নিরাবতার হৃদয় কোণে পর্ব -৯+১০+১১

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৯

অঝোর ধারায় তুমুল বৃষ্টি, ভারী বাতাসের সাথে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির ছন্দ। প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব।
উত্তেজিত মাহবুব আ*ক্রো*শ ফে*টে পড়ে। মুখেমুখে ত*র্ক করা মাহাকে পায়ের জুতা খুলে ছুঁড়ে মা*রে।
আচমকা আক্রমণে অনেকটা ব্যথা পেলো মাহা। এবার খেঁকিয়ে উঠলেন মতিন সাহেব। বাবা – ছেলের মাঝে পিয়ালী যোগ হলো। আর স্থির থাকতে পারলোনা মিতালী। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। সেই সীমা যখন অতিক্রম হয়ে যায়, তখন চুপ থাকা যায়না। পিয়ালীর সাথে এক কথা দু’কথা করে হাতাহাতি লেগে গেলো। মাহবুব দু’বোনের গায়েই হাত তু*ল*লো। রোজী বেগম ধরতে আসলে তাকেও ছাড় দিলোনা। স*জো*রে ধা*ক্কা মে*রে দূরে সরিয়ে দিলো। সি*ট*কে পড়লো রোজী বেগম। পুরো বাড়িতে হাহাকার, শো*কে*র ছায়া। এমন পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা উঠলো মতিন সাহেবের। বুক চা*প*ড়ে পড়ে গে*লে*ন।

ভারী বর্ষনের ঝুমঝুমি শব্দে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত শব্দ গেলোনা। এক পর্যায়ে থামলো নি*র্ম*ম অত্যা*চার। সবাই ব্যস্ত হলো মতিন সাহেবকে নিয়ে।

★★★

গাছের ফাঁকফোকর গলে সূর্যের টুকরো আলো ঝলমলিয়ে পড়লো ধরণিতলে। গতরাতের বৃষ্টির পানি ঝপাৎ করে শুষে নিলো বালুযুক্ত মাটি। নাস্তা সে*রে*ই বাড়ি থেকে বের হলো মিতালী। আজ শুক্রবার হওয়ায় স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই। চরণ জোড়া চেয়ারম্যান বাড়ির চৌকাঠ মাড়ালো। সবাই নাস্তার টেবিলে। সবার আগে নির্ভীকের চোখ পড়লো।
হঠাৎ মিতালীকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কিরে, তুই এখন?”

নির্ভীকের কথায় একে একে সবার দৃষ্টি মিতালীর উপর পড়লো। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
-“আরে মিতালী, আসো আসো।”

মিতালী হালকা হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো। বলল,
-“আপনার কাছেই এসেছি চাচা। কথা ছিলো।”

ইশরাকের মা বললেন,
-“বসো, সবার লগে নাস্তা করো।”

মিতালী বলল,
-“আমি নাস্তা করেই বেরিয়েছি, চাচি।”

ইশরাক খানিক অবাক হলো। মেয়েটাকে কত ছোট দেখে গিয়েছিলো। নির্ভীকের সাথেই স্কুলে যেতে দেখতো। অথচ সেই কিশোরী মেয়ে এখন পরিণত এক যুবতী। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজের দেখা মেলে। আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-“এটা সেই পিচ্চি মিতালী না? কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে নির্ভীকের জন্য এসে দাঁড়িয়ে থাকতো!”

ইশরাক ভাইয়ের কথায় খানিক লজ্জা পেলো মিতালী। হাসলো লজ্জিত ভঙ্গিতে। ইশরাক খানিক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও হাসলো। নাস্তা শেষ করে চেয়ারম্যান সাহেব মিতালীর মুখোমুখি বসলেন। সেখানে মোটামুটি সবাই উপস্থিত ছিলো। তিনি বললেন,
-“কী কথা বলবে? বলো।”

মিতালী সময় নিয়ে কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। সর্বপ্রথম নিজের হাত বাড়িয়ে লম্বা হাতা গুটিয়ে নিলো। কালছে দাগ দেখিয়ে গতরাতের ঘটনা বিবৃতি করলো। শেষে বলল,
-“আমি এর উচিত বিচার চাই চাচা। আমি মানি এমনকি এই গ্রামের সকলেই জানেন আপনার বিচার সম্পর্কে। সবার মতামত আর ভোটের ভিত্তিতেই আপনি আজ বিচারকের আসনে আছেন। আমার বিশ্বাস আমিও ন্যায়বিচার পাবো।”

ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলো যেন। চেয়ারম্যান সাহেব প্রচন্ড ক্ষু*ব্ধ হলেন। এই ছেলে বে*য়া*দ*বি*র সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে বসেছে। এবার এর উপযুক্ত বিচার করা প্রয়োজন। এতদিন তাকে সুযোগ দেওয়া হলেও এবার আর নয়। বাবা মায়ের সাথে অ*স*ৎ আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আজ যদি তিনি ন্যায় বিচার না দেন, তবে অদূর ভবিষ্যতে নিজেও অ*বি*চা*রে*র শি*কা*র হবেন বলে মনে করেন। মিতালীকে আস্বস্ত করে বললেন,
-“শীঘ্রই তুমি বিচার পাবে।”

মিতালী শীতল অথচ দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-“শীঘ্রই নয় চাচা, আমি আজই বি*চা*র চাই। আপনি হয়তো নির্ভীকের কাছে শুনেছেন আমার চাকরির ব্যাপারে। তাই অন্যদিন আমার সময় হবেনা।”

মিতালীর কথায় সম্মত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। বললেন,
-“আমি বিকেলেই তোমাদের বাড়িতে যাবো।”

মিতালী প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
-“এখন তবে উঠি চাচা।”

নির্ভীক মামার সামনে নিজের জ্ব*ল*ন্ত রা*গ সংবরণ করে রাখলো। মিতালীর উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমিও বের হবো, চল একসাথে যাওয়া যাক।”

সায় দিলো মিতালী। দুজন যখন রাস্তায় নামলো তখনই তরতর করে রা*গ ঝরে পড়লো। হড়বড়িয়ে বলল নির্ভীক,
-“মিতা, এবার কিন্তু ওই মাহবুবকে আমি মে*রেই ফেলবো। অ*স*ভ্য লোক পেয়েছেটা কী?”

মিতালী ঠান্ডা গলায় বলল,
-“শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

অস্থির হয়ে পড়লো নির্ভীক। দিকবিদিকশুন্য হয়ে মিতালীর হাত টে*নে ধরলো। চক্ষু সম্মুখে মা*রে*র দা*গ স্পষ্ট। ব্যথাতুর কন্ঠে উগ্রতা। লালে রঞ্জিত চোখের সফেদ অংশ। হুংকার ছেড়ে বলল,
-“তোর গা*য়ে হাত তুলেছে। আর তুই আমাকে শান্ত থাকতে বলছিস?”

-“কেন এত ডেস্পারেট হচ্ছিস? আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নির্ভীক কান দিলোনা মিতালীর কথায়। আলতো হাতে মিতালীর হাত মুঠোয় পুরে নিলো। একবার আদুরে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
-“খুব কি ব্যথা করছে?”

মিতালী স্পষ্ট ব্যথা দেখতে পেলো নির্ভীকের চোখে। কাতরতা উপছে পড়ছে তার চোয়ালে। মিষ্টি করে হাসলো মিতালী। আশ্বস্ত করে বলল,
-“ব্যথা করছেনা। এত চিন্তা করিসনা।”

-“চল তোকে ঔষধ কিনে দিই।”

মিতালী এবার শব্দ করেই হাসলো। বলল,
-“এটুকু আ*ঘা*তে কিছু হবেনা। তারচেয়ে বরং তুই একটা কবিতা শোনা।”

অন্য সময় হলে খুশিতে গদগদ হয়ে কবিতার আসর জমিয়ে ফেলতো নির্ভীক। কিন্তু আজ বিষন্ন মনকাননে কবিতা সুর পেলোনা। মুখ ভার করে বলল,
-“এখন ভালোলাগছেনা।”

আর ঘাটালোনা মিতালী।

★★★

সেদিন মাহবুব যেমন বি*চা*র ডাকার পর মিতালীকে সংবাদ দিয়েছিলো, ঠিক তেমনিভাবে মাহবুবকে আজ বি*চা*র সভায় আমন্ত্রণ জানালো মিতালী। মাহার শরীরে জ্বর আসলো। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা মেয়েটা। মাহবুবের ভেতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। গতকাল অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গভীর আ*ঘা*ত করে বসেছে মেয়ে দুটোকে। মিতালীকে যতটুকু চেনা আছে, তাতে বোঝা গেলো তার কপালে খা*রা*প কিছু লিখা আছে।
বাড়ির উঠান সদৃশ জায়গায় আজও চেয়ার পাতা হলো। এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত আছেন। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে তার ছেলে ইশরাক আর ভাগ্নে নির্ভীক ও উপস্থিত আছে।
চেয়ারম্যান চাচা গলা পরিষ্কার করে বিচার কার্য আরম্ভ করলেন।
মাহবুবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তোমার নামে আজ বিশাল অভিযোগ এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এখানে উপস্থিত হওয়া। সমস্যা সম্পর্কে তুমি কি অবগত? না-কি আমাকে কিছু বলতে হবে।”

অবুঝ বালকের মতোই না বোঝার ভান ধরলো মাহবুব। অজানা ভঙ্গিতে বলল,
-“আমি কিছুই বুঝতাছিনা। আপনে কী কইতাছেন, পরিষ্কার কইরা কন।”

চেয়ারম্যান সাহেব দুর্বোধ্য হাসলেন। মাহবুবকে অবগত করার ভঙ্গিতে বললে,
-“গতরাতে তুমি নাকি বাবা- মায়ের সাথে খা*রা*প আচরণ করেছ? এতটুকুতেই সমস্যা সীমাবদ্ধ নয়, তুমি যুবতী মেয়ে দুটোর গায়ে ও হাত তু*লে*ছো। এই অভিযোগ কি সত্য? আমরা তোমার মতামত জানতে চাই।”

মাহবুব কূ*ট*কৌ*শ*লে বলল,
-“কি বইলা আপনের কান ভারী করছে সেইটা আমার জানা নাই। আমার জানামতে আব্বা- আম্মার লগে খা*রা*প ব্যবহার করছি, এমন কিছু মনে পড়েনা।
বাকি রইলো ওগো গায়ে হাত তো*ল*ন। ওরা কি করছিলো? আমি যে বড় ভাই, আমারে পর্যন্ত রেহাই দেয় নাই। আমার গালে থা*প্প*ড় উঠাইছে মিতালী।”

সবার মুখেমুখে গুঞ্জন পড়ে গেলো। মাইয়া মানুষের এত বাড় ভালানা। সবার কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই কুটিল হাসলো মাহবুব। মিতালীর ভাবভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলোনা।
চেয়ারম্যান চাচা গম্ভীর স্বরে বলল,
-“মিতালী, তুমি কি বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তু*লে*ছো?”

মিতালী প্রশ্নের জবাব দিলোনা। উল্টো বলে বসলো,
-“চাচা, মহামান্য ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করুণ আমাদের নিয়ে আর কিছু বলার আছে কি-না? কারণ একটুপর আর তার বলার মুখ থাকবেনা।”

মিতালীর উপর তাচ্ছিল্য হাসলো মাহবুব। বলল,
-“কইলে তো শ্যাষ ওইবোনা। যা কর্মকাণ্ড আমার চোখে পড়ে। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!”

নির্ভীকের শরীরে র*ক্ত টগবগ করে উঠলো। তাগড়া যুবকদের র*ক্ত গরম থাকে। এরা নিজের সম্পর্কে কোনো মি*থ্যা আরোপ সহ্য করতে পারেনা। আর যদি সে মি*থ্যে আরোপ প্রিয় মানুষকে নিয়ে হয়, তবে একদমই সহ্য করেনা। ইশরাক হাত চেপে ধরলো নির্ভীকের। ধীর স্বরে বলল,
-“শান্ত হ। দেখতে থাক মেয়েটার কতটুকু জো*র আছে ভেতরে। মনে রাখিস সবসময় কিন্তু বি*প*দে ওর খুঁটি হয়ে দাঁড়াবার মতো কেউ থাকবেনা। মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।”

ভাইয়ের কথাটা ভীষণ মনে ধরলো নির্ভীকের। মুহূর্তেই শান্ত হলো সে।
মিতালী ফোন ঘেঁটে গতরাতের রেকর্ড করা অডিও ক্লিপ অন করলো। যেখানে স্পষ্টতই সবার কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। মাহার প্রতিবাদী কন্ঠ, পিয়ালী- মাহবুবের বি*শ্রী গা*লি*গা*লা*জ, মতিন সাহেবের হাঁক-ডাক। যেখানে স্পষ্ট শোনা গেলো বাবাকে খাবার খোঁটা দিচ্ছে মাহবুব। আকস্মিক আ*ঘা*তে*র শব্দ হতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো মাহা। পরপরই মা*র*ধ*রে*র শব্দ হলো।

সবাই যখন মাহবুবের দিকে দৃষ্টি ফেললো। তখন সে চো*রা ভঙ্গিতে কাচুমাচু দৃষ্টি লুকাতে ব্যস্ত। দল যখন মিতালীর দিকে ভারী হলো তখন আরও একটি মি*থ্যার আশ্রয় নিলো। বলল,
-“মিতালী যে আমারে চ*ড় মারলো? পিয়ালীর গা*য়ে হাত তু*ল*লো? সেই বিচার করবেন না?”

মিতালী মাহবুবের মুখোমুখি হলো। ঠান্ডা গলায় শুধালো,
-“খুব শক্ত চ*ড় দিয়েছিলাম বুঝি?”

আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল মাহবুব,
-“মা*রি*স নি?”

মিতালী সবার উদ্দেশ্য বলল,
-“আমি কোনো সাধু মেয়ে নই। এই লোকের স্ত্রীর গায়ে আমি হাত তু*লে*ছি আত্মরক্ষার জন্য। সেটা আমি স্বীকার করি। সে ও কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেয়নি।
কিন্তু এই কু*রুচি*পূর্ণ লোকের গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা আমার মস্তিস্ক ভাবতে পারেনি। বাকি যাচাই-বাচাই প্রমাণের জন্য উনার মেয়ে মাহবুবাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। নিষ্পাপ বাচ্চা নিশ্চয়ই মি*থ্যা বলবেনা।”

ভড়কে গেলো মাহবুব। ক্রু*দ্ধ স্বরে বলল,
-“আমার বাইচ্চা মাইয়ারে এসবে জড়াইবিনা, কইয়া দিলাম।”

চেয়ারম্যান সাহেব মাহবুবের কথা অগ্রাহ্য করে মাহবুবাকে ডাকলেন। পিটপিট করে নরম চোখে তাকালো মেয়েটি। যেন ফুলের আদলে গড়ে ওঠা চেহারা। তার মধ্যে ভীতি লক্ষ করে কন্ঠের ভীত নরম করে কোমল স্বরে কাছে ডাকলেন চেয়ারম্যান সাহেব। জিজ্ঞেস করলেন,
-“তেমার ফুফি কি বাবাকে চ*ড় মে*রে*ছে?”

মাহবুবা তটস্থ দৃষ্টিতে একবার বাবার অভিমুখে চাইলো। রাঙানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে শাঁসালো মাহবুব। চেয়ারম্যান সাহেব ব্যাপারটা লক্ষ করেই বললেন,
-“মেয়েকে শাঁসিয়ে লাভ নেই।”
মাহবুবাকে বললেন,
-“তুমি বলো দাদুভাই।”

মাহবুবা আরও একবার বাবাকে দেখলো, ফের ফুফির দিকে দৃষ্টি দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। “না” ভঙ্গিতে দু’পাশে মাথা নাড়ালো।
সব পরিষ্কার হয়ে যেতেই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ঘৃ*ণি*ত দৃষ্টিতে একবার মাহবুবকে দেখে পূণরায় পিয়ালীর দিকে নজর দিলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“বাড়ির বউদের আচরণ হতে হয় নমনীয়। নিষ্ঠার সাথে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আফসোস! তোমার মুখের ভাষাটাই ঠিক নেই। নিজেকে শুধরে নাও, আবার ও বলছি নিজের ব্যবহার মার্জিত কর।”

নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো পিয়ালী। এবারে মাহবুবের শা*স্তির ব্যাপারে কথা হলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো
মাহবুবের মুখে কালি মেখে গলায় জুতার মালা আর কলসি বেঁধে পুরো গ্রাম চত্ত্বর দেওয়ানো হবে।
আৎকে উঠলো মাহবুব, পিয়ালী।
চেয়ারম্যান সাহেব জোরালো কন্ঠে বললেন,

-“এখানে যতজন যুবক, মধ্যবয়স্ক উপস্থিত আছেন সবার উদ্দেশ্যে কথাটি। শুধু মাহবুব নয়, এরপর থেকে যিনিই বাবা-মায়ের সথে অ*স*ৎ আচরণ করবেন, তার পরিণামই এমন হবে।”

ভেতরে ভেতরে অনেকেই সতর্ক হয়ে গেলো। হাসিতামাশার সাথে জুতার মালা প্রস্তুত হলো। মাহবুবের গলায় ঝুলিয়ে সর্বপ্রথম বাবা – মায়ের পায়ে ফেললো তাকে। গ্রামের ছোট-বড় সকল কিশোর-যুবক হৈহৈ করতে করতে মাহবুবের পেছনে ছুটলো। অনেকেই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করলো। এর গতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে স্থির হবে।
মুখ নিচু মাহবুবের। আজকের পর থেকে মিতালীর প্রতি তার দশগুণ ক্ষো*ভ জন্ম নিলো।
অপরদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখলো অন্য এক পুরুষ। তার মনে সূক্ষ্ম ভালোলাগার বীজ বপন হলো। চোখের পরতে পরতে মুগ্ধতা। অন্তঃকরণে শুরু হলো প্রলয়ঙ্কারী উচাটন। সে তো এমন নারীই পছন্দ করে।
ইশরাক নির্নিমেষ চেয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
-“বিধ্বংসী।”

না বুঝেই প্রশ্ন করলো নির্ভীক,”কিছু বললে?”

ইশরাকের ঘোরলাগা উত্তর,”হুঁ?”
#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১০

মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। সূর্য উপর থেকে খাঁড়াভাবে কিরণ দিচ্ছে। মাথার উপর ত্রিমাত্রিক যন্ত্রটি গটগট আওয়াজ তুলে কার্য সম্পাদন করে চলেছে।
ঘন্টার আওয়াজ পেতেই শিক্ষার্থীরা ছুটে চললো টিফিন করতে। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই সামনে নির্ভীক দাঁড়ালো। বলল,
-“চল, খিদে পেয়েছে।”

মিতালী সোজাসাপটা উত্তর দিলো,
-“তুই খেয়ে আয়, আমি এখন খাবোনা।”

ভ্রু জোড়া নিমেষেই কুঞ্চিত হয়ে এলো। তীক্ষ্ণ চোখে পরোখ করে নির্ভীক বলল,
-“একা একা খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। এখন চল, বিয়ের পর জামাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার টাকা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবি।”

মিতালী তো বোঝাতে চায়নি তার কাছে টাকা নেই। তবুও ছেলেটা কিভাবে যেন বুঝে গেলো। এই মুহূর্তে নির্ভীক তাকে না নিয়ে খেতে যাবেনা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,
-“চল।”

স্কুলের পাশেই একটা হোটেলের মতো জায়গায় গিয়ে বসলো দুজন। সিঙ্গারা আর চায়ের অর্ডার দিয়ে মিতালীর পাশের চেয়ারে ধপ করে বসলো নির্ভীক। ফোন ঘেঁটে সেদিনের তোলা একটা ছবি বের করে মিতালীর সামনে ধরলো। মিটিমিটি হেসে রগড় করে বলল,
-“দেখ আমার সাথে এক পেঁচা মুখো মহিলা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

মিতালীর নজর পড়তেই থা*বা বসালো ফোনে। নির্ভীক ফোন সমেত হাত সরিয়ে নিলো। অল্প শব্দে হেসে বলল,
-“পারবি আমার সাথে?”

মিতালী ক্ষে*পে গেলো। বি*দ্রু*প করে বলল,
-“আমাকে পেঁচা মুখো বলেছিস না? দেখবো তোর বউ কেমন হয়।”

নির্ভীক রে*গে গেলো। মিতালীকে সাবধান করে বলল,
-“বউ নিয়ে কথা বলবিনা খবরদার! আর যাইহোক আমার বউ পেঁচা মুখো হবেনা। সে হবে আমার চোখে সেরা সুন্দরী।”

ভেংচি কাটলো মিতালী। বলল,
-“তুই একটা বিরক্তিকর পারসন। এই বিরক্তির বস্তাকে কোনো মেয়ে সহ্য করবেনা।”

নির্ভীক কুটিল হেসে বলল,
-“তোর গলায় ঝুলে যাই, কী বলিস?”

আৎকে ওঠা গলায় মৃদু চেঁচালো মিতালী। বলল,
-“নাহ্! একদমই না।তোর সাথে থেকে এমনিতেই আমার অর্ধেক চুল পড়ে গিয়েছে। আমার গলায় ঝুলে পড়লে দেখা যাবে ছিলা চান্দি নিয়ে ঘুরতে হবে আমাকে।”

নির্ভীক চোখেমুখে বিশেষজ্ঞ ভাব নিলো। গলা পরিষ্কার করে ইশারায় কাছে ডাকলো মিতালীকে। বলল,
-“কাছে আয়।”

এই বলে নিজেই মাথা ঝুঁকিয়ে মিতালীর কাছাকাছি গেলো। ফিসফিস করে বলল,
-“আমার থুতু দিলে চুল পড়া কমে যায়।”

পিঠে থা*প্প*ড় পড়তেই সোজা ভদ্র হয়ে বসে নির্ভীক। তার ভাব উধাও হয়ে গেলো। প্লেট থেকে একটা সিঙ্গারা তুলে মিতালীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
ওর হাত থেকে সিঙ্গারা নিলোনা মিতালী। প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” তোর থুতুর বিজ্ঞাপন অন্য কোথাও দিস। ভালো ইনকাম হবে। ”

নির্ভীক দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

★★★

সময়টা বিকেলের মধ্যভাগ। তেজস্বী সূর্যের ম্লান হয়ে আসা রক্তিমা আভা। একটুপরই পশ্চিমে হে*লে পড়বে জলধারার কোল ঘেঁ*ষে।
সকালের ঝকঝকে মসৃণ চেহারা আর নেই। বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে চামড়ায় রুক্ষতা আর ক্লান্তি ভাব হা*না দিয়েছে। স্কুল ছুটি হতেই দুজনে একসাথে বের হলো। অর্ধেক পথ এগোতেই ইশরাকের দেখা মিললো। বন্ধুদের সাথেই বেরিয়েছে। চাকরির অফার আসলেও সে ঠিক করলো কিছুদিন ঘোরাফেরা করবে। নির্ভীক আর মিতালীর সাথে দেখা হতেই বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে এগিয়ে এলো সে।
নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া কোনদিকে যাচ্ছিলে?”

-“বন্ধুদের সাথেই এসেছিলাম। তোদের সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি যাওয়া যাবে।”

মিতালী দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল,
-“নির্ভীক থাক তাহলে। আমার তো টিউশন আছে।”

ইশারক অবাক হয়ে বলল,
-“সে কি? আমি ভাবলাম একসাথে তিনজনে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো।”

নির্ভীক বলল,
-“সাড়ে চারটা থেকেই ওর টিউশন আছে। আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি।”

কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও অধর প্রসারিত করে ইশরাক বলল,
-“চলো, তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”

মিতালী বাঁধ সাধলো।
-“না না ভাইয়া। আমি যেতে পারবো। আপনারা বাসায় চলে যান।”

নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া তুমি বরং বাড়ি যাও, আমি মিতালীকে পৌঁছে তারপর বাড়ি যাবো।”

-“ঠিক আছে।”
এই বলে ইশরাক বাড়ির পথে রওনা দিলো। একবার পেছন ঘুরে মিতালীকে পরোখ করে মৃদু হাসলো। মাথা দুদিকে ঝাঁকিয়ে আর দাঁড়ালোনা।

★★★

পুরো বাড়িতে মা- বাবা আর মাহা ছাড়া কেউ নেই। গতকালের বি*চা*র*টা মাহবুবের আত্মসম্মানে লেগেছে। তাই সে বাড়ি ছেড়ে বাজারের একটা কলোনিতে উঠেছে।
এতে মিতালীর খুব একটা যায় আসেনা। তাদের ইচ্ছে হলেই নিজেদের জন্য বরাদ্দ অংশে এসে থাকতে পারে। গোসল সেরে আসতেই মা ভাত দিলেন। খেতে খেতেই মাহার পড়ালেখার ব্যাপারে খোঁজখবর নিলো।দুদিন যাবত মেয়েটার পড়ায় মন নেই। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে।
মিতালী জিজ্ঞেস করলো,
-“খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখা সব ঠিকমতো করিস?”

মাহার কান পর্যন্ত হয়তো কথাটি পৌঁছালোনা। সে আনমনে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা আপু, কেউ কি কারো মনে বাস করতে পারে?”

মাহার কথায় ভারি চমকালো মিতালী। বোনের উড়ুউড়ু মন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বুঝতে সময় লাগলোনা তার। সরাসরি কোনো জিজ্ঞাসাবাদে না গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-“মনে বাস করতে হলেও একটা পর্যায় লাগে। আগে নিজেকে উপযুক্ত পর্যায়ে নিতে হবে। আর সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে পড়াশোনা সবার আগে জরুরি। আমি চাই আপাতত পড়াশোনায় মন দে।”

মাহা অতটা ও অবুঝ নয়। সুক্ষ্ম ইঙ্গিতে সে অনেক কিছুই বুঝলো। সত্যিই তো, পড়ালেখা না করলে ওরকম একটা শিক্ষিত মানুষ তাকে কেন পছন্দ করবে? পড়ার টেবিল ছেড়ে আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাহা। টুপ করে চুমু খেয়ে বলল,
-“এজন্যই তোমায় এত ভালোবাসি আপু। আমার সব রকম স*ম*স্যা*র কি সুন্দর সমাধান করে দাও।”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“খুব ভালো অবস্থান না হলে এ সমাজ তোমাকে পাত্তা দেবেনা। আজ যারা অ*ব*হে*লা করবে, তোমার শক্ত পজিশন দেখে তারাই তোমার পাশে ঘুরঘুর করবে। তুই খুব বেশি ছোট না। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে চলাফেরা করবি।”

মাহা আর অপেক্ষা করলোনা। একছুটে পড়ার টেবিলে চলে গেলো। ভালো কিছু করতে হলে, বাবা- মায়ের দুঃখ দূর করতে হলে তার পড়াশোনা প্রয়োজন।
তাছাড়া মানুষটাকে তার লাগবে। এটা জীবন-ম*র*ণের ব্যাপার।
★★★

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে এগোতেই একটা রিকশা এসে থামলো। রিকশাচালক লোকটি বললেন,
-“আম্মাজান যাইবেন?”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“না চাচা, আমি হেঁটেই যাবো।”

লোকটি কপালের ঘাম মুছে বললেন,
-“এদিকে আর ভাঁড়া পামুনা। আপনে উইঠা পড়েন, কই যাইবেন নামাই দিয়া আসি।”

মিতালী সংকোচ করে বলল,
-“না চাচা, আপনি কষ্ট করে গাড়ি চালাবেন। আমি চড়ব, অথচ আপনার পারিশ্রমিক দিতে পারবোনা।”

লোকটি এবার হাসলেন। বললেন,
-“আরেকদিন দেহা ওইলে দিয়া দিয়েন।”

জোরাজোরিতে মিতালী রিকশায় চড়ে বসলো।
তখনই পেছন থেকে ডাক পড়লো। ইশরাক হাত উঁচিয়ে ডাক দিলো,
-“এই রিকশা যাবেন?”

এগিয়ে এসে মিতালীকে না দেখার ভান করে বলল,
-“ওহ্ মিতালী উঠেছো! আমি দেখিনি। রিকশা পাচ্ছিলাম না বলে এসেছি। আচ্ছা তুমি যাও।”

মিতালী বলল,
-“আপনি যান রিকশায় করে। আমি হেঁটে চলে যাবো।”

অতঃপর রিকশাচালককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“উনাকে নিয়ে যান চাচা। আপনার ভাড়াটা ও পেয়ে যাবেন।”

ইশরাক বাঁধ সাধলো।
-“না না, তুমিই যাও। আমি পরে আসছি।”

রিকশাচালক একবার ইশরাকের দিকে তাকালেন, ফের মিতালীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“দুইজনেই দ্যাখতাছি দুইজনরে চেনেন। তয় এক লগে যাইতে সমিস্যা কী?”
ইশরাককে বললেন,
-“ওডেন মামা। দুইজনরেই নামাইয়া দিমু।”

ইশারাক মিতালীর দিক থেকে ক্লিয়ার হওয়ার জন্য বলল,
-“আমি পাশে বসলে তোমার কোন সমস্যা হবে না তো?”

মিতালী দ্বিধা নিয়ে একটু চেপে বসলো। ইশরাক পাশে বসলো। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালিয়ে বলল,
-“চলুন চাচা।”

-“কোথায় নামবে?”

-“হু? এইতো একটু সামনে একটা টিউশন আছে।”
পরপরই মিতালী ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি কোথায় নামবেন?”

-“আমি? কোথাও না তো!”

মিতালী বুঝতে না পেরে দ্বিধান্বিত চোখে তাকালো। বলল,
-“সরি? বুঝলাম না।”

নিজের জবাবে নিজেই ভড়কে গেলো ইশরাক। একটু হেসে বলল,
-“মজা করলাম। বন্ধুর সাথে দেখা করার আছে।”

মিতালী আর কোনো কথা বললোনা। উনার সাথে কখনো তেমন ভাবে কথা বলা হয়নি। তাই সহজ হতে পারছেনা। ইশরাক উশখুশ করছে। কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কী বলবে বুঝতে পারছেনা।
হুট করেই এক অযাচিত প্রশ্ন করে বসলো,
-“প্রেম-ট্রেম কর?”

মিতালী কপাল কুঁচকে তাকালো। এমন প্রশ্নে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
ইশরাক ভ্রু উঁচিয়ে আবারও জানতে চাইলো।
প্রতিত্তোরে মিতালী ঘাড় নাড়িয়ে ‘ না’ বোধক উত্তর দিলো।

-“গুড গার্ল।”

-“জি?”

ইশারাক বলল,
-“এসব নিয়ে এখন চা*প নিও না। পড়াশোনা কর।”

এবার একটু নয়, অনেকটাই বিরক্ত হলো মিতালী। তখন থেকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন সাথে একগাদা জ্ঞান দিচ্ছে। চোখেমুখে বিরক্তির আঁচ লক্ষ করে ইশারাক মিটিমিটি হাসলো। বলল,
-“বাহ্, বিরক্ত হলেও দেখছি তোমায় ম*ন্দ দোখায় না।”

নিজের গন্তব্য এসে যেতেই মিতালী নেমে পড়লো। ইশারাকের দিকে না ফিরেই বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। রিকশা কয়েক মিটার সামনে যেতেই ইশরাক বলল,
-“চাচা, আর যেতে হবেনা। এখানেই থামুন।”

পকেট থেকে দুজনের ভাড়া মিটিয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক হেসে বলল,
-“ধন্যবাদ চাচা।”

লোকটি একগাল হেসে বললেন,
-“আপনে গো মনমালিন্য হইছে। আমি তো শুধু নিজের ভাড়াটাই নিছি।”

ইশারাক ঝাঁকড়া চুলে ঝাঁকুনি দিয়ে হাসলো। লোকটিকে কিছু বললোনা। লোকটিও আর বোঝার চেষ্টা করলেন না। বড়লোকের ব্যাপার, তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছেন এটাই ঢের।
উনি এই এলাকার নন। জীবিকার তাগিদে অনেকেই অনেক জায়গায় গিয়ে কাজ করে। এতে সুবিধা হলো উনি দুজনের কাউকেই চিনলেননা। লোকটিকে ইশরাক আগে থেকেই কিছু একটা বুঝিয়ে সামনে পাঠিয়েছিলো।

★★★

বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইশরাকের মুখোমুখি হলো মাহা। হুট করে তার পা জোড়া থমকে গেলো। মৃদু কম্পনের জোর ধরে আর সামনে এগোতে পারলোনা। ধকধক করে উঠলো হৃৎপিণ্ড। আড়চোখে তাকে দেখার তৃষ্ণা মেটালো। ইশরাক জোরালো গলায় ডাকলো,
-“আরে মাহা, কোথাও গিয়েছো?”

ভড়কে গেলো মাহা। জবাব দিতে কন্ঠ নালি ঈষৎ
কেঁপে উঠলো। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে উত্তর করলো,
-“বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলাম।”

-“এখন শরীর ঠিক আছে?”

মাহার মন ফুঁপিয়ে উঠে বলতে চাইলো “আপনি কেন আমায় নিয়ে ভাবছেন? ভাববেন না, একদম ভাববেন না আমায় নিয়ে। নিজেকে প্রস্তুত করতে দিন। আমি একদিন আপনার সামনে নিজেকে হাজির করে হুট করেই আপনাকে চেয়ে বসবো। ”
কিন্তু বলতে পারলোনা। শব্দগুচ্ছ তুমুল অবরোধ ঘোষণা করলো। মিইয়ে যাওয়া স্বরে জবাব দিলো,
-“জি ঠিক আছি।”

মাহা আর দাঁড়ালোনা। সে প্রস্থান করতেই কপালে ঢেউ খেলানো ভাঁজের সৃষ্টি হলো। মেয়েটা তাকে দেখে কি ভ*য় পেলো, নাকি লজ্জা?
না না, শা*লিদের হতে হয় প্রাণখোলা। শা*লিকে হাত করতে পারলেই বউয়ের মন পাওয়া যাবে। তাকে সহজ হতে হবে।

★★★

ভিড়ভাট্টাহীন সন্ধ্যের নির্জন, শান্ত প্রকৃতির গা ছুঁয়ে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন মানব-মানবী। মাঝপথে থেমে পড়লো মিতালী। নির্ভীককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“চা খাওয়াবি?”

নির্ভীক পা থামিয়ে আশেপাশে তাকালো। সন্ধ্যার সময় অনেক দোকানই বন্ধ থাকে। অদূরে একটা টং দোকানে মিটিমিটি আলো জ্বলতে দেখে বলল,
-“আয় আমায় সাথে।”

মিতালী পিছুপিছু গেলো। দুটো চা নিয়ে ফের রাস্তায় নামলো। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
-“চা ঠিক জমছেনা। সাথে কিছু হলে ভালো হতো।”

-“বিস্কিট নিবি?”

-“উঁহু, কবিতা নেবো।”

নির্ভীক অল্প শব্দ করে হাসলো। বলল,
-“কবে থেকে আমার গলায় কবিতা এতটা পছন্দ করা শুরু করেছিস?”

মিতালী অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-“আমি কখন বললাম তোর গলায় কবিতা আমার পছন্দ! শুধু চা টুকু জমছিলো না,তাই কবিতা চাইলাম।”

নির্ভীক আবার ও হাসলো।

“বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন
জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,
কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?
তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা
কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ
কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,
তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,
কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!”

——মহাদেব সাহা।

আবৃত্তি করতে গিয়ে বিশাল এক ঘোরে ডুবে গেলো নির্ভীক। সর্বদা তার দৃষ্টি ছিলো পাশে থাকা নমনীয় রমণীর পানে।
#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১১

শরৎ বিদায় নিয়ে প্রকৃতিতে ধরা দিলো হেমন্তের ছোঁয়া। একটু-আধটু ঠান্ডা আবহাওয়া, শীতের পূর্বাভাস। আবছা কুয়াশায় ঢেকে আছে মাঠঘাট। শিউলি ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধি জানান দেয় হেমন্তের উপস্থিতি। নিত্যদিনের মতো আজও কাজের উদ্দেশ্যে বের হলো মিতালী। প্রথম টিউশন শেষ দিয়েই নির্ভীকের অপেক্ষায় দাঁড়ালো। নির্ভীক রিকশায় চড়ে এসেই বলল,
-“উঠে পড়।”

মিতালী রিকশায় চেপে বসতেই চালক প্যাডেল ঘুরিয়ে স্কুলের পথে রওনা হলো।
সব শিক্ষকদের ডাক পড়লো অফিস কক্ষে। মাস পূর্ণ হওয়ায় হাতে হাতে খাম ধরিয়ে দেওয়া হলো। বেতন হাতে তুলে ছোট্ট একটা সিগনেচার দিয়ে যে যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে গেলো। এখানে খাটুনি হিসেবে বেতন একটু কম, তবে মাস শেষ হতেই হাতে বেতন পেয়ে আনন্দিত হলো মিতালী। তাছাড়া সপ্তম – অষ্টম শ্রেণীর গণিত ক্লাস তার। বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট এই মাস থেকেই প্রাইভেট পড়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দুটো ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের একই সাথে না পড়ালে সময় হয়ে উঠবেনা। রিতু আর তার চাচাতো-বোনকে সকাল আটটা থেকে পড়াতো। এখন তাদের সাথে কথা বলে প্রাইভেট সাতটায় নিয়ে আসতে হবে। সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টা স্কুলের স্টুডেন্টদের পড়াবে। রিতুর পরিবার মানতে না চাইলে ছে*ড়ে দেবে তাদের পড়ানো।

আজ তিনটে টিউশনের দুটোর টাকা হাতে পেলো। বেতন আর টিউশনের টাকা থেকে চার হাজার আলাদা করে নির্ভীকের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে প্রশ্ন করলো নির্ভীক,

-“কিসের টাকা?”

-“মনে নেই? তোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাহার ফর্ম পূরণ করলাম।”

টাকা নিতে সরাসরি নাকচ করলে মিতালী মানবেনা। বেশ শক্ত ধাঁচের মেয়ে সে। জোর করে হলেও টাকা সে ফেরত দেবে। তাই নির্ভীক একটু ঘুরিয়ে বলল,
-“আপাতত তুই ঝা*মে*লা সেরে নে। আমার যখন টাকার প্রয়োজন পড়বে, হাত খালি থাকবে তখন নাহয় দিস।”

নির্ভীকের হাতে চার হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে মিতালী বলল,
-“যখন তুই চাইবি, তখন আমি না ও দিতে পারতে পারি। তোর টাকা দিয়ে বাকি যেটা থাকবে, সেটা দিয়ে আমি সব সামলে নেবো।”

নির্ভীক কথা বাড়াতে চাইলোনা। রেখে দিলো টাকা। এগুলো সে খরচ করবেনা। দুদিন পর হয়তো মিতালীর আবার টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। তখন আবার তাকে এগুলো ফেরত দেবে।
আট হাজার টাকা থেকে নির্ভীককে দিয়ে অবশিষ্ট রইলো চার হাজার। টাকার খামটি সযত্নে বাবার হাতে তুলে দিলো মিতালী।

মতিন সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মিতালী ইশারায় বোঝালো,
-“খুলে দেখো।”

মতিন সাহেব খাম খুলে টাকা হাতে নিলেন। মিতালী বলল,
-“বেতনের টাকা।”

ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন মতিন সাহেব। আনন্দাশ্রু ঝরিয়ে মেয়েকে কাছে টে*নে নিলেন। উৎফুল্ল মেজাজ হুট করেই ব্যথাতুর কন্ঠে রূপ নিলো।
-“আমার মায়ের পয়লা চাকরির টেকা আমি হাতে নিছি। আমি তোমগো রোজগার খাইয়া যামু আশা কইরা পড়ালেখা করাইনাই। আমিতো আল্লাহর কাছে চাইছিলাম আমার রোজগারে আমার আম্মারা পড়ালেখা করবো। সুন্দরভাবে চলবো।”

মিতালী বাবার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
-“তুমি খুশি হওনি?”

দ্রুত চোখ মুছে নিলেন মতিন সাহেব। ত্রস্তব্যস্ত গলায় বললেন,
-“মেলা খুশি আব্বা। এই যে আব্বার চোখে পানি, এইডা আনন্দে ঝরতাছে।”

রোজী বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে বাবা – মেয়ের আনন্দ সিক্ত মুহূর্ত দেখে আঁচলে চোখ মুছলেন।
এই একমাস বহুকষ্টে রাস্তার ধার থেকে শাকপাতা নিয়ে এসে রান্না করেছেন রোজী বেগম। কোনোদিন শুধু আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়েছেন।
তবুও সুখে আছেন, আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে আছেন।
★★★

স্কুল থেকে ফেরার সময় মাহার পথ রোধ করে দাঁড়ালো ইশরাক। অস্বস্তিতে গাঁট হলো মাহা। তাকে পরোখ করে ইশরাক বলল,
-“মাহা মনি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো? নির্ভীকের সাথে তো ভীষণ সুন্দর হেসে হেসে কথা বলো। তাহলে আমার বেলায় লজ্জা কেন?”

এতক্ষণ যাবত খুব একটা লজ্জা না পেলেও এবারে মিইয়ে গেলো মাহা। নত দৃষ্টি আরেকটু খানি নত হলো। ইশরাক একটা চকলেট বাড়িয়ে দিলো। মৃদু হেসে বলল,
-“এটা তোমার জন্য। চলো কথা বলতে বলতে তোমায় বাড়িতে দিয়ে আসি।”

মাহা চকলেট নিতে হাত বাড়ালোনা দেখে ইশরাক নিজেই ওর হাতে চকলেট গুঁজে দিলো। শরীর শিরশির করে উঠলো মাহার। যেন মুহুর্তেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো। অনুভূতিটি ঠিক কেমন ছিলো? ভালো নাকি অস্বস্তির, সে বুঝলোনা। সামনে পা বাড়াতে গিয়েই টের পেলো পাশাপাশি আরও একজোড়া পা চলছে। ইশরাক মাহাকে সহজ করার জন্য প্রথমেই পড়ালেখার ব্যাপারে কথা তুললো। একসময় মাহা এতটাই সহজ হয়ে উঠলো যে খিলিখিলিয়ে হাসতে হাতে কবে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো টেরই পেলোনা।
ইশরাককে বিদায় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো মাহা। তার মনে সাতরং এর রংধনু দেখা দিয়েছে। মানুষটা কি সুন্দর করে কথা বলে। তাকে কি সুন্দর ইমপ্রেস করে নিয়েছে। তার ভাবানায় বিভোর হয়েই সে ঘরে প্রবেশ করলো। এদিকে ইশারাক দাঁড়িয়ে রইলো। একপলক তার প্রেমকে দেখার তৃষ্ণায় ইতিউতি করে উঁকি দিলো। মাহা তার সাথে সহজ হয়ে উঠেছে। এবার তার মাধ্যমে মিতালীর কাছে পৌঁছাতে খুব একটা সমস্যা হবেনা। মিতালীর সমস্ত খবরাখবরই নেওয়া যাবে।
উঠান থেকে শুকনো জামাকাপড় নিতে বের হলো মিতালী। তখনই তাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে বিদায় নিলো ইশরাক।

★★★

চেয়ারম্যান বাড়ির বড় খাবার টেবিলে গোল হয়ে চেয়ার পেতে বসলেন পুরুষ, বাচ্চারা। মহিলারা খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। মালিহা আস্তে আস্তে খাবার চিবুচ্ছে দেখে তার আম্মু মিনা ধমকে উঠে বলল,
-“দ্রুত খাবার চিবাও। তোমার এখনও হোমওয়ার্ক বাকি আছে।”

মালিহার মুখখানা চুপসে একটুখানি হয়ে গেলো। হোমওয়ার্ক, পড়ালেখা করতে তার ভালোলাগেনা। তবুও আম্মু প্রতিদিন তাকে পড়তে বসায়।
ছোট্ট মালিহার বেজার মুখে তাকিয়ে ইশরাক বলল,
-“ভাবি! এমনভাবে আমার ছোট্ট আম্মুটাকে বকছো কেন?”

মালিহার চোখজোড়া টলটলে জলে ভরে উঠলো। ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ফেললো। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নরম সুরে প্রতিবাদ করলো।
-“চাচ্চু তোমার ভাবি খুব পঁচা। আমায় প্রতিদিন পড়ায়, আমার ভালোলাগেনা। একটু গল্প ও করেনা আমার সাথে।”

ইশরাক খাওয়ার মাঝেই কিছু একটা ভাবলো। অধর কোনে দেখা মিললো সূক্ষ্ম হাসির মেলা। মালিহার গালে হাতের নরম ছোঁয়া দিয়ে বলল,
-“এখন থেকে আর আম্মুর কাছে পড়তে হবেনা। তোমার জন্য মিস আসবে। সে খুব মজা করে পড়ায়।”

মালিহা চোখ পিটপিট করে বলল,
-“সে কি গল্প করবে?”

ইশরাক ও মালিহার মতো চোখ পিটপিট করে ঢং করে বলল,
-“হ্যাঁ, সে দারুণ গল্প জানে।”

গদগদ কন্ঠ মালিহা বলল,
-“চাচ্চু আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।”

ইশরাক মালিহার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো। সযত্নে তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মালিহা পা দুলিয়ে খাবার চিবুচ্ছে আর নানারকম কথা বলছে।
মালিহাকে ঘরে পাঠিয়ে দিতেই ইশরাকের বাবা প্রশ্ন ছুঁ*ড়*লে*ন,

-“কোথা থেকে মিস ঠিক করলি?”

ইশারাক খাবার প্লেটে হাত চালিয়ে নিয়েই বাবার প্রশ্নের জবাব দিলো,
-“ভাবছি মিতালীকে মালিহার মিস হিসেবে ঠিক করবো। ব্যাপারটা কেমন হবে?”

চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
-“তুমি বললেই তো হচ্ছে না। তার ও তো মতামত থাকতে পারে।”

নির্ভীক খাওয়া থামিয়ে বলল,
-“আমার মনে হয়না মিতালী পড়াতে আসবে। দিনের বেলায় ওর একদণ্ড জিরোবার সময় নেই।”

ইশরাক বলল,
-“সন্ধ্যার পর পড়িয়ে দেবে না হয়।”

নির্ভীক ফের বলল,
-“সারাদিনের ধকল সহ্য করে আবার রাতে ও খাটুনি খাটবে?”

-“মিতালী অনেক দূরদূরান্তে টিউশন করতে যায়। সেখান থেকে একটা টিউশন ছেড়ে দিয়ে মালিহাকে পড়ালেই হবে। সে দিনে সময় না পেলে না হয় সন্ধ্যের পর পড়িয়ে যাবে।”

ইশরাকের কথায় খানিক বিরক্ত হলেও প্রকাশ ঘটালোনা নির্ভীক। বলল,
-“চাচা-চাচি সন্ধ্যার পর ও কে বান্ধবীর বাড়ি পর্যন্ত থাকতে দেন না। আর টাকার জন্য তো আরও আগেই থাকতে দেবেন না। নিরাপত্তার ও একটা ব্যাপার আছে।”

ইশরাক বলল,
-“সমস্যা কোথায়? আমি না হয় পৌঁছে দেবো।”

চেয়ারম্যান সাহেব এতক্ষণ যাবত দুজনের বাক্যালাপ শুনে গেলেন। এবারে মুখ খুললেন,
-“তোরা অযথা ত*র্ক করিসনা। মালিহা পড়তে চাইলে আমি মিতালীকে বলে দেখবো। সে যদি পড়াতে রাজি হয়, তখন না হয় পড়াবে।”

নির্ভীক আর ইশারাক কেউই কথা বলল না আর।
একজন প্রেমিক কখনো অন্যজন প্রেমিকের চোখকে ধুলো দিতে পারেনা। এ কয়েকদিন ইশরাকের আচরণ বেশ লক্ষ করেছে নির্ভীক। সে মনে মনে যে ভ*য়ের আ*শ*ঙ্কা করছে, তা যেন সত্যি না হয়। সে মনে প্রাণে চায় তার ধারণা ভু*ল প্রমাণিত হোক। ইশরাকের মনে যেন মিতালীর জন্য কোন অনুভূতি না জন্মে। তবে সে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
মিতালীর প্রতি এর বেশি ভাবনাচিন্তা দেখালে নির্ভীক সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদে যাবে। খোলাখুলি কথা বলবে ইশরাকের সাথে। যাকে একটু একটু করে মন গোপনে লালন করেছে, যার জন্য সুপ্ত অনুভূতির পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে, তাকে অন্যকারো হতে দেখা যায় না।

দ্রুত খাবার শেষ করে উঠলো নির্ভীক। ঘরে ফিরেই ফোন হাতে নিলো। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নম্বরে। কানে বাজলো কাঙ্ক্ষিত সেই মধুময় সুর।

মিতালী বলল,
-“কিরে এখন ফোন করলি। জরুরি কোন কথা আছে?”

নির্ভীক জবাব দিলোনা। পাল্টা প্রশ্নে গেলো। গভীর আবেগ নিয়ে বলল,
-“তুই কি কখনো কারো মায়ায় জড়িয়ে আমাকে ছেড়ে দিবি?”

মিতালী খুঁজে পেলোনা এমন অযাচিত প্রশ্নের কারণ। বলল,
-“বুঝলাম না তোর কথা।”

-“তোর জীবনে যদি এমন কেউ আসে, যে তোকে সবরকম ভাবে সুখী করতে সক্ষম। ধর তুই তার মাঝে ভীষণভাবে আটকে গেলি, তখন কি আমায় ভুলে যাবি?”

মিতালী কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর কী হয়েছে রে, সোজাভাবে বল।”

নির্ভীকের হুশ ফিরলো। সে কথা কা*টা*তে বলল,
-“কিছু না, এমনিই।”

মিতালীর বিশ্বাস হলোনা কথাটি। তাই বলল,
-“কিছু না হলে কেন এত অস্থিরতা।”

“বুকের ভেতর থমকে গেলে মন,
আমিই আমার অচেনা কেমন!
তখন, আলগোছে যে আয়না মেলে চাই,
দেখি, সেই সেখানে কোথাও আমি নাই।
আমার বন্ধঘরের অন্ধকারে, কোথাও আলো নেই।
আমি আমার খোঁজে নিরুদ্দেশ, তাই মনটা ভালো নেই।
আমার মনটা ভালো নেই।”

সাদাত হোসাইন

নির্ভীকের গলায় আবৃত্তি শুনে মিতালী নরম সুরে বলল,
-“কী করলে তোর মন ভালো হবে?”

নির্ভীকের কঠোর আদেশ,
-“আজ আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলবি।”
#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১২

আবছা কুয়াশায় ঘেরা মেঠোপথ ধরে হাঁটতে গিয়ে একটা ব্যাপার জেনে মনঃক্ষুণ্ন হলো ইশরাক। আজ আর সকালে মিতালীর দেখা পাবেনা। মিতালীর আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। ক্যাম্পাসে যেতে হচ্ছে তাকে। সকাল সকাল তাজা খবর খানা মিললো মাহার কাছে।
সে সকালের টিউশনে যাচ্ছিলো। মাঝপথে ইশরাকের সাথে দেখা। মাহার খুব ভালোলাগে লোকটাকে। তার সাথে খুব ভাব হয়েছে ইদানীং। তবে মাহা চায় নিজের অনুভূতি গুলো চাপা রাখতে। অনুভূতি ব্যক্ত করলে হয়তো তাকে হ্যাংলা অথবা নীচ প্রকৃতির মেয়ে ভাববে।
ইশরাক খবর পেয়ে আর দাঁড়ালোনা। মাহাকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলো বাড়ির পথে। অফিস যাওয়ার জন্য গাড়ি ধরতে হবে। সদর এলাকায় চাকরি নিয়েছে শুধু মিতালীকে চোখে চোখে রাখার জন্য।

★★★

নির্ভীকের আজ ভীষণ ব্যস্ত সময় কা*ট*ছে। মিতালীর আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিলো। সে ক্যাম্পাসে গিয়েছে বিধায় তার ভাগের ক্লাসগুলো ও আজ নির্ভীকের নিতে হচ্ছে।

★★★

ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই প্রিয়াকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখলো মিতালী। ক্লাসে ও কেমন অমনোযোগী ছিলো। তাই ক্লাস শেষ করেই ক্যাম্পাসের পেছনে তাদের আড্ডা দেওয়ার সেই জায়গায় টে*নে নিয়ে গেলো। সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো মিতালী,

-“কী হয়েছে তোর? এমন মনমরা হয়ে আছিস কেন? তোদের কী হয় আমি বুঝিনা। গতকাল নির্ভীকের মন ভালো ছিলোনা, আজ তোর। সমস্যা কী তোদের?”

প্রিয়া চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করেও পারলোনা।
“বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে”
বলতে বলতেই দু’ফোঁটা চোখের জল ঘাসের ওপর ভোরের শিশির বিন্দুর মতো গড়িয়ে পড়লো।

ভীষণ অবাক হলো মিতালী। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে বলল,
-“কিন্তু কেন? তোর পরিবার তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ের দেওয়ার কথা নয়!”

-“ভালো পাত্র পেলে তাদের আর কিছু ভাবার সময় থাকেনা।”

মিতালী বুঝলো এটাই বুঝি নির্ভীকের মন খারাপের গল্প! অথচ সে এতটুকু বোঝার চেষ্টা করলোনা গল্পটি প্রিয়া নয়, বরং সে।

-“নির্ভীক কী বলেছে?”

প্রিয়া বলল,
-“জানাইনি ও কে।”

আশ্চর্য হলো মিতালী।
-“জানাসনি মানে? তুই ভাবতে পারছিস, তোর বিয়ে হয়ে গেলে নির্ভীক কতটা কষ্ট পাবে!”

চমকে উঠলো প্রিয়া। নির্ভীক কেন কষ্ট পাবে? সে তো ভালোবাসার কথা নির্ভীককে জানায়নি।
ভ্রু’দ্বয় আপনাআপনি কুঞ্চিত হলো। অস্ফুটস্বরে আওড়ালো,
-“কী!”

মিতালী মাথা দুলিয়ে বলল,
-“কষ্ট পাবে না? দুজন যদি দুজনকে ভালোবেসেই থাকিস, তাহলে কেন কষ্ট পাবেনা? তাছাড়া তুই একবার বাসায় নির্ভীকের কথা বলে দেখ।”

-“তুই পা*গ*ল হয়েছিস মিতা। নির্ভীক কেন আমায় ভালোবাসতে যাবে? আমার প্রতি কোনোদিন ও কে আগ্রহ দেখাতে দেখেছিস? তাছাড়া আমিও তো নিজের মনের কথা ও কে কখনো জানাইনি। সেদিন কী বলেছিলাম মনে নেই? তোকে ছাড়া কথাটি আমি কাউকে বলিনি, এমনকি নির্ভীককে ও না।”

চরম আশ্চর্য হয়ে হতবিহ্বল চাহনিতে চাইলো মিতালী। কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
-“মানে?”

-“আমার ভালোবাসা একপাক্ষিক। নির্ভীক কিছুই জানেনা। আর এমুহূর্তে তাকে আমি জানাতেও চাইনা। আমি জানি ও আমায় কোনদিন ও চাইবেনা। শুধু শুধু কেন ছেলেটাকে বিব্রত করতে যাবো?”

এতোগুলো দিন কী ভেবে এসেছিল মিতালী। যাইহোক সত্যটা সামনে আসায় তার ভারী বুক শীতল হলো। প্রিয়ার জন্য ভীষণ খা*রা*প লাগা কাজ করলেও কেমন প্রশান্তি লাগছে ভেতরটায়। মিতালী প্রশ্ন করলো,
-“ছেলেটা তোর পছন্দ?”

-“সবার যেখানে পছন্দ, সেখানে আমার পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়?”

-“তারমানে বিয়েটা তুই করছিস?”

-“হুম। শীঘ্রই তারিখ পড়বে।”

মেয়েটার চেহারায় তাকাতে পারলোনা মিতালী। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁ*দে ফেলবে। তাকে কাঁদতে দেওয়া উচিত। অন্তঃকরণের ভালোবাসা পুষে রেখে নিঃশেষ হওয়ার চেয়ে কেঁদে হালকা হওয়া ভালো। তাকে স্পেস দিতে এমন করুণ মুহূর্তে সান্ত্বনা না দিয়ে স্বা*র্থপরের মতো মিতালী বলল,
-“আমার তাড়া আছে, উঠছি এখন।”

মিতালী দৃষ্টি সীমানা অতিক্রম করতেই চেপে রাখা কান্না উগলে দিলো প্রিয়া। মুখচেপে কান্নার শব্দ প্রতিহত করতে চাইলো। দীঘির স্বচ্ছ, টলটলে জলে তাকিয়ে নিজেকে আরেকটু উন্মুক্ত করে দিলো সে।
-“তুই এত স্বা*র্থপর কেন মিতা? আমায় একটু সান্ত্বনা দিলিনা। তোর জন্য আমি নির্ভীককে ছে*ড়ে দিলাম, শুধু তোর জন্য। নির্ভীকের চোখে তোর জন্য উথাল-পাতাল করা মায়া আমি দেখেছি। আমার মনে কখনো তোর জন্য হিং*সে ছিলোনা। তবুও সেদিন তোকে নির্ভীকের কথা জানালাম, যেন তুই দূরে সরে যাস। শুধু একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। নয়তো আমি তোর ক্ষ*তি চাইনি। সত্যিই ক্ষ*তি চাইনি।
এত কিছু করেও আমি নির্ভীকের মন পেলামনা। আমি চাই তুই ভালো থাক। তাইতো বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছি। যাতে অনেক দূরে চলে যেতে পারি। তোদের মাঝখানে থেকে তোর প্রতি কখনো হিং*সা মনে পুষতে না পারি।”

অনেকটা শব্দ করেই কাঁদলো প্রিয়া। এদিকটায় তেমন কারো আনাগোনা নেই বিধায় সমস্যা হলোনা। যে ভালোবাসা হা*রা*য়, সে শুধু ভালোবাসাই হা*রা*য়না। হা*রা*য় আমি সত্তাকে, নৈঃশব্দে চু*রমা*র হয়ে যায় যতনে গড়া হৃদয়।

★★★

সময় দু’টোর কাঁটায়। স্কুলে পিরিয়ড টাইম। ফোন হাতে ম্যাসেন্জারে টেক্সট পাঠালো মিতালী।

সকাল থেকে ধ*ক*ল যাওয়ায় ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে চেয়ারে বসে ঝিমিয়ে রইলো নির্ভীক। শরীরে শক্তি কুলচ্ছে না বলে খেতে গেলোনা সে। দৈবাৎ মেসেন্জারের টুংটাং শব্দ হলো। ঝিমিয়ে থাকা চোখজোড়া সজাগ হয়ে উঠলো। স্ক্রিন অন করেই দেখতে পেলো মিতালীর কাছ থেকে বার্তা এসেছে।
প্রবল আগ্রহ নিয়ে বার্তাটি ওপেন করলো সে।

-“খেয়েছিস?”

নির্ভীকের অধরকোন প্রসারিত হলো। দ্রুত হাতে টাইপ করলো,
-“একা একা ইচ্ছে করছেনা।”

মিনিট না যেতেই ফিরতি বার্তা,
“স্কুল থেকে বের হ। আমি কাছাকাছি আছি।”

এতক্ষণের ঝিমিয়ে থাকা শরীর যেন মুহুর্তেই চাঙ্গা হয়ে উঠলো। শরীর ঝাড়া মে*রে স্কুলের গেইট পেরিয়ে সামনের দিকে এগোলো। বেশিদূর যেতে হলোনা। তার পূর্বেই মিতালীর দেখা পেলো। মেয়েটা মিষ্টি হেসে এগিয়ে আসছে। তা দেখে নির্ভীকের হৃদয় কোন ‘ছলাৎছলাৎ ‘ শব্দে ধুকপুক করে উঠলো। ভালোবাসায় যাদু আছে। নয়তো সাধারণ বিষয়কেও কেমন অসাধারণ লাগে, সারাক্ষণ মনকাননে ভালোলাগার পাখিগুলো কিচিরমিচির করে।

একসাথে খাবার শেষ করে মিতালী বাকি ক্লাসগুলো নিতে নির্ভীকের সাথেই স্কুলে ফিরলো।
স্কুল শেষে ফেরার পথেই চেয়ারম্যান চাচার সাথে দেখা হলো। সালাম জানালো মিতালী। তিনিও হাস্যজ্জ্বল মুখে জবাব দিলেন।

স্নেহভাজন কন্ঠে বললেন,
-“তোমার সাথে কিছু কথা বলবো।”

মিতালী নম্র স্বরে বলল,
-“জি চাচা বলুন।”

-“মালিহা আজকাল তোমার মিনা ভাবির কাছে পড়তে চায়না। ভেবেছি ওর জন্য ঘরোয়া শিক্ষক রাখবো। আমরা তোমার কথাই ভাবলাম। তোমার যদি সময় হয়, তাহলে মালিহাকে একটু সময় দিও।”

মিতালী ইতস্তত করে বলল,
-“আসলে আমার তো দিনের বেলায় সময় নেই চাচা।”

নির্ভীক যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এখন যদি মিতালী হ্যাঁ করে দিতো, তবে তার কানের নিচে দু*টো দেওয়ার ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতোনা সে।
চেয়ারম্যান চাচা বললেন,
-“তুমি না হয় সন্ধ্যার পর পড়িয়ে দিও। বাড়ির কারো কাছেই সে পড়বেনা। আর বাইরের কাউকে ভরসাটা ঠিক করতে পারছিনা। তুমি সময় দিলে উপকৃত হতাম। পড়ানোর পর তোমায় ইশারাক বা নির্ভীক নাহয় বাড়ি পৌঁছে দেবে।”

এতটা অনুরোধ ফেলতে পারলোনা মিতালী। হ্যাঁ করে দিলো সে। চেয়ারম্যান সাহেব কথা পাকা করে নিজ গন্তব্যে পা চালালেন। রা*গ হলো নির্ভীকের। নাকের পাটা ফুলে উঠলো তার। মিতালীর সাথে কথা না বলেই আগে আগে হাঁটলো। পেছনে পড়ে যাওয়ায় একপ্রকার দৌঁড়ে নির্ভীকের পাশ ধরলো মিতালী। হাঁফিয়ে যাওয়া গলায় বলল,
-“তুই আমায় ফেলে এমন ঘোড়ার মতো ছুটছিস কেন?”

নির্ভীক তে*ড়ে তার দিকে এগোতে গিয়েও দমে গেল। দাঁতে দাঁত চেঁ*পে বলল,
-“সারাদিন গাধারখাটুনি খে*টে ও রাতে আমাদের বাড়িতে কেন তোকে যেতে হবে? না করে দিতে পারলিনা?”

মিতালী আমতা আমতা করে বলল,
-“চাচা এত করে বলল। উনার দ্বারা আমি অনেকবার উপকৃত হয়েছি। এতটাও অকৃতজ্ঞ আমি নই। তাছাড়া দু’টো পয়সা বেশি পেলে আমারই লাভ।”

ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো নির্ভীক। মেয়েটার সাথে কথা বলে খুব একটা লাভ নেই মনে করে আর কথা বাড়ালোনা নির্ভীক। তবে তার আরও একটা দায়িত্ব আজ থেকে যোগ হলো। চেষ্টা করতে হবে যাতে মিতালীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ইশরাকের নয়, তার হয়।

★★★

গোছানো পড়ার টেবিল। হাতের কাছে কয়েকটা বই-খাতা নিয়ে গোলগাল চেহারা আর মরম রূপে বসে আছে মালিহা। মিতালীকে দেখেই মিষ্টি হাসলো।
মিতালীও হাসলো। প্রথম ধাপেই পড়ায় গেলোনা। মালিহার সাথে ছোট বাচ্চা হলো। গল্প ছন্দে কিছুটা সময় কা*টা*লো। প্রথমেই বাচ্চাদের পড়াতে গেলে এরা পড়াতে মনযোগ দিতে চায়না। অনীহা প্রকাশ করে। মে*রে*ধ*রে কিছু শেখানো যায়না। বরং আরো বেঁকে বসে। একটু গল্প করার বা পড়ার শেষে খেলার লো*ভ দেখালে এরা দ্রুত পড়াটা শেষ করতে চায়। মনযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করে।

পড়ানোর একপর্যায়ে মিতালীর ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় জানান দিলো তাকে কেউ গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করছে। লোকটি যাতে দৃষ্টি এদিকসেদিক করে পার পেয়ে যেতে না পারে সেজন্য নড়াচড়া করলোনা সে। হুট করেই চোখ তুলে তাকালো লোকটির দিকে।
আচমকা মিতালী এভাবে তাকিয়ে যাবে বুঝতে পারেনি ইশরাক। দ্রুত দৃষ্টি স্বাভাবিক করে হাসলো সে। এগিয়ে এসে মালিহার কাঁধে হাত রাখলো।
-“বলোতো আম্মু কেমন লাগছে মিসকে? পড়তে ভালোলাগছে?”

মিতালী দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অস্বস্তি হলো তার। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কেউ না পড়ুক। ইদানীং ইশরাক ভাই তার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যেটা মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না মিতালীর। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। আচ্ছা সে কি সরাসরি প্রশ্ন করবে? যে আপনি আমায় কিছু বলতে চান? কিন্তু তাকে কী -বা বলার থাকতে পারে?

সময় দেখে ইশারাক বলল,
-“চল তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”

মিতালী সায় জানালো। আশেপাশে নির্ভীক নেই। তারমানে ইশরাকের সাথেই পৌঁছাতে হবে।

★★★

বাজারের কাজ সেরে দ্রুত বাড়ি ফিরলো নির্ভীক। মিতালীকে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তা আর হলো কই? মায়ের মুখে শুনলো একটু আগেই নাকি ইশরাক মিতালীকে পৌঁছে দিতে গেলো।
গোপনে ধপ করে উঠলো নির্ভীক। বাড়ি ছেড়ে ত্রস্তব্যস্ত পায়ে বের হলো।

#চলবে……….
#চলবে……..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here