নিশীথচিত্র পর্ব ৪৪+৪৫

‘নিশীথচিত্র'(৪৪)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

তনয়কে ফোন দিয়ে হু হু করে কেদে উঠলো দীপ্তি।ফোন রিসিভ করে তনয় বোকা বনে গেলো।আজ তো রিনির আসার কথা হাসি খুশি থাকার কথা এভাবে কান্না কেন করছে!

–” দীপ্তি কুল।হোয়াই আর ইউ ক্রাইং?প্লিজ স্টপ। শুনতে পারছি না আমি তোমার কান্না।ফোন কেটে দেবো কিন্তু।”

ক্রন্দনরত কণ্ঠে দীপ্তি বললো
–“প্লিজ কাটবেন না।”

–“তাহলে কি হয়েছে বলো।”

–“কিছু না।আপনার কাছে একটু কাঁদতে মন চাইলো।”

তনয়ের শক্ত কণ্ঠ।

–“দীপ্তি, তুমি আমার চোখের সামনে বড় হয়েছো।সো এসব লুকোচুরি আমার সাথে করো না।বলো ফাস্ট ফাস্ট।”

দীপ্তি আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।আজকের ঘটনা খুলে বললো তনয়কে।রাগে তনয়ের হাত কাপছে।রাগের কন্ট্রোল কোনো জীবনেই তার ছিলোনা।অধিক ধৈর্য্যশীলও না সে।চেচিয়ে বলে উঠলো

–“অশিক্ষিত বেয়াদব ন্যারো মাইন্ডের মহিলার কথায় তুমি কাদছো?দিহান কিছু বলে আসতে পারলো না?আমি হলে মুখটা ভেঙে দিয়ে আসতাম।”

দীপ্তি নিশ্চুপ কাদতে লাগলো।তনয় নিজেকে শান্ত করে বললো

–“কেদো না।রিনিকে নিয়ে আসতে চাইলেও তো দিতো না।দিহানের অবস্থা কি?”

–“ভাইয়া মাকে জড়িয়ে ধরে আছে সেই থেকে।কাদছেও না কিছু বলছেও না।ওর নিজের কাজে ওর খুব বেশি অপরাধবোধ ছিলো।বাবা মা তুলে কথা বললো সব মিলিয়ে…”

–“আমি ওর সাথে কথা বলবো।রাখো তুমি ফ্রেশ হও।ওদের বিয়ে হয়েছে চিন্তা নেই লাগলে আবার হবে।রিনি ঠিক থাকলে সব ঠিক করা সম্ভব।”

___________

ফোন চেক করে দেখে রিনির দশটা মিসড কল।মাথা বিগড়ে আছে। শান্ত করতে হবে, ভাবতে হবে।তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ। তারাহুরো করা যাবে না।তখনই ফোনটা বেজে ওঠে।ফোনের দিকে তাকালে দেখতে পায় তনয়ের কল।ছোট্ট একটা নিশ্বাস ত্যাগ করে ফোন রিসিভ করে।

তনয়ের প্রথম কথাই
–“এখন কি করবি?”
–“জানি নাহ মাথায় আসছে না কিছু।”
–“ছেড়ে তো দেয়া যাবে না।”
–“ছাড়ার কথা আমি ভাবিও না।ভদ্রতা দেখাতে হবে।তাতে না মানলে অভদ্র হতে হবে। এছাড়া আর হিসাব নিকাশ পাচ্ছি না।”
–“মহিলা চরম ন্যারো মাইন্ডের। ভদ্রতার দরকার ই নেই।”
দিহান চুপ করে থাকে। তনয় ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।বলে,
–“তোর দাড়া ভুলটা কিভাবে হলো বুঝতে পারছি না আমি।তুই এমনিতেই ইন্ট্রোভার্ট।একা একা নিজেকে দোষারোপ করিস সব বুঝি। কিন্তু হলো কিভাবে মাথায় আসে না আমার।”তনয় থেমে আবার বললো “তুই আমার কথা নেগেটিভ নিবি না কিন্তু।আমাদের বয়স হয়েছে আমরা ম্যাচিউর। আর এসব খুবই স্বাভাবিক। আমায় খুলে বলতে পারিস।”

–“না নিচ্ছি না।প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। তাছাড়াও আমার বোনের সাথে তোর জীবনটা জড়িয়ে আছে।আল্লাহ চাইলে ভবিষ্যতটাও।আমার বোনের উপর আর কোনো ইম্প্যাক্ট পরুক আমিও তা চাচ্ছি না।”

দিহান তনয়কে সব কিছু খুলে বুঝিয়ে বলে।সব শুনে তনয় বলে
–“মেয়েটা পাগলাটে তবে খুবই ভালো মনের দিক থেকে।পারসোনালি আমার মনে হয়।এমন মেয়ে দেখা যায় না ।তবে যদি আর একটু বড় হতো বা তোদের প্রেমের সম্পর্ক থাকতো তোদের তাহলে এসব সমস্যা হতো না।সব কিছু সহজও হতো।”

–“যা নেই তা নিয়ে তো আফসোস করতে চাচ্ছি না আপাতত। কি করতে হবে সেটাই ভাবছি। ভেবে ফেলেছি অলরেডি।তোর হেল্প লাগবে।”

তনয়কে সব বুঝিয়ে বললো দিহান।
–“আচ্ছা বুঝলাম।রাখছি”

–“হু।”

ফোন কেটে দিহান গোসলে ঢোকে।শাওয়ারের নিচে শান্ত হয়ে বসে থাকে।নিজের পুরো জীবনের দিকে একবার চোখ বুলায়।জীবনের হিসাব নিকাশ করা উচিত বলে মনে করে সে।কি করলাম, কি পারলাম, কি পেলাম, কি দিলাম, কি অর্জন, কি প্রতিদান এসব ভাবা উচিত।তবে জীবনের সব থেকে সারপ্রাইজিং বিষয়টা হচ্ছে রিনি।যে কিনা আনমনে হাসতে শিখিয়েছে দিহানকে।শক্ত দিহানকে জীবনের হাল আরও শক্ত করে ধরতে শিখিয়েছে প্রত্যেকটা মুহুর্তে। রিনির কথা ভাবতেই জীবনে আরও সংগ্রামী হয়ে উঠতো দিহান।মানুষটাকে ছাড়া সব চিন্তা ভাবনা অচল।তাকে প্রয়োজন তার হাত ধরা প্রয়োজন। শক্ত করে।
দিহান অতি জলদি বাথরুম থেকে বের হয়।ট্রাউজার আর টি-শার্ট গায়ে পরে রিনির নাম্বারে কল দেয়।রেস্পন্স পাওয়া যায় না।আবার ফোন দেয়। নো রেস্পন্স। ৩য় বারে ফোন রিসিভ হয়।

-“বউ।”

আবেশে রিনির চোখ বুজে আসে।রিনির হৃদযন্ত্র প্রশান্ত হয়। হু হু করে কেদে ওঠে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।

–“বউ।”দিহান আবার ডাকে।
–“কেন নিয়ে গেলেন না?কেন ফেলে গেলেন?”রিনির কম্পিত কণ্ঠে একরাশ অভিমান।
–“বউ নিয়ে আসতে চাইলেই কি আসতে দিতো?হুট হাট করে কাজ করা কি ঠিক?আমি আসছি কিছুক্ষণ পরে।তুমি চিন্তা করো না।”

রিনু গলা ছেড়ে কেদে ওঠে
–“তুমি একবার বলেন দিহান ভাই।আমি আর পারছি না।”
–“ধৈর্য্যচ্যূত কিছুতেই হবে না আমার রিনি।এটা আমার বিশ্বাস।তবে আমার নিনিপাখি এখনই খাবে। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। আমাদের বাবুটার ক্ষুধা লেগেছে না? যাও খাও।”

দিহান ফোন কেটে দেয়।রিনির কান্না শোনার ধৈর্য্য আল্লাহ তাকে দেয় নি।রিনি ফোন রেখে আবার কান্নায় ভেঙে পরে।পরক্ষণেই মনে হয় “আসলেই তো তার বাবুটা কেন বাজে ব্যাপার গুলোর ভুক্তভোগী হবে?” সে দ্রুত খেতে চলে যায়।

হাফসা মলিন মুখে দরজার সামনে দাড়ায়।ছেলেকে পরখ করে নেয়। চেয়ারে বসে মাথা হেলিয়ে দিয়েছে। কপাল আর চোখের উপর বাম হাতের বিস্তার।

–“দিহান খেতে আয়।”

দিহান চকিতে বলে
–“ক্ষুধা লাগে নি আম্মা।তুমি যাও আব্বাকে খেতে দাও। দীপ্তিকে ডেকে তুমি খাও।”

হাফসার কান্না পায় ভীষণ। নরম মনের মানুষ সে।এতো জটিলতা মানতে পারছে না।

–“তোদের কাউকে খেতে হবে।সব শুনে তোর আব্বা কথা বলছে না।দীপ্তি রুমের দরজা আটকে আছে।তুই ,সেও বলছিস খাবি না।তার থেকে বরং আমাকে মেরে ফেল।তারপর যা ইচ্ছা করিস তোরা।আমি আর পারছি না।”

–“এতো চিন্তা করার মতো কিচ্ছু হয় নাই আম্মা।যাও খাবার রেডি করো।আসছি আমি সবাইকে নিয়ে।”

দুপুরের পরে দিহান ঘর থেকে বের হবার সময় হাফসা পেছন থেকে ব্যথিত কণ্ঠে বলে
–“আবার যদি অপমান করে?”
দিহান ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে
–“আম্মা তোমার বউটা কাদতেছে খুব।”
রেহানা নিজেই বললো
–“যা তাড়াতাড়ি যা। ”

____________

থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে প্রত্যেকটা মানুষ। রেহানা বিরবির করে হয়তো এখনো ছোট লোক বলছে।ঠোঁটের নাচন দেখে দিহানের এমনটাই মনে হচ্ছে।মুনিনের গম্ভীর চিত্ত।বয়স্ক দাদিও বসে আছে ছেলে বউয়ের মুখপানে।দিহান মূলত দাদির কাছে এসেছিলো।তার ছেলে বউকে সে বুঝিয়ে বললেও কিছু হতে পারে।বয়স্ক মানুষ নিজের সবটা দিয়ে বুঝিয়েছে ছেলে বউকে।পরিস্থিতি তাই ই থমথমে।

রেহানা মুখ খুললো
–“আম্মা যাই ই মনে করেন আমার কিছু আসে যায় না তাতে।মেয়েকে আমি তাজিমের সাথেই বিয়ে দেবো।ওরা কাল আসছেও।বেয়াইনের সাথে কথা ফাইনাল।”

রাগে দিহানের চোখ মুখ লেলিহান হয়ে গেলো।

–“তালাকই অয় নাই বউমা।তবুও তুমি নাতিরে বিয়া দিবার কথা কেমনে কউ?আল্লাহ ছাড়বে?”

রেহানা দ্বিগুণ গর্জে ওঠে
–“আল্লাহ এই ছোটলোকটারে ছাড়বে না আম্মা।ধোকা দিয়েছে আমাদের।এই বিয়েই হয় নাই।মানি না।আর যদি লাগেই তাহলে ছয় মাস পর ডিভোর্স লেটার পাঠাবো।তবু মেয়ে দেবো না।”

মুনিরও বলে
–“আম্মা আপনার বয়স হয়েছে এসব নিয়ে কথা বোলেন না।আমরা আমাদের মেয়ের জন্য ভালো ডিসিশনই নিয়েছি।সুখে সাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে।বেয়াইনের সাথে পাকা কথা বলা।আমার সময় নেই আমি উঠলাম।”

রেহানা বললো
–“আর আম্মা এই ছোটলোকের দেয়া বাচ্চা রিনি পেটে ধারণ করছে ভালো। কিন্তু দুনিয়ার মুখ দেখতে পারবে না।আমি বলে দিলাম।”

মুনির হোসেন ওঠে দাড়ায়।দিহান চোখ বন্ধ করে সবটা হজম করে।নিজেকে শান্ত করে। ধৈর্য্য বাড়ানোর চেষ্টা করে।চোখ খুলে দাদির মুখের দিকে তাকায়।বয়স্ক দাদি দিহানের দিকে অসহায় নিরাশ চোখে তাকিয়ে আছে। তার অপারগতা তার চেহারায়।চোখ মুখ বলছে” মাফ করে দিস আমি পারলাম না দাদু।”বয়সের সাথে সাথে মানুষের মূল্যায়ন কতটা কমে যায় ।দিহান ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে। পুরো উদ্যোমে বলে

–“আন্টি আমি ভালো ভাবে বলছি।এক রিনিকে আমার সাথে দেন।আমি স্বসম্মানে রাখবো।নিজেকে আপনাদের ফ্যামিলির উপযুক্ত করবো। বা যতদিন না পারছি ততদিন রিনিকে আপনাদের কাছে রেখে দিয়েন লাগলে।আমি যদি আপনাদের উপযুক্ত না হতে পারি তখন আমি নিজে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।আর আমার সন্তানটা যদি পথের কাটা হয় আপনাদের তাহলে ওর জন্মের পর আমার কাছে দিয়ে দিয়েন।আমার কাছে বড় হবে ও।আপনাদের জটিল ঝামেলাটাকে সহজ করে দিলাম।যতদিন না উপযুক্ত হবো দরকার পরলে ততদিন আমি আপনাদের কি হই রিনির কি হই এই পরিচয়ের অধিকার নিয়েও সামনে দাড়াবো না।তবুও আমার বউ বাচ্চাকে সুরক্ষিত থাকতে দিন।”

দিহানের কণ্ঠ কাপছে।লাগাতার কথা গুলো বলে রেহানা মুনিরের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো।রেহানা মুনির নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।

পরক্ষণেই রেহানা বললো
–“শোনো ছেলে, ভালো ভাবে বলো আর খারাপ ভাবে বলো আমরা ভয় পাই না।যে যা সে তা ই থাকে।কয়টা টাকা ইনকাম করলে আমাদের উপযুক্ত হবা ভাবলা কেমনে?অপবিত্র নষ্ট সন্তানের আবার সুরক্ষা চাচ্ছে।”রেহানার ক্ণঠে চরম তাচ্ছিল্য রসিকতা।”রিমির আব্বু এই ধূর্ত ছেলের কথা একদম শুনো না।”

রেহানা আবার বললো
–“বের হয়ে যাও দিহান।দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলো রিমির বাবা।তুমি সেখানে ঘাড়ে বসেছো।এখন চাচ্ছো মাথায় বসতে।আমি থাকতে কিছুতেই তা হবে না।যাও বলছি যাও।”

দিহান আবারও চোখ বন্ধ করে সবটা হজম করলো।বিবাহের কাগজ পত্র অক্ষত থাকলেও কিছু করা যেতো।মুনির রেহানার বিয়েতে স্বাক্ষর আছে সেটা দেখালেও হতো।সম্মতিতে মেয়ে দিয়ে এখন এমন করছে।এটা বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতো।সব কিছুতেই নিরুপায় দিহান।আইনি ব্যবস্থা। লেইম ওয়ার্ড লাগছে।যেটা স্বাভাবিক জীবন হতে পারে সেখানে আইনি ব্যবস্থা।চিন্তা ভাবনার মধ্যে রেহানার চড়া কণ্ঠ আবার শোনা গেলো

–“যাচ্ছো না কিসের আশায়? ছোটলোকদের মতোই নির্লজ্জ বেহায়া দেখছি।”

হুট করে রাগের বসবর্তী দিহানের মাথায় একটা কথা এলো”এই মহিলাকে খুন করতে পারতাম।”পরক্ষণেই নিজেই প্রবোধ করে নিজেকে।হনহন করে হেটে বেড়িয়ে যায়।দরজার বাইরে কয় পা দিয়ে থেমে যায়।দরজার বাইরে দেয়ালের সাথেই কারো উপস্থিতি। পেছন তাকিয়ে দেখে রিনির অঝোরে অশ্রুপাত ভরা মুখ।আড়ালে এনে দুই কপোলে চুমু খায় দিহান। আস্তে করে বলে

–“খেয়েছো তো?”

রিনি মাথা দোলায়।সে খেয়েছে।

–“ভয় পেও না।ফোন অন রেখো।নিজের কাছে রেখো। আর হ্যা সাইলেন্ট রেখো। তবে যখন তখন ফোন দিতে পারি একটু সজাগও থেকো।আসছি। ”

–“আসবেন তো?”

–“রিনি তোমার নাকের পাতা কাপছে দেখো।”

দিহানের মেকি হাসি নিয়ে বলা কথায় রিনি নিজের নাকের দিকে তাকায়।সামনে তাকিয়ে দেখে দিহান হেটে চলে যাচ্ছে।রিনি নিষ্পলক দিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

____________

শাহানারা বেগম আসরের নামাজ আদায় করেই পান মুখে পুরেছে । চেয়ারে বসে দুই পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে হরেক রকমের চিন্তা মাথায় পাকাচ্ছে।মনে মনে নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির তারিফ করছে।তার মাথায় এখন তুমুল জনপ্রিয় চিন্তা হচ্ছে রিনির সাথে ছেলের বিয়ে দেয়া। বিয়ে হলেই বউকে বিয়ে ছেলেকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেবে।ঢাকা দিয়ে দূরে কোথাও কিছু দিন সেখানে থেকে বাচ্চাটাকে জন্ম নিলেই রাস্তায় ফেলে দিবে নয়তো মেরে দেবে।এটা কোনো বিষয় না।আজকাল এগুলো হাতের ময়লা।মূলে হলো তার দুই ছেলেই হবে রিনির বাবার সমস্ত সম্পত্তির মালিক।গড়ে পরতায় সবই তার থাকলো।আর লাভবানও সেই হলো।এতো লাভে ওতো টুকু ত্রুটি বাদ দেয়াই যায় ।শাহানারা বিরবির করে বললো

–“ভাগ্যিস সেদিন ফোন দেছিলাম।নইলে তো রিনি ছেড়ির বিয়া অন্য ছেমড়ার সাথে দিয়া দেতো।কি যেন বলছেলো ওহ হ্যা বান্ধবীর বুইনের ছোয়ালের সাথে বিয়ের কথা চালান দিছিলো বেয়াইন।ভাগ্য, গুটি এখন আমার ঘরে।”

নিশব্দে হাসলো শাহানারা।শয়তানি হাসি যাকে বলে। পরক্ষণেই চেচিয়ে বললো

–“বউমা দ্যাখো তো দরজায় কেডায়?তাজিম আইছে বুঝি।দরজা খোলো।”

চলবে,
‘নিশীথচিত্র'(৪৫)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

জীবনে কান্নার কারণ অনেক কিছুই হতে পারে কিন্তু একটা শুদ্ধ হাসির কারণ যখন একটা নির্দিষ্ট মানুষকে ঘিরে তখনই নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে।কারণ হাসিটা জীবনের অনেক মূল্যবান অংশ।ভালো থাকতে শুদ্ধ হাসি হাসতেই হবে।শুদ্ধ হাসি হাসতে পারলে খারাপ সময়টা জীবন থেকে আপন ইচ্ছায় পালিয়ে যাবে।তাই দরকার লোক দেখানো হাসি নয় শুদ্ধ হাসি।বিছানায় আধ শোয়া হয়ে শুক্ত ওষ্ঠে শূন্যে তাকিয়ে আছে রিনি।হাসিটা খুব প্রয়োজন তার।এতো কষ্ট পেতে অতিষ্ট লাগছে। খেতে গেলে গা গুলিয়ে আসছে। হাত পা মোটামুটি ব্যাথা।আরও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।নিজে সে সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না কিছু।এসব সম্পর্কে জ্ঞান নেই তার।এই সময় পাশে থাকে নিজের মা।আর সেই তো সকাল বিকাল অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে। একবার এই ঘরের বাইরে পা দিতে পারলে হয়।একবারের জন্যও পাষাণ, নিচু মনের মানুষগুলোর দিকে ফিরে তাকাবে না সে।বাবা মায়ের অযুহাতেও এই মানুষগুলোর দিকে ফিরে তাকানো উচিত না।রিনির মুখে এক দলা থু থু এলো।বেসিনে গিয়ে দাড়াতেই বমিও হলো।আজকাল পেটের ওজনটা বাড়ছে।নাক মুখে পানি ছিটিয়ে মন স্থির করলো দিহান ভাই যা বলেছে মনোযোগ দিয়ে করতে হবে।বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।চকিতে নিজেকে শক্ত করে খেতে চলে গেলো।

__________

–“আব্বা মাইয়াডা পোয়াতি।ছোট্ট মাইয়া সর্বনাশের কি বোঝে?তুমি তারে বিয়া করবা না?
তাজিম সাবলীল ভাবেই বললো
–“করবো না কেন আম্মা?রিনির বিষয় আমি খুবই পসিটিভ। আমি অবশ্যই বিয়ে করবো।
–“আমার মাথার কীড়া দাও।যে যাই বলুক তুমি বিয়া করবাই।”
–“আম্মা কীড়া কান্ডের কি মানে আছে?রিনি পছন্দ করার মতোই মেয়ে।”
–“তবুও পোলা মানুষ আমি বুঝি। আমার মাথায় হাত দিয়া কথা দাও।”
–“আচ্ছা করবো বিয়ে।অসহায় অবস্থায় পাশে না দাড়ালে কেমন শুভাকাঙ্ক্ষী হলাম আমরা?”
–“হ্যা তাই তো।তাইলে রেডি হও আব্বা।কাল সকালেই যাবো।”

পরের দিন সকালের প্রথম প্রহরে বেড়িয়ে পরে সবাই।যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো ।
এক পর্যায়ে গাড়িতে সবাই ঘুমে ঢুলু ঢুলু।এমন সময় মারুফ সাবধানি কণ্ঠে বললো “রিনির বিয়ে হয়েছিলো।”তরাক করে ভাইয়ের দিকে তাকায় তাজিম।তাহলে তার কিভাবে রিনির সাথে বিয়ে হচ্ছে? কি তাজ্জব কথাবার্তা।

–” তাহলে আমার সাথে কার বিয়ে হচ্ছে?”
–“রিনিরই।”
–“বিয়ে দিলে আমার সাথে আবার কেন?”
–“আর রে যার বাচ্চা তার সাথেই বিয়ে হয়েছিলো।তখন তো আমার শশুড় শাশুড়ী জানতো না।কান পাততে পাততে জেনে ফেলেছে।তারপর তার কোন বান্ধবীর সাথে কথা বললো সে বললো তার বোনের ছেলে আছে নাকি। সেই খানে বিয়ে প্রায় পাকাপাকি। তখন আম্মা ফোন দিয়ে এসব শুনে তোর জন্য প্রস্তাব রাখলো।”
–“আম্মা তাহলে বুঝে শুনেই আমাকে দিয়ে কীড়া কান্ড করেছে?”
–“হু।”
–“ছেলেটা কে? রিনির বাবা মা ছাড়তে বললো আর ছেড়ে দিলো?”
–“ছেড়েছে কিনা তা তো জানি না।তবে ছাড়িয়ে দিয়েছে এতটুকু জানি।আর ছেলেটার নাম মনে নেই ওদের বাইরের বাসাটায়ই থাকতো।তুই তো গেছিলি, দেখিস নি?”

উক্ত ছেলেটা কে তাজিমের আন্দাজ করতে একটুও কষ্ট হলো না।দিহানের উপরই তো রিনির চোখে ঢালা আগ্রহ দেখতো,আকুলতা দেখতো।তবে দিহানের মাঝে বিশেষ কিছু দেখেনি।শক্ত চরিত্রের, ব্যক্তিত্বে ঠাসা একটা ছেলে মনে হয়েছে।সে এমন কিভাবে করলো?এমন না যে সে কোনো মেয়ের সাথে বেড শেয়ার করে নি সে হিসেবে দিহান বিশেষ কিছু করে নি। তবে দিহানের চাল চলনের জন্য ভাবলো তাজিম।তবুও বিয়েও তো করেছিলো।এসব কাজই একটা মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয় অনেকটা বহন করে।সবশেষে তাজিম আন্দাজ করতে পারলো রিনির মা চরম অন্যায় করছে আর তার মা সেটা লুফে নিচ্ছে।তাই ই পূর্বেই তাকে বেধে দিয়েছে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ করে।তাজিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একটা।

____________

নিচতলার সামনের রুমটায় ঘুর ঘুর করছে রিনি।তবে সাথে রয়েছে রেহানার সর্বক্ষণ নজরদারি।
–“কিছু খাবি?ঘুরছিস কেন এতো?”

রিনির শক্ত জবাব
–“না খাবো না।পায়ে ব্যাথা করছে তাই হাটছি। ঘুরছি না।”
–“পায়ে ব্যাথা কখন হলো?”
–“সেটা তো তোমার না জানলেও চলছে।আমি কি এখন শান্তিতে হাটতেও পারবো না নাকি?”

রিনির চিৎকারে রেহানা চোখ গরম করে তাকিয়ে চলে যায়।রেহানার অমনোযোগী হবার সুযোগ খুজছে রিনি।ঠিক সুযোগটা পেয়েও গেলো।দরজার দিকে পা বাড়াবে ঠিক এই সময় দেখলো গেট থেকে তার বোন জামাই ঢুকছে।একে একে সবাই।স্থির চিত্তে তাকিয়ে রইলো।একসময় তাজিমকেও ঢুকতে দেখা গেলো।রিনি মুখ ফিরিয়ে নিলো।দরজার সামনে রিনিকে দেখে ভালো মন্দ দুই এক কথা সবাই জিজ্ঞেস করলেও রিমির শশুড় আর তাজিম হেটে বসার ঘরেই বসলো।রেহানার আথিতেয়তা শুরু হয়ে গেছে।রেহানা ব্যস্ত হওয়াটা দরকার ছিলো।আবার দরজার দিকে পা বাড়াবে এমন সময় কেউ হাটটা ধরলো।রিনি ঘাবড়ে তাকায়।দেখে রিমিকে।

–“আয় আমাদের সাথে বস।”

টেনে নিয়ে গেলেও রিনি নিজের রুমে চলে এলো।বির বির করে বললো “দেরি হচ্ছে দেরি হচ্ছে।”উঁকি ঝুকি দিয়ে দেখলো সবাই ই সামনের রুমে।বেড়োবার ফুসরত নেই।নিজের রুমের দরজয়ার সামনেই অনবরত পায়চারী।

সিড়ি বেয়ে উঠে রিনির দরজা মুখোমুখি ফিরলো।রিনিকে দরজার সামনেই পায় তাজিম।ভালো করে পরখ করে নেয়।পা ছুতে চার পাঁচ ইঞ্চি বাকি এমন গোল্ডেন রেড কালারের গোল জামা,সাথে চুড়িদার। ওড়না দুই কাধে ফেলে বুকময় ঢাকা।চুলগুলো এক করে মাথায় কাটা দিয়ে আটকানো।স্বাস্থ্য আগের থেকে ভালো দেখালেও চোখ মুখ শুকনো আর পেট উঁচু ।এই তার সেই ছোট্ট রিনিটা?শুকনো মুখের কারণ ধরতে সময় লাগে না তাজিমের।চোখের নিচটাও কেমন কালসিটে। রুক্ষ মুখভঙ্গি। তাজিম এগোতে নেয় রিনির দিকে।রিনি ঠাস করে দরজাটা আটকে দেয়।তাজিম বোকা বনে যায়।কি হলো এটা?পরক্ষণেই ভাবলো এটাই হয়তো হবার ছিলো।উল্টো পথে পা বাড়ায় আবার।

_____________

সন্ধ্যা ছুই ছুই। গোধূলীর লালিলা আজ বেশিই কড়া।নাহ খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে।বারে বারে মেসেজ আসছে।রিনি দরজা খুলে সবার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। নাহ নিচের ঘরে কেউ নেই। পা টিপে টিপে নেমে যায়।এদিকে ওদিক উপর নিচ তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।নিশ্চিত গল্পে মশগুল সবাই।আস্তে ধীরে দরজার বাইরে যেতে সক্ষম হয়।পেটে হাত দিয়ে পায়ের গতি বাড়িয়ে দেয়।গেট থেকে বেড়িয়ে সামনে থাকা অটো গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।সন্তপর্ণে উঠে বসে।

–“তনয় ভাইয়া বেশি দেরি হয়ে গেলো?”

–“তা তো একটু বেশি হয়েছেই।”

তনয় গাড়ি চালককে তাড়া লাগায়।গাড়ি ছেড়ে দেয়।রিনি ওড়নাটা বড় করে পড়ে মুখ ঢেকে নেয়।

–“এসেছেন কখন? ”

–“সাড়ে চারটা নাগাদই আমি এসেছি।”

–“কষ্ট দিলাম।”

–“কষ্ট নিতেই এসেছি।সুযোগ করে বের হতে পেরেছো এই অনেক।তবে দেড়ি হয়ে গেছে সত্যি।এখান থেকে কাজী অফিস এরপর ট্রেনে ঢাকা টু চট্টগ্রাম। দিহান, দীপ্তি আর ওর তিনজন বন্ধু পাঁচটা থেকে অপেক্ষায়।”

রিনি ভাবলো তারই বা কি করার ছিলো।আযান পরবে পরবে করে আযানের পবিত্র ধ্বনি কানে পৌছলো।রিনি খুব মন দিয়ে শুনলো।একটা হাত পেটের উপর থাকেই তার।কেমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।মেয়েদের মধ্যে মাতৃত্ব ফুটে ওঠে যেকোনো বাচ্চা দেখলেই।আগলানোর তুমুল আগ্রহ জেগে ওঠে ।ছোট্ট বয়সে ছোট্ট শরীরে তার মধ্যে আর একটা ছোট্ট শরীর।ইকামাতের সময় সে মন ভয়ে দোয়া করলো নিজের সন্তানের জন্য নিজের স্বামীর জন্য। সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই ভালো।

কাজী অফিসে পৌছে দেখলো দিহান ওরা নামাজ থেকে ফেরেনি।দীপ্তি অন্য একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে আদোও চেনে না তনয়।রিনিকে দেখেই তিন্নি জড়িয়ে ধরলো।

–“কিউটিপাইটা দেখি আমাদের দিহানের মন জিতে তার চিহ্নও নিয়ে ঘুরছে।”

রিনি লজ্জা পেলো ভীষণ। তিন্নি রিনিকে টেনে বললো
–“আমি তোমার বড় আপু।বড়রা এমন টুকটাক কথা বলে।”
রিনি মাথা দোলালো।তিন্নি তুমুল উত্তেজনা নিয়ে বললো,
–“এই যে চোখ মুখ শুকনো দেখছো।বরের কাছে থাকলেই আবার টসটসে হয়ে যাবে। ”

রিনি আবার লজ্জা পায়।
–“আরেহ মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছো কেন?দেয়ার ইয নো কম্পারিশন অফ লাইফপার্টনার ফর অল দিস। দেয়ার প্রেজেন্স ইনভিসিবললি ফিলস আওয়ার গ্যাপ।আমরা যেমন ওদের জন্য সেরা জাদুকর ওরাও তেমনি আমাদের জন্য সেরা জাদুকর।তাই তো নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক।”

কথার মাঝেই দিহান, সাগর,মিলন উপস্থিত হলো।অলরেডি লেট। রাস্তার জ্যামের কথা তো না ধরাই উত্তম।এখান থেকে সোজা চট্টগ্রাম নামবে সেখানে পাড়ি জমাবে মিলনের বোনের বাসায়।সেখানে কিছুদিন থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবে।দিহান রিনির দিকে একপলক তাকিয়ে কাজীর সামনের চেয়ারে বসলো।রিনিকেও বসিয়ে দিলো।কাজীর সাথে আগেই কথাবার্তা খুলে বলা।ঝটাফট স্বাক্ষর দিয়ে দিলো।মধ্যখানে মিলন হয়ে গেলো উকিল বাবা।এ নিয়ে তার আফসোসে টইটুম্বুর। শত বলেও রিনিকে দিয়ে নতুন করে দেনমোহর হিসেবে কি চাই তা নিয়ে কিছু বলাতে পারলো না।একপর্যায়ে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে নিচু কন্ঠে বললো “একবার ভালোবাসি বললেই হবে।”

সবাই ফেটে পরলো দিহানের উপর।তিন্নিও হলো তাদের মধ্যে ক্ষেপা বাঘিনী।
–“বেয়াদ্দপ তুই এখনও ছোট্ট মেয়েটাকে ভালোবাসি বলিস নি?আহারে কেমন ক্ষুদার্ত ব্যক্তির মতো বললো একবার ভালোবাসি বললেই হবে।”

তিন্নি মারতেই উদ্যোত্ত হলো।দিহান এক গাল হেসে বললো
–“সাগর পাগলটাকে থামা।আমার বউ কেমনে গড়তে হয় আমিই গড়বো।যখন মন চাইবে বলবো না মন চাইলে জীবনেও বলবো না।সারাদিন মুখে ভালোবাসি বলার থেকে কাজে করাই কি বেটার না?মুখে তো মিথ্যাও বলা যায় তাই না?”

তিন্নি তেতে উঠলো
–“ষ্টুপিড তুই এখন বলবি।দেনমোহর হিসেবে বলবি।”

–“আমি আমার বউকে আলাদা করে বলবো।দুইবার বিয়ে করা বউ ধরতে গেলে তিনবার, কঠিন লাইসেন্স উপর ওয়ালার কাছে।যেন তেন ভাবে কেন বলবো?আর তোদের মতো আবালিশের সামনেই বা কেন বলবো?”

–“আমরা আবালিশ? এখন?তুই বলবি কিনা?নয়তো যেতেই দেবো না।”

সাগর ঠোঁট উল্টে তিন্নিকে বললো
–“বাবু থাক ছেড়ে দাও।”
তিন্নি সাগরকে উল্টো ঝামটি দিলো
–“তুই থাম।”
সাগর সুবোধ বালক চুপ করে রইলো।

দিহান তিন্নির কানে কানে কিছু একটা বললো।তিন্নি ভেংচি কাটলো
–“আহা আহা সাধু আপনি এখনও?দুইদিন বাদে চাচি তো হলাম বলে।স্পেশালের কি আছে? ওতে প্রথম বারেই স্পেশালিটি চলে যায়।”

–“যেটা স্পেশাল সেটা স্পেশালই থাকে অামৃত্যু। যার যার নিজের উপর ডিপেন্ড করে। সাগর তোর কাছে স্পেশাল নেই এখন আর?”

–“অফ কোর্স আছে।কি মাছুম বাচ্চা একটা!গুগলে সার্চ দিলেও ওর মতো দ্বিতীয়টা পাওয়া যাবে না।”

–“তাহলে আর কি?ওটা তো স্পেশালের উপর স্পেশাল।প্রথম আর শেষ বার নেই।স্বর্গীয় স্বর্গীয়।”

–“হ হইছে।আদরে চাদরের তলেই আটকে থাক তোর দেনমোহর। ”

___________

দিহান তাড়া লাগায়।একমিনিটও লেট করলে ট্রেন চলে যেতে পারে।দিহানের বাইকে রিনি।রিনিকে আগলাতে পেছনে দীপ্তি।সাগর তিন্নি এক বাইকে মিলন আর তনয় এক বাইকে।রেলস্টেশনে পৌছাতে পৌছাতেই হুইসেল শোনা যায়।রিনি প্রাণপণে দ্রুত হাটার চেষ্টা করছে।পায়ে ব্যাথা আর এই অবস্থায় দৌড়ানো তো অসম্ভব।তবুও যতটা পারা যাচ্ছে।দৌড়ে দিহান ট্রেনের কামড়াতে উঠলো।হাতের ব্যাগটায় রিনির আর তার কিছু পোশাক।অল্প প্রয়োজনীয় আসবাব।ব্যাগটা রেখে বাইরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।রিনি প্রাণপণে দৌড়ানোর চেষ্টা করছে।ব্যাথার কথা ভুলে গেছে যেন। ট্রেনের গতি বাড়ছে ।রিনির কিছুটা পেছনে তনয় তার কিছুটা পেছনে দীপ্তি দৌড়াচ্ছে।একপর্যায়ে রিনির হাত দিহান নাগালে পেলো।ট্রেনের অনেকগুলো উৎসুক চোখ তাদের দিকে।দিহান মৃদু হেসে রিনির হাত টেনে ওঠানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় হিতে বিপরীত হলো।দিহান চোখের সামনে স্পষ্ট দেখলো হোচট খেয়ে রিনি হাত উল্টে নিচে পরে যাচ্ছে।ধরে রাখলে পা ট্রেনের নিচে চলে যেতে পারে আর ছেড়ে দিলে পেটে গুরতর আঘাত।চলন্ত ট্রেনে ধরে পরে যাওয়া ব্যক্তিকে ধরে রাখা কঠিন।তবুও চিৎকার করছে দিহান বার বার রিনিকে নিজের সামলাতে বলছে।পারলো না হাত ছুটেই পরে গেলো রিনি।ট্রেনের নিচে চলে যায় যদি!আঁতকে ওঠে দিহানের বুক। দিহান আকাশপাতাল চিৎকার দিলো।এক মুহুর্ত দেরি না করে লাফ দিলো চলন্ত ট্রেন থেকে।সামনের জায়গাটা সেভ কিনা সেটুকু দেখলো না মাথার দৃশ্যপটে রিনির আতংকিত করুণ মুখ কানে বাজছে “দিহান ভাই আমি পরে যাচ্ছি।”
বাইরের অন্য কিছুর দিকে হুশ রাখতে পারলো না।লাফ দিয়েই বারি খেলো শক্ত কিছুর সাথে।মুখ থুবড়ে পরলো মাটিতে।কানে এলো দীপ্তির ভাইয়া বলে গগণবিদারী চিৎকার।মুহুর্তের মধ্যে কি ঘটে গেলো। সবাই অচল হয়ে গেলো।দিহানের পেছনের দিকে আর মাথা ঘুরে তাকানোর শক্তি তার নেই। জীবনীশক্তি কমে আসছে যেনো সেকেন্ডের হেরফেরে।এইটুকু ছিলো জীবন তার?বউটা কি ট্রেনের নিচে থেতলে গেলো?একটু আগলে রাখতে পারলো না সে?মাথায় প্রাপ্ত আঘাতের কথা অনুভূতি জানান দিচ্ছে কঠোর ভাবে।কপাল চুবিয়ে রক্ত নামছে চোখ খুলে রাখতে পারছে না।চোখের পাতার উপরের রক্ত এসে জমছে।মাথায় ঘুরছে, আর বুঝি তুমি কি বলবেন বাক্যটা শোনা হলো না মায়াবতীর মুখ থেকে।বিশেষ আয়োজনে উত্তরটা দেয়ার আগেই জীবন তার সাথে বেইমানী করলো?উত্তরটা দিলেই তো বাক্যটার মাধুর্যতা কমে যেত যেন।তাই তো রিনির মুখে বাক্যটার আকুল টান শুনতেই তো দিহান দেরি করছিলো।তবে এবার তো বিশেষ ভাবে উত্তর করার বন্দবস্ত করেছিলো।ভাগ্য কেন ভালোবাসি কথাটা বলতে দিলো না?ভালোবাসার অতৃপ্ততা রেখেই চলে গেলো দুটো জীবন!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here