নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব -১৭

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৭

মেলায়তন অনুষ্ঠানে কয়েকজন পুলিশ আনজুমাকে এরেস্ট করে। ছোট আশফি মায়ের আঁচল টেনে পুলিশদের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। অশ্রুজল নিয়ে ছোট আশফি মায়ের আঁচল ছেড়ে তার মায়ের বাহু ধরে দাঁড়ানো পুলিশের প্যান্ট আঁকড়ে ধরে। প্যান্টটা জোরে জোরে টেনে কান্নামাখা গলায় বলে,
‘ছাতো মাম্মাকে,পঁতা আঙ্কেল! ছাতো।’

আশফির ‘এয়ে এয়ে’ কান্নার সুর যেন মেলায়তনের পরিবেশ নিস্তদ্ধতায় ভরে দিয়েছে। পুলিশ বিরক্তের চোখে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে আনজুমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কিরে তোর বাচ্চা ! বাপ কই এর নাকি জারজ সন্তান পালিস। হাহাহা!’

তার সাথের কনস্টেবলগুলো তাদের অফিসারের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসি দেয়। আনজুমা তিক্ষ্ণ চোখে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। পুলিশ অফিসার হোক বা যে পেশার মানুষই হোক না কেন! তার সন্তানের নামে অপমানিত কথাবার্তা। মোটেও সহ্য করে না আনজুমা। অফিসারের জন্য মনে থাকা মর্যাদাকে পায়ের তলায় পিষে ঠাঠিয়ে চড় লাগায় সে। ‘ঠাসস’ করে জোরালো স্বরে থমকে যায় মেলায়তনের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ।
মায়ের সামনে তার নিজের প্রণয়ের মাধ্যমে আসা সন্তানকে ‘জারজ’ বলায় যেন তার অগ্নিরুপ বেড়িয়ে এলো। রাশভারী কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলে,

‘শু’য়ো’রের অফিসারগিরি দেখাবি না। মুখে যা আসছে বলবি আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনবো ভাবছিস। কু’ত্তার মুখ সামলে রাখ। না হলে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব। আশফি আমার গর্ভের সন্তান। তার বাপের নখের যোগ্যও তুই হতে পারবি না। সে এখন নেই তো কি হয়ছে! সে ফিরবে ফিরে তোদের মত দুনীর্তি কর্মচারী অফিসারদের শায়েস্তা করবে। কু’ত্তা,বারো**দের লেজ কখনো সোজা হয় না। আরেকবার যদি আমার সন্তানকে নিয়ে কিছু বলিস তোর মুখ থেতলে দেব শু’য়ো’র কোথাকার!’

আনজুমার চড় দেওয়া ও অশ্লীল মিশ্রিত কথার কারণে অফিসারের মেজাজ বিগড়ে যায়। ঝাঁঝালো গলায় আনজুমার হিজাবের উপর থেকে চুল শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

‘চড় লাগিয়ে ভুল করেছিস। ভেবেছিলাম ইনভেস্টিগেইট করে ছেড়ে দেব। এখন ছাড় না জেলবন্দি করব তোকে। তাও এক অফিসারের গায়ে হাত তুলার দ্বায়ে। চল…!’

আশফি কেঁদে যাচ্ছে। তাকে কোলে নিয়ে চেপে ধরে বিউটিখালা। তারা আনজুমার সঙ্গে এসে ছিল শেষবার বেড়াতে। কেননা গতকালই মেয়েটি জানিয়ে ছিল তারা এ পরিচিত শহর ছাড়বে! ফলে বিউটিখালাকে অগ্রীম অনুরোধ করে ছেলের ইচ্ছে নিয়ে। আশফি চেয়ে ছিল আজকের সংগঠিত মেলায়তন অনুষ্ঠানে মজা করতে। ছেলের আবদার কোনো মা’ই ফেলতে পারে না। অতঃপর বেজায় খোশমনে ছেলে আর বিউটিখালার পরিবারের সঙ্গে অনুষ্ঠানে হাজির হয় আনজুমা। বিভিন্ন স্টল থেকে আশফি ভেবেচিন্তে পছন্দনীয় জিনিস কিনে নিল। খাওয়ার বায়না ধরা যেন তার ছেলের নিজস্ব অভ্যাস। খাওয়ার হলে খেয়েই নেবে। তবে স্টলের থেকে চকলেট,আইসক্রীম নিয়ে খেয়েছে। টিফিন বক্সে ছেলের জন্য সাদাভাতের সঙ্গে অমলেট বানিয়ে এনেছে আনজুমা। তবে ঝড়ের আলামত কেমনে এসে আনন্দ চুরমার করল বুঝে উঠতে পারল না কেউ! সৌহাদ্য তখন স্টেজে ছিল। অনুষ্ঠানের বিশেষ অথিতিদের মাঝে সভাপতিত্ব করতে। এরই মাঝে কয়েকজন পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তি এসে অনুষ্ঠান থামিয়ে দিল। অফিসার মাইক নিয়ে অপরাধীর নাম ও বিবরণসহ তার খোঁজ লাগায়। আশ্চর্য হয়ে গেল সৌহাদ্যের পরিবার এবং আনজুমা। আনজুমা যেন অবাকের চরম শীর্ষে পৌঁছে গেল। গতকালের ঘটনার একদিন না পেরুতেই জেলবন্দির মত জুরুম সে করেছে বলে তার মনে পড়ছে না। বরং সে তো কোনো দোষ করেনি শুধু বিক্রি করেছে বিনিময়ে যোগ্য সুদ পায়নি। সৌহাদ্য ইতিমধ্যে পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করে উঠে।

‘কি বলছেন মেয়েটার অপরাধ কি! আপনি কোনো ইনফরমেশন ছাড়া এক নিদোর্ষ নারীকে এরেস্ট করতে পারবেন না।’

অফিসার কুটকুটিয়ে হেসে বলে,

‘ওই খালিদা এ মশাইকে একটু লিগ্যাল ডিটেলস নোটটা দেখান যেটা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া।’

খালিদা নামের মহিলা কনস্টেবল নোটটি সৌহাদ্যকে দেখায়। তার সঙ্গে আনজুমা নোটটি দেখে তার আত্মা বলে উঠে, ‘এমন জুরুম শাস্তি তার জন্য প্রাপ্য নয়। বরং প্রাপ্য ঐ শ্রেয়া জাফরের।’
সে বিধ্বস্ত চাহনী নিয়ে সৌহাদ্যকে বলে, ‘ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি নিদোর্ষ।’
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তবে পুলিশের এক কথা মেয়েটি নাকি অসাধু ব্যবসা করে প্রচুর মাল বিক্রি করেছে। যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
অফিসার আনজুমাকে পেয়ে তার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগে।
সৌহাদ্য তবুও আনজুমাকে নিয়ে যাওয়া থেকে থামাতে চেষ্টা করে। এতে বাধ্য হয়ে অফিসার পিস্তল দেখিয়ে ধমকে বলে,
‘রাস্তা থেকে সরে যান’। ফলে বুকভরা কষ্ট নিয়ে সৌহাদ্য সরে পড়ে। নিজের মায়ের দিকে অসহায় চোখে তাকায়। আনজুমা সৌহাদ্যের দিকে না তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

‘আপনি প্লিজ আশফির কাছে যান।’

সৌহাদ্য বাক্যহীন চলে যায় আশফির কাছে। মেলায়তনে উপস্থিত জনগণ বিদঘুট নজরে আনজুমাকে দেখে কানাঘুসো করছে। বয়স্ক এক বুড়ি লাঠিতে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ায় অফিসারের সামনে। তিনি রিনরিনে গলায় বলে,

‘মাইয়া নিদোর্ষ কইতাছে ছাইড়া এনা দিবি! ধইরা কই নিয়া যাস হে!’

‘দেখেন দাদি এটা আমাদের দায়িত্ব অপরাধীকে জেলে দেওয়া।’

‘নই তোদের হতা হনমু না।’

‘মাফ করবেন দাদি। আমরাও বাধ্য!’

অফিসার কথাটি বলে এক মহিলা কনস্টেবলকে ইশারা করে। এতে মহিলা কনস্টেবল বুড়িকে সরানোর চেষ্টা করে। তিনি অটুট তার মনের থেকে। বয়স্ক হলেও শক্তি নেই এমনটা নয়। মহিলা কনস্টেবল সরাতে না পেরে ক্ষোভে জোরসরো ধাক্কা দেয় বুড়িকে। এতে বুড়ি মেঝেতে পড়ে। আনজুমা সাহায্যের জন্য এগোতে নিলেই মহিলা কনস্টেবল চড় লাগায় তার গালে। ক্রোধের চোখে চেয়ে নোংরা গালি দিয়ে বলে,

‘অপরাধ করে সাধু সাজিস। জেলে বুঝাব তোকে। চুপচাপ চল নড়চড় করলে একদমে শঠ’নামী বের করে দেব।’

‘আপনি মেয়ে হয়ে অপর মেয়ের চোখের ভাষা বুঝছেন না। উনি না হয় পুরুষ মানুষ। আপনি তো বুঝার চেষ্টা করেন। আইম ইনোসেন্ট! প্লিজ লিভ মিইই!’

মহিলা কনস্টেবল কর্ণপাত করে না আনজুমার কথাগুলো। তিনি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগে। আশফি বিউটিখালার কোলে মোচড়াতে থাকে নামার জন্য। তিনি ক্রন্দরচোখে শুধু চেয়ে আশফিকে চেপে রাখে। কিন্তু আশফি মাকে হারাতে চাই না। বিউটিখালার আঙুলে অনিচ্ছায় মৃদু কামড় দেয়। এতে তিনি মৃদু আর্তনাদ করে আশফিকে নামিয়ে দেয়। তিনি বুঝছে কেনো আশফি এমন করেছে ! বিধেয় রাগের পরিবর্তে ফিচেল হাসি ফুটে তার মুখে। আশফি দৌড়ে মাকে সামনে থেকে জড়ায় ধরে। কান্নার কারণে ছোট ছেলেটির গলা কচলে উঠছে বারংবার। আনজুমার বুক ফেটে যাচ্ছে। হাতে হাতকড়া থাকায় কোলে উঠিয়ে চুমু দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় যেন সে কাতর!
আশফি হিঁচকি তুলতে থেকেও কষ্টমাখা গলায় বলে,

‘মাম্মা যেও না। যেও না মাম্মা।’

আনজুমাও কেঁদে বলে,

‘পাপা তুমি বিউটিখালার সঙ্গেই থেকো হে। তোমার মাম্মা জলদি আসবে কেমন।’

না তবুও যেন ছোট আশফি ছাড়ার পাত্র নয়। মহিলা কনস্টেবল অতিষ্ঠ হয়ে ছোট আশফির হাত ঝাড়া মে’রে ছু’ড়ে দেয়। আশফি বালিপূর্ণ মেঝের উপর পড়ে যায়। পড়ার কারণে তার হাতের কনুই ছিলে যায় মৃদু র’ক্ত ঝরে। কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল তার। আনজুমা চেঁচিয়ে ‘আশফিইইই’ কে ডাকে। মহিলা কনস্টেবলের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তবে পারল না। তার হাতজোড়ায় থাকা হাতকড়ার কারণে। ছোট ছেলেটির চোখজোড়া মায়ের দিকে শায়িত। আনজুমা স্তদ্ধ, বিমূঢ় কলিজার অংশটা ব্যথার যন্ত্রণায় কাঁদছে। আর সে ব্যর্থ মায়ের মত চেয়ে গেল। মহিলা কনস্টেবল গাড়ির ভেতর পুরে নিল আনজুমাকে। কিন্তু সে মূর্তির মত তার ছেলের মায়াবী চেহারার দিকে চেয়ে রইল। গাড়ি চলতে আরম্ভ করে ফলে আশফির চেহারা অদৃশ্য হতে থাকে। চোখের নাগাল থেকে পরিপূর্ণ অদৃশ্য হতেই গগদবিদারী চিৎকার করে উঠে সে।
দুজন মহিলা কনস্টেবল ও একজন ছেলে কনস্টেবলসহ বয়স্ক অফিসারটি শয়তানি হাসি দেয়। অফিসার তার ফোন বের করে একটি বার্তা পাঠায় এক ব্যক্তির নাম্বারে।

‘কাজ হয়ে গেছে।’

ঠিক তার পনেরো মিনিট পর ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে বার্তা এলো।

‘মেয়েটিকে আমার বাসায় নিয়ে আস। তারপর পেমেন্ট নিয়ে তোরা গা ঢাকা দেস।’

‘ওকে উই আর কামিং।’

ফোনটি পকেটে গুঁজে অফিসার মনের আনন্দে সিটে মাথা হেলিয়ে দেয়। আনজুমা তার আবাইয়ার পকেট থেকে চুরিচুপে ফোন বের করে। তাকে কেউ দেখছে না কেননা সে একদম পিছে একলা বসে আছে। কথা বলতে হলে সামনে ছোট আকৃতির জানালা বানানো আছে। সেখান দিয়ে কথা বলতে পারবে।
কিন্তু তার মনে নিকৃষ্ট অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। সে ফোনের বাটন প্রেস করে। স্ক্রিনে জ্বলমলে উঠল তার, আশফি ও সংযুক্ত ছবির একপাশ সুয়াইবের ছবি। ঠোঁট চেপে মনে মনে বলে,

‘আল্লাহ আমায় ধর্য্য দাও। নিশ্চয় তুমি ভালো কিছু কপালে রেখেছো। আমার ছেলের সহায় হোন। নিষ্পাপ ছেলেটি কিছু করেনি! তাকে রক্ষা করো, সামাল দাও। এক মায়ের কোলে তার ছেলেকে ফিরে আসার বাসনা পূরণ করে দাও আল্লাহ্। লা ইলাহা ইল্লাল্লা আন্তা সুবহান্নাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন।’

চোখ বুজে ফোনটি বুকে চেপে রাখে। না জানে, ওদিকে আশফির কি অবস্থা! কেউ তার বাচ্চাটিকে পরম মমতায় আগলে নিয়েছে কি ! নাকি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফেলে রেখেছে। অবশ্যই সে নিশ্চিত যে বিউটিখালার পরিবার আছে। তবুও মনের খুঁতখুঁতুনি রয়েই যায়।

৩১.
অঞ্জয় ঢোক গিলছে টিভির স্ক্রিনে ভেসে উঠা তার আনজুমা ম্যাডামের সঙ্গে হওয়া দৃশ্যপট। চোখ বাঁকা করে সে তার বসের দিকে তাকায়। আরভীক অনড় চাহনী নিয়ে দৃশ্যপট দেখছে। গুরুগম্ভীর চেহারা। ঠোঁটে হাসির কোনো চিহ্ন নেই। তথাপি একরাশ হিংস্র, বর্বরতা ফুটে আছে। চোখজোড়া ইতিমধ্যে রক্তিমবর্ণ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ক্ষণিকের মধ্যে চোখজোড়া হতে ফুটন্ত লাভার ন্যায় অশ্রু ঝরবে। অঞ্জয় খেয়াল করে দেখে। আরভীক তার হাতে থাকা বলপয়েন্টের টিপ কলমের মাথায় ‘টিপটুপ টিপটুপ’ করে টিপে শব্দ বের করছে। টিভির স্ক্রিনে দৃশ্যপট দেখে যেন তার হাতের স্প্রিড বেড়ে গেল। মনে হচ্ছে এখনি এই কলম দিয়ে কিছু করে বসবে সে। অঞ্জয় অসহায় চোখে তাকিয়ে মনে মনে প্রে করছে। সায়াজ আশঙ্কার চোখে চেয়ে আছে। বিষয়টি মোটেও ঠিক হচ্ছে না। ফাহাদ কোথার থেকে যেন তড়িঘড়ি এসে হাঁপাতে লাগে। সায়াজের গা ঘেঁষে বসে তীব্রতর শ্বাস নেয়। দম ফেলে আরভীককে হাঁপানো কণ্ঠে শুধায়।

‘ডুড ডুড ওই পুলিশগুলো ফেইক ইয়ার! আনজুমা ভাবীকে এরেস্ট করে থানায় না, অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।’

আরভীক স্থীর,নিষ্ক্রিয় প্রতিক্রিয়ায় মগ্ন। অথচ ক্ষোভ তার হাতের বলপয়েন্টের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। সেই ফাহাদকে বলে ছিল এ পুলিশের সম্পর্কে খোঁজ লাগাতে। ফলে ফাহাদ প্রতিটা থানার মধ্যে টিভির স্ক্রিনে দেখানো অফিসারের খোঁজ লাগায়। সব থানার অফিসার ফাহাদের দেখানো ছবিটি ভালোমত দেখে। অতঃপর তারা এক কথাই দাবি করে।

‘এ কোনো পুলিশ না। নকল পুলিশ সেজেছে।’

বলপয়েন্টের মাথায় ‘টিপটুপ’ করার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে আরভীক। যার কারণে তার নখের উপরিভাগ ফেটে র’ক্ত ঝরছে। ঘাবড়ে গেল তিনজনে। আরভীককে ধরতে নিলেই সে এক ভয়ানক কাজ করে ফেলে। তিনজনের কারো দিকে না তাকিয়ে। টেবিলের সামনে গিয়ে অফিসার আর খালিদা নামের মহিলাটির ছবির উপরে র’ক্তে’মাখা কলমটি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে কাগজটি ছিন্নভিন্ন করে দেয়। র’ক্তে কলমের সঙ্গে কাগজটিও মাখামাখি প্রায়।
নির্জীব গলায় তিনজনকে বলে,

‘শুন ফাহাদ তুই এখনি এদের ট্র্যক কর। অঞ্জয় তুই গিয়ে এখনি আমার ফোর্সদের আসার আদেশ দেই। সায়াজ যারা যারা এই রিপোর্টিং করে চ্যানেলে প্রচার করছে তাদেরকে ধর আর কাকে কোথায় নিয়ে হাজির হতে হবে তা তোরা নিশ্চয় জানিস!’

তিনজনে ‘ওকে লিডার’ উচ্চস্বরে বলে স্যালুট করে। আরভীক আসল অপরাধীদের দিকে তাকিয়ে চেহারায় বর্বরতা তৈরি করে বলে,

‘আমার প্রাণেশ্রয়ী নারীর উপর নিযার্তনের শাস্তি ভয়ানক। এ শাস্তি কেমন হবে ভাবতেও পারবি না তোরা। এমন শাস্তি দেব যে তোদের রুহ্ কেঁপে উঠবে। আমার কলিজার খু’নে’র উপর যে হাত,পা দিয়ে চড়,ধাক্কা দিয়েছিস না। সে হাত,পা যদি কেটে না দেয় তবে আমার নামও আরভীক ফাওয়াজ না। এতদিন দুনিয়া আমার রসিকতা দেখেছে। এবার দেখবে হিংস্র পশু জাগলে কেমন তান্ডব শুরু হয়। এর পরিণতি!’

আরভীক এর বলা প্রতিটা বাক্য যেন তিনজনের শ্রবণে গরম লাভা ভরে দিয়েছে। সত্যি হিংস্র পশুর রুপ কেমন সেটা আরভীক এর মুখশ্রী দেখলে যে কেউ আন্দাজ করে ফেলবে। তিনজনে ঢোক গিলে কাজে লেগে পড়ে।
আরভীক শান্ত মনে চোখ বুজে রাখে। আকস্মিক ফোনে কল আসায় ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে। মেয়েলী কণ্ঠে জানান দিচ্ছে ‘ড্যাড’ শব্দটি। কল রিসিভ করে সালাম দেয়। আরাজ সাহেব টিভির দিকে বিস্ময় চোখে চেয়ে আরভীককে বলে,

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা এইসব কি দেখছি! আনজুমা মাকে এমনে কেনো নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ! ও না তোর অফিসে চাকরী করে। তাহলে..।’

আরভীক বুঝল তার বাবা বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়েছে। তিনি আনজুমাকে খুব বেশি পছন্দ করে, যেন সে তার দুচোখের মধ্যমণি। আশফিকে পেলে যেন তিনি নাতীর আদর যত দেবে তত কম। সেই মেয়ে ও বাচ্চার সঙ্গে হওয়া দৃশ্যপট দেখলে পরিচিত ব্যক্তিগণ উত্তেজিত, ক্ষুদ্ধ,কুপে ফেটে উঠবে স্বাভাবিক! চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস টেনে আহ্লাদী কণ্ঠে শুধায়।

‘ড্যাড ইউ জাস্ট ডোন্ট ওয়ারি। আই উইল হ্যান্ডেল ইট!’

‘হে বাবা একটু দেখ মেয়েটা নিদোর্ষ আমি চোখ দেখেই বলতে পারি। আমার ছেলেও নিদোর্ষ ছিল কিন্তু শয়তানগুলো ওকে বাঁচতে দেয় নেই। ওই যে…..।’

আরাজ সাহেব আবেগে আপ্লুত হয়ে অতীতের পাতা ঘাঁটতে লেগে ছিল। পরক্ষণে থেমে যায়। আনজুমার সঙ্গে হওয়া দৃশ্যটির মধ্যে আজীবের সঙ্গে হওয়া চিত্র ভাসছে। ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখের কোণায় জমা হওয়া পানি মুছে নেয়। আরভীক ধরা সূচালো গলায় বলে,

‘ড্যাড তখন ভাইকে বাঁচাতে পারিনী। কিন্তু চিন্তে করো না আনজুমার সাথে অন্যায় হতে দেব না। আসল অন্যায়কারীদের প্রতিদান দিতেই হবে। বাই হুক অর বাই ক্রুক!’

আরাজ সাহেব নিবার্ক চোখে ‘হুম’ বলে ফোন রেখে দেয়। তিনি টিভির থেকে চোখ সরিয়ে পাশে থাকা দেওয়ালের দিকে তাকায়। সেখানে ছোট ফ্রেমে তিনজনের ছবি বাঁধানো। তিনি ও তার দুপাশে দুই মানিকরত্ন আজীব ও আরভীক। আরভীক এর চেহারার দিকে তাকিয়ে সার্থকপূর্ণ গর্বের শ্বাস নেয়। আপনমনে বিড়বিড়িয়ে বলে,

‘তুই রক্ত, আমার রক্ত, দিনশেষে এর সত্যতা কেউ জানবে না। কেউই না। তোর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলে সবই জানবি তুই। আমি নিজেই জানাব।’

আরাজ সাহেব কি ভেবে যেন তড়িঘড়ি ফোন নিয়ে লিয়াকত সাহেব কে কল দেয়। লিয়াকত সাহেব নিজের রুমে টিভিতে আজকে ঘটে ঘটনাটি দেখেও পাত্তা দিল না। কে মরছে, কে, কি করল তার কিছু যায়, আসে না! বিধেয় তিনি চ্যানেলের পরিবর্তে নোংরা,অশ্লীলতাপূর্ণ বই ও ছবি দেখে মনকে তাজা করার জন্য প্রস্তুত হয়। একটি বই সেল্ফ থেকে নিয়ে পড়তে নিলেই হঠাৎ কল আসায় বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে। বইটি বালিশের উপর রেখে ফোনের উপর জ্বলজ্বল করা নামটি দেখে চমকে যায়।
‘আরাজ’ কল দিচ্ছে তাকে ব্যাপারটি যেন হাস্যকর লাগল তার। দমফাটা হাসি আঁটকে কলটি রিসিভ করে। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘কি অবস্থা বেয়াই সাহেব কি ভেবে এই মশাইকে কল দিলেন!’

‘দেখ লিয়াকত তোর সঙ্গে হাসিঠাট্টা করার কোনো রুচি নেই আমার। আমি শুধু এক কথা বলতে কল করেছি। তোর আনা মেয়ের সম্বন্ধ সম্পর্কে আমি পরে ভেবে জানাব। কালকে আসতে পারব না পার্টিতে। সো প্লিজ ম্যানেজ ইট। উই আর সরি।’

কথার ইতি টেনে তিনি লিয়াকত সাহেবের বিপরীত মন্তব্য শুনার পূর্বেই কল কেটে দেয়। অপরদিকে রাগে ফোঁসতে থাকে লিয়াকত সাহেব। ভেবে ছিল আহামরি কোনো সংবাদ শুনবে! কিন্তু তার কল্পনায় আগুন ধরিয়ে শান্তিভাবে কল কেটে দিল ঐ আরাজে। মন স্থীর রেখে ফোনটি নিয়ে জাফরের ফোনে কল দেয় সে।

এদিকে আরাজ সাহেব ফোন রেখে সোফায় বসে। কালকে অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারটি নিষেধ করে মনে শান্তি পেল তিনি। কেননা আজ আরভীক এর মতিগতি জানা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। এতে মেয়ে দেখার কথা উঠালে রেগেমেগে কিছু করে বসবে। অন্যথায় আনজুমার সঙ্গে আরভীক এর ঝগড়া সাপে-নেউলের মত হলেও খুনসুটিময় হয়। যা আরভীক কে দেখে তিনি বুঝেছে। যারা আনজুমা ও আশফির সঙ্গে অন্যায় করেছে।
না জানে কি হতে চলেছে সামনে!#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#ধামাকা_পর্ব

নিভু নিভু চোখে আনজুমার জ্ঞান ফিরে এলো। অচেতন অবস্থায় তার সঙ্গে কি ঘটেছে অজানা তার! নিজেকে সে চেয়ারে হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। শরীরের ব্যথা-যন্ত্রণা সবে অনুভব করে সে। এতক্ষণ অজ্ঞানরত থাকার কারণে যন্ত্রণার অনুভূতি স্পর্শ করেনি তাকে। অথচ এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সে। তাকে অজ্ঞান করে বিধ্বস্ত ভাবে মা’রা হয়েছে। কিন্তু আতঙ্কে আনজুমার মন বিষিয়ে উঠে। শরীরে কি এই যন্ত্রণা মা’রে’র নাকি ধ’র্ষ’ণের শিকার হলো সে! পবিত্র শরীরে কি কেউ কাটা ফুটিয়েছে ইয়া আল্লাহ্। ভেবেই গলা শুকিয়ে গেল আনজুমার। সে বুঝছে না শরীরের নির্মম ব্যথাগুলো কিসের!
মাথা উঁচিয়ে কেউ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করে। তবে রুমটা অন্ধকারময়। রুমের ভেতরে কোনো জিনিস আছে বলে মনে হচ্ছে না তার। কাঁপা কাঁপা গলায় খেকিয়ে উঠে।

‘কে কেউ কি আছেন! প্লিজ হেল্প মি। কেউ শুনছেননন প্লিজজ হেল্প!’

আনজুমার শব্দবাক্য পুরু রুমেই বিরাজ করছে। বাহিরে তার আওয়াজ গিয়েছে কিনা বুঝা মুশকিল। নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে সে। হাত জোরে জোরে ঠেলে দড়ির ধার হালকা করার প্রয়াস করে। তৎক্ষণাৎ কারো সচল পায়ের শব্দ তার শ্রবণইন্দ্রিয়ে প্রবেশ করে। ক্ষণিকে অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) দরজা খুলে গেল রুমের। ভেতরে এলো কয়েকজোড়া পায়ের মালিক। অজ্ঞানের ভান ধরে শুকনো ঢোক গিলে আনজুমা। লাইটের নিচে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। ফলে সে চোখ নির্মলভাবে বন্ধ রেখেছে। যেন নিখুঁত প্রমাণ হয় সে এখনো অব্দি অজ্ঞান!

‘মা** আমাকে চড় মেরে ছিল! মন তো চাচ্ছে এক চড়ে বিছানায় ফেলে শরীর লুপে খাই।’

আনজুমা এ কণ্ঠের মালিককে চিনতে পেরেছে। এই যে সেই গু’ন্ডা বদ’মা’ইশ অফিসার! অফিসারের কথা শুনে তার সঙ্গে আসা ব্যক্তিটি বাঁকা হাসি দেয়। আনজুমা অপর ব্যক্তির অস্তিত্ব রুমের মধ্যে অনুভব করল। কিন্তু চোখ বন্ধ থাকার অভিনয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। আকস্মিক অফিসার সেই ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে শুধায়।

‘এক কাজ করি তুই আমাকে যে ডাবল পেমেন্ট দিবি বলছিলি। তা তুই নিজের কাছে রেখে দেই। আমি এ মালটারে লুপে খেতে নিয়ে যাব। রক্ষিতা বানাবো আমার।’

কথাটি শুনে আনজুমার অন্তআত্মা কেঁপে উঠে। চেয়ারের হ্যান্ডেল তাদের চুক্ষগোচরে শক্ত করে মুঠো করে ধরে। অফিসারের মুখের কথায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো অপর ব্যক্তি। সে আনজুমার কাছে গিয়ে তার চৌপাশ ঘুরে দেখে। তার মুখের উপর ঝুঁকে ব্যক্তিটি অফিসারের উদ্দেশ্যে বলে,

‘হুম নট এ ব্যাড আইডিয়া! জমবে বিষয়টা। তুই এরে নিজের জন্য নিয়ে যাহ্। আমাকে না হয় ভরে দিবি ব্যাংকে। এই দেশি মেয়েদের দিয়ে আমার জ্বালা মেটে না। আমি বিদেশিতেই মতঁ থাকি বেশি। মজা পায় অনেক। এরে ইচ্ছে করে ধরেনি বুঝছস! এ মেয়েটার সঙ্গে মিস্টার ফাওয়াজ এর গভীর সম্পর্ক। আর ঐ ফাওয়াজকে অপমান না করে কষ্টের লাইনে আনার বেস্ট ওয়ে এ মেয়েটা। সেদিন দেখেছিলাম এ মেয়েটার প্রতি মিস্টার ফাওয়াজের ডেস্পারেট হওয়া। এমন শুধু প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্যেই হয়। ডেস্পারেট দেখেই বুঝেছি। মেয়েটা কাজে আসবে আমার। এজন্য জালের গুটি বানিয়েছি মিস্টার ফাওয়াজকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমার অপমানের শোধ না নেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাব না। তার জন্য বড় পদক্ষেপ এরে তোর কাছে বেছে দেওয়া। এনি ওয়ে মালটা বেশ স্ফট রাইট!’

‘উফফ মালের পর্দার উপর থেকেই খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে ডক্টর ডেভিড! তুই তো তোর অপমানের শোধ নেওয়ার তাড়ায় আছস। আমি আছি আমার ভোগবস্তুকে হাতে পাওয়ার আপোষে। কবে যে মালটার উপর নিজের শরীর এলিয়ে দেব উফ! ভাবতেই ঠোঁট জিভে লাভা চলে আসছে।’

অফিসার এপাশওপাশ পায়চারী করতে থাকে। ডক্টর ডেভিড কুৎসিত হাসি দেয়। সে আনজুমার কাছ থেকে সরে আসে। তার হাতের পার্লস চেক করে দেখে জ্ঞান ফিরেছে তবে ক্লান্তিজনক কারণে ঘুমিয়ে আছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে মস্তিষ্কে এঁটে রাখে। অফিসার নিশ্চুপ পায়ে হেঁটে এলো আনজুমার নিকটে। তার নরম তুলতুলে হিজাবের মধ্যে উম্মুক্ত মুখশ্রীতে হাত লাগায় সে। গালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে থেকে হাতের স্পর্শ আনজুমার ঠোঁটে রাখে। সেটার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেয়েটার ঠোঁট ভিজে আছে ঘামের কারণে। যা অফিসারের শরীরে আগুন ধরিয়েছে। সে ঠোঁটের চৌপাশ স্লাইড করতে থেকে মুখ আগায়। যেই না ঠোঁটে ঠোঁট মেলবে তার পূর্বেই ডক্টর ডেভিড থামিয়ে দেয়। বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে সে ডক্টরের দিকে তাকায়। ঝুঁকে ছিল ঠোঁটের লোভ মেটাবে বলে। কিন্তু ডক্টরের থামানোতে সে আর্জিটুকু মিটে গেল। অতিষ্ঠ চোখে চেয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘থামিয়েছিস কেন! আমার জিনিসে আমিই ছুঁবো তো নাকি।’

বাক্যহীন ডক্টর ডেভিড তার বাহু ধরে দরজার বাহিরে নিয়ে গেল। আনজুমার চোখ খুলে তৎক্ষণাৎ জোরালো শ্বাস ছাড়ে। চোখে জমানো অশ্রুজল ফেটে গাল বেয়ে পড়তে থাকে। তার অন্তর ফেটে যাচ্ছে পরপুরুষের বিশ্রী ছোঁয়ায়। যে শরীর,যে গাল,ঠোঁটে শুধু সুয়াইব নাম স্বামীর ছোঁয়া আছে। সেখানে কেমনে এই অমানুষ তার ছোঁয়া দিতে চেয়ে ছিল।
তবে আশ্চর্যের বিষয় আরভীক এর ছোঁয়াও তো সে পেয়েছে তার কোমরে ও গালে! তখন কেনো পরপুরুষের নোংরা ছোঁয়া অনুভব হয়নি তার। ভেবে কুল পাচ্ছে না। বরং আরভীক এর ছোঁয়ায় সে তার স্বামীর অজানা অনুভূতি পায়। চোখ বুজে চিৎকারহীন অশ্রুসিক্ত করে। কেননা আনজুমা জানে তার চিৎকারে অফিসার বুঝে যাবে যে তার চেতনশক্তি ফিরে এসেছে। তখন তাকে জোর জবরদস্তি করে ভোগ করবে। এখন অত্যন্ত চেতনহীন হওয়ায় বারংবার ডক্টর ডেভিড থামিয়ে দিয়েছে। আর এই ডক্টর ডেভিডের রুপ দেখে আনজুমা হতবাক। এখন বুঝতে পেরেছে আরভীক এর করা বাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্য! কেনো সে ঐদিন ডক্টর ডেভিডের সঙ্গে অপমানজনিত কথাবার্তায় লিপ্ত হয়েছিল। আর আনজুমা নিজেই অনুতপ্ত ! আরভীককে না বুঝে তার রসিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। একটা প্রবাদ আছে না!
‘মানুষের মন বোঝা দুঃসাধ্য জটিল বিষয়। হাসলেই মানুষ সুখি হয় না, কাঁদলেই মানুষ দুঃখী সেটা বুঝা যায় না। সবকিছুর আড়ালে রহস্য আর রহস্য। মানুষটাকে সবসময় রসিকতাপূর্ণ দেখে বলে সে বুঝেনি মানুষটা অন্তর থেকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি ভাবে ও বুঝে! আনজুমার নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে। বিপদ সামনে থেকেও বুঝেনি। অথচ আরভীক আজ্ঞা করেছে প্রতিবার! আনজুমা নিজের বোকামিতে ফেঁসেছে, সঙ্গে তার নিষ্পাপ বাচ্চাটিও কেঁদেকুটে নাজেহাল দশায় কাটাছে ঐখানে!
আশফির কথা মনে পড়তেই আনজুমার আর্তনাদ বেড়ে গেল। ‘উউমম উমম’ করে কেঁদে গেল।
মনে মনে শেষবার আল্লাহর কাছে চাইছে সব যেন পরিশুদ্ধ হয়ে যাক! চমৎকারের ফেরেশ্তা পাঠিয়ে দেওয়া হোক!

অন্যদিকে, অফিসার রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে ডক্টর ডেভিডের উপর। সে বাক্যহীন তাকে মেয়েটার পাশ থেকে নিয়ে এসেছে। এখনো ধরে রেখেছে যেন সে তার তদারকি করে। অফিসার তার বাহু ঝামটা মেরে ডক্টর ডেভিডের হাত ছাড়িয়ে নিল। ডক্টর ডেভিড দেখে নিজের হাত উঁচিয়ে ইনোসেন্ট বোঝায় নিজেকে। আহ্লাদী গলায় শুধায়।

‘মিষ্টি খেতে হলে ধর্য্য ধরতেই হয়।’

‘কিসের ধর্য্য যতক্ষণ মাইয়াটারে রক্ষিতা না বানায়ছি। ততক্ষণ শান্তি পাবো না। তোর আস্তানা থেকে কবে বের হতে হবে ক জলদি।’

‘আরে ভাই রিলেক্স! তোর কি লাগে এই খেলায় আমি আর তুই সামিল আছি ভাবছিস। না রে, না। আমার মাথায় এতদূর পৌঁছানোর কল্পনাই ছিল না।’

‘মানে!’

‘হুম আনজুমাকে ধরে আনতে আমার উপর সর্বোচ্চ প্রেসার ক্রিয়েট করেছিল শ্রেয়া জাফরে। এই হলো খেলার প্রধান মালকীন। তোর কি মনে হয় রিপোর্টিং হওয়া তোকে মেলায়তনে পাঠানো। সব বুঝি আমি করেছি উহুম! আমি না। তোকে সুযোগও করে দিয়েছে এই শ্রেয়া জাফরে। অসাধু ব্যবসায়ের কথাও এই মেয়েই আমাকে বলেছে।’

‘ওয়াট এ ডেঞ্জারাস গার্ল! ভাবা যায়।’

‘ওয়েট এন্ড সি কল দেয় শুনে দেখ তার কথাগুলো!’

ডক্টর অফিসারের সঙ্গে কথার ইতি টেনে ফোন বের করে। কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল ডায়ল করে। পরক্ষণে ঐপাশের ব্যক্তি কল রিসিভ করে উত্তেজিত কণ্ঠে শুধায়।

‘কি ডক্টর কাজ হয়েছে! মেয়েটারে ধরতে পারলে।’

‘ইয়েস ম্যাম। সে এখন আমাদের আন্ডারে আছে।’

‘গুড ভেরি গুড। পেমেন্ট ঠিকমত পেয়ে যাবে। আর ভুয়া অফিসারকে বলবে গা ঢাকা দিতে। আর একটু অপেক্ষা করো আমার গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে। যতক্ষণ ঐ আনজুমাকে কয়েক মা’ই’র না লাগায় ততক্ষণ শান্তি পাবো না। এই শ্রেয়া জাফরকে গা’লিগা’লাজ করে ছিল, আমারই আরভীকের সঙ্গে ঢলাঢলি মে’রেছিল। এত সহজে কেমনে ছেড়ে দেব। মা’ইর লাগিয়ে মন শান্তি করেই মেয়েটারে বেছে দেব। এ শ্রেয়া জাফর কথার খেলাফ হয় না।’

বলে কল কেটে দেয়। ডক্টর চোখের ইশারায় অফিসারকে বলে, ‘বুঝছস এবার’। অফিসার হাঁফ শ্বাস ছেড়ে কোমরে হাত রেখে মাথা নাড়ে। মেয়েটার কথা আর স্বভাবে বোঝা যায় ! আরভীক বলতে পাগল সে। এখন তাদের একটাই কাজ আনজুমাকে বন্দি করে রুম তালাবদ্ধ করে রাখা। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রেয়া আসেনি ততক্ষণ পর্যন্ত অফিসার মেয়েটাকে পাবে না। ভেবেই রাগে গা জ্বলে উঠছে তার। তবে একটুখানি অপেক্ষা করে নেবে এ আরকি!
ডক্টর ডেভিডকে প্রশ্ন করে।

‘শ্রেয়ার মা’ই’র লাগানোর কথা জায়েজ! তবে তুই কেন প্রথমদিকে আঘাত করছিলি।’

‘বা’লচু** মেয়েটারে দেখে আমার চোখে অপমানের লাভা ফুটে উঠছিল। তাই তো নিজের হাত নোংরা করিনী। ঐ দুই মহিলারে দিয়ে আঘাত করিয়েছি।’

অফিসার ‘হু হু’ করে হেসে ডক্টরের কাঁধে হাত রেখে ‘শাবাশ শাবাশী’ দেয়। তারা হেঁটে পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের দিকে গেল। সেখানে মদের বোতল রেখে ছিল খাওয়ার জন্য। এখন খাওয়ার পর্বই চলবে তাদের।

৩২.
আশফি থেমে থেমে কেঁদে হিঁচকি তুলছে। ছোট বাচ্চাটির শরীর একদিনেই নেতিয়ে গেছে। কিন্তু কেনো যেন আরভীক এর কোলে এসে থেমে গেল বাচ্চাটির কান্না! তার কোলে মাথা রেখে লেপ্টে রইল। আরভীক উঠানে আশফিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাঁ শাঁ করে স্বল্পখানিক বাতাস বইয়ে চলছে। ইতিমধ্যে আনজুমা কোথায় আছে তার খবর জেনে গিয়েছে! তবে হানা দিচ্ছে না এখনো অব্দি। তার মনের কল্পনামাফিক সব কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই সে! আশফি ঘুমের ঘোরে,
‘পাপ্পা মাম্মাকে এনে দাও পাপ্পা পাপ্পা মাম্মাকে প্লিত!’
বলে কাতরে উঠে। আজকের ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনাটি বাচ্চাটির মনের গহীনে গেঁথে গিয়েছে। না হলে ঘুমের ঘোরেও কোনো বাচ্চা দৃশ্যটি ভেবে বিড়বিড় করবে!
আরভীক আশফির চোখ-মুখে ও মাথায় গভীরভাবে চুমু খেয়ে দেয়। তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘চ্যাম্প নট ক্রাই বেবি! তোমার পাপ্পা মাম্মাকে নিয়ে আসবেই।’

‘বাবা!’

নিজের বাবার কণ্ঠ পেয়ে আরভীক পিছু ঘুরে। আরাজ সাহেবের চিন্তিত মুখশ্রী এখন অব্দি কাঁটেনি। দিন পেড়িয়ে রাতের প্রহর চলছে। সবেই তিনি অফিসের কাজ দেখে শেষ করে এসেছে। আজ সারাদিনের কাজ তিনি সামলেছে। অঞ্জয়রা আনজুমাকে খোঁজার পথে ছিল।
আরভীক তার বাবাকে দেখে মৃদু হাসি দেয়। হাসিটি তাচ্ছিল্যে আরাজ সাহেব তা বুঝতে পারল। ছেলে তার মনের দিক থেকে কষ্টে আছে! তিনি এগিয়ে গিয়ে আশফিকে তার কোলে দেওয়ার জন্য ইশারা করে। আরভীক পলকহীন আশফির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘নো ড্যাড হি ইজ মাই চ্যাম্প ! একে নিয়ে বুকে জ্বলা আগুন ধামাচাপা দিচ্ছি। আজকের রাত তাদের শেষ রাত করে দেব। যে এক মাকে তার ছেলের থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। আমার খু’নে’র উপর র’ক্ত মাখিয়েছে। তাদের র’ক্তে এসিড ঢেলে দেব।’

চোয়াল শক্ত করে আরভীক বলে। তার মুখশ্রী তৎক্ষণাৎ হিংস্র,বর্বরতায় চেয়ে গেল। আশফি ঘুমন্ত হওয়ায় এই মুখ দেখার সাধ্য হয়নি তার। না হলে সেও ঘাবড়ে কেঁদে উঠতো। আরাজ সাহেব ছেলের পিঠে হাত চালিয়ে আশ্বস্ত করে। আরভীক নিবিঘ্নে আশফিকে তার কোলে দিল। বাবা না হলেও বাবার মত অনুভব হওয়া আরভীক এর কাছ থেকে ছন্নছাড়া হতেই জেগে উঠে আশফি। কান্নামাখা চোখে একপলক আরাজ সাহেবকে দেখে আরেক পলক আরভীক এর দিকে তাকায়। আরাজ সাহেবকে উপেক্ষা করে হাত নাড়িয়ে আরভীক এর কাছে যাওয়ার জন্য কেঁদে উঠে। আরভীক এর চোখ জ্বলছে যাচ্ছে। এ বাচ্চাটির সাথে তার সম্পর্কটা কোথায় সে জানে না! তবে সে মনপ্রাণ দিয়ে বাচ্চাটিকে নিজের খু’ন’ বলে দাবি করে। কেননা সে ভালোবাসে আনজুমাকে! সেই প্রথমদিনে একপলক দেখাতেই প্রাণেশ্রয়ী বানিয়ে ফেলছিল। তবে একরাতের ঘোর অপমানে অন্ধকারে ধেবে গিয়ে ছিল একটুখানি ভুলের জন্য। এরপর থেকে আর কোনো শোধের পেছনে না ছুটে ভালোবাসা আদায় করার লোভে ছুটে চলে ছিল আনজুমার কাছে। মেয়েটি তার কাছে চঞ্চলহীন হলেও বোঝা যায় সে চাই কাউকে! স্বামী হিসেবেই চাই। তাই হয়তো তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এবার সেও হাল ছাড়বে না। মনে মনে পণ করে নেই আরভীক।

‘এবার কোনো কথা নেই, সোজাসুজি বিয়ের মন্ডপে কবুল বলায় ছাড়ব। যতক্ষণ ধরে আশফির বাবা হওয়ার অধিকার পাব না ততক্ষণ নাছোড়বান্দার মত লেগেই থাকব।’

ভেবেই তার মনে একচিলটি হাসি ফুটে উঠে। মুচকি হেসে আশফির গাল দুহাতের আদলে নিয়ে বলে,

‘পাপ্পা তোমার মাম্মাকে আনতে যাচ্ছে। দেখবে মাম্মা এসে এত এত চুমু দেবে তোমাকে।’

‘তত্তি!’

‘হুম বুকভরা নিঃশ্বাসের সত্যি রে চ্যাম্প!’

বাজে দিনের দৃশ্যটি কেটে পরিশেষে বাচ্চাটি খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। এতক্ষণের কষ্টের গ্লানি যেন তার মন থেকে উড়ান ছুঁ হয়েছে। আরাজ সাহেব চোখের ইশারায় যেতে বলে আরভীককে। সেও মাথা নেড়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে উঠানের পাশে গ্যারেজে ঢুকে। গ্যারেজের দরজা খুলে তার লাইফস্ট্যান্ডার্ড বাইক চালু করে। পুরু দমে মাফিয়ার ফিটে ফাইটে যাবে সে।
বাইকের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে হেলমেট পরে ডান হাতের দুই আঙুল দেখিয়ে ‘বাই’ জানায়।
আশফি হাত তালি দিতে থেকে তার আরভীক নামক বাবার দিকে চেয়ে থাকে। আরাজ সাহেব ছেলের কাছ থেকে সুখ পেয়ে গর্ব বোধ করছে। আজ সারাদিন তার মনটাও বিষন্নতায় চেয়ে ছিল। আশফির জন্য মনটা তার আনচান করছিল। ফলে সেই মনের গহীনতা কেমনে যেন আরভীক জেনে গিয়ে ছিল। সে স্বেচ্ছায় আশফিকে আনজুমার প্রতিবেশির কাছ থেকে নিয়ে তার বাসায় এনেছে। আশফিকে পেয়ে আরভীক নিজ হাতে আনজুমার কাছ থেকে দেখা উৎসাহে সাদাভাতের সঙ্গে অমলেট বানিয়ে খাওয়েছে। ফিচেল হাসি দিল তিনি। আশফিকে নিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। তিনি মেঝেতে আশফিকে রাখতেই সে বাসার মধ্যে থাকা গার্ডগুলো আশপাশ ঘিরে খেলতে থাকে। গার্ডগুলোর বেশ মায়া হলো বাচ্চাটির উপর। তারাও আশফির সঙ্গ দিয়ে খেলতে থাকে। আরাজ সাহেব চিন্তামুক্ত নজরে সোফায় বসে দেখে যায়।

৩৩.
ফাহাদ,সায়াজ এবং অঞ্জয় ফোর্স নিয়ে পরিত্যক্ত বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে বেঁধে আনা হয়েছে অপরাধের বেশভূষায় রিপোটার্স কে। দুজন রিপোর্টার আনজুমার ভিডিও ভাইরাল করে ছিল। সায়াজ যেহেতু ক্রাইম রিপোর্টার। সেহেতু সে আয়েশে ভাইরালকৃত ভিডিওটা সার্ভার থেকে মুছে ফেলে। এতে প্রতিটা জায়গা থেকে ভিডিওটি তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যায়। অঞ্জয় তার সঙ্গে আসা ফোর্সকে আদেশের সুরে প্রস্তুত থাকতে বলে।

‘আরভীক কবে আসবে রে ডুড!’

‘সে বলছে রাস্তায় আছে এখনি পৌঁছে যাবে নাকি!’

‘হুম কেন জানি আজকের গেমটা নাইস হবে মনে হচ্ছে!’

সায়াজের কথায় ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে চোরাচোখে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘নাইস নাকি ডেড হয় দেখ!’

থতমত খেল সায়াজ! অঞ্জয় মিটমিটে হাসি দেয়। সে জানে আজ ধামাকা হবে। তাও তার বসের ফার্মহাউজে নয় এই পরিত্যক্ত বাড়িতে। প্রথমে তার বস চেয়ে ছিল ফার্মহাউজে খেলা আরম্ভ করার। পরক্ষণে মত পাল্টে ফেলে সে ! আরভীক চাইছে আনজুমাকে যেখানে বন্দি করা হয়েছে সেখানেই খেলার আয়োজন করার। তার কথা অনুযায়ী সবাই এখন পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

অন্যদিকে ডক্টর ডেভিড মদ গিলার পরও হুঁশে থেকে বসে আছে। কেননা দেশি মদ তার জন্য চলে না। বিদেশি মদই তার হুঁশ উড়ায়। অথচ অফিসার খেয়ে সে তার নেশার ঘোরে বকবক করেই যাচ্ছে। ডক্টর ডেভিড ঘড়ি দেখছে আর অসম্ভব কিছু পাওয়ার জন্য অস্থিরচিত্ত ভাবে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। মুখ ঘুরাতেই দেখে অফিসার আনজুমার রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ দেখে ডক্টর ডেভিড আর থামায়নি। নেশাখোর কে থামানো সম্ভব না। ফলে তিনি আয়েশ ভঙ্গিমায় অন্য মদের বোতল মুখে পুরে নেই।
অফিসার তাল-মাতাল হয়ে ঢুলুঢুলু পায়ে পকেট থেকে চাবি বের করে। আনজুমা কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে থরথর করে কাঁপছে। সে বুঝেছে প্রথমদিকের ব্যথাগুলো মা’ই’রের কেননা তার শরীরে নিযার্তন চললে তলপেটের করুণ অবস্থা হতো। এখন যে দরজা খুলছে সে নিশ্চিত মাতাল হওয়া অফিসার! কেননা তাদের কথাবার্তা সব শুনেছে জানালা দিয়ে। অফিসার ভেতরে এসে দরজা আঁটকে দেয়। ‘হু হা’ করে বিশ্রী ভয়ানক হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল। কুৎসিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আনজুমা চিৎকার করে ‘বাচাঁওওও প্লিজ!’
বলে কাতরানো আরম্ভ করে। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দড়ি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নড়চড় করতে থাকে। অফিসার অতিষ্ঠতায় সপাটে চড় লাগায়। গালের ব্যথায় সে মরমরা প্রায়। তবুও হাল ছেড়ে দিল না। পা দিয়ে অফিসারকে ল্যাং মেরে মেঝেতে ফেলে দিল। সে ব্যথা পেয়ে চোয়াল শক্ত করে ভয়ংকর দৃষ্টিতে আনজুমার দিকে তাকিয়ে ‘খা**’ বলে নোংরা গালি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সে ভেবে নিল মেয়েটাকে বাঁধা অবস্থায় ইজ্জতহরণ করবে!
ফলে ধীরস্থির ভাবে আনজুমার হিজাব টান দেয়।
আনজুমা চিৎকার চেঁচামেচি করে ‘না না বাঁচাওওওওও প্লিজজ।’ #নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#ধামাকা_পর্ব_০২(স্পেশাল)

অফিসার আনজুমার হিজাবে টান দিতেই তার হাতের মধ্যে বু’লে’ট লাগে। তীব্র আর্তনাদে হাত চেপে আতঙ্কিত চোখে সামনে তাকায়। কাউকে না দেখতে পেয়ে হাতের দিকে দৃষ্টি দেয়। বুলেট লেগে হাতের মধ্যে ছক কষে গেল যেন। র’ক্ত ঝরছে অগণিত। আনজুমা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আকস্মিক কারো ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ভীতি মনভাব পালিয়ে গেল তার। থমকানো চোখে দরজার দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে ভেতরে এলো কয়েকজন পুরুষ। তার মধ্যে আনজুমার চোখ আঁটকে যায় আরভীক নামক পুরুষের উপর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট কালারের মিক্সড ফুল হাতা শার্ট,হাতের হাতা ফোল্ড করা,ডার্ক ব্লু প্যান্ট ড্রেসআপে পার্ফেক্ট মাফিয়া লাগছে তাকে। মাফিয়ার মতই তার চেহারায় একপ্রকার ঝাঁজমিশ্রিত অতীব হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। পিস্তল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অফিসারের কাছে গেল। সে হতবাক চোখে ভীতিগ্রস্থ হয়ে তাকিয়ে আছে মিস্টার ফাওয়াজের দিকে। কখনো তার আচরণ বা রাগ সম্পর্কে ধারণা পায়নি সে। অথচ এখন যেন সে নিজের সামনে যম দেখতে পাচ্ছে। আরভীক নিজের কপালে পি’স্ত’ল দিয়ে চুলকাতে থেকে অতিষ্ঠ ভরা গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘যে প্রাণেশ্রয়ীকে আমি ভালোবেসে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দেই। সেই প্রাণেশ্রয়ীর গায়ে ফুলের টোকা দেওয়ার সাহস কেমনে হলো তোর হে! কোন হাত দিয়ে জানি চুল ধরছিলি।’

ভাবান্তর হওয়ার ভান ধরে চোয়াল শক্ত করে অফিসারের চুল শক্তপোক্ত হাত দিয়ে খামচে ধরল। চুলে চাপ পড়ায় গগদবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে সে। আরভীক মুখ থেকে ‘উফ বিরক্তিকর’ শব্দ বের করে অঞ্জয়ের দিকে তাকায়। আদেশের সুরে বলে,

‘শোন একটুকরো গোবরমাখা শুকনো কাপড় দেই। হা’রা’ম’জা’দার মুখ বন্ধ করতে হবে।’

অঞ্জয় শুনে ঢোক গিলে দুর্গন্ধে বেচারা মা’রা যাবে। তবুও বসের আদেশ শুনে, নাক চেপে ধরে। হাতে গ্লাভস পরে গার্ডের কাছ থেকে বক্স নিল। বক্সের ঢাকনা খুলে একটি শুকনো কাপড় নেয়। যেথায় বিভিন্ন পশুর গোবরমাখানো !
কাপড়টি দেখেই অঞ্জয়ের বমির মত মাথা ঘুরায় উঠার উপক্রম। দ্রুত গতিতে বসের কাছে গিয়ে কাপড়টি দেখায়। আরভীক চেয়ে অফিসারের মুখে ঢুকিয়ে দিতে ইশারা করে! অঞ্জয় তৎক্ষণাৎ অফিসারের গাল ধরে ভেতরে কাপড়টি ধেবে দেয়। অফিসার চোখ বড় বড় করে তার মুখ খুলার জন্য বিনতি করে। কিন্তু আরভীক এর মায়া হলো না।
সে গিয়ে আনজুমার দড়ি জোরালো ভাবে এক টান মে’রে ছিঁ’ড়ে ফেলে। মেয়েটি কাঁপছে তার মুখশ্রীর বর্বরপূর্ণ রুপ দেখে। আরভীক আনজুমার ঘনিষ্ঠ হয়ে কানের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘আজ তোমার হাজবেন্ডের নিউ ভার্সন দেখবে মিসেস ফাওয়াজ।’

কথাটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর গভীরতা যেন বিদ্যুৎ চমকানোর মত আনজুমার মাথায় বাজ পড়ছে। অবুঝ চোখে তাকায়।
‘হাজবেন্ড,মিসেস ফাওয়াজ’ সম্বন্ধ করার কারণ জানার আক্ষেপ,কৌতূহল যেন ঘিরে ধরেছে আনজুমাকে। আরভীক মেয়ের ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা রক্ত নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করে চুষে খেয়ে নেই। অঞ্জয়,ফাহাদ ও সায়াজ তাদের দৃষ্টি সরিয়ে রেখেছে। জামাই-বউ তাদের রোমান্স তারা করুক!
হুদাই কাবাব হতে কেন যাবে!
আনজুমার মুখশ্রী লালবর্ণের আভায় মেখে গিয়েছে। সে তার দৃষ্টিপাত সরিয়ে ফেলে এ পুরুষের থেকে। তার চোখের দিকে হিংস্রতা যেমন দেখাচ্ছে, তেমনি প্রণয় ফিরে পাওয়ার নেশায় মন্ত্রমগ্নও বোঝাচ্ছে।
আরভীক হঠাৎ আনজুমাকে কোলে করে বাহিরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। অঞ্জয়ের কানে এসে বলে,
‘ভাবীর বেস্ট ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা কর।’

সে বিনা বাক্য ব্যয় করে বসের কথামত আনজুমা ম্যাডামকে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে গিয়ে দুজন ব্যক্তির সামনে আয়েশ করে বসে আরভীক। পি’স্ত’লটি রেখে কপাল কুঁচকে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘আমি কি বলিনী আমার সঙ্গে পাঞ্জা না নিতে! তবুও কেন নিয়েছিস তোরা ! তাও আমাকে কষ্ট দিতে মাসুম মা-ছেলের উপর নিযার্তন করেছিস। তুই তো ডক্টর রে মিস্টার ডেভিড! কেমনে পারলি এ কাজ করতে। যেহেতু কাজ শেষই করেছিস সেহেতু তোর জায়গাও হবে ক্লেভের সঙ্গে জাহান্নামের আগুনে!’

আরভীক এর বলা শেষাক্ত কথায় চমকে উঠে সবাই। ডক্টর ডেভিডের নড়চড় পুরু দমে থেমে যায়। শিহরিত হলো। তাকে পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনে পেয়ে গার্ডস বেঁধে নিয়ে আসে আরভীক এর সামনে। অফিসারের পাশে আলাদা চেয়ারে বাঁধা হয়েছে তাকে। কিন্তু আরভীক কে দেখে তার মুখশ্রী উগ্র, ভ’য়া’ন’ক হয়ে যায়। যেন আজই সে তাকে নিজ হাতে খু’ন করে ফেলবে। ফলে সে নড়চড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আরভীক শুধু দৃশ্যটির মজা নিতে থাকে।
তবে এখন তার মুখে বলা কথাটি শুনে ডক্টর ডেভিড আমতা আমতা করে বলে,

‘ওয়াট’স রা’বি’শ! হু ইজ ক্লেভ! আই ডোন্ট নো ওয়াট আর ইউ টকিং এবাউট!’

‘রিয়েলি ইউ ডাজেন্ট নো হুমম! ওকে এটা ঠিক কিনা বল ! তোর বাপে দুটা বিয়ে করছিল। দ্বিতীয় মায়ের সন্তানের সঙ্গে তোর বেশ যোগসূত্র ছিল এম আই রাইট! যাই হোক ভুল করলি তোরা। সৎ ভাইয়ের প্রতি এত দরদ যে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য মাসুমিয়াতের গলা টিপে ধরছিলি। তোদের যম আজ তোদেরকে সঙ্গেই নিয়ে যাবে।’

ডক্টর ডেভিড ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার জন্য মুখ খুলতে নিল। তবে কথা বলতে সক্ষম হলো না। তার গালের ভেতর কণ্ঠনালী বরাবর বু’লে’ট চালায় আরভীক। অফিসার আতঙ্কে ভরা চোখে ডক্টরের দিকে তাকায়। মরা লাশের মত ডক্টর ডেভিড এক পলক র’ক্তে’র দিকে তাকানোর সময় পেল না। তার প্রাণপাখি উড়াল দিল। আরভীক বসা থেকে উঠে অফিসারের কাছে গিয়ে তার চুল শক্ত করে ধরে। তার কানের কাছে ঝাঁঝালো গলায় শুধায়।

‘আজ তোকে এমন মরণ দেব যেমন তুই কল্পনাও করতে পারবি না। গার্ডস গিভ মি মাই বক্স কুইক!’

এক গার্ড এসে আরভীককে বক্স দেয়। সে বক্সটি খুলে প্রথমত গ্লাভস ও এপ্রোন পরে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নেই। বক্স থেকে
ধারালো ছু’ড়ি’,কাঁ’চি’ ও বোতল ভর্তি তেলাপোকা থেকে একটি হাতে নিয়ে মৃদু ভাবে চেপে রাখে। অফিসারের কপালের উপর
মাথার অংশ কা’টা শুরু করে।
অফিসার মাথা নেড়ে ‘উম উম উম’ করে ‘না’ বোঝায়! কিন্তু আরভীক থামে না। মাথার অংশ খুলে দেখে পুরু মস্তিষ্ক রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। সে কাঁ’চি দিয়ে তেলাপোকার রস অফিসারের মস্তিষ্কের মধ্যে দেয়।
অতঃপর জোরপূর্বক অফিসারের বুকের বাঁ পাশ কেটে হৃদপিন্ডে ছিঁড়ে তেলাপোকাটি গেঁথে দেয়। তার চিৎকারের শব্দ যেন পুরু রুম কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আরভীক কাজ শেষে তার সামনে থেকে সরে রিপোটার্সের নিকটে যায়। তারা দুজন ভিডিও করে ভাইরাল করে ছিল। সেই শাস্তির দ্বায়ে তাদের চোখ উপরে ফেলল।

আরভীক চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে তাকায়। দুজন মহিলা কনস্টেবল ও একজন ছেলে কনস্টেবল আছে। মহিলা দুটি সকলের মরণ দশা দেখে কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা তাদের। আরভীক তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ‘খালিদা’ নামের মহিলাটিকে দেখছে। তার নিকট গিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

‘আমার সন্তানকে হাত লাগিয়ে ছু’ড়ে মে’রেছিলি তুই রাইট!’

মহিলাটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘সাহেব আমারে ছাইড়া দেন। আমি গোলামী করে কামটা করছি।’

‘তোকে ছাড় দিতে পারব না। তুই যে আমার সন্তানের গায়ে হাত তুলে হাতে ব্যথা দিয়েছিলি। তার শোধে তোর জীবনহারা চাইই।’

গর্জনের সুরে বলে আরভীক। পি’স্ত’লটি খালিদার কপালে রেখে তৎক্ষণাৎ চালিয়ে দেয়। বুলেট তার মাথার এপার ওপার হলো। দ্বিতীয় মহিলা কিছু না করায় তার শাস্তি স্বরুপ হাত কেটে প্রাণ ভিক্ষা দেই। সায়াজ গার্ডকে ইশারায় বলে মেয়েটিকে নিয়ে যেতে।
গার্ড তেমনি করল। আরভীক ছেলে কনস্টেবলের কাছে গেল। থমথমে চেহারা নিয়ে আরভীক এর দিকে তাকায়। এতক্ষণ দৃষ্টিনত করে নিশ্চুপ ছিল। নির্বোধপূর্ণ ধারণায় এঁটে ছিল। তাকে ভাড়া করে ছিল মোটা অংকের টাকা দেওয়ার বিনিময়ে। সেও সংসার বাঁচাতে টাকার লোভে কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে এমুর্হুত অনুতপ্ত সে! ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ বলে প্রবাদটি সত্য হলো তার ক্ষেত্রে।
আরভীককে দেখে সে মোটেও ভীতিগ্রস্থ নয়। তথাপি তার চোখে ভেসে উঠছে তার প্রিয় স্ত্রী, দু’সন্তানের চেহারা। হয়তো শেষ দেখাও করার সুযোগ পাবে না। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আরভীক এর যে হাতে পি’স্ত’ল আছে। সে হাতটি ধরে স্বেচ্ছায় নিজের কপালে পি’স্ত’লটি ঠেকায়। আশ্চর্য,বিস্ময়তায় চোখে চেয়ে থাকে ফাহাদ ও সায়াজ। হলো কি ব্যাপারটা! এতক্ষণ মূর্খ, নির্বোধ মানব-মানবী ম’র’ণের ভয়ে রেহাই পাওয়ার লোভে আকুতি-বিনতি করছিল একেকটা।
কিন্তু এ ছেলে স্বেচ্ছায় খু’ন হওয়ার জন্য নিজের মাথায় পি’স্ত’ল ঠেকিয়েছে। তার ঠোঁট কাঁপছে, চোখ বুজে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,

‘সাহেব ভুল হয়ছে, করার কিছু নেই। আপনে গু’লি মা’ই’রা আপনের কাম খতম কইরা নেন। শাস্তি পাওনে মোর ডর নাই। ডর শুধু মোর বউ-বাচ্চারে লইয়া। আপনেরে মোর বাড়ির ঠিহানা কই! গরুর বাজারের শেষ গলিত মাঝে ছাউনীর পুড়া বাড়িত থাহে মোর বউ-বাচ্চা। মোর মরণ হলে আপনে তাগো টেহা দিয়া দেইহা রাইখেন।’

চোখ বুজে থাকা অবস্থায় অনুশোচনার অশ্রুসিক্ত হলো তার। ফাহাদ ও সায়াজ অনুনয়ের দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কোনদিক নজর নেই তার! সে একনজরে ছেলের দিকে দৃষ্টিকোণ বজায় রাখছে। পি’স্ত’ল চাপে ‘ঠাসস’ করে শব্দ হলো। ফাহাদ ও সায়াজ চোখ বন্ধ করে নেই।
যখনি চোখ খুলে তাকায়। তখন অবাক এবং খুশি হলো।
আরভীক দেওয়ালে বু’লে’ট চালিয়েছে। ছেলের কাঁপুনি তৎক্ষণাৎ থেমে গেল। চমকিত চাহনী নিয়ে আরভীক সাহেবের দিকে তাকায়। সে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘তুই দোষ করেছিস যার ভয়হীনতা আর অনুশোচনা তোর চোখে দেখতে পেয়েছি। এতক্ষণ যারা মা’রা গিয়েছে! তাদের চোখে না ছিল অনুশোচনা, না ছিল ভয়হীনতা। শুধু ছিল বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তাই প্রাণ হারিয়েছে এরা। তোকেও মে’রে দিতাম। কিন্তু পাষাণ নয় আমি! তুই তোর পরিবারের সাথেই থাকবি। তবে তোদের গলিতে না। আমার অফিসের দারোয়ানের চাকরী করবি তুই। মাসে মোটা অংকের টাকা পাবি। অফিসের গেইটে তিনজন দারোয়ান দাঁড়ায়। তুইও সততা বজায় রেখে দাঁড়াবি। কখনো যদি জানছি তুই সততার পথ ছেড়ে অসৎ রাস্তায় গিয়েছিস। তখন দিগিদ্বিক না ভেবে মে’রে দেব।’

‘সাহেব আপনের জন্য জীবন দিয়া দিমু। তবুও সৎ পথ ছাড়মু না।’

আরভীক ছেলের চুক্ষগোচরে ফিচেল হাসি দেয়। নিবিড় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘নাম কি তোর!’

‘সাহেব আমার নাম জসিম।’

সময় অবিলম্বে সে সায়াজের নিকটস্থ হয়ে বলে,

‘বাকি কাজ তোর ডকুমেন্ট দেখে চালায় দিস। আর জসিমকে কাজে নিয়ে যাহ্।’

সায়াজ জসিমকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফাহাদের সামনে এসে আরভীক চওড়া এক হাসি দেই। যা দেখে সূক্ষ্ণ, খেয়ে ফেলার মত নজর দেয় ফাহাদ। মিছামিছি রাগের গলায় শুধায়।

‘হা’রা’মজা’দা মে’রে ভর্তার খিচুড়ি বানিয়ে এখন ইনভেস্টিগেইটে আমারে ফাঁসাইয়া দিলি! ইচ্ছে করছে তোকেও এদের লগে খু’ন কইরা দেয় ফাজিল কোথাকার!’

রসিক আরভীক যেন পুনরায় ফিরে এসেছে। বন্ধুর কাঁধ শক্ত করে চেপে তার কাঁধের উপর চড়ে বসে। বেচারা আরভীক এর মত বডিবিল্ডারকে চেপে ধরতে ফাহাদের কাঁধ ভেঙ্গে যাবার উপক্রম। আরভীক বাচ্চার মত তার বন্ধুর কাঁধে চড়ে থেকে বলে,

‘ডুড আমি জানি তুই পারবি!’

কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলে ফাহাদ। তার বন্ধু সর্বদা জালের মধ্যে ডুবায় দিতেই সঙ্গে আনে তাকে। শা’লায়ে আর গোবরগনেশ পায় না। খালি তারেই পায়! আরভীক ফাহাদের গালে চুমু খেয়ে নেমে যায়। মিটমিটিয়ে হেসে বলে,

‘ডুড কাম আমি সারি, এওয়ার্ড তুই পাস। ফিটটি ফিটটি! ইন্টারেস্টিং।’

‘হে ভাই তুই আমাকে মহান সাজিয়ে ক্রিমিনালের কাছে ভাইরাল করে দেস। পরে তারা আমার উপর শোধ নিলে আমার সাইবাবউ বিধবা হয়ে যাবে।’

কান্নার ভান করে শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে সে। আরভীক ভেবে বলে, ‘তোর বউয়ের অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব’।
ব্যস চটে গেল ফাহাদ। তেড়ে গেল আরভীক এর দিকে চড় লাগানোর জন্য। তাদের দৌড়াদৌড়ির মাঝে গার্ডস প্রতিক্ষণে লা’শগুলোর ঠিকানা লাগিয়ে দেয়।

৩৪.
শ্রেয়া বাসায় রুম অন্ধকার করে ভাঙচুর করছে। মেজাজ বিগড়ে ৩৬০° ডিগ্রি অতিক্রম করে ফেলছে তার। রাজিব থামাতে চেয়েও পারছে না। কেননা শ্রেয়াকে থামাতে আসা ব্যক্তির দিকেও জিনিসপত্র ছুঁ’ড়ে মা’র’ছে। রাজিব এককোণায় পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে শ্রেয়া শান্ত হওয়ার! রাগের মাত্রায় তার শ্বাস প্রশ্বাস তেজ হয়ে আছে। চুলগুলো উশখুশ হয়ে গেছে, পরণের জামা ছিঁড়ছিঁড়ে হয়ে গেল। তাকে দেখতে পুরুই এক পাগলগরাধের বাস করা পাগল মেয়ে লাগছে।
রাজিব দেখে শ্রেয়া থেমেছে। বাঘের মত ফোঁসছে শিকারীকে খেয়ে ফেলার জন্য। আহ্লাদী ছোঁয়ায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে। তাকে লেপ্টে ধরে রাজিব। সেও নিশ্চুপে লেপ্টে রইল।
রাজিব নিবিড় থাকায় শ্রেয়া স্বেচ্ছায় বলে উঠে।

‘ভালো করেনি আরভীক! সে আমার হয়েও ঐ আনজুমার জন্য এসেছিল। না, তাকে আমি ছাড়া আর কেউ পাবে না। আনজুমাকে আমি রাস্তা থেকে সরিয়েইই ফেলব।’

রাজিব বিনা শব্দে তার পকেট থেকে ঘুমের ইঞ্জেকশন বের করে শ্রেয়ার কাঁধে পুশ করে। পরক্ষণে ঢলে পড়ে সে। রাজিব হাঁফ ছেড়ে ‘বাঁচছে’ বলে শ্রেয়াকে শুদ্ধভাবে বিছানায় শুয়ায় কাঁথা মোড়ে দেয়। রুমের দিকে একপলক তাকিয়ে হতাশার মত মুখ করে নেই। পুরু রুমের মধ্যে ঝড় বয়ে গেছে। মেইডকে ডেকে আনে। রুম পরিষ্কারের কাজে মেইড লেগে পড়লে সে চলে যায় খাবার খেতে। শ্রেয়ার চিন্তায় সে নিজেও খাওয়া-নেওয়া থেকে বিরত ছিল। অথচ আজ মেয়েটার খুশির দিন ছিল বটে। যা নিবিঘ্নে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে মিস্টার ফাওয়াজে। সে রাজিবের অপছন্দের তালিকায় পড়া ব্যক্তি। কেননা শ্রেয়ার এ ব্যক্তিকেই আর্জি পূরণকারী মনে হয়। যা এককথায় ঈর্ষায় পরিণত করেছে রাজিবের মনকে। সে চাই না মিস্টার ফাওয়াজের ধারপ্রান্তেও শ্রেয়ার আনাগোনা হোক! তার জীবনসঙ্গী হওয়া তো দূরের ব্যাপার! ভেবেই বাঁকা হাসি দেয় রাজিব।
জাফর সাহেবকে নিচে আসতে দেখে সটান হয়ে বসে সে। তিনি এসে জিজ্ঞেস করে।

‘শ্রেয়া মামুনি কই!’

‘সে ঘুম স্যার।’

‘ওহ তার পার্টিতে তো আরভীকরা আসছে না।’

রাজিব মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। প্রকাশ্যে সে দুঃখী হওয়ার ভান করে বলে,

‘কেনো স্যার!’

‘জানি না আরাজ বলছে কি জানি আরভীক কাজ আছে। এজন্য প্ল্যান ক্যান্সেল হয়ে গেছে।’

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে রাজিব জাফর সাহেবের সামনে থেকে সরে যায়। তার ইচ্ছে করছে ক্লাবে গিয়ে ডিসকো ডান্স করতে! শ্রেয়ার বিয়ের কথা শুরুর পূর্বেই যে ক্যান্সেল হয়ে গেল তাই।
সে শ্রেয়ার রুমের বেলকনিতে বসে। মেইড রুম ক্লিন করে চলে গিয়েছে। ওয়াইনের বোতল খুলে পান করে। আর ভাবে শ্রেয়ার খুশির দিন চোখের পলকে বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা।

পূর্বের ঘটনা….

রাজিব গাড়ি পার্ক করে। শ্রেয়া ও সে বের হয়ে পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে যায়। কিন্তু মাঝরাস্তায় সে শ্রেয়ার মুখ চেপে আড়ালে নিয়ে যায়। এতে শ্রেয়া বিরক্তিতে ‘উম উম’ করে। যার ফলে রাজিব আড়ালে লুকাতে চেয়েও পারছে না। যখন শ্রেয়ার মুখ থেকে হাত সরায় তখন মেয়েটি বাঘিনীর মত ক্ষেপে উঠে। রাজিব পরিস্থিতি সামলাতে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘শোনেন শ্রেয়া, চটজলদির কাজ বিপদেও ফেলতে পারে। সামনে দেখেন কতগুলো গাড়ি। এখানে কমপক্ষে দুটি গাড়ি থাকার কথা! নিশ্চয় এখানে কোনো কাহিনী চলছে। আমরা গেলে ধরা খেয়ে মরব। তাই আস্তেধীরে আমার সঙ্গে আসুন। দেখি কি চলছে ভেতরে!’

শ্রেয়া থমকে গেল। সেও চোখ পাঁকিয়ে দেখে সত্যিই এখানে বহুল গাড়ির সমাগম। সে রাজিবকে অনুসরণ করে সামনে যায়। পরিত্যক্ত বাড়ির বামপাশে ভাঙ্গা জানালার দাঁড়ায়। বাহিরে ও ভেতরে কালো পোশাক পরিহিত গার্ডস দাঁড়িয়ে আছে। এরা কাদের গার্ডস সেটা জানার প্রেক্ষিতে তারা জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। শ্রেয়া রাজিবের হাত চেপে জানালার ভেতর চেয়ে শক্তমুখে শ্বাস ছাড়তে থাকে। যা দেখে রাজিব বিস্ময়ে,বিমূঢ় হলো। সে নিজেও মুখ ঘুরিয়ে থমকে যায়। মিস্টার ফাওয়াজ ও তার সঙ্গীরা ডক্টর ডেভিড ও ভুয়া অফিসারকে শায়েস্তা করছে। এ দেখে ঢোক গিলে সে। মিস্টার ফাওয়াজকে যতটা রসিক ভেবে ছিল সে ততটাই হিংস্র পশুর মত কাজ করছে। শ্রেয়ার কাছে আরভীক এর হিংস্রতা মনেপ্রাণে উত্তেজনার আগুন ধরালেও, আনজুমার জন্য এ কাজ করছে দেখে!
ঈর্ষার দহনে পুড়ে ছাই হতে থাকে। রাজিব হাতে তিক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করে চোখ পাঁকিয়ে তাকায়। শ্রেয়া রাগের বশে নখ ধেবে দিচ্ছে তার হাতে। বেচারা মুখ ফুসকে ব্যথার আর্তনাদ করতে না পেরে শ্রেয়াকে টেনে হিচঁড়ে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে। তৎক্ষণাৎ তারা রওনা দেয় তাদের গন্তব্যে।

‘আরভীক তুমি আমার।’

শ্রেয়ার ঘুমের ঘোরে বিরবির করে বলে। তার কণ্ঠ শুনে রাজিবের ধ্যান ফিরে। দৃষ্টি দেয় হাতের দিকে। নখ ধেবে রক্তাক্ত হয়েছে বটে। চাপা হেসে ব্যান্ডেজ করে নেয়। বেলকনিতে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের জগৎ এ পাড়ি দেয়।

৩৫.
পরের দিন দুপুরে পিটপিটে চোখ খুলে আনজুমা। নিজেকে সে আলিশান রুমে আবিষ্কার করে। রুমের চর্তুপাশ্ব চেয়ে বুঝল এ রুম আরভীক এর। কেননা রুমের শৌখিনটা পূর্বে একবার দেখে ছিল। চট করে উঠে বসে সে। ভাবে এখানে কেমনে এলো! তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়ে ছিল। আকস্মিক শক্ত পুরুষের ছোঁয়া তার কোলে অনুভব হতেই চমকে যায়। পুরুষটি অন্য কেউ নয় আরভীক। আনজুমা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসে রইল। আরভীক আনজুমার কোলে মাথা রেখে পরম প্রণয়ঘটিত নেশায় মতঁ হলো। ঘোরলাগা কণ্ঠে শুধায়।

‘ওগো বউ জাগলে কেন দশবছর পর জাগতে।’

রিনরিনে গলায় আনজুমা জিজ্ঞেস করে।

‘এটা কেমন কথা!’

‘কেন বুঝো না দশবছর পর জাগলে দেখতে, তুমি আমার দশবাবুর মা হয়ে গেছো।’

‘কিইই!’

আরভীক এর কথার অর্থ বুঝে ভ্যাবলাকান্তের মত মুখ করে ফেলে আনজুমা! চেঁচিয়ে তার বলতে ইচ্ছে করছে। নির্ল’জ্জ, অ’সভ্য কোথাকার! তোর বিশ্রী কথা বন্ধ কর।
আফসোস! সে বললে আরভীক ক্ষেপে নির্লজ্জের চেয়েও চরম বদ’মায়ে’সী রুপ নিয়ে নেবে। আরভীক আড়চোখে মেয়ের চাহনী দেখে লাজুক হেসে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। থতমত খেয়ে যায় আনজুমা। আরভীক তার কোলে শুয়ে থেকে লাজুক গলায় শুধায়।

‘ওগো বউ চলো বাসর দিনটা সেরে ফেলি। রাতে করতে দাও না। তখন তো তোমার মাদারতেরেসা হওয়ার রোগ জাগে। দিনে না হয় আমার জন্যে সানি লিওনী হয়ে যাও।’

আনজুমার কান পেঁকে লালাক্ত হয়ে গেছে। বে’হা’য়াগিরির সীমা লঙ্ঘন করে দিল লোকটা। সে কথাগুলো নিতে না পেরে আবারো চেতনশক্তি হারিয়ে বালিশের উপর শুয়ে পড়ে। বেচারী আরভীক এর কথা হজম না করতে না পেরে জ্ঞান হারালো। আরভীক আয়নার মধ্যে স্পষ্ট দৃশ্যটি দেখতে পেয়ে উঠে বসে। বউয়ের দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ে বিরবির করে বলে,

‘ধ্যাঁত রোমান্টিক মুডেই মেয়েটার ফিট খেতে হয়। বলদমার্কা গাই! ওহ এই গাই হলে আমি না হয় গরু হেহেহে।’

মুখ টিপে নিজেই হেসে ফেলে আরভীক।

চলবে…
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here