নিরু পর্ব ৫

#নিরু❤
পর্ব-০৫
writer- #shanta_islam

আবির ভাই হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করলো,,,নিরু তুই কাল সিড়িতে আমাকে কি যেনো বলতে চাইছিলি। ইয়া আল্লাহ আবির ভাই হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করবে ভাবতে পারিনি। সেদিন যে আবির ভাই আমাকে কিস করেছে নাকি তার রূপধারী ভূত নাকি ওটা আমার হ্যালোসিয়েশন ছিলো তাওতো ঠিক করে বলতে পারছি না। ওটা তো আবির ভাই নাও হতে পারে। আমি নিজেই তো কনফিউজড উনাকে কি বলবো। আমতা আমতা করে বললাম,,
-কই কিছু না তো?
আবির ভাই- কিছু খেয়েছিস?
খেলাম কই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই কাজ ধরিয়ে দিলো। এখন মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে ইদুর ফুলবল খেলছে।
-কিরে কিছু বলছিস না কেনো?সকালে খেয়েছিস?
-না খাইনি!
আবির ভাই একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক থামালো।
নিরু- এখানে বাইক থামালেন কেনো?
আবির ভাই- আমার চল্লিশা খাওয়ার জন্য।
নিরু- আপনার চল্লিশা? আপনি মরলেন কবে?
আবির ভাই- এতো প্রশ্ন করিস কেন? চুপচাপ আমার সাথে আয়।
আবির ভাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাবার ওর্ডার করলো। সুধু সুধু ছেলেটার নামে আবল তাবল ভাবছিলাম। আবির ভাইয়ের মতো এতো ভালো একটা ছেলে আমার সাথে ওমন ভয়ংকর কাজ করতেই পারে না। নির্ঘাত ওটা আমার হ্যালোসিয়েশন ছিলো নাহলে সত্যি সত্যি আমার ঘারে ভুত চেপেছে। খাবার দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না এমনিতেই অনেক ক্ষিধে পেয়েছে। তাই আর না করলাম না। খাওয়া শেষে আবারো বাইকে উঠলাম,,,বাইক থামলো ফুলের দোকানের সামনে। চাচির কথা মতো সবগুলো ফুল নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে দেখি কাজিন আর আত্নীয়সজন সবাই এসে হাজির। লেগে গেলাম হলুদের কাজে। অনুষ্ঠান আরাম্ব হলো দুপুরের দিকে। স্টেজ ছাদের উপরে করা হয়েছে অনুষ্ঠান সেখানেই হবে। মহল্লার অনেকেই ইনভাইটেড ছিলো। প্রতিবেশিরা সবাই এসেছে। কাজ করতে করতে আমাদের অবস্থা প্রায় যায় যায়। আশা মহারানী মেকাপ মেরে দিপা আপুর সাথে স্টেটে বসে বসে সেলফি তুলছে। বাসার সবাই প্রায় রেডি হয়ে গেছে বাকি আছি শুধু আমি আর ভাবি। চাচি এসে আমাদের এই অবস্থা দেখে বকা দিয়ে আমাকে আর ভাবিকে রেডি হতে বলে গেলেন। হলুদের দিন সবাই হলুদ শাড়ি পরবে। তাই আমিও একটা হলুদ শাড়ি পড়লাম মেকাপ আমার ভালো লাগে না তাই চোখের কোনায় হালকা একটু কাজল আর একটু লাল লিপস্টিক টেনে বের হয়ে গেলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেও আমার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরলো। পিছু তাকিয়ে দেখি আবির ভাই। হলুদ কালার পাঞ্জাবি, হাতে ঘড়ি,,আর মাথায় সেই এলোচুল। সব মিলিয়ে পুরো পাগল করে দেওয়ার মতো একটা লুক। আজ যে এক যাক পাখি উনার আশেপাশে ঘুরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহই জানে ইনি আবির ভাই নাকি উনার ভুত তাই মনে মনে দোয়া ইউনুস পরছি উনি যদি আবির ভাইয়ের ভুত হন তাহলে এখনি পালিয়ে যাবে আর যদি সত্যি সত্যি আবির ভাই হন তাহলে এখানেই থাকবে। আবির ভাই আমার সামনে এসে বাম হাতে অনেকগুলো মেচিং করা কাচের চুরি আর মাথায় একগাদা বেলিফুল গুজে দিলো। আমি সুধু অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
আবির- হুম এখন পারফেক্ট লাগছে। এবার যা।
কথাটা বলেই আবির ভাই চলে গেলো। আমি আবির ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি উনি কেনো আমার জন্য মেচিং চুরি আর ফুল আনলো। কিভাবে জানলো আজ আমি শাড়িই পরবো। উনি এগুলো শুধু আমার জন্যই কেনো আনলো। কথাগুলো আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলছে। উনি যে ভুত না এটা আমি কনফার্ম।
ভাবির ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। এই নিরু এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? জলদি চলো আশা স্টেজে নাচ দিবে। ভাবির কথা শুনে রীতিমতো আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আশা নাচ দিলে তো পুরো স্টেজই ভেঙে যাবে। ইয়া আল্লাহ এতো কস্ট করে স্টেজটা সাজালাম ওই হাতির বাচ্চার তাতা থাইয়া শুরু হলে স্টেজটা মনে হয় জেন্ত থাকবে না। দৌড়ে ছাদে যেয়ে দেখি আশা আর ওর ফ্রেন্ডরা নাচছে। বড়লোকের বেটিলো লম্বা লম্বা চুল গানটার মধ্যে নাচ দিয়েছে। আশার চুল ছোট ছোট যখনি লম্বা লম্বা চুল লাইনটা আসছে তখনি আশার একটা ফ্রেন্ড ওর ছোট ছোট চুলগুলো টান মেরে ধরছে। কিছুক্ষণ এভাবে যাওয়ার পর আশা ওর ফ্রেন্ডটাকে লাথি মেরে স্টেজ থেকে ফেলে দিলো।
আশা- ভালো করে নাচতে পারিস না! খালি আমার চুল ধরে টান মারিস কেনো?
– তুইতো বলেছিলি বড়লোকের বেটিলো লম্বা লম্বা চুল লাইনটা আসলে চুল ধরে টান মারতে।
আশা- সেটা তো নিজের চুল ধরে টানতে বলেছি। আমার চুল ধরে না। আমি আর ভাবি দৌড়ে যেয়ে ওদের স্টেজ থেকে নামিয়ে জগ্রা থামালাম। এখন পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে আছে। কে জানে আবার কখন বিগড়ে যায়। তাই আমি আর ভাবি মিলে খাবার থেকে শুরু করে সব দিকে তদারকি করছি।
মনে মনে যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো আবির ভাইয়ের আশেপাশে একজাক পাখি ঘুরঘুর করছে। অবশ্য আবির ভাই তাদের বেশি পাত্তা দিচ্ছে না। আবির ভাইকে আমি কখনো ওই দৃষ্টিতে দেখিনি তাই হয়তো উনার জন্য কখনো মনে তেমন একটা ফিলিংস তৈরি হয়নি।
পলাশ ভাই আমাকে দেখে ডাক দিয়ে বললো,,
-বাহ নিরু তোমাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে। কথাটা শুনে আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে নিলাম। আবির ভাই আছে নাকি। দূর আমি আবার ভয় পেতে যাবো কেনো সেদিন হয়তো ওটা আমার হ্যালোসিয়েশন ছিলো। তাই আমি আর ইতোস্থ বোধ না করে হালকা মুচকি হেসে ধন্যবাদ বললাম। পলাশ ভাই আমাকে পড়াশুনার আর টুকিটাকি কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। আমিও তার প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলাম। এর মধ্যে ভাবি এসে বললো দিপা আপুর রুমে একটা ছোট কলস রাখা আছে সেটা নিয়ে আসতে হবে। আমি কলসটা নিয়ে আসার জন্য রুমে ডুকলাম। বাসায় কেও নেই সবাই ছাদে অনুষ্ঠানে আছে। পুরো বাসা ফাকা। আমি দিপা আপুর রুমে কলস খুজচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দ পেলাম। পিছু তাকিয়ে দেখি আবির ভাই।
– আপনি এখানে আপনার কিছু লাগবে।
কথাটা বলতেই আবির ভাই আমাকে হেচকা টান মেরে দেওয়ালের সাথে জাপটে ধরে। রাগে ফসফস করতে করতে বলতে লাগলো।
– সেদিন বলেছিলাম পলাশের থেকে দূরে থাকতে। খুব ভালো লাগে ওই পলাশের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে তাই না। আবির ভাই এতো কাছে এসে কথাগুলো বলছিলো তার ঠোঁট আর আমার ঠোঁটের মধ্যে মাত্র এক ইঞ্চি ফারাক ছিলো মনে হয়। আমাকে এতো শক্ত করে জাপটে ধরেছে যে কিছুতে ছুটতে পারছি না।
নিরু- আমি কোথায় কথা বললাম উনিই তো,,,
আবির ভাই আমার কোমড়ে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,,
-চুপ একদম চুপ। বঢ বার বেরেছিস তুই। এতোবার মানা করার পরও তুই পলাশের সাথে কথা বলেছিস। নেক্সট টাইম আবার যদি ওই পলাশের সাথে দেখেছি তো আমার থেকে খারাপ কেও হবে না। দাত কিরমির করতে করতে কথাগুলো বললো আবির ভাই। উনার হাতের স্পর্শে আমি বার বার কেপে উঠছি। এ কোন পরিস্থিতিতে পরলাম আমি। বুঝতে পারছি না উনি আসলে চায়টা কি। কথাগুলো বলে দেয়ালে সজড়ে একটা ঘুসি মেরে রুম থেকে বের গেলো। আমি সেখানেই নিথর পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলাম। আবির ভাইকে আমি মোটেও বুঝতে পারছি না। উনি শুধু আমার সাথেই এমনটা করছেন কেনো? আমি উনার কি করেছি। আমার সাথে এমনটা করার কারনটা কি?
আশা- নিরু আপা,,নিরু আপা,,
আশার ডাক শুনে আমার হুস ফিরলো।
আশা- তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো উপরে চল। আশা আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো। আবির ভাইকে এখানে আর দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো চলে গেছে। অনুষ্ঠানে পলাশ আমার সাথে অনেকবার কথা বলতে চেস্টা করেছিলো কিন্তু আমি উনাকে ইগনোর করে চলে আসি। রাতে অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আব্বা আর কাকা তাদের পুরানো দিনের কাহিনিগুলো কাজিনদের শুনাচ্ছে।
আব্বা- আরে তোরা কি জানিস। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করার সময় গুলি শেষ হয়ে গেছিলো। তখন আমার সামনের দাতগুলো ভেঙে পিস্তল লোড করে গুলি চালিয়েছিলাম। তখনি তো দেশটা স্বাধীন হয়।
কি আর বলবো আমার বাবার কথা আগেই বলেছিলাম উনি হলেন আমাদের চিরিয়াখানার অন্যতম প্রানীদের মধ্যে একজন। উনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো উনি চাপামারতে উস্তাদ। আমার বাপ হলো একজন পেশাদার চাপাখোর আর আমার চাচা হলো প্রোফেশনাল ফাপরবাজ। উনারা দুজন এক হলে ঘরে একটা হৈ হুল্লোড় কান্ড লাগবেই লাগবে। আমার কাজিনরা তাদের ভান্ডামির কথা শুনছে। আর আমি এক কোনায় বসে আবির ভাইয়ের কথা ভাবছি। বার বার আমার মাথায় শুধু উনি ঘুরপাক খাচ্ছে। উফ কিছুতেই আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।
আশা দাদিকে জিজ্ঞেস করলো,,
আশা- দাদি আব্বা কি সত্যি ১৯৭১ সালে দাত ভেঙে যুদ্ধ করেছিলো।
দাদি- তখন তোর বাপ ভালো করে লুংগিই পড়তে পারতো না সে করবে যুদ্ধ।
দাদির কথা শুনে সব কাজিনরা খেপে ফায়ার। মিথ্যা বলার অপরাধে বাবা আর চাচার সাজা হলো তারা এখনি কাজিনদের ট্রিট দিবে। বাড়ির সবাই ট্রিট পাওয়ার জন্য বাইরে চলে গেলো। অবশ্য সবাই আমাকে অনেক টানাটানি করছে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি যাইনি। কিছুই ভালো লাগছে না। রুমে যেয়ে দরজা আটকিয়ে সুয়ে রইলাম। আর আবির ভাইয়ের কথা ভাবছি। হঠাৎ বারান্দা দিয়ে কিছু একটা পরার আওয়াজ পেলাম,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here