নিশীথচিত্র পর্ব ৮+৯

‘নিশীথচিত্র'(৮)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

___________

সে রাতে রিনির আর ঘুম হয় নি।প্রতিদিনের থেকে তাড়াতাড়ি দিহানের কাছে পড়তে গেলো। দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখে দরজা খোলা।মানুষটা হঠাৎ এতো বেখালী কিভাবে হলো ভেবে পায় না রিনি।আবার ভাবলো যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।ঘরে ঢুকে ভিতর দিয়ে দরজা আটকে দিলো।দিহান তখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন।রিনি টেবিলে শব্দবিহীন বইখাতাগুলো রাখলো।তারপর আস্তে করে দিহানের পাশে বসলো।
দিহান বুকের উপর চিঠি টা একহাত দিয়ে চেপে রেখে ঘুমাচ্ছে।।দিহানের কপালের অবাধ্য চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে মনে চাইলো রিনির কিন্তু সাহস হয়ে উঠলো না।রিনি তার মুখ দিহানের মুখ বরাবর নিয়ে চোখ বুজে আস্তে করে ফু দিলো চুলে।ফু দিতে রিনির বড্ড ভালো লাগছিলো অবশ্য ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই ভালোলাগার হয়।সে তার ফু দেয়ার কাজটা চোখ বন্ধ করেই চালিয়ে যাচ্ছে। মজায় মজায় কখন যে ফু দেয়ার বেগ বেড়ে গিয়েছে সে খেয়াল আর রিনির নেই।

এদিকে দিহান চোখ খুলেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।রিনির অকাজ টা বেশ মন দিয়ে দেখছে আর ভাবছে একটা মেয়ে কতো টা অবুঝ আর বাচ্চা খেয়ালী হলে এতো পাগল টাইপ বিহ্যাভ করে জানা নেই দিহানের।নাহ রিনি তো শান্ত মেয়ে না সে আস্তে করে প্রেমময় ফু দিচ্ছে না আর, এমন ভাবে ফু দিচ্ছে যেনো দিহানকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার পূর্ব পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে।দিহানের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। এইসব মেয়ের জন্যই পৃথিবীতে কার্বনডাই-অক্সাইড দিন দিন আরও অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দিহানের মনে হলো ।

— “রিনি তোমার ফু দেয়া পর্ব শেষ হলে সরো উঠবো আমি।”

আচমকা দিহানের আওয়াজ পেয়ে ভয়ে রিনি ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেল।পইরা গিয়াও শান্তি নাই কোমড়ে বেশ লেগেছে তার ।না পারছে ব্যাথা হজম করতে না পারছে কান্না করতে।

তখনই দিহানের আওয়াজ

— “কি উঠতে পারবা বলে তো মনে হয় না।হেল্প লাগবে?”

রিনি খুশিতে হাত বাড়িয়ে দিলো।দিহান টেনে উঠায়। দিহানের থুতনির নিচে রিনির মাথা।

— “দাঁড়িয়ে থাকবা? যাও চেয়ারে বসো।এমন যেনো পাগলামি আর না দেখি।”

— “দেখবেন একশ বার দেখবেন।” বেশ ঘাড়ত্যাড়া গলায়

দিহান রিনির হাত মুচরে ধরে বললো

— “আমার সাথে ঘাড়ত্যাড়ামি একদম চলবে না।ঘাড় ভেঙে বসিয়ে রাখবো একদম। মানুষ চেনো আমায়?”

— “চিনি খুব চিনি। ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি আমি এভাবে।জড়িয়েও তো ধরতে পারেন নাকি।সরেন তো।”

রিনির নিঃসংকোচ কথা গুলোয় দিহান বেয়াক্কল সাজলো।রিনি হাত ছাড়িয়ে চেয়ারে বসে পরলো।

____________

দিহান রিনিকে পড়াতে বসতেই উত্তর জানা সত্ত্বেও রিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়

— “দিহান ভাই চিঠি টা পড়েছিলেন?”

দিহান বইয়ের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়
— না পড়ি নি।

— মিথ্যা কথা, আপনি পড়ছেন আমি আপনার বুকের উপর চিঠি দেখছি।

এবার দিহান রিনির দিকে চোখ তুলে তাকায়

— তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো?

— আপনি মিথ্যা কেন বলবেন?

— উত্তর জেনে তবুও প্রশ্ন করলে আমি এমন মিথ্যা বলি।

— আচ্ছা যাই হোক বাদ। (এরপর রিনি নির্লিপ্ত গলায় বললো) “আমার উত্তর টা?

দিহান নিশ্চুপ হয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে

রিনি দিহানের হাত ঝাকিয়ে আবার বললো

— দিহান ভাই আমার উত্তরটা।

দিহানের শান্ত চোখটা কটমট করে তাকালো রিনির দিকে।রিনি ভয়ে হাতটা ছেড়ে দিলো

— নেহাতি বাচ্চা তাই কিছু বললাম না নইলে থাপ্পড় কাকে বলে দেখাতাম

— মারলে মারেন তাও উত্তর চাই( রিনির শক্ত জবাব)

— তোমার মতো পুচকি একটা মেয়েকে কিসের উত্তর দেবো আমি? কিসের?ভালোবাসার? এখন প্যান্ট ভরে বিছানায় হিসু করো কিনা তাই নিয়াই সন্দেহ আছে আমার। সে আবার প্রেম করবে

রিনি অপমান ঠেকলো।বেশ জোড়ালো গলায় বললো
— প্রেম করেই দেখুন ছোট কিনা বড় বুঝতে পারবেন।ভালো না লাগলে তখন দেখা যাবে।

— আমার তোমার অতো বুঝানো লাগবে না আমি বুঝি কার বুদ্ধি কতো দূর।

— আমি কিন্তু পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করবো বলে দিচ্ছি।

— থ্রেট দেয়া হচ্ছে?তাহলে আমিও এই মুহুর্তে এখনই পড়ানো বন্ধ করে দিবো।

— এই না না প্লিজ

— আর একটাও কথা না।কালকের পড়াগুলো হইছে?

— নাহ

— কি করছো সারা রাত?

রিনি মুখ গোমড়া করেই জবাব দিচ্ছে
— জানেনই তো। ঐ কারণে এক্সাইটমেন্ট এ পড়া হয় নাই।

দিহান খাতা রোল করে মাথার উপর বারি দেয়।

— কতো বার বলছি যা ই করবা পড়া যেনো ঠিক থাকে।প্রেম শিখছে উনি। কিসব বন্ধুদের সাথে মেশো?প্রেমের ভূত মেরেই ছাড়িয়ে দেব।অনেক বার বারছো তুমি

রিনির বেশ কষ্ট লাগলো। অন্য কোনো দিন হলে হেসেই উড়িয়ে দিত কিন্তু কাল ছেলেটাকে প্রপোজ করেছে আর আজ তার হাতে মার খাচ্ছে এই বিষয়টা রিনির মন টা মানতে পারলো না।রিনিকে লজ্জা অপমানে ঘিরে ধরলো।চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

দিহান ব্যাপারটা খেয়াল করলো।খাতায় কিছু লিখতে লিখতে জবাব দিলো

— এমনি এমনি বাচ্চা বলি না।প্রপোজ করে ওনার আত্মসম্মান বেড়ে গেছে একেবারে প্রতিদিন হাসে আর আজ কাদছে।আমার সাথে চলবে না এইগুলো।প্রতিদিন মারবো আমি প্রতিদিন কথা না শুনলেই।পড়াশোনার ব্যাপারে নো স্যাক্রিফাইস।

রিনি নাক টানটে টানতে বললো “আমাকে কোলে নিন দিহান ভাই”

দিহান হা হয়ে গেলো। এটা কেমন আবদার?

— কোলে নিন বলছি। কোলে নিয়ে কান্না থামান।( রিনির বেশ শক্ত গলা)

দিহান ধমক দেয়ারও ভাষা হাড়িয়ে ফেলেছে।কি বলছে এই মেয়ে? তবুও ধমক দেয়ার ক্ষীণ চেষ্টা করলো।

— রিনি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু বুড়ো মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্না থামায় কেউউ? আল্লাহ মাফ করো। পাগল হয়ে যা,,,

কথা শেষ করার আগেই রিনি টেবিলের উপর থেকে সব বই ফালাতে শুরু করলো।আর বির বির করছে কোলে নিবি কিনা বল

দিহান থ হয়ে গেলো। রিনি যে সিরিয়াস ভাবে বলেছে ভাবতেই পারে নি দিহান।

— এগুলো কেমন বাচ্চামি রিনি।এতো পাগলাটে হলে চলে না। আর বই ফেলে না রিনি রিনি

কে শুনে কার কথা রিনি এখন আউট অফ কন্ট্রোল। এতো দিনের চাপিয়ে রাখা ঘাড়ত্যাড়ামি আজ সবটা প্রকাশ পাচ্ছে।
মানুষটাকে সে ভালোবাসে কিন্তু একটু মূল্যায়ন পাচ্ছে না।কাল প্রপোজ করলো আর আজ নাকি পড়ার জন্য মারলো।এমনিই ইন্ডিরেক্টলি রিজেক্ট করেছে তাতে রিনি যে কষ্ট পেয়েছে তার যে মন খারাপ হয়েছে এটা দিহান ভাই কেন বুঝলো না? সব মিলিয়ে রিনি এখন বাঘিনী রূপ ধারণ করেছে।

দিহান কিছু ভেবে না পেয়ে রিনিকে টেনে বিছানায় বসালো নিজেও বিছানার পাশে পা ঝুলিয়ে বসলো।কিন্তু রিনি সুস্থ নেই তেড়ে যাচ্ছে বাকি বইগুলোও ফেলে দেবার উদ্দেশ্যে। দিহান আর না পেরে টেনে জড়িয়ে ধরলো।রিনি এখনও রাগে ফোস ফোস করছে।

দিহান আদুরে গলায় বললো
— হইছে কি? হইছে টা কি? এতো রাগ কেন এইটুক মাথায় হুম?

রিনি ক্ষেপে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।চিল্লিয়ে বললো
— আমি এইটুক আমি এইটুক?

দিহান আবার রিনিকে পাশে বসিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রিনি হাত পা ছুড়ছে। কিন্তু রাগ না থাকলে এই রিনিই এখন লজ্জায় লাউ লতার মতো লতিয়ে যেতো বার বার ভাবতো দিহান ভাই তাকে জড়িয়ে ধরেছে নিজে থেকে? দিহান ভাই?

কিন্তু এখন কিছুই হচ্ছে না তার।

— এইটুকুই তো। আমার ছোট্ট একটা মায়াবতী। এতো রাগ তোমার আগে জানতাম না তো।
রাগ করলে আর কি কি পারো তুমি ?ভাংচুরও করো নাকি?

দিহান যে কথার ফাঁকে মায়াবতী বলে ফেলেছে নিজেও খেয়াল করে নি।রিনির তো মাথাই হ্যাং তার মাথায় এখন এসব যাচ্ছে না।

রাগী গলায় বললো
— কামড়ে দিতে পারি।

বলার দেরি নেই। দুই পা দিয়ে দিহানের পেট জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কামড় বসালো বেশ জোরেশোরেই।

— রিনি কি হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলবে নাকি ছাড়ো।ব্যাথা লাগছে।উহ আল্লাহ লাগছে কি হইছে টা কি পাগল হয়ে গেছো?

দিহান আর সহ্য কর‍তে না পেরে রিনির কোমড়ে কাতুকুতু দিলো এতে যদি ছাড়ে।রিনি হাত দিয়ে দিহানের হাত ছাড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু কামড় ছাড়ছে না।

— আমিও কামড় দিতে পারি কিন্তু

রিনির হেলদোল নেই।

— আরে আমি চিকেন ফ্রাই নাকি যে মজার খাবার ছাড়লে পাবে না আর? ছাড়ছো না কেন? রিনি আমার ব্যাথায় কান্না পাচ্ছে কিন্তু ।উহঃ আল্লাহ

রিনির ঘাড়ের কামড় ছেড়ে দিয়ে বললো।

— আচ্ছা অন্য জায়গায় কামড়াচ্ছি।

দিহান তাড়াতাড়ি করে রিনির মুখের সামনে হাতের তালু রাখলো।এবার রিনি শত চেষ্টা করেও দাঁত বসাতে পারলো না।দিহান জানে যে হাতের তালুতে কামড় দেয়া যায় না তাই ই এই কাজ নইলে এই মেয়ে তাকে ফালা ফালা করে ফেলবে।

বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে রিনি দমে গেল।রিনি রাগে ফোসফোসানিও থেমে গেছে।

— কি রিনি রাগ কমেছে? নাকি আবার হামলা করবে?

রিনি শান্ত ভাবে গলা জরিয়ে ধরে আছে।দিহানকে দেখে এখন মনে হবে ছোট বাচ্চাদের যেমন ঘুম পাড়ায় তেমন ঘুম পাড়াচ্ছে। কিন্তু সাইজে বড় বুড়া বাচ্চা এটা।

দিহান বুঝতে পেরেছে রিনির রাগ নেমে গেছে তাই সাহস করে বললো

— লাজ লজ্জার তো মাথা খাচ্ছো দিন দিন।কি জানি সামনে আর কি কি দেখতে হবে।

এতো কথা শুনেও রিনির নড়চড় নেই।সে আসলে লজ্জা পাচ্ছে নিজের অবস্থানের জন্য। রাগের মাথায় এসব করে বসেছে এখন দিহান ভাইয়ের দিকে তাকাবে কি করে? নিজেকেই গাল মন্দ শুরু করে দিলো রিনি।কত্তোবড় আহাম্মক হলে এই কাজ করে মানুষ?

দিহান বেশ ছাড়া ছাড়া গলায় বললো

— রিনি রে তোমার লজ্জা না লাগলেও আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে বেশ লজ্জা লাগছে।তোমার অবস্থান একদমই সুবিধার না।আমি পুরুষ মানুষ রিনি অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখাই না নিজের ব্যক্তিতের জন্য। তাই বলে তুমি আমার পরীক্ষা নিতে পারো না।

দিহানের কথার আগা মাথা সব না বুঝেও রিনি লজ্জায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

— আমার খুব লজ্জা লাগছে দিহান ভাই।আমি আপনার মুখের দিকে তাকাতে পারবো না তাই ছাড়ছি না।

দিহান অসহায় গলায় বললো
— এটা লজ্জার নমুনা? আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছো । আমি কামড়ালে নিস্তার নেই কিন্তু আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না একদম।

— সত্যি বলছি।

দিহান পরিস্থিতি সাভাবিক রাখার জন্য বললো

— আচ্ছা ছাড়ো তার পর উঠে দাড়াও। তাকাতে হবে না আমার দিকে চোখ বন্ধ করে থেকো। আমি দরজা পর্যন্ত পৌছে দেব।

— আচ্ছা

রিনি চোখ বুজেই দিহান কে ছেড়ে উঠে দাড়ায়।দিহান হাত ধরে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দিতে বলে

— অতিরিক্ত রাগ কখনো ভালো না রিনি।আর হ্যা একটা চরিত্রবান পুরুষেরও খারাপ হতে সময় লাগে না।এরপর থেকে আজকের মতো ভুল করো না।

রিনি মনে মনে বললো ” দিহান ভাই আপনি তো আমার পুরুষ। আমি এমন ভুল হাজার বার করলেও আপনি আমার ক্ষতি করবেন না আমি জানি।

চলবে,
‘নিশীথচিত্র'(৯)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

রিনির অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে।পড়ার সময় তাকে মেরেও বইয়ের দিকে মুখ নিতে পারে না দিহান যদি নিজে থেকে না চায় তবেই।ভেটকি মাছের মতো দিহানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে আর বলবে কি কিউট আপনি দিহান ভাই!!!!! দিহানের তখন চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়।

পায়ে পা দিয়ে পা খোটানো তো অন্যতম অভ্যাস হয়ে উঠেছে রিনির।আর শেষমেস দিহান বেচারার চেয়ারে উপরই পা উঠিয়ে বসতে হয়।আর তখন রিনি হেসে কুটি কুটি হয়ে যায়।দিহান অঙ্ক করিয়ে দেয়ার সময় দিহানের হাতের কলম উপর থেকে শক্ত করে চেপে ধরে যাতে দিহানের লিখতে অসুবিধা হয়।মোট কথা দিহানের কোনো পদক্ষেপই সুস্থভাবে সম্পন্ন করতে না দেয়াই রিনির লক্ষ্য। দিহান ভেবেই পায় না এই পাগলকে কিভাবে থামাবে।কম তো বুঝায় নি।এখন দিহান শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

রিনি তার কার্যকলাপের মধ্যে নতুন করে যোগ করেছে দিহানকে তুমি করে ডাকা।কিন্তু দিহানের মুখে শক্ত করা ধমক শুনে তুমি আপনি ঘুলিয়ে জগাখিচুরি করে বলে দেয় কিছু একটা।আর যদি খুব আল্লাদি হয়ে যায় তখন সে তুমি আপনি ঘুলিয়ে বলবেই।দিহানের শক্ত চোয়ালের ধমক শুনেও বলবে” দিহান ভাই এই যুদ্ধ চলবেই।রিনি হারে না”

বেশ কয়দিন ধরে আবার দিহান ছুটি দিলেই যাওয়ার সময় গালে চটাস করে চুমু খেয়ে দৌড়ে পালায় দিহান তখন বরফ হয়ে যায়। ভাষা হারিয়ে ফেলে,কথা বলা ভুলে যায়, মাথা খালি খালি মনে হয় তার। এ এক আলাদা অনুভূতি দিহানের কাছে আরও যদি হয় কাঙ্ক্ষিত মানুষ । প্রথম বার চুমু খেয়ে ভার্সিটি মিস হয়ে গেছিলো দিহানের।সারা দিন বিছানায় শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

তবে রিনি চুমুচুমির এপ্লাই প্রতিদিন করে না দিহানের যেদিন মনে হয় আজ হয়তো আক্রমণ হবে না তাই আর সেভটি নেয় না আর সেই সু্যোগে রিনি অকাজ ঘটিয়ে দৌড়ে পালায়।তখন আবার নিজেকে মমির মতো মনে হয় দিহানের। হাত পায়ের নড়ন ক্ষমতাই হাড়িয়ে ফেলে।এভাবে চলতে দেয়া যায় না ভেবে তারপর থেকে দিহান প্রতিদিন রিনিকে ছুটি দিয়েই দুই হাতে নিজের গাল চেপে ধরে থাকে। রিনিও কম যায় না সে সেদিন ভাব নিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে যায় যেনো সে ভাজা মাছ টাও উল্টে খেতে জানে না।

আর সেদিনের পরে শুরু হলো পড়ানোর মধ্যে হুট হাট করে চুমু খেয়ে নেয়া। এখন আর দিহান সেভটি নিতে পারে না তবে নিয়েছিলো কাজ হয় নি বলে হাল ছেড়ে দিয়েছে।কখন দেয় টাইমেরই ঠিক নেই কতক্ষণ গালে হাত দিয়ে থাকা যায়? খাতায় কিছু লিখতেও তো হাত নামাতেই হয় ।আগে তো পড়ানোর শেষে চুমু দিতো টাইম মেইনটেইনের কারনে দিহান নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারতো মাঝে মাঝে।

মেয়েটার লজ্জা দিন দিন দিহানের কাছে কমছে তা দিহান বেশ বুঝতে পারছে আগে চুমু খেয়ে দৌড়ে পালাতো আর এখন ইননোসেন্ট ফেস নিয়ে বসে এমন একটা ভাব করে যেন সে কিছুই জানে না দিহান সপ্নের মধ্যে চুমু খেয়েছে।দিহান এখন চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে হজম করে মাথা ঝাকি দিয়েই বলবে ” হ্যা রিনি কি জেনো পড়াচ্ছিলাম”
রিনি তখন ইননোসেন্ট ফেস করে পড়ানোর জায়গাটা মনে করিয়ে দেয়।

এই দিনগুলো সবথেকে বেশি ইনজয় করতো রিনি। রিনির প্রথম প্রথম লজ্জা লাগতো না তা না কিন্তু দিহানের ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখ টা দেখতে এত্ত এত্ত ভালো লাগে যে সে মজায় মজায় কাজ টা বার বার করে।সে ভেবেছিলো দিহান হয়তো চড় থাপ্পড় মারবে কিন্তু প্রথম দিন দিহানের নাজেহাল অবস্থাটা সে বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করেছিলো।

____________

এমনই একদিন দিহান খাতার দিকে তাকিয়ে রিনির একটা ম্যাথ সলভ করে দিচ্ছে এর মধ্যে রিনির মনে হলো এখনই চুমু খাওয়ার বেস্ট টাইম কারণ দিহান ভাই মন দিয়ে ম্যাথ টা করছে।দুনিয়া উল্টে যাক পড়ার বা পড়ানোর সময় দিহান নিনের বেস্ট মনযোগ টাই দেয়। গালে চুমু খাওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করে দিহানের দিকে আগাতে আগাতে যখন দিহানের সন্নিকটে কিন্তু ঠিক সেই সময় দিহান রিনির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাবে “রিনি বুঝেছো ” নাহ তা আর জিজ্ঞেস করা হলো না।চুমু টা দিহানের ঠোঁটে লেগেছে।দিহানের চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো। মাথা আবার শূন্য হয়ে আসছে এই মেয়েকে দমানো তো মহা মুশকিলের কাজ।পাগলের পাগলামিতে নিজেই কবে পাগল হয়ে যায় তা নিয়ে দিহান চিন্তিত।

এদিকে রিনির মনে হলো দিহানের গাল পাল্টে গেছে।আগেও তো চুমু খেয়েছে গালের চামড়া এমন মনে হয় নি ।দিহান ভাই কি তাহলে নতুন ক্রিম ইউস করছে?গালটা কি আরএ সফট হয়ে গেলো।রিনি তার ধারণা মোতাবেক গালে ঠোঁট রেখেই বললো “দিহান ভাই কি নতুন ক্রিল ইউস করছেন? আপনার গালের অম্লত্ব বেড়েছে নাকি ক্ষারত্ব বেড়েছে বুঝতে পারছি না।এতো নরম কেন হয়ে গেলো দিহান ভাই?”

দিহান কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না তখন।

রিনি ঠোঁট সরি চোখ মেলার আগেই দিহান মুখের সামনে হাত রাখলো।রিনি দিহানের অবস্থা দেখে লাফিয়ে উঠলো” দিহান ভাই আমি আপনার হাতে চুমু খেয়েছি???? তাই তো বলি গালের মধ্যে নিচু জায়গা কিভাবে এলো। তবে আপনার হাত এত সফট আগে ধরে কখনও মনে হয় নি।

রিনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো” হাত টা না থাকলে আরও নরম কিছুর সাথে পরিচিত হতাম।”রিনি আবারো দুষ্ট হাসি হাসলো। দিহানের রাগ হচ্ছে মেয়েটা দিন দিন পাঁজির হাড্ডি হচ্ছে। ভাগ্যিস ঠোঁটে চুমু খেয়েছে বুঝতে পারে নি।

দিহান কিছুক্ষন গলা খ্যাকখ্যাক করে কেশে গলা ঠিক করে নিলো। নিজেকে সাভাবিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করলো।নিজের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আর রাগী গলা আনার চেষ্টা করলো। মেয়েটা তাকে শক্ত থাকতে দিবে না তা বেশ বুঝতে পেরেছে।শেষমেষ হুমকির স্বরে বলে ওঠে

— রিনি অনেক সহ্য করেছি আর না। তুমি যদি এমন করো তাহলে কাজ করবো দুইটা

— কি কি? গালে হাত দিয়ে

দিহান আবার ধমক দিয়ে বললো
— আবার কি কি বলা হচ্ছে হ্যা? এক. আমি তোমাকে আর পড়াবো না।
আর দুই.তোমার বাবা মা কে বলে দেবো।

রিনি আহ্লাদি স্বরে ভয় মেশানো কন্ঠে বলে উঠলো

— না দিহান ভাই তুমি এটা করতে পারেন না।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

এভাবে তুমি আপনি মেশানো রিনির বলাটা দিহানকে বেশ হাসায় কিন্তু এই পাগলির সামনে তো হাসা যাবে না একদম না।

___________

এর ঠিক পাঁচ ছয় দিন পরে রিনি পড়তে এসে দেখে দিহানের রুমে ছোট সাইজের একটা হোয়াইট বোর্ড।

— দিহান ভাই এই হোয়াইট বোর্ড দিয়ে কি হবে?আরও স্টুডেন্ট আছে নাকি যে হোয়াইট বোর্ড আনছেন?

দিহান হোয়াইট বোর্ড এর পাশে উঁচু টুল টায় বসতে বসতে বললো “এরপর থেকে আমি এখানে বসে পড়াবো রিনি”।

রিনিএ ভ্রুদয় কুচকে এলো। তাকে হেনস্ত করতেই দিহানের এই পদক্ষেপ তা বেশ বুঝতে পারছে।আমতা আমতা করে বললো

— ওখানে মানে কি? অতো টা দূরে বসে পড়ালে আমি বুঝবো কিভাবে?

— এই জন্যই তো হোয়াইট বোর্ড রিনি।এইটুক দূর দিয়ে দেখতে তোমার একদম অসুবিধা হবে বলে মনে হচ্ছে না।বরং আগে অসুবিধা হতো এখন আরও ভালো বুঝবা।

— অতোটা দূরে পড়ালে আমি সত্যি বুঝবো না দিহান ভাই।আমি টেবিল চেয়ারে বসে পড়বো দিহান ভাই।প্লিজ, আসেন তো আপনি।। এমন করে না দিহান ভাই।

— একটা কথা জানো তো রিনি?কনফুশিয়াস একজন( চীন দার্শনিক) উনি বলেছেন ” যদি কোনো লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব মনে হয়, তবুও লক্ষ্য বদল করবে না; তার বদলে কৌশল বদলে ফেলো ”

তোমাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিলাম না আর না থামাতে। তাই আমি আমার কৌশল বদলে নিয়েছি সিম্পেল।

রিনির মাথায় কথাটা বেশ লাগলো “কৌশল”।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here