#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১২
সকালবেলা রোদেলার ঘুম ভাঙলো অহির ডাকে।চোখ না খুলেই ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,
—“এত ভোরে জ্বালাস কেন পাখি?”
অহির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।রোদেলা আপু তাকে যখন যা মনে চায় তাই বলে ডাকে।কিছুদিন হয়তো পাখি বলে ডাকবে।সে মন খারাপ করে বলল,
—“আপু উঠো তো এখন।তোমার ভোর এখন নেই।দশটা বাজে প্রায়!”
রোদেলা এক লাফে উঠে চিন্তিত গলায় বললো,
—“তোরা কেউ ডাকিস নি কেন রে?আমার কলেজে যেতে হবে তো।প্রথম পিরিয়ডে সি গার্লস সেকশনে আমার ক্লাস!সাদিদ স্যার অনেক স্ট্রং!কেউ দেরিতে গেলে কিভাবে যেন বুঝে যায়।মনে হয় সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে সবসময়।”
—“কেন?তোমায় কি কোনোদিন বকা দিয়েছে নাকি আপু?”
রোদেলা মাথার চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে বলল,
—“পাখি রে!গত পরশুদিন আমি ক্লাস নিচ্ছি ছেলেদের।হুট করে রুমে ঢুকে পড়লো।আমি তো ভয়ে শেষ।একদম কাঁপা-কাঁপি অবস্থা।মার্কার নিয়ে বোর্ডে কিছু একটা লিখছিলাম।ভয়ে হাত থেকে মার্কার নিচে পড়ে গেল।শুধু পড়লে তাও হতো।গড়িয়ে ওনার পায়ের কাছে গেল।উনি নিজেই হাত দিয়ে উঠিয়ে আমার সামনে ধরে বললেন,’মিস!একটু সাবধানে সব করবেন।এত ভয় পেলে চলে?’
আমি জড়তা নিয়ে মার্কার হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম।কখন উনি রাউন্ড শেষে চলে যাবে!কিন্তু উনি করলো জানিস?”
অহি রোদেলার থেকে মুখ লুকিয়ে হাসছে।হাসি থামিয়ে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—“কি করলো আপু?”
—“আরে হিরোদের মতো হেঁটে একদম পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলেন।তারপর আমার দিকে চেয়ে হাসলেন।গালে হাত রেখে বললেন,’মিস রোদেলা, আপনি ক্লাস নিন।দেখি কেমন পড়ান।আমিও করি।কি করাচ্ছেন?ট্রান্সফরমেশন অফ সেন্টেন্স?আচ্ছা,করান!’
এদিকে আমার অবস্থা শেষ।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না।ছেলেগুলো ফাজিলের মতো মুখ টিপে হাসছে।স্যারও হাসছে।আমি অনেক কষ্টে মুখ খুললাম।খুলেই মুসিবতে পড়লাম।কিচ্ছু মনে নেই!সেন্টেন্স কাকে বলে সেটাই ভুলে গেছি।বুঝতে পারছিস কি অবস্থা?”
অহি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।হো হো করে হেসে দিল।রোদেলা চোখ পাকিয়ে অহির দিকে তাকালো।অহি হাসতে হাসতেই বলল,
—“স্যরি আপু।তোমার ওই অবস্থা ইমাজিন করে আমান বড্ড হাসি পাচ্ছে।”
—“তুই তাহলে হাসতে থাক।ততক্ষণে আমি রেডি হয়ে কলেজে যাই।”
রোদেলা উঠে দাঁড়ালো।আজ যে হলিডে তা রোদেলা আপুর এখনো খেয়ালে আসেনি সেটা অহি বেশ বুঝতে পারছে।এর আগে এক শুক্রবারে রোদেলা আপুর নাকি কলেজের গেটে তালা দেখে মনে পড়েছে আজ শুক্রবার।আজও যে শুক্রবার সেটা মনে নেই!
দশ মিনিটের মাথায় রোদেলা রেডি হয়ে নিচে নামলো।তার পরণে সাদা-কালোর কম্বিনেশনের থি পিস।মাথার চুলগুলো পেছনে উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকানো।সামনে ছোট করে কাটা চুলগুলো ঘাড়ের কাছে ঝুলে আছে।
—“তোরা কোথাও যাবি একত্রে?”
অহি আর রোদ্দুর দুজন দু সোফায় বসে ছিল।দুজনে মুখ তুলে রোদেলার দিকে তাকালো।রোদেলা আবার বলল,
—“দুজন নতুন পোশাক পরে ফিটফাট হয়ে বসে আছিস
ব্যাপার কি?কাজী অফিসে যাওয়ার ধান্দা নাকি?”
রোদ্দুর গম্ভীর হয়ে ফোন চালানোয় মনোযোগ দিল।যেন রোদ আপুর কথা সে শুনতেই পায়নি।তার আর অহির ব্যাপারটা রোদ আপু জানার পর থেকেই রোদ্দুর লজ্জা পায়!
অহি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে রোদেলার হাত টেনে বলল,
—“আপু,আজ হলিডে।তোমার কলেজ বন্ধ।মাথাতে নেই?”
রোদেলা মনে মনে নিজেকে বকা দিল।একি মন হয়েছে তার?কিছুই মনে থাকে না।এখন নিশ্চিত সবাই তাকে নিয়ে মজা নেবে।
অহি মুচকি হেসে রোদেলার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে বলল,
—“কি আপু?কলেজে কি এমন আছে যে শুক্রবারও মাথায় নেই?যাওয়ার জন্য একদম রেডি?”
—“অহি!মার খাবি কিন্তু! ”
রোদেলা লজ্জা মিশ্রিত মুখে নিচের দিকে তাকালো।ঘুরে উপরের দিকে যেতে নিতে অহি আবার টেনে ধরলো।বলল,
—“আপু,আমরা এখন ঘুরতে যাব এবং তুমিও সাথে যাবে।রেডি তো হয়েই আছো।চলো!”
রোদেলা এতক্ষণে যেন বুঝতে পারলো।অহির দিকে চেয়ে চোখ পাকিয়ে বলল,
—“তার মানে আমাকে রেডি করার জন্যই তুই সকালবেলা বললি না যে আজ শুক্রবার, তাই তো?তুই তো ভারী দুষ্ট হয়ে গেছিস রে পাখি!”
রোদ্দুর ফোনটা নিজের প্যান্টের পকেটে রেখে উঠে দাঁড়ালো।সে আজ কালো চেক শার্ট পড়েছে।হাতা ফোল্ড করে বলল,
—“রোদ আপু!হাতিরঝিল যাব।হাঁটা ধরো।”
—“সেকি!তুইও যাবি?”
—“ইয়ে মানে,হ্যাঁ আপু।তোমরা দুজন মেয়ে মানুষ।একা ছাড়া যাবে না।সেজন্য আমি যাচ্ছি।”
রোদেলা অহির গাল টেনে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।হাসিমুখে বলল,
—“ব্যস!এই একটা কারণ?ভালো তো।চল!”
অহি বলল,
—“কারো খাওয়া হয়নি তো।খালামণি বকা দিবে।নাস্তা করে রওনা দিই।”
——————–
ওরা গাড়ি নিয়ে বের হয়নি।দুটো রিকশা করে হাতিরঝিল রওনা দিয়েছে।আগের রিকশায় অহি আর রোদেলা।তার পিছন পিছন রোদ্দুর একা অন্য রিকশায় এসেছে।
দুপুর হয়ে গেছে প্রায়।খাঁ,খাঁ রোদ থাকার কথা।কিন্তু আজ রোদ নেই।আকাশ অনেকটা মেঘলা।তবে বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
রোদেলা এগিয়ে গিয়ে ব্রিজটাতে দাঁড়াল।ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।তাতে ওড়নার আঁচল উড়ছে।সাথে চুল।রোদেলা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে জলের দিকে তাকালো।ব্রিজের নিচের জল কালো।তবে দূর্গন্ধ নেই।
অহি, রোদ্দুর এসে রোদেলার পাশে দাঁড়াল।অহির ফোন হাতে কি যেন করছে।হঠাৎ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
—“আপু,ওদিকে চলো তো।বসার মতো জায়গা গুলো আছে না!ওখানে বসবো।”
অহিকে অনুসরণ করে পেছন পেছন দুজন হেঁটে গেল।অহি এগিয়ে গিয়ে বসলো।রোদেলা তার পাশে বসে রোদ্দুরকে বলল,
—“হাতিরঝিলে আজ দিয়ে কতবার আসলি?হাজার বার!নোংরা, দূর্গন্ধযুক্ত কালো পানি ছাড়া দেখার মতো কিছুই নেই।”
রোদ্দুর বলল,
—“আমি কি আসতে চেয়েছি নাকি আপু?অজান্তা জোর করলো!”
অহি রোদ্দুরের কথা কানে না নিয়ে রোদেলার এক হাত চেপে উত্তরের দিকে তাকালো।আঙুল উঁচিয়ে বলল,
—“আপু,ওই দেখো!কি কিউট একটা বাচ্চা মেয়ে।”
অহি জানে তার রোদ আপু বাচ্চাদের জন্য পাগল।যতবার আপুর সাথে বাইরে বের হয়েছে ততবার বাচ্চা দেখলেই হুশ থাকতো না রোদ আপুর।কোলে নিতো।পারমিশন নিয়ে ছবিও তুলতো।
রোদেলার বাচ্চা মেয়েটার দিকে চোখ পড়তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
—“অহি,ও তো ছিনজা!ওকে তো আমি চিনি!”
অহি,রোদ্দুর দুজনে চমকে উঠলো।ততক্ষণে রোদেলা মেয়েটার কাছে গেছে।মেয়েটা ইট, সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গা বসে আছে।হাতে একটা চিপসের প্যাকেট।রোদেলা হাত বাড়িয়ে কোলে নিয়ে বলল,
—“ছিনজা বাবু কেমন আছে?”
বাচ্চা মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে রোদেলাকে দেখে।ছোট ছোট হাতে রোদেলার গলা জড়িয়ে বলল,
—“আন্টি,আমি ভালো।তুমি কেমন আছো?”
রোদেলা ছিনজার নাক টেনে বলল,
—“এতক্ষণ ভালো ছিলাম না।কিন্তু ছিনজা বাবুকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।কিন্তু তুমি একা কেন?দাদু কোথায়?”
—“আজ তো দাদু আসেনি।দাদু বাসায়।আমি আজ পাপার সাথে এসেছি।”
—“তা পাপা কোথায় ছিনজা?”
ছিনজা পেছনে হাত বাড়িয়ে বলল,
—“তোমার পেছনে আন্টি।”
রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে যাকে দেখলো সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল যেন।মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল নিমেষে।
সে তোতলানো স্বরে বলল,
—“সাদিদ স্যার,আপনি?আসসালামু আলাইকুম।”
সাদিদ ভ্রু কুঁচকে রোদেলার দিকে চেয়ে আছে।যেন হিসেব মেলাচ্ছে।সে এগিয়ে এসে ছিনজার হাত ধরে বলল,
—“মিস রোদেলা জান্নাত।আপনি কি আমার মেয়েকে আগে থেকেই চিনতেন?”
রোদেলা ছিনজাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল।আশপাশে মাথা ঘুরিয়ে অহি আর রোদ্দুরকে খুঁজলো।এরা দুটো আবার কোথায় গেল?তাকে এমন বিপদের মাঝে ফেলে?ছিনজা তাহলে সাদিদ স্যারের মেয়ে?
রোদেলা ধপ করে বসার জায়গাটে বসে পড়লো।সে যতই চাচ্ছে সাদিদ নামক মানুষটার থেকে দূরে থাকতে,ততই পরিস্থিতি ঠেলে তাকে সামনে এনে দিচ্ছে।আজ হলিডের দিনেও এমন দেখা হওয়ার কি খুব দরকার ছিল?
সাদিদ ছিনজাকে মাঝে রেখে রোদেলার পাশে বসে পড়লো।রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,
—“মিস রোদেলা, আমি কিছু জিগ্যেস করেছি।”
—“আসলে,আ-আমার ছিনজার সাথে পরিচয়ের বেশিদিন হয়নি।এক মাসের মতো হবে হয়তো।সেদিন বাচ্চাদের পার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।ছিনজা োর দাদুর সাথে খেলেছিল।আমার আবার বাচ্চা খুবই পছন্দ।ছিনজাকে দেখে ভালো লাগল,সেজন্য এগিয়ে গিয়ে ওকে কোলে নিলাম,কথা বললাম।চকলেটও দিলাম।আপনার বাবার সাথে গল্প টল্প করে চলে আসলাম।মাঝে আর দেখা হয়নি।আজ দেখা হলো!আপনার বাবা কেমন আছে স্যার?উনি অনেক ভালো মানুষ।”
—“বাবা,ভালো।”
কেউ আর কোনো উত্তর কথা বললো না।হঠাৎ করেই রোদেলার দু চো বিস্ফারিত হয়ে গেল।সেদিন তো সাদিদ স্যারের বাবা বলেছিল যে ছিনজার মা নেই।ছিনজার জন্মের সময়ই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে মারা গেছে।তার মানে সাদিদ স্যার এখন একা ছিনজাকে বড় করছে?
রোদেলার মাথা ঘুরছে।সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—“স্যার,আমি আসছি।”
সামনের এগুনোর আগেই ছিনজা চিপস খাওয়া বাদ রেখে বলল,
—“আন্টি তুমি যাবে না।আজ সারাদিন আমার সাথে থাকবে।”
রোদেলা একি মুসিবতে পড়লো!সে ছিনজার দিকে চেয়ে বলল,
—“এমন করে না ছিনজা বাবু।সবাই পঁচা বলবে তো।তুমি না গুড গার্ল?আমি অন্য দিন সারাদিন তোমার সাথে কাটাব।আজ যাই?”
ছিনজা তার ওড়নার এক কোণা চেপে ধরে নাকি সুরে বলল,
—“আমি কিন্তু কেঁদে দিবো।আন্টি,তুমি আজ আমার সাথে ঘুরবে।”
সাদিদ মেয়ের মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে মুচকি হাসলো। রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,
—“থেকে যান মিস রোদেলা।আজ আমরা তিনজন ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করবো একত্রে।”
রোদেলা অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বসে পড়লো ছিনজার পাশে।
———————
—“রোদ্দুর ভাই, ফেরীতে উঠবো।”
—“কেন?”
—“আজব?ফেরীতে মানুষ কেন উঠে?পানি দেখব।”
রোদ্দুর কপাল কুঁচকে অহির দিকে তাকালো।এই মেয়েকে সাথে নিয়ে একা কোথাও যাওয়া যাবে না।তাকে পাগল করে দেবে।সে শক্ত কন্ঠে বলল,
—“পানি জীবনে দেখিসনি অজান্তা?পানি দেখার কি আছে?”
—“দেখেছি।কিন্তু এমন কালো কুচকুচে, দূর্গন্ধযুক্ত পানি দেখিনি।আজ সেটা দেখবো।”
—“তো এখান থেকেই দেখ না।ফেরীতে উঠতে হবে কেন?”
—“আমি সাঁতার জানি না বলে এতদিন উঠিনি।কিন্তু আজ উঠবো।আজ আপনি পাশে থাকবেন যে!”
রোদ্দুর হাঁটতে হাঁটতে বলল,
—“অজান্তা!আমিও সাঁতার জানি না।আয় উঠতে হবে না।রোদ আপুকে খুঁজতে হবে।তুই আমার বোনটাকে কার সাথে না কার সাথে পাঠালি কে জানে!আমার বোনের কিছু হলে তোকে কিন্তু কামড়ে খেয়ে ফেলবো অজান্তা!”
—“কাকে কামড়াবেন?”
বয়স্ক পুরুয়ালী কন্ঠ শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে রোদ্দুর তাকিয়ে দেখে অহি পেছনে নেই।এক বাদামওয়ালা তার কামড়ানো প্রসঙ্গে খুব কৌতূহল দেখাচ্ছে।
মানুষটার সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেছে।কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে তার দাঁত পড়ার বয়স এখনো হয়নি।সে ফাঁকা দাঁতের পাটি বের করে আবার বলল,
—“কাকে কামড়াবেন ভাইসাহেব?আশপাশে তো কাউকে দেখি না।”
—“আপনাকে কামড়াব।খুশি?”
—“এইডা কি কন ভাই সাহেব? তার চেয়ে বরং আমি বিশ ট্যাকার বাদাম দেই।হেই বাদাম কামড়ান।”
রোদ্দুর কিছু বলল না।সে চেয়ে আছে কাউন্টারের দিকে।অহি ফেরীতে উঠার জন্য টিকেট কাটছে।রোদ্দুরের মাথায় রক্ত উঠে গেল।মেয়ে এত পেকে গেছে?
অহি টিকেট দুটো হাতে হাস্যোজ্জ্বল মুখে এগিয়ে আসছে।তার গায়ে নীল রঙের পর্যন্ত গাউন।মাথায় নীল হিজাব পেঁচানো।গায়ের ফিনফিনে নীল ওড়নার দুপাশ বাতাসে পাল তোলা নৌকার মতো উড়ছে।টানা টানা চোখ দুটো অনবরত হেসে যাচ্ছে।দূর থেকেই ঠোঁটের উপর বাদামি তিলটা উঁকি দিচ্ছে।রোদ্দুরের চোয়াল শিথিল হয়ে আসলো।বুকে তীব্র ব্যথা শুরু হলো।ভালোবাসার ব্যথা!এই মেয়েকে সে কিভাবে আঘাত করবে?প্রতিনিয়ত সে নিজেই তো ‘অজান্তা’ নামক রমণীতে খুন হচ্ছে!
অহি এগিয়ে এসে রোদ্দুরের হাত চেপে বলল,
—“রোদ্দুর ভাই, টিকেট কিনেছি।”
#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১৩ (বোনাস পার্ট)
অহি এগিয়ে এসে রোদ্দুরের হাত চেপে ধরে বলল,
—“রোদ্দুর ভাই টিকেট কেটেছি!”
অহি ছুঁয়ে দিতে রোদ্দুরের সমস্ত শিরায় শিরায় যেন ইলেকট্রিক শক লাগলো।এই মেয়ে নির্ঘাত বিদ্যুতের কারখানা।সে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বলল,
—“টিকেট কেন কিনলি?”
—“ফেরীতে উঠার জন্য।এই মাথা থেকে শুরু করে উত্তর দিকে সোজা উত্তর দিকে গিয়ে নামবো।ওদিকে অনেক সুন্দর সুন্দর গাছপালা।ভালো লাগবে রোদ্দুর ভাই।চলুন।”
—“এই শোন!সবসময় কানের কাছে রোদ্দুর ভাই, রোদ্দুর ভাই করবি না তো!যেকোনো একটা বলে ডাকবি।হয় রোদ্দুর, না হয় ভাই।তোর চয়েস…কোনটা বলে ডাকবি!”
অহি খিলখিল করে হেসে বলল,
—“আমার রোদ্দুর ভাই বেশি পছন্দ।ওটা বলেই ডাকবো।”
—“তোকে আমি তাহলে অজগর বলে ডাকবো।অজগর একটা!”
—“অজগর নিঃশ্বাস দিলে নাকি মানুষ মরে যায়।আপনিও মরে যান।”
বলেই অহি একটু এগিয়ে আসলো।রোদ্দুরের মুখের কাছাকাছি মুখ এনে সাপের মতো ফোঁস করে বেশ কয়েকবার নিঃশ্বাস ছাড়লো।রোদ্দুর মাথাটা একটু পিছিয়ে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।এই মেয়ের মাথায় শর্ট সার্কিট আছে।দু তিনটে তার ছেঁড়া।না দু-তিনটে নয়!অন্তত হাজার খানেক তার ছেঁড়া!
ঘাটে অসংখ্য ফেরী বাঁধা।অহি রোদ্দুরের তোয়াক্কা না করে একজনকে টিকেট দেখাল।তিনি বলে দিলেন কোন ফেরীতে উঠতে হবে।সে তিন নাম্বার সারির প্রথম ফেরীতে উঠে বসলো।
রোদ্দুর প্রবল অনিচ্ছা নিয়ে ফেরীতে উঠে অহির পাশে বসলো।ছোট্ট ফেরী।দেখেই কেমন ভয় ভয় লাগে!যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে মনে হচ্ছে।
হইহই করে একদল যুবক-যুবতী উঠলো।ফেরী ভরে গেছে।আর কোনো বসার জায়গা খালি নেই।ফেরী ছেড়ে দিল।
অহি কর্ণারে বসেছে।কর্ণার দিয়ে জানালার মতো কাটা।জানালা দিয়ে হু হু বেগে বাতাস বইছে।বাতাসে অহির হিজাবের একটা অংশ বার বার রোদ্দুরের মুখে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।তার ভেতর কেমন অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।অন্য রকম, প্রশান্তি,ভালো লাগা আর পরম সুখের অনুভূতি।এ রকম টুকরো টুকরো হাজারো অনুভূতির সাক্ষী হতে চাইলেও তার পাশে বসা থাকা মেয়েটিকে সে সারাজীবন নিজের পাশে চায়!
সামনে বসা একটা ছেলে ফোনে গান বাজাচ্ছে।এই পরিবেশের সাথে যেন গানটা একদম মানানসই।
“যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো,
উড়ে গেল মন পায়রা গুলো
তাও কেন দেখেও দেখোনি…….”
রোদ্দুরের মনের ভেতরও গানের লাইন গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।অহির দিকে আড়চোখে তাকালো সে।মেয়েটির দিকে এখন সরাসরি তাকাতেও কেমন লজ্জা লাগে।আগে তো এমন হতো না!তবে কি এটা নতুন সম্পর্কের রেশ?
অহি জানালার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার বুকের ভেতর সুখের ঝড় যাচ্ছে।এই হাতিরঝিল সে বহুবার এসেছে।হাতিরঝিলের প্রতিটি গাছ থেকে শুরু করে ধূলিকণা পর্যন্ত তার পরিচিত।কিন্তু কোনোবারই এত ভালো লাগেনি।সে বেশ বুঝতে পারছে,তার এই ভালো লাগার,নতুন অনুভূতির সম্পূর্ণ ক্রেডিট তার পাশের মানুষটার।
ফেরী ছুটে চলেছে উত্তর দিকে।স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার কারণে হালকা পানি ছিঁটে আসছে অহির গায়ে।এতে তার আরো ভালো লাগছে।সে নদীর দিকে তাকিয়েই ডান হাত দিয়ে রোদ্দুরের হাতটা চেপে ধরলো।
রোদ্দুর চমকে উঠলো।কিছু বলতে নিয়েও চারপাশে তাকিয়ে থেমে গেল।নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কারণ অনেকে আড়চোখে তাদের দেখছে আর নিজেরা হাসাহাসি করছে।সে আস্তে করে মুখের সামনে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,
—“অজান্তা,হাত ছাড়। সবাই দেখছে!”
রোদ্দুরের মুখে অজান্তা ডাকটা অহিকে তোলপাড় করে দেয়।বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো ভেসে যেতে ইচ্ছে করে দূর থেকে সূদুর!সে চাপা হেসে বলল,
—“দেখুক!তাতে আমার কি?আমি আমার হবু বরের হাত ধরেছি।তাতে তাদের কেন জ্বলে?”
—“অজান্তা,কথা শোন আমার।হাত ছাড়!বাসায় গিয়ে আমার রুমে তোকে তিন ঘন্টা সময় দিবো।তখন হাত ধরে বসে থাকিস।আমি কারো হাসাহাসির বস্তু হতে চাই না।হাত ছাড়!”
—“ছাড়বো না।পারলে ছাড়িয়ে দেখান।আমি দুই হাত দিয়ে ধরবো।”
অহি সত্যি সত্যি রোদ্দুরের বাম হাত নিজের হাঁটুর উপর নিয়ে দুই হাতে শক্ত করে ধরে বসে রইলো।রোদ্দুর এবার নিজে থেকে অহির ডান হাতটা চেপে ধরে।হাত ধরেই সিটের আড়ালে নিয়ে অহির ওড়না দিয়ে ঢেকে স্তূপ করে রাখে।চট করে কেউ আর বুঝতে পারবে না।
তার কাছে ভালোবাসার সঙ্গাটা অন্য রকম।খুবই ব্যক্তিগত!এমনই ব্যক্তিগত যা লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে হয়,জনসম্মুখে তার প্রাইভেসি, আগ্রহ কমে যায় হয়তো!অহি তার ব্যক্তিগত আপন মানুষ।তাকে ঢেকে সবসময় সবার আড়ালে রাখতে চায়।অহির প্রতি তার ভালোবাসাটা,অনুভূতিটা সে একমাত্র অহি ছাড়া আর কাউকে দেখাতে চায় না।
অহি রোদ্দুরের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দেয়।সে অবাক হয়।রোদ্দুর ভাই তার হাত ধরতেও ভয় পায়?এত কিসের ভয় মানুষটার!
রোদ্দুর এক পলক ওড়নার আড়ালে থাকা হাত দুটির দিকে তাকায়।সামান্য হাত ধরার অনুভূতি এত প্রগাঢ়,এত ভরসার, এত বিশ্বাসের তার জানা ছিল না।অহির হাতটা সে এভাবে সারাজীবন ধরে রাখতে চায়।হোক না তা লোকচক্ষুর আড়ালে!
ডান হাতে ফোনটা বের করে রোদ্দুর ফোন স্ক্রল করে।অহিকে আস্তে করে বলে,
—“অজান্তা!”
অজান্তা তার দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে বলে,
—“বলুন রোদ্দুর ভাই।”
—“আমার দিকে তাকিয়ে বলতে হবে না।সামনে তাকিয়ে বা অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বল।”
—“কেন?আপনি লজ্জা পান?ছেলেদের তো লজ্জা পেতে নেই।ছেলেরা হবে নির্লজ্জ।”
—“তোর লাজ লজ্জা কিছুই নেই।তোর মতো যদি আমিও নির্লজ্জ হই তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছিস?”
অহি রোদ্দুরের দিকে তাকিয়েই বলল,
—“ভাবাভাবির কি আছে?বি প্র্যাক্টিক্যাল রোদ্দুর ভাই!একটু আমার মতো নির্লজ্জ হয়ে দেখান।”
রোদ্দুর ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অহির দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাল।অহির মুখ হাসি হাসি।রোদ্দুর কিছুক্ষণ চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।ও চোখে তাকিয়ে থাকার মতো শক্তি তার নেই।ডুবে যাবে,একদম তলিয়ে যাবে সে।
ফের ফোনের দিকে চেয়ে কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
—“তোর পড়াশোনার কি অবস্থা রে অজান্তা?”
—“একদম ঘোলাডাইল।আমার আর পড়তে ইচ্ছে করে না রোদ্দুর ভাই।আমায় তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলুন।কবে বিয়ে করবেন?”
রোদ্দুর খুকখুক করে কাশে।কি সাংঘাতিক মেয়ে।এর তো মুখে বুলি ফুটেছে।যা মন চায় তাই বলে দিচ্ছে।তার মানে অহি তাকে এখন আর বিন্দুমাত্র ভয় পায় না?কি মুসিবত!তাহলে কি সে-ই বাকিটা জীবন একে ভয় করে চলবে?
—“রোদ্দুর ভাই! ”
—“বলে ফ্যাল।”
—“আপনার কয়টা বেবি নেয়ার ইচ্ছে?আগেই বলে রাখি,এসব নিয়ে কিন্তু পরে আর তর্ক করা যাবে না।আমার এগারোটা বেবি নেয়ার শখ।”
—“ও মাই গড!”
রোদ্দুর আর পারলো না।জোরে জোরে কাশা শুরু করলো।তার কাশির শব্দে সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকাল।রোদ্দুর চোখের পলকে অহির থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো।ফেরীর কর্ণারে গিয়ে দাঁড়াতে মাঝি বলল,
—“ভাই, নড়াচড়া কইরেন না বেশি।ডুবে যেতে পারে!”
অগত্যা রোদ্দুর ফের অহির পাশে এসে বসলো।তবে এবার দুজনের মাঝে অনেক দূরত্ব রেখে।একেবারে কুঁজো হয়ে একটু জায়গা নিয়ে!
অহি বুঝতে পেরে বলল,
—“রোদ্দুর ভাই, কাছে আসুন।”
রোদ্দুর বিড়বিড় করে বলল,
—“হোয়াট?”
—“বলছি,কাছে এসে বসুন তো।পড়ে যাবেন!”
—“পড়ে যাবো না।”
—“আরে পড়ে যাবেন।এদিকে সরে বসুন।মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি হচ্ছে তো।”
—“নিচে পড়ি পড়বনি।চুপচাপ থাকো।”
অহি আর জোর করলো না।বেশ কিছুক্ষণ পর ফেরী থেমে গেল।গন্তব্যে এসে গেছে।
——————
সন্ধ্যার আযানের শব্দে ঘোর কাটে রোদ্দুরের।বাসায় ফিরতে হবে তো!
অহি আশপাশে থাকলেই সে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যায়।চারপাশ অন্য রকম লাগে।কেমন অদ্ভুত রকমের সে অনুভূতি!কিন্তু সে এসব অহিকে বুঝতে দিতে চায় না।বুঝলেই অহি হয়তো তাকে ক্ষেপাবে!
—“অজান্তা উঠ!তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।”
অহি উঠতে চায় না।তারা এতক্ষণ একটা রাস্তা থেকে একটু দূরে গাছের নিচে বসে ছিল।দুপুরে ব্রিজের কাছের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে নিয়েছিল দুজন একত্রে!তারপর থেকেই দুজন চুপচাপ বসে আছে।আহামরি কথাও হয়নি।চুপচাপ দুজন পাশাপাশি বসে থাকারও যেন অন্য রকম অনুভূতি!
রোদ্দুর তাড়া দেয়।
—“অজান্তা উঠে পড়।রোদ আপু বিকেলেই বাসায় পৌঁছে গেছে।আমরা এখনো পৌঁছাইনি।চরম বকা দিবে।আমি একা থাকলে সমস্যা ছিল না।সাথে তুই আছিস,তাতে মেয়ে মানুষ!কিছু হয়ে গেলে?চল তো!”
অহি উঠে দাঁড়ায়।দুজন পাশাপাশি হাঁটা ধরে।অহি হঠাৎ প্রশ্ন করে,
—“রোদ্দুর ভাই,খালামণি,খালু যদি আমাদের সন্দেহ করে?যদি বিয়ে পড়িয়ে দেয় দুজনকে?ধরুন আজ রাতেই তাহলে?”
—“তুই এত বিয়ে নিয়ে পড়েছিস কেন?অনার্স কমপ্লিট কর।তারপর দেখা যাবে!”
—“সে কি!অনার্স শেষ হতে তো এখনো এক বছরের উপরে দেরি।থার্ড ইয়ারের সেকেন্ড সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাই তো এখনো হয়নি।”
রোদ্দুর কিছু বলল না।তবে মনে মনে হিসেব টা কষে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।সত্যিই তো!একটু বেশি দেরি হয়ে যায় না?এই মেয়েটা কাছে আসলেই তো তার পৃথিবী উলোটপালোট হয়ে যায়।এতদিন থাকবে কিভাবে?
—“রোদ্দুর ভাই আর হাঁটতে পারছি না।”
রোদ্দুর দাঁড়িয়ে পড়ে।অহি নিচে বসে পড়েছে।হেঁটে অনেকখানিই এসেছে তারা।তারা ব্রিজ থেকে উল্টো দিকে অনেক খানি এসেছিল।এখন ব্রিজের কাছে গিয়ে রিকশা নিতে হবে।এখান থেকে পাওয়া যাবে না।
অনেকখানি রাস্তা!রোদ্দুরের নিজেরই কষ্ট হচ্ছে হাঁটতে।হেঁটে তেমন তার অভ্যাস নেই।অহিরও সেইম অবস্থা।রোদ্দুরের মন খারাপ হয়ে যায়।তার জন্য নয়।অহির জন্য!
সে অহির দিকে চেয়ে নরম কন্ঠে বলে,
—“আর একটু কষ্ট কর অজান্তা!সামনেই ব্রিজ।ওখান থেকে রিকশা নিয়ে সোজা বাসা।অনেক রাত হয়ে যাবে রে।তাড়াতাড়ি চল!”
অহি উঠে দাঁড়ালো।পায়ের জুতো খুলে হাতে নিল।সে খালিপায়ে হাঁটবে।এতে একটু ভালো লাগবে।রোদ্দুর কিছু বললো না।শুধু অহির হাতের জুতোজোড়া নিজের হাতে নিল।অহি ছাড়তে চাইলো না।সে জোর করেই নিল।
রোদ্দুর হাঁটার বেগ একটু কমিয়ে দিল।তার পাশের কলিজার কষ্ট হচ্ছে।
চারিদিকে অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে।কিছু কিছু জায়গা রাস্তার ধারের বড় বড় সোডিয়াম আলোতে আলোকিত।গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো পড়ে অদ্ভুত সব প্রতিমূর্তি গঠন করছে।নদীর কুচকুচে কালো পানিতে বিভিন্ন রকমের আলো পড়ে চিকচিক করছে।কালো জলটাও এমন অনিন্দ্য সুন্দর মনে হচ্ছে।অহি,রোদ্দুর দুজনেই কেমন টান অনুভব করলো।এই পথ-ঘাট,এই প্রকৃতি তাদের হাজারো অগোছালো অনুভূতির চিরসাক্ষী হয়ে থাকবে।
কিছু দূর যেতেই অহি রোদ্দুরের শার্টের পেছনের অংশ চেপে ধরলো।রোদ্দুর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে থেমে গেল।এই মেয়েটা এমন কেন?হুটহাট কেমন ছুঁয়ে দেয়!সে কি বোঝে না এতে তার বুকের ভেতর তোলপাড় হয়?
—“থামলেন কেন?হাঁটুন!”
অহির কথায় রোদ্দুর বলে,
—“তুই পেছন থেকে শার্ট খামচে ধরে রাখলে হাঁটবো কিভাবে?”
—“জানি না!ওভাবেই হাঁটুন।আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।নাহলে হাত ধরতে দিন।”
—“মনে হচ্ছে তোকে নিয়ে এখন পাহাড় টাহাড় ট্রেকিং করতে উঠবো।নে হাত ছাড়!শার্ট ধর!স্যরি!শার্ট ছাড়,হাত ধর!”
রোদ্দুর হাত বাড়িয়ে দেয়।অহি হাসিমুখে তার হাত ধরে।দুজনে আবার হাঁটা ধরে।রোদ্দুর এক পলক উথাল পাথাল করে দেয়া বিস্তর ক্ষমতার মানুষটিকে বলে,
—“হাত ধরেছিস, মানলাম।এরপর যেন কোলে উঠতে চাইবি না।সেটা কিন্তু মেনে নিব না।আগেই বলে দিলাম।”
(চলবে)
অনেক দ্রুত লিখেছি।অগোছালো হয়েছে হয়তো।রিচেক করা হয়নি।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।🙂💕🖤
(চলবে)
২০১৯ সালে চারজন বান্ধবী মিলে প্রথম হাতিরঝিল গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম ইয়া বড় বড় হাতি দেখবো।কিন্তু আশাহত হয়েছি।😒
রিচেক করা হয়নি।