নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-২৩
-” মুমু পাগলামি করিস না, ফর গড সেক হাত থেকে চাকুটা সরা।”
আদিব অস্থির হয়ে মুমুকে বার বার কথাটা বলছে।আদিব মুমুকে থামাতে একটু কাছে আসতেই মুমু হাতের সাথে চাকুটা চেপে ধরে, সাথে সাথে বেশ খানিকটা কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে।আদিব থেমে যায় অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল,
-“ওকে, ওকে তুই যা বলবি তাই হবে। তুই যা চাস তাই হবে। আই প্রমিজ তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো।”
আদিবের কথা শুনে মুমু হাত থেকে চাকু ফেলে ওখানেই ধুপ করে বসে পড়ে।আদিব দৌড়ে যেয়ে মুমুকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।তার প্রাণটাই বের করে ফেলেছিল মেয়েটা।মরিয়ম বেগম পাশে দাড়িয়ে মুখে কাপড় দিয়ে কাঁদছেন। আট বছর আগে বাবা আর মিমনের সাথে এভাবেই জোর করে কলকাতা চলে গেছিল মেয়েটা।আজ আবার আদিবকে বাধ্য করলো তার কথা শুনতে।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ___
মুমুর থেকে সব শুনে রাগে আদিবের গা রিরি করছিল।মুমুকে রেখে তখনই বের হতে গেলে বাধা দেয় মুমু, কোনভাবেই আদিবকে বাইরে যেতে দেবে না।তার একই কথা,
-” আদি তুমি কোথাও যাবে না।আমরা এখান থেকে চলে যাব।আমরা এখনই চলে যাব,আদি তুমি আমাকে আর প্রয়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলো যেখানে ওই লোকটা আমাদের খুঁজে পাবে না।ওই লোকটা তোমাকে মেরে ফেলবে আদি, তোমার কিছু হয়ে গেলে….।” বলেই ঝরঝর করে কেঁদে দেয় মুমু।
মুমুর কথাতে আরো রেগে যায় আদিব, মুমুকে ধরে ঝাকিয়ে বলে উঠে,
-” গাধার মতো কথা বলবি না মুমু, সামান্য মেসেজ আর ফোন কলে আমি পালাতে যাব কেন? এর শেষ আজ আমি দেখেই ছাড়বো।”
বলেই মুমুকে ছেড়ে দরজা খুলে বের হতে গেলেই মুমু দ্রুত ডাইনিং থেকে চাকু নিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবার হুমকি দেয়।মুমুর কাজে আদিব হতবাক হয়ে যায়।
আজ একসপ্তাহ হলো রূপক কলকাতা এসে বসে আছে, বসে আছে বললে ভুল হবে মুমুকে পাগলের মতো খুজছে।সেদিন এয়ারপোর্টে মুমুকে ইন্ডিয়া ফ্লাইট টিকিট বুক করা দেখেই স্বস্তি নিয়ে অফিসে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু তার ইনফর্মার যখন জানাই মুমু কলকাতা আসেনি তার একদিন পরেই চলে আসে কলকাতা।কিন্তু যার জন্য আসা তার টিকিটারও খবর নাই।
দেড় মাস পর,
সকালের মিষ্টি একফালি রোদ মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় মুমুর।চোখ খুলতেই দেখতে পায় আদিবের উদোম বুকে উপর মুখে আঙুল পুড়ে শুয়ে আছে প্রয়া,আদিব ডান হাতে আগলে রেখেছে প্রয়াকে।আর বাম হাত দিয়ে মুমুকে জড়িয়ে ধরে আছে।আলতোভাবে আদিবের হাত সরিয়ে উঠে বসে, প্রয়ার মাথায় চুমু দিয়ে একটু উচু হয়ে আদিবের বা গালে খোচাখোচা দাড়ির উপর ঠোঁট ছুয়িয়ে দেয় মুমু।তারপর আস্তে করে নেমে যায় বিছানা থেকে, চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে এগিয়ে যায় বেলকনিতে।
লোকালয় থেকে দূরে এই দোতলা বাড়িটার বেলকনি থেকে চা বাগান টা অপূর্ব দেখায়।রেলিঙের উপর হাত রেখে একটু ঝুকে সামনে তাকিয়ে বড় একটা নিশ্বাস নেয় মুমু। তারপর বেলকনির বা দিকে তার সব থেকে পছন্দের পুকুর ঘাট আর কৃষ্ণচূড়া গাছটি দেখে মিষ্টি হাসে মুমু।কিছুক্ষণ প্রকৃতি বিলাস করে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে যায় মুমু।
ফোনের ভাইব্রেশনে ঘুম ভেঙে যায় আদিবের, তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে সাইলেন্ট মুড করে।স্ক্রিনে তরুণের নাম দেখে প্রয়াকে আলতো করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে উঠে বেলকনিতে এসে ফোন রিসিভ করে আদিব। তরুণের সাথে কথা বলে রুমে এসে মুমুকে কোথাও না পেয়ে নিচতলায় নেমে আসে আদিব।কিচেন থেকে আওয়াজ পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।মুমু কোমড়ে শাড়ী বেধে গুনগুন করে গান গাইছে আর রুটি বানাচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে সুখী গৃহিণী। এই সুখী মুখটা দেখার জন্যই তো আদিব সব ছেড়ে দিয়ে এখানে বসে আছে।
সেদিন মুমুর পাগলামি সামলাতে আদিব মুমুকে নিয়ে কানাডা চলে যাওয়ার ডিসিশন নেয়।কিন্তু হুট করে কানাডা যাওয়া তো সম্ভব নয়। এদিকে মুমু কোনভাবেই আর ঢাকা থাকবে না। তাই মায়ের পছন্দের বাড়িতে আসার ডিসিশন নেয় আদিব।সিলেটে এসে এই বাড়ি টা খুব ভালো লেগেছিল মায়ের তাই বাবা মাকে জন্মদিনে উপহার দেন এই বাড়ি টা।সেদিনই বাবাকে ফোন করে এখানে আসার কথা জানাই আদিব।সেদিন রাতেই শাশুড়ীকে চট্টগ্রাম রেখে পরদিন রাতেই সিলেট চলে আসে তারা।
“যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে,
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে||”
মুমুর গান শুনে আদিব শয়তানি হাসি দিয়ে চুপিচুপি যেয়ে মুমুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আদিব জড়িয়ে ধরতেই মুমু লাফিয়ে পিছনে ঘুরে দেখে আদিব ভিলেনি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুমু ঘুরতেই আদিব চট করে মুমুর কোমড় থেকে শাড়ির বাঁধন খুলে কোমড় চেপে ধরে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।মুমুর গলায় মুখ ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” জড়িয়ে ধরেছি মুমুপাখি, এবার ফটাফট কানে কানে বলতো কি বলতে চাস।” মুমু আদিবের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ছাড়া পাওয়া জন্য ছটফট করতে করতে বলল,
-” আদি প্লিজ ব্রাশ করে আসো, আই হেইট ইউর মর্নিং কিসেস,প্লিজ আ…। ”
মুমু কথা শেষ করার আগেই আদিব তার কথা বন্ধ করে দেয়।কিছুক্ষণ পরে ছাড়া পেতেই মুমু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-“আই হেইট ইউ।”
-” আই নোও দ্যাট মুমুপাখি।” বলেই মুমুর ঠোঁটে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় আদিব।
আদিব ফ্রেশ হয়ে প্রয়াকেও ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ করে নিচে নেমে আসে।ততক্ষণে মুমু টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আদিব হেসে প্রয়াকে মুমুর কোলে বসিয়ে দিতেই প্রয়া মুমুর এক গালে চুমু দিয়ে বলল,
-” দুদ মনিং মাম মাম।” প্রয়াকে কপি করে আদিব মুমুর আরেক গালে চুমু দিয়ে বলল,
-” গুড মর্নিং মাম মাম।” বলেই হুহা করে হেসে দেয় আদিব।প্রয়াও বাবার সাথে খিলখিল করে হাসতে শুরু করে।বাবা-মেয়ের প্রাণবন্ত হাসি দেখে মুমুর সব রাগ ফুসস।
মুমু ধোঁয়া ওঠা লেবু চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে আদিব আর প্রয়ার দিকে।ইদানীং আদিবকে চোখে হারায় প্রয়া।সবসময় আদিবের সাথে লেপ্টে থাকে, খাওয়া, ঘুম সবকিছুতেই পাপাকে চায় তার।এই যে বাবা-মেয়ে ঘেটো স্টাইলে নাস্তা করছে। তাদের এই ঘেটো স্টাইল লাস্ট পর্যন্ত মুমুকে সহ্য করতে হয়।এই যে প্রয়া ফট করে ডিম পোঁচ থেকে আঙুলে কুসুম নিয়ে তার পাপার নাকে লাগিয়ে দিল, তার পাপাও তার নাকে লাগালো। আর খাবার শেষে দুজনেই মুমুর গালে নাক ঘষে লাগাবে, ভেবেই ফত করে একটা নিশ্বাস নেয় মুমু। এসব উদ্ভট কাজগুলো সবই রাগী গাধাটার থেকে শিখেছে প্রয়া।
আদিব মুমুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“মুমু তরুণ ফোন দিয়েছিল, সব কমপ্লিট।”
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-২৪
-“মুমু, তরুণ ফোন করেছিল,সবকিছু কমপ্লিট সামনের সপ্তাহে আমাদের ফ্লাইট।” বলেই আদিব মুমুর দিকে তাকালো, মুমু মন খারাপ করে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে আছে।আদিব মুমুর হাত ধরে আবার বলল,
-” মুমু আরেক বার ভেবে দেখবি, এখনো সময় আছে আমরা এখানেই সেটেল্ড হতে পারি আর বাড়িটাও তো তোর পছন্দ।”
মুমু ফটাফট উত্তর দেয়,
-” ভাবাভাবির কিছু নেই আদি আমরা সামনে সপ্তাহেই যাচ্ছি।” বলেই উঠে চলে যায় মুমু।মুমুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে আদিব।
সকালের নাস্তা শেষে প্রয়াকে নিয়ে গার্ডেনে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে আদিব।মুমু একবার দুজনকে দেখে দুপুরের রান্না করতে চলে যায়।রান্না শেষে কিচেন থেকে বের হয়ে রুমে যাওয়ার সময় বাবা-মেয়ের হাসির শব্দ শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে মুমু।দ্রুত পায়ে গার্ডেনের দিকে যায়।যা ভেবেছিল তাই, দুজনে বসে কাদামাটি নিয়ে ভীষণ মনযোগ দিয়ে খেলছে।প্রয়া তার সারা হাতে কাদা করে আদিবের সাদা টিশার্টে হাতের ছাপ দিচ্ছে আর আদিব মনোযোগ দিয়ে মেয়েকে দেখাচ্ছে কোথায় কোথায় লাগাতে হবে।অসভ্য লোক একটা, অদ্ভুত সব বুদ্ধি বের করে। কতবার বলেছে এসব না করতে, উফফ প্রয়ার থেকেও বেশি জ্বালায় অসভ্যটা।
মুমু এসে দাড়াতেই প্রয়া ফট করে আদিবের পিছনে লুকিয়ে যায়।আদিব মুমুর দিকে তাকিয়ে ক্যাবলা একটা হাসি দেয় যার অর্থ উই আর ইনোসেন্ট। মুমু কিছু না বলে রাগী চোখে আদিবের দিকে তাকিয়ে প্রয়াকে কোলে তুলে নেয়।প্রয়া অসহায় দৃষ্টিতে পাপার দিকে তাকায় যার অর্থ আরো খেলবো।মুমু কয়েক পা আগাতেই আদিব ঝট করে প্রয়াকে সহ মুমুকে কোলে তুলে নেয়।হঠাৎ এমন করাই মুমু ভয় পেয়ে যায় প্রয়াকে সামলে রেগে বলে উঠে,
-” আদি ছাড়ো বলছি, পড়ে যাব আমরা।”
কে শোনে কার কথা আদিব সোজা পুকুর ঘাটের দিকে এগিয়ে যায়।মুমু আরো রেগে বলল,
-” আদি ভালো হবে না কিন্তু,এদিকে যাচ্ছ কেন? পুকুরে একদম নামবে না। আদি প্রয়ার ঠান্ডা লেগে যাবে, আদি আমার ভয় করে আদি প্লিজ না।” (শেষের কথাগুলো অনুরোধ করে বলল মুমু)
ততক্ষণে আদিব সিড়ি বেয়ে বুক পানিতে নেমে গেছে।পানিতে মুমুকে নামিয়ে দিতেই প্রয়াকে সহ মুমু একহাতে আদিবের গলা জাপটে ধরে।আদিব একহাতে প্রয়াকে নিজের কোলে নিয়ে অন্যহাতে মুমুর কোমড় ধরে কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” মুমুপাখি দুই মাসের হানিমুনে এসে সমুদ্র না পেলাম পুকুরে তো গোসল করতেই পারি তাইনা।” বলেই হেসে দেয় আর অন্যদিকে প্রয়া তো পানিতে নেমে পানি নিয়ে খেলছে আর খিলখিল করে হাসছে।মুমুর হঠাৎই মনে হলো জীবন এতো সুন্দর কেন? সময়টাকে কি একটু থামিয়ে দেওয়া যাবে? মুমুর মনের কথা হয়তো প্রকৃতিও বুঝতে পারে তাই জীবন টাকে আর একটু রাঙাতে বাতাসে কৃষ্ণচূড়া ফুল ছড়িয়ে দেয়।আজ সুখের কৃষ্ণ-বৃষ্টিতে ভিজেছে তারা।
অসময়ের বৃষ্টিতে আটকে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে মিমনের।ড্রয়িংরুমে ঢুকে বাবার সাথে রূপককে বসে থাকতে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়।মিমনকে দেখে হেসে উঠে দাড়ায় রূপক।মিমন হেসে বলল,
-” আরে রূপক কেমন আছো, সুস্থ এখন?”
-“ভালো আছি মিমন ভাই, আপনি কেমন আছেন?( হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল রূপক)
-” এইতো বেশ ভালো আছি, তারপর বলো কি খবর তোমার?” (হেসে বলল মিমন)
-“জ্বি ভালো, একটা জরুরি কাজে এসেছি বাট কাজটা শেষ করতে পারিনি তাই অযাচিতভাবেই আসতে হলো। কালই চলে যাব।( সংকোচ নিয়ে বলল)
-” আরে এভাবে বলছো কেন? তোমার যখন খুশি আসতে পারো তুমি তো আমাদেরই একজন।”
মিমনের কথায় মুচকি হাসলো রূপক।ইন্ডিয়া থেকে আসার পরে মুমুর খোঁজ না পেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে গেছিল।বেপরোয়া হয়ে ড্রাইভ করে এক্সিডেন্ট হয়, একমাসের বেশি হসপিটালে ছিল সে।এখন আবার তার মুমুকে চায়।
মিমনের সাথে কথা বলে রুমে এসে মুমু আর প্রয়াকে কোথাও না পেয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায় আদিব।দোলনায় মা-মেয়ে দুজনেই বসে দুলছে।প্রয়া ঘুমে চোখ ছোট করে আছে আর মুমু গুনগুন করে গান গাইছে।আদিব সামনে দাড়াতেই প্রয়া ঘুমু ঘুমু চোখে পাপা বলে হাত বাড়িয়ে দিল।আদিব হেসে প্রয়াকে কোলে তুলে টুপ করে একটা চুমু খায়।তারপর প্রয়াকে বুকের উপর নিয়ে মুমুর কোলে মাথা রেখে দোলনাতে শুয়ে পড়ে।মুমু মিষ্টি হেসে আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ যেতেই প্রয়া আদিবের বুকের উপর ঘুমিয়ে যায়।মুমু আদিবের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বন্ধ করে আছে।ঘুম কিনা ঠিক বুঝতে পারলোনা তাই আস্তে করে ডাকলো,
-” আদি” মুমুর ডাকে পট করে চোখ খুলে আদিব।মুমু বলল,
-” রুমে চলো, প্রয়া ঘুমিয়ে গেছে।”
আদিব মুমুর হাত নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,
-” পরশু তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে মুমু।”
-” কি সারপ্রাইজ?” মুমুর কথা শুনে মুচকি হাসে আদিব তারপর উঠে মুমুর হাত ধরে নিচে নামতে নামতে বলল,
-“পরশু জানতে পারবি।”
-” জানো দাদু প্রয়া আজকে পুকুরে গোসল করেছে।ফুপাজি ওকে সাঁতার শিখিয়েছে।” ভীষণ আগ্রহ নিয়ে দাদুকে গল্প শোনাচ্ছে সমৃদ্ধ।
খাবার টেবিলে বসতে বসতে সমৃদ্ধর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রূপক। মিমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” মুমুরা কি গ্রামে গেছে?”
রূপকের প্রশ্নে মিমন অবাক হয়ে বলল,
-” কেন তুমি জানোনা, আঙ্কেল কিছু বলেনি তোমাকে? অবশ্য তুমি তো অসুস্থ ছিলে তাই হয়তো বলেননি।”
মিমনের কথায় আগ্রহ নিয়ে তাকায় রূপক। দেড় মাস আগের সকল ঘটনা জানায় রূপককে।তারপর অনুরোধ করে বলল,
-” তুমি একটু দেখোনা কিছু করতে পারো কিনা। এভাবে আর কতকাল কাটাবে।আদিবকে তো ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে কিছুই করতে দিলো না মুমু। তুমি যদি কিছু করতে পারো।”
সকাল থেকে মুমুর খুব খারাপ লাগছে, খুব অস্থির লাগছে। আজ কয়েকদিন শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে।কিন্তু আজ একটু বেশি খারাপ লাগছে।নাস্তার টেবিলে বসে দুইবার খাবার মুখে নিতেই ভীষণ বমিবমি লাগতেই দৌড়ে বেসিনে গিয়ে হরহর করে বমি করে দেয় মুমু।মুমুর বমি করা দেখে আদিব আর প্রয়া ভীত চোখে তাকিয়ে আছে। আদিব দ্রুত মুমুর কাছে এসে কাঁধ ধরে। মুমুর চোখে মুখে পানি দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয় আদিব।পাশের চেয়ারে নিজে বসে মুমুর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-” ওহ মাই গড মুমুপাখি, আমি বাবা হবো!!”
মুমু কেবলই মাথাটা টেবিলের উপর রেখে শুয়েছিল, আদিবের কথা শুনে রাগ উঠে গেল। এখানে আসার তিন দিন পরে শারীরিক দুর্বলতা ও টেনশনে মুমুর বমি হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিল।তখন জ্ঞান ফেরার পর আদিব ঠিক এই কথাটা বলেছিল। মুমুর খেতে ইচ্ছে না করলে সাথে সাথে তার মনে হয় মুমু প্রেগন্যান্ট, সেবার কীট এনে জোর করে টেস্টও করিয়েছিল সে।কথায় কথায় তাকে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে দেয় গাধাটা।ভেবেই রেগে কটমট চোখে আদিবের দিকে তাকাতেই আদিব ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
-” মানে হতেও পারে আরকি।”
চলবে
মুমুটা আদিবকে গাধা বললে মাথায় ধোঁয়া ওঠে আমার 👿👿
চলবে