না_চাইলেও_তুই_আমার পর্ব ৩৪+৩৫

#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩৪
কলিংবেলের শব্দে ঘুম ছুটে যায় জান্নাতের। চোখ কচলে সামনে তাকায়, ইতিমধ্যে জান্নাতের মা কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দেন। জান্নাতের বাবা এসেছে। জান্নাতের বাবা প্রতিদিন দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন কিন্তু আজ অনেকখানি দেরি করে ফেলেছেন তিনি। দুপুরে জান্নাত ভার্সিটিতে থাকায় জান্নাতের বাবার সঙ্গে একসাথে বসে খাওয়া হয়না, কিন্তু রাতে জান্নাত অপেক্ষা করে তখন তার বাবার বাড়িতে ফিরবে আর একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করবে। আজ বাবার অপেক্ষা করতে করতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল জান্নাত। জান্নাতের বাবা তাড়াতাড়ি করে রুমের সে জান্নাতের গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,

—-” সরি মামনি। আজ খুব দেরি করে ফেলেছি তোমার বাবা। তুমি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বস, আমি ফ্রেশ হয়ে এখনি আসছি।”

জান্নাত কে কিছু বলল সুযোগ না দিয়ে জান্নাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তুমি তাড়াতাড়ি খাবার গরম করে নেও। বড্ড খিদে পেয়েছে।”

জান্নাতের মা রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,

—-” তাড়াতাড়ি করবে, মেয়েটা সেই সন্ধ্যার পর থেকে না খাওয়া।”

জান্নাতের বাবা নিজের রুমের দিকে চলে গেলে। জান্নাত ও উঠে ফ্রেশ হতে যায়। জান্নাত ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” মা হল তোমার বড্ড খিদে পেয়েছে যে!”

জান্নাতের মা রান্না ঘর থেকে এসে টেবিলের উপর একটা বাটি রেখে বলল,

—-” এখন বড্ড খিদে পেয়েছে? এতক্ষণ যে বললাম খেয়ে নে আজ হয়তো তোর বাবার আসতে লেট হবে।”

জান্নাত ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

—-” তুমিও তো খাওনি, তুমিও তো বাবার জন্য এতক্ষণ ওয়েট করেছ। তার বেলায়? তার বেলায় কিছু না তাই না?”

জান্নাতের মা জান্নাতের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,

—-” উফ, তুই এত কথার ঝুড়ি পাস কোথা থেকে? সব কথার উত্তর তোকে দিতে হবে!”

এরমধ্যে জান্নাতের বাবা এসে বলল,

—-” কী নিয়ে মা মেয়ে কথা বলছ তোমরা?”

জান্নাতের মা দুষ্টুমির সুরে বলল,

—-” সে কথা তোমার না জানলেও চলবে, এটা আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার।”

জান্নাতের বাবা মন খারাপের অভিনয় করে বলল,

—-” আমাকেও বলা যাবে না?”

জান্নাত এবং জান্নাতের মা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

—-” নো।”

জান্নাতের বাবা জান্নাতের পাশে চেয়ার টেনে বসে জান্নাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তোমাদের সিক্রেট কথা গুলো পরে শুনব, আমায় খেতে দাও আমার বড্ড খিদে পেয়েছে।”

জান্নাতের মা সবকিছু বেড়ে দিতে দিতে বলল,

—-” এতই যখন খিদে পেয়েছে বাইরে থেকে তাহলে কিছু খেলে না কেন? এতক্ষণ খিদে সহ্য করার কোন মানে হয়? না হয় আমায় ফোন করে বলতে আমি তোমার খাবারটা না হয় থানায় পাঠিয়ে দিতাম!”

জান্নাতের বাবা খাবার প্লেটে হাত দিয়ে বলল,

—-” আমি আগে থেকে জানতাম নাকি আজ এত দেরি হয়ে যাবে? আসলে আজ সন্ধ্যায় আমাদের থানায় শান্ত আসে।”

শান্তর নাম শুনে জান্নাত খাবার থামিয়ে ওর বাবার দিকে তাকায়। জান্নাতের মা চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

—-” এই শান্ত টা আবার কে?”

জান্নাতের বাবা কপাল ভাঁজ করে বলল,

—-” সেকি এরমধ্যেই ভুলে গেলে? আরে আমাদের মেয়েকে যেই ছেলেটা বাড়ি পৌছে দিয়ে গেল সেই শান্তির কথা বলছি আমি।”

জান্নাতের বাবার কথা শুনে জান্নাতের মায়ের মনটা নরম হয়ে গেলো, তিনি নরম সুরে বলল,

—-” ও তোমাদের থানায় এসেছিল কেন? তোমার সঙ্গে বুঝি দেখা করতে?”

জান্নাতের বাবা হালকা হেসে বলল,

—-” আরে না, না সেই সময় কী ওর আছে? ও আমাদের এলাকায় এসেছিল একটা ক্রিমিনাল কে ধরতে। ছদ্মবেশে আমাদের এলাকাতে গায় ডাকা দিয়ে ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি, কিছুক্ষণ আগে ওই ব্যাটাকে ধরতে আমরা সক্ষম হয় হই। অবশ্য এর পুরো ক্রেডিট ই শান্তর।”

জান্নাতের বাবা জান্নাতের মা মৃদু স্বরে বলল,

—-” তা তুমি ওকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে এলে না কেন? আমিও এই সুযোগে ছেলেটাকে দেখে নিতাম!”

জান্নাতের বাবা জান্নাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তোমার কী মনে হয় আমি ওকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলিনি? বলেছি কিন্তু ওর আজ কাজ ছিল বিদায় আসতে পারেনি। কিন্তু শান্ত আমাকে কথা দিয়েছে পরশুদিন শান্ত আর ওর বেস্টফ্রেন্ডর পরিবার আসবে আমাদের বাড়িতে।”

জান্নাতের বাবার কথা শুনে জান্নাতে মনের ভিতর দিয়ে শীতল বাতাস বয়ে যায়। শান্ত আসবে, ওনার সঙ্গে আবার দেখা হবে ওর। ইতিমধ্যে ভাবনার সমাপ্তি ঘটে জান্নাতের। জান্নাতের বাবা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তোর বাঁদর বাহিনীকে বলে দিস পরশুদিন এসে তোর মায়ের হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিতে। তোর মা একা হাতে এতকিছু সামলাতে পারবে না।”

জান্নাত মৃদু হেসে বলল,

—-” আমি বলে দেব ওদের, তুমি চিন্তা করো না।”

জান্নাতের মা বাবা মেয়েকে ধমক দিয়ে বলল,

—-” পরে কথা বলব আগে খেয়ে নাও তোমরা।”

জান্নাতের মায়ের ধমক শুনে দু’জনেই চুপচাপ খেতে শুরু করে।
______________________________

হঠাৎ করে মুখে পানি পড়ায় পিটপিটিয়ে তাকায় তোহা। মাথাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে। মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে কেউ ঘুরছে। মাথায় হাত দিয়ে তোহা ধীরে ধীরে চারিপাশে তাকায়। কতগুলো অপরিচিত ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। কিন্তু এরা ওর রুমে এলো কীভাবে? আর ওর রুমে ঢুকতেই বা দিল কে এদেরকে? উফ, তার উপর মাথার এই অসহ্য যন্ত্রণা। তোহা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। মিরান হতচ্ছাড়া টার জন্য টেনশন করতে করতে কখন যে চোখটা লেগে গেছিল তা আর মনে করতে পারছে না তোহা। তোহা উপলব্ধি করে সেই কখন থেকে কেউ ওকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে আর ওর তার বুকে মাথা রেখে আছে। তোহা আবার চোখ খুলে ডানে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে তোহা। বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে, এটা কী ও স্বপ্ন দেখছে? হ্যাঁ, হ্যাঁ স্বপ্নই হবে হয়তো! স্বপ্ন ছাড়া তো মানুষটার বুকে যে ও মাথা রেখে আছে এ কথা ও ভাবতেই পারেনা। ও নিজে থেকে কথা বলতে গেলেও কেমন একটা ভাব করে ওর সঙ্গে। আর সেই মানুষটা কিনা….. তোহা আলতো করে চোখের পলক ফেলে আবার তাকায় তার দিকে। তোহার সামনে থাকা ব্যক্তি বাঁকা হেসে তোহার দিকে একটু ঝুঁকে ওর মুখে ফু দিয়ে বলল,

—-” কী গো বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার মিরান তোমার সামনে বসে আছে?”

তোহা ডান-বাম মাথা নাড়িয়ে ইশারায় না বলে। মিরান তোহার এমন মাথা নাড়ানো দেখে হেসে দিয়ে টুপ করে তোহার গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে বলল,

—-” এবার বিশ্বাস হয়েছে নাকি আরো কিছু করতে হবে?”

তোহার হাত আপনার আপনি ওর গালে চলে যায়। একের পর এক বিস্ময় হয়ে যাচ্ছে তোহা। স্বপ্নের মধ্যে কী চুমু খাওয়া যায়? কই না তো এমন ভয়ানক কথা তো কখনো শুনিনি। তাহলে কী এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব? কিন্তু মিরান এখানে এলো কিভাবে? আর ওই অপরিচিত ছেলে মেয়ে গুলো বা কে? তোহা গালে হাত থাকা অবস্থায় পিট পিটিয়ে তাদের দিকে তাকায়। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। তোহা হঠাৎ খেয়াল করলো তাদের পিছনে দেওয়ালের দিকে, ক্যালেন্ডার টাঙ্গানো আছে। কিন্তু ওর রুমে তো কোন ক্যালেন্ডার টাঙ্গানো নেই। তাহলে? তোহা চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকায়। এটাতো ওর রুম নয়। ও এখানে এলো কিভাবে? মিরান নিয়ে এসেছে? কিন্তু কখন বা কিভাবে নিয়ে এলো? চোখ যায় ওদের থেকে সামনে একটা টেবিলে, সেখানে একটা ভদ্রলোক বসে মাথা নিচু করে কিছু লেখালেখি করছে। তোহার ভাবনার সমাপ্তি ঘটে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে-মেয়ের মধ্যে একটা ছেলে বলল,

—-” মিরান রে ভাবি মনে হয় এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। তার ওপরে তার চুমু! বেচারী একসাথে এতগুলো ধাক্কা সামলাতে পারেনি। দেখ না কেমন ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”

ছেলেটার কথা শুনে সবাই উচ্চশব্দে হাসতে শুরু করে। মিরান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

—-” তাই তো দেখছি, কী করা যায় বলোতো?”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে-মেয়ের মধ্যে একটা মেয়ে ওদের ধমকের সুরে বলল,

—-” এই তোরা কী শুরু করেছিস? এমনিতেই মেয়েটা কনফিউজ হয়ে আছে। তোরা আর পকর পরক করে ওর মাথা খাস না। আর মিরান তোকে বললি, রাত তো অনেক হলো। এবার কাজ শুরু করতে বল। আমাদের তো আবার বাড়ি ফিরতে হবে।”

মেয়েটা কথা শুনে মিরান হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। খুব বেশি রাত হয়নি। মাঝরাত বলা যায়। কিন্তু ওদের তো বাড়ি ফিরতে হবে। সকালে অফিস আছে ওদের। মিরান ওর চিন্তা ভাবনার সমাপ্তি করে টেবিলে বসে থাকা ভদ্রলোক টাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

—-” আপনি বিয়ের কাজ শুরু করুন।”

‘বিয়ে’ মানে কার বিয়ে? তোহা বিস্ফোরিত চোখে তাকায় মিরানের দিকে।#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩৫
কাজী অফিসের সামনে পর পর দুটো গাড়ি এসে থামে। প্রথম বাড়ি থেকে আতিক সাহেবের ফ্যামিলি বেরিয়ে আসে, দ্বিতীয় গাড়িটা থেকে মিহানদের ফ্যামিলি বেরিয়ে আসে। আতিক সাহেব আর মিহান দু’জনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। আতিক সাহেব মিহানের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলল,

—-” এখানে আর দাঁড়িয়ে কি করবো আমরা? চলন বিয়াই সাহেব না হলে ওদিকে আপনার ছেলে আমাদের ছাড়াই বিয়ে করে ফেলবে।”

মিহান ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,

—-” তাই চলুন ওদিকে কেমন পরিস্থিতি তা তো আমরা জানি না। হয়তো তোহা মামনি খুব রেগে আছে।”

মিরা মিহান কে তাড়া দিয়ে বলল,

—-” তোমরা এ বিষয়ে পরে কথা বলতে পারবে, এখন ভিতরে চলো।”

মিরার কথায় সুর টেনে স্নেহা বলল,

—-” হ্যাঁ ভাবি একদম ঠিক কথা বলেছে এই তোমরা চলো তো। তোমাদের কথা একবার শুরু হলে আর থামার নাম নিবে না।”

নিজেদের গিন্নীদের কথা শুনে মিহান আর আতিক সাহেব তাদের সঙ্গে কাজী অফিসের ভিতরে যায়।

কাজী অফিসের ভিতরে ঢুকে দেখে কেমন একটা থমথমে পরিবেশ। কাজী সাহেব মাথা নিচু করে কিছু লেখালেখি করছে। মিরানের দৃষ্টি ফোনে আবদ্ধ। মিরানের বন্ধু গুলো নিজেদের মধ্যে কী নিয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। আর তোহা? সে তো বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে মিরানের। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। মিহান আর আতিক সাহেব দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা তো এখানে দাঁড়িয়ে কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ মিরান ফোনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে কাজীর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আর কতক্ষণ লাগবে পেপারস রেডি করতে?”

কাজী সাহেব মাথা তুলে তাকায়। তার চোখে-মুখে বিরক্ত ছাপ। সে বিরক্ত, চরমভাবে বিরক্ত মিরানের উপরে। বিরক্ত হওয়ার ই কথা, রাত একটা তেইশ মিনিটে সময় এই ভদ্র ছেলে টা তার সাঙ্গোপাঙ্গ পাঠিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এখানে। এখানে আসার কিছুক্ষণ পরে কনের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে কনে হল সিঙ্গার নওশীন তোহা, আর তাকে এখানে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে। তার ভাবনার ইতি ঘটিয়ে মিরান একটু উঁচু গলায় বলল,

—-” কী হলো হারিয়ে গেলেন?”

কাজী সাহেব ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

—-” হ্যাঁ মানে না বল।”

মিরান ভুরু খানিকটা কুঁচকে বলল,

—-” নতুন করে আর কী বলব? বলেছি বিয়ের পেপারস গুলো রেডি হয়েছে?”

কাজী সাহেব টেবিলের উপর থেকে কলম টা হাতে নিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আর একটু বাকি আছে।”

মিরান বিরক্ত মুখ করে বলল,

—-” তাড়াতাড়ি।”

মিরানের কথা শেষ হতে না হতেই তোহা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—-” এখানে কি হচ্ছে আমাকে কেউ বলবে প্লিজ!আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমিতো আমার রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাহলে? কি হল কথা বলছ না কেন কেউ? আমি এখানে কিভাবে এলাম? তখন থেকে হেঁয়ালি করে কথা বলে যাচ্ছে সবাই। তাহলে এখন কথা বলছো না কেন?”

তোহার কথা শুনে মিরান ফোন ঘাটাঘাটি করতে করতে বলল,

—-” আমি এনেছি এখানে, এক কথায় বলতে গেলে আমি কিডন্যাপ করে এনেছি তোমাকে।”

তোহা চোখ বড় বড় করে মিরানের দিকে তাকায় ‘তুমি’ করে বলল তাকে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। অনেকটা বর্ষাকালে কোকিল ডাকার মত। নিজেকে সামলে নিয়ে রাগী গলায় তোহা বলল,

—-” আপনি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছেন মানে? আর ঐ লোকটাকে কিসের কাগজপত্র রেডি করতে বলছেন?”

মিরান এবারো তোহার দিকে না তাকিয়ে বলল,

—-” মানে হল আমি তোমার মুখে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে সেন্সলেস অবস্থায় এখানে নিয়ে এসেছে। আর রইল বাকি ঐ লোকটা কিসের কাগজ তৈরি করছে তাই তো? একটু আগে শুনতে পাওনি তিনি বিয়ের কাগজ রেডি করছেন।”

তোহা অবাক গলায় বলল,

—-” বিয়ে? কার বিয়ে?”

মিরান এবার তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তোমার আর আমার বিয়ে।”

তোহা বিস্ময় চোখে মিরানের দিকে তাকায়। কী বলল লোকটা কিছুক্ষণ আগে? ওদের বিয়ে? এই লোকটা কি পাগল টাগল কিছু হয়ে গেলো? না কী মজা করছে? তোহা বিস্ময় গলায় বলল,

—-” কী বলবেন তোমার আর আমার বিয়ে মানে?”

মিরান আর কিছু বলার আগে মিরারা ভিতরে ঢুকে আসে। তোহা ওদের দেখেই বিস্ময়ের উপর বিস্ময় হয়ে যাচ্ছে। তোহা ওদের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় গলায় বলল,

—-” তোমরা এখানে?”

আতিক সাহেব মৃদু স্বরে বলল,

—-” মেয়ের বিয়েতে তার বাবা-মা থাকবে না তাই কখনো হয়। তাই চলে এলাম তোদের বিয়ের সাক্ষী হতে।”

তোহা হতবাক গলায় বলল,

—-” তোমরাও কী এই ডাক্তারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আছো? যে তার সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছো।”

স্নেহা ধীর গলায় বলল,

—-” আরে না, না তা কেনো হবে। আমরা….

স্নেহার কথার মাঝে কাজী সাহেব উঠে বলল,

—-” কাগজপত্র সব রেডি, বর-কনে টেবিলের সামনের চেয়ারে বসুন।”

কাজীর কথা শুনে তোহা উঠে বসে চেঁচিয়ে বলল,

—-” কিসের বর-কনে? কোন বিয়ে হবে না এখানে।”

আতিক সাহেব এগিয়ে এসে বলল,

—-” মা তুই এইভাবে চেঁচামেচি করছি কেন? তুই তো মিরান কে ভালোবাসিস, তাহলে বিয়ে করতে চাইছিস না কেন?”

তোহা থমথমে গলায় বলল,

—-” ভালোবাসি না, ভালোবেসে ছিলাম। আগে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর না।”

______________________________

শান্ত বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। শান্ত ফ্রেশ হয়ে এলে শান্তর মা শান্ত কে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,

—-” এই শুন আমি আর তোর জন্য রাত জেগে বসে থাকতে পারবো না। আমার বয়স হচ্ছে না কী!”

শান্ত খেতে খেতে বলল,

—-” তোমার আবার কী হয়েছে?”

শান্তর মা মৃদু স্বরে বলল,

—-” আমার আবার কী হবে? কোথায় ছেলে বিয়ে দিয়ে ছেলের বউ এর কাছে সংসারে দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হবো তা না।”

শান্ত চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

—-” তুমি আবার আমার বিয়ে নিয়ে পড়লে কেন?”

শান্তর মা মুখ গোমরা করে বলল,

—-” হ্যাঁ, তুই তো বিয়ে করবি না সন্ন্যাস নিবি বলে ঠিক করে রেখেছিস। ওদিকে তোর সবগুলো বন্ধুরা বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করছে।”

শান্ত ছোট করে বলল,

—-” কই সবগুলো মিরান তো এখনো বিয়ে করেনি।”

শান্তর মা মৃদু স্বরে বলল,

—-” আজ্ঞে না আজ আপনার ওই বন্ধুটিও বিয়ে করতে চলেছে।”

শান্ত খাবার থামিয়ে বিস্ময় চোখে বলল,

—-” কী? কী বলছো এসব?”

শান্তর মা ধীর গলায় বলল,

—-” ও তোকে তো বলতে একদম ভুলে গেছিলাম মিরান ফোন করেছিল ঘণ্টা দুয়েক আগে, তোকে ফোনে না পেলে আমাকে ফোন করছিল। তোর ফোন নাকি আজ সকাল থেকে বন্ধ ছিল।”

শান্ত কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

—-” হ্যাঁ মা আজ ফোনটা সারা দিন বন্ধ ছিল। আসলে ফোন কালকে রাতে চার্জ দিতে মনে ছিলো না। তার উপরে আর সারাদিনে কাজের ব্যস্ততায় ফোনের কথা একদমই ভুলে গেছিলাম। এখন বলতো কী হয়েছে?”

শান্তর মা মৃদু স্বরে বলল,

—-” মিরান আজ তোহাকে বিয়ে করছে। কিছুক্ষণ আগে মিরু আর তুলি এসে টিয়াকে নিয়ে গেছে ওদের সঙ্গে। হয়তো এতক্ষণে ওদের বিয়েও হয়ে গেছে। মিরান তোকে বারবার ফোন করছিল এই কথা টা জানাবার জন্য কিন্তু তোকে ফোনে না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমাকে ফোন করেছে। আমাকে বলে আমি যেন তুই বাড়ি ফিরলে তোকে এই কথাটা জানাই।”

শান্ত বিস্ময় গলায় বলল,

—-” মা কী বললে তুমি? তোহা আর মিরানের বিয়ে? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে নাতো?”

শান্তর মা ভুরু কুঁচকে বলল,

—-” তোর কী মনে হয় আমি তোর সঙ্গে মজা করছি? আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুই তোর মিরা আন্টি কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর।”

শান্ত কি বলব নিজেই বুঝতে পারছিনা। এই বিষয়টা বিশ্বাস করা বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে শান্তর জন্য। মিরান তোহার বিয়ে অনেকটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। না না এখনই কথা বলতে হবে’ মিরানের সঙ্গে। ওকে জানতে হবে পুরো বিষয়টা। শান্ত আর ওর মাকে কিছু না বলে তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে বড় বড় পা ফেলে ওর রুমের দিকে যায়।

চলবে…..

পরের পর্বটা লেখা শুরু করেছি। রাত সাড়ে দশটার আগে লেখা শেষ করতে পারলে পোস্ট করে দিব না হলে পরের পর্ব কালকে পাবেন।

[ বিঃদ্রঃ পরের পর্বে গল্পটা শেষ করে দেওয়া হবে। তাই সাজিয়ে লিখতে একটু সময় লাগছে। ধন্যবাদ। ]

🍁 sarjin’s Stories 🍁

চলবে…..

🍁 sarjin’s Stories 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here