পদ্মপাতা পর্ব ১৩

#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
#পদ্মপাতা
#পর্ব-১৩

৩৭.
নতুন প্রেমের হাওয়া লাগলো বাতাসে
এতো আনন্দ কেনো চারপাশে।
ভালোবাসাটা পুরানোই ছিল
এবার শুধু দেখা মিললো।
লজ্জা লজ্জা লজ্জা
প্রেমিকার সেকি লজ্জা!
প্রেমিকের মুখে হাসি
মনের গহীনে তার কেবল বাজে তোমাকেই ভালোবাসি।

বিয়ে বাড়ি প্রচুর ব্যস্ততা।আবিরের একদন্ড দাঁড়াবার সময় নেই।জামাটাও পাল্টাইনি সে।সেই কখন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এখন আবির ছুটবে আবার বাজারে। বাবুর্চির সাথে কথা বলা হয়েছে। তবে পাতিল নিয়ে কি যেনো ঝামেলা। মতিন বললেন গিয়ে দেখে আসতে।তবে এখন সে উঠানের শেষ প্রান্তে বাড়ির মেইন গেটের পাশে একটা চেয়ারে বসে।মা ডেকে বলেছিলেন একটু বসতে।

-আবির ভাই। আপনার জন্য বড়মামি শরবত পাঠিয়েছেন।
হঠাৎ চাঁদের ডাকে পিছনে ফিরে তাকালো আবির।মেয়েটার গাল এখনো লাল হয়ে আছে।দৃষ্টি নিচের দিকে।

-হুমম,দে।
শরবতের গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে একবারেই শেষ করলো আবির।বেচারার সত্যিই অনেক পিপাসা লেগেছে।আবিরের মাথা বেয়ে ঘাম পড়ছে।সে এখন একটা জামগাছের আড়ালে বসে।লোকসমাগম কম এদিকটায়।চাঁদ নিজের অজান্তেই ওড়নার এক অংশ ডানহাতে নিয়ে আবিরের কপালের ঘামটা মুছে দিলো।অতঃপর হুসে ফিরে আবিরের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ভো দৌড়।কি করছিল সে!মাথাটা কি চাঁদের একেবারেই গেলো।

আবির স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো।এখন তার মুখে ফুটেছে এক চিলতে হাসি।সে উঠে রওনা দিলো বাজারের উদ্দেশ্যে। এদিকে চাঁদ নিজের কাজে নিজেই অবাক। দৌড়ে গোয়ালঘর পেরিয়ে আমবাগানে ঢুকে গেলো সে।মন ভরে শ্বাস নিলো কতক্ষণ। এতোক্ষণ তো দম বন্ধ করেই রেখেছিল বেচারি।
খুবই ভালোই তোড়জোড় চলছে।বাইরে ইট দিয়ে চুলা বানানো হয়েছে। তাতে মেহমানদের জন্য খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। অপর পাশে সদর দরজার সামনে মোহনা বসেছেন মশলা নিয়ে।তিলোত্তমা আদা কুচি করে দিচ্ছে আর রহিমা তা শিলে পিষছে।মোহনা রসুন কাটছেন।পাশের বাড়ির কয়েকজন এসেছেন তারাও সাহায্য করছেন।চাঁদের কি যে খুশি লাগছেনা।যদিও তার আশেপাশের মানুষ কিংবা আত্মীয় স্বজনদের সাথে বেশি সখ্যতা নেই।আত্মীয়দের থেকে অনেকটা নিজেকে আড়াল করে রাখে চাঁদ।আচ্ছা, একটা দূর্ঘটনায় যদি বাকি সবাই মারা যায় আর কেউ একজন বেঁচে যায় তাহলে কি সে অলক্ষী।

৩৮.
চাঁদ আমবাগান থেকে বাড়িতে ঢুকেছে অনেক আগেই।রুমা মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত। খুবই কম কথা বলে।চাঁদের থেকে বয়সে অনেক ছোট।তবে তার গাম্ভীর্যতা দেখলে মনে হবে যেনো চাঁদের কত বড় সে।এই এখন রুমা বটগাছটার পাশে একটা চেয়ারে বসে।একদম চুপচাপ। তার গাম্ভীর্যতা যেনো চিৎকার করে বলছে
“দুনিয়া ভেসে যাক আমি এমনি থাকবো”।

চাঁদকে দেখে মোহনা হাক ছাড়লেন। চাঁদও দৌড়ে সদর দরজার কাছে গেলো।যেখানে গোল হয়ে বসে মহিলারা মশলা পিষছে।
-জ্বি,বড়মামি।
-একটু গিয়ে দেখতো প্রমা কি করে।
-আচ্ছা, বড়মামি।
সদর দরজার ভিতরে ঢুকার সময় চাঁদ শুনতে পেলো পাশের বাড়ির হাজী বউ বলছে,
-এই মেয়ের থেকে আপাতত প্রমারে দূরে রাইখেন ভাবি।এই মেয়ে তো বাপ,মা আর তিলো ভাবির ছেলেটারে খাইছে।অপয়া।

আর শুনলো না চাঁদ। এক দৌড়ে উপরে চলে এলো।এসবে অভ্যস্ত সে।প্রমা খাটের উপর বসে ফোনে কথা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।পাশে দিমা বসে।
-আসবো আপু।
-আয়।

দিমার পাশে বসলো চাঁদ।দিমা একটু বিরক্ত হলো তবে তা প্রকাশ করলো না।দিমার আচরণ অনেকটা দুমুখো সাপের মতো। উপরে সে চাঁদকে যতটা দরদ দেখায় ভিতরে সে চাঁদকে ততোটা অপছন্দ করে।এর কারণ একটাই চাঁদ অনেক সুন্দর আর আবির চাঁদকে বেশি আদর দেখায়।প্রমা ফোনটা রেখে বললো,
-চাঁদ, একটা কাজ করে দিতে পারবি?
-কি কাজ আপু?
-বিয়ের পরই তো তোর দুলাভাইয়ের সাথে চট্টগ্রাম চলে যাবো।ওর ছুটি শেষ হয়ে যাবে।ভাবছিলাম আগামীকাল সকালে আমরা বোনেরা,তোদের দুলাভাই, নিতি আপু যদি আজ বিকালে আসে তো নিতি আপু আর ভাইয়া মিলে যদি মোলহেডে একটা নৌকা ভ্রমণে যেতাম।তুই ভাইয়াকে রাজি করাবি।
-আমি!আবির ভাই আমাকে থাপ্পড় দিয়ে দিবে একটা।এতো ঝামেলার মাঝে যাওয়া ঠিক হবে।আর বড় মামা যদি না দেন।
-তুই ভাইয়াকে বলে রাজি করালেই হবে।ভাইয়া রাজি হলে বাবাও রাজি হবে।আমি বিয়ের কনে হয়ে কিভাবে বলি যে হবু বরের সাথে ঘুরতে যাবো।ও তো লজ্জায় বলতে পারছেনা।
-তবুও আবির ভাই রাজি হবেনা মনে হয়।কত কাজ তার।

দিমা বললো,
-আরে বলে দেখ।ভাইয়ের মার তো এমনি খাস না হয় আরেকটু খেলি।
-আচ্ছা, দেখি।
প্রমা বললো,
-দেখি না।রাজি করাতেই হবে।বেশি সময় তো ঘুরবো না।সকালে বের হলে দুপুরেই চলে আসবো।তাছাড়া ভাইয়াও তো যাবে।

চাঁদ কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো।এদিকে প্রমা আর দিমা হাত মেলালো।চাঁদটা ভিষণ বোকা।তাই ওরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল চাঁদকে দিয়ে বলাবে।বোকাটা যা বলে তাই করে।আবার মারও খায়।যদিও এই বাড়িতে আবিরই কেবল চাঁদকে মারে।আর বাকিরা মারে না তবে বকে।

৩৯.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো।এদিকে প্রমা আর দিমা বারেবারে চাঁদকে তাড়া দিচ্ছে আবিরের সাথে কথা বলতে।আবির নিজের ঘরে।আসলে কথা বলাটা মূল বিষয় না।বিষয়টা হচ্ছে লজ্জার।চাঁদ ঐসময় যে কাজ করেছে তারপরও আবার কিভাবে আবির ভাইয়ের সামনে যাবে সে!বর্তমানে চাঁদের অবস্থান আবিরের ঘরের দরজার সামনে।আবির ভাই আগে তাকে দুই চারটা চড় থাপ্পড় কিংবা স্কেলের বারি দিলেও তার এতো দমবন্ধকর অনুভূতি হতোনা। যতোটা এখন হচ্ছে।

আবির আজ অনেক পরিশ্রম করেছে। তাই বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল সে।এমন সময় দরজার ঠকঠক আওয়াজে উঠে বসলো সে।হাক ছাড়লো,
-কে
-আমি?
-ভিতরে আয়।

চাঁদ ভিতরে ঢুকে দরজার পাশে মাথায় নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আবির সেদিকে তাকিয়ে বললো,
-কি চাই?
-আসলে হয়েছে কি আসলে
-হুমম কি হয়েছে। বল।
-আসলে নিতি আপু আমাদের নিয়ে আপনাকে নিয়ে ধ্যাত আবির ভাই আপনি আমাদের কাল মোলহেডে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারবেন।
-কেন বলতো?
-নিতি আপু তো বিয়ের পর চট্টগ্রাম চলে যাবে। তাই আপু চাচ্ছিল কালকে যদি আমরা বোনেরা, দুলাভাই,নিতি আপু আর আপনিসহ শেষবার চাঁদপুরটা একটু ঘুরতে। মোলহেডে নৌকা ভ্রমণে যেতে আরকি।
-তা ওরা না এসে তোকে পাঠালো কেনো?
-তা তো জানিনা।

বলে চাঁদ চোখ বন্ধ করলো।এবার নিশ্চিত আবির তার গালে দুইটা লাগাবে।যতই ভালোবাসা হোক না কেন এই অদ্ভুত লোক কি আর নিজের সত্তা পাল্টাবে নাকি।
অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে এবার চোখ খুললো চাঁদ।আবির একেবারে তার সামনে দাঁড়িয়ে।
-ঠিক আছে।কাল যাবো সবাই।তবে শর্ত আছে।
-কি শর্ত আবির ভাই?
-যতোদিন বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলবে ততোদিন তুই মাথায় উড়না দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলাফেরা করবি।

(চলবে)……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here