নোনাজলের শহর পর্ব ১১+১২

নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-১১

কপালে উষ্ণ পরশে ঘুম হালকা হয়ে গেছে মুমুর,ঠোঁটের কোণেও উষ্ণ পরশ পেল সে। চোখটা খুলতে ইচ্ছে করছে না, চেনা শরীরের গন্ধ ও স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে মুমু।গালে আলতো করে ছুয়ে দিচ্ছে সে,হঠাৎ কপালে উষ্ণ পানির উপস্থিতি টের পেতেই ভয়ংকর লোকটার কথা মনে পড়ে যায় মুমুর।ঝট করে উঠেই আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে।আদিবও শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় মুমুকে।

“মুমসোনা,এই মুমু?? এই পাখি?? তাকা আমি আছিতো, প্লিজ তাকা আমার দিকে” বলতে বলতে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে আদিবের চোখ থেকে। মুমু দ্বিগুণ গতিতে কাঁদা শুরু করে, কান্নার তোড়ে হেঁচকি শুরু হয়ে গেছে।”ওই লোকটা…” বলেই ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।মুমুকে একটু আলগা করে ধরে মুমুর গালের সাথে আলতো করে ঠোঁট লাগিয়ে,”হুসসস, ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু সে আ সিঙ্গেল ওয়ার্ড।” বলেই আলতো করে চুমু দিল আদিব।

মুমু ভীষণ ভয় পেয়েছে,কান্না থেমে গেছে কিন্তু হাত-পা থরথর করে কাপছে।আদিব শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে বসে আছে, বা হাত দিয়ে ফোনটা নিয়ে কল করে মিমনকে ডক্টর সাথে নিয়ে আসতে বলল।ডক্টর এসে মুমুকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

“she is deeply traumatized by the incident”বলেই একটু থামলেন ডক্টর মুক্তাদির রহমান। আদিব ও মিমন গম্ভীর হয়ে তার কথা শুনছে।বাবার বন্ধু হওয়ার সুবাদে কিছুক্ষণ আগেই আদিবকে পারসোনালি ডেকে পাঠিয়েছেন তার চেম্বারে।আদিবের দিকে তাকিয়ে বললেন,” তোমরা যেটা ভেবে ভয় পাচ্ছো তেমন কিছুই হয়নি।বাচ্চা মেয়ে,,,,ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতার জন্য ভয় দেখিয়ে এরকম করেছে হয়তো।” চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল,”টেনশনের কিছু নেই ঠিক হয়ে যাবে,,,বাট সি হ্যাজ ভেরি উইক হার্ট,অল্পতেই ভয় পেয়ে যায় হয়তো,,,,তাই একটু টাইম লাগবে,আর এই মূহুর্তে ওকে কিছু না জিজ্ঞেস করাই বেটার হবে।”

আজ পনেরো দিন হলো মুমু আদিবকে তার কাছে ঘেঁষতেও দিচ্ছে না।আদিবকে দেখলই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।হসপিটালে এক সপ্তাহ থাকাকালীন এক রাতে মুমু ভীষণ কান্নাকাটি করে আবার সেন্সলেস হয়ে যায়।তারপর থেকে আদিবকে কাছে আসতে দেয় না, ওকে দেখলেই ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কাঁদে। অনেক বুঝিয়েও আদিব কিছু করতে না পেরে রাগে দুঃখে আজ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।

রাত ১০:৪৫ মিনিট
মিমন অসহ্য টেনশনে ঘুমতে পারছেনা,গুটি গুটি পায়ে মুমুর রুমের সামনে যেয়ে দরজাটা হালকা খুলে দেখে মুমু মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমচ্ছে।বাবার রুমে আলো দেখে মিমন দরজা নক করতে যেয়ে দেখে দরজা খোলা, বাবা ফোন হাতে বসে আছে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।মিমন বাবা বলে ডাকতেই তার দিকে তাকায়, বাবা কাঁদছে?কিন্তু কেন? মিমনকে ফোনের মেসেজ গুলো দেখাতেই সে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকায়, তার ফোনেও একই মেসেজ এসেছে।নিজের বোনকে বাঁচাতে চাইলে আদিবের থেকে যেন দূরে নিয়ে যায়, নইলে এরপর পতিতালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে বলে হুমকি বার্তা এসেছে। মুমু হসপিটালে থাকাকালীন মেসেজ টা পেলেও পাত্তা দেয়নি কিন্তু সেদিন রাতে মুমু আবারও ভীষণ অসুস্থ হলে আবার মেসেজ আসে পুলিশ কিচ্ছু করতে পারবে না,এবার ছেড়ে দিলেও পরের বার কোনো সুযোগ পাবে না বোনকে ভালো রাখার।

“প্লিজ ছেড়ে দিন,কি ক্ষতি করেছি আপনার কেন আমার সাথে এমন করছেন,” মুমু ফুপিয়ে কোনরকমে কথাটা বলে। লোকটা মুমুর গলার অন্য পাশে কামড়ে দিয়ে বলল,”আমার সব শেষ করে দিয়েছো জান, তোমার কলেজে ড্রেস পড়ে রোজ কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে যাওয়া, বোকা বোকা চাহনি, অল্পতেই ভয় পেয়ে আঁতকে উঠা,লম্বা চুল, মিষ্টি করে হাসা,আর এই ঠোঁটের নিচে তিলটা…উফফ (বলেই কামড়ে দেয়) বিশ্বাস করো জান আমি ঘুমতে পারিনা,আর ওই আদিবের সাথে তোমাকে দেখলে আমি নিশ্বাস নিতে পারিনা।”মুমু অনেক চেষ্টা করে একটা ধাক্কা দিয়ে পালাতে গেলেই লোকটা মুমকে জোরে থাপ্পড় দেয়। পাগলের মতো মুমুর সারা শরীর কামড় দিয়ে বলতে থাকে,”আদিবের আশেপাশে গেলে খুন করে ফেলবো আদিবকে, আজ বেচে গেছে তবে তুমি ওর কাছে ফিরলে একদম শেষ করে দেব।”মুমু ব্যাথায় ছটফট করছে হঠাৎই লোকটা মুমুর কাধ থেকে জামা সরাতেই মুমু ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।

মায়ের কান্নার আওয়াজে দৌড়ে মুমুর ঘরে যায় মিমন, পিছনে বাবাও আসে।মা মুমুকে উঠানোর চেষ্টা করছে মুমু ঘুমের মধ্যেই কাঁদছে আর হাত-পা ছুড়ছে।মিমন মুমুর কাঁধ ধরে ঝাকি দিয়ে জাগিয়ে তোলে।মিমনকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে মুমু।”ভাইয়া ওই লোকটা… ভাইয়া আমাকে লুকিয়ে ফেলো,ভাইয়া ওই লোকটা হসপিটালেও এসেছি..।” বলেই মুমু সেন্সলেস হয়ে যায়।

আদিব রাগে গজগজ করে পায়চারি করতে করতে বলল,”আপু আজ ওকে কিডন্যাপ করবো আমি, তারপর পুলিশের থার্ড ডিগ্রি দেব।” অনুপ্রিয়া মিটি মিটি হাসছে ভাইয়ের পাগলামি দেখে।গতকাল সন্ধ্যায় মুমুর সাথে রাগ করে এসেছে, এ পর্যন্ত একশোর অধিক আইডিয়া বের করেছে মুমুকে ঠিক করার।”কতোবড় বেয়াদব,মাথামোটা হলে এরকম করতে পারে ভাবতে পারিস তুই আপু!!আমি,আমি মানে ওর বর রাগ করে এসেছি একটা ফোন পর্যন্ত দেয়নি!!” বাইকের চাবি টা হাতে নিয়ে গটগট করে হেটে যেতে যেতে বলল,”আপু আমি যাচ্ছি, অসভ্য মেয়েটাকে আজ আস্ত রাখবো না।”

মিমন হাত-মুখ ধুয়ে কেবলমাত্র বেরিয়েছে নাস্তা করার জন্য, আদিবকে হন্তদন্ত হয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে একটু দাড়ালো।গায়ে রুমে পড়া টাওজার ও গোল গলার টিশার্ট, চুলগুলো এলোমেলো,চোখ গুলো লাল হয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুমোয়নি। “তোর অসভ্য বোন টা কই?” জিজ্ঞেস করতেই মিমন আঙুল উঁচিয়ে মুমুর রুম দেখালো।গটগট করে হেটে মুমুর রুমে ঢুকে যায় আদিব।এই ছেলে টা এত কেন ভালোবাসে বোন টাকে,একরাতেই বেহাল দশা করেছে চেহারার, এর থেকে কি করে দুরে রাখবে বোনটাকে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মিমন।তাকেই কিছু করতে হবে ভাবতে ভাবতে নাস্তার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

দরজা লাগানোর শব্দে মুমু পিছনে ঘুরে দেখে আদিব দরজা বন্ধ করে চটপট পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে টেবিলের দিকে মোবাইল আর চাবি ছুড়ে দিল।কিছু বুঝে উঠার আগেই মুমুকে জাপটে ধরে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়েই ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে,মুমু ছোটার চেষ্টা করতেই হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে। হঠাৎ গালে উষ্ণ পানির ছোয়া পেতেই ফট করে চোখ খুলে মুমু, আদিব কাঁদছে!! মুমুর বুকে ভীষণ ব্যাথা করছে,তার আদিব ভাইয়া কাঁদছে কেন? কেন কাঁদছে? মুমুর ছটফটানি বন্ধ হওয়ায় আদিব মুমুর গলায় মুখ ডুবিয়ে আস্তে করে বলল,”আমাকে দূরে সরালে তোকে খুন করবো তারপর নিজেও খুন হবো।”

মুমু গোসল করে বের হয়ে দেখলো আদিব এখনো ঘুমচ্ছে।মেজে থেকে আদিবের টিশার্ট টা তুলে রেখে বিছানার উপর বসে।আদিব বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমচ্ছে,এ কয়দিনে অনেক টা শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে হালকা ডার্ক সার্কেল দেখা যাচ্ছে, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।মুমু আলতো করে চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়,হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে দেখে আদিবের ফোন বাজছে।স্ক্রিনে রুপার নাম দেখে রিসিভ করে মুমু।রুপার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে নিজের ফোনটা খোঁজা শুরু করে। রুপা ভীষণ অভিমান করেছে তার ফোন রিসিভ না করার জন্য,হসপিটালে থাকাকালীন দেখতে গিয়েছিল নাকি কিন্তু তখন মুমু কথা বলার অবস্থায় ছিল না। তাই পরে অনেকবার ফোন করেছে সে কিন্তু মুমু রিসিভ না করায় আজ বাধ্য হয়ে আদিবকে ফোন দিয়েছে।

” জান তুমি কি চায়ছো আমি আদিবকে মেরে ফেলি?? দেন ওকে, আই’ল কিল হিম জান…. উম্মাহ।”

মেসেজ টা দেখেই মুমু কাঁপতে শুরু করে…..
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-১২

ICU এর সামনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে মুমু,একধ্যানে তাকিয়ে আছে ভেতরে থাকা মানুষটার দিকে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক, সারা শরীরে একগাদা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিথর হয়ে শুয়ে আছে আদিব। মা-বাবা, বড় আপু অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে মুমকে,কিন্তু সে ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে আছে আদিবের দিকে।

দৌড়াতে দৌড়াতে এসে মুমুর পাশে দাড়ায় মিমন, একটু দম নিয়ে ভিতরে তাকাতেই ধুক করে উঠে বুকটা।পাশে মুমুর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় সে,মুমু চুপচাপ শান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ করেই মুমু হাটা শুরু করে,মিমনের ডাকে কোনো সাড়া না দিয়ে হাটতে থাকে। মিমন হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করলে আস্তে করে বলল,” আমি বাড়ি যাব ভাইয়া।” মিমন মুমুর দুই কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,”পাগল হয়ে গেছিস তুই?” মুমু মিমনের হাত কাঁধ থেকে ঝাড়ি দিয়ে চিৎকার করে বলল,”বললাম তো বাড়ি যাব”

উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু মুমু কারো কথা না শুনেই চলে এসেছিল।তারপর বাড়ির সবাইকে বাধ্য করে মিমনের সাথে কলকাতা চলে গেছিল মুমু।বাবা-মা সকলে চট্টগ্রামে চলে যান, কোন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি মুমুর শর্তে অনুযায়ী। আর কোনদিন আদিবের ধারে কাছে যায়নি মুমু।

বর্তমানে

নির্ঘুম একটা রাত পার করলো মুমু,আজকের দিনে তার জীবনে এসেছিল আদিব। আজ আদিব- মুমুর দশম বিবাহ বার্ষিকী। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মুমুর,গত আট বছর যাবত সে এই কষ্টে ছটফট করছে।কি করবে কার কাছে যাবে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে মায়ের রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে মুমু। “মা আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা,,,, একটু আদিবকে এনে দাওনা মা,,,,আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না,,,,ওমা একটু এনে দাওনা মা” মরিয়ম বেগম মেয়েকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন,তার চোখেও পানি।বিগত দুই বছর যাবত হাজার বার মেয়ের এরকম কষ্টের আহাজারি শুনে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন,তাই চুপচাপ মেয়েকে বুকের মাঝে নিয়ে বসে থাকেন।

সকাল ১০ টা
আদিব ডেলিভারি বয় থেকে প্যাকেট নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই পাশের এপার্টমেন্টের দরজা হা করে খোলা দেখে অবাক হয়ে যায়।কিন্তু তার থেকেও অবাক হয় দুই তিন বছর বয়সী একটা বাচ্চাকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটা।বাচ্চাটার তাকানো দেখে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে, কি করবে ভেবে না পেয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি দিল।উত্তরে বাচ্চাটা তার সামনের দাঁত দুটো বের করে গালে টোল ফেলে হাসি দিল। বাচ্চাটা বেশ কিউট,মাথায় ঝাকড়া চুল, গালটা গুলুগুলু, হালকা পিংক কালারের শর্ট ফ্রকে একদম ছোট বারবি ডলের মতো দেখাচ্ছে।

বাচ্চাটি গুটি গুটি পায়ে আদিবের সামনে এসে বলল, “তুমি তি থালামনি তে দেতেচো?” আদিব বাচ্চাটার কথা বুঝতে না পেরে কি বলবে বুঝতে পারছেনা,তখনই লিফট খুলে একজন মাঝ বয়সি মহিলা হাতে বালতি নিয়ে বের হয়ে আসে।” আল্লাহ, পয়া আম্মা আপনে এহানে ক্যান?” বলেই মহিলা টি বাচ্চাটির কাছে এসে কোলে তুলে নেয়। “তোমাতে থুজছি তো,আমি থাদে দাবো তো” মহিলা টি এতক্ষণে আদিবের দিকে সরু চোখে তাকায়, “আপনে কেডা?”মহিলার তাকানো দেখে আদিবের নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে তাই শক্ত গলায় বলল,” আমি নতুন এসেছি, এটা আমার এপার্টমেন্ট।” বলেই ফট করে দরজা বন্ধ করে দেয় আদিব।

‘কেমনে যে ভুইলা গেলাম দরজা লাগাইতে, আপায় জানবার পারলে তো রাইগ্গা যাইবো’ বিড়বিড় করতে করতে ভিতরে ঢুকে যায় টুনি বেগম।মরিয়ম বেগম টুনি কে বিড়বিড় করতে দেখে বলল,”কিরে কি বলছিস?” টুনি ভ্যাবলার মতো হাসি দিয়ে বলল ‘কিছুনা খালাম্মা।’

বাবার সাথে দেখা করে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয় আদিব, বহুদিন পরে দেশে আসায় তেমন কিছুই চিনতে পারছে না।চারটা বাজে প্রায়,তরুণ হয়তো অফিসে তাই তাকে ফোন দিলো না। বারো তালা বিশিষ্ট ভবনের সাত তালায় থাকে আদিব। গাড়িটা পার্ক করে বের হতেই, বিল্ডিংয়ের পাশে গার্ডেনে চোখ পড়ে আদিবের।অনেক গুলো বাচ্চা খেলছে, সেদিনের দেখা বাচ্চাটার দিকে চোখ আটকে যায় তার।ফর্সা গায়ে লাল ফেন্সি ফ্রকে একদম ছোট্ট পরী মনে হচ্ছে। সেই একইভাবে টোল একে হাসছে,বাচ্চাটার হাসি দেখে আনমনেই হেসে উঠে আদিব। হঠাৎই বাচ্চাটা পড়ে যেতে নিলেই কেউ এসে কোলে তুলে নেয়,সেও লাল কালারের শাড়ী পড়েছে।হয়তো বাচ্চা টার মা,এখনকার মায়েদের ফ্যাশন বাচ্চার সাথে ম্যাচিং জামা কাপড় পড়া।বাচ্চার মায়ের মুখ দেখেই থমকে যায় আদিব।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, বুক ধড়ফড় করছে তার।অস্পষ্ট সরে বলল, “মুমু”।হঠাৎই আদিবের চোখ লাল হয়ে গেল,কপালে রগ ভেসে উঠেছে,হাত মুঠো করে দাড়িয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে ফট করে পকেট থেকে ফোন বের করে ছবি তুলে নেয় মুমু আর বাচ্চাটার।

তরুণ ফোন রিসিভ করতেই ঝড়ের গতিতে আদিব বল উঠে, ” একটা ছবি পাঠিয়েছি,একঘন্টার মধ্যে মেয়েটার সব ইনফরমেশন সেন্ড কর আমাকে।”তরুণ হেসে বলল “ভাই ছুটিতেও গোয়েন্দা গিরি ক…” কথা শেষ করার আগেই আদিব রেগে চিৎকার করে বলল,” আই নিড দিজ ইনফরমেশন রাইট নাউ ড্যাম ইট।”

রাগে আদিবের মাথা ফেটে যাচ্ছে, মুমুকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।না না তার আগে ওর বর্তমান হাসবেন্ড কে খুন করবে।কিন্তু বাচ্চাটার কি হবে??যা হয় হবে আই ডোন্ট কেয়ার। আমাকে ধোঁকা দিয়ে অন্যের সাথে সংসার!শেষ করে ফেলবো একদম শেষ করে ফেলবো।
এসব ভাবতে ভাবতে তরুণকে কল দেয়, ফোন রিসিভ করছে না।রাগে সামনে থাকা টেবিল টাতে লাথি দেয় আদিব।

কলিংবেলের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেখে তরুণ দাড়িয়ে আছে।”তুই এখানে কেন?তোকে যে কাজটা দিলাম সেটা ফেলে এখনে কি করছিস?” ভীষণ রেগে বলল। তরুণ হেসে বলল ” আগে ভিতরে আসি তারপর তোর ইনফরমেশন দিই, এতো ইম্পরট্যান্ট ইনফরমেশন তাই ভাবলাম সামনাসামনি বসে দেয়া উচিত।”

আদিব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তরুণের দিকে।তরুণ একটু গলা পরিষ্কার করার ভঙ্গি করে বলতে শুরু করে,”মেয়েটির নাম মিশিকা মাহমুদ মুমু,পেশায় একজন শিক্ষিকা।মেয়েটি মা ও তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকাতে থাকে।মজার ব্যাপার মেয়েটি তোর সামনের এপার্টমেন্টেই থাকে।মেয়ে টি ইন্ডিয়ার —– ইউনিভার্সিটি থেকে পড়া শোনা করেছে, দুই বছর হলো দেশে এসেছে।ঢাকা —– ইউনিভার্সিটি তে লেকচারার হিসেবে দেড় বছর যাবত চাকরি করছে।ওহ…আজ তার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ছুটিতে আছে।আর…”
“মেয়েটির হাসবেন্ড সম্পর্কে বল” আদিব অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল।তরুণ আদিবের দিকে সরু চোখে তাকালো তারপর মৃদু হেসে বলল “এই একটা তথ্যের জন্য আমি তোর বাসায় আসতে বাধ্য হয়েছি।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here