

কথাগুলো আন্তরিক তরঙ্গর চোখে চোখ রেখে বললো | এই মুহূর্তে তরঙ্গ ভয়ে না , নিজের ভুলের জন্য কেঁদে ফেললো আবার | ও কিরকম নিজের মনেই বলে উঠলো ,

————– ” আর কোনোদিন এরকম হবে না | প্লিজ , এইভাবে বোলো না ! প্লিজ …”

কথাটা শুনে মেঘনার রাগটা না কমলেও আন্তরিক একটু নরম গলায় বললো , ———– ” ঠিক আছে , বিশ্বাস করলাম তোমাকে | ওঠো প্লিজ মাটি থেকে | আর শেষ বারের মতন বলছি , এইভাবে আর কোনোদিন গাড়ি চালিও না | লাইফ তো একটাই | সেটা তোমার হোক বা রাস্তায় চলা অন্য যে কোনো মানুষের ! সেটা খুব দামি | আর একটা জীবনের সঙ্গে শুধু একজন না , অনেকের জীবন জড়িয়ে | তাই এইভাবে নেশা করে সেইসব জীবন নিয়ে খেলো না | আর ভিড় রাস্তাটা কোনো মজার জায়গা নয় |”

কথাগুলো খুব দৃঢ়ভাবে বললো আন্তরিক | তরঙ্গ এবার সব শুনে কিরকম নিজের ঘোরেই হাতদুটো জোর করে বলে উঠলো , ———— ” খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে , সরি .. রিয়ালি সরি …রিয়ালি..”

কথাগুলো বলে ও ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো , তারপর মেঘনার দিকে তাকালো একবার , কিছু একটা বলার জন্য ! কিন্তু মেঘনা ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলে উঠলো ,

————— ” আমাকে আর কিছু বোঝাতে আসবে না | তোমার মতন মানুষকে চেনা হয়ে গেছে ! আর আমার হাতে থাকলে , আজ আমি নিজে গিয়ে তোমার এজেন্টে পুলিশ একশন নিতাম | আর হ্যাঁ , এরপর আমার সাথে আর কোনোদিন কোনো কন্ট্যাক্ট করার চেষ্টা করবে না | আর লাস্টে , একটা ছোট্ট এডভাইজ দেব , পারলে নিও | ভালো সিঙ্গার হওয়ার আগে না একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা কোরো | ওটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ..”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই ও আন্তরিককে একটু আস্তে গলায় বলে উঠলো , ————- ” আমি গাড়ি ঠিক করছি | বাড়ি চলো |”

আন্তরিক কথাটা শুনে ঘাড় নাড়তেই মেঘনা আর অপেক্ষা করলো না | বাইরে বেরিয়ে এলো গাড়ির খোঁজে | কিন্তু মাথাটা এখনো গরম হয়ে আছে ! তরঙ্গ যে এরকম একটা কাজ করবে ভাবতেও পারেনি ! আর আন্তরিকই বা কি করলো ! ও তরঙ্গর এগেনস্টে কিছুই করলো না ! এতো মহান হতে কে বলেছিলো ওকে ! কথাগুলো ভেবে আন্তরিকের ওপরও একটা টুকরো রাগ এসে জরো হলো ওর | সেদিন এরপর বাড়ি ফেরা অব্দি ট্যাক্সিতে মেঘনা তাই চুপই করে ছিল প্রথমে | তবে আন্তরিক সেটা লক্ষ্য করে নিজেই জিজ্ঞেস করেছিল ,

————- ” কি হয়েছে ? তোমার মুখটা এরকম রাগে লাল হয়ে আছে কেন ?”

কথাটা শুনে মেঘনা এই মুহূর্তে আর কথাগুলো চেপে না রেখে এক্সপ্লোড করেছিল হঠাৎ | ও বেশ রেগে রেগেই বলে উঠেছিল ,

————– ” তুমি কি করে ছেড়ে দিলে তরঙ্গকে ? ও এইরকম অবস্থা করলো তোমার ! যদি কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে ! অসভ্য ছেলে একটা | কোনো সেন্স নেই | ড্রিংক করে গাড়ি চালায় ! তারপর আবার সরি বলতে এসেছে ! পুরোটা ফেক .. শুধু নিজের ইমেজ বাঁচানোর জন্য ঐভাবে কেঁদে কেঁদে নাটক করলো !”

কথাগুলো শুনে আন্তরিক হঠাৎ হেসে ফেললো মেঘনাকে দেখে | মেঘনা ঠিক বুঝতে পারলো না কারণটা ! ওর উল্টে রাগটা আরো বেড়ে গেলো যেন ! আন্তরিক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা অন্য কথা বলে উঠলো হঠাৎ , ————— ” তুমি রাইটার না হয়ে টিচার হতে পারতে | বেশ মানাতো কিন্তু !”

কথাটা শুনে মেঘনা ঠিক কি বলবে বুঝতে পারলো না ! ও একটু অবাক হয়েই বললো , ——— ” কি ! মানে ?”

আন্তরিক এর উত্তরে ঐরকমই হেসে বললো , ———— ” মানে তুমি রাগলে আমিও ভয় পেয়ে যাই | একদম স্কুলের হেড মিসট্রেসের মতন দেখতে লাগে !”

কথাটা শুনে মেঘনা রাগে মুখ ঘুরিয়ে নিলো জানলার দিকে | অদ্ভুত ছেলে ! এরকম একটা সিরিয়াস সিচুয়েশনেও মজা করছে ! তখন আন্তরিক সেই শান্ত গলায়ই উত্তর দিয়েছিলো ,

—————– ” ওর কেরিয়ার সবে শুরু হয়েছে | আমার একটা পুলিশ কমপ্লেন সব শেষ করে দিতো ! আর আমার মনে হয় তরঙ্গ আর কিছু বুঝুক না বুঝুক , ওর ফেম , ওর কেরিয়ার , এইসব কিছু নিয়ে ভীষণ কনসার্নড … তরঙ্গ নিজের জন্যই আর কোনোদিন এই ভুলটা রিপিট করবে না | ওর আজ মনে মিডিয়ার ভয় ঢুকে গেছে | নইলে ঐভাবে সবার সামনে হাত জোর করে মাটিতে বসে পড়তো না !”

কথাটা শুনে মেঘনা এবার জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে বলেছিলো দু সেকেন্ড সময় নিয়ে , ———— ” বুঝলাম |”
<১০>

সেদিন এরপর ট্যাক্সিতেই আন্তরিক মেঘনাকে অন্য একটা কথা বলে উঠেছিল | ও একটু সময় নিয়ে বলেছিলো , ————- ” মেঘনা , বাবাকে এই এক্সিডেন্টের ব্যাপারে কিছু বোলো না প্লিজ | আসলে ঘুরতে গেছে কদিনের জন্য ! আর সেরকম কিছু তো সিরিয়াস হয়নি | শুধু শুধু চিন্তা করবে | এনজয় তো দূরে থাক ! হয়তো ট্রিপের মাঝখান থেকেই বাড়ি চলে আসবে ! ”

কথাটা শুনে মেঘনা সেদিন একটু অবাক হয়েছিল ! এই ছেলেটাকে বাইরে থেকে যতই মনে হোক যে কাজ ছাড়া কিছু বোঝে না , কিন্তু কেউ খুব কাছ থেকে দেখলে বুঝবে , যে কাজের বাইরেও অনেক কিছু বোঝে আন্তরিক | যেটা হয়তো অন্য কেউ খুব সহজে ভাবতে পারবে না ! সবাই জীবনে খুব এটেনশন পেতে চায় | কিন্তু আন্তরিক হয়তো অতটা গুরুত্ব চায় না নিজের জন্য ! কথাগুলো আনমনে কেমন মনে হলো এই চশমা পড়া প্রফেসরকে দেখে মেঘনার | তবে সেই ভাবনাটাকে মনেই রেখে বলে উঠলো অল্প কথায় ,

————- ” চিন্তা কোরো না ! বলবো না কিছু সমরজেঠুকে | আর ফিরে এসে যদি জিজ্ঞেস করে , তাহলে বলবো আন্তরিক বারণ করেছিল | চলবে ?”

কথাটার উত্তরে আন্তরিক এবার এক গাল হেসেই বললো , ———– ” দৌড়োবে |”

এরপর রাতে ডিনার নিয়ে মেঘনা নিজে থেকেই এসেছিলো আন্তরিকের ফ্ল্যাটে | আন্তরিক কলিং বেলের আওয়াজ শুনে আস্তে আস্তে নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে দরজা খুলতেই অবাক ! মেঘনা তখন ওর নিস্পলক দৃষ্টির মাঝেই বলেছিলো , ———- ” ভেতরে আসতে পারি ? তোমার রাতের খাবার | ”

কথাটা শুনে আন্তরিকের সম্ভিত ফিরতে ও একটু দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলেছিলো , ————- ” এইসবের কি দরকার ছিল ! আমি জোম্যাটো অর সুইগি থেকে অর্ডার করে নিতাম !”

কথাটা শুনে মেঘনার পা টা ভেতরে ঢুকতে গিয়েও থমকে গেলো হঠাৎ | ও একটু গম্ভীর হয়েই বললো , ———– ” ঠিকই ! ওকে , আমি এটা ফেরত নিয়ে যাচ্ছি | তুমি তোমার মতন ম্যানেজ করে নাও |”

কথাটা বলে ও ফিরে যেতে যাচ্ছিলো সেই মুহূর্তেই আন্তরিক ওর হাতটা ধরে বলে উঠলো , ————– ” আরে ! যাচ্ছ কোথায় ! ভেতরে এস |”

কথাটা শুনেও মেঘনা একটু কঠিন মুখেই দাঁড়িয়ে রইলো | তখন আন্তরিক কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বলে উঠলো , ——— ” আচ্ছা , সরি … প্লিজ , ভেতরে এস |”

কথাটা শুনে মেঘনা এবার একটু নরম হলো মনে | তারপর ভেতরে এলো নিজে থেকে | ডাইনিং টেবিলে খাবারটা রেখে এরপর বলে উঠলো আস্তে গলায় ,

————— ” খেয়ে দুটো ওষুধ আছে , খেয়ে নিও |”

কথাটা বলেই মেঘনা চলে যেতে যাচ্ছিলো , তখনই আন্তরিক বলে উঠলো , ———- ” বলছি কালকের ব্রেকফাস্টটা পাওয়া যাবে তো ? রুটি তরকারি , স্যান্ডুইচ , যে কোনো কিছু হলেই চলবে !”

এর উত্তরে মেঘনা একটু ভদ্রতার হাসি হেসে বললো , ———— ” কেন ? জোম্যাটো , সুইগি আছে তো ! যা বলবে , নিয়ে আসবে |”

কথাটা শুনে আন্তরিক এবার হেসে ফেললো | তারপর একটুও না ভেবে বললো , ————- ” একবার বাড়ির খাবারের স্বাদ যখন পেয়েই গেছি , তখন জোম্যাটো সুইগির কাছে কে যায় !”

কথাটা বলে আন্তরিক খেয়াল করলো মেঘনা এখনো গম্ভীর | তখন আন্তরিক আবার বলে উঠলো , ————– ” তো কতক্ষন এই রাগটা চলবে ? পুলিশ কমপ্লেন না করার জন্য ?”

আন্তরিকের এই প্রশ্নটাই মেঘনা হঠাৎ একটু অবাক হয়ে গেলো যেন ! এই ছেলেটা কি করে বুঝলো কেন ও গম্ভীর ! আর ওর মনের খোঁজ হঠাৎ আজ রাখছেই বা কেন ! এতদিন যখন কিছুই বোঝেনি ! কথাটা ভেবেই ও এবার একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করে বলে উঠলো , ———- ” না , আমি রেগে নেই | আর আমি কাল ব্রেকফাস্ট দিয়ে যাবো | তুমি নিশ্চই এই চোট নিয়ে কাল কলেজ যাবে না ! যাইহোক , রেস্ট নাও | আসছি | টেক কেয়ার |”

কথাগুলো বলেই মেঘনা চলে যেতে যাচ্ছিলো , কিন্তু থমকে গেলো আন্তরিকের একটা প্রশ্নে | আন্তরিক আসলে এই মুহূর্তে ওকে ডিরেক্টলি জিজ্ঞেস করে উঠলো ,

————– ” তোমার হোয়াটস এপটা আছে, না কি গেছে ?”

প্রশ্নটা শুনে মেঘনা ঠিক কি বলবে বুঝতে পারলো না | তাই একটু কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে কিছু কথা সাজিয়ে বলে উঠলো ,

————– ” না , আসলে , ফোন মেমোরি ফুল হয়ে গেছিলো তো ! তাই এপটা ডিলিট করে দিয়েছি | এমনি !”

কথাটা শুনে আন্তরিক এবার ওর কাছে এসে বললো , ———— ” তাই ! তুমি ফোন মেমোরির জন্য হোয়াটস এপ উড়িয়ে দিয়েছো ! মানে জেনেরালি লোকজন মেমোরি ফুল হলে কিছু ডেটা কম্পিউটারে শিফ্ট করে দেয় | যাইহোক , এমনি এসএমএস করলে রিপ্লাই করবে তো ?”

এটা শুনে মেঘনা সত্যি এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে গেলো | আন্তরিক যে ওকে এইভাবে ডিরেক্টলি জিজ্ঞেস করবে ভাবতে পারেনি ! তবে এই মুহূর্তে তো আর মুখের ওপর না ও বলা যায় না | তাই একটু ভদ্রতা করে বললো , ————– ” হ্যাঁ , নিশ্চই , কেন করবো না ! অবশ্যই রিপ্লাই করবো | যাইহোক , আসি আমি | ”

কথাটা বলেই ও আর দাঁড়ালো না | জোরে পা চালিয়ে আন্তরিকের চোখের আড়াল হয়ে গেলো | আসলে সামনে থাকলে হয়তো আরো কিছু প্রশ্ন শুরু করে দেবে ! যার উত্তরে মেঘনার কিছু বলার নেই ! তাই চোখের আড়াল হয়ে যাওয়ায় ভালো |

এরপরের দিন মেঘনা যখন সকালে আন্তরিক এর ফ্ল্যাটে এসেছিলো , ছেলেটা জ্বর ছিল | আসলে ডাক্তার বলেছিলো কাল যে , যেহেতু সেলাই পড়েছে , তাই যন্ত্রনা জ্বর এইসব থাকতেই পারে এক দুদিন | মেঘনার এসব দেখে খারাপ লাগছিলো খুব | সুস্থ একটা ছেলে ছিল ! একজনের খামখেয়ালিপনা , উশৃঙ্খলতার জন্য তার এরকম অবস্থা হলো ! জলখাবার নিয়ে আসার পর ক্লান্ত মুখের আন্তরিককে দেখে ওর এই ভাবনাগুলোই মনে এসে ভিড় করছিলো | তবে আন্তরিক হয়তো ওর থমকে থাকা মুখটা দেখে বুঝেছিলো কিছু | তাই নিজেই একটু জোর করে সুস্থ দেখানোর চেষ্টা করে বলে উঠেছিল ,

———— ” দেখি কি খাবার এনেছো ? চিঁড়ের পোলাও ! বাহ্ ! ভাগ্গিস এক্সিডেন্টটা হলো ! বাড়ি বসে না থাকলে তো এরকম হোম ডেলিভারি পেতাম না !”

মেঘনা এবার সেই মুখ ভার করেই উত্তর দিয়েছিলো , ———- ” কাকুর জন্য তো এসব রান্না করে অনেক সময়ই পাঠাই ! এরপর জানা রইলো , তোমার জন্যও দেব | কলেজ থেকে ফিরে মাইক্রোওয়েভে গরম করে খেতে পারো | একসিডেন্ট এর দরকার নেই |”

কথাটা শুনে আন্তরিক এই সময় একটু ক্লান্ত গলায় বলেছিলো , ————– ” আচ্ছা , তুমি আজকাল এতো সিরিয়াস থাকো কেন ? মানে সেটা তো আমার ক্যারেক্টার ছিল ! তুমি যে হেসে হেসে কথা বলতে , সেইসবের কি হলো !”

কথাটা শুনে মেঘনা এক সেকেন্ডের জন্য একটু যেন চুপ হয়ে গেলো | ওর হাসি তো একটা গল্পের শেষেই শেষ হয়ে গেছে ! আরাত্রিকা ! কিন্তু এক সেকেন্ড , কাল থেকে আন্তরিকের একসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে আজ অব্দি , মেয়েটা তো ওকে দেখতে এলো না ! যার সাথে বিয়ের ঠিক তার এক্সিডেন্টের খবর পেয়েও এলো না আরাত্রিকা ! কথাটা ভাবতেই মেঘনা আর ঠিক নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না ! ও একটু না ভেবেই বলে উঠলো আন্তরিককে , ————- ” আচ্ছা , আরাত্রিকা কোথায় ? এলো না তো দেখতে !”

কথাটা শুনে মেঘনা খেয়াল করলো আন্তরিক যেন বেশ অবাক হয়েছে ! তবে এর উত্তরে ও একদম না ভেবেই বললো , ———– ” আরাত্রিকা তো দিল্লীতে ! একটা সেমিনার এটেন্ড করতে গেছে | কেন বলো তো ? হঠাৎ আরাত্রিকার কথা বললে !”

মেঘনার এই প্রশ্নে যেন আপনাআপনিই একটা দীর্ঘ্যশ্বাস পড়লো | তবে ও আর কথা বাড়ালো না আরাত্রিকাকে নিয়ে | আন্তরিক নিজে খুব প্রাইভেট পার্সন | ও তো নিজের মুখে কখনো মেঘনাকে শেয়ার করেনি আরাত্রিকার সঙ্গে রিলেশনটা ! হয়তো মেঘনা এতটা কাছের বন্ধু না , যাকে বলা যায় | তাই ওর ও আর যেচে পরে ইন্টারেস্ট দেখানো ঠিক না ! কথাটা ভেবে মেঘনা অল্প কথায় বললো , ———— ” এমনি , কাজের জন্য মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে তো ! তাই ভাবলাম |”

কথাটা বলেই ও ইচ্ছে করেই আর দাঁড়ালো না এখন | এই ছেলেটা যখন অন্য কারোরই , তখন দূরত্বটাই ভালো ! কথাটা মনে আসতেই ও বলে উঠলো ,

—————– ” আমি আসি এখন | কিছু লেখার কাজ আছে | দুপুরে খাবার দিয়ে যাবো |”

তবে দুপুরে আন্তরিক এর কাছে এসে ও আর ঠিক ফিরতে পারলো না ! এতটা জ্বর বেড়েছে ও জানতোই না ! এই জ্বর নিয়ে ও এতক্ষন একা একা ফ্ল্যাটে ছিল এটা ভেবেই ও একটু রেগে বলে উঠেছিল , ———— ” তুমি তো একটা কল করবে আমাকে ! এইভাবে এতো জ্বরে কেউ একা বাড়িতে থাকে ! মাথা ঘুরে পরে টরে গেলে তখন !”

এর উত্তরে আন্তরিক একটু থমকে থাকা গলায় বলেছিলো , ———– ” তুমিই তো বললে যে লেখার কাজ আছে ! আর আমার মনে হয় কাজটা সব থেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট | তখন ডিস্টার্ব করা উচিত না !”

কথাটা শুনে মেঘনা আপনাআপনিই কিরকম আকাশ থেকে পড়লো ! ও বেশ উত্তেজিত হয়েই বললো , ———– ” তুমি জানো তুমি এই গ্রহের প্রাণী না ! মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছো | আই মিন জ্বরের মধ্যেও লোক কাজের কথা ভাবে ! তাও নিজের না , অন্যের !”

আন্তরিক এর ঠিক কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না ! এরকম কথা তো নিজের ব্যাপারে শোনেনি আগে ! তাই একটু মেক আপ দেয়ার জন্যই হাসলো শুধু |

এরপর মেঘনা আন্তরিকের পাশেই বসে রইলো যতক্ষণ না ওর টেম্পারেচার নামলো | ওকে ওষুধ খাওয়ানো , খাবার খাওয়ানো , সব করলো নিজে থেকে | আসলে আন্তরিকের হাতেও চোট লেগেছে কাল ! এখন যন্ত্রণার জন্য খেতে অসুবিধা হচ্ছিলো | তার ওপর জ্বরের মুখে খেতেও ঠিক ভালো লাগে না ! কিন্তু মেঘনাও ছাড়ার পাত্রী নয় | ও বুঝিয়ে বুঝিয়ে ঠিক খাইয়েছে আন্তরিককে | তবে মেঘনা খেয়াল করেছে , আন্তরিক যেন আজ মাঝে মাঝে ওর দিকে একটু অন্য রকমভাবে তাকাচ্ছিলো আজ | একটু থমকে যাওয়া দৃষ্টি ছিল ওর | তবে বিকেলের দিকে জ্বরটা কমে যাওয়ার পর মেঘনা চলে যাওয়ার সময় আচমকা আন্তরিক বলে উঠেছিল ওকে , ————- ” তোমার লেখা আমি পড়েছি | বাবার কাছ থেকে বই নিয়ে | আর অনলাইনে সার্চ করেও | ”

মেঘনা কথাটা শুনে একটু আকাশ থেকে পড়ার মতন মুখ করেই বলেছিলো , ————- ” আমার লেখা ! তুমি পড়েছো !”

কথাটার উত্তরে আন্তরিক আলতো হেসে বলেছিলো , —————- ” কেন ! পড়তে পারি না ! মানছি আমার জার্নাল পড়ার অভ্যেসটাই বেশি | আর গল্প সেই স্কুল লাইফের পর এই তোমার লেখা পড়লাম, এতো দিন বাদে | মানছি , তরঙ্গর মতন সংস্কৃতিমনস্ক নোই ! কিন্তু ভালো লেখা এখনো পড়তে ভালো লাগে !”

কথাটা শুনে মেঘনা যেন একটু অবাক হয়েই বললো , —————– ” তরঙ্গর মতন মানে ! ও কে এমন বিশাল সংস্কৃতিবান ! কালকের পর তো ওর নাম্বারটাও আমি ব্লক লিস্ট এ করে দিয়েছি | কোনোভাবে যাতে আর যোগাযোগ না করতে পারে |”

কথাগুলো শুনে আন্তরিক যেন চোখ দুটো বড়ো করেই বললো , ————- ” তুমি সিরিয়াসলি তার মানে তরঙ্গর সাথে যোগাযোগ রাখবে না ? কিন্তু তোমার তো ওকে পছন্দ ছিল ! মানে তুমি কত সুনাম করতে ওর গানের !”

এর উত্তরে মেঘনা সোজাসুজিই বললো , ———– ” আমার ওর গান পছন্দ ছিল | ওকে কেন পছন্দ হতে যাবে ! যা শো অফ করতো প্রথম থেকেই ! আর একটা জিনিস আমি তরঙ্গকে দেখে বুঝেছি , ভালো শিল্পী হলেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না ! সেটা আলাদা জিনিস | আগে ভাবতাম , গান লেখা , এইসব তো মন থেকে ফিল করার জিনিস | তাই যারা এইসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে , তারাও মন থেকে ভালো হয় | কিন্তু আমি ভুল ছিলাম | তোমাকে দেখে তো আমার !”

না , কথাটাকে আর কমপ্লিট করতে পারলো না মেঘনা | বলতে পারলো না , যে আন্তরিক ওর যত কাছে এসে , ওর মনে ঠিক ভুলের একটা অন্য ছবি তৈরী করেছে ও | যেখানে একজন কাজপাগল কেরিয়ারিস্টিক ছেলেও হিসেব না করে ভাবে , ক্ষমা করতে জানে | কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করলো আন্তরিক যেন এই সময় একটু বেশিই খুশি হয়ে উঠলো হঠাৎ ! ও এক গাল হেসেই প্রায় বললো , ————– ” এর মানে তুমি কোনোদিন তরঙ্গকে লাইক করতে না ? সত্যি ?”

কথাটার উত্তরে মেঘনা ঠিক কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে উঠলো এক কথায় , ———— ” না , মানে , মিথ্যে কেন হবে !”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here