পথে হলো দেরি পর্ব ১২

#পথে_হলো_দেরি
#নুশরাত_জেরিন
#পর্বঃ১২

,
,
মিতালি অনেক খুজে শৌখিনের দেখা পায়।
এগিয়ে এসে শৌখিনের পাশে চেয়ার টেনে বসে।
চুড়িগুলো অকারনে নাড়ায়।শব্দ করে শৌখিনের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে।তবু শৌখিনের দৃষ্টি ফেরাতে না পেরে হতাশ হয়।
মুখ ফুলিয়ে বলে,

—আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে আছি।

শৌখিন মাথা তুলে তাকায়।মিনমিন করে বলে,

—কেনো?

–কেনো মানে?আমাকে কেমন লাগছে একবারও বলেছো তুমি?এতক্ষণ কোথায় ছিলে বলোতো?তোমায় খুজে প্রান যায়যায় আমার।আর তুমি কিনা লাপাত্তা।
আমি যে তোমার জন্য এই গরমে শাড়ি পরে বসে আছি,সে খেয়াল আছে তোমার?

শৌখিনের প্রতুত্তর না পেয়ে আবার বলে,

—এই শুনছো আমার কথা,শৌখিন?

শৌখিন চমকে ওঠে।
সে কি ভাবছিলো নিজেই জানেনা।শুধু জানে তার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।
কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করছেনা।
মিতালির কথার জবাবে সে বলে,

—হু শুনছি,বলো।

মিতালি আবার বলে,
—কি শুনছো বলোতো?তাকাও আমার দিকে?

শৌখিন বিরক্ত হয়ে তাকায়।বলে,

—আমার ভালো লাগছেনা মিতালী।
একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।

মিতালী উদ্দিগ্ন হয়।তাড়াতাড়ি শৌখিনের গায়ে হাত রাখে।
কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা দেখে।
বলে,

—কি হয়েছে তোমার?কেমন লাগছে?
কিছুদিন ধরেই তোমায় অন্যরকম লাগছে খুব।

একটু চুপ থেকে আবার বলে,

–তুমি বরং ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।তাহলে হয়তো ভালো লাগবে।

শৌখিন একটু হাসার চেষ্টা করে।চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
মিতালীর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তুমি আমায় সত্যি খুব বোঝো মিতালী।

মিতালী সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

শৌখিনের যাওয়ার দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকে।শৌখিনের হাবভাব সে ইদানীং বুঝতে পারেনা।
কেমন অন্যরকম লাগে।অচেনা অচেনা।
মনে হয় যে শৌখিনকে সে চিনতো এটা সে নয়।
অন্যকেউ।
মিতালি প্রথম যেদিন শাড়ি পরেছিলো সেদিন শৌখিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।সারাক্ষণ পিছুপিছু ঘুরেছিলো।
কিন্তু আজ?
শৌখিন ঠিকমতো তাকালো না পর্যন্ত?
মিতালীর হঠাৎ কান্না পেলো খুব।
কেনো কান্না পেলো সে জানেনা।
তবে এটুকু জানে শৌখিন তাকে এড়িয়ে চলছে।তাদের সম্পর্কের মাঝে আস্তে আস্তে দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
কিন্তু কার জন্য?
মিতালীর চোখ হুট করে ইরার উপর পরে।
সে মনে মনে ভাবে,তার আর শৌখিনের সম্পর্কে এমন ফাটলের জন্য ইরা দায়ী নয়তো?
হঠাৎ কারো আওয়াজে মিতালি চমকে ওঠে।
তার পাশে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পরে মুগ্ধ।
মিতালীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসে।
তা দেকে মিতালীর শরীর জ্বলে ওঠে রাগে।
ছেলেটাকে কেন যেনো তার সহ্য হচ্ছেনা।
সে রাগি গলায় বলে,

—কি চাই এখানে?
মুগ্ধ যেনো মজা পেয়ে বসে।বলে,

—তোমাকে।

মিতালীর চক্ষু বড় হয়।অবাক হয়ে বলে,

—মানে?

–মানে আবার কি?তোমার সাথে কথা বলতে চাই।

মিতালী হাফ ছাড়ে।
মুগ্ধ আরেকটু ঝুকে এসে ফিসফিস করে বলে,

—তুমি কি ভেবেছিলে?

মিতালী অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
মুগ্ধ হেসে ওঠে।
হু হা করে গা কাপিয়ে হাসে।
মিতালী রাগ মুহূর্তেই গায়েব হয়।
ছেলেটার হাসি সুন্দর। হাসলে গালে টোল পরে।
যদিও দুষ্টমি মাখা হাসি তবুও দেখতে মন্দ লাগেনা।
পরক্ষনেই আবার কপাল কুঁচকায়।
মুগ্ধ হাসি থামিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়।এক ভ্রু উচু করে প্রশ্ন করে,

—ওতো নজর দিয়ে কি দেখো বেয়াইন?
ওহহো,সিনিয়র বেয়াইন।

মিতালী রাগে গজগজ করতে করতে উঠে দাড়ায়।সে এখানে আর একমুহূর্তও থাকবেনা।এমন অসভ্য ছেলের সাথে তো একেবারেই না।

💮💮💮

শৌখিনের ঘরে এসে রেহেনা বেগম অবাক হন।
ঘড়িতে কেবল বাজে সাতটা।এখন এই সময় ছেলেটা ঘর অন্ধকার করে শুয়ে কেনো আছে?সবাই যেখানে বাইরে হৈ হুল্লোড় করছে সেখানে সে কেনো এমন চুপচাপ?
শৌখিনের শরীরটা খারাপ হলোনা তো?
রেহেনা বেগম তড়িঘড়ি করে খাটের পাশে এসে বসেন।
শৌখিনের গা থেকে কাথা সরিয়ে মাথায় হসত রাখেন।
শৌখিন ততক্ষণে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখ মেলে তাকিয়েছে।
মুলত সে ঘুমাচ্ছিলো না।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো।
বাইরের কোলাহলে ভেতরের অশান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো।
তাছাড়া সে ইরা বা মিতালী কারো মুখোমুখি হতে চাইছে না এই মুহুর্তে।
মন আর বিবেকের এক অসম লড়াই চলছে তার ভেতরে।
মন যেখানে ইরার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠছে সেখানে বিবেক বারবার সতর্ক করছে,মিতালিকে যেনো না ঠকায়।
সে মাকে দেখে উঠে বসে।
বলে,

–কিছু বলবে মা?

রেহেনা বেগম আঁতকে ওঠেন।শৌখিনের এলোমেলো অবস্থা দেখে তিনি ভয় পান।আতংক ভর করে তার ভেতর।
উদ্দিগ্ন হয়ে বলেন,

—কি হয়েছে তোর?এমন দেখাচ্ছে কেনো?

শৌখিন মৃদু গলায় বলে,

—কিছু হয়নি আমার।

—বললেই হলো?এইযে আমি দেখতে পাচ্ছি।
চোখমুখ কেমন শুকিয়ে গেছে কটা দিনে।
চুল গুলো এলোমেলো,চোখ লাল হয়ে আছে।
কি হয়েছে বলনা।

—কিছুই হয়নি মা,কি হবে বলো?

রেহেনা বেগম শৌখিনের মাথায় হাত বুলান।তার হাত কাপে।
নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী লাগে।
মনে হয় ছেলেটার এই দশার জন্য হয়তো সে নিজে দায়ী।হয়তো ইরার সাথে বিয়েটা নিয়ে শৌখিন অশান্তিতে থাকে।সেকারনেি এমন দশা হয়েছে তার।
তাছাড়া বিয়েটার জন্য ইরাও তো কম টেনচন করেনা।
কম কষ্টে নেই তো সেও।
রেহেনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
তার এই একটা ভুলের জন্য তিনি দুটো মানুষকে কষ্টে রেখেছেন ভাবতেই ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে আসে তার।
ভাবেন,সবকিছু ঠিক করতে হবে।খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই তাদের দুজনার জিবন তাদের পছন্দ মতো গুছিয়ে দিতে হবে।
তিনি আদুরে গলায় বলেন,

—মনের ভেতর কোন বিষয় নিয়ে অশান্তি থাকলে আমায় বলতে পারিস।আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সব ঠিক করার।

—তোমায় বললে সব ঠিক হবেনা মা।

–তাহলে যাকে বললে ঠিক হবে,তাকেই বল।
ভেতরে পুষে রাখলে যে কষ্ট বাড়ে।

শৌখিন চুপ করে থাকে।
সে কাকে বলবে?মিতালিকে?কি বলবে?
তোমায় নিয়ে ভাবতে গেলে আমি ইরার কথা ভেবে ফেলি?তোমার চোখের দিকে না তাকিয়ে ইদানীং ইরার চোখে ভালবাসা খুজি।
ইরাকে কেউ বিরক্ত করলে,ইরার দিকে কেউ বাজে নজরে তাকালে আমার বুক জ্বলে?
আমার সহ্য হয়না।
এসব কিকরে বলবে শৌখিন?
সে আজ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে যে ক্লান্ত।
এতোদিনে এটুকু তো ঠিক বুঝেছে,যে সে ইরাকে ভালবাসে।
কখন কিভাবে কেমন করে ভালবেসেছে সে জানেনা।কিচ্ছু জানেনস।
ভালবাসা বলে কয়ে আসেনা।
হুট করে হয়ে যায়।
যখন তখন যেকারো উপর এসে যায়।
দিন ক্ষন ঠিক করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর ভালবাসা আসেনা।
এটা মনের ব্যাপার।মনের উপর আর যাই হোক কারো জোর চলেনা।
আর মিতালি?
সে হয়তো ছিলে ভাললাগা।
শৌখিন হয়তো ভাললাগাকেই ভালবাসা ভেবে বসে ছিলো।

,

,

চলবে……

(পর্বটা ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। ব্যস্ততা কাটলেই বড় করে পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here