পদ্মপাতা পর্ব ১৯

#পদ্মপাতা
#পর্ব-১৯
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

৫৫.
বাজারের পাশে মাঠটায় বসে আছে আবির আর চাঁদ। সাথে দিমা, রুমাও আছে। আবির এসেছে আজ দশদিন। আগামীকাল চলে যাবে। আবার আসবে মার্চে। বিদেশ যাওয়ার আগে।

চাঁদ চুপ করে বসে আছে। পাশের ছোট ওয়ালের উপরে ফুচকার প্লেটটা রাখা। দিমা আর রুমা দোকানে বসে খাচ্ছে। আবির, চাঁদ বাইরে বসে আছে দূর্বাঘাসের উপর।

-কি হলো খাচ্ছিস না কেন?
-ইচ্ছে করছে না।

চাঁদ ভাবলেশহীন। আবির ফুচকার প্লেটটা হাতে নিয়ে একটা ফুচকা চাঁদের মুখের সামনে ধরলো। চাঁদ কোনো দুরুক্তি না করেই খেয়ে নিলো।

-তোর মনমরা ভাব দেখতে আর ভালো লাগছেনা চাঁদ। কয়েকটা দিন পর চলে যাবো। আর হয়তো এতোদিনের ছুটিতেও আসতে পারবোনা। তোর সাথে কয়েকটা সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে এসেছিলাম। তুই কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস। বিগত দশটা দিন তুই আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলছিস না। আমার দোষটা কোথায় বলতো? তুই যদি মানা করিস আমি লন্ডন যাবোনা।
-সত্যি যাবেন না?
-তুই কি তা চাস?
-না।
-তাহলে কি চাস?
-জানিনা।
-এটা কোনো উত্তর না চাঁদ।
-আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।
-ছেলে মানুষী করিস না চাঁদ। পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা কর। আমার কি কম কষ্ট হচ্ছে। আমি আগামীকাল চলে যাবো চাঁদ। হয়তো আবার আসবো তোর এসএসসির পর। প্লিজ আমার সাথে অভিমান করে পরীক্ষা খারাপ করিসনা। এটা তোর শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। উদাসীন হোস না চাঁদ।

চাঁদ কিছু না বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো। আবির চাঁদের চোখ দুটো মুছে দিলো।

-এই বোকা কাঁদছিস কেন? আমি কি মরে গেছি।
-এসব বলবেন না আপনি।
-আচ্ছা, বলবোনা। দয়াকরে তুই কান্না বন্ধ কর। চালাক আছিস তুই। এমন একটা জায়গায় কাঁদছিস। আহা, বুকেও তো নিতে পারবোনা।

চাঁদ সিক্ত চোখেও ফিক করে হেসে দেয়। সাথে আবিরও।

৫৬.

আবির আজ সকালে চলে গিয়েছে। চাঁদ দরজা লাগিয়ে বসে আছে নিজের ঘরে। বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার। এতোদিন আবির ছিলো মনটাও শান্ত ছিলো। আজ আবার বাঁধ ভেঙে অশান্ত হয়ে পড়েছে।

তিলোত্তমা ডাক দিচ্ছেন চাঁদকে। নিশ্চয়ই কোনো কাজ করাবেন।

-কি ছোটমামি?
-এই যে মহারাণী। তুই নাকি দিমার নুপুর নিয়েছিস?
-না, ছোটমামি।
-তাহলে তোর পায়ে নতুন নুপুর আসলো কোথ থেকে?
-এটা তো আ

বলতে গিয়েও থেমে গেলো চাঁদ।

-এটা আমি কিনেছি।
-তুই বললেই হলো।
-ঠিক আছে আপনি দিমাকে ডাকেন।
-দিমা এই দিমা।

দিমা ছুটে এসে দাঁড়ালো চাঁদের পাশে। এই নুপুর কালই চাঁদের পায়ে দেখেছিলো সে। সে এটা বুঝে পায়না আবির আসলেই চাঁদের পায়ে নতুন পায়েল অথবা নুপুর আসে কি করে। এই নুপুর খুবই পছন্দ হয়েছে তার। চাঁদকে বললে জীবনেও দিবেনা।

-দিমা এই নুপুর তোর।
-না, ছোটমামি। আমার নুপুর লাগবেনা।
-তোর কিনা বল?

দিমা এবার বিপাকে পড়ে। চাঁদের সাথে তো মিল হয়ে চলতে হবে। তাই কথাগুলো সেভাবেই ঘুরাতে হবে।

-চাঁদের আর আমার একই হলো।
-এক হলো না। এই যে মহারাণী নুপুর খোল।

চাঁদ যেনো নির্বাক শ্রোতা। চাঁদ আসলে ভিষণ বোকা। কথার মারপ্যাঁচ, সম্পর্কের মারপ্যাঁচ, ছলনা এসব তার মস্তিষ্ক বুঝতে পারেনা।

– কি হলো খোল।
– কিন্তু এগুলো তো আমার।

দিমাও ফোড়ন কেটে বললো।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ তোরই তো খুলিসনা। মামী এমনি বলছেন।

তিলোত্তমার যেনো এবার জিদ চেপে বসে। আসলে চাঁদকে অপদস্ত করার একটা সুযোগ পেলে তিনি ছাড়েন না। সকালেই দিমা তার কাছে নুপুর নিয়ে বিচার দিয়েছে। তিনি তো খুশিতে আটখানা। আবিরের বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বাড়িতে কেউ নেই এখন যে প্রতিবাদ করবে।

তিলোত্তমা এবার নিজেই চাঁদের পায়ের কাছে যেতে নিলে চাঁদ সরে যায়। কি করে এই নুপুর খুলে দিবে চাঁদ। এগুলো তো আবিরের দেওয়া। দিমার কথা বোধগম্য হচ্ছেনা চাঁদের।

-দে বলছি। চোর।

বলে চাঁদের দিকে এগিয়ে যান তিলোত্তমা। দিমা অবস্থা বেগতিক দেখে বলে,
-থাকনা ছোটমামি। বাচ্চা মানুষ।
-চোর আবার কিসের বাচ্চা।

চাঁদের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমি চোর নই। কিন্তু সে নির্বাক।

-কি হলো দে।
-ছোটমামি এটা আমার। দিমার না। আমি দিবোনা। দিমা তুই বল এটা কি তোর?

দিমা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তিলোত্তমা রাগে একটা চড় লাগান চাঁদের গালে। গালে হাত দিয়ে চাঁদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। অতঃপর ব্যাপারটা বোধগম্য হলে দৌড়ে ছুটে যায় নিজের ঘরে। কি অদ্ভুত! আজ সে দোষ না করেও দোষী।

৫৭.

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে চাঁদ। আজ এমনিতেই তার মন খারাপ তার উপর তিলোত্তমার এই ব্যবহার। কেঁদে চোখে জ্বালা ধরে গিয়েছে চাঁদের। ফোন বেজে উঠে তার। গলার স্বরটা স্বাভাবিক করে চাঁদ বলে,
-হ্যালো।
-হুমম। আমার তোতাপাখিটা কি এখনো রেগে বসে আছে?
-না।
-তোর গলা এমন লাগছে কেনো? এখনো তুই কাঁদছিস চাঁদ? প্লিজ কাঁদে না জানটা।
-আপনি আমায় এতো কেনো ভালোবাসেন?
-কিভাবে বলি বলতো।
-আচ্ছা বাদ দেন। এখন কোথায় আপনি?
-লঞ্চে আছি।
-আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করি। আপনি আমাকে করেন তো?
-ভালোবাসি তোকে। বিশ্বাস হয়তো নিজের চেয়েও বেশি করি।
-আপনার আপনজনেরা যদি আমার নামে কিছু বলে বিশ্বাস করবেন?
-কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছিস কেনো?
-না, কিছু না। সাবধানে যাবেন।

চাঁদ বসে পরে পড়ার টেবিলে। একদিন অনেক বড় হবে চাঁদ। সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে। এ পৃথিবীতে নিজের একটা নাম তৈরি করতে হবে। আবিরের জন্য,নিজের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া আর উপায় নেই।

(চলবে)…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here