নেশাটাই তুমিময় পর্ব -০২

#নেশাটাই_তুমিময়
#পর্বঃ – ০২
#লেখনিতে:- আবরার আহমেদ শুভ্র

[কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ]

নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন মধ্যরাতীয় শহরের কোন এক দ্বিতল ভবনের এককোণে ভাবলেশহীনভাবে দূর আকাশপানে চেয়ে আছে অনিমা নামের রমণীটি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারোর কুলে মাথা দিয়ে ফ্যামিলি প্লানিং করছে! সে ভাবছে আজ সে কারো কাছে ঠাট্টার ফুলঝুরি, আর কারো কাছে খুব কাছের কেউ! তবে এসবে চিন্তা নেই তার! তবুও সে ব্যস্ত তার জীবনের সুখকে ত্যাগ করে দুঃখকষ্টকে আপন করে নিতে। কারণ, জীবন চলার পথে এসবই তার সঙ্গী!

তার ভাবনা ভাঙ্গলো ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাসের আচড়ে। আড় চোখে তাকিয়ে আঁখি নিক্ষেপ করলো সেদিকে। মুহুর্তেই আষাঢ়ের কালো মেঘে ছেয়ে গেলো তার কোমল মন! কেননা, তুরন এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। একদম গা ঘেষে! তার কাছ থেকে কিছুটা সরে এলো অনিমা। কারণ, সে এখন তার নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পদ! এক সময়কার প্রিয়জন হলেও যেটা ছিলো প্রয়োজনে মাত্র! আর আজ সে অন্যকারো স্বামী! কথাটা মনে আসতেই মনটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

– জীবনটা কি অদ্ভুত, তাই না তুরন?

– হঠাৎ এই কথা মনে হলো যে?

– মনে হওয়ারই কথা নয় কি? এই যে আপনি আমার ছিলেন, কিন্তু আজ! যাক গে, আপনার এখন মুনাপুর সাথে থাকার কথা, আফটার অল ভাবি হয় আমার! তাছাড়া আজ আপনাদের কাঙ্ক্ষিত বাসর রাত বলে কথা!!…. বলেই তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি উপহার দিলো অনিমা।

– অনি প্লীজ, আমাকে এসব বলো না। আমি তোমায় ভালোবাসি, শুধু তোমায়!…. একথা বলে তুরন অনিমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই অনিমা শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,,

– আর এক কদম সামনে এগোবেন না মিস্টার তুরন ইনকিয়াত চৌধুরী। কি ভেবেছেন কি আপনারা হা? মেয়েরা কি আপনাদের হাতের পুতুল! যেমনটা চাইবেন ঠিক তেমন করেই ইউজ করবেন মেয়েদের, আর কাজ শেষ হলেই টিস্যু পেপারের মতোন ছুঁড়ে ফেলে দেবেন? এসব অবশ্য আপনারা পার… আর বলতে পারলো না অনিমা। শক্ত হাতে মুখ চেপে ধরল তুরন অনিমার।

– ব্যস অনেক বলেছো আর না। আমি বলি এবার, এই বিয়েতে আমার কোনোকালেই মত ছিলো না আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম, আমায় জোর করে প্রাণের ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়েছিল কারো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে! আর কি যেন বলছিলে রিয়ার মতোন মেয়েকে আপন করতাম? হাউ ফানি! যাকে আমি দুচোখ ভরে ঘৃণা করেছি তারেই আপন করে নিবো? ব্যাপারটা বেশ ফানি জোকস এর মতোন ছিলো তাই না?…. বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো তুরন।

অনিমা একধ্যানে চেয়ে রইল তুরনের যাওয়ার পথে! ভাবছে, কিসের স্বার্থের কথা বলল তুরন? আর কার প্রাণেরই বা ভয় দেখিয়েছে তাকে যার জন্য সে তিন বছরের সম্পর্ক মাত্র তিন সেকেন্ডেই শেষ করে দিলো! না সে আর ভাববে না, যে তার হয়নি সে কখনও তার ছিলো না, সে শুধু সময়ের মোহ ছিলে মাত্র। তাকে যে করেই হোক এসব ভুলতে হবে। তার এখনও অনেক পথচলা বাকি আছে। তাকে তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করবে সেটা সে যানে না। এমনিতেই বড় মামি আর মামু তাকে পড়ালেখা করতে মানা করেছেন তার উপর সে যদি তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ না করে তারা মরেও শান্তিতে থাকতে পারবে না। এক গোলকধাঁধায় পরে গেলে সে। কি করবে সে? তার মন বেয়ে কিছু দীর্ঘশ্বাস হৃদয়কাঁপানো কথা বেড়িয়ে এলো,

– “আর একটা নিস্তব্ধ রাতের সাক্ষি রয়ে গেলাম আমি!
কিছু নিরব অবিশ্বাস আর কিছু চাপা দ্বীর্ঘশ্বাসেরও
ঝুল বাড়ান্দায় গায়ে চাদর মোড়ানো আমি গ্রিলের ফাঁক গলে উড়ে আসা কুয়াশায় ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ে অদ্ভূত ভুতূরে দৃশ্যের নিরব সাক্ষী আমি! দুরে ঠায় হয়ে থাকা গাছগুলোর পাতা থেকে টুপ করে ঠিক কয়েক ফোঁটা শিশির বিন্দু ঝড়েছে তার হিসেব করেছি আমি কড়ায়-গন্ডায়! নিস্তব্ধ রাত্রীরে কোনো মানবীর চাপা কান্নার আওয়াজ করেছে আমায় ব্যাতিব্যস্ত! আমার চোখের কোণ বেয়ে পড়ে গেছে শুধু দু ফোঁটা নোনা জল। তবে আমি কাঁদিনি মোটেও! কারন সাক্ষীদের কোনো আবেগ থাকতে নেই। দুরে আরো একটু দুরে ধীরে বয়ে চলেছে যে নদী, তার বুকে আজ নেই কোনো ঢেউয়ের ছলাৎ ছল। সেটাও বোধহয় শুধু আমারই অগোচরে ঘটে চলেছে । নাকি আরো কোথাও কোনো এক ঝুল বাড়ান্দায় রয়েছে বসে অন্য কোনো এক রমনীও সেও হয়তো আমার মতো করেই আরো কোনো নিশুতি রাতের উপন্যাসের নিরব সাক্ষী রয়ে গেল! এইতো!! আর কিছুক্ষন বাকি সময়ের, তারপর পূর্ব গগনে উঠে যাবে সেই টুকটুকে লাল সূর্যে রাত্রির হবে শেষ! কিন্তু সেই যে কোনো একটা অবিশ্বাস মাখানো দ্বীর্ঘশ্বাস! শিশির বিন্দুর ঝড়ে পড়ে যাওয়া এসবকিছুই থেকে যাবে আড়ালে! বুকে জমানো ছাই চাপানো অনুর্বর জমীনে।”…..

— [আবরার আহমেদ শুভ্র]

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদ বেয়ে চলে এলো নিজ রুমে। যেখান থেকে শুরু হবে তার আরও একটা তীক্তময় দিন হয়তো এবাড়ীতে নাহয় অন্য কোনে একজগতে!
____________

কোন এক রূপসী রমণীর হাসোজ্জ্যাল ছবি দিয়ে পুরো রুম সাজিয়ে তুলেছে রুদ্ধ! রুমের এমন কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই যা খালি পরে আছে। সে তার প্রেয়সীর জন্যই আলদা এই জগৎ তৈরি করেছে এখানে। একটা ছবির দিকে তাকিয়ে প্রেমময় কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘তুমি কতটা সুন্দর তা বলার জন্য আমার এই শব্দগুলি যথেষ্ট নয়। লোকে বলে যে মানুষ নাকি কেবল একবার প্রেমে পড়ে, তবে আমার ক্ষেত্রে এটি কখনও সত্য হতে পারে না। কারণ, যতবার আমি তোমায় দেখি ঠিক ততোবারই আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই নতুন করে!’

– ‘আমি যদি আমার জীবনের একটি বিশেষ জিনিস তোমাকে দিতে পারতাম তবে হয়তো আমি তোমাকে আমার চোখের মাধ্যমে আমার হৃদয়টা দেখার ক্ষমতা দিতাম, তবেই তুমি বুঝতে পারতে তুমি আমার জন্য ঠিক কতটা স্পেশাল!’

হঠাৎ কারো উপস্থিতে ধ্যান ভাঙ্গলো রুদ্ধের। বেশ রাগও হলো ওর! কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত হয়ে গেলো। পাশ ফিরে দেখলো সার্ভেন্ট এসেছে তাকে ডাকতে,

– ছোটস্যার, বড়স্যার ডেকেছে আপনাকে।

– যাও, আমি আসছি। বলা মাত্রই চলে গেলো। রুদ্ধ ফোব হাতে কারও কাছে ফোন করল। ওপাশে রিসিভ হতেই,

-খবর কি?

-স্যার সবটা আপনার কথা মতোই হচ্ছে। তবে জাহের আলি আপনার বিরুদ্ধতা করতে চাইছে। আপনাদের কোম্পানির এক চতুর্থাংশ মালিকানা আপনার বাবা তাকে দিয়েছিলো শুধু তার মেয়ে লিসার সাথে আপনার বিয়ে দিবেন বলে। বাকিটা এখনও জানতে পারি নি।

-ওকে। আমি কাল আসছি। আর তুর্যনের খবর কি? তার ব্যবস্থা কি আমায় করতে হবে নাকি তোমরা করবে, ড্যাম ইট! তোমরা কোনো কাজেরই না। সবকটা স্টুপিডের দল!

-স্ স্ স্যার স্ সবটা হয়ে যাবে।

-কালকের মধ্যেই যেন তুর্যনকে পায়। এট এনি কস্ট!

– ও ও্ ওকে স্যার। রাগে ফোন কেটে দিলো রুদ্ধ। সবকটা স্টুপিড! রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে নিচে নেমে এলো রুদ্ধ।

সামনের করিডোরে বসে আছেন রুদ্ধের বাবা ফারদিন শাহরিয়ার। দেশের নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়াস তিনি। তার উপর শহরের মন্ত্রীও তিনি। তাই তার পাওয়ার একটু বেশি দেশের আনাচেকানাচে! সামনে রুদ্ধকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলেন। কেননা অন্য সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও রুদ্ধকে যমের মতোন ভয় পান তিনি। সেটা অবশ্য তিনি মনে মনে বিশ্বাস করেন। রুদ্ধই বলে উঠল,

-কিছু বলবেন মিস্টার ফারদিন শাহরিয়ার?

-মুখ সামলে কথা বলো, তোমার বাবা হয় আমি!

– বাবা! সেটার যোগ্যতা আপনার আছে? আমার মাকে আমার থেকে আলাদা করে আবার বাবা অধিকার আদায় করতে আসছেন? ব্যাপারটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না!

যোগ্যতার কথা শোনে মুখটা পানসে হয়ে গেলো ফারদিন শাহরিয়ারের। কোন মুখে তিনি রুদ্ধকে শাসন করবেন? যেখানে তিনিই সব নষ্টের কাঠিগুড়া! আজ তার কারণেই তার ছেলেটা তার সাথে এমন আচরণ করে। সবটার যে মুল তিনি নিজেই। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠল,

– বাই দা ওয়ে, কেন ডেকেছেন সেটা বলুন। আফটার অল, সময়ের দাম আছে আমার।

– তোমার বিয়ের ব্যাপারে!

-হোয়াট? সবটা জানার পরেও এমন করার মানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না! নেক্সট টাইমে আমায় এ বিষয়ে বলার আগে দুবার ভাববেন। আসি!… হনহনিয়ে চলে গেলো রুদ্ধ।

-রুদ্ধ, রুদ্ধ শোনো। আহহহ্ মাগো!

হঠাৎ বাবার কাতর কন্ঠ শোনে পিছন ফিরতেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো রুদ্ধের।

#চলবে কি?

[]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here