পদ্মপাতা পর্ব ১৪

#পদ্মপাতা
#লেখিকা-আনিকা_রাইশা_হৃদি
#পর্ব-১৪
৪০.
সন্ধ্যার দিকে নিতি ও তার বাবা-মা এসেছে। নিতির মুখে মলিন হাসি।গান বাজানো হচ্ছে লাউডস্পিকারে।বিয়ে বাড়ি বলে কথা।আবির আর আবিরের বন্ধু পারভেজ উঠানে চেয়ারে বসে গল্প করছে।পারভেজ চাঁদপুরেই পড়াশোনা করছে।পাশাপাশি মুরগির ফার্মের ব্যবসা রয়েছে তার।আবিরের বেশির ভাগ বন্ধু চাঁদপুরের বাইরে পড়াশোনা করছে।একসময় যাদের নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াতো তারা আজ কতো দূরে।বাড়িতে আসলে পারভেজের সাথেই কেবল দেখা হয়।বাকিদের সাথে যোগাযোগ আছে।কয়েকজনকে দাওয়াত করেছে আবির। তারা বিয়েতে আসবে।উঠানে প্রচুর শোরগোল। যে যার মতো বসে আছে।কয়েকজন কাজ করছে।কাল বাদে পরশুই তো গায়ে হলুদ।

ভিতরের ঘরে মেঝেতে মোহনা বসেছেন ইলিশ মাছ কাটতে।রাতে খাবারে মেহমানদের ইলিশ মাছ ভাজা আর খিচুড়ি খাওয়ানো হবে।চাঁদ সেই কখন থেকে মাথায় ঘোমটা দিয়ে টুকটাক কাজ করে যাচ্ছে। আবির কথার ফাঁকে ফাঁকে পিছনে ফিরে চাঁদকে দেখছে।মেয়েটাকে অনেকটা নতুন বউয়ের মতো লাগছে।
দিমা,প্রমা,নিতি আর প্রমার কয়েকজন বান্ধবী গল্প করছিল সোফায় বসে।এবাড়িতে দিমা,প্রমা আর রুমা কোনো কাজই করে না বলতে গেলে।তাদের কাজ হলো পড়াশোনা, খাওয়া আর ঘুমানো।তবে চাঁদটাই কেবল হতোভাগী।দিমা এবার দশম শ্রেণিতে পড়ছে।কয়মাস বাদেই ওর এসএসসি। পড়ার নাম করে আবিরের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে সে।এবাড়িতে আসার পর থেকেই আবিরের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ তার।চাঁদের রূপে বরাবরই তার হিংসা।প্রমা যে চাঁদকে অনেক ভালোবাসে তাও না আবার অনাদরও করেনা। প্রমা ডাক দিলো চাঁদকে।
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো চাঁদ।হাত মুছতে মুছতে বললো,
-আপু কিছু বলবা?
-আমরা গল্প করছিও তুইও কর।
-আপু কাজগুলো করে আসছি।
-তোকে তো ধন্যবাদ দেওয়া দরকার ভাইয়াকে রাজি করালি।
-ধন্যবাদ লাগবেনা আপু।

দিমা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-কিরে হঠাৎ এতো হুজুরনী হলি।মাথায় দেখি কাপড় দিয়েছিস।
-এমনি দিয়েছি।বাড়িতে কতো মানুষ।

তিলোত্তমা ডাক লাগালো চাঁদকে। আবার কাজে লেগে পড়লো চাঁদ।

সকালের শুরুটা হয়েছে সাদামাটা ভাবেই।বাইরে প্রচুর আওয়াজ।চাঁদ রেডি হচ্ছে। একটু পরেই তারা বেড়োবে।মতিন যদিও রাজি হতেন না।তবে আবিরের কথায় আর না করেননি।নিতি প্রথমে যেতে চায়নি।তবে প্রমার কথায় রাজি হতে হলো।চাঁদ আজ একটা লাল আর হলুদের সংমিশ্রণে থ্রি পিস পড়েছে। উড়নাটা হলুদ।মাথায় ঘোমটা করে উড়না দিয়েছে। আর আবির পড়েছে লাল পাঞ্জাবি। ব্যাপারটা নিতান্তই কাকতালীয় ছিল।নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো সবাই।এখন বেলা ১২ টা বাজে।চাঁদ,প্রমা,দিমা,নিতি আর আবির।রুমা আসেনি।ওর নাকি মাথা ব্যথা।দিমা,নিতি এক রিকশায় আর প্রমা,চাঁদ বসলো এক রিকশায়।আরেকটাতে বসেছে আবির।সিফাতও ওদের সাথে যোগ দিবে শপথ চত্বর থেকে।নিতি না যেতে চাওয়ারও কারণ ছিলো। ঐ নদীর পাড়ে বসেই সে সবচেয়ে বড় কষ্টটা পেয়েছিল আবিরের কাছে।রিকশা চলতে শুরু করেছে। চাঁদদের রিকশাটা পিছনে আর আবিরের টা সামনে।আবির বারেবারে পিছনে ফিরে চাঁদকে দেখছিলো। মেয়েটা এতো সুন্দর কেন!হালকা বাতাস বইছে চারপাশে। আকাশটা নীল আবরণে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। বেশি রোদ নেই।সবমিলিয়ে আবহাওয়াটা আজ দারুণ। চাঁদদের এলাকা থেকে শপথ চত্বরে যেতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগে।যাওয়ার পথে গাছতলা ব্রিজের উপর দিয়ে যেতে হয়।নিচে ডাকাতিয়া নদী।এ জায়গাটা অভাবনীয় সুন্দর। বিশেষ করে সূর্য ডোবার দৃশ্যটা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ব্রিজ তৈরির এতো বছর পরেও টোল নেওয়া হয়।ব্যাপারটা নিতান্তই হাস্যকর।শপথ চত্বরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১ টা বেজে গিয়েছে। সিফাত দাঁড়িয়ে। প্রমা আজ আকাশী শাড়ি পরেছে তার সাথে মিলিয়ে আকাশী পাঞ্জাবি পড়েছে সিফাত।রিকশা থেকে নামলো সবাই।আবির গিয়ে হাত মেলালো সিফাতের সাথে।সেই সকালে নাস্তা করেছে তারা।তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে পরে রওনা দিবে।রোডের পাশেই একটা খাবারের দোকানে ঢুকলো তারা।ভাত,ইলিশ মাছ ভাজা,ডাল ভর্তা, ডাল আর গরুর মাংস দিয়ে দুপুরের খাবারের সেরে নিলো সবাই।এবার বড় স্টেশন রওনা দেওয়ার পালা।আবার রিকশা ভাড়া করা হলো।দিমা আর নিতি আগেই একটাতে উঠে গিয়েছে।নিতি কেবল নিরব দর্শক আজ।কোনো কথাই বলছেনা সে।প্রমা রিকশায় বসলো।চাঁদ যখন উঠতে নিবে তখন প্রমা বললো,
-চাঁদ।তুই আবির ভাইয়ের সাথে বসবি প্লিজ। দেখনা ও লজ্জায় বলতে পারছেনা।
-আপু।
-প্লিজ। বোন আমার।

৪১.

চাঁদ কোনো কথা না বলে আবিরের রিকশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রমা সিফাতকে ডাক দিলে সে গিয়ে সেখানে বসে পরলো। নিতিদের রিকশা আগেই রওনা দিয়েছে।চাঁদ আর আবির একসাথে রিকশায় উঠে বসলো।

আবহাওয়াটা দারুণ। হালকা বাতাস বইছে। হয়তোবা রাতে বৃষ্টি হবে।ঝিরিঝিরি বাতাস শরীরকে স্পর্শ করার পাশাপাশি মনকেও স্পর্শ করছে।দুটি মনও আজ পাশাপাশি বসেছে।মুখে তারা কথা বলছেনা।একদম চুপ।তবে মন কি আর চুপ থাকে, তারা নিজের মতো কথা বলেই যাচ্ছে। চারপাশে বেশি মানুষ নেই।রাস্তা ধরে আপনমনে রিকশা চালাচ্ছেন মামা।চাঁদের মনে হলো সময়টা থমকে যাক।আবিরের পাশে বসা নতুন না।তবে এবারের অনুভূতি টা সত্যিই আলাদা।একদম অন্যরকম।অবশেষে বড় স্টেশন এসে পৌঁছালো রিকশা। নেমে যাওয়ার সময় আবির চাঁদের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
“সুন্দর লাগছে আমার চাঁদটাকে”

চাঁদের শরীরে যেনো একটা অদ্ভুত ভালোলাগা ছেয়ে গেলো।এ কেমন অনুভূতি!

সবাই একত্রিত হয়ে চললো ঘাটের দিকে।নৌকা ভাড়া করা হবে।তারপর যাওয়া হবে পদ্মা নদীর মাঝে গড়ে উঠা বালুচরে। যাকে বলা হয় মিনি কক্সবাজার। অতঃপর সেখানে সূর্যাস্ত দেখবে তারা।পরে আবার নৌকা করে ফিরে আসবে।নদী দিয়ে যাওয়ার সময় পাশেই পরে পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল।

ঘাটে যাওয়ার সময় আবির এগিয়ে গেলো নিতির সাথে কথা বলার জন্য।
-কিরে মন খারাপ?
-না।
-তাহলে চুপ যে।
-এমনি শরীরটা ভালো লাগছেনা। আমি তো আসতে চায়নি। প্রমা জোর করলো তাই নাও করতে পারলাম না।
-আরে বালুচরে গেলে দেখবি সব ঠিক।
-হুম।

ঘাটে অনেক নৌকা বাঁধা। বেশিরভাগ নৌকারই ছাউনি নেই।নদীটা এতো উত্তাল।নৌকাগুলো হেলেদুলে যখন যাচ্ছিল তখন মনে হলো এই বুঝি শেষ। এই বুঝি ডুবে গেলো।একটা বড় নৌকা ভাড়া করলো তারা।নৌকাটা রঙিন। ইঞ্জিন চালিত।ছাউনি আছে তবে বড় বড় জানালা।মাঝির সাথে ৮০০ টাকা চুক্তি হলো।ওরা বালুচরে ঘন্টাখানেক থাকবে তাই।আধাঘন্টা থাকলে আরো কম টাকা লাগতো।তবে আধাঘন্টায় পুরোপুরি সূর্যাস্ত দেখা যাবেনা।নৌকায় উঠে বসলো সবাই।আবির আর সিফাত বাইরে দাঁড়িয়ে। নিতি, দিমা, প্রমা ও চাঁদ ভিতরে বসে।নিতি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।উত্তাল ঢেউ বইছে পদ্মা নদীতে।যেমনটা তার বুকে বইছে।চোখের সামনে আপন মানুষটা হাত বাড়ালেও ছুঁতে পারবেনা।

চাঁদ এতোক্ষণ জাহাজ দেখছিলো।কত বড় বড় জাহাজ। চাঁদকে বলছে,
“এই হা করে কি দেখিস একদম গিলে খেয়ে ফেলবো।”

হঠাৎ নজর গেলো নৌকার সামনের দিকে।আবির কোণায় বসে সিফাতের সাথে কথা বলছে।চোখে সানগ্লাস। এই সুযোগে চাঁদ একধ্যানে তাকিয়ে রইল সেদিকে। তবে আবির যে তারদিকেই চেয়ে ছিলো।বেচারি তা বুঝেনি।সিফাত যখন প্রমার পাশে গিয়ে বসলো আবির তখন সানগ্লাসটা খুলে এক ভ্রু উঁচু করে চাঁদের দিকে তাকালো।চাঁদ মুহূর্তেই চোখ ফিরিয়ে জিহ্বায় কামড় দিলো।আবির সানগ্লাসটা পড়ে একটা হাসি দিয়ে পদ্মা দেখায় মনোযোগ দিলো।সিফাত আবিরকে ডেকে বললো,
-শালাবাবু। একটা গান শোনাও আমাদের।
-আমি কি আর ভালো গান পারি দুলাভাই।

প্রমা আর দিমাও জোর করলো।তবুও আবির নাছোড়বান্দা। অবশেষে চাঁদ আর নিতি একত্রেই বললো,
-একটা গান কর না
-একটা গান করেন না

দুজনে একত্রে বলে একে অপরের দিকে তাকালো।
আবির এতোক্ষণ চাঁদের বলার অপেক্ষায় ছিলো।

-ঠিক আছে।সবাই যখন এতো করে বলছে একটা গান গাইতেই পারি।

সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে আবির গান ধরলো।দৃষ্টি চাঁদের দিকে।পদ্মার উথাল-পাথাল বাতাসে চাঁদের উড়নাটা উড়ছে।চোখের সামনে বারেবারে অবাধ্য চুলগুলো বেরিয়ে আসছে।চাঁদ বিরক্তি নিয়ে সেগুলো কানের পিছে গুঁজে দিচ্ছে। আবিরের মনে হলো নদীর বুকে ভাসমান হয়ে প্রেয়সীর এই রূপ দেখে প্রেমিক হিসেবে সে সার্থক।খালি গলায় গান শুরু করলো আবির।

একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌঁড়াইয়া
চলি
কন্যার ছিল দীঘল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলব না
হাত খালি গলা খালি
কন্যার নাকে নাকফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল
এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে
নাও দৌঁড়াইয়া চলি
সবুজ বরণ লাও ডগায়
দুধসাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি
মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে

পুরোটা গান আবির শেষ করলো তার চাঁদের দিকে তাকিয়ে।এই চাঁদটা শুধু তার। শুধু্ই তার।আকাশে মেঘেরা আজ তুলোর বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। থোকায় থোকায় জমে আছে।এ যেন আকাশ নামের কোনো এক বিরল গাছ।আর মেঘগুলো তার পাতা।

চাঁদ সাতাঁর পাড়েনা।তাই আবির বারবার সাবধান করছে সে যেনো একেবারে কিনারে না যায়।এই পদ্মা যেমন সুন্দর তেমন সর্বনাশাও। একবার নদীতে পড়লে লাশটাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। সবাই মিলে ডালমুট খাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর তারা এসে পৌঁছালো পদ্মার বালুচরে।নৌকা থেকে নেমে এদিক ওদিক হাঁটছে তারা।চারিদিকে পানি আর মাঝে একটা দ্বীপের মতো বালুচর।বালিগুলো চিকচিক করছে।বালুচরের মাঝে দাড়াঁলে মনে হয় আমি ভাসছি।পদ্মার বুকে আমি ভাসছি।

৪২.
আবির চাঁদের পাশাপাশি হাঁটছে।দূরে কাশবন দেখা যাচ্ছে। যদিও কাশফুল ফুটেনি।তবুও দৃশ্যটা মনোমুগ্ধকর। মানুষ একেবারেই কম। যে কয়েকজন আছে তারা নিজের মতো ঘুরছে।চাঁদ পা ভেজানোর জন্য যেই না পাড়ে গেলো অমনি আবির হাতটা টেনে ধরে নিয়ে আসলো।
-এটা কি হলো আবির ভাই।
-একটা থাপ্পড় খাবি।সাঁতার পারিস তুই।কিনারে যে গেলি এখনিই তো ঢেউ এসে টেনে নিয়ে যেতো।

চাঁদ বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।দিমা আর নিতি কাশবনের দিকে গিয়েছে। আর প্রমা আর সিফাতকে তো দেখাই যাচ্ছে না।চাঁদ দূরে তাকিয়ে দেখলো দুইজন বুড়ো-বুড়ি হাতে হাত রেখে হাঁটছে।চাঁদের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো তা দেখে।আবিরও সেদিকে তাকালো।দৃশ্যটা তারও মনে ধরেছে।চাঁদকে কানেকানে ফিসফিসিয়ে বললো,

“বুড়ো হতে চাই তোমার সাথে।তোমার নরম হাতের ছোঁয়া পেতে চাই সারাজীবন। ভালোবাসি তোমায়।”

চাঁদ অবাক হয়ে আবিরের পানে তাকিয়ে রইল। সূর্যের কিরণ বিলীন হচ্ছে ধীরেধীরে। সেই শেষ বিকেলের শেষ কিরণটা আবিরের মুখে পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে! আবির আবার বললো,

“জবাবটা না হয় অন্যভাবেই দাও।অন্য সময় হয়তো বলতাম জড়িয়ে ধরতে তবে এখন বলবো একটা হাসি দিতে।তাহলে উত্তরটা আমি পেয়ে যাবো।”

চাঁদ এবার অন্যদিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।আবির তার জবাব পেয়েছে। এটা চাঁদের কিশোরী বয়সের আবেগ না সত্যি তাকে ভালোবাসে সেসব যাচাই করতে চায়না আবির।সে একাই ভালোবাসা দিয়ে সব ভালোবাসা পুষিয়ে নিবে।প্রমার ডাকে প্রমার কাছে দৌড়ে চলে গেলো চাঁদ। ষোল বছরের কিশোরীর মনে আজ যেনো ঈদের খুশি লেগেছে। মন গাইছে,
“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”

পড়ন্তবেলা।সূর্যটা আস্তে আস্তে বিলীন হচ্ছে। থোকা থোকা মেঘ সূর্যটাকে ঘিরে রেখেছে। লাল,নীল,হলুদের এক অদ্ভুত মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে আকাশে।সূর্যটা এক সময় হারিয়ে গেলো আকাশের গহীনে।তবে এ দৃশ্য মুগ্ধ করেছে বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে।

একটু জোরে হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হতে পারে।এমনিতেই পদ্মার অনেক ঢেউ।তার উপর বৃষ্টি হলে তো নৌকা খুঁজেই পাওয়া যাবেনা।তাই মাঝি তাড়াতাড়ি নৌকা স্টার্ট দিলো ওদের নিয়ে।ঝরের মাঝে এখানে না থাকাটাই শ্রেয় হবে।নৌকা চলতে শুরু করেছে। আবির আর সিফাত বাইরে বসে আছে।বাতাসটা এখন একটু কম। তবে মাঝেমধ্যে বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।দিমা, নিতি, প্রমা ভিতরে বসে।চাঁদ বসেছে জানালার পাশে।বিরাট বড় জানালা।নৌকার ছাউনিটা অনেকটা উঁচুতে।তাই এর জানালা গুলোও বড় বড়।নৌকাটা প্রায় পাড়ে চলে এসেছে। এমন সময় জোরে হাওয়া বইতে শুরু করলো।চাঁদ তখনও জানালার পাশে।আবির ভিতরে ঢোকার জন্য পা বাড়ালো। চাঁদকে ডাকছে তবে মেয়েটা শুনছেনা ইঞ্জিনের আওয়াজে।চাঁদকে জানালার পাশে থেকে সরাতে যাচ্ছিল আবির।এমন সময় একটা বিশাল ঢেউ এসে বারি লাগলো নৌকাটাতে।আবির শক্ত করে ছাউনি ধরে ফেললো।তবে যে ভয়টা পেয়েছে তাই হলো।চাঁদ নদীতে পড়ে গিয়েছে। আবির চিৎকার করে উঠলো,
“চাঁদ”

(চলবে)……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here