না_চাইলেও_তুই_আমার পর্ব ২৭+২৮+২৯

#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ২৭
সকাল আটটার টার বেশি বাজে। মিরা ঘুম থেকে উঠেছে অনেকক্ষণ। মিরা বাচ্চাটার বিষয়ে ওর মাম্মা পাপার সাথে কথা বলে নিয়েছে। তারা ভিশন খুশি মিরার এই সিদ্ধান্তে। কাল হসপিটালে যে বাচ্চাটা ঘুমিয়েছে আর এখনো ঘুম থেকে উঠো নি। বাড়ির সবাই বাচ্চাটাকে খুব ভালো লেগেছে। এইটুকু বাচ্চা ভালো না লেগে উপায় আছে? মিরা বাচ্চাটার মাথার কাছে বসে মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নীলা বাচ্চাটার পায়ের দিকে দিয়ে বসা। নীলা কৌশলী হয়ে মিরা কে জিজ্ঞাসা করে,

—” আচ্ছা, মিরা ওর নাম কী দিবি ঠিক করলি। শুনলাম এতিমখানার সবাই ওকে বাবু বলে ডাকতো।”

—” ঠিক বলেছো। কী নাম দেওয়া যায় ওর।”

—” তুই ভাব তুই ওর মা।”

—” ভীতুরাম আসুক তারপর ঠিক করবো কী নাম দেওয়া যায়।”

ওদের কথা শুনে বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠে যায়। আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারদিকে তাকায়। মিরা কে দেখে মুখ ভরা হাসি ফুটে ওঠে। মিরাও ওকে দেখে মিষ্টি করে হাসে। আবার বাচ্চাটার কিছু মনে পরে গেলে মন খারাপ করে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

—” থরি অনতি।”

মিরা বাচ্চাদের গালে চুমু খেয়ে বলে,

—” সরি কেনো বাবা?”

বাচ্চাটা মিরার কপালের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” তাল আমাল দন্য তোমাল ব্যথু নেগেছে।”

—” এতে তোমার কোনো দোষ নেই বাবা। তাই সরি বলতে হবে না।”

বাচ্চাটা হেসে বলে,

—” আতথা অনতি।”

মিরা ওকে শোয়া থেকে কোলে নিয়ে বলে,

—” আমি তোমার আন্টি না বাবা।”

—” তাইলে তে তুমি?”

মিরা ওর চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,

—” আমি তোমার মাম্মা।”

বাচ্চাটা “মাম্মা” শব্দ টা শোনার পর অনেকক্ষণ মিরার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে মিরাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। মিরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে ওর এমন কান্না দেখে।

—” বাবা কী হয়েছে কাঁদছো কেনো?”

বাচ্চাটা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

—” মাম্মা? তুমি আমাল মাম্মা?”

মিরা মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। বলতে দেরি কিন্তু বাচ্চাটা মিরাকে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেরি নেই। কিন্তু ফুটানোর জন্য ঠিক মতো দিতে পারছে না। এরমধ্যে মিহান রুমে এসে এই দৃশ্য দেখে। পাশে নীলা হাসি মুখে এই সবকিছু ভিডিও করছে। মিহান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

—” বাহ! বাহ! মা ছেলের কত ভালোবাসা। আর কারো কথা তো মনেই নেই তাদের।”

মিরা মিহানের কথা শুনে ভেংচি কেটে।

মিরা বাচ্চাটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। বাচ্চাটা মিরার গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,

—” মাম্মা তুমি এতু দিন তোতায় থিলে? দানো তোমাল দন্য আমাল কতু কতথ হয়েথে?”

মিরা বাচ্চাটার হাতের উপর হাত রেখে বলে,

—” সরি বাবা। আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবে না। খুব ভালোবাসবো। আর মাম্মার সাথে রাগ করে থেকো না।”

—” না মাম্মা আমি তোমাল থাথে নাগ করিনি। তুমি তো আমাল মাম্মা তোমাল থাথে নাগ কততে পালি।”

ওদের কথার মাঝে মিহান বলে,

—” হয়েছে মা ছেলের কথা? এবার আমার দিকেও একটু নজর দিন আপনারা।”

বাচ্চাটা মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

—” মাম্মা এতা তে?”

মিরা কিছু বলার আগে মিহান বলে,

—” আমি তোমার পাপা।”

বাচ্চাটা মিহানের কথা বিশ্বাস না করে মিরার দিকে তাকায়। মিরা হাসি মুখে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। বাচ্চাটা মিহানের দিকে তাকায়, মিহান হাত বাড়িয়ে বলে,

—” আমার কোলে আসবে না?”

বাচ্চাটা আস্তে আস্তে বিছানার উপর দিয়ে হেটে মিহানের সামনে যায়। সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে বলে,

—” পাপা।”

মিহান ঝড়ের গতিতে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে।

মিরার ভাবনার সমাপ্তি ঘটে মিহানের কথা শুনে। কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে রুমের ভিতরে ঢুকছে। মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে আসতে করে বলল,

—- আস্তে কথা বল না মেয়েটা কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে!”

মিরার কথা শুনে মিহান দেখে তোহা মিরার গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মিহান মিরা কে চোখের ইশারায় বলল,

—-” ও এখানে কীভাবে এলো?”

মিরা তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

—-” আমি নিয়ে এসেছি এখানে। খাইয়ে পরে এখানেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।”

মিহান মৃদু স্বরে বলল,

—-” ভালো করেছো। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে কথা বলছি।”

মিরা ছোট করে বলল,

—-” আচ্ছা।”

ঘুমে আচ্ছন্ন মিরা। ভোররাতে বাড়ি ফিরেছে দুজনে। কালকে রাতটা মিরার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাত হয়ে থাকবে। অসম্ভব ভালো একটা সময় পার করেছে মিহানের সাথে। ঘুমের মধ্যে মিরা অনুভব করতে পারছে কেউ মিরার মুখে চুমুতে দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। পিটপিটিয়ে চোখ খুলে তাকায় মিরা। মিরান মিরার মাথার কাছে বসে ওর মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। মিরা মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল,

—” গুড মর্নিং সোনা।”

মিরান একগাল হেসে বলল,

—” দুদ মর্নিং মাম্মা।”

মিরা মিরানকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

—” কখন উঠেছ ঘুম থেকে?”

মিরান মিরার বুকে মাথা রেখে বলল,

—” কিতুক্ষন আগে।”

মিরা মিরানের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

—” ব্রেকফাস্ট করেছো?”

মিরান মিরার বুকে মাথা রেখে মিরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” হুম, করথি। দাদু কলিয়ে দিয়েছে।”

মিরা মিরানের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,

—” এই তো গুড বয় আমার।”

মিরান মিরার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। মিরা এক দৃষ্টিতে তা উপভোগ করছে। এরমধ্যে অনু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

—” এই যে প্রিন্স, আপনি এখনো এখানে কী করছেন? ওদিকে আপনা দাদা ভাই আপনার জন্য ওয়েট করছে। সে খেয়াল আছে আপনার?”

মিরা মিরানকে বুকে নিয়ে শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বলল,

—” কী হয়েছে অনু? তোমার প্রিন্স কি করেছে?”

অনু বিছানার একপাশে বসে বলল,

—” পাপা এলাকাটা একটু ঘুরতে বের হবে, তাই প্রিন্স কে জিজ্ঞেস করছিলো সেই সাথে যাবে কী না? সেও রাজি হয়ে যাবার জন্য। বের হবার সময় পাপাকে দাঁড় করিয়ে বলে, ‘দাদা ভাই তুমি একটু উয়েট করু, আমি একটু মাম্মাকে আদল কলে আথি।’ এই বলে এক দৌড়ে তোমার রুমে।”

মিরা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় মিরানের দিকে। মিরান মাথায় হাত দিয়ে হতবাক ভঙ্গিতে বলল,

—” এই দা, একদম ভুলে গেথিলাম। মাম্মা আমি একতু দাদা ভায়ুর থাথে ঘুরতে দাই।”

মিরা মিরানের গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে বলল,

—” আচ্ছা, একদম গুড বয় হয়ে থাকবে কেমন?”

মিরান দৌড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

—” আতথা মাম্মা।”

মিরা মিরানের যাবার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে দেয়।

আবারো মিরার ভাবনার সমাপ্তি ঘটে মিহানের কথায়।‌ মিহান ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বলল,

—-” কী হলো কী এত ভাবছো তুমি তখন থেকে?”

মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,

—-” তেমন কিছু না, আজ খুব মিরানের ছোট্ট বেলার কথাগুলো মনে পড়ছে।”

মিহান মৃদু হেসে বলল,

—-” ছোট্ট মিরানের কথা!”

মিরা একগাল হেসে বলল,

—-” হুম আমাদের ছোট্ট মিরান।”

মিরা আবার মন খারাপ করে বলল,

—-” ওর কোন খোঁজ পেলে তুমি?”

মিহান মৃদু স্বরে বলল,

—-” ফোন করেছিলো আমায়, আমি তোহার প্রসঙ্গ তুললে, মিরান এরিয়ে যায়।”

মিহানের কথা শুনে মিরার মন আরো খারাপ হয়ে যায়। কী থেকে কী হয়ে গেছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিরা।
#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ২৮+২৯
মিরান আর তোহার সম্পর্কের বিচ্ছেদের পর কেটে গেছে একটি মাস। এই এক মাসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। সম্পর্কের মধ্যে এসেছে তিক্ততা। পরিবর্তন হয়েছে সম্পর্কের থাকা মানুষগুলো। সব পরিবর্তন এর মাঝেও তোহার কোনো পরিবর্তন নেই। সেই প্রথম দিনের মতো এখনো সে তার ভালোবাসার জন্য পাগল। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটি তার দিকে ফিরেও তাকায় না। যেদিন মিরান তোহাকে প্রত্যাখ্যান করে সেইদিন রাতেই ঢাকায় ফিরে আসে ও। ওই ঘটনার পর থেকেই নিজেকে সবকিছু দেখে গুটিয়ে নিতে শুরু করে মিরান। এ বিষয়ে কেউ কিছু জানতে চাইলে কাজের ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে যায় মিরান। সবাইকে এটা ওটা বলে বোঝানো গেলেও, কিন্তু তোহা ওকে তো আর এসব বলে বোঝানো যায় না। ও ঠিকই এই এক মাসের নিয়ম করে প্রতিদিন মিরান কে ওর ভালবাসার কথা জানিয়েছে। আর মিরান? সে নির্দয়ের মতো প্রতিবার তোহাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তোহা সে হাল ছাড়েনি। ফোনে তো মিরানকে জ্বালানো আছেই আবার হুটহাট করে মিরান হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালের কমবেশি সবাই জেনে গেছে মিরানের সঙ্গে তোহার কিছু একটা চলছে। এ নিয়ে তোহার কোন মাথাব্যথা নেই। তার যত মাথাব্যথা শুধু মিরানকে নিয়ে। এসবের মধ্যে ঘটেছে আর এক কান্ড। কোনভাবে প্রেস মিডিয়ার লোকজন জানতে পারে সিঙ্গার নওশীন তোহা এক ডাক্তারের প্রেমে পড়েছে। এই নিয়ে তো হৈ-হুল্লোড় শেষ নেই তাদের। প্রেস মিডিয়ার লোকজন তো ইতিমধ্যে তোহার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে শুরু করেছে। কখন তোহা বাড়ি থেকে বের হবে? আর কখন ই বা তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে তাকে? কিন্তু তোহা এখনই এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চায় না। তাই সে পদে পদে সর্তকতা অবলম্বন করে চলা ফেরা করে ইদানিং। তোহার বিলাসবহুল গাড়ি থাকতেও মিরানের সঙ্গে দেখা করতে ওর বান্ধবীর গাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু যার জন্য এত কিছু সেই তো বুঝে না তোহাকে। না কী মিরান ওকে বোঝাও না বোঝার ভান ধরে থাকে?

______________________________

এর মধ্যে টিয়া আর রাসেলের সম্পর্কে ধাপ কিছুটা এগিয়ে গেছে। টিয়া এখন রাসেলের বাগদত্তা! ময়মনসিংহ থেকে ফিরে এসে রাসেল ওর চাচি মানে অনুকে সবকিছু খুলে বলে। এখন ও টিয়া কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চায়। রাসেলের বলা সব কথা শুনে রাসেলের বাবা-মা এবং অনু রাসেলের বিপক্ষে চলে যায়। তাদের শিক্ষায় বড় হয়ে কী করে পারলো রাসেল একটা মেয়ের ইমোশন নিয়ে এইভাবে অভিনয় করতে? তারা রাসেলকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা এ বিষয়ে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে না। একদিকে টিয়ার অবহেলা, অন্যদিকে পরিবারের লোকজনের সাথে ওর মত বিরোধ। কীভাবে রাজি করাবে ওর পরিবারের লোকজনকে? টেনশনের ঘরের দরজায় খিল দেয় রাসেল। পরিবারের লোকজন ডাকাডাকি করলে রাসেল দরজা না খুলে দরজার ওপাশ থেকে উত্তর দিয়েছে, সময় হলে ও নিজেই দরজা খুলে দিবে। একদিন একদিন করে তিনটা দিন পার হয়ে যায় কিন্তু রাসেল দরজা খুলে না। রাসেলের বাবা আর চাচা ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে ছিল এই তিন। বাড়ি ফিরে ছেলের এমন অবস্থা শুনে তারা রাসেলকে শত ডাকাডাকি করলেও দরজা খুলে না। পরে তারা দরজা ভেঙ্গে দেখে রাসেল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে আছে। বাড়িতে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার জানায় রাসেল অতিরিক্ত চিন্তা আর না খেয়ে থাকা অসুস্থ হয়ে গেছে। রাসেলের এমন পাগলামী দেখে পরিবারের সবাই রাজি হয়ে যায় টিয়াকে ওদের বাড়ির বউ করে আনতে। রাসেল একটু সুস্থ হলে সপরিবারে যায় টিয়াদের বাড়িতে তারা। কিন্তু মাঝপথে বেঁকে বসে টিয়া। সে কিছুতেই বিয়ে করবে না রাসেল কে। পরে সব কিছু খুলে বলে রাসেল টিয়াকে। রাসেলের সব কথা শুনে বুঝতে পারে টিয়া ওকে নিজের করে পাওয়ার জন্যই এইসব অভিনয় করেছে রাসেল। ক্ষমা করে দেয় রাসেলকে টিয়া। ওদের মান-অভিমান শেষ হলে ওদের পরিবারের লোকজন ঠিক করে আপাতত টিয়াকে আংটি পরিয়ে রাখবে পরে টিয়ার লেখাপড়া শেষ করে রাসেল আর টিয়ার বিয়ে দিবে তারা। ততদিন না হয় ওরা দু’জন দু’জনকে ভালো করে বুঝে নিক।

______________________________

সকাল থেকে মেজাজটা বিগড়ে আছে মিরানের। হসপিটাল বাড়ি আর বাড়ি হসপিটাল করতে করতে ইদানিং রোবটের পরিণত হচ্ছে মিরান। এখন কিছুদিনের জন্য ওর বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু তার কী আর যো আছে। আজ সকাল সকাল একটা ইমারজেন্সি পড়ে গেছে। সারাদিন ওটি, মিটিং করে মাথা ব্যথা করছে মিরানের। এই ক্লান্ত শরীরে গাড়ি নিয়ে বের হয় হসপিটাল থেকে মিরান। কিন্তু হসপিটাল থেকে বেশি দূর যেতে না যেতেই মিরানের গাড়ি আটকে দাঁড়ায় আর একটা গাড়ি। একেতো মাথার যন্ত্রণা তার উপরে মাঝরাস্তায় এমন উটকো ঝামেলা। মিরান গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। উফ আবার সেই মেয়েটা! মিরান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়, আজ এই মেয়েটা কে ভালো মন্দ কিছু বলবে মিরান। এভাবে যখন তখন এসে ওকে বিরক্ত করার মানে কী? ও তো কবেই বলে দিয়েছিল মিরান তোহা কে ভালোবাসে না। তাহলে? তাহলে ওকে এত বিরক্ত করছে কেন? আজ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে মিরান তোহা কে যাচ্ছেতাই বলে। আর তোহা মাথা নীচু করে মুখ বুজে সবকিছু শুনে। মিরান অনেকক্ষণ তোহাকে অপমান দায়ক কথা বলে ওখান থেকে চলে যায়। মিরান চলে গেলে তোহা ওখানে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে।

______________________________

আজ খুব দেরী করে বাড়িতে ফিরে তোহা। চোখ মুখের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। তোহা বাবা-মা তোহা বাড়িতে ফিরছে পর থেকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। তোহা ওদের কথা শুনে ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

—-” বাবা, কয়েকমাস আগে তুমি আমাকে বলেছিলে তোমার কোন বন্ধু ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি রাজি আছি এই বিয়েতে কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। বিয়েটা হবে সাত দিনের মধ্যে, আর বিয়েতে কোন জাঁকজমক হবে না। বিয়েটা ঘরোয়াভাবেই হবে।”

তোহা বাবা হতবাক হয়ে তোহার দিকে তাকায়। আজ কতদিন পর তাঁর মেয়ে তার সঙ্গে দুটো কথা বলল। কিন্তু তোহা যে মিরান কে ভালোবাসে, তার কী হবে? তোহার বাবা তোমাকে কিছু বলার আগে তোহার মা তোহাকে চিন্তিত হয়ে বলল,

—-” কিন্তু তুই যে মিরান….

তোহার মায়ের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তোহা বলল,

—-” আমি আর অন্য কোন কথা শুনতে চাই না। বিয়ের আয়োজন করা না হলে আমার দু’চোখ যেদিকে যায় সে দিকে চলে যাব আমি।”

এইটুকু বলে তোহা আর এক মিনিট না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে যায়। তোহার বাবা-মা বিস্ময় নিয়ে তাকায় দু’জন দু’জনের দিকে। এই মেয়ে যে কতটা রাগী তা তারা দু’জনে খুব ভালো করে জানে। তাছাড়া তোহার চোখ-মুখ বলে দিচ্ছে ওর সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু এখন কী করবে তারা? তোহার কথা না শুনলে যে তোহা আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। না আর কিছু ভাবতে পারছে না তারা।

______________________________

তোহার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকে মন ভালো নেই মিরানের। খালি তোহার করা পাগলামির কথা মনে পড়ছে। রাত তো অনেক হয়েছে কিন্তু আজ এখনো ফোন দিল না যে? তাহলে কী তখনকার ব্যবহারের জন্য মন খারাপ করে আছে? তখন মিরানের উচিত হয়নি ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার করা। আর ওই বা কী করবে? তখন মেজাজটাই তখন বিগ্রে গেছিলো? ওর সঙ্গে না হয় দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেবে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখটা লেগে যায় বুঝতে পারেনি মিরান।

______________________________

অন্ধকার রাতে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে তোহা। চোখের পানিগুলো আজ যেন থামতেই চাইছে না। এতদিন মিথ্যে আশায় বুক বেধে ছিল ও। ও যাকে চেয়েছিলাম সে তো আর ওকে চায় না। শুধু শুধু মিথ্যে আশায় থাকা যে নতুন করে জীবন সাজানো অনেক ভালো ওর মতে। থাকুক না সে তার মতন করে। গল্পটা না হয় একতরফা ভালোবাসাই থাক।

চলবে….

পরের পর্বে গল্পটা শেষ করে দেওয়া হবে।
চলবে….

যারা আজকের পর্বের কিছুই বুঝতে পারেননি, তাদেরকে বলছি তারা সিজন দুই না পড়লে এই পর্ব বা আগামী দুই এক পর্বের কিছুই বুঝতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here