নিশীথচিত্র পর্ব ১০+১১

‘নিশীথচিত্র'(১০)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

__________

সেদিন থেকে শুরু হলো রিনির কৌশল খোঁজা।কৌশলের পাল্লায় পরে সে এতই অন্যমনস্ক যে চেয়ার টেবিলে দরজা সব কিছুর সাথে টাক খায় আর হাটে।কি আর করবে তার দিহান ভাই যে বর্তমান কাজ গুলোয় ও পটছে না অবশ্য এগুলোকে কাজ বলা ঠিক না এগুলা অকাজ।আর তাই অবশ্যই নতুন কিছু করতেই হবে। যা হয়ে যাক হাল ছাড়া চলবে না। চলবে না মানে চলবে না।দিহান ভাইকে সে নিজের করেই ফেলবে।

রিনি নতুন কৌশল খুজতে অসংখ্য প্রেমের মুভি গুলো দেখা শুরু করলো। বেশ কয়েকটা প্রেম বিষয়ক অ্যাপ ডাওনলোড করে ফেললো,প্রেমের এসএমএস গুলো সময় পেলেই মন দিয়ে পড়ছে যদি নতুন কোনো ট্রিকস পাওয়া যায় সেই আশায়।তার মধ্যে পড়াগুলোও মন দিয়ে করতে হয় রিনির নয়তো দিহান তাকে পিটিয়ে পাপড় বানিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।যতই হোক দিহান ভাইর রাগের সামনে সে বাচ্চা বিড়াল মাত্র।

অনেক দিক ধরে ঘাটাঘাটির ফলে রিনি একটা ট্রিক্স পেয়েয়ে। রিনি লাফিয়ে উঠল মিনমিনিয়ে বলতে শুরু করলো “ভালোবাসার মানুষের কাছে লজ্জা গেলে কিছু হয় নাহ।আর সে তো আমার জামাই হবেই” রিনির ছোট্ট মাথায় একবারের জন্যও আসে নি তাদের ফ্যামিলির সাথে দিহানের ফ্যামিলি যায় না।তার মা খালারা অন্য ধাচের মানুষ। রিনিরও দোষ না এতো কিছু বুঝার জন্য পরিপক্ক বয়স টাই রিনির হয় নি এখনও।বাস্তবতার সাথে তার সম্পর্ক খুবই কম।সে ভাবে ভালোবাসলেই তাকে পেয়ে যাবে।

____________

— রিনি গণিতের দিকে গভীর মনোযোগ দাও কেমন? এই গণিত তোমাকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যাবে। বড়লোক ঘরের মেয়ে হয়েছো মানে জব করবে না সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হবে না এইটা ভুল কথা ভুল ডিসিশন। শশুর বাড়ি আর স্বামী কপাল যদি খারাপ হয় তখন বুঝবা দিহান ভাইর কথার গুরুত্ব।

— কেন দিহান ভাই আপনার ফ্যামিলি, আপনি কি খারাপ?

দিহান কিছু না ভেবেই বললো,
— না তো কেন?

— তাহলে? আমার চিন্তা নাই দিহান ভাই।আপনি আমাকে ভালোই রাখবেন যেমনই রাখবেন তাতে আমার সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে না। বিয়ে হবে বাচ্চা হবে নাতি হবে হ্যাপি ফ্যামিলি।আর আপনি চাকরি করবেন আর আমাকে আদর করবেন।আর কি চাই বলুন?

দিহান হাসলো। রিনি বাস্তবতার কানাকড়িও বোঝে না।দিহান যে তার নাও হতে পারে এই ভাবনা তার মাথায় একবারও যে আসে নি তা দিহান হলফ করে বলতে পারে।

দিহান আর রিনির দিকে তাকালো না কিছু বললোও না।বোর্ডে অঙ্ক টা শেষ হতেই ফিরে তাকিয়ে বলবে “রিনি বুঝেছো?” নাহ বলা আর হলো না।রিনি কাজে সে হা।মাথায় রাগও চড়ে বসলো।ধমক দিয়ে বললো,

— রিনি তোমাকে না আমি ওড়না ছাড়া চলতে নিষেধ করেছি?তুমি ওড়না গায় না দিয়ে চেয়ারের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছো কেন?। চেয়ারের এমন কোনো কিছু নেই যে ওর ওড়না পরতে হবে।ওড়না পড় ফাস্ট।

— তাহলে আমার কি আছে যে আমার ওড়না পরতে হবে?

দিহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।কি বলবে বুঝতে পারছে না।

— দিহান ভাই ঢাকার বেশির ভাগ মেয়েই ওড়না পড়ে না।আমি শুধু আপনার কথায় পরি নয়তো পরতাম না কখনোই।আমার এসব লজ্জা ঠজ্জা কম বুঝলেন তো।

রিনির কথায় দিহান দাত খিচিয়ে বললো,

— তোমার লজ্জা শুধু কম না রিনি তোমার লজ্জাই নেই।

— আমার গরম লাগছিলো খুলে রেখেছি সিম্পেল।আর এরপর থেকে আমার প্রতিদিন গরম লাগবে বুঝলেন?

দিহান দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

রিনি বলে ওঠে,

–দিহান ভাই জানেন তো কনফুশিয়াস, একজন চীন দার্শনিক উনি বলেছেন ” যদি কোনো লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব মনে হয়, তবুও লক্ষ্য বদল করবে না; তার বদলে কৌশল বদলে ফেলো ”
আমি কৌশল বদলে ফেলেছি।আফটার অল আমি আপনার ব্যক্তিগত ছাত্রী বলে কথা আপনার মান রাখলাম। রিনি মুখ বন্ধ রেখে ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসি দিলো।শব্দহীন হাসি।

দিহান বুঝতে পারলো এটা তাকে পটানোর নতুন ট্রিক্স।আস্তে আস্তে ট্রিক্সগুলো কতো ভয়ংকর হতে চলেছে দিহান আন্দাজ করতে পারছে।রিনিকে কথাটা বলে কতোটা ভুল করেছে তা দিহান হারে হারে টের পাচ্ছে।।এমনিই মেয়ের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি সবসময় গিজগিজ করে তার উপর দিহান নিজেই যে তেল ঢেলে দিয়েছে তা এখন বোধগম্য দিহানের কাছে।

দিহান ভাবলো,নাহ মেয়েটাকে বুঝাতে হবে ওর দোষ না। ওর বয়সটাই এমন। সব কিছু না বুঝেই আবেগে নিজেকে ভাসানোই এই বয়সের কাজ।দিহান চায় রিনি বাস্তবতা বুঝুক কিন্তু কবে এই মেয়েকে বুঝাতে পারবে তা নিয়ে দিহান বেশ সন্ধিহান।

দিহান শান্ত মাথায় রিনির পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে পরলো।

— এই নিনি নিনি?

— নিনি কে দিহান ভাই?

— তোমার নাম।

রিনি হাসলো বেশ শব্দ করে তার দিহান ভাই তার সাথে নরম কন্ঠে একদমই কথা বলে না তাই।আর তার উপর কি সুন্দর একটা নামে ডাকলো।রিনি খুশিতে মরি মরি অবস্থা।রিনি আরও আবেগি হয়ে পট করে বলে ফেললো।

— মায়াবতী ডাকুন না দিহান ভাই।আমার শুনতে খুব ইচ্ছা হয়। সেদিন একবার বলেছিলেন তারপর আর ডাকেন নি।

সেদিন বেখেয়ালেই রিনিকে দেয়া লুকানো নাম টা প্রকাশ্যে ডেকে ফেলেছিলো।দিহান নিজেকে ধমকালো নিজের ভুলের জন্য।রিনি এমনিই নাচুনি বুড়ি আর তার মধ্য সে দিছে ঢোলের বারি।

— তুমি একটু মায়াবতী ডাকেন না প্লিজ দিহান ভাই

দিহান চট করে বলে ফেলে

–আসলে রিনি হয়েছে কি বলো তো।কাউকে কান্না থামাতে গেলে আমি তাকে মায়াবতীই বলি সবসময় তাতে যেই হোক।। আমার বোন যখন কাদতো আমি ওর কান্না থামাতে মায়াবতী ডাকতাম আর ওর কান্না কিছুক্ষণেই থেমে যেত।তোমার উপরও তাই এক্সপেরিমেন্ট টা করলাম বুঝলে।এটা স্পেশাল কিছু না

রিনি অভিমানী গলায় বললো
— আপনি অনেক বড় মিথ্যুক দিহান ভাই।

দিহান হাসলো।
রিনির মন টাই খারাপ হয়ে গেলো। দিহানকে ধাক্কা দিয়ে দিলো।দিহান শক্ত হয়ে থাকার কারনে ফ্লোরে পরে গেল না।

রিনি রাগী স্বরে বলে

— সরেন দিহান ভাই। আপনার সাথে কথা নাই। আপনি বোঝেনই না আমার কষ্ট হয়।আমার কষ্টেও আপনার হাসতে মন চায়।

দিহান আরও মজা করে বললো

— ওমা কই দেখি দেখি কোথায় তোমার কষ্ট ?

কথাটা শুনেই রিনির মুখ লজ্জায় ছেয়ে গেলো দিহান লজ্জার কারণ বুঝতে পারলো না। কিছু ভুল বলে ফেলে নি তো আবার?

রিনি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো সত্যি দেখবেন?

দিহান মমার্থ বুঝতে পেরে খ্যাকখ্যাক করে কেশে উঠে গেলো। এই মেয়েকে বুঝানোর কিচ্ছু নাই কিচ্ছু না।যখনই বুঝাতে যাবে তখনই রিনির কথা বার্তা তার বুঝানোর ইচ্ছাই কেড়ে নেবে।

___________

ইদানীং গেটের বাইরে বেরোলেই দেখা যায় একটা ছেলে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুকি দিচ্ছে।দিহানকে দেখলেই অন্য দিকে ফিরে যায় বলতে গেলে দিনের বেলাও আকাশের তারা গোনা শুরু করে।দিহান আরও কিছু দিন খেয়াল করে। হ্যা ছেলেটা রোজই দাঁড়াচ্ছে।তাহলে কি রিনির জন্য?

পরের দিন রিনি পড়তে আসতেই দিহান জিজ্ঞেস করে” রিনি বাইরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে কে ওটা?”

রিনির স্পষ্ট জবাব

— ওর নাম নাসির। আমাদের ক্লাসেই পড়ে।আমাকে পছন্দ করে।প্রপোজও করেছিলো আমি কানের উপর থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু তাহার লজ্জার ভিটামিন এতোই কমে গেছে যে সে থাপ্পড় খেয়েও এখন নতুন করে বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা শুরু করেছে।

— আমাকে আগে বলো নি কেন?রাগ চেপে রাখলে যেমন অবস্থা হয় দিহানের অবস্থা ঠিক তেমন সেই মুহুর্তে

— জানতে চেয়েছেন? আর আমি ভাবলাম আপনি তো আমাকে ভালোইবাসেন না।হুদাই এসব কেচালে আপনাকে জড়িয়ে প্যারা দেয়ার মানেই নেই তাই আর,,,,,,,

দিহান দাঁত খিচে বললো
— আমি কি একবারের জন্য ও তোমার কোনো কিছু কে প্যারা বলে ছি?বাই দা ওয়ে আর কে কে তোমার পিছনে ঘুরে বা ডিস্টার্ব করে ফাস্ট বলো ফাস্ট?

— আছে দুইটা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের ছেলে।কিন্তু তারা আমায় ডিস্টার্ব করার সু্যোগই পায় না

— মানেহ?কেন?

— তার আগেই তাদের নাক মুখ ফাটিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়।

— কেন? অন্য কেউ ও আছে নাকি যে তোমাকে পছং করে? যে ওদের নাক মুখ ফাটায়?

— আরে নাহ।দুই জনই দুই জনের টা ফাটায়। ওদের আগে থেকেই সম্পর্ক খারাপ ছিলো বুঝলেন। পূর্ব শত্রুতা যাকে বলে। যখন থেকে দুইজন জানলো তাদের পছন্দের মেয়ে একজনই।তখন থেকে শত্রুতা দিগুন বেড়ে গেছে।ধরেন একজন প্রপোজ করতে আসার প্রস্তুতি নিয়েছে তারমানে তাকে বাঁশ দেয়ার জন্য অন্য জন রেডি। আমার কাছ পর্যন্ত আজ পর্যন্ত কেউ আসতে পারে নাই। ওরা ওদের যাতনায় আজ পর্যন্ত সামনে এসে আমার নাম টাও জিজ্ঞেস করতে পারে নাই।সু্যোগ টাই কেউ কাউকে দেয় নি।তাই এদের নিয়ে আমার কোনো চিন্তাই নাই।

রিনির বলার ভংগী দেখে দিহানের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।

— নাসিরকে আমি বলে দেবো আপনার কথা যে আপনি আমার বিএফ। তাহলে আমাকে আর ডিস্টার্ব করবে না।

— নাহ একদম না।বুদ্ধির ঢেকি হয়ে যাচ্ছ দিন দিন।তাহলে তোমার নামে খারাপ কথা রটানোর সু্যোগ পাবে বুঝো না?এখন পড়ায় মন দাও। আর হ্যা আজ কোনো দুষ্টুমি না।এক্সাম এগিয়ে এসেছে মনযোগী হও।

কিন্তু রিনি তো রিনিই।সে কি কারো কথা শোনে? সে তার বাধিয়ে রাখার মতো কাজ গুলো ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে দিহান নিষেধ করুন,বকুক, মারুক,বুঝিয়ে বলুক রেজাল্ট জিরো । তার কথা একটাই”দিহান ভাই লক্ষ্য থেকে নড়ছি না”

__________

তার দুদিন পরে নাসির রিনির কাছে হাপাতে হাপাতে দৌড়ে আসে।দুইটা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে

— কোথায় কোথায় খুজেছি তোকে।আমি তোকে আর জীবনে ডিস্টার্ব করবো না। আমাকে মাফ করে দিস।আমি কান ধরে উঠবস করতেও রাজী কিন্তু মাফ কর।

— আচ্ছা মাফ মাফ, যা ভাগ এখন।কান ধরতে হবে না।

— ধন্যবাদ বুইন।

নাসির ঝরের গতিতে দৌড়ে চলে গেলো। সেদিনও যে ছেলে পিছনে দাঁড়িয়ে ফার্স করলো “বউ” বলে আর আজ কিনা “বুইন”। রিনি ওর বান্ধবী দের নিয়ে হাসিতে ফেটে পরলো।কিন্তু নাসিরের আমুল পরিবর্তনের কারণ খুজে পেলো না।

___________

রাতে খাবার সময় রেহানা বলে ওঠে

— দিহান রিনির বড় বোন মানে রিমির বাচ্চা হবে। পাঁচ মাস চলছে। মেয়েটা এখনই হুট করে খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে।আরও প্রথম বার তো কাদছে খুব।বেয়ান আমাকে যেতে বললো রিমিও বার বার করে বলছে মা আসো।এদিকে রিনির তিন পর অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা। ওকে তাই নিতে পারছি না।কি করি বলো তো।আর এদিকে রিমির শশুর বাড়ি এতো দূর যে তোমার আংকেল ছাড়া আমার একা যাওয়াটাও সম্ভব না।তাই বলছি তুমি যদি একটু দেখে রাখতে।ওর দাদি সে ঠিক মতো হাটতে পারে না। শুধু ওনার ভরসায় তো আর মেয়েকে রেখে যেতে পারি না।তুমি যদি রিনিকে বোনের মতো করে খেয়াল রাখতে আমি নিশ্চিন্ত থাকতাম আর কি।

মায়ের এতক্ষণের ডিসিশনে দিহান খুশি হয়েছে কিনা তা বলা বাহুল্য হলেও রিনি দারুন খুশি হয়েছিলো।সে দিহান ভাইকে একা পাবে এইটাই অনেক।কিন্তু শেষ কথাটায় দিহান রিনি দুজনেরই ভাত গলায় আটকে গেলো। মুনির হোসেন রেহানা দুজন দুজনের মাথায় হাত দিয়ে পানি খাওয়াচ্ছে ।দিহানের অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এলেও রিনির নিয়ন্ত্রণে আসতে বেশ সময় লেগে গেল।

দিহান নিজেকে সাভাবিক করে বললো “জ্বি জ্বি আন্টি আমি রিনিকে ব ব বোনের মতোই দেখে রাখবো” বোন উচ্চারণ করতে দিহানের বেগ পেতে হলো এদিকে রিনি চোখ কটমট করে দিহানের দিকে তাকালো।দিহান চোখ নামিয়ে খাবারে মনযোগ দিলো।

মুনির হোসেন বলে ওঠে

— তাহলে দিহান বাবা দুই তিন দিন আমাদের গেস্ট রুমটায় ই থেকো কেমন?

— জ্বি জ্বি আংকেল চিন্তা করবেন না একদমই।

আর রিনি নিঃশব্দে শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে ভাবলো” তোমার হচ্ছে দিহান ভাই ”

চলবে,
‘নিশীথচিত্র’ (১১)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

________

পরের দিন খুব সকালে মুনির হোসেন, রেহানা রওনা দিলো গন্তব্যে ।তাদের বিদায় দিয়েই গেট আটকে রিনি দিহানের দরজায় হামলা করে বসলো।দিহান যখন ঘুমিয়েছে তখন তার প্রায় ৫ টা । একবারে নামাজ আদায় করেই ঘুমিয়েছে।আর ৬ টা ৩০ এ দরজার উপর হামলা একটুও পছন্দ হলো না দিহানের। কাথা মুরিয়ে আবার ঘুমিয়ে রইলো।

বাইরে থেকে রিনি চিৎকার দিয়ে বললো” দিহান ভাই আটটা বাজে কখন উঠবেন পড়াবেন না?”এতক্ষন রিনি চিল্লাচিল্লিতে কান না দিলেও এই কথা টা শুনে দিহানের কান খাড়া হয়ে গেলো। সত্যিই তো মেয়েটার তিন দিন পরে পরীক্ষা সে ঘুমালে কি করে হবে?

দরজা খুলে দিয়ে রিনিকে বসতে বলে ফোন অন করলো। ডিসপ্লেতে মাত্র ৬টা ৩৫। ঘুমের জন্য ভুল দেখছে কিনা তাই চোখ কচলে আবার দেখলো নাহ ঠিকই দেখেছে।দিহান তেড়ে রিনির দিকে গেলো রিনির কুটিকুটি হাসির শব্দে থেমে গেলো।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। রিনিও কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠেছে তাই তার চোখ মুখ কিছুটা ফোলা আর এটা দেখলে দিহানের সব রাগ শীতল হয়ে যায়।তবুও গম্ভীর মুখে বললো

— এমন দুষ্টমি আর করবে না রিনি।আমি অনেক রাতে ঘুমাইছি।

— আপনি দরজা খুলছিলেন না আমি কি করবো?

— তোমার পড়া ৭ টায় রিনি আর তুমি সব সময় তার আগেই এসে আমার দরজায় হামলে পরো।বাই দা ওয়ে আংকেল, আন্টি গেছে?

— হুম তাই তো এলাম।

দিহান বিছানার দিকে যেতে যেতে বললো
— তুমি এমনিও আসতে রিনি।আমি আরও আধা ঘন্টা ঘুমাতে চাই।একদম ডিস্টার্ব করবে না।

রিনি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো

— আততা

— আচ্ছা নাকি আততা দেখাই যাবে।

দিহান আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।দিহানের ঘুম গভীর হয়েছে মনে করে রিনি দিহানের পেটের কাছে বসে পরে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দিহানের মুখের দিকে। দিহান হঠাৎ চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠে,

— রিনি এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার ঘুমাতে অসুবিধা হয়।

রিনি চমকে ওঠে

— আপনি না ঘুমাইছেন?

দিহান চোখ না খুলেই কথা বলতে থাকে,
— পারলাম আর কই তুমি টুনির মতো শরীর নিয়ে হাতির মতো আমার পাশে বসেছো। ঘুম ছুটে গেছে আমার।চেয়ারে বসো পড়া না পারলে মাইর আছে কিন্তু যাও

— আমিও ঘুমাবো দিহান ভাই।ঘুম হয় নি আমারও।

— বাসায় যাও আর টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো।

রিনি মনে মনে বললো,দিহান ভাই আপনার কষ্টের ভাগ বসাতে আমিও তো রাত করে পড়ি।আপনার রুমের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। তাতেই তৃপ্তি তে মন ভরে যায়।এক রাশ সুখ সুখ অনুভব করি। আপনি কি বুঝেন না?

মুখে বললো

— আমি আপনার কাছে ঘুমাবো।

— আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে রিনি মাথাটাও ধরেছে।তুমি এমন করো না। যাও

রিনির কন্ঠে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পেল,

— সেকি কখন থেকে। ঔষধ এনে দি?

— লাগবে না ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।

— তাহলে মাথা টিপে দি?

— ছাড়বে না না?

— নাহ

— আচ্ছা দাও

রিনি চট করে দিহানের মাথার নিচ থেকে বালিশটা টেনে নিলো।

দিহান এবার উঠে বসে বললো

— হচ্ছে কি জ্বালাচ্ছো কেন?

রিনি চট করে দিহানের মাথার কাছে পা সোজা করে বসে দিহানের দিকে অসহায় চাহনি দিলো যার মানে” রাগ করবেন না দিহান ভাই আমার পায়ে মাথা দিয়ে সুয়ে পরুন।আমি এভাবে মাথা টিপে দেব”

দিহান কিছু বললো না।সে রিনির ইচ্ছা অনুযায়ীই কাজ করলো।রিনির খুশি দেখে কে!!!!!
বাচ্চা বয়সে আবেগ অনুভূতিগুলো একটুতেই খুব বেশিই সক্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ অনুভূতিগুলোকে বাধা দেয়ার মতো উপযুক্ত বুঝ ব্যবস্থাগুলো তখন নিষ্ক্রিয়। রিনির ক্ষেত্রেও ভিন্ন না।দিহানের মেজাজবিহীণ নিরব থাকাটাই তার কাছে অনেক।কিন্তু এটা যে মাথা ব্যাথার জন্য তা একবার ও মনে হলো না তার কাছে।রিনি আস্তে আস্তে করে মাথা টিপে দিতে শুরু করে।

__________

দিহান যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন নিজেকে কালো কালো এক ঝাক সুতার মধ্যে আবিষ্কার করে।পরক্ষণেই বুঝে যায় নাহ এটা সুতা না রিনির এক ঝাক চুল তার মুখের উপর আছড়ে পরে আছে। আর রিনি পরম শান্তিতে দিহানের কপালের উপর গাল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।কি নিষ্পাপ ছোট্ট মুখ খানা।দিহান আর ভাবতে পারলো না। দুই হাতে আস্তে করে রিনির মুখ টা ধরে নিজে উঠে বসে। রিনিকে বালিশে সুইয়ে দেয়।মুখের সামনের অবাধ্য চুল গলো টেনে সরিয়ে দেয়।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁট টা স্লাইড করে দেয় সেদিনের কথা মনে করে।মেয়েটা সেদিন বুঝলোই না সে ঠোঁটে চুমু খেয়েছে।ভাবতেই মুচকি হেসে উঠে গেলো।

সকাল দশটা বারো।দিহান রিনিকে অনবরত হুমকি দিয়ে চলছে ” রিনি নামো নইলে পা টেনে বিছানা দিয়ে ফেলে দেব”, “রিনি ওঠো নয়তো গায়ে পানি ঢেলে দেবো”

নাহ কাজ হচ্ছে না।রিনি ওমওম শব্দ করে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছে।

দিহান স্টিলের স্কেল টা এনে রিনির পায়ের পাতায় ঠাস করে একটা বারি দিতেই রিনি উঠে বসে ঘর কাপিয়ে চিৎকার দিলো” এই কে রে আমার ঘুমে ডিস্টার্ব করিস।আজ মেরেই ফেলবো দাড়া”

বলার বার নেই সে চোখ বন্ধ অবস্থায় লাথি ছুড়ে মারলো আর সেটা দিহানের পায়ে লেগেছে।দিহান ভাবতেই পারে নি এমন কিছু হবে।

দিহানের চিৎকারে রিনি চোখ খোলে।নিজের কর্মে নিজেই সকড।সে কিনা শেষ পর্যন্ত দিহান ভাইকে লাথি মারলো?

দিহান কাতর কন্ঠে বললো,
— রিনি রে লাথি মেরেছো নাকি বাঁশ দিয়ে বারি মেরেছো বুঝতে পারছি না।ওটা পা ছিলো নাকি বাঁশ ছিলো?যাই হোক আমাকে মেরেছো মেরেছো অন্য কাউকে মেরো না।ঘুমের মধ্যে তোমার গায়ে দানব ভর করে আমি সিওর।

রিনি একেবারে চুপসে গেছে নিজের কাজে।নিজেকে বকেও দিলো।

— সরি দিহান ভাই।

— থাক হয়েছে।যাও রিনি।খেয়ে নাও গিয়ে। আমি খেয়ে নিয়েছি।দাদি কে বলেছি তুমি পড়ছো তোমার এক্সাম তাই।বেচারা চিন্তা করছে।তুমি যাও তাড়াতাড়ি। আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে তোমাদের বাসায় সিফট করে নিবো কিছুক্ষণ বাদেই। যাও।

— আচ্ছাহ

— তোমার জামাইর জন্য আফসোস হচ্ছে।

রিনি যেতে নিয়েও থেমে গেলো
— কেন?

— সে সারাজীবন এই লাথি সহ্য করবে কিভাবে?

রিনি কোনো উত্তর না দিয়ে কান চেপে চলে গেলো।এগুলো তার কাছে ঘোর অপমানজনক কথা।

__________

দিহান রেডি হচ্ছে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ঠিক তখনই দরজায় রিনি ঠেস দিয়ে দাড়ালো। দিহান রিনির দিকে না তাকিয়েই বললো

— কিছু লাগবে?

— আমি যাবো আপনার সাথে।

দিহান রিনির দিকে তাকিয়ে বলে

— যাবো মানে? কই যাবা?

— আপনার ভার্সিটি।

— না না একদম হচ্ছে না।বই নিয়ে এসো পড়া দাগাই দিচ্ছি। বাসায় এসেই পড়া নেবো সব।

— দিহান ভাই আমি যাবোই যাবো।তুমি নিবেন না আমাকে? ও দিহান ভাই!!!

দিহানের হাসি পেল।এই মেয়েটা দিন দিন বাদরের হাড্ডি হচ্ছে।

— দাদির সাথে কে থাকবে?

— আরে দাদি টের ই পাবে না।দাদির রুমে তার প্রয়োজনীয় সব রাখা থাকে হাতের কাছে।একা একাই তো থাকেন উনি।দুপুরের খাবার টা সামনে দিয়ে যদি বলি স্কুলে ক্লাস আছে দরকারি। তাহলে চিন্তা নেই।

— বিশ্বাস করবে? তোমায় মেরেও তো সপ্তাহে চার দিনও স্কুলে পাঠানো যায় না ।

— আরে বুড়ো মানুষ এতো খেয়াল করে নাকি।।

দিহান হাসলো।

–আচ্ছা রেডি হিয়ে এসো।আর হুম মাথায় কাপড় দেবে আর।আর ওড়না সেইভটি পিন দিয়ে আটকাবে ভালোভাবে আটকাবে।এলো মেলো বাতাসে যেনো….. ( রিনি বুঝতে পারলো কি বুঝাইছে দিহান)
একদম রেখে চলে যাবো তাহলে খুজেও পাবে না।

____________

দিহান রিনি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— তোমাকে নিয়ে বাসে উঠলে মুশকিলে পরবো।সুন্দরী নারী নিয়ে সাবধানে থাকতে হয়।

— আমি সুন্দর?(এক গাল হেসে)

— না সাদা পেন্তি টাইপ একটা ভুত্নি।

— দিহান ভাই ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। আমি পেত্নি টাইপ সাদা না।আমি মানান সই।

— কিসের মানানসই? ফরসাকে মানানসই বলে না।স্বাস্থ্যও থাকা চাই।বাতাস আসলেই তো উড়ে যাবা।আজ থেকে বেশি বেশি খাবা কেমন?

রিনির মাথায় সেট হয়ে গেলো তাকে খেতে হবে আর একটু মোটা হতে হবে। দিহান ভাই বলছে মানে তাকে মোটা হতেই হবে।

–ওই মামা দাড়ান।ঢাবি তে যাবো।

রিকশায় উঠতেই রিনি প্রাণপণে চেষ্টা করলো রিকশার হুড টা তুলে দিতে। কিন্তু দিহানের জন্য সফল হতে পারছে না।

— রিনি কি অবস্থা হুড টেনে দিলে জায়গা কমে যাবে বোঝো না?

— জায়গা লাগবে কিসে?আমি তো চাই না জায়গা থাকুক।

— তুমি তো পাগল। কিন্তু আমি হুড টানছি না ব্যাস।

— চুমু দিয়ে দিবো কিন্তু

রিনি সত্যিই আগাতে নিলে দিহান হুড টেনে দেয়।

— খুশি?

— অনেক বলেই দিহানের হাত টা জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখলো

দিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

— বড় হবা কবে রিনি?এগুলো ঠিক না বোঝো না কেন তুমি?

— বিয়ে করলে বড় হবো

— বিয়ে করলে বড় হবা কেন?তার আগে হলে কি হবে?

— তখন আপনি ছুয়ে দিবেন তাই বড় হবো।শুনেছি তাহলেই বড় হয়ে যায়।তারপর স্বামীর দায়িত্ব আসে,রান্না করতে হয়,বাচ্চা সামলাতে হয়। বড় না হয়ে যাবো কই বলেন।

রিনির কথায় ঝটকা লাগলো দিহানের।নিজেরই আফসোস লাগছে কেন কথা বাড়ায় এই মেয়ের সাথে?

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে আসতেই তিন্নি, সাগর,মিলন এগিয়ে এলো।
তিন্নি আগ বাড়িয়ে বললো

— কে এই কিউটিপাইটা দিহান

দিহান কিছু বলার আগেই রিনি বললো
— আমি দিহান ভাইর জিএফ। আপনি কে আমার দিহান ভাইর সাথে কথা বলেন কেন?

রিনির কথায় সবাই অবাক।সে কতটা বাচ্চাসুলভ আর দিহানকে নিয়ে কতটা সিরিয়াস তা বোঝা যাচ্ছে।

— রিনি ওর নাম তিন্নি। ও তোমার বড় আপু হয়।সুন্দর ভাবে কথা বলতে হয় বড়দের সাথে

— আপনাকে পছন্দ করে নাকি?

দিহান পরলো মুসিবতে।

সাগর বলে ওঠে

— শালা তোর জিএফ আছে আগে বলিস নি কেন?তলে তলে টেম্পু চালাও আর সামনে বলো হরতাল?

— ধুর নাহ।পরে বুঝিয়ে বলবো ।এর সামনে বুঝানো যাবে না মাথা খারাপ একটা।

— কেন কেন?ওর সামনেই বলবি।আমার তো পিচ্চিটাকে দারুন লেগেছে সমস্যা কই তোর?(তিন্নি)

— তুই থামবি?

— তুই থাম।রিনি এদিকে আসো তো। দিহান ভাই তোমার সাথে কি কি করে আমাদের সাথে শেয়ার করে ফেলো?আমরা শুনবো

— আপনি দিহান ভাইকে নিয়ে উৎসাহিত কেন?আপনি দিহান ভাইকে পছন্দ করেন তাই না? আমি শুনেছি যে যাকে পছন্দ করে তাকে নিয়েই তার উৎসাহ থাকে।

দিহান কপাল চাপড়ালো।হাত দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দিলো ” স্কু ঢিলা কিছু মনে করিস না”

তিন্নি একচোট হাসলো।এই যে দেখছো সাগর নামের ছাগল টাইপ ছেলেটা।এইটা আমার বিএফ।আমি কেন তোমার দিহান ভাইয়ের দিকে তাকাবো? হুম? তা দিহান ভাইকে নিয়ে এত ভয় কেন?

রিনি মুখ ছোট করে বললো
— আসলে দিহান ভাই আমাকে ভালোবাসতে চায় না।সব সময় এড়িয়ে যায়।আমার বার বার মনে হয় অন্য কোনো মেয়ের খপ্পরে পরেছে কিনা!! তাই এতো ভয়।

দিহান ভুলেও ভাবে নি রিনি এমন ভাবতে পারে।

— আচ্ছা আমি তোমার দিহান ভাইকে বলে দেব যাতে অন্য মেয়ের খপ্পরে না পরে। আর অন্য কোনো মেয়ের খপ্পরে পরলেও সাথে সাথে তোমাকে জানিয়ে দেব কেম?

রিনির মুখ হাসিতে ভরে গেলো

— আপু আপনার নাম্বারটা বলেন।

সবাই হেসে ফেললো।রিনির দিহানের জন্য কতোটা পাগল তা বুঝতে বাকি রইলো না কিন্তু নিতান্তই একটা বাচ্চা।

সাগর মিলন দিহানকে টেনে দূরে নিয়ে গেলো।

— কি হইছে রে। প্রেম করো না কিন্তু সাথে নিয়া ঘোরো মানে কি?তুই যে বাসায় থাকো সেই মেয়েটা না?(সাগর)

–হুম

— প্রেম করবি না সাথে আনছো কেন?(সাগর)

— ওরে চেন তুই? ছাড়তো না আমারে।সে আসবে তো আসবেই।এমন পাগল আমি দেখি নাই ভাই।

— রাজি হও না কেন? মেয়ে সুন্দর তো নিজের মতো করে গড়তে পারবি( মিলন)

— নিজের মতোই গড়তেছি শুধু বুঝতে দি না।আজ যত টুকু ভদ্র দেখো তা আমার জন্য।আজ খেতে বলছি যে স্বাস্থ্য ভালো হওয়া চাই। ওরে দুই মাস পরে দেখাবো।তাহলে বুঝবি আমার কথা কেমন মানে।আমি যা বলবো তাই করবে নড়চর খুব কমই হয়।

— মানে কি দাড়ায় তাহলে হ্যা? ভালোবাসিস বলিস না ক্যান?

— ওদের ফ্যামিলি আমাদের ফ্যামিলির সাথে মিলে না ভাই। ওর বাবা আমার বাবাকে না বুঝালে আমি দোকানদারি করতাম আজ।আর তার মেয়েরই সুযোগ নেব? এতটা অকৃতজ্ঞ নই আমি।

— ভালোবাসিস ওকে?( সাগর)

— বাল বাদ দে চল।দ্যাখ তাকায় আছে। বাসায় গেলেই ধরবে কি বলছো তোরা তাই জন্য। আমারে ছাড়।

— আরে মিয়া উত্তর দে তারপর ছাড়বো।আর তার আগে ছাড়াছাড়ি নাই।ভালো না বাসলে নিজের মতো কেন গড়িস?

— জানি নাহ

— বলবি কিনা

— বাসি তো?

সাগর মিলন হেসে হাত মিলায়।

— তাহলে প্রবলেম কই ব্যাটা। মেয়ে ছোট এখনও।ওর বিয়ার বয়স হইতে হইতে তুই নিজেরে সেটেল করতে পারবি। শুধু কষ্ট ক্যান দিবি মেয়েটারে রাজি হয়ে যা ?

— তবুও কখন কি হয় বলা যায় না।আমি ওরে আশা দিতে চাই না দোস্ত। আবেগ ভরা একটা মেয়ে সামলাতে পারবে না খারাপ কিছু হলে।তার থেকে আশা না দেয়াই ভালো।ও যেমন আছে ভালো আছে।নিজের লাইফ ইনজয় করতেছে।

— ওরে ফিরাইয়া দাও বইলা কষ্ট পায় না?

— পায়।কিন্তু ওর মাথায় এতো শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করে যে কষ্ট পেয়ে আমার উপরই ঝাল মিটায় তারপর মন ভালো হইলে ছাড়ে।প্রেম করি না তাতে যে পাগলামি করে প্রেম করলে তো….
আমি ভাবতে পারি না ভাই।বলিস নাহ।

— তুই মামা গেছো।

দিহান হাসলো।রিনির দিকে তাকালো আবার হাসলো।কিন্তু হাসি টা মুখে স্থায়ী করতে পারলো না।
বাস্তবতা কি সবার জীবনে সহায় হয়?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here