নিষিদ্ধ সে পর্ব ৬

“নিষিদ্ধ সে”

(৬)

খাবার টেবিলে বসে আঙ্কেল আর আমি বেশ খোশমেজাজে গল্প করছি। আঙ্কেল উনার যৌবনের শ্রেষ্ঠ অকাজগুলো বর্ণণা করছেন আমি ভালো শ্রোতার মতো তা শুনে হাসছি। আন্টি কিছুটা লজ্জিত হয়ে ধমকালেন আঙ্কেলকে। সায়রি ঘুমে ঢুলুঢুলু। বারবার ঝিমোচ্ছে। একটু পর পর আন্টির হাতের বারিতে চোখ খুলে “আম্মু” বলে আবারো ঝিমোচ্ছে।

আমিঃ আঙ্কেল সবই তো বললেন এটা তো বললেন না আন্টি আর আপনার এরেঞ্জ ম্যারেজ না লাভ ম্যারেজ?

আন্টিঃ খাওয়ার সময় এতো কথা কেন?

আমিঃ হিহিহি আঙ্কেল [আঙ্কেলের হাত নাড়তে নাড়তে] বলেন না!

আঙ্কেল আন্টির দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন। আন্টি বারবার রেগে না বলতে ধমকাচ্ছে। আমি আরো উৎসাহ দিচ্ছি আঙ্কেলকে বলার জন্য।

আঙ্কেলঃ বেশ শুনো তাহলে!

আন্টিঃ এই একদম বলবে না। তোমার কি লজ্জা লাগছে না? বাচ্চাদের সামনে নিজের জীবনী তুলে ধরতে? তবু ভালোগুলো হলে মানতাম।

আঙ্কেলঃ কি যে বলো! ওদের বয়স এখন দাবানলের মতো। পানসে গল্পে ওদের মন ভড়বে?

আন্টিঃ তবু তুমি___

আমিঃ [সব দাঁত বের করে]আন্টি আমি তো আপন মানুষই আপনাদের স্টোরি শুনলে আমাদের বন্ডিং আরো মজবুদ হবে। বুঝেন না__!

আঙ্কেল বেশ রসিয়ে গল্প বলতে লাগলেন। আন্টি আঙ্কেলকে থামাতে না পেরে রান্নাঘরে চলে গেছেন। কো-ইন্সিডেন্টের ব্যাপার হলো উনার আর উনার ছেলের কাজিন কাজিন প্রেম! দূর্ভাগ্য উনার সেই কাজিনকে উনি বিয়ে করেননি। করেছেন আমার ভোলা ভালা সহজ সরল আন্টিকে। সেই সময়ে প্রেম পিরীতির ঘোর নিষেধাজ্ঞা ছিলো পরিবারে তার মধ্যে কাজিন কাজিন প্রেম। আঙ্কেলের বাবা আর সেই মেয়েটার বাবা আপোসে না আসতে পেরে আঙ্কেলের প্রাক্তনকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। মজার ব্যাপার আঙ্কেল সেই মেয়েটার বিয়েতে নাকি ধুমসে নেচেছিলেন।

আমিঃ অবজেকশন অবজেকশন! আঙ্কেল আপনি তাহলে মেয়েটার সাথে খালি আলগা প্রেম করেছেন?

আঙ্কেলঃ [মুখটা ভাবুক বানিয়ে] আমারো মনে হয় প্রেম আমার আলগাই ছিলো। মেয়েটার বিয়েতে অনুষ্ঠান নাচ গান হবে শুনে আমার মন আরো পুলকিত হচ্ছিলো। ছ্যাকা খেয়ে বাকা হয়নি তখন হাহাহাহা।

আমিঃ [বেশ উৎসুক হয়ে] বাই এনি চান্স যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে “কাজিন প্রেম” রোগে আক্রান্ত হয় আপনি কি ভেকসিন হিসেবে ওদের “বিয়ে” দিবেন?

আঙ্কেলঃ ভাবনার বিষয়! এই প্রশ্ন কেন?

আমিঃ এই প্রশ্ন অবশ্যই আসে। কারন আপনি একজন অভিজ্ঞ বাবা যিনি “কাজিন প্রেম” রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেকসিন পাননি। আপনার এই ভেকসিনের গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রে একটা অভিজ্ঞতা থাকবে। কারন আপনি পাননি। সুতরাং পরিশেষে বলতে পারি ইহার গুরুত্ব আপনার কাছে অপরিসীম!

আঙ্কেলঃ হাহাহাহাহা, উম এক্ষেত্রে কিন্তু আমি খুব কাঁচা হবো আরো।

আমিঃ কেন?

আঙ্কেলঃ কারন আমার ঠিকমতো “কাজিন প্রেম” রোগ হয়নি। হলে তো আমি দেবদাস হয়ে অ্যালকোহল গিলে পরে থাকতাম। তবে আমার ছেলে যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় আমি তার সঠিক অনুভূতি আর মেয়েটা কেমন তা দেখে মেনে নিবো।

আমিঃ [পাশে দুইহাত মুড়ে তাতে মাথা রেখে ঘুমানো সায়রির পিঠে হাত মুঠো করে বারি দিতে লাগলাম] জিয়ো আঙ্কেল! জিয়ো! আপনার মতো বাবা ঘরে ঘরে জন্মাক।

আঙ্কেল আমি এই সেই কথা বলে জোরে জোরে রুম কাপিয়ে হাসছি সায়রি বিরক্ত হয়ে পাশে বসে। আমার মার খেয়ে তন্দ্রা মহাশয় বোধহয় পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর রনক ভাইয়া মৃদু হেসে আঙ্কেলকে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামনের চেয়ারে বসলো। আঙ্কেল উঠে গেলেন খাওয়া শেষে। কালকে নাকি সায়রির দুই চাচা আসবে। পরশু সায়রির সব কাজিন আসবে। তার পরেরদিন থেকে মানুষ আসা শুরু করবে বিয়েতে সাথে আমার আব্বু-আম্মু, ভাইয়াও আসবে। কাজের চাপ বাড়বে। রম-রমা হবে বিয়ে বাড়ি। এখন তো ইয়াং জেনারেশন নেই বাড়িতে আমরা বাদে। শুক্রবার ছিলো কি কাজে জানি চলে গেছে। অনেকক্ষন ধরে মনে হচ্ছে কেউ দেখছে আমায়। চারপাশে তাকাচ্ছি সেই কেউটাকে খোজার জন্য! কিন্তু পাচ্ছি না।

আমিঃ আচ্ছা ভাইয়া হ্যান্ডসাম ওম্যান কই গো?

রনক ভাই কিছুটা ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলেন। সায়রির দিকে চাইলেন বোঝার জন্য। আমি চারপাশে তাকাচ্ছি সায়র ভাইকে দেখার আশায়।

সায়রিঃ মাথা নষ্ট হয়েছে তোর? হ্যান্ডসাম কখনো ওম্যান হয়?

আমি মুখভর্তি হাসি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলাম। সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে দেখি সায়র ভাই নামছে। পথ আগলে দাঁড়ালাম। সামনে দাঁড়াতে দেখে পাশ কেটে যেতে চাইলেন। ঐপাশেও সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আরেকবার পাশ কেটে যেতে চাইলে সামনে যেয়ে আবারো বাধা দিলাম। না পেরে বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন।

সায়রঃ কি সমস্যা রাস্তা ছাড়।

আমিঃ [কোমড়ে হাত দিয়ে] কি সমস্যা? রাস্তা ছাড়।

সায়রঃ সর সকাল সকাল ঝগড়া করার মুড নেই।

আমিঃ [মুখ গম্ভীর করে] আমার একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে আপনার সাথে।

সায়র ভাই আমাকে পাশে ঠেলে ভ্রু কুচকে নামতে লাগলো লাফিয়ে কয়েক সিড়ি টপকে সামনে দাঁড়ালাম।

সায়রঃ সকাল সকাল ঢং করবি না সর!

আমিঃ বলছি তো ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।

সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কি এমন ইম্পোর্টেন্ট কথা যে ঐটা বলতে বারবার ইম্পোর্টেন্ট ইম্পোর্টেন্ট বলছিস।

আমিঃ [ক্লোজআপ হাসি হেসে] বেশি কিছু না আপনি আগে খেয়ে নিন পরে বলছি নয়তো খাওয়া পেটে যাবে না।

সায়রঃ তো সর সামনে থেকে! [দাঁত বের করে সরে গেলাম] সরতেই হবে জানে তবু ঢং দেখাবে!

সায়র ভাই চেয়ারে গিয়ে বসলে তার মুখোমুখি রনক ভাইয়ার পাশে বসে গেলাম। সে খাচ্ছে আমি গালে হাত রেখে তা দেখছি। বিরক্ত হয়ে কয়েকবার চোখ রাঙিয়েছে। যতোবারই আমায় চোখ রাঙাচ্ছে ততোবারই আমি আরো সব দাঁত বের করে হাসি দিচ্ছি।

সায়রঃ [খাওয়া ছেড়ে] কি সমস্যা তোর? চেয়ে আছিস কেন?

আমিঃ [হাসি চেপে] আপনি প্রচুর সুন্দর! কি হ্যান্ডসাম! কি হট! আউইইইইইই!

সায়রঃ রনক ওকে নিয়ে যা তো!

রনক ভাইয়া একবার আমার দিকে চেয়ে ফোন টিপায় মন দিলেন। সায়র ভাই বিরক্ত হয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠতে লাগলেন।

আমিঃ বাহঃ বাহঃ ডাইটিং করা শুরু করেছেন? বেশ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুকনো হলে আপনাকে গরম ঠান্ডা কম্বিনেশনে আরো সুন্দর লাগবে।

সায়র ভাই বসে গেলো ধুপ করে চেয়ারটায়। হাসতে হাসতে এর খাওয়া দেখতে লাগলাম।

আমিঃ [রনক ভাইয়াকে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে] দেখেন দেখেন ভাইয়া কি সুন্দর করে খাচ্ছে মিস ইউনিভার্স হওয়ার জন্য যথেষ্ট পুরো। আলতো করে খাবার তুলে গপগপ করে খাচ্ছে। বহুদিন ধরে না খেতে পেরে যেমন ক্ষুধার্তরা খায় না? ঠিক ঐরকম।

সায়র ভাই না পেরে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন প্লেট হাতে। চেয়ার হালকা ঘুরিয়ে আমার দিকে উল্টো মুড়ে বসে খেতে লাগলেন। এবার হাসতে লাগলাম মুখে হাত চেপে।

আমিঃ ব্যাকসাইড দেখেছেন ভাইয়া? পুরো কালো রঙের। কুয়ালিটি আছে টি-শার্টের। ঐ যে দেখেন কালোর মধ্যে কি কিছু দেখতে পারছেন?

রনক ভাই হালকা হেসে ফোন টিপছে। আবারো কনুইয়ের গুতো দিলাম যাতে উত্তর দেয়। অলস ছোকরা মাথা নাড়লো শুধু। আমার কি তাতে? আমি তো নিজের সাপোর্টিং উত্তর পেয়ে গেছি।

আমিঃ এই তো ঐ টি-শার্টের মধ্যে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না তাই না? [মাথা নেড়ে] দেখবেন কিভাবে এটা ভালো ব্রান্ডের টি-শার্ট। আপনার মতো সদরঘাট থেকে কেনা “একদাম পঞ্চাশ ” টি-শার্ট পেয়েছেন নাকি!

রনকঃ একদাম পঞ্চাশে শুধু জাঙ্গিয়া পাওয়া যায়। তোমার মতে কি এখন আমি টি-শার্ট এর বদলে গায়ে বড় জাঙ্গিয়া পরে আছি?

খেতে খেতে কাশি উঠে গেলো সায়র ভাইয়ের। আমি পানি এগিয়ে দিয়ে শব্দ করে হাসছি। রনক ভাইয়া তার সীমিত হাসি দিচ্ছেন। সায়রি এক ভ্রু উচিয়ে আমাকে টিভি দেখা বাদ দিয়ে পরখ করছে।

সায়রঃ আমাকে কি খেতে দিবি না তোরা? কি শুরু করেছিস?

আমি হাসতে হাসতে রনক ভাইয়া আছে মনে করে তার কাধে মেরে হাসবো ভাবছিলাম। কিন্তু ভাইয়া কখন উঠে গেছে বুঝতে পারিনি। মারতে গিয়ে কাঠের চেয়ারে মাথা ঠুকে গেলো। হাসি নিমিষে বন্ধ হয়ে গেছে। সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। সে কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে রইলো। যখন কাহিনী বুঝলো এবার সে নিজে হাসতে লাগলো।

সায়রঃ অতিরিক্ত করলে এমনি হয়! আয় আরো টিজ করতে আয় আমায়।

সায়র ভাই খাওয়া শেষে উঠলে আমিও উঠলাম। সে যেখানে যাচ্ছে যা দেখছে আমিও পিছু পিছু ঘুরে সেগুলো চোখ বড়বড় করে দেখছি। যেনো জীবনে এই প্রথম দেখলাম সেগুলো। উনার পিছনে যেতে যেতে উনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় মাথায় তখনের বারি খাওয়া যায়গায় উনার পিঠের সাথে বারি খেলাম।

সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কাজ নাই কোন? সারাক্ষন পিছে পিছে ঘুরছিস যে!

আমি ডানে বায়ে মাথা নাড়তে লাগলাম ছন্দ মেনে। পিচ্চিরা গান গাওয়ার সময় যেমন হেলেদুলে গান গায় সেভাবে হেলছি।

সায়রঃ তুই আমার সাথে এখন মল ত্যাগ করতে শৌচালয়েও ঢুকতে চাইছিস?

কথাটা ঠিকমতো না শুনে আগের মতো মাথা নাড়ছি। উনি এবার আমাকে টানতে লাগলেন। দেখি উনি বাথরুমে টেনে ঢুকাচ্ছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। ষাড়ের মতো শক্তির সাথে আমার মতো এক বালিকার শক্তিতে কি একে থামানো সম্ভব?

আমিঃ [বাথরুমের দরজার বাইরে ধরে] ঐ বাথরুমে ঢোকান কেন আমায়?

সায়রঃ [আমার একহাত টানতে টানতে] আজকে তোকে নিয়েই একসাথে মলমূত্র ত্যাগ করবো।

চলবে__________🖤

#এ্যাগ্নেস_মার্টেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here