#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩২
সেই কখন থেকে গাড়িতে বসে ফোন করে যাচ্ছে তোহাকে কিন্তু তোহা তো ফোন ধরার নামে নিচ্ছে না। তোহার টেনশনে আজ হসপিটালে যাইনি মিরান। সকাল বেলা কিছু না খেয়েই চলে এসেছে তোহাদের বাড়ির সামনে। এখন কী করে তোহার অভিমান ভাঙ্গাবে বুঝতে পারছিনা মিরান। তোহা ফোন না ধরায় মিরান তুলিকে ফোন করে। রিং বাজার কয়েক মুহূর্ত পরে তুলি ফোন রিসিভ করে। তুলি কিছু বলার আগেই মিরান বলল,
—-” তুলি!”
তুলি ভাব নিয়ে বলল,
—-” আরে ডাক্তার ভাইয়া যে, আজ কি ভাবে মনে পড়লো আমায়?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” একটা হেল্প লাগবে।”
তুলি মুখ বাঁকা করে বলল,
—-” তুলি এমনি এমনি কারো হেল্প করে না। আমি তোমার হেল্প করব তার বিনিময় আমি কী পাবো?”
মিরান ছোট করে বলল,
—-” কী চাই তোমার?”
তুলি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
—-” এত তাড়াতাড়ি বলব কিভাবে? ভাবতে একটু সময় দাও। উম্ম…. হ্যাঁ পেয়েছি। আমাকে একটা লেটেস্ট স্মার্টফোন কিনে দিলেই হবে।”
তুলির কথা শুনে মিরান হালকা হেসে বলল,
—-” ওকে ডান তুমি যা চাইবে তাই তোমাকে কিনে দেবো কিন্তু তোমাকে আমায় হেল্প করতে হবে।”
তুলি হাসিমুখে বলল,
—-” তা আর বলতে, এখন বল আমাকে কী করতে হবে?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” তোহা কী করছে এখন?”
তুলি গলা পরিষ্কার করে অভিনয় করে বলল,
—-” উঁহু… উঁহু…. ঘটনা কি ভাইয়া তুমি হঠাৎ আমার বোনের খোঁজ নিচ্ছো?”
মিরান বাঁকা হেসে বলল,
—-” বউয়ের খোঁজ নেবো না তো আর কারো খোঁজ নেব শালী সাহেবা?”
মিরানের কথা শুনে তুলি কিছুটা ভড়কে যায়। তুলি মিনমিনে বলল,
—-” ভাইয়া তুমি আমাকে শালী বললে যে?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” শালী বলবো না তো আর কী বলবো? যাই হোক ছাড় এসব কথা এখন বলো তোমার আপু এখন কী করছে?”
তুলি ধীর গলায় বলল,
—-” রুমে আছে আর মাঝে মাঝে ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছে।”
মিরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—-” ঠিক আছে তুলি, আজ সারাদিন তুমি তোমার আপুর উপর নজর রাখো। বেচাল কিছু দেখলেই আমাকে জানাবে।”
তুলি মৃদু স্বরে বলল,
—-” ঠিক আছে ভাইয়া, রাখি এখন।”
তুলি ফোন রাখলে মিরান কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে।
______________________________
বিকাল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মিরান এখনো বাড়ি ফিরিনি। অফিস থেকে ফিরেছে পর থেকে চিন্তা করছে মিরা। সকালে মিরানের চোখ মুখের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। না জানি এখন ছেলেটা কোথায় আছে। এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে আসে মিরান কে ফোন দেয়। রিং বাজার সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে মিরান। মিরা ধীর গলায় বলল,
—-” বাবা তুই কই আছিস? এখনো বাড়ি আসিস নি কেন?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” আশেপাশে আছি মাম্মা। বাড়ি ফিরতে দেরী হতে পারে।”
একটুকু বলে থেমে আবারও মিরান বলল,
—-” আচ্ছা মাম্মা তোহা যদি আমার বউ হয় তাহলে কী তুমি খুশি হবে?”
মিরানের কথা শুনে মিরা অবাক হয়। মিরা অবাক গলায় বলল,
—-” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” বলো না!”
মিরা ঠোঁটে হাসি এনে বলল,
—-” খুশি হবো মানে খুব খুশি হবো। তোহার মত মেয়ে হয় না। তোহা তোর জন্য একদম পারফেক্ট জীবনসঙ্গী।”
মিরান মৃদু হেসে বলল,
—-” তুমি তাহলে রেডি থেকো মাম্মা তোমার বৌমা কে বরণ করে নেওয়ার জন্য।”
মিরা অবাক গলায় বলল,
—-” কি বলছিস কি তুই বরণ করবো মানে?”
মিরান হাসি আরেকটু প্রসারিত করে বলল,
—-” আমি তোহা কে বিয়ে করতে চলেছি মাম্মা। দোয়া করো আমাদের জন্য।”
মিরা আবারও অবাক হয়ে বলল,
—-” বিয়ে করছিস মানে?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” তোমার বৌমা আমার সঙ্গে অভিমান করে আছে। অভিমান ভাঙ্গানোর পর একেবারে বাড়িতে ফিরে সব কিছু বলবো তোমায়। এখন রাখছি ফোন তোমার বৌমাকে কী করে বিয়ে করবো তার প্ল্যানিং করতে হবে।”
মিরাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মিরান ফোন কেটে দেয়। মিরা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একা একা বলল,
—-” এই ছেলে তো দেখছি একদম ওর পাপার কার্বন কপি হয়েছে।”
______________________________
মিরান ফোন রাখতে না রাখতেই তুলি ফোন দেয় মিরান কে। মিরান ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তুলি বলল,
—-” ভাইয়া আপুকে একটু আগে দেখলাম তোমার বন্ধু শান্ত ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা বলছে।”
মিরান অবাক হয়ে বলল,
—-” বল কী? কী কথা বলছে?”
তুলি কথাগুলো মনে করে বলল,
—-” ওরা বলছিল কাকে যেন জব্দ করেছে, ওদের প্ল্যান সাকসেসফুল হতে চলেছে। আর বেশি কিছু শুনতে পাইনি।”
মিরান কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর বলল,
—-” আচ্ছা এই ব্যাপার দাঁড়াও হয়াচ্ছি তোমাদের প্লান সাকসেসফুল।”
তুলি অবাক গলায় বলল,
—-” কী বলছ ভাইয়া তুমি এসব? প্লান মানে কিসের প্লান?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” তুলি আমি তোমাকে কিছুক্ষণ পর ফোন করছি।”
তুলির উত্তরের অপেক্ষা না করে মিরান ফোন কেটে দেয়।
______________________________
দলের মিটিং শেষ করে সবে বের হয়েছে আতিক সাহেব। মিটিং রুম থেকে বেরোতে বেরোতে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি, তখন ফোন বেজে ওঠে তার। অপরিচিত নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকায় আতিক সাহেব। এই সময় আবার কে ফোন দিল তাকে। তার দলের ছেলেপুলেদের আবার কোনো সমস্যা হয়নি তো? এই ভেবে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করেন তিনি। ওপাশ থেকে কেউ মৃদু স্বরে বলল,
—-” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”
আতিক সাহেব ধীর গলায় বলল,
—-” ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে বলছ?”
ফোনের ওপাশের ব্যক্তি ছোট করে বলল,
—-” আঙ্কেল আমি মিরান।”
আতিক সাহেব অনেকটা অবাক হয় মিরানের ফোন দেওয়া। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—-” হ্যাঁ বল বাবা।”
মিরান ভনিতা না করে বলল,
—-” আঙ্কেল আমি তোহাকে বিয়ে করতে চাই এবং আজকের মধ্যে।”
আতিক সাহেব চমকে উঠে বলল,
—-” বল কী? বিয়ে? তাও আবার আজকে মধ্যে?”
মিরান আতিক সাহেব কে একে একে সব কিছু খুলে বলে সব শুনে কাদের সাহেব একগাল হেসে বলল,
—-” ঠিক আছে, বাবা তোমার যা ভালো মনে হয় তাই কর আর বিয়েতে কোন হেল্প লাগলে বল আমায়!”
মিরান ঠোঁটে হাসি এনে বলল,
—-” দোয়া করবেন আঙ্কেল আমাদের জন্য।”
আতিক সাহেব আর একটু হেসে বলল,
—-” আমার দোয়া সবসময় তোমাদের সঙ্গে আছে। যা করবে সাবধানে করো বাবা, রাখছি এখন আমি।”
আতিক সাহেব ফোন কাটলে। মিরান ফোনের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
______________________________
সন্ধ্যার পরে মিরান তুলিকে ফোন দেয়। তুলি ফোন রিসিভ করলে তুলির কাছ থেকে তোহার খোঁজখবর নিয়ে নিলাম বলল,
—-” শোনা তুমি এখন তোমার আপুর কাছে গিয়ে বলবে তোমার এক বান্ধবী আমাকে একটা মেয়ের সঙ্গে পার্কে বসে হাসাহাসি করতে দেখেছি। এ কথা শোনার পরে তোমার আপু কেমন রিয়াক্ট করে আমাকে জানাবে কেমন! আর তুমি ফোন কাটবে না আমি লাইনে থাকবো।”
তুলি চিন্তিত হয়ে বলল,
—-” ভাইয়া তুমি আবার আপুর হাতে আমাকে মার খাবার প্ল্যান করো নি তো?”
তুলির কথা শুনে মিরান হেসে দিয়ে বলল,
—-” আরে না না তা হবে না। তুমি গিয়ে বলে দেখো না কি হয়?”
মিরানের কথা মত তুলি গিয়ে তোহা কে বলল,
—-” আপু তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল!”
তোহা ফোন ঘাটাঘাটি করতে করতে বলল,
—-” বল কি বলবি?”
তুলি সুর টেনে বলল,
—-” আপু জানো আমার একটা বান্ধবী না আজ মিরান ভাইয়া কে একটা মেয়ের সঙ্গে পার্কে বসে হাসাহাসি করতে দেখেছে।”
তুলি কথা শুনে তোহা চোখ লাল করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কোন পার্কে দেখেছে? আর মেয়েটা কে?”
তুলি ঠোট উল্টিয়ে বলল,
—-” আমিতো ঠিক জানিনা আপু।”
তোহা চিৎকার করে বলল,
—-” তুই তোর বান্ধবীকে ফোন করে জিজ্ঞেস কর কোন পার্কে দেখেছে আর মেয়েটা কে? এক্ষুনি গিয়ে ফোন কর।”
তোহা কথা শুনে তুলি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বলল,
—-” ভাইয়া আমি আর তোমার বউয়ের ধারেকাছেও যাচ্ছি না। তুমি এসে তোমার বউকে সামলাও আমি আর পারব না।”
তুলির কথা শুনে মিরান শব্দ করে হেসে দেয়।
#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩৩
তোহা ঘুমিয়ে গেছে অনেকক্ষণ। তুলি এসে ওর রুমে উঁকি দিয়ে দেখে গেছে দুই এক বার। এতক্ষন তো রুমের ধারেকাছেও ঘেঁষা যাচ্ছিলো না। কি রাগ বাবা! কিছুক্ষণ আগে তুলিকে ডেকে বারবার জিজ্ঞেস করছিল মিরানের সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল তার বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছে কী না? এসব মনে করে তুলি আনমনে হাসে। ঠোঁটের হাসি নিয়ে তুলে মিরান কে ফোন করে। ফোন রিসিভ করতেই তুলি রাগী গলায় বলল,
—-” ভাইয়া তুমি কোথায় আছো বলো তো? তোমার জন্য আমি আপুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছি। আমি কিন্তু এখন আমার রুমে চলে যাবো।”
মিরান তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” এই না না, আমার সুইট আপু রাগ করে না। আমি এখুনি আসছি তুমি আর একটু অপেক্ষা করো।”
তুলি মুখ গোমরা করে বলল,
—-” তাড়াতাড়ি।”
মিরান ফোন রাখলে তুলি একা একা বির বির করে বলল,
—-” রাগারাগি করবে এরা দু’জনে, মাঝখান দিয়ে আমাকে খাটিয়ে মারবে। নিজে এখন পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না এরমধ্যে ই আমার জীবন তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে।”
তুলি তোহার রুমের সামনে পায়চারি করতে করতে একা একা এই সব বিড়বিড় করে বলছে। এর মধ্যে তুলির পিছন থেকে কেউ নিচু গলায় বলল,
—-” তুলি।”
তুলি পিছন ফিরে তাকায়। মিরান ভাইয়া এসেছে। তাঁকে দেখে তুলি মন খারাপ করে বলল,
—-” এখন বুঝি তোমার আসার সময় হল?”
মিরান ওর হাতে একটা বোতল দেখিয়ে বলল,
—-” এটা আনতে দেরি হয়ে গেছে।”
তুলি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” এটা কী ভাইয়া?”
মিরান মৃদু স্বরে বলল,
—-” ক্লোরোফর্ম।”
মুহূর্তেই তুলি চোখ বড় বড় করে বলল,
—-” এটা দিয়ে কী করবে?”
মিরান বাঁকা হেসে বলল,
—-” এটা দিয়ে তোমার আপুকে সেন্সলেস করে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাব।”
তুলি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
—-” সত্যি ভাইয়া? আমার না অনেক দিনের শখ আমি সামনে থেকে কিডন্যাপ করা দেখবো। আজ তোমার জন্য আমার স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে। তোমাকে এতগুলো থ্যাংক ইউ ভাইয়া।”
মিরান এতদিনে বুঝে গেছে এই দুই বোনের পাগলামি গুলো। মিরান হালকা হেসে বলল,
—-” আচ্ছা চলো তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে।”
তুলি লাফাতে লাফাতে বলল,
—-” চলো, চলো, তাড়াতাড়ি চলো, আমার তো আর তর সইছে না।”
মিরান আর তুলি একসঙ্গে তোহার রুমে যায়। কী সুন্দর করে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে তোহা। ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তোহার মুখের উপর ছোট ছোট চুল পড়ে আছে। তুলি মিরান কে খোঁচা দিয়ে ফিসফিসিয়ে করে বলল,
—-” ভাইয়া আমি না মুভিতে দেখেছি ক্লোরোফর্ম দিলে তো পাঁচ ছয় ঘণ্টার আগে জ্ঞান ফিরে না। আপু যদি অজ্ঞানই থাকে তাহলে তুমি বিয়ে করবে কখন আপুকে?”
মিরান তুলির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
—-” এটার পাওয়ার কম। এই ক্লোরোফর্ম টা স্প্রে করলে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই তোমার আপুর জ্ঞান ফিরে আসবে। ততক্ষনে আমি তোমার আপুকে নিয়ে কাজী অফিসে পৌঁছে যাব।”
মিরানের কথা শুনে তুলি এস দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই মিরান তুলিকে বলল,
—-” এখন তুমি চুপচাপ বস আর আমাকে আমার কাজ করতে দাও।”
মিরানের কথা শুনে তুলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আর মিরান খুব সাবধানতা অবলম্বন করে তোহার মাথার কাছে গিয়ে তোহার নাকে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে। তোহা একটু নড়ে ওঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। মিরান তুলির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
—-” শালী সাহেবা যাচ্ছি আমার বউকে নিয়ে। দোয়া করবেন আমাদের জন্য কেমন?”
তুলি ভাব নিয়ে বলল,
—-” ঠিক আছে, ঠিক আছে, এত করে যখন বলছ তাহলে তো দোয়া করতেই হবে।”
তুলির কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে মিরান শব্দ করে হেসে দেয়। মিরানের হাসি দেখে তুলিও হেসে দেয়। মিরান হাসি থামিয়ে তোহাকে কোলে তুলে নিয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আমরা বেরিয়ে গেলে বাড়ির মেইন দরজা ভাল করে বন্ধ করে দিও।”
তুলি মন খারাপ করে বলল,
—-” ঠিক আছে, তোমরা সাবধানে যেও আর আপুকে কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে, না হলে কিন্তু আমি তোমার খবর করে দেব।”
তুলির কথা শুনে মিরান হেসে তোহা কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
______________________________
ডাক্তারদের জীবনে কখন কি যে হয় তারা নিজেরাই জানেনা। পরিবারের সবার সাথে একসাথে ডিনার করে রুমে এসেছিল মিহান। রুমে আসার কয়েক মিনিটের মাথায় মিহানের ফোন আসে হসপিটাল থেকে। তাকে যেতে হবে হসপিটাল। অগত্যা ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মিহান হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে একটা ছোট সমস্যার কারণে মিহান কে ডাকা হয়েছিল। কাজটা কমপ্লিট করে মিহান বাড়ি ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই তার সব ক্লান্তি এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। তার জানপাখি ঘুমিয়ে আছে। মিহান হাতের ব্যাগটা পাশের টেবিলে রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা মিরার উপরে উঠে ওর বুকে মাথা রাখে। মিহানের এমন কাজে মিরা চমকে উঠে বলল,
—-” এই তুমি কী জীবনেও মানুষ হবেনা?”
মিহান মাথা তুলে বলল,
—-” বলো কী? আমি এখনো মানুষ হয়নি? দুই বাচ্চার বাবা হয়ে গেলাম আর এখনও মানুষ হতে পারলাম না?”
মিরা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
—-” না এখনো মানুষ হওনি। মানুষ হলে একজন ঘুমন্ত মানুষের উপরে এমন লাফ দিয়ে উঠে পড়তে না!”
মিহান ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলল,
—-” এ ব্যাপারে আমি মানুষ হতে চাই না।”
মিরা মুখ গোমরা করে বলল,
—-” তোমরা বাবা-ছেলে এমন কেন বলবে আমায়?”
মিহান চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,
—-” আমার ছেলে আবার কী করেছি তোমাকে?”
মিরার মৃদু স্বরে বলল,
—-” তোমার ছেলে বলেছে আজ সে বিয়ে করবে। সত্যি বলেছে নাকি মজা করে বলেছে তা আমি জানিনা। কিন্তু ফোন করে আমার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে নিয়েছেন।”
মিহান চোখ বড় বড় করে বলল,
—-” বলো কী এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি জানি না।”
মিরা মুখ বাঁকা করে বলল,
—-” সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে জানবে কী করে।”
মিরার মুখ বাঁকা করা দেখে মিহান মৃদু হেসে বলল,
—-” দাঁড়ও আমি ফোন করে দেখছি কোথায় আছে সে।”
মিরা মুখ গোমড়া করে বলল,
—-” যা করার আমার উপর থেকে উঠে করো।”
মিহান উঠে গিয়ে ফোন নিয়ে আবার মিরার উপর শুয়ে পড়ে। মিরা জানে এই মহাশয় কে হাজার বললেও তিনি এখন ওকে ছাড়বে না। এতগুলো বছরের মিহানের পাগলামি গুলো অভ্যাস হয়ে গেছে মিরার। মিরা মিহানের পিঠে হাত দিয়ে মিহানকে বলল,
—-” পেলে ওকে?”
মিহান ছোট করে বলল,
—-” ফোন বাজছে।”
কিছুক্ষণ পর ফোন রিসিভ করলে মিহান বলল,
—-” কোথায় তুমি এখন?”
ফোনের ওপাশ থেকে মিরান বলল,
—-” গাড়িতে পাপা।”
মিহান একটু গম্ভীর হওয়ার অভিনয় করে বলল,
—-” একটু আগে কী শুনলাম তোমার মাম্মার কাছ থেকে তোমার ব্যাপারে?”
মিরান ছোট করে বলল,
—-” কি ব্যাপারে?”
মিহান মৃদু স্বরে বলল,
—-” তুমি নাকি আজ বিয়ে করছো?”
মিরান ধীর গলায় বলল,
—-” হুম।”
মিহান অভিমানী গলায় বলল,
—-” তোর মাম্মা কে ঠিকই জানালি কিন্তু আমাকে তো একবারও জানালি না।”
মিরান হেসে দেও ওর পাপার কথা শুনে। পরে একে একে সব কিছু খুলে প্রথম থেকে। সব শুনে মিহান মিরান কে বাহবা দিয়ে বলল,
—-” সাব্বাস এই না হলে আমার ছেলে। একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। ভালভাবে দেখে শুনে বৌমা কে কাজী অফিসে নিয়ে যা। আর বিয়ে পড়ানোর সময় ভিডিও কল দিতে কিন্তু একদম ভুলবিনা। রাখি এখন।”
মিরান ফোন রাখলে মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
—-” দেখলে আমার ছেলে একদম আমার মত হয়েছে।”
মিরা মিহান কে ধমক দিয়ে বলল,
—-” তোমাদের বাপ ছেলের জন্য তো আমি পাগল হয়ে যাবো। এখন কী আমাকে একটু ঘুমাতে দিবে তুমি!”
মিহান মিরার ধমক কানে না দিয়ে বলল,
—-” এখন আর ঘুমিয়ে কাজ নেই বেলকুনিতে চলো। ওখানে বসে কিছুক্ষণ গল্প করি ততক্ষণে মিরান ফোন দিয়ে দিবে।”
মিরা যে কিছু বলবে তার আগেই মিহান মিরাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা এক হাত দিয়ে শার্ট খামচে ধরে আর অন্য হাত দিয়ে মিহানের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়।
চলবে…..
হাই গাইস। কালকে কিছু সমস্যার কারণে গল্প দিতে পারবো না। শুভরাত্রি।❤️❤️❤️
চলবে…..
মিরান তোহার বিয়েতে আপনাকে অগ্রিম দাওয়াত রইল।