নিশির অন্তিম প্রহরে পর্ব -১৯+২০

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রায় সপ্তাহখানিক পর হিতোমি আবারো ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। পড়ে যাওয়ার কারণে বেচারি পায়ে ভালোই ব্য’থা পেয়েছিলো। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি তবে মন তার আর বাড়িতে ঠিকছেনা। আস্তে আস্তে হেঁটে নিজের ফ্লোরে এলো হিতোমি। ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাবে তখন কারো মিষ্টি কন্ঠস্বরে সে থেমে গেলো। মূহুর্তেই নাকে এসে বারি খেলে একটা মিষ্টি সুভাস, ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার। তাকে ক’ষ্ট করে পেছনে ঘুরতে হলোনা, ব্যক্তিটিই তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

” কেমন আছো তুমি? এতোদিন এলে না যে? পায়ে বুঝি বেশি ব্য’থা পেয়েছিলে?”

এতোদিন পর ফিলিক্সকে দেখতে পেয়ে হিতোমির বেশ ভালো লাগছে।

” আমি ভালো আছি এখন। তুমি বুঝি আমার খোঁজ নিয়েছিলে?”

” না, এনাক্ষীর থেকে জানতে পারলাম তুমি বেশকিছু দিন ধরে আসছোনা। আজকে দেখলাম তাই তোমার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করতে এলাম।”

” ও আচ্ছা।” মূহুর্তেই হিতোমির মন খা’রা’প হয়ে গেলো। ফিলিক্স তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে হিতোমির দিকে বাড়িয়ে দিলো।

” এই নাও চকলেট। এনাক্ষীর থেকে জানলাম তুমি নাকি চকলেট পছন্দ কারো। সেইদিন কোন না কোনভাবে আমিও দায়ী ছিলাম যার কারণে তুমি এতোটা ব্য’থা পেয়েছিলে। তার জন্য দুঃখিত। এগুলো নিলে আমার মনের ভিতরে থাকা অপরা’ধবো’ধটা কমবে। এবার তাড়াতাড়ি নাও, না হলে আমি ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছি।”

” এই না।” হিতোমি খপ করে ফিলিক্সের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বুকে চেপে ধরলো। ভাবখানা এমন এই বুঝি তার প্রাণভোমরাটা কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফিলিক্স হেসে হিতোমির চুলগুলো হালকা এলোমেলো করে দিলো।

” বেশি চকলেট খেওনা, দাঁতে পোকা হবে। তখন কেউ চোই হিতোমি বলবেনা, বলবে দাঁত পোকা হিতোমি।”

ফিলিক্স চলে গেলো তবে তার কোন কথাই হিতোমি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে শুনলোনা৷ ফিলিক্স চুলের যেখানে হাত দিয়েছে সেখানে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো সে। চকলেটের প্যাকেটটা বুকের সাথে মিশিয়ে হেলতে দুলতে ক্লাসে চলে গেলো সে।

” কি ব্যপার হিতোমি এতো হাসছো কেন? আর তোমার হাতে ওটা কি?”

” চকলেট।”

” দেখি কি চকলেট।” ইয়েজি হাত বাড়িয়ে নেবে তার আগেই হিতোমি সরে গেলো।

” সরি ইয়েজি তোমাকে এগুলো দেওয়া যাবেনা। এগুলো শুধু আমার। আমি তোমাকে অন্য আরেকটা কিনে দেবো।”

” কেন? এগুলো দেওয়া যাবেনা কেন? চকলেটগুলো এভাবে নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছো কেন? এগুলো তোমাকে কেউ দিয়েছে নাকি?” সন্দেহজনক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো ইয়েজি।

” হুম ক্লাসে আসার সময় ফিলিক্স দিয়েছে।”

” ও আচ্ছা তাই তো বলি হিতোমিরাণী এতো হাসছে কেন। সে নিজে থেকে দিয়েছে নাকি?”

” হ্যাঁ। ওদিনের ঘটনার জন্য সে নিজেও দো’ষী মনে করছে। তাই চকলেটগুলো দিয়েছে।”

” ও তাই বলো। আমি তো ভেবেছিলাম সে এন তোমাকে চকলেট দিয়ে প্র…পো..জ করেছে।”

ইয়েজির কথা শুনে হিতোমি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। ইয়েজির হাতে হালকা চাপড় মারলো সে।

” এই চুপ করো ডো বিন আর জি ওয়ান আসছে।”

ডো বিন এবং জি ওয়ানকে দেখে তারা দু’জন চুপ হয়ে গেলো। হিতোমি তাড়াতাড়ি চকলেট গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। না হলে একটাও তার ভাগ্যে জুটবেনা।
.
.

সিভি স্টোরে যাওয়া জন্য ঘর থেকে বের হবে তখন কায়ানের দরজার দিকে এনাক্ষী চোখ আটকে গেলো। সুজি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এই সময় তো কায়ান বাসায় থাকেনা তাহলে সুজি কেন এসেছে তাই ভাবছে এনাক্ষী। এরই মাঝে হালকা একটা যান্ত্রিক শব্দ শোনা গেলো এবং কায়ানের দরজা খুলে গেলো। এনাক্ষী এবার বড়ই অবাক হলো কারণ সুজি ডোর পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলেছে। সুজি ভেতরে ঢুকে যাবে তার আগেই এনাক্ষী তড়িঘড়ি করে তাকে ডাকলো।

” সুজি অন্নি।”

সুজি পেছন ফিরে তাকালো। এনাক্ষী দেখলে তার কোলে টমি ঘুমিয়ে আছে।

” কিছু বলবে?”

” বাসায় কি কায়ান আছে? না মানে আপনি এলেন।”

” না সে তো অফিসে। আমি টমিকে ফিরিয়ে দিতে এসেছিলাম।”

” ও আচ্ছা। পাসওয়ার্ড কি আপনি জানেন?”

” হুম প্রথম থেকেই জানি। না জানলে দরজা খুললাম কি করে। তুমি বুঝি কোথাও যাচ্ছো?”

” হুম সিভি স্টোরে। আমি যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাই।”

সুজি মাথা নাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এনাক্ষী বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো।
.
.

দেখতে দেখতে বেশকিছু অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। হিতোমির সাথে এনাক্ষীর সম্পর্কটা আগের থেকে বেশ অনেকটাই গভীর হয়েছে। অনেকদিন ধরে সে এনাক্ষীকে তার বাসায় আসার জন্য বলছিলো তবে সে বাহানা দিয়ে বারবার এড়িয়ে যেতো। তবে আজ আর তা হলোনা। হিতোমি ইউনিভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর এনাক্ষীকে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।

তারা দু’জন দাঁড়িয়ে আছে হিতোমিদের ফ্ল্যাটের সামনে, হিতোমি বেল চাপলো। দরজা খোলার আগ মূহুর্তটা তারা ভাবছিলো কি কি করবে। দরজা খোলার শব্দে তারা দৃষ্টি পরিবর্তন করে সামনে তাকালো তবে দু’জন যে এমন কিছু দেখবে সেটা একদমই আশা করেনি, এনাক্ষী তো মোটেও না। হিতোমি জোরপূর্বক হেসে বললো,

” এনা এটা আমার বিগ ব্রাদার।”

হিতোমি নিজের কথা পুরোটা শেষ করবে তার আগেই ছেলেটি উল্টো দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। এনাক্ষী বেচারি পড়ে গেলো অস্বস্তিতে। বুক ধুরধুর করছে তার, কেন যেন গলা শুকিয়ে আসছে। সে যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে শুকনো ঢোক গিলে বললো,

” হিতোমি আমি বরং আজকে আসি। অন্য একদিন না হয় আবার আসবো।”

এনাক্ষী চলে যাবে কিন্তু হিতোমি খপ করে তার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিচে গেলো। সোফায় বসিয়ে তাকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।

” এটা খাও আর একটা বড় নিঃশ্বাস নাও। আমি দেখে আসি উনি কোথাই।”

হিতোমি ভেতরে চলে গেলো। এনাক্ষী পানি খেতে খেতে চিন্তা করতে লাগলো কিছু মূহুর্ত আগের ঘটনা। দরজার খোলার শব্দে তারা দৃষ্টি পরিবর্তন করতেই দেখতে পেলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে যার পড়নে একটা সাদা রঙের টাওয়াল ছাড়া কিছুই ছিলো। চুলগুলো আধভেজা, গায়ে তখনো বিন্দু বিন্দুর পানির কণা লেগে ছিলো। দরজা খোলার পর যে এধরণের কিছুর সাক্ষাৎ সে পাবে এটা এনাক্ষী কখনো আশাও করেনি৷ দু’পাশে জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়িয়ে এনাক্ষী দৃশ্যটি ভোলার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো।

” এনাক্ষী।”

মুখে পানি নিয়েই পাশে তাকিয়েছিলো এনাক্ষী তবে হিতোমির পাশে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে সে বিষম খেয়ে গেলো।

” কি হলো? আস্তে আস্তে। কুল এটা আমি।”

হিতোমি ধীরে ধীরে এনাক্ষীর পিঠে চাপড় দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর এনাক্ষী স্বাভাবিক হলো।

” ঠিক আছো তুমি?”

এনাক্ষী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।

” আসতে পানি খাবে না। এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই।”

” আসলে আচমকা তোমার ডাকে ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

এনাক্ষী আড়চোখে হিতোমির ভাইয়ের দিকে তাকালো যেটা হিতোমি খেয়াল করলো।

” দেখেছো তোমার জন্য মেয়েটা কতটা ভ’য় পেয়েছে?”

” ভয় পাবে কেন? আমি কি দেখতে অসুন্দর নাকি যে ভয় পাবে? কি মিস তুমি সত্যিই আমাকে দেখে ভ’য় পেয়েছিলে?”

এনাক্ষী মাথা নাড়িয়ে না বললেও মনে মনে বললো অন্য কথা।

” এভাবে দেখার পরেও যে আমি এখনো শ্বাস নিচ্ছি তাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বেয়াদব হার্টটা এতো জোড়ে বিট করছে কেন? শান্তি শান্তি কিছু হয়নি। এনা তুই কিছুই দেখিসনি। যা দেখেছিস তা সবই ভ্রম, একটা বাজে ভ্রম।” এনাক্ষী চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। কিছুসময় পর চোখ খুলে ভাই-বোন দু’জনের দিকে সরাসরি তাকালো।

চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” ওপ্পা তোমার কি কোনদিনও বুদ্ধি হবেনা? তুমি বাসায় ছিলে তাই আমি বেল বাজিয়েছিলাম যেন তুমি বুঝতে পারো কেউ বাসায় এসেছে কিন্তু তুমি তো তুমি। সাওয়ার নেওয়ার পর আধাঘন্টা ঢং না করলে তোমার হয়না। দেখতো মেয়েটা কত লজ্জা পেয়েছে।”

” বাদ দাও হিতোমি। ইনস্পেক্টর হান হয়তো বুঝতে পারেননি যে এই সময় তোমার সাথে কেউ আসতে পারে।” মিনমিন করে বললো এনাক্ষী।

” হান ওপ্পা শুধু বয়সেই বড়। মাথায় কোন বু’দ্ধি তার এখনো হয়নি।”

” হিতোমি তুমি কিন্তু আমাকে ইনস্টাল করছো। ভুলে যেওনা আমি কে।”

হিতোমি মোটেও হানের কথায় পাত্তা দিলোনা উল্টো জিহ্বা বের করে ভেংচি কাটলো।

” আচ্ছা এনা তুমি ওপ্পাকে আগে থেকেই চেনো মনে হচ্ছে? আমি কি ঠিক বলছি?”

” হ্যাঁ৷ বেশ কিছুদিন হবে৷ তবে তুমি যে ইনস্পেক্টর হানের সিস্টার আমি বুঝতে পারিনি।”

” কেন আগে জানলে বুঝি সিস্টারের সাথে বন্ধুত্ব করতেনা?” সোফা বসে হান বললো।

” না না সেরকম কিছু না।”

” করতো না মানে? আমিও কে ছেড়ে দিতাম নাকি। ব্ল্যা’কমেই’ল করে বন্ধুত্ব করাতাম।”

” আচ্ছা হিতোমি তাহলে আমি বরং এখন আসি।”

” কি আসি? এখনো পানি ছাড়া কিছুই খেলেনা। আগে খাবে তারপর বাকিসব। জানো ওপ্পা খুবই মজার মজার খাবার রান্না করতে জানে। একবার খেলে তুমি বারবার খেতে চাইবে।”

” তাই নাকি? ইনস্পেক্টর হান আপনি রান্নাও জানেন?”

” হুম৷ আমার মতো রান্না মনে হয় রেস্তোরাঁর শেপও পারেনা। আমি যদি একটা রেস্তোরাঁ খুলতাম তাহলে সেখানে লম্বা লাইন লেগে যেতো। রান্নার শো-তে তারা বিচারক হিসেবে আমাকেই ডাকতো।” গৌরবের সাথে বললো হান।

” নিজের অনেক গুণগান হয়েছে। দেখি হান ওপ্পা যাও আমাদের জন্য মজার মজার খাবার রান্না করে নিয়ে এসো তো।”

” কি! আমি এখন রান্না করবো? মাত্রই সাওয়ার নিয়ে স্কিনের যত্ন নিয়ে এলাম আর তুমি বলছো কিনা রান্না করতে। না, মোটেও না। আমি বরং খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি।”

” থাক না হিতোমি। এতো ঝা’মেলা করতে হবেনা। আমি বরং চলে যাই।”

” চুপ একদম। খালি পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা। ওপ্পা তুমি এখুনি রান্না করতে যাও নাহলে…..”

” না হলে কি? যাবো না আমি। তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার বিগ ব্রাদার। তুমি তোমার বিগ ব্রাদারকে অর্ডার দিতে পারোনা।” হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে ভাব নিয়ে বললো হান।

” তুমি যাবে নাকি আমি তোমার সুন্দর সুন্দরগুলো ছবি ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট করে দেবো?” দু’ষ্ট হেসে বললো হিতোমি। হান তার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

” না তুমি এটা করতে পারোনা।”

” অবশ্যই পারি৷ রান্না করো না হলে ছবিগুলো সত্যিই পোস্ট করে দেবো। ছবিগুলো তোমার ফলোয়ার লিস্টে থাকা মেয়েরা দেখলে কি হবে বুঝতে পারছো তো।”

” হিতোমি আমি কিন্তু তোমাকে দেখে নেবো। পা’জি মেয়ে বড় ভাইকে ব্ল্যা’কমে’ইল করছো। আমারো সময় আসবে, তখন দেখো।” হিতোমিকে ব’কতে ব’কতে হান রান্নাঘরে চলে গেলো। হানের অবস্থা দেখে হিতোমি হাসতে হাসতে এনাক্ষীর পাশে বসে পড়লো।

” তুমি ওখানে বুঝি সবসময় ব্ল্যা’কমে’ইল করো?”

” মাঝে মাঝে করে থাকি। বেচারা পারেনা সইতে পারেনা কইতে।”

” ওনাকে কেন শুধু শুধু রান্না করতে পাঠালে? উনি মনে হয় রা’গ করেছেন।”

” আরে না সেইরকম কিছুই না। ওপ্পা মিছিমিছি রা’গ করেছে। সে এমনিতেই রান্না করতো। আমার সাথে ঝগড়া না করলে তার দিন সম্পূর্ণ হয়না। তাই এগুলো করেছিলো। চলো তোমাকে বাসাটা ঘুরিয়ে দেখাই। তার আগে চলো দেখি হান ওপ্পা কি করছে।”

তারা দু’জন রান্নাঘরে উঁকি দিলো। হান তখন মন দিয়ে রান্না করতে ব্যস্ত।

” ওপ্পা তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করো। আমাদের অনেক খিদে পেয়েছে।”

হান চামচ উঁচু করে ছুঁড়ে মারার ভান করলো। হিতোমি আবারো তাকে জিহ্বা দেখিয়ে এনাক্ষীকে নিয়ে সরে গেলো।

” এনাক্ষী তুমি আমার রুমটা ঘুরে দেখো। আমি কাপড়গুলো পরিবর্তন করে আসছি।”

হিতোমি জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এনাক্ষী আশেপাশে দেখতে লাগলো। হিতোমির রুমে কোন বারান্দা নেই তবে মাঝারি সাইজের একটা জানালা আছে। যা দিয়ে রাস্তার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। হিতোমির পড়ার টেবিল থাকা খাতাগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলো সে। আচমকা কিছু একটা দেখে সে থমকে গেলো। পরমুহূর্তে হেসে খাতাটা যেখানে ছিলো সেখানে রেখে দিলো এবং স্বাভাবিকভাবে আগের জায়গায় বসে পড়লো। হিতোমি এলে তার সাথে সে একদম স্বাভাবিক ব্যবহার করলো।

চার-পাঁচ রকম পদের রান্না টেবিলে পরিবেশন করেছে হান। এনাক্ষীর পাশে হিতোমি এবং তাদের সামনের চেয়ারে হান বসেছে৷ হিতোমি পারছেনা সব খাবার এনাক্ষীকে খাইয়ে দিতে। তবে হানের এসবে খেয়াল নেই। সে একহাতে খাচ্ছে অন্যহাতে ফোন দেখছে। হিতোমি হানের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিলো।

” তোমার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই? কোথায় বাড়িতে অতিথি এসেছে তাকে আপ্যায়ন করবে তা না ফোন নিয়ে বসে আছো।”

হান আপনমনে কিছু বিরবির করলো তারপর বললো,

” পারবোনা করতে। তোমার অতিথি আমার নয়। আমি এতোদিকে মনোযোগ দিতে পারবোনা৷ আপাতত আমি খেতে ব্যস্ত।” কথার মাঝে হান হিতোমির প্লেট খেতে কিছুটা খাবার নিয়ে মুখে পুড়ে দিলো। এতে হিতোমি গেলো রে’গে। ভাই-বোন দু’জনেই আবারো ঝগড়া করতে শুরু করলো। এনাক্ষী চুপচাপ তাদের দেখছে। তবে সে মোটেও বিরক্ত হচ্ছে না বরং তার ক’ষ্ট হয়ে এই ভেবে যে পরিবারের কাছে থাকলে সেও এভাবে তার ভাইয়ের সাথে দুষ্ট-মিষ্টি ঝগড়া করতো।

বিকেলবেলা এনাক্ষী চলে যাওয়ার জন্য অনেক করে বললো। হিতোমিও আর বেশি জোড় করতে পারলোনা। হান পেছনে ছিলো, হিতোমিকে বিদায় জানিয়ে এনাক্ষী নামার প্রস্তুতি নেবে তখন পেছন থেকে আবার হিতোমি ডেকে উঠলো৷ পেছন তাকিয়ে নামছিলো সে, পুনরায় অসা’বধান’তার কারণে সে পরেই যাবে তখন হান খপ করে তার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। ভয়ে চোখ-মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে এনাক্ষী। হিতোমি দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

” তুমি ঠিক আছো?”

এনাক্ষী আস্তে আস্তে চোখ খুললো। চোখ খোলার পর প্রথমেই সে হানকে দেখতে পেলো। এনাক্ষী তখনো হানের টি-শার্ট খামচে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। তাড়াতাড়ি সরে এলো সে, চোখ বন্ধ করে নিজেকে কয়েকটা গা’লি দিলো। আড়চোখে হানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে বিরবির করে টি-শার্টটা ঠিক করছে।

” এনাক্ষী তুমি শুনতে পাচ্ছো? ব্য’থা পেয়েছো?”

” না হিতোমি আমি ঠিক আছি। আমি খেয়াল করিনি সিঁড়ি ছিলো তাই….”

” তুমি কোনদিন খেয়াল করে হাঁটাচলা করো সেটা আমাকে বলবে? না জানি তোমার ফ্যামিলি কিভাবে তোমাকে স’হ্য করে। সিস্টার তুমিই ওকে এগিয়ে দিয়ে এসো আর হাতটা ধরে রেখো। না হলে সেদিন নখ ভেঙেছিলো আজ হয়তো অন্যকিছু ভাঙবে।”

ধপধপ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ঘরে চলে গেলো হান। এনাক্ষী একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হিতোমির সাথে নিচে নেমে এলো।
.
.

পার্ট টাইম জব শেষ করে বাড়ি ফিরছে “সিন হারি” । প্রায় রাত দু’টো বাজতে চললো। বাড়িতে অ’সুস্থ মা এবং ছোট একটা ভাই আছে তার। পরিবারের মাথায় ভরসার হাত বলতে শুধু সেই। তাই সারাদিনই তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় রোজগার করার জন্য। ভাইয়ের টিউশন ফি দিতে হবে তাই সিন হারি এক্সট্রা টাইম কাজ করছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে এলো সে। একটা ছোট ঘরে তারা বসবাস করে। দরজায় নক করলে হারির ভাই এসে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা বন্ধ করার আগে হারি নিচে একটা খাম দেখতে পেলো। উল্টেপাল্টে দেখলো খামের উপরে কিছু লেখা নেই। খামটা না খুলেই সে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। ব্যাগটা ছুঁড়ে একজায়গায় রেখে রান্নার কাজে লেগে পড়লো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here