পথের ধারে দূর্বাফুল পর্ব -০৭ ও শেষ

#পথের_ধারে_দূর্বাফুল
©মম সাহা

অন্তিম পর্ব,

আশ্বিন মাসের উত্তপ্ত গরমটা তখন প্রায় থিতিয়ে এসেছে। কাক চারপাশে তার কর্কশ স্বরে ডেকে কি যেন নালিশ করছে বার বার। পুরো একটা ড্রয়িং রুম জুড়ে অনেক গুলো মানুষের আর্তনাদের নীরবতা ছেয়ে আছে। দোয়েলের মনে যে অনাকাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তেজনাটা, তা ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে বয় কমছে না। সে আর টিকতে না পেরে অতঃপর আবারও প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“বলুন না, বর্ণ ভাইয়া কাকে নীলাম্বরী বলেছে? কাকে নিয়ে ভেতরে গেলেন? কাউকেই তো তার পাশে দেখতে পেলাম না। বর্ণ ভাইয়া তো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তাহলে এমন আচরণের কারণ?”

শারমিন চৌধুরীর মুখটা আরও বিমূঢ় হয়ে এলো। চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে নিরুপমারও। সাথে মেয়েটার মিহি স্বরে ফুঁপানোর শব্দও ভেসে আসছে। দোয়েলের যেন কূল বিহীন সমুদ্রে ভরাডুবি অবস্থা। তার উত্তেজনা তখন সীমা ছাড়িয়েছে। সুস্থ একটা মানুষের এমন অস্বাভাবিক আচরণ স্বাভাবিক ভাবে সকলের মনেই প্রশ্ন জাগাবে। দোয়েল এবার রঙের দিকে তাকালো, মেয়েটাকে কিঞ্চিৎ ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কিছুতো বলবি রঙ? কি হয়েছে ভাইয়ার?”

“ভাইয়া মানসিক ভাবে একটু অসুস্থ, দোয়েল।”

দোয়েল যেন ভুল শুনলো এমন হতভম্ব হয়ে তাকালো। বর্ণ নামক এত সুদর্শন পুরুষটা নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ! যে মানুষটাকে নিয়ে দোয়েলদের বন্ধু মহলে একটা রমরমা আলোচনা হয় সেই সুন্দর পুরুষটা নাকি অসুস্থ! এটাও নাকি শোনার বাকি ছিল। তাই তো রঙ নিজের ভাইয়ের কথা ওঠলেই কেমন মিইয়ে যেত, আনমনে কী যেন ভাবতো! তারা এতদিন বোঝার চেষ্টাও করেনি অথচ আজ সেই রহস্য উদঘাটন হয়েছে! দোয়েল অস্ফুটস্বরেই বলল,
“মানসিক ভাবে অসুস্থ কেন? কী হয়েছে ভাইয়ার?”

দোয়েলের প্রশ্নের বিপরীতে জবাব দিলো নিরুপমা,
“একজনকে প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে আজ তার এ অবস্থা।”

এই মূহুর্তে এ বাড়ির সকলের কথাই যেন দোয়েলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তার ধৈর্য যেন বাঁধ ভাঙছে। যে লোকটার দিকে তাকালে মনেহয় চারপাশে দীপ্তি ছড়াচ্ছে, সে লোকটাই নাকি অসুস্থ!

শারমিন চৌধুরীর কান্নারা এখন শব্দ ছুয়ে দিল। শাড়ির আঁচল মুখের মাঝে চেপে ধরলো সে সাবধানে যেন কান্নারা বাহিরে না যায়, যেন বর্ণ না জানতে পারে তার জন্যই কাঁদছে কেউ।

দোয়েল সোফা ছেড়ে ওঠে গেলো। শারমিন চৌধুরীর পায়ের কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলো। মহিলাটার শরীর কাঁপছে। আদরের ছেলের এমন পরিস্থিতিতে মা যে বড্ড অসহায়। দোয়েল ছোটো টেবিল থেকে পানির জগটা নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিল শারমিন চৌধুরীর দিকে, আলতো স্বরে বলল,
“আন্টি এটা নাও। কেঁদো না। কাঁদলে কী সব ঠিক হয়ে যাবে বলো? কেঁদো না।”

শারমিন ধীর হাতে গ্লাসটা নিয়ে পানিটা পান করল। থেকে থেকে কেঁপে ওঠছে মানুষটা। নিজেকে ধাতস্থ করলো অনেকটা সময় নিয়ে, অতঃপর বলতে শুরু করলো,
“নীলাম্বরী- আমার ছেলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা একজন নারী চরিত্র। একটি মিষ্টি অস্বচ্ছ মেয়ে। যাকে অসম্ভব রকমের ভালোবেসেছে আমার ছেলে। যার জীবনের উত্থান-পতনে আমার ছেলে সঙ্গী ছিল অথচ আজ সেই মেয়েটার অবর্তমানে আমার ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন।”

নিরুপমা ডুকরে ওঠলো। কেমন আছে তার ছোটো বোনটা? যাকে সে আদর যত্ন দিয়ে ছোটোবেলা থেকে তিল তিল করে বড়ো করেছে সে মেয়েটা আদৌও বেঁচে আছে তো!

দোয়েল চুপচাপ দেখছে সকলের অনুভূতি। জানার আগ্রহ তার ভেতর ডালাপালা মেলে বসেছে। শারমিন চৌধুরী নিজের কান্নাটা সামলে নিলেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলেন,
“বর্ণের জীবনে মূল্যবান একটি অধ্যায়ের নাম নীলাম্বরী। যাকে ছাড়া আমার ছেলেটা বাঁচার কথা ভুলে যায়। আমাদের নিরুপমার ছোটো বোন সে। শ্যামলা গড়ণের মিষ্টি মেয়েটা আমার ছেলেটার উন্মাদনা ছিল। সবসময় সে নীলাম্বরীতেই বিভোর থাকতে। নীলাম্বরীর সকল সুখ-দুঃখের সাথী ছিল সে। কিন্তু মেয়েটার অস্তিত্ব আমার ছেলেটার জীবনে খুব সামান্যই ছিল। ওর মাথায় দেখা দিয়েছিল ড্যামেজ। যা সাড়ানোর চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। মেয়েটার সাথে বর্ণের বিয়ের কথাও হয়েছিল কিন্তু মেয়েটা শেষ অব্দি বিয়েটা করেনি। ওর অনির্দিষ্ট জীবনটার সাথে বাঁধতে চায়নি আমার ছেলেটার জীবন তাই হয়তো… কিন্তু বাঁধনের জন্য বোধহয় কোনো স্থায়ী সম্পর্কের প্রয়োজন হয়না। সম্পর্ক ছাড়াও বোধহয় খুব গোপনে বাঁধা যায় কাউকে যেমন করে নীলা বেঁধেছিল আমার পুত্রকে। আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে সে এই দেশের মায়া, আমাদের মায়া তার প্রিয় পুরুষের মায়া ত্যাগ করে বাবা-মায়ের হাত ধরে চলে গিয়েছিল দূরদেশ। আমার ছেলেটা ওর সাথে যাওয়ার বড্ড পাগলামি করেছিল কিন্তু ও রাজি হয়নি, হয়তো আমাদের থেকে আমাদের আদরের সন্তানকে নিয়ে যেতে চায়নি। মেয়েটা তো সবসময় অন্যের ভালো নিয়েই ভেবেছিল। কিন্তু ও বোধহয় আমার ছেলের ভালোবাসাকে সম্পূর্ল রূপে বুঝতে পারেনি। ও হয়তো ভাবতে পারেনি ওর সাথে শারীরিক ভাবে আমার ছেলেটা না গেলেও মানসিক ভাবে ঠিক চলে গিয়েছে। আমাদের কাছে রেখে গিয়েছে কেবল রক্ত মাংসের বিধ্বস্ত দেহটা। আমার ছেলেটা তাও প্রথম প্রথম নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করতো। ও আশায় থাকতো তার নীলাম্বরী কথা রাখবে, ফিরে আসবে। যেহেতু ফেরার সম্ভাবনা ছিলো কিছুটা। কিন্তু…. ”

শারমিন চৌধুরী আর কথা এগুতে পারলেন না, এর আগেই ড্রয়িং রুমে হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হলো বর্ণ। এসেই ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“আম্মু, নিরু, রঙ তোমরা কি করছো এখানে? একটা মেয়েকে আনলাম নতুন বাড়িতে অথচ তোমরা কোনো হেলদোল দেখাচ্ছো না। মেয়েটার কেমন লাগছে এখানে একা একা?”

শারমিন চৌধুরীও তাড়া দিলেন, ব্যস্ততার ভাণ করে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ আব্বু, তুমি যাও আমরা আসছি। আসলে দোয়েলও অনেকদিন পর এসেছে তো তাই ওকে একটু সময় দিচ্ছি। নীলাম্বরী তো আমাদের ঘরের মানুষ। যাও আব্বু।”

মায়ের কথায় এতক্ষণে ধ্যান হলো বর্ণের। সে মাত্রই দোয়েলকে খেয়াল করল। খেয়াল করতেই মিষ্টি হাসি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
“আরে দোয়েল, সরি আপু তোমাকে খেয়ালই করিনি। ভালো আছো?”

দোয়েল প্রায় ভ্রমের মধ্যেই ছিল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো নিখুঁত অবয়ব বর্ণকে। কিন্তু বর্ণের কথায় তার সেই ভ্রম ভাঙলো। আমতা-আমতা করে বলল,
“হ্যাঁ ভাইয়া ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?”

“এইতো, দারুণ আছি। আচ্ছা তুমি বসো, আমার গেস্ট এসেছে তো তাকে একটু সময় দিতে হচ্ছে। থাকো কেমন?”

যেমন হন্তদন্ত হয়ে এসেছিল তেমন হন্তদন্ত হয়েই চলে গেল সে। দোয়েল কেবল ফ্যালফ্যাল করে দেখল। এছাড়া আর উপায় নেই যে!

বর্ণ চলে যেতেই শারমিন চৌধুরী বসে পড়ল। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলে তার বুক চিরে। হতভম্ব দোয়েলের মুখ পানে তাকিয়ে বলল,
“অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার ছেলের এমন হওয়ার বাকি গল্পটুকু শোনো। নীলাম্বরীরা বিদেশ যাওয়ার পরেও ও স্বাভাবিক ছিলো। সারাদিন নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখতো যেন ভালো থাকতে পারে। ওরাও ততদিনে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছে। ওদের সাথে সচারাচর যোগাযোগ হতো না তবে প্রায় যোগাযোগ করতো ওরা। টুকটাক খবর দিতো। নীলাম্বরীই চাইতো না যোগাযোগ থাকুক। ও এসে সবাইকে চমকে দিবে, সে আশায় মেয়েটা দিন গুনতো। এরপর একবার হঠাৎ করে অনেকদিন আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বলা যায়। বর্ণসহ আমাদের সকলের অবস্থাই তখন করুণ। তারপর হুট করে একদিন সেই পরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো। সকলের শুকিয়ে যাওয়া আত্মায় পানি এলো। কিন্তু তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হলো না। বরং একটা নিশ্চুপ দুঃখ সেদিনের পর থেকে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলো।”

থামলেন শারমিন চৌধুরী অথচ দোয়েল তখন জানার জন্য দিক ভ্রষ্ট। উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছিল সেদিন? কি হয়েছিল? তবে কী নীলা আপু বেঁচে নেই?”

শারমিন চৌধুরী আৎকে উঠলেন। দোয়েলের মুখ চেপে ধরে বললেন,
“অমন কথা বলো না দোয়েল। আমাদের এতদিনের অপেক্ষা যে বৃথা যাবে। আমার ছেলেটা হয়তো আর বাঁচবে না এগুলো হলে। সেদিন কল দিয়েছিল নীলার বাবা। মানুষটার দূঢ় কণ্ঠ সেদিন ছিল শীতল। আমিই কথা বলেছিলাম। উনি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘আপা, মেয়েটার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। মাত্র তিন পার্সেন্ট আছে৷ হয়তো ওকে আর ফিরিয়ে আনা হবেনা। তবুও চিকিৎসা চলবে। আমার অসুস্থ মেয়েটা আবদার করেছে- আপনাদের সাথে আমি যেন এখন যোগাযোগ না রাখি। এতে নাকি আপনারা আশা বাড়াবেন। একটা সুখবরের আশায় তৃষ্ণার্ত থাকবেন।যোগাযোগ না থাকলে সে আশা নাকি থিতিয়ে আসবে। যদি ও মারা যায় কিংবা ওর বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তবে সেদিনই যেন আপনাদের কল করি। আর বলেছে বর্ণকে অপেক্ষা না করতে, একটা লাল টুকটুকে বউ দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে। বর্ণও নীলাম্বরীর বিয়োগব্যথা সইতে পারবে না যে! আমার মেয়েটা যদি দেশে ফিরতে না পারে তবে আমরাও আর ফিরবো না। আমাদের বড়ো মেয়েকে বলবেন ক্ষমা করে দিতে। ছোটো মেয়েটা যে আমাদের ছাড়া থাকতে পারেনা। ওকে এই দেশের মাটিতে একা শুইয়ে দিয়ে আসতে পারবো না। মেয়েটা বলেছে একমাত্র বেঁচে ফিরলেই যেন তাকে দেশে নিয়ে যাই না-হয় না। নীরু মা আমাকে ক্ষমা করিস’তারপর সেদিন যে কল বিচ্ছিন্ন হলো কেটে গেলো দেড়বছর। আর ফোন আসেনি। আর কোনে যোগাযোগ হয়নি। আমরাও জানতাম না নীলাম্বরীরা কোন হসপিটাল, কোন শহরে আছে। কেবল জানতাম দেশের নাম। এত বড়ো দেশে একটা নীলাম্বরীকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। আবার হয়তো খুঁজলে পাওয়া যেত কিন্তু আমরা ভয়ঙ্কর কিছু হলে সেটা মানতে পারতাম না তাই নিছক মরীচিকার মতন আশা নিয়ে বেঁচে আছি। এই বুঝি আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষাকে মুক্তি দিয়ে একটা ফোনকল জানাবে সুখবর কিংবা প্রস্থানের গীতিকাব্য। আর আমার ছেলেটা এতটা চাপ নিতে না পেরে হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন। উপর থেকে কেউই জানবে না তার এই খবর অথচ আমরা জানি নীলাম্বরীকে সে কত ঘটনায় কত ভাবে কল্পনা করে ভালো আছে। সবই যে ভ্রম!”

দোয়েলের চোখে অশ্রুর উঁকিঝুঁকি। কাঁদছে নিরুপমা। প্রিয় মানুষদের হারিয়ে মেয়েটাও ভেঙে গিয়েছে অনেক। তার প্রিয় পরিবার, বাবা-মা, আদরের ছোটো বোন, গেলো কোথায় হারিয়ে! কোন স্রোত নিয়ে গেছে অতলে! তা আজও সে জানলো না। তবুও অপেক্ষা, চির অপেক্ষারা থেকে যায় অবসাদে।

_

বর্ণ দাঁড়িয়ে আছে তার বারান্দার কোল ঘেঁষে। নীলাম্বরী তার কালো গোলাপের গাছ গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। সেদিকেই বর্ণের মুগ্ধ দৃষ্টি। যেন এত সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে সচারাচর দেখা-ই যায় না।

নীলাম্বরী ফুল গুলো ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল,
“আমার জন্য আপনি অপেক্ষা করবেন তো, ডাক্তার সাহেব?”

বর্ণ ভ্রু কুঁচকালো। সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
“আবার কিসের অপেক্ষা?”

“আমাদের এক হওয়ার। হোক সেটা ইহকাল কিংবা পরকালের।”

বর্ণ থমকালো। দ্রুত গিয়ে চেপে ধরলো মেয়েটার মুখ। ভীত কণ্ঠে বলল,
“এসব কেমন কথা? একদম এসব বলবেন না।”

নীলাম্বরী খিলখিল করে হেসে ওঠলো। হুট করে একটি কালো গোলাপ ছিঁড়ে ফেলল গাছ থেকে। সেটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“ডাক্তার সাহেব, কালো গোলাপের শোভা আর স্থায়িত্ব বুঝি ফুরিয়ে এলো। আপনি একটু ড্রয়িং রুমে যান, আপনাকে ডাকছে কেউ।”

বর্ণ অবাক চোখে চাইলো। মেয়েটা হাসছে। কী সুন্দর সে হাসি! বর্ণকে অবাক চোখে তাকাতেই মেয়েটা বলল,
“দ্রুত যান ডাক্তার সাহেব। আপনার অপেক্ষাদের ছুটি হলো বুঝি। যান।”

বর্ণ অপেক্ষা করল না আর। ছুটে গেল ড্রয়িং রুমে। ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখলো বাড়ির ফোনটা অনবরত রিং হচ্ছে। আর সেটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির প্রত্যেকে। বর্ণ অবাক হলো। বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“কল বাজছে, ধরছো না কেন? সকলে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

বর্ণের প্রশ্নে কোনো হেলদোল হলো না কারো। প্রত্যেকের চোখে অশ্রু। বর্ণ এগিয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিতেই চোখে পড়লো ভিনদেশী নাম্বার। মাথায় তীক্ষ্ণ ব্যাথা হলো তার। নিরুপমা দূর থেকে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“কলটা রিসিভ করো না ভাইয়া। হয়তো আমাদের এতদিনের অপেক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ভেঙে যাবে সবকিছু। খারাপ সহ্য করার সাধ্য নেই আর।”

বর্ণের মাথা ব্যাথাটা শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুটা দূর থেকে ভেসে আসছে খিলখিল হাসি৷ বর্ণ সেখানে তাকাতেই দেখলো সাদা শাড়ি পরিহিতা নীলাম্বরী হাসছে। রিনরিনে নারী কণ্ঠটা বলছে,
“প্রেমিকের দুঃখ নির্বাসিত হোক
তার অপেক্ষাদের মৃত্যু হোক।
আমি অবহেলার দামী ফুল,
কেউ ভালোবেসে হয় ব্যাকুল,
কেউবা করে ভুল,
আমি পথের ধারে দূর্বাফুল।”

মিলিয়ে গেল মিষ্টি নীলাম্বরীর অবয়ব, কেটে গেলো রিং। কে জানি, আর বাজবে কিনা কৃত্রিম যন্ত্র খানা! ফিরবে কি-না প্রেমিকা। তবে বাঁচুক প্রেম। হাসুক প্রেম।

(সমাপ্ত)

[গঠনমূলক মন্তব্যের আশাবাদী ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here