নীলাম্বুর গহীনে পর্ব ২

#নীলাম্বুর_গহীনে
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ২
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
.
.
ইউশরার কথার মাঝে হঠাৎই রুবাইয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
” মা! এই মুহূর্তে আমার একটা কথা মনে পড়েছে। যেটা কিছুক্ষণ আগেও এই সমুদ্র নাম শুনে মাথায় আসেনি।”
” কী বল?”
রুবাইয়া হাসফাস করে বলল,
” আমার বাবা তো আশরাফ আয়মান। কিন্তু তোমার জীবনী সমুদ্রকে ঘিরে। তারমানে সমুদ্রের সাথে তোমার বিয়ে হয়নি তাই না মা? তোমাদের প্রথম প্রেম কেবল অনুভূতিই রয়ে গেল। পূর্ণতা পেল না….তাই না? ”
ইউশরা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে রুবাইয়ার দিকে। বেশ বড় চার পাঁচটা নিঃশ্বাস নিয়ে উল্টো দৃষ্টিপথ ধরল। বলল,
” আফরোজার গায়ে হলুদ ছিল সেদিন। বন্ধুত্বের খাতিরে সবাই আমরা দাওয়াতও পেলাম। ছেলেরা পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েরা সবুজ শাড়ি। তবে সবার সবুজ শাড়ি একরকম না। একেক জনের টা একেক রকম। যার ঘরে যেরকম সবুজ শাড়ি ছিল সেটাই পড়ে এসেছে। নতুন করে কেনে নি কেউই। আমি পড়েছি একেবারে একরঙা কাঁচা সবুজ। না আছে এর মাঝে কোনো ছাপা আর না আছে অন্য রঙের মিশ্রণ। পুরোটাই সবুজ। ঘটি হাতা ব্লাউজ। গ্রাম্য ভাবে কোমড় পেঁচানো শাড়ি। কোমড়ে সাদা পাথরের হালকা কাজ করা বিছা। দু হাত ভর্তি কাঁচের সবুজ রেশমি চুরি। কানে, গলায় ম্যাচিং সবুজ পাথরের হালকা গড়নের সেট। কপালে ছোট্ট সবুজ টিপ।আর মাঝ বরাবর সিথি করে পিঠ পর্যন্ত চুলগুলো টেনে ঢিল খোপা করে ঘাড়ের উপর উদ্দেশ্যেহীন ভাবে ছেড়ে দেয়া। তবে এমনি এমনি না….কাঠবেলী ফুল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খোপাটা সাজিয়ে তারপর। গায়ের রঙ আমার দুধ ফর্সা না হলেও একেবারে ময়লাও ছিল না। পাতলা ছিপছিপে গড়নের, উজ্জ্বল শ্যামা রঙা ছিলাম। এই সাজে মারাত্মক ভালো না লাগলেও একেবারে খারাপও লাগছিল না। তবে এটা বুঝতে পারছিলাম, প্রায় সব ছেলেদের নজর এই আমার দিকেই পড়ে ছিল। কিন্তু আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর মাথা নিচু করে আপনা আপনি লজ্জা পেতে লাগলাম সমুদ্রের নিক্ষেপ করা দৃষ্টি সীমানার কথা ভেবে। আমার উপর সমুদ্রের চাহনি কীরূপ হবে? কিংবা সৌন্দর্যের প্রশংসা সরূপ কী কী বলবে এসব ভেবেই লজ্জায় রাঙা হচ্ছিলাম। এভাবে দু মিনিট, তিন মিনিট করে করে দশ মিনিটের উপর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমুদ্র থেকে কোনোপ্রকার রেস্পন্স এলো না। মাথা তুলে তাকালাম আমি। সমুদ্র আমার দিকে তাকানো তো দূরের কথা ধারের কাছেও নেই। মুহূর্তের মাঝে যেন মন টা ভেঙে গেল। চোখ জোড়া ভিজে আসতে চাইল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। বড় করে নিঃশ্বাস চেপে হন্ন হয়ে খুঁজতে লাগলা সমুদ্রকে। ডানে বামে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। কিন্তু না, কোত্থাও নেই সমুদ্র। রাগ, কষ্ট, অভিমান… এ তিনটি আমাকে এমনভাবে ঝেঁকে ধরেছিল ইচ্ছে করেছে এই সাজসজ্জা মুছে এক্ষুনি বাড়ি চলে যাই। অবশ্য পথও ধরেছিলাম কিন্তু তখনি নজর পড়ল ছাদের এক কোণে চেয়ারে এলিয়ে থাকা ছেলেটির দিকে। পেছন থেকে যাকে দেখতে অবিকল সমুদ্রর মত ঠেকছে। সাত পাঁচ
না ভেবে এগিয়ে গেলাম সেদিক। পাশে দাঁড়িয়ে আড়চোখে তাকাতেই শিউর হলাম ছেলেটি আর অন্য কেউ নয় সমুদ্র। যার দৃষ্টিপথ ঝলমলে আকাশ পানে। তবে কেমন একটা অলৌকিক ভাবেই সমুদ্র বুঝে গেল আমি এসেছি। বলল,
” বস।”
রাগে কটমট করা সত্ত্বেও চেয়ার টেনে চুপচাপ বসে পড়লাম। সমুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল,
” ক’টা বাজে রে? ”
” ৬ টা ৫৯। ”
” ও….আর কিছুক্ষণ বাকি।”
” কিসের কিছুক্ষণ বাকি? কী বলছিস তুই?”
সমুদ্র হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করে বলল,
” ওই যে দেখছিস না ঝলমলে তারা গুলো? এগুলোর মধ্যে দু একটা তারা কিছুক্ষণের মাঝেই দৌড়াদৌড়ি শরু করবে। আর ঘুরতে থাকবে মহাশূন্যের আনাচকানাচে। ”
” মানে! কী বলছিস এসব? তারা আবার দৌড়ায়? কী করে? মাথা ঠিকাছে তোর?”
” এটাই পৃথিবীর নিয়ম ইউশরা। সবাই সবার নিয়মে পরিচালিত হয়। আর এটা তারা পথের নিয়ম। আমি দেখি। হ্যাঁ…. তারাপূর্ণ আকাশ হলেই আমি দেখি। তারা দৌড়াতে আমি নিজে দেখি। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে এরা ছুটোছুটি শুরু করে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সাড়ে ৭ টা নাগাদ। এদিকের তারা ওদিক গিয়ে মিশে যাবে। আর ওদিকের তারা এদিক এসে মিশে যাবে। বিশ্বাস কর…এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে সেসময়। ”
সমুদ্রের কথা শুনে তখন আমি রাগের মাঝেও হেসে দিলাম। বললাম,
” তুই যে কি-না…..তারা না-কি দৌড়ায়। মানুষ শুনলে পাগল বলবে তোকে। আমার কী মনে হয় জানিস, তুই হয়তো প্ল্যান দেখিস। চোরাই প্ল্যান। যেগুলো আকাশ সীমানার উপর দিয়ে চলাচল করে। আর তারার মত ছোট্ট দেখায়। বুঝলি?”
” তোর কী আমাকে বাচ্চা মনে হচ্ছে যে,প্ল্যান আর তারার মাঝে আমি ফারাক বুঝব না? যত্তসব! আমি তারা দেখি তারা। প্ল্যান না, বুঝলি?”
বলেই খিটখিটে মেজাজ নিয়ে চোখ পাকালো আমার দিকে সমুদ্র। আমি মিটিমিটি হাসলাম কিছু বললাম না। সমুদ্রও আর কিছু বলল না। চড়া মেজাজ নিয়েই ফের একবার তাকালো আকাশ পথে।
দু’জনের অকারণে বসে থাকার সময়টা বড্ড বেশি হয়ে গিয়েছিল। ঘড়ির কাটার দিকে লক্ষ্য করে দেখি ৭ টা ৩৩ বাজে। বিরক্তভাব মুখ জুড়ে আপনা আপনি ফুটে উঠল আমার । ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখি সবাই অনুষ্ঠান ইনজয় করছে কেবল আমি ছাড়া। এভাবে উদ্দেশ্যহীন কারণে বসে থাকতে কারো ভালো লাগে? এর মাঝেই লক্ষ্য করলাম সমুদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে আকাশের পথে চোখ বুলাচ্ছে। একবার এদিক তো একবার সেদিক। বড্ড মায়াময় লাগছে মুখটা। যে সময় টাকে কিছুক্ষণ আগেও মারাত্মক ভাবে বিরক্ত লেগেছিল সেই সময় টাকেই এখন শতগুণ বেশি ভালো লাগছে। শান্তি লাগছে। মোহনীয় লাগছে। একমাত্র সমুদ্রের মায়াভরা মুখটা নিজের দৃষ্টিপটে আয়ত্ত করতে পেরে। আচমকাই সমুদ্র আমার হাত চেপে ধরল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল আমার। নিঃশ্বাস ফেলতে ও নিতে দুটোতেই মারাত্মক বাঁধা পাচ্ছে বুকে। সেই সাথে বুকের বা পাশটায় চিনচিনিয়ে ব্যাথাও আরম্ভ হয়ে যায়। সবার অগোচরে এটাই যে সমুদ্রের প্রথম ছোঁয়া।যেই ছোঁয়া পাওয়ার জন্য এতগুলো দিন সমুদ্রের পায়ে পা মিলিয়ে চলেছি। সেই ছোঁয়াকে বুঝি অনুভুতিরা এমনি এমনি যেতে দিবে। একেবারে বুকের গহীনে গেঁথে রেখে দিবে। তবে কে জানত, সেই ডানা মেলে থাকা অনুভূতি গুলোর মাঝে এক অস্থিরতা কন্ঠ এসে ঝাপটানো ডানাগুলো একেবারে টেনে এক কুচ করে দিবে! হ্যাঁ, সমুদ্র কন্ঠস্বর টা ওই মুহূর্তে আমার ঠিক এরকমই মনে হয়েছিল। অস্থিরতা ভরা গলায় সমুদ্র বলল,
” ইউশরার বাচ্চা কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? তাড়াতাড়ি দেখ, ওই যে তারা দৌড়াচ্ছে। ”
” সত্যি দৌড়াচ্ছে?”
” হ্যাঁ, ওই যে দেখছিস না?”
আমার অনুভূতি গুলো সাইডে রেখে আমি দ্রুত আকাশের এদিক ওদিক চোখ ঘুরালাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পারলাম না। চোখেই পড়ল না। বললাম,
” কই? আমি তো দেখতে পারছি না। তুই কি এখনো দেখছিস?”
” হ্যাঁ দেখছি তো। ওই যে…. ”
এবার আমাকে সমুদ্র হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো। কিন্তু তাও আমার অকর্মা চোখ দুটো তারা টিকে আয়ত্তে আনতে পারল না। বললাম,
” আমি সত্যি দেখতে পারছি না সমুদ্র। তুই একটু ভালো করে দেখা না আমাকে।”
বলামাত্রই সমুদ্র আমার দিকে একপ্রকার বিষ চোখে তাকাল। যেন তাঁর মহাভারত উদ্ধারের মত মহৎ কাজে আমি বিশাল বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। হাসি না আসা সত্ত্বেও জোর করে একটু হাসি দিলাম। যেন বিষ টা কমে ভালোবাসায় মনটা ভরে যায়। কিন্তু তা আর হলো না। সমুদ্র কটমটতে চোখে তাকিয়ে কিছুটা আমার কাছে এসে থুতনি চেপে উঁচু করে ধরে একেবারে আকাশ বরাবর। ভালো করে তাকাতে দেখি আমার দৃষ্টিপথ অনুযায়ী একটি তারা তাঁর নিজ গতি পথে ছুটে চলছে। আর খুব দ্রুতই ছুটছে। সমুদ্র আমায় ছেড়ে দিল। আমি চোখ দুটো কচলে ভালো করে তাকালাম। বিষয়টি শিউর হওয়ার জন্য। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, সত্যি তারা টি দৌড়চ্ছে। বন্ধ মুখ হা হয়ে গেল। বললাম,
” সমুদ্র! এটা তো সত্যিই তারা, প্ল্যান না। আর এটা সত্যি দৌড়চ্ছে। আমি তো জাস্ট ভাবতে পারছি না বিষয়টি।”
” বিশ্বাস হলো তো? এই সমুদ্র কখনো না জেনে কিছু বলে না। নিজে প্রমাণ পেয়ে পড়েই অন্যের মাঝে রটায় বুঝলি?”
” সত্যি অসম্ভব সুন্দর! আজ প্রথম দেখলাম আমি এরকম কিছু। আমি তো আগে জানতামই না এই বিষয়ে।”
” শুধু তুই না, অনেকেই জানে না এ বিষয় টা। আবার অনেকে জানে কিন্তু মানে না। এটা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। ”
” মানে না কেন? এই দেখ দেখ, তারা টা একেবারেই ছোট হয়ে গিয়েছে। মনে তো হচ্ছে মিশে যাচ্ছে। দেখাই যাচ্ছে না, তাই না? ”
” হুম, আর দেখা যাবেও না। এটা অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আমাদের দৃষ্টি সীমানার বাহিরে।”
” কী দেখালি রে দোস্ত…. পুরাই শকড আমি। ”
সমুদ্র হাসল। তবে আমার দিকে তাকিয়ে নয়। ওই মিশে যাওয়া তারার গতিপথ ধরেই। আমি বসা থেকে উঠে সমুদ্রের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম,
” এই, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে রে? ”
সমুদ্র একপলক আমার দিকে তাকিয়ে ফের দৃষ্টি অন্য পথে ধরে বলল,
” সুন্দর। ”
” শুধু সুন্দর? আর কিছু না? এই প্রথম আমাকে শাড়ি পড়া দেখলি কিছু তো মনে অবশ্যই আসছে। দমিয়ে রাখছিস কেন? বলে ফেল।”
সমুদ্র আমার চোখে চোখ রেখে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
” মনের ভেতর কথা দমিয়ে রাখার মানুষ অন্তত আমি না। সুন্দর লেগেছে বলেছি। এর থেকে বেশি আর কী বলব? আর শাড়ি পড়েছিস তো কী হয়েছে? নারীর শোভা তো শাড়িতেই। এখানে আলাদা করে কোনো অনুভূতি মনে আসা কিংবা সেই অনুভূতি ব্যাখ্যা করার কোনো কারণ তো নেই। ”
সমুদ্রের কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল সেসময়। ইচ্ছে তো করছিল ওর মাথা ফাটিয়ে দেই। কিন্তু নিজেকে কোনোরকম সামলে আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে আসি। তবে সমুদ্রের চোখের ভাষা পড়ে আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম তাঁর মনের কথা। সমুদ্রের চোখ দুটো যেন সরতে চাইছিল না আমার উপর থেকে। তাও সমুদ্র বারংবার সরিয়েছে। হয়তো ঘোর লেগে যাবার ভয়ে! আড়চোখে কোমরের বিছার পানেও বেশ কড়া নজর ছিল তাঁর । ফাঁক তালে যদি পাতলা কোমরের দেখা মেলে সেই উদ্দেশ্যে। রাগের সাথে সাথে বড্ড হাসিও পেয়েছিল আমার সেসময়। পাগল টার পাগলামো গুলো অনুভব করতে পেরে। ”
______________
রুবাইয়া ভ্রু কুচকে বলল,
” সমুদ্রের অনুভূতি বুঝতে পেরেও কি তুমি চলে এসেছিলে? সমুদ্র কে একা করে?”
ইউশরা স্মিত হাসল। রুবাইয়ার থুতনি ধরে বলল,
” হ্যাঁ, এসেছিলাম তো। কিন্তু কেন বলতো? তোর বুঝি সমুদ্রের জন্য কষ্ট হচ্ছে?”
” হ্যাঁ, হচ্ছেই তো। সবাই তো আর সবকিছু মুখ ফুটে বলতে পারে না। যেমন আমার বাবাও পারে না। তাই বলে কী তুমি বাবার মনের কথা বুঝো না? বুঝো তো। আর বাবার মন অনুযায়ীই চলো। তাহলে সেদিন সমুদ্রের মনের কথা বুঝেও চলে গেলে কেন? একটু বসে তাঁর ঠোঁটকাটা কথার সঙ্গ দিলে কী হতো? ”
” সেদিন একটা অনুষ্ঠানও ছিল রে বাবা। সমুদ্রকে সঙ্গ দেয়া যেমন প্রয়োজন ছিল, তেমনি অনুষ্ঠানটা কেও সঙ্গ দেয়া প্রয়োজন ছিল।”
” মানলাম তোমার কথা। তবে…. ওইদিনের মত একাকীত্বে ভরা সুন্দর মুহূর্তও কিন্তু তোমার বা তোমাদের জীবনে ফিরে আসবে কি-না তার যথেষ্ট শঙ্কা ছিল।”
ইউশরা পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে রুবাইয়ার দিকে। মেয়েটা সত্যি বড় হয়ে গিয়েছে। বুঝদার হয়ে গিয়েছে। যতটুকু বড় হলে একটা মেয়ে তাঁর মায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারে ঠিক ততটুকু। ভেবেই হাসির রেখা টা আরও বড় হয়ে উঠল। ওদিকে রুবাইয়া উৎসুক কন্ঠে বলল,
” চুপ করে গেলে দেখি মা! তারপর কী হলো সেটা তো বলো।”
ইউশরা মাথা নেড়ে আবারও বলতে লাগল……
_______________
” সমুদ্রের মনের গহীনে চলা সব অনুভূতি বুঝেও যখন না বুঝের মত অনুষ্ঠানের দিকে পা বাড়ালাম, পুরোই বোকা বনে গেলাম। অনুষ্ঠান ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে প্রায় সবই আফরোজার গায়ে হলুদ লাগিয়ে ফেলেছে। কেবল আমি আর সমুদ্র ছাড়া। ছুটে গেলাম স্টেজের দিকে। আফরোজার গায়ে হলুদ লাগালাম। অন্যদিক থেকে কে যেন সমুদ্রকে এনে ঠিক আমার বিপরীত পাশে বসালো। মাঝে আফরোজা, একপাশে আমি আর একপাশে সমুদ্র। দু’জন দুদিক থেকে আফরোজার গায়ে হলুদ মাখালাম। মুখে মিষ্টি দিলাম। বেশ অনেকগুলো ছবি তুললাম। তবে এতকিছুর মাঝে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, সমুদ্রের চোখ দুটো আমার দিকে। আড়চোখে হোক কিংবা পেছন থেকে ওর দৃষ্টিদ্বয় আমাতেই বিভোর। হয়তো ওর দৃষ্টিনন্দন আমাতেই খুঁজে পাচ্ছে। তবে সরাসরি যতবারই ওর বরাবর নয়ন জোড়া তাক করেছি, ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আবার আমি চোখ ফেরাতেই সমুদ্র আমার পানেই দৃষ্টিনন্দনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই চোখ ফেরানো, পরক্ষনেই আবার তাকানোর মানে সেসময় বুঝতে দেরি হলেও পরক্ষনেই বুঝতে পেরেছি, হয়তো লজ্জায় কিংবা নিজের অনুভূতি ব্যক্ত না করার তাড়নায় এই দৃষ্টিদ্বয়ের খেলা। সমুদ্রের অব্যক্ত অনুভূতির তাড়নায় বেশ লাজুক লাজুক ভাব ফুটে উঠেছিল আমার মুখ জুড়ে। আর সেই লাজুক ভাব সবার অগোচরে নিজ মাঝে গোপন করতেই হন্তদন্ত হয়ে স্টেজ থেকে নেমে যেতে নিয়েছিলাম। আর ওমনি হঠাৎ করে কেউ যেন আমার হাত ধরে ফেলে। বুকটা ধক করে উঠল। লাজুক ভাবটা সেই মুহুর্তে বুকের ছটফটানিতে পরিণত হয়ে গেল। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম এটা সমুদ্রের কাজ। সবার আড়ালে ওর পিটপিটিয়ে তাকানো, মিটমিটিয়ে হাসি এসব কিছুই আমাকে সাহায্য করেছে বুঝতে যে, এই কাজটি সমুদ্র ছাড়া আর কারো হতে পারে না।
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here