নিরাবতার হৃদয় কোনে পর্ব -৬+৭+৮

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৬

ক্যাম্পাসের পেছনের অংশে ঘাট বাঁধানো দীর্ঘ দিঘীর টলটলে স্বচ্ছ জল, দেহ শীতলীকরণ বাতাসে দু-একটি ঢিল ছুঁ*ড়ে মা*র*ছে মিতালী। পানির বৃত্তাকার ঢেউ বিস্তৃত হলো। পাশ থেকে প্রিয়া অনেকক্ষণ ধরে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। সোহেল আর নির্ভীক গেলো আইসক্রিম আনতে। আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিলো বিধায় ক্যাম্পাসে এসেছে।
ক্লাসে এটেন্ড না করলেই নয়। স্কুলের দশদিন পূর্ণ হওয়ায় আজ ছুটি নিয়েই ক্যাম্পাসে পা রাখলো। ক্লাস শেষে আর বাড়ি ফিরলোনা। অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা, কেউ ছাড়তে চাইলোনা। একটুখানি আড্ডার আসর জমাতে ক্যাম্পাসের পেছন দিকে বসলো। শান্ত, শুনশান প্রকৃতিতে ঝলমলে রোদ্দুর।
মিতালীর কাঁধে কোমল হাত রাখলো প্রিয়া। ভরসা মাখা কন্ঠে বলল,
-“কেন এত চিন্তা করছিস? তুই এমন করলে আঙ্কেল-আন্টিকে কে দেখবে? মাহা ও তো এখনো ছোট।”

চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকালো মিতালী। বন্ধুদের আনন্দ নষ্ট করতে চায়না সে। বলল,
-“এসব বাদ দে। আমি তো ক্লাস এটেন্ড করিনা, তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?”

প্রিয়া ঠোঁট বাঁকালো। বলল,
-“আর পড়ালেখা। তোকে নোট দিতে হয় বলে ক্লাসগুলো বাধ্য হয়ে করি। এই পড়াশোনার চাপ আর নিতে ইচ্ছে করেনা।”

মিতালী মেকি আফসোসের সুরে বলল,
-“আহারে! মেয়েটাকে কী কষ্টটাই না দিচ্ছি আমি।”
অতঃপর রগড় করে বলল,” তা বিয়েটা সেরে ফেললেই পারিস। তাহলে পড়ালেখার পাঠ ও একেবারে চুকে যাবে।”

প্রিয়ার চোখেমুখে আঁধার নামলো। বিমর্ষ হয়ে পড়লো। রোধ হয়ে আসা কন্ঠে শুধালো,
-“এখন বিয়ে সম্ভব না।”

-“কেন?”
মিতালীর প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া হাত চেপে ধরলো তার। লুকোচুরি দৃষ্টি ফেললো চারদিকে। খানিকটা ভ*য় মেশানো গলায় বলল,
-“তোকে একটা কথা বলতে চাই। আমি এর আগে কাউকে কথাটি বলিনি।”

কৌতুহল দেখালো মিতালী। বলল,
-“কী কথা?”

খানিকটা সময় নিলো প্রিয়া। তারপর হুট করেই বলে দিলো,
-“আমি নির্ভীককে ভালোবাসি। ওর ও বয়স কম, চাকরি নেই। তাছাড়া মামার বাড়িতে থাকে একথা শুনলে আমার পরিবার আরও আগেই মত দেবেনা।”

থমকালো মিতালী। ধক করে উঠলো অন্তঃকুটির। দম বন্ধকর এক বি*শ্রী অনুভূতি। তবে প্রিয়াই কি নির্ভীকের প্রেমে পড়ার কারণ? কি আশ্চর্য! সে বোধহয় এখনো নির্ভীকের ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। নয়তো ব্যাপারটা তার কাছে চাপা থাকতোনা। সেদিন ধ*রা পড়েও অস্বীকার করে গেলো। মিতালী মৃদু হাসলো। হয়তো হাসিতে তাচ্ছিল্য ছিলো। কে-জানে প্রিয়া হয়তো ধরতেও পারেনি।
মিতালী বলল,
-“দুজন এক হতে চাইলে পড়ালেখা মন দিয়ে কর। যখন দুজনে প্রতিষ্ঠিত হবি, দেখবি পরিবার আর বাঁধা দিতে আসবেনা।”

প্রিয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলো। মিতালীর মুখোমুখি বসায় তার পেছন দিক থেকে সোহেল আর নির্ভীককে আসতে দেখলো।
দুজনের হাতে চারটা কোন আইসক্রিম। সোহেল এসে একটা কোন মিতালীর হাতে দিলো। অগত্যা নির্ভীককে তার হাতের একটা কোন প্রিয়ার হাতে দিতে হলো। বড্ড অস্থির লাগছে, চোখ জ্বালা করছে মিতালীর। দুজনের ভাব খুব ভালোই। এখন তো তাকে ছাড়া ক্যাম্পাসে আসাও শিখে গিয়েছে নির্ভীক। দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো সে। মিতালীর খাওয়ায় মন নেই। উদাসীন ভাব, নির্ভীক ঝটপট নিজের আইসক্রিম শেষ করে মিতালীকে ক্ষে*পা*নো*র উদ্দেশ্যে তার হাত থেকে আইসক্রিম কেঁ*ড়ে নিলো। বলল,

-“তুই যখন খাবিনা, তখন আমিই খাই।”

আচমকা মিতালীর কী হলো সে বুঝতে পারলোনা। নির্ভীকের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে পানিতে ছুঁ*ড়ে মারলো। থমথমে গলায় বলল,
-“আমার আধখাওয়া আইসক্রিম তুই খাবি কেন?”

মিতালীর কাজে সকলে হতভম্ব হয়ে রইলো। নির্ভীক একটু বেশিই বিস্মিত হলো। এমন কত খাবার দুজনে ভাগাভাগি করে খেয়েছে। আজ কী এমন হলো মিতালীর?
মিতালী দাঁড়িয়ে বলল,
-“তোরা থাক, আমি বাড়ি যাবো।”

নির্ভীক একটু আগের ব্যাপারটা গায়ে মাখলোনা। ভাবলো মিতালী পরিবার নিয়ে চিন্তিত। তার মন ভালো করার জন্য বলল,
-“এখন বাড়ি যাবি কেন? আজ সবাই মিলে আশেপাশে ভালো করে ঘুরবো। আবার কবে সুযোগ পাবো?”

মিতালী নির্ভীকের দিকে না তাকিয়েই বলল,
-“তোরা যা, আমি তো না করিনি। আমার কাজ আছে বাড়িতে।”

নির্ভীক বলল,
-“তাহলে চল, দুজনে একসাথে বাড়ি যাই।”

প্রিয়া মন খা*রা*প করে বলল,
-“তুই ও চলে যাবি?”
মিতালীর দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বলল,”একটু থাকনা মিতা, প্লিজ!”

প্রিয়ার চোখের ইশারা আর অনুনয়ে আর না করতে পারলোনা মিতালী। বলল,”আচ্ছা যাচ্ছি না আমি।”

জেলা সদর থেকে একটু গ্রামের দিকেই প্রবেশ করলো তারা। নীল আকাশের নিচে সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন সবজির বাগান, রাস্তার দু-পাশে ফসলি জমি। প্রিয়া লাফিয়ে উঠলো। নির্ভীকের হাত ধরে বায়না করলো,
-“আমরা এখানে ছবি তুলবো প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!”

নির্ভীক হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে। তুই মিতাকে নিয়ে দাঁড়া। আমি তুলে দিচ্ছি।”

নির্ভীক প্রিয়া আর মিতার অনেকগুলো ছবি তুললো। প্রিয়া একা পোজ দিয়েও নিজের আলাদা কতগুলো ছবি তুলে নিলো। যাতে নির্ভীক সন্দেহ না করে তাই আলাদা আলাদা সোহেল, নির্ভীক দুজনের সাথেই ছবি তুললো। নির্ভীক বলল,
-“মিতা তুই দাঁড়া। আমি তোর কয়েকটা ছবি তুলে দিই।”

মিতালী না করে দিলো।
-“লাগবেনা।”

সোহেলের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে মিতালীর পাশে দাঁড়ালো নির্ভীক। সোহেলের উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমাদের দুজনের ছবি তোল।”

মিতালী বিরক্ত হয়ে সরে যেতে নিলেই নির্ভীক জোর করে দাঁড় করালো। পাশাপাশি ক্লোজ হয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। নির্ভীকের অধর জুড়ে হাসি থাকলেও মিতালীর ছিলো মুখভার।

দুজনকে একই ফ্রেমে দেখে হাসলো নির্ভীক। মুখ ভার করে রাখলেও ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে মিতালীকে। পকেটে ফোন গুঁজে মিতালীর পাশে দাঁড়ালো। প্রিয়া নিজের ছবি দেখতে ব্যস্ত, সোহেল ও একই কাজ করছে।
নির্ভীক ঢিমে স্বরে বলল,
-“মন এখনো ভালো হয়নি দেখছি। কবিতা শুনবি?”

মিতালী ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি টে*নে বলল,”যার জন্য কবিতা ধরেছিস, তাকে না শুনাতে পারলে জীবন বৃথা যাবে তোর। আমাকে কেন কবিতা শোনাতে চাইছিস?”

নির্ভীক হো হো করে হেসে ফেললো। বলল,
-“যার জন্য কবিতা ধরেছি, তাকে তো অবশ্যই শোনাচ্ছি।”

এই মুহূর্তে নির্ভীকের প্রাণোচ্ছল, সরল হাসিটুকুতে ব্যাঘাত ঘটাতে ইচ্ছে করলোনা মিতালীর। তাই আর বাড়তি প্রশ্ন করলোনা।
সে জানে নির্দ্বিধায় নির্ভীক একজন ভালো বন্ধু, একজন ভালোমানুষ। হয়তো কোনো কারণে সে মিতালীকে কিছু জানায়নি। সবারই একটা আলাদা জগৎ আছে, ব্যক্তিগত জীবন আছে।
তাই আর অযথা অভিমান বাড়ালোনা। ধীর স্বরে বলল,
-“শুরু কর।”

সরু ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে আওড়ে নিলো নির্ভীক।

“মানুষের ভিড়ে মানুষ লুকিয়ে থাকে
গাছের আড়ালে গাছ,
আকাশ লুকায় ছোট্ট নদীর বাঁকে
জলের গভীরে মাছ;
পাতার আড়ালে লুকায় বনের ফুল
ফুলের আড়ালে কাঁটা,
মেঘের আড়ালে চাঁদের হুলস্তুল
সাগরে জোয়ার ভাটা।
চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে,
তোমার আড়ালে আমি,
দিনের বক্ষে রাত্রিকে ধরে রাখে
এভাবে দিবসযামী।”

—মহাদেব সাহা।

মিতালী ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তোর কি সবসময় রোমান্টিক কবিতা আবৃত্তি করতেই ভালোলাগে?”

নির্ভীক অসহায় বোধ করলো। যার জন্য আবৃত্তি করলো, সে এ কেমন প্রশ্ন করে বসলো? কোথায় একটু কবিতার ভাবার্থ বোঝার চেষ্টা করবে। তা না করে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করছে। নির্ভীক ক্ষেপাটে স্বরে বলল,
-“খবরদার! আমার কবিতা নিয়ে কিছু বলবিনা। আমার যখন যেমন আবৃত্তি করতে ইচ্ছে হবে, আমি তেমনই আবৃত্তি করবো।”

মিতালো এতক্ষণে প্রাণ খুলে হাসলো। নির্ভীককে ক্ষে*পা*তে বলল,
-“কি বি*চ্ছি*রি আবৃত্তি।”

রাগতে গিয়েও হেসে ফেললো নির্ভীক। মিতালীর মাথায় টোকা মে*রে বলল,”বি*চ্ছি*রি হলেও তোকে শুনতে হবে।”

★★★

বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা টিউশনে গেলো মিতালী। সন্ধ্যার সময় নির্ভীককে যথারীতি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।

পরেরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে থমকে গেলো মিতালী। মস্তিস্কে শূণ্য লাগছে। সামনের দিকে কিভাবে কি করবে সে ভেবে পেলোনা।
আজ তার চাকরি কনফার্ম হওয়ার কথা ছিলো। বিগত দিনগুলোতে মিতালী বেশ প্রসংশা শুনেছে নিজের। সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে স্টুডেন্টদের কিছু শেখানোর। ধরেই নিয়েছিল চাকরিটা তার কনফার্ম হবে।

স্কুলের প্রধান মিরাজুল হক বললেন,
-“তোমার ক্লাস আমি দেখেছি। খুব দক্ষতা আর নিষ্ঠার সাথে তুমি বাচ্চাদের পড়াচ্ছো। কিন্তু আমি দুঃখীত ভীষণ। শিক্ষক কোটা পূরণ হয়ে গিয়েছে। পরে কখনো কোটা খালি হলে তোমাকে জানাবো।”

মিতালীর গলা ধরে আসলো। কোনোভাবে মিরাজুল হকের সামনে থেকে বেরিয়ে আসতেই দরজার সামনে সুমনার সাথে দেখা হলো। এখানেরই একজন শিক্ষিকা। মেয়েটা ভীষণ মিশুক। সে বলল,
-“মিরাজুল স্যারের কোন এক আত্মীয়কে চাকরিটা দেওয়া হয়েছে। অথচ তাকে যাচাই-বাছাই করা হলোনা। ”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,”চাকরিটা আমার ভাগ্যে ছিলোনা।”

আর কথা বাড়ালোনা। সুমনার ভীষণ খা*রা*প লাগছে। একজন যোগ্য লোককে হারালো এরা। আজকাল যোগ্য লোকের কদর নেই। টাকা আর মামা-খালু থাকলেই চলে।

একাকী পথ ধরে হাঁটছে মিতালী। ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। দুদিন পরই আব্বা-মা, মাহার খাওয়া শেষ হবে মাহবুবের ঘরে। সে কিভাবে সব সামলাবে? বাড়ি ফিরতেই মা বললেন,”চোখমুখ এমন লাল হইয়া আছে ক্যান? আর আইজ এত তাতাড়ি চইলা আসলি যে?”

“মাথাব্যথা করছে” বলে পাশ কাটালো মিতালী। কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ না যেতেই ঔষধের বাক্স হাতিয়ে একটা নাপা টেবলেট নিয়ে আসলেন রোজী বেগম। বললেন,
-“উঠে ওষুধটা খাইয়া ল।”

মিতালী কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলল,
-“রেখে যাও, আমি খেয়ে নেবো।”

দুপুরে আর রান্না করলোনা। গতকালের মরিচ ভর্তা গরম করে রেখেছিলো। সেটা দিয়ে পানতাভাত খেয়ে নিলো। রিশাতের মায়ের দেওয়া সব টাকা খরচ করেনি। পাঁচশ টাকার টুকটাক মুদি বাজার করেছে। বাকি আছে একহাজার টাকা। দুদিন পর আব্বা- আম্মার খাওয়া আসলে কাঁচা বাজার আর মাছ নিয়ে আসবে।

★★★

পাশের রুম থেকে আব্বার স্পষ্ট আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। মাহবুব নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
মায়ের অস্পষ্ট স্বর শুনতে পেলো মিতালী। তিনি চাপা স্বরে মতিন সাহেবকে বলছেন,
-“এমন কপাল লইয়া আইছেন ক্যান দুনিয়াইতে? শেষ বয়সটা সুখ কইরা যাওনের কপাল আমগো নাই।”

মতিন সাহেব চাপা আর্তনাদের সাথে হু হু কান্নার শব্দ তুলে বললেন,
-“আল্লাহর কাছে কও, আমি যাতে তাতাড়ি দুনিয়াইরে বিদায় দিতে পারি”

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো মিতালী। বাবার কাছে কিছুক্ষণ বসবে বলে আসলেও আর ভেতরে ঢুকলোনা। মাহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার হাতে কিছুই নেই। মুখে ওড়না চেপে কান্না রোধ করার চেষ্টা করে ভাবলো নিন্মমধ্যবিত্তদের জীবন এত কঠিন কেন?
#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৭

চেয়ারম্যান বাড়িতে খুশির আমেজ। হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে ছোট বড় সবাই।
বাহারী পদের রান্না চড়েছে হাঁড়িতে। বাড়ির মেজো ছেলে ইশরাক বাড়ি ফিরছে দীর্ঘ সময় পর।
চেয়ারম্যান সাহেবের দুই ছেলে হলেও নির্ভীক সহ বাড়িতে মোট তিনটি ছেলে রয়েছে। সে আজ দৌঁড়ঝাপের উপর আছে। ভাই বাসায় আসছে। মা – মামি এটা ওটা আনতে বাজারে পাঠাচ্ছে। মিতালীর সাথে দেখা করার ফুঁসরত নেই। গতকাল মামিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলো বিধায় সন্ধ্যায় দেখা হয়নি।

কয়েকবছর পূর্বে আইইএলটিএস কোর্স করে বিদেশে এডমিশনের জন্য চলে যায় ইশরাক। তার দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল নিয়ে আজ দেশের মাটিতে পা রাখছে। আলেয়া বেগম বেজায় খুশি। কতদিন পর স্বচক্ষে ছেলেটাকে দেখবেন।

★★★

এলাকার ভাঙা রাস্তা ধরে সকালের টিউশনে পৌঁছালো মিতালী। চাকরি না পাওয়ার দুঃসংবাদটি মোটেও নির্ভীককে দিতে ইচ্ছে করলোনা। রিতু জিজ্ঞেস করলো,

-“ম্যাম, স্যার কেমন আছেন?”

মিতালী ছোট্ট করে উত্তর দিলো, “ভালো। ”

ম্যামের মন মেজাজ ভালো নেই বুঝতে পেরেই রিতু আর প্রশ্ন করলোনা। সংসার কিভাবে সামলাবে? চাকরি কোথায় পাবে? মস্তিষ্কে এসব ছক কষতে কষতে অংক ভুল করে বসলো মিতালী। বোঝাতে গিয়েই নিজের ভুলটা চোখে পড়লো। রিতুর চাচাতো বোন কিছু বলতে গেলেই সে হাত ধরে থামিয়ে দিলো। নিজ থেকেই বলল,
-“ম্যাম, আপনাকে আজ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। বেশি পড়াতে হবেনা, বাড়িতে গিয়ে রেস্ট করুন।”

মিতালী খানিকটা হাসলো। সে এতটা ফাঁ*কি*বা*জ শিক্ষক হতে চায়না। তাই বলল,
-“আমি ঠিক আছি। তোমরা দুজন পড়ায় মন দাও।”

হেঁটে হেঁটে দেয়ালে টাঙ্গানো বিজ্ঞাপন দেখলো। কোনো আশানুরূপ ফল পাচ্ছেনা। তার যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো চাকরি এই মুহূর্তে পাবেনা।
পুরোদিন অসহায় হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ালো। বাড়ি ফিরলো তিনটায়। গোসল সেরে না খেয়েই আবার ও বেরিয়ে পড়লো। মা যখন খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো? তখন মি*থ্যা বললো মিতালী।
-“বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। সবাই একসাথে দুপুরে খেয়ে নিয়েছি।”

রোজী বেগমের বোধহয় বিশ্বাস হলোনা। মায়ের চোখ মেয়ের শুকনো মুখ দেখেই সব আন্দাজ করে নিলেন। মায়ের তুখোড় দৃষ্টি এ*ফোঁড়*ওফোঁ*ড় করতে পারলোনা মিতালীকে। দীর্ঘশ্বাস ফে*লে বলল,
-“বাঁচতে হলে আরও অনেক কিছুই সহ্য করতে হবে মা। দেখো, একদিন ঠিকই সুখ ধরা দেবে।”

মিতালী বেরিয়ে যেতেই রোজী বেগম চোখের পানি ছে*ড়ে দিলেন। পিয়ালী এসেই ঝাঁঝালো স্বরে বলল,
-“এত নাটক কিভবাে যে করতে পারেন। দুপুরের এঁটো বাসনগুলো ধুয়ে আনুন, যান। এতগুলো মানুষের রান্নার পেছনে কলুর বলদের মতো খাটতে খাটতে কোমর ধরে গিয়েছে।”

বাসন ধুতে গিয়ে ভাবলেন রোজী বেগম। এমন করেতো সংসার চলেনা। ওদের সাথে থেকে না নিজেরা সুখে থাকছেন আর না মেয়েটা ঠিকমতো দুটো রান্না করে খাচ্ছে।
বিকেলেই বের হলেন তিনি। তিনটে বাড়ি ফারাক চতুর্থ এক আলিশান বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। ভেতরে প্রবেশ করে স্বাভাবিক আলাপ চললেও একসময় রোজী বেগম ইনিয়েবিনিয়ে বোঝালেন তিনি এই বাড়িতে কাজ করতে চান।
বাড়ির বউ খানিকটা অস্বস্তিবোধ করলো। এতদিন প্রবল আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলা নারীটি আজ অসহায় হয়ে তাদের বাড়িতে কাজ করতে চায়?
নীলার ভেতরকার অবস্থা বুঝতে পেরেই রোজী বেগম আরও ছোট হয়ে গেলেন। ধরা গলায় বললেন,

-“আমার মাইয়্যাগো কষ্ট আর সহ্য হয়না মা।”

নিলার নিজেকেই কেমন ছোট লাগছে। এই নারীটিকে ছোট হতে দেখলে তারই খা*রা*প লাগবে। সে এক দারুণ সিদ্ধান্ত নিলো। বলল,

-“চাচি, আপনি প্রতিদিন সকাল-বিকাল এসে আমার শাশুড়ীকে একটু সঙ্গ দেবেন। এটা ছাড়া আপনার বাড়তি কোনো কাজ নেই। বাকী সময়টুকু আপনি চাচাকে দেখবেন।”

রোজী বেগম হাত জোড় করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। কাজের পাশাপাশি নিজের অসুস্থ স্বামীকে ও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

★★★

কয়েক বছর পর আজ চোখের সামনে নিজের শৈশব কাটানো বাড়িটি দেখতে পাচ্ছে ইশরাক। দরজা সামনে দাঁড়াতেই ভেতরে দ্রিমদ্রিম হাতুড়ি পে*টা*র শব্দ হলো।
আলেয়া বেগম ছেলে ফেরার অপেক্ষায়, মুখিয়ে আছেন দরজা খুলতে। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে আর দেরি করলেননা। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। নির্ভীকের পেছনে দাঁড়ানো নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে দেখে দুচোখ জুড়ালেন। সজল নয়নে তাকিয়ে থাকতেই নির্ভীক সরে গেলো। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদলেন আলেয়া বেগম। ইশরাক মাকে জড়িয়ে সমানে হেসে গেলো। আলতো করে মায়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
-“এভাবে কাঁদলে হবে? আমিতো ফিরে এসেছি তোমার বুকে।”

আলেয়া বেগম চোখ মুছে বললেন,
-“এবার আর কোথাও যাইতে দিমুনা তোরে।”

ইশরাকের ঠোঁটে আবারও চমৎকার হাসি খেলে গেলো।
-“আচ্ছা, রেখে দিও তোমার কাছে।”

একে একে ভাবি, ফুফু সবার সাথে কথা বলে মালিহার কাছে গেলো। হাঁটু মুড়িয়ে নিচু হয়ে বসলো। ছোট্ট তুলতুলে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে মিষ্টি করে বলল,
-“আমার ছোট আম্মু কেমন আছে?”

মালিহা আপ্লুত হলো। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো চাচ্চুকে। ভিডিও কলে দেখলেও আজ সরাসরি দেখে একটু ভড়কালো। কথা বলে সহজ হতে একটুখানি সময় নিলো। ইশরাক মালিহার নরম নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
-“আম্মু কি আমার সাথে কথা বলবেনা?”

মালিহা এবার কথা বললো। ছোট করে উত্তর দিলো,
-“তুমি আমার জন্য কী এনেছো?”

মালিহার কথায় সবাই হেসে ফেললো। ইশরাক মুখ ছোট করে ভুলে যাওয়ার ভান করে বলল,
-“ইশ! আমি তো এই আম্মুটার কথা ভুলেই গিয়েছি। সবার জন্য গিফট আনলেও তোমার জন্য আনতে ভুলে গিয়েছি।”

মালিহা গাল ফুলিয়ে ফেললো। আস্তে আস্তে ফুঁপিয়ে উঠতেই চমকে দেওয়ার মতো ইশরাক বলল,
-“আমার ছোট আম্মুর জন্য অনেক চকলেট আর খেলনা নিয়ে এসেছি।”

মালিহা একেবারে সহজ হলো। তাকে নামিয়ে ইশরাক ঘরে গিয়ে দেখলো সব পছন্দমতো গোছানো। এটা মায়ের কাজ ভেবেই হাসলো। গোসল সেরে এখনি কোনো খাবার নিলোনা।

নির্ভীক ঝটপট শরীরে শার্ট জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো। কাল বিকেল থেকে আজ সারাদিন মিতালীর সাথে দেখা নেই।

মিতালী সবে স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে বেরিয়েছে, সামনেই নির্ভীককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। কিছু বাজার করার আছে। আজ হাঁটের তারিখ। তাজা সবজি আসবে বাজারে। আগামীপরশু থেকেই বাবা-মায়ের খাওয়ার সময়।
নির্ভীক এগিয়ে এসে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-“গতকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তোকে তো বলেছি আজ ইশরাক ভাইয়া আসার কথা। সেজন্যই দেখা করতে পারিনি।”

মিতালী কথা না বলে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটলো। নির্ভীক আবার ও বলল,
-“আজ স্কুলে গিয়েছিস?”

হাঁটতে হাঁটতেই নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো মিতালী,
-“নাহ্, চাকরি হয়নি।”

আশ্চর্য হলো নির্ভীক। চোখেমুখে রাজ্যের বিষ্ময় নিয়ে বলল, “মানে!”

সমস্ত ঘটনা ব্যাখা করলো মিতালী। নির্ভীক খানিকটা রাগত স্বরে বলল,
-“এরা পেয়েছে টা কী? চাকরিতে নেবেনা আগে বললেই পারতো। তাছাড়া তুই একথা আমায় কাল জানালিনা কেন?”

-“তোর সাথে দেখা হয়নি।”

নির্ভীক বিরক্ত হলো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“আমার নাম্বার কি তোর কাছে নেই?”

মিতালী হালকা হেসে বলল, “নাম্বার আছে, ব্যলেন্স নেই।”

আর কথা বাড়ালোনা নির্ভীক। এ ব্যাপার বাদ দিয়ে বলল,
-“এখন কী করবি ভেবেছিস?”

-“জানিনা, আজ টিউশন টাইম ছাড়া পুরোদিন চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজেছি।”

নির্ভীক নিজেও চিন্তিত হলো। মিতালী বলল,
-“তোর সময় হবে? আমি একটু বাজার করবো।”

সায় দিয়ে নির্ভীক মিতালীর সঙ্গে গেলো।
ঘুরে ঘুরে কমদামি মাছটিই কিনলো। অথচ কোনো মাছ খাওয়ার কথা বললে কষ্ট হলেও বাবা বড় সাইজের মাছ কেনার চেষ্টা করতেন। মাছের টাকা পরিশোধ করে দরদাম করে কিছু সবজি নিলো।
সময়টা সন্ধ্যার পর গড়ালো। দুজনে বাজারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেই নির্ভীক একটা রিকশা নিলো। বাড়ি আসতে এখনো অনেকটা পথ বাকী। রিকশা যখন মিতালীর বাড়ির সামনে থামলো, দ্রুত নেমে পড়লো সে। নির্ভীক ভাড়া বের করার পূর্বেই মিতালী ভাড়ার পাট চুকিয়ে দিলো।
নির্ভীক বলল,
-“রিকশা আমি নিয়েছি, ভাড়া তুই দিলি কেন?”

মিতালী বলল,
-“আরেকদিন তুই দিয়ে দিস।”

বাজার হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো মিতালী। নির্ভীক দাঁড়িয়ে রইলো। মাহবুব বাইরে থেকে ফেরার পথেই নির্ভীককে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-“চো*রে*র মতো বাড়ির সামনে উঁকি দিতাচস ক্যান? তোরা তো সাধু-সন্ন্যাসী, ছোঁকছোঁক করস না। তাহলে রাইতবিরাইতে এগুলা কী? গেরামের মানুষ ডাকুম না-কি?”।”

কথা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো নির্ভীক। এমনিতেই মিতালী দুশ্চিন্তায় আছে। সে শুধু শুধু ঝা*মে*লা বাড়াতে চায়না। এক পর্যায়ে সেখানে মিতালীর নামটা ও উঠে আসবে। চুপচাপ বাড়ি ফিরে গেলো সে।

★★★
মাহার কথা শুনে হতবাক হলো মিতালী। সে কখনো ভাবেনি মা এমন কিছু করতে পারে। মাহা বলল,

-“আপু, মা নীলা ভাবিদের বাড়িতে কাজ নিয়েছে। সকাল-বিকাল তাদের বাড়িতে চাচির দেখাশোনা করবে। আমি না করেছি, অথচ আমার কথা শোনেনি।”

মিতালী অস্ফুট স্বরে বলল,
-“তোকে এসব কে বলেছে?”

-“রুম্পা বলেছে। তার ভাবির সাথে মায়ের কথা বলার সময় সে শুনে নিয়েছে।”

মিতালী সোজা মায়ের কাছে গেলো। কৈফিয়ত চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-“কী শুরু করলে মা? আমি কি ম*রে গিয়েছি? শেষমেশ তুমি অন্যের বাড়িতে কাজ নেবে? আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের এই দিন দেখতে হবে?”

রোজী বেগম গম্ভীর হলেন। মেয়েদের সাথে সব ব্যাপারে নরম হওয়া মানায়না। মা হিসেবে তার দায়িত্ব সংসারটাকে আগলে নেওয়া। তাই কাঠকাঠ সুরে জবাব দিলেন,
-” আমি ভাবনাচিন্তা কইরাই সিদ্ধান্ত নিছি। এখন আর রান্ধন লাগবোনা। আমি রুম্পা গো বাড়ি থেইকা তোর জন্য ভাত আইনা থুইছি। খাইয়া ঘুমাই যা। সকালে আবার টিউশনে যাইবি।”

মিতালীর নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হলো। মা তার জন্য অন্যের বাড়ি থেকে চেয়ে ভাত নিয়ে এসেছে? সেই বাড়িতে কাজ করবে? অশ্রু সজল চোখে মাকে বোঝালো মিতালী,

-“মা তুমি এটা করতে পারোনা। নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতো পারোনা তুমি।”
অতঃপর বাবাকে ছুঁয়ে বলল,-“আব্বা তুমি কিছু বলবেনা আম্মাকে?”

মতিন সাহেবের চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়ালো।
রোজী বেগম শক্ত হয়ে বললেন,
-“আমিতো চু*রি করতাছিনা। কাম কইরা খাইতে লজ্জা কিসের? অভুক্ত ম*রা*র চাইতে কাম কইরা খাওয়া ভালো না?”

মিতালী চোখ মুছে বলল,
-“তুমি যদি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে চাও, তবে থাকো। আমি কালই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো। যেদিকে দু-চোখ যায় যাবো, জীবনে কখনো আমার দেখা পাবেনা।”

রোজী বেগম ভেঙে পড়লেন। এই মেয়ে কেন বোঝেনা, যাদের টাকা নেই তাদের এমন কঠিন আত্মসম্মান থাকতে নেই। পরিস্থিতি মানুষকে কতটা অসহায় বানিয়ে ফেলে।
মতিন সাহেব বিছানায় শুয়ে থেকেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন “স্ত্রী – কন্যাদের জীবনে শীঘ্রই সুখ আসুক। এতটা কষ্ট না দেখিয়ে তার মৃ*ত্যুটা হয়ে যাক।

মাহা ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
-” আমাদের জীবন এমন হয়ে গেলো কেন, আপু? আমি পড়াতে ও মন বসাতে পারিনা।”

বোনকে বুকে চেপে ধরে মিতালী আদুরে স্বরে বলল,
-“তোর কিসের চিন্তা? সব ভাবার জন্য আমি আছিতো। তুই শুধু পড়ালেখায় মন দে।”

মাহা বুকে মাথা রেখেই বলল,
-“সব ভাবার জন্য আমি আছিতো, কথাটি বলে আমাকে শান্তনা দেওয়ার মতো তুমি আছো? কিন্তু তোমাকে শান্তনা দেওয়ার মতো কে আছে?”
#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৮

ভাদ্রমাসের পূর্ণিমা, আকাশে মস্ত বড় রাজকীয় চাঁদের ঝলমলে আলো। রাত গভীর হচ্ছে, কিন্তু ধরনীতে অন্ধকারের ছিটেফোঁটা ও নেই। অপরূপ সৌন্দর্য্যের উজ্জ্বল রাতে ঘুমে তলায়নি নির্ভীক। ফোন হাতে নিয়ে বিরতিহীন ভাবে পায়চারি করছে। কোথাও যদি চাকরির দেখা মেলে। অনেকক্ষণ পর পরিচিত নাম্বার রিসিভ হতেই একটু আশার আলো দেখলো সে।
কিন্তু তার সমস্ত আশাকে নিরাশা করে চূর্ণ করে দিলো অপরূপাশের ব্যক্তিটি।
ভেবেছিলো মিতালীকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, কিন্তু পারলোনা।
ফোন রেখে আবার ও পায়চারি করলো। ভেবেচিন্তে লম্বা শ্বাস নিয়ে আরও একটি নাম্বারে ডায়াল করলো। তৃতীয়বার রিসিভ হলো।
সালাম দিলো নির্ভীক।
ওপাশ থেকে বেশ ভারী কন্ঠস্বর শোনা গেলো। রাশভারি গলায় সালামের জবাব দিলেন লোকটি। স্বাভাবিক বাক্যালপ শেষ করেই নমনীয় হলো নির্ভীক। ছোট স্বরে ইতস্তত করে বলল,
-“আঙ্কেল আপনার স্কুলে কোনো শিক্ষক কোটা খালি আছে?”

ভদ্রলোক নির্ভীকের মায়ের মামাতো ভাই। তার পরিচালনায় একটা কিন্ডারগার্টেন চলে।
তিনি উৎফুল্ল মেজাজে বললেন,
-“তুমি চাকরি করবে না-কি? আমরা কিন্তু দক্ষ শিক্ষক খুঁজছি।”

নির্ভীকের ঠোঁটে এক চিলতে স্বস্তির হাসি দেখা গেলো। ভদ্রলোককে বলতে নিচ্ছিলো “চাকরি আমার বন্ধুর জন্য”।
তার পূর্বেই ভদ্রলোক আবারও বললেন,
-” তোমার পরিচিত দক্ষ কেউ থাকলে বলতে পারো। আমাদের শিক্ষক কোটা খালি আছে।”

এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। দারুণ এক লো*ভনীয় অফার অনায়াসে লুফে নিলো নির্ভীক। সে সিদ্ধান্ত নিলো চাকরি সে ও করবে। তখন আর মাঝখানে খুব বেশি দূরত্ব আসবেনা। সে মিতালীর কথা বলে দিলো।
-“আঙ্কেল আমার একজন বন্ধু আছে, ভালো স্টুডেন্ট। ও কে ও নিয়ে আসি?”

ভদ্রলোক খুশি হয়ে বললেন,”বেশ, তাহলে কালই দুজনে একবার এসো।”

-“জি আঙ্কেল।”
বিনয়ের সাথে ফোন রাখলো নির্ভীক। পরপরই ফোন লাগালো মিতালীর নাম্বারে। দ্রুতই ফোন রিসিভ হলো।
মিতালী বলল,
-“ফোন দিয়েছিস কোন সুখে?”

একটু চুপ থেকে নির্ভীক বলল,
-“মন খা*রা*প?”

মিতালী বিরক্ত হয়ে বলল,
-“মন খা*রা*প হলে কী করবি?”

-“নিমিষেই যাদু করে তোর মন ভালো করে দেবো।”

মিতালী আরও একটু বিরক্তিবোধ করলো। বলল,
-“ওহ্ প্লিজ! তোর কবিতা শুনে এই মুহূর্তে আমার মন ভালো হবেনা।”

নির্ভীক বলল,
-“আমি মজা করার মুডে নেই। সত্যিই তোর মন ভালো করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে আমার আছে।”

-“আচ্ছা, দেখি কেমন মন ভালো করিস।”

মিতালীকে একটু চমকে দিয়ে বলল,
-“চাকরি ম্যানেজ। তুই আর আমি, দুজনেই একসাথে চাকরি করছি।”

ভীষণ অবাক হলো মিতালী। তার হতভম্ব ভাব কাটলোনা। একইভাবে বোঝার চেষ্টা করলো।
-“মানে!”

একটু একটু করে সন্ধ্যা থেকে একটু আগ পর্যন্ত নিজের কর্মসাধনের কথা জানাতেই মিতালী বুঝতে পারলো। সত্যিই তার মন ভালো হয়ে গেলো। মিষ্টি হেসে বলল,
-“সত্যিই তো! যাদু করে আমার মন ভালো করে দিলি।
এজন্য তোর একটা উপহার তোলা রইলো।”

নির্ভীক বলে বসলো,
-“উপহার চুজ করার অধিকারটা কিন্তু আমিই নিলাম। একদিন চেয়ে বসবো কিন্তু।”

মিতালী হেসে ফেললো। রিনিঝিনি ঝংকার তুললো নির্ভীকের কর্ণধারে। একবার চোখের তৃষ্ণা মেটানোর লালসা জাগলো মনে।
মিতালী মিষ্টি করে আবদারের সুরে বলল,
-“এবার একটা কবিতা শোনা।”

নির্ভীক কটাক্ষ করে বলল,
-“একটু আগে কী বলেছিলি, আমি কি ভুলে গিয়েছি?”

-“প্লিজ!”

এমন সুমিষ্ট স্বরের আহ্লাদী আবদার না রেখে পারলোনা নির্ভীক। গলায় কবিতার টা*ন ধরলো।

“কোথায় পেয়েছ তুমি এই হাসি, প্রাণ কেড়ে
নেয়া এই দুটি চোখ-
কোন বনহরিণীর কাছে পেলে এই চকিত চাহনি!
এই চোখ দেখে আমি বহুদিন খুঁজেছি উপমা
কখনো সবুজ বন, কখোন উদার আকাশ-
কোনদিন জলভরা মেঘ তোমার চোখের সাথে
মনে মনে মিলিয়েছি আমি,
কিন্তু তোমার চোখের কাছে দেখেছি এসব কিছুই স্তিমিত।”
“মহাদেব সাহা”

মিতালী ঢিমে স্বরে প্রশ্ন করলো,
-“কবিতাটি আমার জন্য?”

শীতল কন্ঠে জবাব আসলো,
-“শুধু কি এই কবিতাটিই তোর জন্য মনে হলো? আর কোনোটি মনে হয়নি?”

চমকে উঠলো মিতালী। গভীর অন্ধত্বের ঘোর থেকে বেরিয়ে সুর পাল্টে ফেললো। চটপটে স্বরে বলল,
-“কিজানি, আমি অতটা মর্মার্থ ধরতে পারিনা। তা কাল কখন বের হচ্ছি আমরা?”

নির্ভীক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়েটা যেনো বুঝেও বুঝলোনা। নাকি বুঝতে চায়না।
সময়টা বলেই বিদায় নিলো সে।
সেদিনের পাশাপাশি তোলা দুজনকে একই ফ্রেমে বন্দী দেখে না পাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে চাইলো। একবুক প্রেম নিয়ে দু’ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে আওড়ে নিলো মনঃ কথন।

“তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের
মতো মনোরম
একটি তুচ্ছ বাক্যালাপ অন্তহীন নদীর কল্লোল,
তোমার একটুখানি হাসি অর্থ
এককোটি বছর জ্যোৎস্নারাত
তুমি যখন চলে যাও পৃথিবীতে আবার হিমযুগ নেমে আসে।”

——মহাদেব সাহা।

★★★

সাদামাটা সুতোয় গাঁথা জামা গায়ে জড়িয়ে দু’পায়ে চলনসই একজোড়া জুতা পরে বের হলো মিতালী। যাওয়ার আগে মাকে হু*ম*কি দিতে ভুললোনা। বলে গেলো,
-“তুমি যদি এদিকওদিক গিয়েছো আমি শুনেছি, তবে আজকের পর আর আমার দেখা পাবেনা।”

রোগ-শোকে বার্ধক্য থলথলে চামড়ার শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন রোজী বেগম। মেয়ের কথার নড়চড় করার সাহস পেলেননা। তবে চিন্তা ও গেলোনা। মিতালী চাকরির সুসংবাদ মাকে দিতে ভুললোনা। একটু স্বস্তি পেলেন রোজী বেগম।

মাহা টিউশন শেষ করে স্কুলের জন্য তৈরী হয়ে নিলো। দুবোন একসাথেই বের হলো।
নির্ভীকের সাথে দেখা হতেই তারা আলাদা হয়ে গেলো। মাহা এগোলো নিজ স্কুলের পথ ধরে।
নির্ভীক রিকশা ডাকলো। পাশাপাশি চড়ে তার ভীষণ প্রেম প্রেম পেলো। এই শরতের দিনে সে ঠকঠক করা ঠান্ডায় কেঁপে উঠলো।
পাশ থেকে মিতালী টের পেলো নির্ভীকের নিমেষহীন উচাটন। চট করে তার একখানা হাত মুড়িয়ে নিলো নিজের হাতের মুঠোয়। অবলীলায় ত্রস্তব্যস্ত ভাবে নির্ভীকের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভীতিকর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর হাত এমন ঠান্ডা হয়ে আছে কেন? এমন কাঁপছিস’ই বা কেন?”

নিথর হয়ে আসা গভীর স্বরে নির্ভীক বলল,
-“আমার প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। এই মুহূর্তে একটা চাদর লাগবে।”

মিতালীর ললাটে চিন্তার গভীর ছাপ পড়লো। এমুহূর্তে শরীরে জড়ানো ওড়না ছাড়া বাড়তি একটুকরো কাপড় তার কাছে নেই। তাবে কী করে নির্ভীকের শীত নিবারন করবে?
নির্ভীক নির্দ্বিধায় চেয়ে রইলো তার প্রতিটি অস্থিরতা মুহূর্ত। মিতালীকে চিন্তা মুক্ত করতেই সে রিকশা থামিয়ে নেমে পড়লো। হুট করে নির্ভীকের এমন নেমে পড়ায় ভড়কে গেলো মিতালী।
নির্ভীক হেসে বলল,
-“চা খেলে ঠিক হয়ে যাবে। তুই এখানে বস, আমি চা নিয়ে আসছি।”

মিতালীর কথা না শুনেই চা নিতে চলে গেলো নির্ভীক। রিকশাওয়ালা মামা বিরক্ত হলেন। তার বিরক্ত হওয়া সাজে বটে। এভাবে মাঝরাস্তায় রিকশা থামিয়ে কে দাঁড়িয়ে থাকবে?
উনাকে বেশি বিরক্ত না করে ত্রস্ত ভঙ্গিতে ফিরলো নির্ভীক। হাতে দুটো ওয়ান টাইম কাপ। রিকশায় চড়ে বসলো। চায়ে চুমুক দিয়েই মিতালী জিজ্ঞেস করলো,
-“এখন কেমন লাগছে?”

-“ভালো লাগছে।”
ছোট করে উত্তর দিয়ে মনে মনে বলল নির্ভীক,
-“যদি তুমি জানতে কী আমার অসুখ,
তবে বুকের খাঁচায় বন্দী করে বলতে
কাটুক সময় এভাবেই কাটুক।”

মিতালী নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো একবার নির্ভীকের হাত ছুঁয়ে দিলো।
একটু কেঁপে উঠেই স্বাভাবিক হলো নির্ভীক।
স্কুলে পৌঁছে ভাড়া মেটালো। সরাসরি অফিস কক্ষের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে সর্ব প্রথম অনুমতি চাইলো। অনুমতি নিয়ে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করলো।
হারুনর রশীদ কথা বলেই দুজনকে দুটো ক্লাসে পাঠালেন।
এখান থেকেই তাদের যাত্রা শুরু।

★★★

আকাশে মেঘ করেছে, ভারী বর্ষনের পূর্বাভাস। ঝড়ো বাতাসে আকাশ রঙের ইউনিফর্ম ভেসে বেড়ালো। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে খাটো করে নিলো মাহা। বাড়ি ফেরার সময় এমন আবহাওয়ার মানে কি?

-“ইশরাক তাড়াতাড়ি চল।”

মাহা আশেপাশে তাকালো। কে কথা বললো?
তার থেকে কিছুদূর দুটো ছেলেকে এগিয়ে আসতে দেখলো দ্রুত পায়ে। মুহূর্তেই সকল বিরক্তি মুগ্ধতায় রূপ নিলো। স্থির হলো চোখজোড়া। গ্রামে পরিপূর্ণ আধুনিকতার বেশধারী যুবককে দেখে কিশোরী মনে আবেগ জন্মালো। দৃষ্টি ফেরালোনা সে, চেয়ে গেলো অবিরাম।

বন্ধুর কথায় সায় জানিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেলো ইশরাক। কতবছর পর সবার সাথে দেখা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে আকাশের এমন মেঘ মেঘ বদন দেখতে হবে, কে জানতো?
আশেপাশে না তাকিয়ে প্রস্থান করলো। চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালে হয়তো নজরে পড়তো কারো সুপ্ত গভীরতম চোখে সে এক ঢোক নে*শা পানীয় হয়ে রইলো।

লোকটি চক্ষু অগোচরে হারিয়ে গেলো, কিন্তু মাহার পা জোড়া এগোলোনা। অন্তঃকোণে ঘনঘন উচাটন হলো। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনে কেঁপে কেঁপে উঠলো সে।
বাড়ি ফিরে নিজেকে ঘরবন্দী করলো। বুকের নিচে চাপা পড়লো নিরীহ বালিশ। চিনচিনে ব্যথাভাব কমাতে থম ধরে পড়ে রইলো। তার কিছু ভালোলাগছেনা। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও খাওয়ার ইচ্ছে হলোনা। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কী এই অযাচিত কান্নার কারণ? সে জানেনা। শুধু জানে তার কাঁদা উচিত। অন্তঃকরণে প্রজাতির দল সুখ সুখ পাখা ঝাপটালো।
বুকের ভেতরে একদল অনুভূতিরা হৈচৈ করে বলল “তাকে আরও একবার দেখি, অনন্তকাল দেখি।”

★★★

প্রথম ক্লাস খুব ভালো কা*ট*লো মিতালীর। স্টুডেন্ট অল্পস্বল্প। যতটুকু বুঝতে পারলো তাদের শ্রম দিতে হবে। এই ছোট বাচ্চাদের গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের।
রান্না বসিয়ে গোসল নিলো সে। গ্রামাঞ্চল হলেও একটা বিশেষ সুবিধা হলো তাদের এলাকায় বাড়ি বাড়ি গ্যাস লাইনের ব্যবস্থা আছে। গোসল নিয়ে চুলায় আলুভাজি বসিয়ে দিলো। অবশিষ্ট থাকলে সকালে সবাই মিলে রুটির সাথে খাওয়া যাবে। আজই মাহবুবের দিকে খাওয়ার পনেরোতম দিন। ভাত নিয়ে রুমে ফিরলো। আসার পর থেকেই মাহাকে কেমন ঘাপটি মে*রে শুয়ে থাকতে দেখে কপালে, গলায় হাত ছুঁয়ে দেখলো। নাহ্ জ্বর-টর আসেনি। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“কী হয়েছে মাহা? খা*রা*প লাগছে?”

মাহা ব্যাপারটা লুকিয়ে গেলো। মৃদু শব্দে বলল,
-“আমার বুকের ভেতর আইঢাই করছে, পেট গুড়গুড় করছে। বোধ করি আমি ম*রে-টরে যাবো।”

মিতালী ব্যস্ত হয়ে বলল,
-“কিছু নিয়ে ভ*য় পেয়েছিস, সোনা? বল আমাকে কেন খা*রা*প লাগছে?”

গাল থেকে মিতালীর হাত সরিয়ে দিয়ে মাহা চোখ বুঁজে ফেললো। ধীর স্বরে বলল,
-“এখন একটু ভালোলাগছে, আমায় এখন বিরক্ত করোনা।”

মিতালী চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।
রাতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বের হলো। সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। মিতালী সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহবুব কিছু নিয়ে হয়তো রে*গে আছে। তার রা*গ সুঁচ হয়ে বাবা-মাকে আ*ঘা*ত করতে ভুললোনা।
দুর্বৃত্ত গলায় বলল,
-“এই কু*ফা গুলার খাওন আইতে না আইতেই আমার রোজগার কইমা গেলো। একের পর এক বি*প*দ মাথায় চাইপ্পা বসে। ফকিন্নির জাত।”

ভাতের প্লেটে ঝোলে মাখোমাখো হাত। লোকমা উঠছেনা হাতে, তবে চোখের পানি টপটপ করে ভাতের প্লেটে ঠিকই স্থান নিচ্ছে৷ বাবা মায়ের এই করুণ কান্না মিতালীর ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো। দুমড়েমুচড়ে উঠলো অন্তঃস্থল। তার গলার স্বর চওড়া হলো।
-“কোন সাহসে আব্বা আর মাকে তুমি কথা শোনাচ্ছো? তোমাকে তো কেউ বলেনি তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে।”

মাহার শরীর ও আজ প্রচন্ড রা*গে থরথর করে কেঁপে উঠলো। উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলল,
-“খোদার কসম, আমার আব্বা আর মায়ের চোখ থেকে যদি দ্বিতীয়বার অশ্রু ঝরে, তোমায় র*ক্ত*ক্ত করতে আমার সময় লাগবেনা।”

মাহবুব, পিয়ালী দুজনেই আহত বাঘের মতো গর্জে উঠলো। মিতালী আজ বাঁধা দিলোনা মাহাকে। কথা বলতে দিলো। চুপ থাকাকে এরা দুর্বলতা মনে করে বারবার আ*ঘা*ত করতে আসে। খুব শীঘ্রই এর একটা বিহীত হবে। সন্তর্পণে ফোনের রেকর্ড অপশন অন করে নেয় সে। এরা মি*থ্যা*বা*দী। আজ কী বলেছে, আগামীকাল তা ভুলে যাবে। শক্ত প্রমাণ না থাকলে ধূ*র্ত শেয়ালের মতো ট*প*কা*তে সময় লাগবেনা।
হঠাৎ মাহবুবের হাত থেকে একখানা জুতা এসে পড়লো মাহার শরীরে।

#চলবে……
#চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here