নেশাটাই তুমিময় পর্ব -১৫

#নেশাটাই_তুমিময়
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)
#পর্বঃ ১৫

৩৪.

– ‘আমার সাথে আপনার ভাইবোনের সম্পর্ক তাই না মিস্টার রুদ্ধ শাহরিয়ার? তা আমি আপনার কোন মায়ের পেটের আপন বোন বলুন তো ভাইয়ায়ায়া!’

রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রাগি মুড নিয়ে প্রশ্ন করল অনিমা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন রাত্রি দেখছিলো রুদ্ধ ঠিক তখনই রুদ্ধের রুমে এলো অনিমা। তাকে কোথাও খুঁজে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রুদ্ধ একনজরে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। অনিমা মনে মনে বলে উঠল,

– ‘মহাশয় তাহলে এখানে কুয়াশাবিলাশ করছেন, আর আমি তাকে সারারুম খুঁজেও পেলাম না। আমারে বোন ডাকার ফল বুঝবেন এবার মিস্টার অসভ্য!’ বলে শয়তানি হাসি দিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে রুদ্ধের উদ্দ্যেশে রাগি মুড নিয়ে প্রশ্নটি করলো অনিমা।

অনিমার ডাকে ধ্যানচ্যুত হলো রুদ্ধ। ঘুরে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমার দিকে ফিরে তার এমন রাগিভাব দেখে মনে মনে হাসলো রুদ্ধ। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে উঠল,

– ‘মহাশয়া তো হেভি রেগে আছেন দেখি! দাদুইকে বোন বলে পরিচয় দেয়াতে এতোটা রেগে গেছেন তিনি? মাই গড! আ’ম সিউর সি ফিল লাভ উইথ মি!’ বলে মুচকি হাসি দিলো। অনিমা চোখজোড়া ছোট ছোট করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে মুচকি হাসি দিতে দেখে বলে উঠল,

– ‘তা ভাইয়া! আপনি কি শোকে পাগল হয়ে গেছেন নাকি ভাইয়া ডাকটা শোনে শিহরিত হয়েছেন? কোনটা?’

রুদ্ধ দুকদম এগিয়ে এলো অনিমার দিকে। অনিমাও পিছিয়ে গেলো সেই হিসেব করে। রুদ্ধ ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে উঠল,

– ‘হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ কি ফুলপরী?’

রুদ্ধের মুখে ফুলপরী শোনে রাগ হলো অনিমার। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে অভিমানী সুরে বলে উঠল,

– ‘আমি কোনো ফুলপরী নয়, যদি ফুলপরি হয়েই থাকি তাহলে আপনার দাদুইয়ের কাছে আপনার বোন বলো পরিচয় দিলেন না কেন? তন্বীকে তো ঠিকই ভাইয়ার হবু বউ বলে সম্বোধন করলেন আমাকেও করলে কি হতো?’

অভিমান জন্মেছে অনিমার মনে। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল। রুদ্ধ আলতো হেসে তার ফুলপরীকে নিজের দিকে ফিরালো। অনিমার চোখে চোখ রেখে বলল,

– ‘ভালোবাসো আমায়?’

নিজেকে সামলো অনিমা। সে তার এই অনুভূতিকের কোনো কিছুর মাঝে প্রতিফলন ঘটাতে চাই না। কেননা একবার ঠকেছে এই সুপ্ত অনুভূতিকে ভালোবাসায় রূপ দিয়ে। আনারও সে ঠকতে চাই না। কিন্তু এবারের তার এই সুপ্ত অনুভূতিটার মানে সে বুঝতে পারছে না। চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো সে। মনে আবারও দুষ্টুমির উদয় হলো অনিমার। সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠল,

– ‘হা ভাসিতো ভালো! আপনি তো আমার ভাই! অহন ভাইয়ার মতোন ভাই তাইনা? আপনাকে তো ভাইয়ের মতোনই ভালোবাসবো ভাইয়া!’

অনিমার মুখ থেকে এমন কথা সে আশাই করে নি। সিরিয়াস মুডে এসে সে এমন মজা করবে ভাবতেই পারে নি। তার সব আশায় জল ঢেলে দিলো সে। তার ভাবনার মাঝেই অনিমা আবারও বলে উঠল,

– ‘ভাইকে ভালোবাসা আমার একান্ত করণীয়! তাই আজ থেকে আপনাকেও ভালোবাসবো আমার ভাইয়ের মতোন। ঠিক আছে রুদ্ধ ভাইয়ায়ায়া!’ বলে দৌড়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। রুমের বাইরে এসে হাসতো লাগলো মনে মনে,

– ‘দেখলেন মিস্টার! এই অনিমা সিরিয়াস মুডে এসে আপনাকে নাকানিচোবানি দিবে! সাবাস অনিমা!’ বলে নাচতে নাচতে তাদের রুমে চলে গেলো।

এদিকে রুদ্ধ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। তাকে অনিমা এমনভাবে সিরিয়াসলি নাকানিচুবানি দিবে সেটা সে ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল,

– ‘এই প্রথম তুমি আমায় এমন করলা মিস ফুলপরী! তোমায়ও আমি দেখে নিচ্ছি মিস।’ হঠাৎ তার ভাবনার মাঝেই ফোন আসলো। সাথেই রিসিভ করলো সেই কলটা।

– ‘হা আপুই, বল!’

ফোনের ওপাশের মানুষটি বলে উঠল, ‘সবকিছু ঠিক আছে তো? দাদুই কি তোকে চিনতে পারছে?’

– ‘না, তবে দীদুন আর চাচ্চু চিনতে পেরেছে। তবে দীদুনই সবার আগে আমায় চিনতে পেরেছে।’

– ‘আচ্ছা, তাহলেই তো ভালোই হলো। আর সবকিছু কি তাহলে গুছিয়ে নেবো? আমার না এত্ত নাটক আর করতে ইচ্ছে করছে না।’

– ‘কি যাতা বলছিস বলতো আপুই? তুই এখন তুরনের স্ত্রী! তাছাড়া তুই এও বলেছিলি তুই সবটা সামলাতে পারবি। আগের সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবি তাহলে?’

– ‘হা, বলেছি! কিন্তু সে তো আমায় সময়ই দিচ্ছে না। তাছাড়া সে নাকি অন্যকারোতে আসক্ত! সেদিন আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিলো শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম বলে!’ বলে ডুকরে কেঁদে উঠল ফারিহা। হা রুদ্ধের বোনই হলো ফারিহা। ফারিহা মুনা। আর বিয়ের দিন নাটকিয়তার মাধ্যমেই তুরন-ফারিহার বিয়ে হয়েছিলো।

– ‘ওয়াট? তুরন তোর গায়ে হাত তুলেছে? যাস্ট আমার আসা পর্যন্ত ওয়েট কর এর একটা না একটা ব্যবস্থা আমি করবোই। রাখি এখন!’ বলে ফোন কেটে দিলো রুদ্ধ। রাগে কাঁপছে তার শরীর। তার বোনের গায়ে হাত দেয়ার ফল তুরনকে হারে হারে টের পেতে হবে সেটার প্রস্তুতি নিবে তখনই যখন এইদিকের একটা ব্যবস্থা সে করতে পারছে।

৩৫.

নিস্তব্ধ রাত মানে গভীর নেশা! স্বপ্ন দেখার আশা! রাত মানে মনের গহীনে লুকিয়ে রাখা উষ্ণ ভালোবাসা! রাত মানে চোখটি বুজে স্মৃতির মোড়ক খোলা! গভীর রাত জানে সময় থেমে থাকার যন্ত্রণা! একটি নির্ঘুম রাত জানে খেই হারা শত ভাবনা! রাতের গভীরতা যংন ক্রমশ বেড়ে যায়, চারদিকে নিস্তব্ধতা, আকাশের তারা ছাড়া বাকি সবার ছুটি! ঠিক তখনই সকল স্মৃতির অঙ্কুর ডালপালা মেলে! অন্ধকার রাত জাগা যেন রুদ্ধের একটা বহুদিনের পুরনো অভ্যাস! যেন ঘুম ভাঙ্গা পাখি সে! অন্ধকার রাতটাকে সে খুব গভীর ভাবে উপভোগ করে। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে যখন রাত নামে, মানুষ তখন বুক ভরা আশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রুদ্ধ একলা জেগে থাকে, ঘুম ভাঙানো পাখি এসে তার ঘুম বানিয়ে দিয়ে যায়। চারদিক নিশ্চুপ অন্ধকার জগত থাকে প্রাণ ভরে দেখে সে! আর জীবনের প্রতিটি অন্ধকার রাত অপেক্ষা করে ধ্রুবতারার জন্য! যখন থেমে যায় জীবনের সমস্ত কোলাহল।

রুদ্ধ তার আপুর বলা সমস্ত কথা অহনকে জানিয়ে দিলো। এও বলল তুরন তার আপুর গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিলো। অহন শুধু চুপ করে শোনে গেলো। তার পরিবর্তে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো। যার অর্থ রুদ্ধও বুঝে গেলো! রুদ্ধ আর অহন অপেক্ষা করছে ফাহাদ শাহরিয়ারের জন্য। তিনি আসবেন কিছুক্ষণ পর। হঠাৎ কড়া নেড়ে উঠল দরজার! রুদ্ধ একবার অহনের দিকে তাকালো। অহন তাকে ইশারায় বুঝালো যে তার চাচ্চু আসছে হয়তো। অতঃপর অহন নিজেই দরজা খুলে দিলো। ফাহাদ শাহরিয়ার ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

– ‘আসলে সকলে ঘুমিয়ে পরার অপেক্ষায় ছিলাম তাই আসতে লেট হয়ে গেলো। আর রুদ্ধ বড়মা আমায় বলেছেন তুমিই আমাদের বংশের প্রথম পুত্র! আমার একমাত্র ভাইপো! ফারদিনের ছেলে। কতোদিন আজ তারে দেখি না!’ বলে চোখের জল মুছলেন ফাহাদ শাহরিয়ার।

– ‘চাচ্চু, আমি সব ঠিক করে দেব। তার আগেই তোমায় বলতে হবে কে এইসবের মুল মাষ্টারমাইন্ড! কে করেছে এসব?’

– ‘না বাবা! কেউ এইসবের মাষ্টারমাইন্ড নয়। এখানে প্রতিশোধের খেলা চলেছিলো সেদিন! ঘোর প্রতিশোধের খেলা! যেখানে তোমার বাবা নির্দোষ হয়েও আমার দিকে চেয়ে শূন্য মাঠে গোল খেয়েছিল! শুধু আমার জন্যই?’

ফাহাদ শাহরিয়ারের কথায় বেশ অবাক হলো অহন আর রুদ্ধ। তবে সে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করলো তার চাচার উপর। তিনি সেটা বুঝতে পেরে বললেন,

– ‘আমি জানি তুমি কিছুই বুঝে নি। তবে একটা কথা শোনে রাখো, তোমার বাবার বন্ধু জাহিদ আলি আর তার বোন জাফরিন আলি কনকই এসব করেছিলো। তারাই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলো তোমার বাবার কাছ থেকে। তবে জাফরিনের এই শাহরিয়ার প্যালেসের সম্পত্তির লোভ বেশি ছিলো সেই তার ভাইয়ের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সেদিন বলেছিলো! এর চেয়ে বেশি কিছি আমি জানি না! তবে জাফরিন কিংবা তার ভাই জাহিদ আলিকে ধরলেই সবকিছু ফাঁস হবে!’

– ‘ওকে চাচ্চু, তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ। এবার দেখবে আসল চাল টা রুদ্ধ চালবে কি করে। তুমি এবার যেতে পারো নাহয়, চাচিমা আবার সন্দেহ করতে পারে।’

– ‘আচ্ছা তাহলে। সাবধানে করবে সবকিছু। আমি কিন্তু খুব শীঘ্রই আমার ভাইকে দেখতে চাই। যাই তাহলে।’ বলে চলে গেলেন রুদ্ধের চাচা। তা দেখে অহন বলে উঠল,

– ‘সবতো শুনাইলো। জাহিদ আলিও এখন আমাদেরই কাছে বন্দি কিন্তু এই তার বোন কি যেন নাম তারে পাবো কোথায়?’

– ‘সবুর কর ভাই! কারণ, সবুরে মেওয়া ফলে!’ বলে অধরের কোণে হাসিটা ফুটিয়ে তুলল রুদ্ধ।
.
.
.
.
~চলবে ইনশা’আল্লাহ্।

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং টু অল 💙।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here