#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৩
পুতুল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে,তার দৃষ্টি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা ছেলেটার দিকে,অর্থাৎ ‘সিজান’!সিজান বসে বসে ফোনে গেম খেলছে,পুতুলের আসার শব্দ শুনে সিজান সিঁড়ির দিকে তাকায়,পুতুলকে নামতে দেখেই তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কপাটি বের করে হাসি দেয়,তারপর চোখ না সরিয়ে ওভাবেই তাকিয়ে থাক।
এদিকে এক ধ্যানে এভাবে তার দিকে কাউকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ইতস্ত বোধ করে পুতুল।এখন ঘুরে যাওয়ারো কোনো উপায় নেই,পুতুল কি করবে ভেবে ভেবে সিঁড়ি দিয়ে নেমে অন্যদিকে যেতে,থাকে,সিজান তা লক্ষ করে পেছন থেকে পুতুলকে ডাক দেয়,পুতুল থেমে যায়।’এই ভয়েই আছিলো সে,ধুর এখন কি বলবে?’ পুতুল আস্তে আস্তে পেছনে ঘুরে,সিজান আবার বলে,
-হেই বার্বি গার্ল!ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
পুতুল সিজানের দিকে ঘুরে,হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
-ওইযে ওখানে আন্টির কাছে যাই।
-কোথাও যাওয়া দরকার নেই এখানে এসে বস গল্প করি।
-না না আমি আন্টির কাছে যাই আন্টি হয়তো আমাকে ডেকেছে,
-তোমার আন্টি এখন বাসায় নেই,তোমাকে ডাকেও নি।তুমি এইসব কথা বাদ দিয়ে এখানে আসো।
পুতুলের বাধ্য হয়ে যেতে হয়,সিজানের থেকে অনেকটা দুরত্ব নিয়ে বসে।
-আরে এতো নার্ভাস ফিল করছো কেনো।ইতস্ত হওয়ার কিচ্ছু নেই,বস এখানে দেখো আলিয়া নাস্তা দিয়ে গিয়েছে তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।বাই দা ওয়ে,আমি সিজান নাম হয়তো শুনেছো তখন!আমি সামিরের ফ্রেন্ড এ বাড়ির সবাই আমাকে চিনে,আসলে সামির আমাকে বেশি বিশ্বাস করে তাই একটা কাজ দিয়েছিলো করতে,কিন্তু আমি কাজটায় সাকসেসফুলি হতে হতেও হতে পারি নি।তাই ও আমার উপর বর্তমানে অনেক রাগ করে আছে,তার জন্য এখানে আসতে হয়েছে।কিন্তু ও তো আমকে পাত্তাই দিচ্ছে না।এখন কিভাবে রাগ ভাঙানো যায় বলো তো কিউটি।
-আপনি আমাকে উনার রাগ ভাঙানোর টিপস নেওয়ার জন্য এতো সিরিয়াস ভাবে ডেকেছেন?
-হুম!আমি জানি তুমি পারবে প্লিজ।
পুতুল অবাক হয়,পাগল টাগল হয়েছে নাকি ছেলেটা আমি এ বাড়িতে আসলামি মাত্র এক দিন আমি কিভাবে এদের রাগ সম্পর্কে জানবো?
-না না আপনি ভুল ভাবছেন আমি তো এ বাড়িতে আসলামি কিছুক্ষণ হলো আমি কাউকে তেমন চিনিও না আমি কিভাবে..!
-আচ্ছা এটা নায়হ পারবে না,আমাকে হেল্পতো করতে পারবে?
-হুম পারলে অবশ্যই করবো ভাইয়া।
-থ্যাংকস!এই ওয়েট ওয়েট কি বললে?
-কেনো,বললাম আমি আপনার হেল্প করবো।
-না না তার পরে কি বললে?
-ভা ভাইয়া!
-What??are you kidding me?একটা বয়ফ্রেন্ড এর বয়সি ছেলেকে তুমি ভাইয়া বলছো?সিরিয়াসলি!
-না মজা কেন নিবো?
-অবশ্যই মজা নিচ্ছো!আর যাই হোক ভাইয়া ডাকবে না ওকে,তোমার মতো একটা বার্বি ডলের মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা এই দিলে লাগে দিলে।
নিজের বুকে হাত দিয়ে যন্ত্রণার মতো এক্টিন করে বলল সিজান!(ওভার এক্টিং এর দোকানদার)
-তাহলে কি ডাকবো?
-তোমার ইচ্ছে,’But without vaiyaa’
-আপু ডাকি?
-মজা নিচ্ছো!
-অবশ্যই না।
-না অন্য কিছু ট্রাই করো।
-না আপুই ঠিক আছে,,
-আমি কি মেয়ে নাকি যে আপু ডাকবে?
-কেন কোথাও কি এগ্রিমেন্ট সাইন করে লিখে দিছে নাকি যে মেয়ে হলেই শুধু আপু ডাকা লাগবে ছেলেদের না?
-না তেমন কিছু না,তবুও!
-কোনো তবুও টবুও না আমি আপনাকে আপু বলবো না হয় ভাইয়া,এখন আপনার ডিসিশন!
-আচ্ছা থাক আপুই ডেকো,তবুও ভাইয়া না।
-ওকে,আপুউউউউউ!
-ইজ্জতের ফালুদা!
সিজানের কথা শুনে পুতুল খিল খিল করে হেসে দেয়,সিজান পুতুলের হাসি দেখে বুঝতে পারে সে খুব মজা পেয়েছে,সিজানো কিছুটা হেসে বলে?
-হেপি?
-হুম!
সিজান এইবার আবার এক্টিং করতে করতে পুতুলের কাছে এসে বলল,
-তুম খুশ তো মেভি খুশ মেরি জান।
পুতুল সিজানের হুট করে এগিয়ে আসা দেখে ভরকে যায়,তারপর সিজানের কথা শুনে আবার হেসে দেয়।সিজানো হাসে,এমন সময় সামির নিচে নামে,তার চোখের দৃষ্টি এদের দু জনের দিকেই,কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে,সামিরকে দেখে সিজান আবার তার যায়গায় এসে পরে।পুতুলো চুপসে যায়,এখন বুঝতে পারে অন্য বাড়িতে এসে এরকম শব্দ করে হাসাটা ঠিক হয় নি।সামির এসে তাদের পাশের সিঙ্গেল সোফাটায় বসে,দুজোনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,সিজান নির্বিকায় সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে,পুতুল তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সামির কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর পুতুলকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর স্বরে বলে,
-তোমাদের বাসা থেকে তোমার সব বই খাতা এনেছি,কালকে থেকে স্কুলে যাবে।
পুতুল কোনো উত্তর দেয় না শুধু মাথা দুলায়,সামির ফোন চালাতে থাকে।আবার সব নীরব হয়ে যায়,কিছুক্ষণ পর সিজান পুতুলের দিকে তাকায় পুতুলও সিজানের দিকে তাকিয়ে সামিরের সাথে কথা বলতে বলে,,সিজান সোজা হয়ে বসে,হালকা কেশে ধীর স্বরে বলে,
-সামির!
সামির সিজানকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে উচ্চ স্বরে আলিয়াকে ডেকে বলে,
-আলিয়া কফি নিয়ে আয়।
ওপাশ থেকে আলিয়া ‘আসতেছি’ বলে।এদিকে সিজানকে এমন সরাসরি ইগনোর করা দেখে পুতুলের খুব হাসি পায়,কিন্তু বহু কষ্টে তা চেপে রাখে,হাসি লুকানোর জন্য পুতুল ঠোঁট কামরে ধরে।সিজান প্রথম বার কিছু মনে করে না সে জানতো এমনটাই হবে,সে আবার বলে,
-সামির!
এইবারো সামির আলিয়াকে ডেকে উঠে,
-আলিয়া জলদি নিয়ে আয়।
এখন যেনো পুতুল আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না ফস করে হেসে দিলো,ফলে সামির সিজান দুজনেই তার দিকে তাকায়।পুতুল সেটা খেয়াল করে নিজের দু হাত দিয়ে নিজের মুখ আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে রাখে,সামির চোখ ঘুরিয়ে নেয়।সিজান পুতুলের দিকে করুন চোখে তাকায়,পুতুল আবার চুপ হয়ে যায়।আলিয়া সামির আর সিজানের হাতে কফির মগ দিতে দিতে বলে,
-পুতুল তোমাকে খালা ডাকতেছে,
পুতুল যেনো জান ফিরে পায়,এতক্ষণ এই দুই ছেলের মাঝ খানে থেকে প্রাণ যেতে যেতে এসে পরেছে।পুতুল সিজানকে “আমি যাই” বলেই দেয় দৌড়।পুতুল যাওয়ার পর সামির কফি খেতে থাকে,সিজান বলে,
-ওর সামনে এরকম না করলেও পারতি।
-কেন আমি এসে কি তোদের ডিস্টার্ব করলাম?
-ধ্যাত!দোস্ত প্লিজ এইবার লাস্ট চান্স এইবার যদি ওদেকে আমি না বের করতে পেরেছি তাহলে তুই আমাকে ত্যা’জ্য বন্ধু করে দিস তাও এখন রাগ করে থাকিস না।শুধু আমার একটা ভুলের জন্য আমি তাদের ধরতে পারলাম না,এখন তো আমি কিছুটা হিন পেয়েছি এখন আমি খুব শীগ্রই তাদেরকে ধরে তোর কাছে এনে দিবো।প্লিজ লাস্ট চান্স!
-আমি এই বিষয় নিয়ে এখন কথা বলতে চাচ্ছি না।নাও এখন তুই যেতে পারিস।
-প্লিজ দোস্ত এমন করিস না।
-আচ্ছা!তবে এটাই লাস্ট এইবার যদি না পারিস তাহলে তর খবর আছে।
-Thanks a lot.!
-আরেকটা কথা ভেবে দেখেছিস?
-কি?
সিজান একটু সতর্ক হয়ে চারো দিকে তাকিয়ে সামিরের একটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
-এই বার্বি ডলটাকে কিন্তু আমাদের কাজে লাগতে পারে।
সামিরের চেয়াল শক্ত হয়ে যায় চোখ রাঙিয়ে সিজানের দিকে তাকায়,
-ওকে নিয়ে একটা বাজে চিন্তা ভাবনা করবি তো জ্য’ন্ত পু’তে দিবো তোকে আমি।নিজে পারলে করবি না হয় হাতে চুরি পরে ঘরে চুপটি মেরে বসে থাকবি।দরকার নেই আমার কারো আমি নিজেই সব পারবো।
-আহা রেগে যাচ্ছিস কেনো,আচ্ছা বাবা ওটা বাদ,এখন নতুন কিছু ভাবতে হবে।
কফি খেয়ে সামির টেবিলে মগটা রাখে,পরনের টি শার্ট হালকা একটু সোজা করে সিজানকে ওয়ার্নিং এর মতো করে বলে,
-আর হ্যা পুতুলের সাথে বেশি মিশবিনা।
সিজানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সামির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।সিজান ভাবতে থাকে কি করা যায় এই ব্যডার জন্য তো সে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে,কিন্তু সেটা আদৌকি সবাই মেনে নিবে?
________
-ঠিক মতো নজর দারি করছো তো?
-হ সার আমি তো আপনারে সব বার্তা দেই
-হুম ঠিক আছে,
-তবে সার আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে কখন কি হইয়া যায় কইতে পারবো না।দুই দিক দিয়া আক্রমণ করলে করার কিছু থাকবো না।
-আরে তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না,আমি এমনভাবে প্ল্যান সাজিয়েছি কেউ আমাদের হাত ছাড়া হতে পারবে না।আচ্ছা এখন রাখো,,
-আচ্ছা।
ওপাশ থেকে আগেই ফোনটা কেটে গেলো।পাতলা ছাপ ওয়ালা শার্ট যার অধিকাংশ বোতাম খোলা।চেক ওয়ালা লুঙ্গী পরিহিত লোকটি আরাম করে বসলেন তার চেয়ারটিতে,তখন একজন মহিলা হাতে পানের ডিব্বা এনে সামনে রাখতে রাখতে বলল,
-আজ খুব খুশি মনে হচ্ছে সাহেবকে।
-বুঝলে আজ আমি সত্যি খুব খুশি।আর মাত্র কিছু দিন তারপর আমার এতো দিনের সপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।
-বাহহ ভালো তো।
-হুম!ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছো তো?
-ও তুমি চিন্তা করো ওদিকের কাজ হয়ে যাবে।
-হুম কাকে পাঠিয়েছি দেখতে হবে না।
বলেই তারা দু জন হেসে উঠলো।
চলবে..!
{গল্পটা কেমন ভাবে এগোচ্ছে একটু বলে যাবেন প্লিজ!}#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৪
এ বাড়িতে এসেছে প্রায় তিনদিন হয়ে গেলো।এই তিন দিনে স্কুলে গিয়েছে মাত্র একদিন,তাও ফায়াজ গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলো,আজকে আলসেমির জন্য যাওয়া হয় নি,মারজিয়া দেশে যাওয়ায় আরো আগ্রহ লাগে না স্কুলে যেতে।এর জন্য তপ্ত বকা খেতে হয়েছে বাবা ভাই সহ সামিরের কাছেও,”আচ্ছা ভাই আমাকে যদি স্কুলের জন্য বাহিরে যেতেই হয় তাহলে আমাকে অন্য যায়গায় পাঠানোর লাভ কি?তারা চাইলে তো স্কুল থেকেই ক্ষতি করতে পারে,যত্তসব আজাইরা জ্ঞান ওয়ালা মানুষ।আর ওই ইমইন্নারে যদি আমি একবার সামনে পেতাম ওর নারি ভুরি বের করে দিতাম সা’লা কেন দুনিয়াতে কি আর মেয়ে নাই আমার পিছেই পড়তে হলো।ব্যাডার জন্য এখন আমার কি কি সহ্য করতে হচ্ছে,উফফ অসহ্য!”
দুপুরে এতো এতো খাবার খেয়ে এখন পান্ডার মতো পা ছড়িয়ে আস্তে আস্তে হাঠছে পুতুল।পা যেনো চলছেই না,কি বোরিং লাগছে। হাতে আছে গোল একটা ইমোজি ডল বল!একবার এই হাতে নিচ্ছে তো আরেকবার ওই হাতে ক্যাচ করছে,এই নিয়ে প্রায় তিনবার এতো বড় করিডর রাউন্ড দেওয়া শেষ।মা বলেছে বেশি খাওয়া হয়ে গেলে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করতে,কিন্তু এতোক্ষণ হাটার পরও কেনো যে হজম হচ্ছে না আল্লায় জানে।পুতুলের হাটার মাঝেই চোখ যায় সামির হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে,দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।”সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আর তাকে দেখে দেখি নি,দুপুরেও আসে নি এখন আবার কই থেকে আসলো?এই কয়দিন তো সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতেই দেখলাম!বাহহহ”
সামির গলার টাই খুলতে খুলতে উপরে উঠছে পুতুলকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও কিছুক্ষণ থামে,সেকেন্ড পার হতেই দৌড়ে পুতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়।পুতুল সামিরকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে থাকে,সামির পুতুলকে আটকায়,তার হাত থেকে বলটা নিয়ে নেয়,সামির বেশি লম্বা হওয়ায় পুতুল তার হাত থেকে বলটা নিতে পারে না বেশি চেষ্টাও করে না।শেষে বিরক্ত হয়ে সামিরকে বলে,
-ধুর ভালোলাগতেছে না দিয়ে দেন তো মজা করিয়েন না।
সামির ভ্রু কুঁচকে তাকায়,অন্য সব সময় হলে তো এটা নিয়েই ছাড়তো।সামির হাত নিচে নামিয়ে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে তোমার,
-কি হবে কিছুনা।
_সত্যি?
-জ্বী ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া?
-তো!!!
-তোমাকে কতবার বলছি ভাইয়া বলবে না,পরে যদি ছাইয়া হয়ে যাই তখন কি হবে?
-হু ছাইয়া আর আপনি হাসালেন কিন্তু আমার এখন হাসি আসতেছে না। তাই এখন আমাকে যেতে দিন সরেন।
-দিবোনা কি করবে?
-আপনার গফ এর কথা আঙ্কেলকে বলে দিবো!!
-আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কে?
-মিথ্যা বলে লাভ নাই আমি জানি সব।
-হু চাপা!!!
-যাই হোক আমার বল দেন।
-নিতে পারলে নিয়ে নিও
বলে সামির হাত উঁচু করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো।পুতুল কিছুক্ষণ লাফালাফি করে নেওয়ার চেষ্টা করে আবার দাঁড়িয়ে গেলো ‘এতো লম্বা হওয়ার কি আছে আজব!’ সামির আরেক হাত দিয়ে পুতুলের চুল টেনে দিয়ে বলল,
-লিলিপুট।
-আর আপনি তো খাম্বা পুরা তাল গাছ,আর আমি বয়স অনুযায়ী ঠিকই আছি!এখন ভাই প্লিজ আজাইরা পেচাল পারিয়েন না দিয়ে দেন নাহলে আমাকে যেতে দিন।
-এইবার সত্যি যেতে দিতাম বাট আমার ভাই বললে তাই আর এখান থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা বাদ দাও আর এখানেই কাথা বালিশ এনে সংসার পাতার প্রিপারেশন নাও।
পুতুল মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে আবার লাফাতে থাকে বলটা নেওয়ার জন্য সে এখন আজাইরা কথা বলে এই ব্যাডার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছে না।
সামির কিছুক্ষণ পুতুলের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,হঠাৎ করে তার এক হাত দিয়ে পুতুলের বাহু উঁচু করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে,আকস্মিক এমন হওয়ায় পুতুলের চোখ মার্বেলের চেয়েও বড় বড় হয়ে যায়,পুতুলের পা মাটি থেকে প্রায় অনকটুকু উচু হয়ে আছে পুতুল ছটফট করছে সামির চোখ বন্ধ করে আছে।পুতুল সামিরের দুই কাধে হাত রেখে তাকে ঠেলে সরে আসে,সামির চোখ খুলে।সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই সে বুঝতে পারে সে কি করেছে।সামির তার হাত আগলা করে দেয়,পুতুল ধপাস করে মেঝেতে পরে যায়,বেশি উচু থেকে পরে না কিন্তু ব্যথা পেয়েছে।পুতুল চিল্লিয়ে উঠে সামির পতুলের কাছে এসে বলে,
-সরি সরি আমি বুঝতে পারি নি সরি!
সামির পুতুলের মুখের সামনে এসে বসতেই পুতুল তার সব ব্যথা ভুলে দু হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে,সামির হাসে।সে দাঁড়িয়ে যায় এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাত পুতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-এতো ঢং না করে উঠো।
পুতুল হাত না বাড়িয়ে ওভাবেই থাকে,সামির একটা শ্বাস নিয়ে নিজেই টেনে পুতুলকে ওঠায়।তার হাতে বলটা দিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়।পুতুলের হাত অটোমেটিক ঠোঁটে চলে যায়, ‘কি হলো?’
কতেক মুহূর্ত আগের কথা মনে পড়তেই নিজের মাথায় নিজেই চাপর দেয় পুতুল।লুচু বেডা চুমু দিলো কেনো?পুতুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো।
হাতে চিপস নিয়ে আলিয়ার সাথে বসে বসে গল্প করছে পুতুল!চিপস খাচ্ছে কম হাসছে বেশি।কারণ হচ্ছে আলিয়া ও ওর গ্রামে কি কি ঘটেছি তা সব বলছে,পুতুলেরো খুব ভালো লাগছে সেও আগে সন্ধ্যা বেলা বাগানে গিয়ে ফল চুরি করতো,গাছে বসে বসে খেতো কত মজা ছিলো।
কথা বলার এক পর্যায়ে কোথা থেকে টুপ করে সিজান এসে পুতুলের পাশে বসে,পুতুল অবাক হয়।সেদিনের পর থেকে তার ছায়াও এ বাড়িতে দেখে যায় নি,আজকে হটাৎ?পুতুল হাত দিয়ে হাই দিয়ে বলে,
-হেইই আপু
-হ্যালো বার্বি ডল!!!কেমন আছো।
বলতে বলতে সিজান পুতুলের একদম পাশ ঘেঁষে বসে,সিজান পুতুলের হাত থেকে চিপসের প্যাকেটটা টান দিয়ে নিয়ে খেতে থাকে।
-আ আ আমার চিপস
-ওমা একটু চিপস ই তো খেয়েছি এতো চিল্লানোর কি আছে?
-তাই বলে সব খেয়ে ফেলবেন?
-আছেই তো দুটো।
-না আমার ওই দুটোই লাগবে,
বলেই আবার দুজন ধস্তাধস্তি করতে থাকে,কিন্তু যা হওয়ার তাই হলো,আবার এন্ট্রি নিলো সামির!কিন্তু তখনো পুতুল সিজানের হাত থেকে চিপস নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পুতুল,সামির পুতুলকে ধমক দিয়ে বলে,
-মন কোথায় থাকে তোমার এতো করে ডাকছি শুনো না?ফোন কোথায় রেখেছো,তোমার বাসা থেকে এতো কল দিচ্ছে দেখো নি?তোমার কলের শব্দে পাশের রুমের থেকে আমার ঘুম ভেঙে গেছে আর তুমি টের পাওনা?
হঠাৎ করে এরকম চেচিয়ে উঠায় ভয় পেয়ে যায় সেখানের উপস্থিত সকলেই,পুতুল আমতা আমতা করে বলে।
-ফোন তো ঘরে রেখে আসছি।
-তো এখনো এখানে কি করো যাও ঘরে গিয়ে কল রিসিভ কর।
পুতুল ঠোঁট উল্টিয়ে ঘরে চলে যায়, “আজব নিজে যখন সেখান দিয়ে আসছেই তাহলে ফোনটা নিয়ে আসলে কি হতো?’
পুতুল ঘরে এসে দেখে সত্যি বিছানার উপরে পরে থাকা ফোন বাজছে,পুতুল তাকিয়ে দেখে ভাবিপু কল দিয়েছে।সে রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু না বলতে দিয়ে বলে,
-কি হয়েছে এতো বার কল দিচ্ছো কেনো?
শ্রেয়া অবাক হয়,সে তো কল দিলোই এখন তাও আবার এক বার রিং হতেই পুতুল রিসিভ করে নিলো।
-কই আমি তো কল দিলামি একবার তাও তুই রিসিভ করে নিলি এতো বার কখন দিলাম?
পুতুল ভ্রু কুঁচকায়,কান থেকে ফোন সামনে এনে কল সেটিং চেক করে দেখে সত্যি কেউ কল দেয় নি।তার মানে সামির মিথ্যা বলল,কিন্তু কেনো?অপাশ থেকে ভাবির আওয়াজ আসতেই পুতুল আবার ফোন কানে নিয়ে বলে,
-না ভাবি আমি ভেবেছিলাম মারজিয়া আসলে মারজিয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে তো তাই ও বার বার কল দিচ্ছিলো আরকি..!
-তুই আবার মারজিয়াকে কবে থেকে তুমি বলা শুরু করলি?
-উফফ ভাবি এইসব কথা বাদ দাও,আর বলো কি বলবা।
-তোর খবর নেওয়ার জন্য কল করলাম,তোর ভাই অফিস থেকে মেসেজ দিয়ে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে তোকে যেনো কল দিয়ে খবর নিয়ে নেই,তারা খুব ব্যস্ত সামনে আবার ইলেকশন আসছে,অনেক ঝামেলা।বাড়িতেও সারাদিন অনেক কাজ থাকে,,আচ্ছা যাই হোক তুই ভালো আছিস তো?
-হুম গো আমি ভালোই আছি,জানো এখানের সামিয়া আন্টিটা ভীষণ ভালো এবং ফ্রেন্ডলি সাথে আলিয়া ফায়াজ আঙ্কেল তারা খুব আদর করে আমাকে।
-যাক আলহামদুলিল্লাহ,চিন্তা করিসনা ইলেকশনের পরেই তোকে আবার ফিরে আনবো এর মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে দেখিস!
-হুম!!
কথার বলার মাঝেই পুতুলের মনে হলো তার মাথার উপর দিয়ে কেমন ঝনঝন শব্দ হচ্ছে,যেটা পুরো শরীর বেয়ে নিচে পড়ছে।পুতুল ঘাবড়ে যায়,মৃদু চিৎকার দিয়ে তাকিয়ে দেখে তার হাটুর মধ্যে নানা রকমের চিপস দিয়ে ভরা,চারো দিকে তাকিয়ে দেখে বিছানার বেশিরভাগ চিপসের প্যাকেটে পরিপূর্ণ!পুতুল মুখ হা করে সামনে তাকিয়ে দেখে সামির দাঁড়িয়ে আছে,তার হাতে বড় একটা খালি ব্যাগ হয়তো এটার মধ্যেই এর সব চিপস ছিলো।পুতুল চোখ বড় বড় করে চারো দিকে তাকায়।
-কিরে কিসের শব্দ?
ভাবির কথা শুনে হুশ ফিরে পুতুলের, ‘না কিছুনা রাখি’ বলে কল কেটে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-এগুলো কি?
-চিপস?
-হুম সেটা তো আমিও জানি কিন্তু এতো গুলো আর কার জন্য?
-এই বাড়ির পেত্নীর জন্য আনবোনা অবশ্যই কারন তারা তো দু টো চিপসের জন্য ছেলেদের সাথে ধস্তাধস্তি করে না।
পুতুল এইবার বুঝতে পারে সামির তাকে খোচা মেরে কথা বলছে আর এইসব তার জন্যই এনেছে,
-মানে আমার জন্য?
-জ্বী এখন আমার সামনে,এই এক্ষুনি সব গুলো চিপস খেয়ে দেখাবেন,তারপর দেখবো আপনি দু টো চিপসের জন্য কিভাবে ঝগড়া করেন।
-আরে আজব লোক তো আপনি,ওটা তো আমি জাস্ট সিজানের সাথে মজা করছিলাম।
-ও মা আবার নাম ধরেও ডাকা হচ্ছে দেখি,
-ধ্যাত
পুতুল তার কোলের সব গুলো চিপস ফেলে উঠতে যাবে তখন আবার ফোনটা বেজে উঠে,পুতুল বিরক্তি নিয়ে দেখে ভাবিপু কল দিয়েছে,”এই বেডি আবার কল দিল কেন কিছুক্ষণ আগেই তো কথা বললাম।”
পুতুল বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে বলে,
-হ্যালো এখন আবার কি হয়েছে?
অনেক্ষন হয়ে গেলো সামির দাঁড়িয়ে আছে আর পুতুলের ভাবভঙ্গি দেখছে,এই মেয়েটাকে তো আজকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে,তাকে ভাইয়া বলে সমন্বয় করে অথচ বাহিরের একটা ছেলের সাথে কত ঢলাঢলি!এই পিচ্চিটাকে যে কবে বোঝাতে পারবো ও শুধু আমার।আমার কালো গোলাপ তার নামের,,সেই যে আমার বউ #পুতুল_বউ।
কিন্তু পুতুল সেই কখন থেকে কানে ফোন ধরে আছে তো আছেই,কোনো ‘রা’ করছে,হঠাৎ করে পুতুলের কান থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়।সামির ভ্রু কুঁচকে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,পুতুলের চোখে পানি তার পুরো শরীর কাপছে।সামির দৌড়ে তার পাশে গিয়ে বসে ধরে বলে,
-কি হয়েছে পুতুল কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে বলো?
পুতুল কাপাকাপা স্বরে অস্পষ্ট হয়ে শুধু বলে, ‘আ আব্বুউ’
-কি আব্বু কি?
-আব্বুর এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে?
-কি??আচ্ছা তুমি টেনশন করো না আমি দেখছি!
-আমি আমি আব্বুর কাছে যাবো।
-হুম নিয়ে যাবো তুমি কান্না করো প্লিজ তোমার আব্বু ঠিক হয়ে যাবে,,
-না আমি এখনি যাবো প্লিজ আমি আব্বুর কাছে যাবো।
সামির পুতুলকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসে,প্রণয়ের কাছ থেকে হসপিটালের এড্রেস নিয়ে সামিয়াকে ডেকে সব বলে,
-মা এখন আমি পুতুলকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি,আর তোমারা আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসো।আর হ্যা একটা ড্রাইভার কেউ নিবে না,এতে রিস্ক আছে।
সামিয়া পুতুলের সামনে এসে তার মুখ স্পর্শ করে বলে,
-আচ্ছা যা আমরা আসতেছি,আর পুতুল মা চিন্তা করিস না তোর বাবার কিচ্ছু হবে না।
সামির তারা দিয়ে,সোফায় বসা সিজানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তোকে ওখানে বসে সিন দেখার জন্য রাখা হয়েছে?গাড়ি বের কর ফাস্ট!
সিজান গাড়ি নিয়ে আসে,পুতুল আর সামির পেছনের সিটে বসে,পুতুল কেঁদেই যাচ্ছে।সামির কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না।
হসপিটালের সামনে আসতেই তারা নেমে যায়,পুতুল সবার আগে নেমে দৌড়ে যেতে থাকে,সামির সিজান পেছন পেছন যায়।ভেতরে আসতেই সামির সিজানকে বলে,
-তুই পুতুলকে নিয়ে তিন তোলায় যা!আমি আসতেছি।
সিজান মাথা নাড়িয়ে দৌড় দেয় পুতুলকে ধরার জন্য,কারণ পুতুল অনেকটা দূরে চলে গেছে।সামির আবার পেছন ঘুরে চলে যায়।
পুতুলকে নিয়ে সিজান তিন তোলার আসতেই দেখতে পায় আই সি ইউ রুমের সামনে সবাই বসে আছে,পুতুল ছুটে মা ভাবির কাছে যায়।পুতুলকে দেখে তার মা হু হু করে কেঁদে দেয় সাথে পুতুলও!পুতুল প্রণয়ের কাছে যায় প্রণয় একদম নিশ্চুপ কাঠ হয়ে আছে।পুতুল প্রণয়েকে জেরা করতে থাকে কি হয়েছে,কিন্তু সামির বলে না।তখন রুম থেকে একজন নার্স বের হয় পুতুল তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে বাবা কেমন আছে,নার্সটা সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,
-দেখুন আপনার বাবা কেমন আছে তা এখন আমরা ক্লিয়ারলি বলতে পারছিনা,উনাকে সর্ব প্রথম দু টো গুলি করা হয়েছে তারপর গাড়িতে এক্সিডেন্ট হয়েছে,ডক্টর এখন তার শরীর থেকে গুলি গুলো বের করছে।বাকি গুলো আল্লাহর হাতে।
আবার কান্নার রোল পরে যায় চারোদিকে,সব নীরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে সিজান।দুটো চেয়ারে বসে আছে প্রণয় আর পুতুল,প্রণয়ের কাধে মাথা রেখে কাঁদছে পুতুল!হঠাৎ প্রণয়ের ফোনে ম্যাসেজ আসে,প্রণয় পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজটুকু পরে সঙ্গে সঙ্গে আবার পকেটে পুরে নেয়,কিন্তু তার আগেই পুতুল ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজটুকু পরে।সব পরে এক পলক তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,চোখের জল মুছে নিজেকে শান্ত করে দাঁড়িয়ে যায়।প্রণয় চোখ দিয়ে ইশারা করে না করে।কিন্তু পুতুল তা না মেনে উচ্চ স্বরে বলে,
“আমি ইমনকে বিয়ে করবো”
চলবে..!
{১৭৯০+শব্দ!বেশি নেক্সট নাইস করলে কিন্তু গল্পে সেড ইন্ডিং দিয়ে দিবো বলে দিলাম}