#পরিসংখ্যান
পর্ব-৮
#tani_tass_ritt
হঠাৎ খবর এলো তাহিয়ার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।পুলিশ কল দিয়ে রিমনকে হসপিটালে আসতে বললো।রিমনের কেমন যেনো ভয় হচ্ছে।
রিমন সবাইকে এসে বললো তাহিয়ার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
“আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে।”
“কোথায় আছে আমার বোন। ও ঠিক আছে তো।” রাহিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো।
রিমন কিছু বললো না। তারা গাড়ি নিয়ে বের হলো।রিমন ড্রাইভ করছে। হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই সবাই ভয় পেয়ে গেলো।তরির মনে ধক করে উঠলো।রাহিয়ার কান্না যেনো আরো বেড়ে গেলো।
হসপিটালে যেয়ে রিমন তাহিয়ার খোঁজ করলো।তারা তাহিয়ার কেবিনের সামনে যেয়ে দেখে নিরব বসে আছে। (নিরব রিমনের ফ্রেন্ড এবং পুলিশ)
“দোস্ত তাহিয়া কোথায়? তাহিয়ার কি হয়েছে?”
নিরব চুপ করে আছে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
“আসলে দোস্ত তাহিয়ার রেইপ হয়েছে।”
এটা শুনে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।রাহিয়া তো ওখানেই জ্ঞান হারালো।এতো বড় একটা নিউজ সে নিতে পারেনি।
সাহের নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।তার মাথা ঘুরতেছে।সে নিজেকে সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে অনেক জোরে বারি খেলো। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
তরি রাহিয়াকে সামলাবে না নিজেকে বুঝতে পারছে না।তখনি ডাক্তার বেরিয়ে এলো।
“আমার কিছু কথা ছিলো।ওর বাড়ির লোক আমার কেবিনে আসুন।”
শাফিনকে রাহিয়ার খেয়াল রাখতে বলে বলে তরি এবং রিমন ডাক্তারের পিছু পিছু গেলো।
“আপনারা শান্ত হন প্লিজ। তাহিয়া এখন আগের থেকে ভালো আছে।আমি জানি এটা খুবই বড় ব্যাপার।কিন্তু ও এখন অনেক ছোট আপনাদের উচিৎ নিজেদেরকে শান্ত রেখে ওর খেয়াল রাখা।ওর এখন ফিজিকাল অবস্থা যতনা খারাপ।মেন্টাল কন্ডিশন আরো বেশি খারাপ।ও ট্রমাটাইজ হয়ে গিয়েছে।
তরি অনবরত কাঁদছে কিছুই বলতে পারছেনা। রিমন কোনো রকম নিজেকে সামলে নিলো।
এই ঝরের মোকাবেলা কিভাবে করতে হবে জানা নেই কারো।
রাহিয়ার জ্ঞান ফিরার পর সে অস্থির হয়ে গেলো তাহিয়াকে দেখার জন্য।
রাহিয়া আর তরি তাহিয়ার কেবিনে গেলো।
তাহিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।একদিনেই মেয়েটার উপর দিয়ে যে ঝড় গিয়েছে সেটা সামলে উঠতে পারা কঠিন।
রাহিয়া তাহিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।কিন্তু তাহিয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছেনা।সে জড় বস্তুর ন্যায় আছে।কোনো কিছু বলছেও না।কারো কথা কোনো কিছুই যেনো তাকে স্পর্শ করতে পারছেনা।
কথায় আছে ” অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর।”
তাহিয়ার ঠিক এমন অবস্থা। রিমনের আওয়াজ পেয়ে তাহিয়া রিমনের দিকে তাকালো।হাতের কাছে থাকা বাটিটা ছুড়ে মারলো রিমনের দিকে।
এটা দেখে সবাই আরো শক খেলো।
তাহিয়া রিমনকে দেখে চিৎকার শুরু করে দিলো।পারলে এখনি সে রিমনকে মেরে ফেলবে।পাগলামি করতে লাগলো।
মাহিদ ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসলো পরিস্থিতি সামাল দিতে।ডাক্তার ইঞ্জেকশন দিয়ে তাহিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
“দেখেন ওর সামনে এমন কিছু করবেন না যাতে ও আরো বেশি হাইপার হয়ে যায়।এতে কিন্তু ওর ক্ষতি হবে।”
সবাই অবাক।যেই রিমন রিমন বলে বলে তাহিয়া পাগল ছিলো।আজ তাকেই সে দেখতে পাচ্ছেনা।
সাহেরের কি হলো সে হঠাৎ করে রিমনের কলার ধরে,
“তুই আমার তাহিয়ার সাথে কি করেছিস বল।ও তোকে দেখে এমন কেন করলো।তুই কি করেছিস? ও তোকে পছন্দ করতো তুই জানতি না।তুই ওর ছোট মানুষির সুযোগ নিয়েছিস তাইনা।?”
সাহের কে কেউ ছাড়াতে পারছেনা।একের পর এক এতো কিছু হচ্ছে যে কারো মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
“এইসব কি বলছো তুমি সাহের? ও আমার ছোট বোনের মতো।” রিমন বললো।
“ছোট বোন তাইনা । আমার তোকে আগের থেকেই পছন্দ ছিলোনা।তোর মতিগতি আমার ভালো লাগতোনা।” সাহের চিৎকার করে বলতে লাগলো।
রিমন অসহায় দৃষ্টিতে রাহিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।রাহিয়া যদি তাকে অবিশ্বাস করে তাহলে সে কাকে কি বুঝাবে।
রাহিয়া চুপ করে বসে আছে।এতোকিছু সে নিতে পারছেনা। তরি রাহিয়াকে সামলাচ্ছে।
“রিমন ভাইয়া প্লিজ তুমি তাহিয়ার সামনে এসোনা।আমি জানি তোমার কোনো দোষ নেই।প্লিজ তুমি আর ওর সামনে এসোনা।” তরি বললো।
পরের দিন তারা তাহিয়াকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পিয়াশ, রুপশা রিমি চিটাগং চলে গেলো।এত বড় দুর্ঘটনা রাহিয়ার মা বাবা কে কিভাবে জানাবে কেউ বুঝতে পারছেনা।
তাহিয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা।সে আগের মতো জড় বস্তুর ন্যায় বসে আছে।
বাসায় এসে রাহিয়ার বাবা মামা এই ঘটনা জানার পর তাদের মাথায় যানো আকাশ ভেঙে পরলো। তাহিয়ার মা তো তাহিয়াকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।তাহিয়ার বাবা সোফায় চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
তরি সাহের তাহিয়ার পাশে বসে আছে।রাহিয়া তার বাবাকে সামলাচ্ছে।
পরেরদিন বিকেলে শাফিনের মা এসে হাজির রাহিয়াদের বাসায়।
শাফিনের মাকে দেখে রাহিয়া সালাম দিলো।
এই পরিস্থিতে সে কেনো আসবে এটাই ভেবেপাচ্ছেনা রাহিয়া।
শাফিনের মা তাহিয়াকে দেখে সোফায় গিয়ে বসলেন।
“দেখেন আপা আমি দুদিন আগে এসেছিলাম শাফিন আর রাহিয়ার বিয়ের কথা বলতে কিন্তু আমি চাচ্ছিনা ওদের বিয়েটা হোক।”
এটা শুনে রাহিয়া আকাশ থেকে পরলো।
“আপা আপনি এগুলো কি বলছেন এখন।”
“আমি ঠিকই বলছি।ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো তাই ভেবেছিলাম বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি করে ওদের সার্প্রাইজ দিতে।কিন্তু আপনাদের সাথে এতো বিশ্রি একটা ব্যাপার ঘটে গেলো।আমি শাফিনের থেকে সবই শুনেছি।যে ঘরে ছোট মেয়ে ধর্ষিতা সেখানে বড় মেয়েকে আমার একমাত্র ছেলের বউ করা আমার সম্ভব না।”
এটা শুনে রাহিয়া রাগে ফেটে পরলো।
“এই আপনি কেমন মহিলা হ্যা।আপনার মধ্যে কি কোনো মানবিকতা নেই।আপনি কি আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবেন না।আমি ই আপনার ছেলেকে বিয়ে
করবোনা।এখনি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। ”
রাহিয়ার কথা শুনে শাফিনের মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
“বেয়াদব মেয়ে।না আছে রুপ না আছে গুন।আমার ছেলেটাকে যে কিভাবে ফাসিয়েছো তা আমার বুঝা হয়ে গিয়েছে।” বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেলো সে।
রাহিয়ার দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখলো তাহিয়া দাড়িয়ে আছে।তার বুঝতে বাকি রইলোনা যে তাহিয়া সব শুনে ফেলেছে।
রাহিয়া যে তাহিয়ার কাছে আসবে তাহিয়া সাথে সাথে দরজা আটকে দিলো।
রাহিয়া ওর বাবা মা নক করেই যাচ্ছে কিন্তু তাহিয়া দরজা খুলছেনা। রাহিয়া কিছু না পেয়ে সাহেরকে ফোন দিলো।সাহের দ্রুত রাহিয়ার বাসায় এলো। এক প্রকার দরজা ভেঙেই তারা ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকে যা দেখলো তা দেখে রাহিয়ার আত্না কেঁপে উঠলো…….
চলবে…….
(যারা যারা আমার এই গল্পটাকে সাপোর্ট করছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।)