নেশাটাই তুমিময় পর্ব -১৭

#নেশাটাই_তুমিময়
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)
#পর্বঃ ১৭ _ ১৮ (Love fact & রহস্যভেদ)

৩৯.

নিস্তব্ধ রাত্রি পেরিয়ে দেখা দিলো ভোরের শুভ্র কিরণের! ভোরের শুভ্র প্রহরে দেখা দিলো উত্তাপ রৌদ্রময়ী! পূর্বাকাশে জ্বলজ্বল করছে গোলাকার ঢাকনার মতোন সকালের সূর্যিমামা। চারদিকে শতশত পাখির আনাগোনা সাথে মনমাতানো কিচিরমিচির শব্দ! বেশ মনোমুগ্ধকর গ্রামাঞ্চলের এমন দৃশ্যপট। যেগুলো ইট প্রাচিরের শহরে দেখা প্রচুর কষ্টসাধ্য ব্যাপার! তাই তো মানুষ এই মনোরম দৃশ্যপট অনুভব করার জন্যই তো নাড়ীর টানে নিজ নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসে।

পাখিরগানে নিদ্রাভঙ্গ হলো রুদ্ধের। গতরাতে বেশ গভীরে ঘুমালেও বেশ ভোরেই উঠে গেলো আজ সে। শীতের রেশ এখনও রয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলগুলোতে! আগের ন্যায় কুয়াশাচ্ছন্ন নাহলেও খানিকটা কুয়াশায় ছেয়ে আছে চারপাশটা। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো রুদ্ধ। হাটছে বাড়ীর সামনের বাগানটাতে! বেশ লাগছে শীতের এই সকালটা তার। খুব সুন্দর লাগছে শিশিরজলে মাতোয়ারা এই সবুজাভ ঘাসগুলো দেখতে। তবে এসব ভালোলাগা বেশিক্ষণ স্থায়ী রইল না রুদ্ধের মনে! হাজারো চিন্তাভাবনা মস্তিষ্কে ডালপালা মেলে দিয়েছে তার। আজ তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার দিন! যেখানে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হলো তার বাবার স্বপ্নপূরন! তার বাবার কাছে আবারও তার পরিবারকে ফিরিয়ে দেয়া। সেটা করতে পারলে তার মন শান্ত্বনা পাবে আজ! এসব ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে তাকাতেই আপনাআপনি মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল তার। মনে মনে ভাবতে লাগল,,

–”এতো সকালে তোমার উপস্থিতি আমার মেঘাচ্ছন্ন মনটাকে আলোকিত করে দিলো! সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় তোমায় আমার মনটাকে ভালো করে দেয়ার উদ্দ্যেশেই এখানে পাঠিয়েছে। তোমায় দেখলে আমার মনে জমা হওয়া সব ভয় যেন নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে নিজেকে নতুন করে শক্ত করার অনুপ্রেরণার জন্ম দেয়। তোমায় দেখলে আমার মনের সমস্ত ভয়, খারাপ লাগা দূর হয়ে যায় ফুলপরী! আমার মনের একমাত্রই ঔষধ তুমি ফুলপরী! রুদ্ধের অনি তুমি! অনিরুদ্ধ!”… মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো অনিমার দিকে।

ঠিক অনিমার পেছনেই অবস্থান নিলো সে। যেখান থেকে সে তার প্রেয়সীকে মনঃপ্রাণ দিয়ে অনুভব করতে পারবে সে। বুকে দুহাত গুঁজে দিয়ে একধ্যনে তাকিয়ে রইল তার দিকে।

৪০.

সকাল সকাল পরিচিত মানুষের গায়ের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারলো অনিমা। প্রতিদিনের ন্যায় আজও সকাল সকাল প্রকৃতিবিলাশ করতে উঠেছে সে। গতকালের পর থেকেই সে রুদ্ধের থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। আজও সকালের শুরুতেই সেই মানুষটির উপস্থিতি তার মনে এক আলদা শিহরণ বয়ে দিচ্ছে। কেন সেটা সে জানে না! কিন্তু হঠাৎ আজ রুদ্ধের উপস্থিতিতে তার মনের মাঝে যেন একঝাঁক লজ্জাপাখি ভীর করলো। গাড় হালকা কাঁত করে আড়চোখে সে দিকে তাকাতেই কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখতে পেলো সে। অধরের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল তার। আর সেটা বুঝতে পেরে রুদ্ধও হালকা হাসলো। সে সামান্য এগিয়ে গিয়ে অনিমাকে তার দিকে ঘুরালো। অনিমা এখনও লজ্জায় মাথানিচু করে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র তার প্রেয়সীর থুঁতনি ধরে অনিমার চোখের দিকে তাকালো।

— এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে যে? জানো তোমায় দেখে মনটা আমার বেশ ভালো হয়ে গেলো।

অনিমা মাথানিচু করে জবাব দিলো,

— প্রতিদিনই তো সকাল সকাল উঠি। আপনি তো দেরি করে উঠেন তাই তো দেখতে পান না।

— তা ভালোই, তবে খুব ভোরে উঠো কেন? চারদিকে তো এখনও শীতের রেশটা থেকে গেছে।

অনিমা এবার রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলে। মুচকি হাসি ঠোঁটে বজায় রেখে বলে উঠল,

— সকালটা উপভোগ করতেই তো উঠি মিস্টার অসভ্য! কারণ, এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালটা আমার বেশ প্রিয়।

— ওও আই লাইক ইট! ডু ইউ নো, যার এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালটা প্রিয় আর সেই মানুষটি যে আমারই প্রিয়!

রুদ্ধের কথার অর্থ বুঝতে পেরে অনিমার মুখে লজ্জাভাব ফুঠে উঠল। এই মানুষের আর কোনো কাজ নেই শুধুই তাকে লজ্জা দেয়া ছাড়া। রুদ্ধ তার প্রিয়সীর লজ্জামিশ্রিত মুখশ্রীর পানে একনজরে তাকিয়ে রইল। আনমনে বলে উঠল,

— বসন্তের মনোহর গোধূলি বেলাতে, প্রতিটা গাছ শোভায় ভরপুর শতশত ফুলের মেলাতে। বয়ে যায় এ লগ্ন এসো কাছে প্রিয়া, তোমায় কাছে পেয়ে জুড়াক আমার এই হিয়া! কন্ঠে পড়ে ফুলের মালা, অভিসারে এসো প্রিয় বসে আছি দুয়ার খুলে, আমি তোমার পথ চেয়ে! তোমার নুপুরের ধ্বনি আমি যখনই শোনতে পাই, প্রেমের আবেগে আমি তখনই ডুবে যায়। হে প্রেয়সী এই অধরের কোণঘেঁষা মিষ্টি হাসি, লজ্জায় মিশ্রীত লাবণ্যহীন মুখশ্রী জাগিয়ে দেয়া প্রাণে সাড়া আমার! আবার কবে দেখবো তোমায় তাই তো এতো তাড়া সারাটি বেলার!

রুদ্ধের এমন প্রেমময় ভালোবাসায় ডুবে গেলো অনিমা। আবেশে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরলো রুদ্ধকে। রুদ্ধ প্রথমে অবাক হলেও নিজ থেকে জড়িয়ে নিলো তার প্রিয়তমাকে! কানে ফিসফিস করে বলে উঠল,

–আজ সূর্য কোনদিকে উঠল গো ফুলপরী?

–কেন? চোখ বন্ধ করে জবাব দিলো অনি।

–এই যে নিজ থেকে আমায় জড়িয়ে ধরলে, তাই বললাম আরকি!

হুশ ফিরলো অনিমার। সে যে কি করে রুদ্ধকে জড়িয়ে ধরলে সেটাই বুঝতে পারছে না। কিন্তু যখনই ছাড়তে উদ্দ্যত হলো আর ঠিক তখনই রুদ্ধ শক্তকরেই জড়িয়ে নিলো তাকে।

–কি করছেন কি? ছাড়ুন!

–ধরেছি কি ছেড়ে দিতে?

–সকাল সকাল এখানে কেউ চলে আসবে আর আমাদেরই খারাপ ভাববে।

–ভাবলে ভাবুক! এতে আই ডোন্ট কেয়ার!

–মানে কি এসবের? আপনাকে কি আর এমনিতেই অসভ্য ডাকি?

–তোমার জন্য আমি আজীবনই অসভ্য হয়ে থাকতে চাই!

–ছাড়ুন না প্লীজ!

–হুশশশ্। চুপ করিয়ে দিলো অনিমাকে। তারপরে অনিমাকে অবাক করে দিয়ে তার উষ্ণ ওষ্ঠদ্বয় নিজেই আবদ্ধ করে নিলো রুদ্ধ।

রুদ্ধের এহেন কাজে বেশ অবাকই হলো অনিমা। চোখজোড়া গোলাকৃতির মতোন হয়ে গেলো। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সে কি আদৌ কোন স্বপ্ন দেখছে নাকি!
অবশেষে সেও তার প্রিয়তমের কাছে নিজেকে সপে দিলো। খানিক পরে ছাড়া পেতেই নিজেকে গুঠিয়ে নিলো সে। এবার আর থাকতে পারলো না অনিমা। দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে চলে গেলো সে। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো রুদ্ধ। এভাবে তার পালিয়ে যাওয়া দেখে বিড়বিড়িয়ে উঠল সে,

–পালিয়ে বেড়াবে কোথায় অনুপাখি? ঠিকই তোমায় খুঁজে নিবো আমি! সবশেষে এইদিককার পরিস্থিতি সামলাতে পারলেই বৈকি! অতঃপর আপন করে নেবো তোমায়। বলে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো সে।

৪১.

সময় চলছে আপন গতিতে। দেখতে দেখতে ভোর কাটিয়ে রৌদ্রত্তাপ সকালের সময়টা অনেকটা এগিয়ে গেলো।
চৌধুরী পরিবারের সকলে বিচিত্রাপুরে এলেও তুরনের মা কলি বেগম আসবে না বলে জানিয়েছে। তার নাকি শরীর খারাপ লাগছে তাই সে বাড়ীতে একাই থাকবে। অবশ্য তুরনের বাবা থাকতে চাইলেও সে তাকে পাঠিয়ে দেয় তুরনদের সাথে। বাড়ীতে শুধু সে একাই রয়েছে। এদিকে তুরন বারবার ফারিহার কাছ থেকে তারা কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলেও সে অন্যকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে যাতে সবটাই গোপন থাকে। চৌধুরী বাড়ীর সকলেই বিচিত্রাপুরে এসে পৌঁছালো খানিক আগেই। শাহরিয়ার প্যালেসে আসতেই রুদ্ধ আর অহন তাদের বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো। সকলে নিচে এলো মেহমানদের আপ্পায়ন করতে। অনিমা আর তন্বী বেশ খুশি হলো তারা আসাতে। তারা যে আসবে সেটা অবশ্য রুদ্ধের দাদুই জানতেন তাই তিনি তাদের অতিথিদের আসতে দিয়েছেন। তবে তারা বাড়ীর ভিতরে যাওয়ার আগেই তার দীদুনকে ইশারায় কিছু একটা বুঝালো। রুদ্ধ এসে সকলের সামনেই ফারিহাকে জড়িয়ে ধরলো। তুরন বেশ রেগে যায় রুদ্ধের কাণ্ডে। এগিয়ে গিয়ে রুদ্ধের কলার চেপে ধরল। ফারিহা তাদের থামিয়ে বলে উঠল,

— কি করছো তুমি? ওর কলারটা ছাড়ো। এটা নতুন বাড়ী সো এখানে সিনক্রিয়েট করবে না প্লীজ।

— তাহলে ও তোমায় জড়িয়ে ধরল কেন? কে হয় সে তোমার?

— ভাই হয়! আপন রক্তের ভাই সে আমার। একই মায়ের পেটের সন্তান আমরা। বুঝছো এবার?

ফারিহার কথায় সকলে যেন অবাকের শেষ পর্যায়ে। তুরনের বাবা ফারিহা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন,

— তাহলে তোমার বাবা বলেছিল তোমার কোনো ভাই নেই?

— সে আমার বাবা নয়, আমার মামা। আরমান খান! সেখানে অবশ্য কিছু রহস্য আছে যেটা আজই আপনাদের সামনে খোলাশা হবে।

রুদ্ধের দাদুই আরমান খানের কথা শোনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। চিৎকার করে বলে উঠলেন,

— তুমি আরমান খানের ভাগ্নে মানে ফারদিনের মেয়ে তুমি? আর রুদ্ধ তুমি ফারদিনের ছেলে?

— আসলে দাদুই…

— কি আসলে হা? তোমাদের স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এতদিন তাহলে তোমরা পরিকল্পনা করেই এখানে রয়েছো। নিশ্চয় তোমাদের ফারদিন পাঠিয়েছে তাই না? পাঠাতেও পারে কারণ বেহায়ার ছেলে তো বেহায়ায় হয়।

— দাদুইইই, অনেক বলে বলেছো বাবাইয়ের নামে আর একটাও কথা নয়। যেটা জানো না সেটা নিয়ে বলার অধিকার তোমার নেই।

— কি বলতে চাচ্ছো রুদ্ধ তুমি?

— যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।… বলে রুদ্ধ ইশারা করলো তার গার্ডসদের।

রুদ্ধের গার্ডসরা জাফরিন আলি কনক ওরফে কলি বেগম আর তার ভাই জাহিদ আলিকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। তাদের পিছনে রুদ্ধের বাবা ফারদিন শাহরিয়ার, জাহিদ আলির মেয়ে লিসা আর বিচিত্রাপুরের গণ্যমান্য সকল ব্যক্তি এলেন বাড়ীর ভিতরে। সাথে মিডিয়ার লোকেরাও। কারণ, একজন মন্ত্রী এলেন সেখানে মিডিয়া থাকবে না সে কি মানায়? তাই তারাও এলো।

ঢাকা শহরের সবচেয়ে নামডাক ওয়ালা ব্যক্তির এমন অবস্থা দেখে অবাক হলো মিডিয়ার লোকসহ চৌধুরী ও শাহরিয়ার বাড়ীর সকলেই। জাহিদ আলির মতোন বিশিষ্টজনকে রুদ্ধের গার্ডস এমন নাজেহাল করে ধরে রেখেছে সেটা যেন কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না। সকলের। ভাবনার মাঝেই অহন গর্জে বলে উঠল,

— দাদুই রুদ্ধ কোনো কাঁচা কাজ করে না। আমার বন্ধুকে আমি চিনি। আর কি বললেন ফারদিন আংকেল বেহায়া? ওকে তাহলে এখন এমন কিছুর উপস্থিত হবে সেটা জন্য প্রস্তুত হোন।

— মানে অহন কি বলছিস এসব? আর তোর বড়মামির তো অসুখ তাহলে সে এখানে কেমনে এলো? সবটা আমায় কি বুঝিয়ে বলবি? আই নিড রিয়েলাইজড এভরিথিং।

–সবকিছুই ক্লিয়ার হবে মামা। আর হাফসা আন্টি আপনিও আসুন ভিতরে।

বলার সাথে সাথেই রুদ্ধের মা আর খান পরিবারের সকলে উপস্থিত হলো শাহরিয়ার প্যালেসে। অহন আবারও বলে উঠল,

— শুধু এই ক্লিপটা অন করা হোক। আর বড়মামি আসলেই কে সেটা নাহয় জানতে পারবেন। আর এই জাহিদ আলির সাথে মামির কিসের সম্পর্ক সেটাই জানুন তারপরই নাহয় সবটা শেষ হবে?… বলে রুদ্ধের গার্ডসদের আনা প্রজেক্টরে ভিডিওক্লীপটি অন করা হলো। সাথে সাথে লিসার করা ভিডিওগ্রাফিটা অন হলো।

ভিডিওটা সম্পূর্ণ দেখে সকলে বেশ অবাকই হলো। কারণ, সবকিছুর পিছনে জাহিদ আলি আর তার বোন জাফরিন আলি কনক ওরফে কলি বেগম দায়ী। হা কলি বেগম যে অনিমার বড়মামি আর চৌধুরী বাড়ীর বড় বৌ বলে পরিচিত। সেই রুদ্ধের বাবাকে ধর্ষক হিসেবে প্রমাণিত করতে তার ভাই জাহিদ আলিকে সাহায্য করেছিল, আর তারপরে রুদ্ধের বাবার সাথে রুদ্ধের মা হাফসা খানের সম্পর্ক নষ্ট করে নিজের প্রতিশোধ হাসিল করেছে রুদ্ধের বাবার বেস্টফ্রেন্ড জাহিদ আলি যাকে নিজের চেয়েও বিশ্বাস করতো ফারদিন শাহরিয়ার। কারণ, সে হাফসা খানকে কলেজে থাকাকালীন সময় থেকে পছন্দ করতো আর সেটা রুদ্ধের মা হাফসা খানকে বললে রুদ্ধের মা সেটা নাকছ করে দেয়ায় সেটা প্রতিশোধে পরিণত করেছে জাহিদ আলি। আর অহনের বাবা আর রুদ্ধের বাবাও বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। তারা জাহিদ আলির এসব কথা জেনে যাওয়ায় তাদের অর্থাৎ অহন-অনিমার মা- বাবাকে হত্যা করতে হাত কাঁপেনি জাফরিন আলি কনক ওরফে কলি বেগমের। আর সেই অনিমার বাবা-মাকে হত্যা করতেই তো ইনকিয়াত আনাস চৌধুরীকে বিয়ে করেছিলো।

সবশেষে অনিমার মনে একরাশ ঘৃণার জন্ম নিলো কলি বেগমের উপর। সে কখনও কলি বেগমকে ক্ষমা করবে না। হাফসা খানও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল আজ কিছু মানুষের মিথ্যে কথা শোনে সে তার স্বামী সন্তানদের ছেড়ে বাবার বাড়ী চলে গিয়েছিলো। ফারদিন শাহরিয়ার বারবার বলার পরেও সে শত অপমান করে তাকে বাড়ীর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। ফারিহাকে নিয়ে অনিমা রুদ্ধের মার কাছে গেলো। সাথে রুদ্ধও এগিয়ে গেলো তাদের দিকে। অনিমা রুদ্ধের মায়ের কাছে গিয়ে বলল,

— আন্টি এবার সকলকে আপন করে নিন। সবইতো শুনলেন তাহলে?

— নিবো মা, সবাইকে এখন যেহেতু ফিরে পেয়েছি তাহলে আর আপন না করে কি থাকা যায়?

রুদ্ধ আর ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে ফারদিন শাহরিয়ারের দিকে একপলক তাকালো। কতবছর পর মানুষটির মুখে হাসি দেখতে পেলো সে। অবশেষে সকলে এক হলো শাহরিয়ার পরিবারের। রুদ্ধের দাদুইও তার ভুল বুঝতে পেরে নিজের ছেলে বউমাদের কাছে মাফ চেয়ে নিলো। তারাও সবাই মেনে নিলো সবকিছু।

কিন্তু নিজের স্ত্রীর এমন বিকৃত রূপ দেখ ইনকিয়াত আনাস চৌধুরী বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল। তুর্যন তার বাবাকে এমন অবস্থায় দেখে চিৎকার করে উঠল,

— বাবা কি হয়েছে তোমার? ওও বাবা বলো না?

তুর্যনের চিৎকারে রুদ্ধ তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। সে যদিও ডক্টর তাই কোনো প্রবলেম হলো না। রুদ্ধ তুরনের বাবাকে কোলে নিয়ে ছোফাতে বসিয়ে দিয়ে বলল,

— আংকেল পাপীদের জন্য নিজেকে কষ্ট পেতে নেই। বরং পাপিরা তাদের পাপের শাস্তি পাবে সেটাই দোয়া করবেন।

— হ্ হা, বাবা। এক্ষুণি পুলিশকে ফোন করে ওদের এরেস্ট করতে বলো।

— হা, আংকেল। ওদের ফাঁশি হবে। নির্বিচারে অহনের বাবা মাকে খুন করার অপরাধে!

— তবে তাই হোক।

অতঃপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে চলে গেলো। আর শাহরিয়ার প্যালেসে আগের ন্যায় শান্তি ফিরে এলো।

৪২.

কেটে গেলো কয়েকদিন। এখন চৌধুরী পরিবার, খান পরিবার বিচিত্রাপুরেই রয়েছে। থাকবেও বেশ কয়েকটা দিন। কারণ আগামী সপ্তাহেই রুদ্ধ-অনিমা আর, অহন-তন্বীর বিয়ে একসাথেই। রুদ্ধের বাবা এও ঘোষণা দিয়েছে অহনরা তাদের পরিবারের সাথেই থাকবে।

রাতের আকাশটা আজ বেশ উজ্জ্বলার সাক্ষী হিসেবে রয়েছে। বড় ঢাকনার মতোন গোলাকার চন্দ্রটা এই মেঘবিহীন আকাশটাকে বেশ লাগছে সাথে শত শত তারার মেলা যেন পুরো আকাশটাকে পরিপূর্ণ করেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশটা উপভোগ করছে রুদ্ধ সাথে লিসা দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশেই। নিরবতা কাটিয়ে রুদ্ধ বলে উঠল,

— খারাপ লাগছে ওদের জন্য?

রুদ্ধের কথায় স্ফীত হাসলো লিসা। আজ বড্ড মায়াবী লাগছে তাকে। চোখের কোণেও জল চিকচিক করছে।

— হা, তবে তাদের শাস্তি হওয়ারই প্রয়োজন। যেমন কর্ম করে সে ঠিক তেমনই ফল পায়। এখন কষ্ট তো হবেই কাল পরশো ঠিক হয়ে যাবে সব।

— হুম, আজ তোর কারণেই সবটা সম্ভব হয়েছে নাহলে…

— রুদ্ধ প্লীজ এসব বলিস না, তুই এখন অনির দিকে মন দে।

— তা কি আর বলতে? আচ্ছা আমি একরা জিনিষ খেয়াল করেছি।

লিসা রুদ্ধের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ সরু করে জিজ্ঞেস করল,

— কি?

— তুর্যনকে তুই পছন্দ করিস তাই না?

এতক্ষণ মন খারাপ থাকলেও নিমিষেই লজ্জাভাব ভর করলো লিসার মুখে। শত হলেও ভালোবাসার মানুষ তার। রুদ্ধের কথায় হালকা হেসে জবাব দিলো সে,

— হুম।

— ওকে, তুর্যন এদিকে আয় আর নিজের বউকে নিয়ে যা।… বলে দড়জার পাশ থেকে তুর্যনকে এনে লিসার সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে ছুঠে চলে গেলো।

লিসা অবাক হয়ে গেলো রুদ্ধের কান্ডে। এসব সে তাহলে প্লানিং করেই করেছে। তাকিয়ে রইল রুদ্ধের যাওয়ার দিকে। এবার চোখ ছোট ছোট করে তুর্যনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে। তুর্যন একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

— কি দেখছো ওমন করে?

সম্ভিৎ ফিরে এলো তুর্যনের। সেও মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— তোমাকে! তোমাকে দেখলে শতবার হাজার বার দেখতে ইচ্ছে করে যে! হাজার বছর ধরে দেখলেও সেই দেখার তৃষ্ণা কখনওই ফুরাবে না।

— তাই?

— হুম, অনেক বেশিই!

— কখনও কষ্ট দিবে না তো? ছেড়ে যাবে না তো?

— হাতটা যখন ধরেছি আর তো ছাড়ছি না! আর কষ্ট সে তো কখনও তোমায় ছুঁতেও পারবে না। তোমায় পেয়েছি সেটাই অনেক। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই সারাজীবন হাতটা আকঁড়ে ধরে পাশে থেকো তাহলেই হবে। কখনও কষ্ট নামক অনুভূতিকে তোমার কিনারায়ও আসতে দেবো না এই যে প্রমিজ করলাম।

হাসি পেলো লিসার তুর্যনের কথায়। সে মাথানিচু করে বলে উঠল,

— আমারও আর কিছু চাই না শুধুই তোমায় চাই। তোমার ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেই হবে। আর কিচ্ছু না। খুব ভালোবাসি তোমায়।

— আমিও। অবশেষে তুমি আমার হলে।

লিসা দৌড়ে গিয়ে সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুর্যনকে। তুর্যনও তার বাহুডোরে তার প্রিয়তমাকে আগলে নিলো। শুরু হলো নতুন একন প্রেম! জন্ম নিলো একগুচ্ছ অনুভূতি আর ভালোবাসা!
.
.
.
.
~চলবে ইনশা’আল্লাহ্

]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here