নোনাজলের শহর পর্ব ১৩+১৪

নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-১৩

“সি ইজ আ সিঙ্গেল মাদার, বাট বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ঘেটে হাসবেন্ড এর নামটা দেখে আমি না এসে পারলাম না।”একটু থেমে হাতের ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে আদিবের দিকে এগিয়ে দেয় তরুণ।কাগজটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে নিজের নামটা দেখছে আদিব।কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।

আদিবের অবাক হওয়া দেখেই তরুণ মুচকি হাসলো।দুই বছর একসাথে থাকাকালীন যে ছেলে কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয়নি সে কেন দেশে ফিরেই একটা মেয়ের তথ্যের জন্য এতো হাইপার হলো ভেবেই নিজ দায়িত্বে সব কিছু করেছে।” এতো অল্প সময়ে এর থেকে বেশি কিছু জানা সম্ভব না।আর আমার মনে হচ্ছে এর থেকেও বেশি কিছু তুই নিজেই জানিস।” বলেই সোফায় গা এলিয়ে বসে তরুণ।তরুণের কথা শুনে ভাবলেশহীন ভাবে তাকায় আদিব। হঠাৎ তরুণ সোজা হয়ে বসে বলল,”হ্যারে আদি,তোর বউ বাচ্চা পেলো কোথা থেকে?? না মানে শুধু মাকে তো বাচ্চা এডপ্ট দেয়া হয় না আর তুইও তো পাঁচ বছর…” আদিবের রাগি ফেস দেখে বাকি কথা না বলে জোরপূর্বক হাসলো তরুণ।

বাচ্চাটার নাম আরিয়া মাহমুদ প্রয়া,বয়স তিন।এদিকে হাসবেন্ড এর নামে নিজের নাম দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না আদিব। তরুণের কথাটাও ঠিক, এসব ভাবছে আর পুরো ঘরে পায়চারি করছে।অন্যদিকে তরুণ হাত-পা ছুড়ে আদিবের বেডে ঘুমচ্ছে।

মুমুদের বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ করে একটা গাড়ি ধাক্কা দেয়। তিনমাস কোমায় ছিল।সুস্থ হলে মুমুকে কোথাও পায়নি, বড় আপা যখন ডিভোর্স পেপারটা হাতে দিয়েছিল আদিব অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ছিলো মুমুর সিগনেচারের দিকে।

আর এখন হাসবেন্ড হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করে সিঙ্গেল মাদার হয়ে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে।তোর সিঙ্গেল মাদার হওয়া ছুটাবো আমি।এসব ভাবতে ভাবতে তার পরিচিত এজেন্টকে ফোন করে আদিব।ইন্ডিয়ান এজেন্টের ইনফরমেশন দিতে বেশ লেইট হবে। কিন্তু আদিবের ওয়েট করার মতো ধর্য্য নাই, অন্যকিছু ভাবতে হবে।

প্রয়া ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে আর বলছে,” সমিদদো (সমৃদ্ধ) ভাইয়া,থারাপ ভাইয়া,পতা ভাইয়া।” মিমন ও সৃজার একমাত্র ছেলে সমৃদ্ধ, বয়স পাঁচ বছর।প্রয়ার বার্থডে উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় এসেছে তারা।সমৃদ্ধ প্রয়ার চুলের একটা ঝুটি খুলে দিয়েছে তাই প্রয়া কেঁদে ভাসাচ্ছে।মিমন ভাগ্নিকে থামাতে পারছেনা তাই বাধ্য হয়ে কিচেনের দিকে যায় মুমুর খোঁজে।মুমু প্রয়া আর সমৃদ্ধর জন্য আমের জুস বানিয়ে গ্লাসে ঢালছিল,প্রয়ার কান্নার শব্দে দ্রুত ডাইনিং এ আসে।”কি হয়েছে আমার মাম মাম টা এতো কাঁদছে কেন?” আদুরে গলায় কথাটা বলেই প্রয়াকে কোলে নেয় মুমু।প্রয়া দ্বিগুণ ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে মুমুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,”সমিদদো ভাইয়া পতা… আমার তুল(চুল) নত্ত (নষ্ট) তরে দিতে।” মুমু প্রয়ার চুল ঠিক করে চোখের জল মুছে বলল,”এইতো আমার মাম মাম কে একদম পরীর মতো লাগছে।” বলেই টুপ করে একটা চুমু খায়।প্রয়াও চোখে টলটলে জল নিয়ে দাঁত বের করে হেসে মুমুর গলা জড়িয়ে ধরে।

প্রয়ার জন্মদিন উপলক্ষে সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে খুব ক্লান্ত মুমু।বিছানায় যেতেই ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায়।গভীর ঘুমের মাঝেই মনে হচ্ছে কারো গরম নিশ্বাস তার মুখে পড়ছে, চোখ বন্ধ করেই প্রয়াকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ চেনা একটা গন্ধ নাকে আসতেই ফট করে চোখ খুলে মুমু।কিন্তু কই কেউ তো নেই। লাইটটা জ্বেলে সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসে সব পানি খেয়ে নেয়।

“মুমু না খেয়ে এক পা ও আগাবি না বলে দিলাম।”পিছন থেকে মিমনের কথা শুনে ঘুরে দাঁড়ায় মুমু। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, নয়টায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস নিতে হবে।” ভাইয়া আমি অফিসে নাস্তা করে নিব, আমার একটা ক্লাস আছে এমনিতেই গতকাল ছুটি নিয়েছি।”বলতে বলতেই সৃজা একটুকরো ডিম রুটি মুখে পুড়ে দেয়।সৃজা কঠিন কন্ঠে বলল,”ফটাফট খেয়ে নাও” মুমু বাধ্য হয়ে খেয়ে বের হয়।লিফট খুলতেই উঠে দাড়ায় মুমু।কালো হুডি পড়া লোকটার দিকে ভ্র কুঁচকে একবার তাকায় মুমু।ভাবছে পাগল নাকি গরমের মধ্যে ভুত সেজে আছে,তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে আফসোস করে ইস দেরি হয়ে গেল।

রুপাদের বাসায় এসেছে মিমন,অনেকদিন খবর নেওয়া হয়না রুপার অবশ্য বিয়ে হয়ে গেছে। মুমু হসপিটালে থাকাকালীন রুপার বাবা অনেক সাহায্য করেছিলেন।পুলিশ হওয়ায় আইনের সকল কিছু উনিই সামলে ছিলেন।রূপকও বেশ হেল্প করেছিল, নিজ দায়িত্বে তার বাবাকে ডেকে মুমুর ব্যাপারে সব বলে মিমনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।কলকাতা যাওয়ার সময়ও ভিসা পাসপোর্ট করতে অনেক হেল্প করেছিলেন রুপার বাবা।এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকিয়ে দেখে রুপার বাবা, এসে বসতে বসতে বললেন,” আরে মিমন যে,কেমন আছো?” মিমনও হেসে উত্তর দেয়, ” জ্বি আংকেল ভালো,আপনি কেমন আছেন?” কথা বলতে বলতে রূপকও আসে, রাতেই ব্যাক করবে মিমন তাই সকলের সাথে দেখা করে চলে আসে।

চোখ মেলে কিছুই মনে করতে পারছে না মুমু,মাথাটা মনে হচ্ছে অকেজো হয়ে গেছে।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে মনে হয় সে তো লিফটে ছিল,কালো হুডি পড়া লোকটা তার মুখ চেপে ধরেছিল তারপর আর কিছু মনে নেই।কথা বলতে যেয়ে বুঝতে পারে তার মুখ বাধা শুধু মুখ নই হাত দুটোও পিঠমোড়া করে বাধা।নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে মুমু কাঁপতে শুরু করে,আট বছর আগের ঘটনা মনে হতেই মুমু নিঃশব্দে কেঁদে উঠে।
একটা ভারী পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো,”কষ্ট হচ্ছে? “নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-১৪

“কষ্ট হচ্ছে? কেবলমাত্র শুরু,আট বছরের সকল কষ্ট পায় পায় শোধ করবো আমি। বি প্রিপেয়ার মিসেস মিশিকা মাহমুদ মুমু।” টু সিটেড সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে রেগে কথাগুলো বলছে আদিব।

আদিবের কন্ঠ শুনেই হাত-মুখ বাধা অবস্থায় ছটফট করে বিছানার উপর উঠে বসে মুমু।সোফায় পায়ের উপর পা তুলে, দুই হাত মেলে সিলিং এর দিকে মুখ করে গা এলিয়ে বসে আছে আদিব।কালো শার্টের বুকের দিকে দুটো বোতাম খুলে রাখাই ফর্সা লোমেশ বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মুমুর চোখে পানির সাথেই অন্যরকম খুশির ঝিলিক উপস্থিত হয়েছে।কতদিন পরে তার আদিব ভাইয়াকে দেখছে, সে কি সত্যি দেখছে?চোখ দুটো বন্ধ করতেই নোনাজলেরা গাল বেয়ে নিচে নেমে যায়।

হঠাৎ আদিবের বলা কথা মনে পড়তেই ফট করে চোখ মেলে তাকায় মুমু, আদিব একদম তার সামনে বিছানার উপর বসে আছে।আদিবের চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে, মুমু অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আদিবের দিকে।আদিব মুমুর তাকানো দেখে চট করে একহাতে মুমুর চুল গুলো শক্ত করে ধরে মুখটা একদম নিজের মুখের সামনে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে, “আমাকে ডিভোর্স দিয়ে সিঙ্গেল মাদার হয়ে মহৎ হওয়ার চেষ্টা করছিস?? তুই কি ভেবেছিলি ডিভোর্স পেপার সই করে উধাও হয়ে গেলেই আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিব??”(অন্যহাতে মুমুর মুখ থেকে টেপ টেনে খুলে)

আদিবের রণমুর্তি দেখে মুমু কাঁপতে শুরু করে।মুমু কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই আদিব ভীষণ জোরে তার ঠোঁট কামড়ে ধরে।ব্যাথায় মুমুর চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।হঠাৎই আদিব মুমুর ঠোঁট জোড়া খুব সফটলি আবদ্ধ করে নেয় নিজের ঠোঁটে,অনেক দিনের পিপাসা, কষ্ট, ক্ষোভ সব মিটাতে ব্যস্ত আদিব।অন্য দিকে আদিবের এমন ছোঁয়ায় মুমুর মনে হচ্ছে তার সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে, একটুও নড়া সম্ভব না।সুখ,ভালোবাসা,কষ্ট মিলে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার।দুজনের চোখ থেকেই অঝোরে নোনাজলের স্রোত গড়িয়ে যাচ্ছে।হঠাৎই আদিব মুমুকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে উঠে দাড়ায়।তারপর গটগট করে হেটে দরজাটা ধড়াম করে বন্ধ করে বের হয়ে যায় রুম থেকে।দরজার শব্দে শুনে মুমু ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।

মিমনের দমবন্ধ হয়ে আসছে,প্রচন্ড পরিমাণ হাত-পা ঘামছে।আট বছর আগের ঘটনার সময়ও এতো ভয় লাগেনি তার।প্রয়া সন্ধ্যা থেকে মাম মাম যাবে বলে চুপ করে ছিল।কিন্তু এখন রীতিমতো ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করেছে। মা ও সৃজা অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছেনা।মিমনের নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। ভার্সিটি, বিল্ডিং এর দারোয়ান কেউই মুমুর কথা কিছু বলতে পারছে না।হ্যা রূপক, রূপককে বলতে হবে।রূপক ঢাকা —-থানার এস আই, ওই পারবে মুমুকে খুঁজে দিতে।

রূপক রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে বসেছে মাত্র, ফোনের কম্পনে তাকিয়ে দেখে মিমন ফোন করেছে।সাড়ে নয়টা বাজে প্রায়, এসময় মিমনের কল দেখে খুশি হয়ে ফোন উঠায় রূপক।মিমন অস্থির হয়ে বলে উঠে,”রূপক মুমুকে পাচ্ছিনা রূপক,তুমি আমার মুমুকে খুঁজে দাও প্লিজ।” বলেই কেঁদে ফেলে মিমন।ফোন তুলেই এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না রূপক।মিমনকে শান্ত করে বলল,”ভাই ঠিক কি ঘটেছে এখন বলুনতো।” তারপর মিমন সকাল থেকে মুমুর নিখোঁজ হওয়ার সবকিছু জানাই।

রাগে মাথা টনটন করছে রূপকের, লিফটের সিসি ক্যামেরা রাত থেকে নষ্ট দেখাচ্ছে। এদিকে দারোয়ান বলছে সে মুমুকে বের হতে দেখেনি।ভার্সিটি কতৃপক্ষ বলেছে মুমু আজ আসেনি।পুরো বিল্ডিং সার্চ করেছে সে।পাশের এপার্টমেন্টে নতুন এসেছে NSI অফিসার তরুণ আহমেদ তাকেও অনেক সময় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রূপক।কিন্তু কোনো কিছুই জানতে পারেনি সে।রাগে নিজের চেম্বারের সবকিছু ভেঙে লন্ড ভন্ড করে চোখে অথৈ জল আর কেটে যাওয়া হাত নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে রূপক।

🍂🍂🍂
রূপকের জীবনে প্রথম অনুভূতি জাগিয়ে তোলা মেয়েটি হচ্ছে মুমু।মুমকে প্রথম দেখেছিল রুপার জন্মদিনে।সন্ধ্যায় কেক নিয়ে এসে রুপার রুমে ঢুকতেই কয়েকটা হার্টবিট মিস করে রূপক।বাচ্চা একটা মেয়ে আসমানী রংয়ের ড্রেস পড়া,কোমড় পর্যন্ত একগাদা লম্বা চুল, চোখের উপরে মোটা করে আইলাইনারের রেখা,ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, আর তার ঠিক নিচে কালো তিল,একদম মায়াবিনী।মেয়েটা তার দিকে ভীতু ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে।রূপক যখন রুপার কথা জিজ্ঞেস করেছিল, উত্তরে মুমুর ভীতু আর আদুরে গলার কথা শুনে আরেক দফা হার্টবিট মিস হয়ে যায় তার।বাইকে যাওয়ার কথা শুনেই আতকে উঠা দেখে হেসে ফেলেছিল রূপক।বাইকে উঠে কাঁধ ধরতে বললেই মুমুর ভীতু হয়ে ঢোক গিলাটাও চোখে পড়েছিল তার।সেইরাতে একটুও ঘুমতে পারেনি সে।

পরদিনই রুপাকে কলেজ পৌঁছে দিতে যায় রূপক, একপলক মুমুকে দেখার জন্য।কিন্তু সেদিন তার দেখা পায়নি।পরের দিনও যখন মুমু আসেনা,তখন তার বাসার সামনে যেয়ে দাড়িয়ে থাকে।সেদিনই প্রথম মুমুকে আদিবের সাথে রিকশাই বসে বের হতে দেখে।তবে তখনও মুমু আর আদিবের সম্পর্কে কিছু জানতো না সে।এরপর রোজই সে মুমুকে দেখতে যেত। কিন্তু যেদিন সে জানতে পারে আদিব মুমুর হাসবেন্ড, সারাদিন নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছিল।সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর কখনো মুমুর দিকে তাকাবে না।কিন্তু দুই দিনে নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিল। তাই আবারও মুমুকে দেখতে যেত।কিন্তু আদিবের সাথে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারতো না রূপক।

তাইতো মুমুকে উঠিয়ে নিয়ে আসে ভয় দেখানোর জন্য।কিন্তু নিজের পাগলামির জন্য সেদিন মুমুকে চুমুর জায়গা কামড়ে দিয়েছিল।মুমু যখন সেন্সলেস হয়ে যায় তখন রূপকের হুঁশ ফিরে।মুমুকে হাজার ডেকেও যখন জ্ঞান ফিরে না, সে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যায়।আর এরই মাঝে পুলিশ মুমুকে নিয়ে যায়। হসপিটালে আদিবকে মুমুর পাশে দেখে আবারও মাথা খারাপ হয়ে যায় তাই সেই রাতে আবার মুমুকে ভয় দেখিয়ে ছিল। রুপাকে দিয়ে মুমুর খবর নিতে আদিবকে ফোন দিলে যখন মুমু কথা বলেছিল তখন সব শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছিল। তাইতো আদিবের এক্সিডেন্ট করিয়ে দিয়েছিল।

মুমুর কলকাতা যাওয়ার ভিসা পাসপোর্ট বাবাকে দিয়ে নিজ দায়িত্বে করিয়েছিল।মুমু যাওয়ার পর নিজেই আদিবকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিল।মিমনের কাছে আাট বছরে অনেক বার মুমুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।কিন্তু মুমু কখনো রাজি হয়নি। আজ সকালেও প্রয়াকে মেনে নিয়েই বিয়ে করার কথা বলেছিল মিমনকে।তাইতো রাতে মিমনের ফোন পেয়ে খুশি হয়ে গেছিলো।
রক্ত লেগে থাকা হাতটা সামনে ধরে নিরবে কেঁদে উঠে রূপক।

★★★
রাত ১:৩৭ মিনিট
মিমন চিন্তিত হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে, মা পাশে বসে কাঁদছেন। প্রয়াকে অনেক কষ্টে সন্ধ্যারাতে ঘুম পাড়ালেও আবার উঠে কান্না শুরু করেছে।সৃজা কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছেনা। আর এসব কিছুই ল্যাপটপ এর সামনে বসে দেখছে আদিব। গতকাল রাতে সে লিফটের সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে মুমুর এপার্টমেন্টে যেয়ে ক্যামেরা সেট করে এসেছিল।

মিমন নিজের মাথার চুল টেনে ধরে হাটুর উপর হাত দিয়ে বসে আছে।অন্যদিকে প্রয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে ধুপ করে উঠে দাড়ায় মিমন।মুমু এসছে ভেবেই দরজা খুলে দেয়, কিছু বোঝার আগেই কেউ নাক বরাবর ধুম করে একটা ঘুষি দেয় মিমনকে। তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায় সে। নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখে, আদিব গটগট করে হেটে সৃজার কোল থেকে প্রয়াকে নিয়ে আবার গটগট করে হেটে পাশের এপার্টমেন্টে ঢুকে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here