পুতুল বউ পর্ব -১১+১২

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১১

বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে পুতুল!পাশেই পরে আছে তার স্মার্ট ফোনটি,যার উপর জল জল করছে ছোট একটি নাম।কিন্তু পুতুল ধরছে না,এই নিয়ে প্রায় ছয় বারের মতো কল দিয়ে ফেলেছে তবুও পুতুলের কোনো হেল দোল নেই। সে জানে কলে ‘ভাবিপু’ নামটা সেভ থাকলেও এখন তাকে কল দিচ্ছে অন্য কেউ,কারণ তাদের নাম্বার থেকে কল আসলে তো জীবনেও কল ধরতো না পুতুল।কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহার করেও তারা ব্যার্থ,বড্ড বেশি অভিমান করেছে সে,সে তো ভেবেই নিয়েছে ও বাড়ির আর
কারো সাথেই কথা বলবে না।কি হতো যদি আগে তাকে সব জানানো হত!তাহলে তো কোনো না কোনো ব্যবস্থা হতোই।কিন্তু শেষ সময়ে এসে সে সব জানতে পারলো এখন কোথায় এসে থাকতে হচ্ছে।

এভাবে প্রায় দশ বার কল বাজার পর বিরক্তি হয়ে ফোন রিসিভ করে পুতুল।ওপাস থেকে কোনো কন্ঠ স্বর ভেসে আসছে না,সবাই নীরব।পুতুলোও ফোন লাউডস্পিকার দিয়ে হাটুতে থুতনি দিয়ে বসে আছে,কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ এলো,তাও পুতুল নিশ্চুপ।পুরুষালী কন্ঠে কেউ হ্যালো বলতেই পুতুল চট করে কলটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়,বিছানা ছেড়ে বেলকনির দিকে যেতে নিবে তৎক্ষনাৎ হন্তদন্ত হয়ে হাতে ফোন নিয়ে ঘরে ঢুকে সামির।পুতুল সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়,সামির পুতুলের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে বলে,

-তোমার বাড়ি থেকে এতোবার কল দিচ্ছে রিসিভ করছোনা কেনো?

-আমার ইচ্ছে!!!

-মানে,তোমার ভাই তোমাকে কত বার কল দিয়েছে খেয়াল আছে?বাড়িতে সবার টেনশন হচ্ছে নাও সবার সাথে কথা বলো।

সামির তার ফোন পুতুলেএ দিকে এগিয়ে কথা বলতে দেয়।কিন্তু পুতুল ‘আমি পরে কথা বলে নিবো নি’ বলে সামিরের পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়,পেছন থেকে সামির পুতুলের হাতের কব্জি চেপে ধরে,পুতুল থেমে যায়।সামির পুতুলকে এক টানে তার একদম কাছে এনে দাতে দাত চেপে বলে,

-এই তোমার জন্য তারা কত টেনশনে আছে জানো?আর তুমি কিনা তাদের আরো ট্রেজ এর মধ্যে ফেলছো!

পুতুল সামিরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে পায়ের উপর ভর দিয়ে হালকা উঁচু হয়ে বলে,

-টেনশন থেকে মুক্তি পেতেই তো তারা আমাকে এখানে রেখে গিয়েছে এখন আবার কিসের টেনশন?

-যেটা বুঝো না সেটা নিয়ে বারতি কথা বলো কেনো তুমি?

-হ্যা আমি তো বুঝি না,কিচ্ছু বুঝিনা আমি!এই না বোঝার সুযোগে নিয়েই তো তারা আমাকে পুতুলের মতো নাচাচ্ছে,

-দেখো মেয়ে না বুঝে এই সব বাচ্চাদের মতো পাগলামো একদম করবে না,আমার সামনে তো নাই।আর হ্যা এখন আমি বারতি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না,তুমি এখন এই মুহুর্তে আমার সামনে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে।

-বলাতাম নট!কি করবেন,দড়ি দিয়ে বাধবেন?বাধেন সমস্যা নেই আমি পুতুল কাউকে ভয় পাই না, হু!

কথা বলতে বলতে পুতুল আরো সামিরের মুখের কাছে আসছিলো,সামির মুচিকি হেসে এক আঙ্গুল দিয়ে পুতুলের কপালের মধ্যেখানি রেখে দূরে সরিয়ে বলে,

-পিচ্চি!

সামিরের পিচ্চি বলা শুনে তার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে পুতুল বলে,

-একদম ফাও কথা বলবেন না বলে দিলাম,আমি পিচ্চি হলে আপনি পিচ্চির নানা উরফে আপন আন্টি মার পেটের আপন ভাই!

-ভাই বলবে না,

-আমাকেউ পিচ্চি বলবেন না,

-তো পিচ্চিকে পিচ্চি বলবোনা তো উরফি জাভেদ বলবো?

সামিরের কথা শুনে পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায় কি লুচু বেডা তার সঙ্গে উরফি জাভেদের তুলনা করছে কি সাঙ্গাতিক!পুতুল এখনো তার দিকে ডেব ডেব করে চায়েই আছে,সামির একটা হাসি দিয়ে বলে,

-এরকম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে লাভ নেই তোমার এমনি যে ছোট চোখ তাতে কিচ্ছু হয় না।

-হু আপনার থেকে আমার চোখ বড় আছে,একদম পুতুলদের মতো।আর আপনার তো পিঁপড়া চোখ একদম চায়না দের মতো হা হা!

-তার মানে কি তুমি নিজেকে পুতুলের সাথে তুলনা করছো?

পুতুল তার পড়নের ফ্রক সহ নিজে ঘুরে ঘুরে বলে,

-এতে কোনো সন্দেহ আছে?

-তোমাকে দেখে তো একটা হাতি ছাড়া কিছুই লাগছে না আমার।

সামিরের বলা কথা শুনে পুতুল ঘোরা বন্ধ করে ফ্রক থেকে হাত ছাড়িয়ে ঝাটকা মেরে বলে,

-এমনিতেও আপনার চোখ নেই,তাও বলছি আপনার চোখের প্লাস্টিক বদলান।

-সেটা আবার কিভাবে বদলায়?

-আমি করে দেখাবো?

পুতুলের শয়তানি মার্কা হাসি দেখে সামিরের সন্দেহ হয় তাই সে কথা কাটার জন্য বলে,

-যাই হোক এমনি তেও অনেক লেট হয়ে গিয়েছে নাও এখন তোমার ভাইকে কল দিয়ে কথা বলো ওরা টেনশন করছে,

কিন্তু পুতুল সামিরের কথা শুনে না,’কথা বলতাম নট’ বলে দৌড়ে ঘর থেকে চলে যায়।সামির পুতুলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে,সে বুঝে যায় এই মেয়ে এখন কারো কথা শুনবে না,একে অন্য পদ্ধতিতে কথা বলাতে হবে তবে এখন তা সম্ভব না।

সামির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে যায়,ঘরে এসে শুধু পুতুলের অবিধান চোখে ভাসছে,

“আচ্ছা আসলেই কি ওই মেয়েটা পুতুলের মতো?প্রণয়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম যখন পুতুল জন্ম নেয় তখন নাকি সে ঠিক বেবি পুতুলের মতো দেখতে হয় একদম গুলুমুলু।সবাই বেশ অবাক হয়েছিলো একটা বাচ্চার একরম মহনীয় সৈন্দর্য দেখে,তখন সবাই মিলে তার নাম ‘পুতুল বিনতে আরাফ’রাখে,সবাই ভেবেছিলো বড় হয়ে হয়তো একটু পরিবর্তন ঘটবে,কিন্তু আস্তে আস্তে যত বড় হয় তত যেনো তার সৈন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।আসলেই তো তার চোখ গাল নাক নরম নরম হাত এমন কি পা সব তো তার দেখা একটা পুতুলের মতোই।”

এগুলো ভাবতে ভাবতেই সামির আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তখন তার চোখ যায় তার চোখের দিকে,সে ভাবতে থাকে

‘আসলেই কি তার চোখ বেশি ছোট,চায়নাদের মতো?কই আমার চোখ তো আমার আম্মুর মতো হয়েছে,শুনেছি আব্বু নাকি আম্মুর চোখ দেখে প্রেমে পড়েছে।কই আমি তো এই চোখ দিয়ে বড় বড় জিনিস ও দেখতে পারি তাহলে এই মেয়ে এটা কেনো বলল যে আমার চোখ নাই?’

হঠাৎ করে এইসব আজগুবি কথা মাথায় আসায় নিজে নিজেই খুব বিরক্ত হচ্ছে সামির।এতো কেন ভাবাচ্ছে ওই মেয়ের আজাইরা কথা গুলো।সামির সব চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলে শাওয়ার নিতে চলে যায়।

🌼

পুরো ড্রয়িং রুম ফাঁকা।একটা স্টাফ তো কি কোনো গার্ডের ও দেখা নেই আজ,বাড়ির ভেতরের কথা তো বাদি দিলাম বাহিরেও দু একজন গার্ড ছাড়া কেউ নেই,যেখানে সে সারাদিনে দেখে আসছে প্রায় ত্রিশ জনের মতো মানুষ থাকে আজকে সব কই গেলো?পুতুল একা একা ঘুরে খুব বোর হচ্ছিলো,এখন ঘরে যেতেও মন চাচ্ছে না,ঠোঁট উল্টিয়ে ধপাস করে পাশের সোফায় বসে পরে,কি করবে বুঝতে পারছে না,টিভি দেখবে কিন্তু রিমোট কই?চারোদিকে চোখ ঘুরিয়ে কোনো যায়গায় রিমোটের অস্তিত্ব না দেখে সেখানেয় গালে হাত দিয়ে বসে থাকে,একটু পর সেখানে সামিয়া আসে পুতুলকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে তার কাছে এসে বলে,

-একি পুতুল তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেনো?আমাকে বা আলিয়াকে ডাকতে পারতে আর সামিরকে তো তোমার কাছে পাঠালাম।

-না না সমস্যা নেই আমি এমনি নিচে আসলাম।

-ও আচ্ছা বিকেল তো হয়েছে আমাদের বাগানে যাবি?তোদের মতো হয়তো এতো বড় বাগান না তবে আমার ছেলে খুব যত্ন করে সেটা বানিয়েছি চল ঘুরে আসি।

বাগানের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে,কিয়ৎক্ষণ বাদ রাজি হয়ে যায়।সামিয়া পুতুলকে সাথে করে বাগানের দিকে যায়,বাগানে ঢুকতেই সবার আগে পুতুলের কালো গোলাপ গাছের দিকে নজর যায়।’আসলেই তো গাছটা তো আগের থেকে অনেক সচ্ছ হয়েছে আবার ফুল গুলো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।’

পুতুল হা করে তাকিয়ে থাকে গাছের দিকে,সামিয়া সেটা খেয়াল করে মুচমি হেসে পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-সুন্দর না গাছটা?এই কয়দিনে যেনো আরো তাজা হয়ে গেছে ফুল গুল,সামির কাউকে এই ফুল ছিড়তে তো দূর ছুতেও দেয় না,এমনি আমাকেউ না।কেনো দেয় না সব আমার অজানা।ছোট বেলায় সামির এবং আমার আরেক মেয়ে সাজি আর তার দাদু মানে আমার শশুর তার বন্ধুর কাছ থেকে এই গাছের চারা কিনে লাগায়,সাজি আর তার দাদুকে সামির খুব ভালোবাসতো।কিন্তু নির্বাচন এর সময় আকস্মিক সামিরের দাদু আর আমার মেয়ে সাজি কার এক্সিডেন্টে মারা যায়।তখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো আমার ছেলেটা,খুব একা হয়ে উঠেছিলো।তার জন্য অনেক খেলার সাথী দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলো তোর আঙ্কেল কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয় নি তাদের ফেরত যেতে হয়েছে।তার ভালোবাসার দুটো মানুষকে যেনো সে ভুলতে পারে নি,তখন থেকেই এই গাছটা তার সঙ্গী হয়ে উঠে।সে মনে করতো এই গাছের সাথেই সাজি আর তার দাদুর অস্তিত্ব মিশে আছে,সারাদিন এই গাছের সাথে বসে একা একা কথা বলতো।সামির যখন স্টাডির জন্য ইতালি যায়,তখন আমাকে পই পই করে বলে রেখেছিলো বাগান মরে গেলেও এই গাছটার যেনো কিচ্ছুটি না হয়,এবং এই গাছের যত্ন নেওয়ার সম্পুর্ণ দায়িত্ব আমাকে দেয়।অনেকজন এই গাছের ফুল চুরি করতে এসেছিলো কিন্তু কেউ তা পারে নি।আরেকটা কথা কি জানিস তুই এখন যে ঘরে থাকিস সেটা আমার মেয়ে সাজির ঘর ছিলো খুব শখ করে সে তার ঘর সুন্দর করে সাজিয়েছিলো কিন্তু আফসোস একদিনো সে ওই ঘরে ঘুমোতে পারে নি তার আগেই আমার মেয়েটা না ফেরার দেশে চলে গেলো।

‘পুতুল সামিয়ার কথা শুনে বেশ অবাক হয়,তার মানে ওনাদের আরেকটা মেয়েও ছিলো?এর জন্য সামির এই গাছটাকে এতো ভালোবাসে।’পুতুলেরো কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগে পুতুল মাথা নিচু করে থাকে কি বলবে বুঝতে পারে না।সামিয়া তার চোখের পানি মুছে হালকা হেসে পুতুলের হাত ধরে বলে,

-বাদ দে আল্লাহ যা ভাগ্যে লিখেছিলো তাই হয়েছে,এখন চল তোকে পুরো বাগান ঘুরে দেখাই।

সামিয়া পুতুলের হাত ধরে পুরো বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাতে থাকে পুতুলেরো খুব ভালো লাগে,কিন্তু বাগানের গেইটের সামনে আসতেই পতুল হাতে লাঠি নিয়ে গেইটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দারোয়ানকে দেখতে পায়,দারোয়ান ও পুতুলকে তাদের মেম এর সাথে দেখে বেশ চমকে যায়,হাতের লাঠি পুতুলের দিকে তাক করে বলে,

-এই মেয়ে তুমি আবার ফুল চুরি করতে এসে গেছো।ওইদিন না ধরা খেলে,মেম মেম এই তো সেই ফুল চুরি করতে আসা মেয়ে।

দারোয়ানের কথা শুনে সামিয়া অবাক হয়ে পুতুলের দিকে তাকায় পুতুল ভয়ে চুপসে যায়।সামিয়া কিছু একটা ভেবে দারোয়ান কে বকা ঝকা দিয়ে ভুল ধারনা বলে পুতুলকে সেখান থেকে নিয়ে আসে,পুতুল হাফ ছেড়ে বাচে,সামিয়া পুতুলকে কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে বাড়ির গেইটের সামনে এনে বলে,

-পুতুল তুই দাড়া।আমি বাসা থেকে পানি নিয়ে আসি বাগানে পানি দিতে হবে।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়,সামিয়া ভেতরে চলে যায়,পুতুল এদিক ওদিক তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে,তখন পেছন থেকে কে যেনো ডেকে উঠে।পুতুল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে অচেনা কেউ সে তাকে চিনেনা।

চলবে..!

{১৬০০+শব্দ কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন,গল্প সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করবো ধন্যবাদ!}#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১২

-হেই পিচ্চি কে তুমি?

পুতুল ভয় পেয়ে যায়,সে এখনো পেছনে ঘুরে দেখে নি লোকটা কে,কিন্তু কন্ঠ স্বর শুনে মনে হচ্ছে কোনো পুরুষ।শুক্ন একটা ঢক গিলে,তখন আবার পেছন থেকে সেই লোকটাই বলে উঠে, “হ্যালো” পুতুল এইবার ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকায়,দেখে লম্বা একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে,পুতুলকে দেখে মুখ একদম হা হয়ে যায়,পুতুলও এতো সুন্দর ছেলে দেখে অবাক হয় এটা কি এই বাড়ির গার্ড নাকি?নাহ গার্ডরা তো এমন থাকবে না,তাহলে কি এটা ইমনের লোক না তো,আমাকে ধরতে এসেছে?নিয়ে যাবে আমাকে,ওরা জানলো কিভাবে।

পুতুল প্রচন্ড রকমের ভয় পায়,চোখ ওই ছেলেটার কাছ থেকে সড়িয়ে আবার সামনে ঘুরে যায়,তখনি পুতুলের মুখের সামনে সামির এসে দাঁড়ায়,পুতুল ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে উল্টিয়ে পরে যেতে নেয়,কিন্তু সামির কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে ওই ছেলেটা পুতুলকে কমড় জরিয়ে ধরে নেয়,পুতুল পরতে পরতে বাঁচে হাত খামচে ধরে ওই ছেলেটার পরনের আকাশি রঙের শার্ট।ফলে উপরের দু বোতাম ছিড়ে যায়,সেদিকে খেয়াল নেই ওই ছেলেটার সে তো হা করে তাকিয়েই আছে পুতুলের দিকে,পুতুল এইবার নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করে,কিন্তু ছেলেটা এমন ভাবে তার কমড় চেপে ধরে না পারছে নরতে না পারছে কিছু করতে।

পুতুল ছুটাছুটি করছে কিন্তু নিজেকে ওই ছেলের কাছ থেকে ছাড়াতে পারছে না,এদিকে ওই ছেলেটা হা করে পুতুলকে দেখেই যাচ্ছে।সামির এদের এই অবস্থায় দেখে প্রচন্ড রকমের রেগে যায়,তখন তার চোখ যায় পুতুলের কমড়ের দিকে,যেখানে পুতুলকে চেপে ধরে আছে ছেলেটা।সামির পুতুলের হাত ধরে এক টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে নেয়,পুতুল যেনো হাফ ছেড়ে বাচে।সামিরের বুকে হালকা করে মাথা দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়,যেনো জান ফিরে পেয়েছে।সামির পুতুলকে সাইডে রেখে ছেলেটাকে বলতে থাকে,

-কি করছিস তুই?

ছেলেটা এইবার থতমত খেয়ে যায়,নিজের গালে নিজের থাপ্পড় দিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলে,,

-ওহহ সরি সরি,তুমি ঠিক আছো তো বার্বি গার্ল!

পুতুলের উত্তর দেওয়ার আগেই সামির বলে,

-ও ঠিক আছে,তুই আগে বল এই সময়ে এখানে কি করিস?

-ধুর এখানে সেখানে পড়ে বলা যাবে,আগে এনার সাথে পরিচয় হয়ে নি! hey I’m sizan!

বলে হাত বাড়িয়ে দেয় পুতুলের দিকে,পুতুল হাত না বাড়িয়ে নিজের হাত কচলাতে থাকে,কি করবে বুঝতে পারছে না,পুতুলের কোনো রেসপন্স না পেয়ে সিজান আবার বলে,

-And you?

পুতুল তখনো কিছু বলে না,সামির সিজানের হাতের সাথে হাত মেলায়,সিজান ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি দেয়।তখন পেছন থেকে সামিয়া পুতুল কে ডাকতে ডাকতে আসে,সামিয়া পুতুলের সামনে এসে বলে,

-কিরে পুতুল তোকে কত করে ডাকলাম শুনিস নি?

পুতুল মাথা নাড়ায়,যার অর্থ সে শুনে নি।এতক্ষণে সামিয়া সিজানকে লক্ষ করে,হাসি মুখে বলে,

-আরে সিজান বাবা কখন আসলি?

সামিয়া সিজানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে পুতুলের দিকে একদম হা করে তাকিয়ে আছে,আর পুতুল মাথা নিচু করে আছে,সামিয়া একবার সিজানের দিকে তাকায় আরেকবার পুতুলের দিকে,তিনি আবার বলে উঠে,

-কিরে?

সিজান এইবার পুতুলের থেকে চোখ সরিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে,মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলে,

-আ আন্টি!আসসালামু আলাইকুম।আমি ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?আসলে এইতো এখনি আসলাম আন্টি,আঙ্কেল ভালো আছে?

সিজানের এমন উল্টাপাল্টা কথা শুনে সামিয়া ফিক করে হেসে দেয়,পুতুলেরো খুব হাসি পায় কিন্তু কোনো রকম চেপে রাখে,সামিয়ার হাসি দেখে সিজান বুঝতে পারে সে কিসের মধ্যে কি কথা বলে ফেলেছে,তার মাথা পুরো গেছে।সামিয়া কিছুক্ষণ হেসে আবার সেই হাসতে হাসতেই বলে,

-ওয়ালাইকুম সালাম!আমি ভালো আছি তোর আঙ্কেলও ভালো আছে,,

সিজান হালকা হাসার চেষ্টা মাথা চুলকায় আবার পুতুলের দিকে তাকায়,সামির এইবার বিরক্তি নিয়ে সামিয়ার উদ্দেশ্য বলে,

-মা এই ফাজিলকে ভালো হতে বলো আর কিসের জন্য এখানে এসেছে সেটা জিজ্ঞেস করো।পুতুল আসো,,

পুতুল কিছু বোঝার আগেই সামির পুতুলের পেছনের কলার ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়,পুতুল ছটফট করছে পা এদিক ওদিক করছে কিন্তু সামিরর থামছে না।আবার এতো দ্রুত হাঠছে যে পুতুল তাল মেলাতে পারছে না।

এদিকে সিজান তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে,সে তো খুশি হয়ে গেছে ”her name putul,yeah i see” কথাটা বিড়বিড় করে বলে মুচকি মুচকি হাসে,সামিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

-কিরে কোন ধ্যানে গেলি?

-হে না না কিছুনা,সামির আমাকে পাত্তা দিলো না কেন?

-তোর সাথে রাগ করে আছে,

-আমি কত বার সরি বলেছি।

-আচ্ছা ভেতরে যা যেয়ে কথা বলে দেখ কি বলে,

সিজান এইবার সতর্ক ভাবে চারো দিকে তাকিয়ে সামিয়ার কাছে এসে আস্তে করে বলে,

-আচ্ছা আন্টি কেসটা কি বলো তো এই বেবি গার্লটা কে?

-হুম সেটা নায়হ তার কাছ থেকেই যেনে নিস।

-উম তোমার ছেলে যে! উলটো আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখবে,বলো না কে?

-চেয়াম্যান এর মেয়ে!

-এই পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানটা?

-হুম!

-ও মাই বার্বি ডল ওনার মেয়ের নামের অনেক প্রসংশা শুনেছি আমি।কিন্তু দেখা হয় নি কখনো,অনেক সুন্দর শুনেছিলাম।কিন্তু এতো কিউট হবে ভাবতেই পারি নি পুরো বেবি ডল!কিন্তু ও এখানে কি করে?

-সেটা পরে বলবো নি তুই এখন ভেতরে যা,আমি একটু আসছি!

-ওকে কিউটি পাই!

সিজান একবার তার শার্টের ছেড়া বোতামের অংশে তাকায় তারপর শার্টা একটু উপরে টেনে চোখে সানগ্লাস পরে সেই ভাব ভেতরে যায়।

সামির পুতুলকে টেনে তার ঘরে নিয়ে যায় পুতুলকে ছেড়ে দিতেই,পুতুল তার ঘারে হাত দিয়ে বলে,

-আহ ঘারটা গেলো রে,একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে ঘার ধরে টেনে আনতে আপনার বাঝলো না?

-ঘারের রগ বাকা থাকলে তো ব্যথা পাবেই!

-মানে?

-তোমাদের বাসায় কল দিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম বলেছিলে?

-বললাম তো পরে বলে নিবোনি।

-ওই পরে আর কখন আসবে?

-আমি বলতে বাধ্য নই!

বলে মুখ ভেংচি দিয়ে ঘুরে যেতে থাকে পুতুল,কিন্তু তখন সামির আবার পুতুলের হাত ধরে সামনে এনে দাড় করায়,

-তুমি কথা বলবা না?

-NO

-দড়িটা কই রাখলাম

-আমি কি ভয় পাই নাকি?

-ওহহ আচ্ছা তাই?

-জ্বী!!

সামির এইবার পুতুলের দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,পুতুল ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।সামির তার আরেক হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে প্রণয় কে কল দেয়,এদিকে পুতুল হাত ছুটানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,উল্টো আরো নিজে ব্যথা পাচ্ছে,মনে হচ্ছে এখনো হাতের হাড্ডি ভেঙে গুড়ি গুড়ি হয়ে যাবে।চেয়াল শক্ত করে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যার্থ!সামির তার কানে ফোন দিয়ে বলে,

-রিং হচ্ছে কথা বলো।

-বলবো না,

-শুধু শুধু কি তোমাকে ঘাড়ত্যাড়া বলি?এখন বেশি কথা না বলে বাড়ির প্রত্যেক মানুষের সাথে কথা বলবে,না হলে তোমাকে আজকে ছাড়ছিনা।

পুতুলের জান যায় যায় অবস্থা!অবশেষে আর না পেরে হার মানতে হয়,কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর প্রণয় কল ধরে অস্থির স্বরে বলে,

-হ্যালো সামির,পুতুল কই?ওকে বলো নাই কল দিতে,ও কেমন আছে এখন।

পুতুল চুপ করে থাকে৷ কিছু বলে না,সামির ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়।ইশারা করে কথা বলতে,কিন্তু পুতুল তাও কিছু বলে না,ওদিক দিয়ে প্রণয় হ্যালো হ্যালো করতেই থাকে।পুতুলকে কোনো রেসপন্স দিতে না দেখে সামির আরেকটু জোরে হাতে চাপ দেয়,এইবার পুতুল হ্যালো বলে ওঠে।পুতুলের কন্ঠ শুনে ওপাশ থেকে প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর কাপাকাপা স্বরে বলে,

-কাঠপুতুল!

পুতুল আবার চুপ হয়ে যায়,ভাতরের কান্না গুলো সব দলাপাকিয়ে আসছে,’যে নামটার জন্য তার ভাইয়ের প্রতি বিরক্ত হতো সেই নামটাই আজকে শুনে মনে হচ্ছে কত বছর পর শুনলাম।’মনে হচ্ছে এখনি হু হু করে কেঁদে উঠবে।সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়,কিন্তু পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে।পুতুল ভেজা চোখে একবার সামিরের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়,ওপাশ থেকে প্রণয় আবার ‘হ্যালো’ বলে উঠে।পুতুল একদম নিচু স্বরে বলে,

-হুম

-কেমন আছিস?

-হুম ভালো!!

-রাগ করেছিস?

-উহুম!!

-তোর কি ওখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে?

-না!!

আবার দু জন নিশ্চুপ হয়ে যায়,এভাবে প্রায় কয়েক মিনিট পার হয়ে যায়,আবার প্রণয় বলে,

-পুতুল!

এইবার পুতুল কান্নারত স্বরে বলে উঠে,

-ভাইয়া,ভাইয়া আই মিস ইউ ভাইয়া।

-মিস ইউ টু রে,,

এভাবে প্রায় দের ঘন্টার মতো বাড়ির সবার সাথে কথা বলে পুতুল।সারা ঘর পায়চারী করে করে কথা বলেছে,মনে হচ্ছে এক দিন হয় এক যুগ পর কথা বলছে।এদিকে সামির তো গালে হাত দিয়ে একবার সোফায় তো একবার বিছানায় বসছে,কথা বলা শেষ হলে পুতুল সামিরের সামনে এসে তার হাতে ফোন দেয়,সামির তার ফোন পকেটে রাখতে রাখতে বলে,

-কথা বলবে না বলে এখন প্রায় দের ঘন্টা কথা বললে।

-আমার হাতের তো হায়াত শেষ করেছেন।

-আমি একটু ধরেছি তাই হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে,আর ওই ছেলেটা যে কমড় ধরে শুভ দৃষ্টি করছিলো তখন বুঝি আরাম লাগছিলো?

-এই আজাইরা কথা বলবেন না তো।

-হুম সত্যি কথা বললেই আজাইরা।এখন এতো কথা বাদ দিয়ে এদিকে আসো!

তার পাশে বসার ইশারা করে,পুতুল অবাক হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে,সামির দাঁড়িয়ে যায়।সামনের ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা স্প্রে এনে পুতুলের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় বসায়,সে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পুতুলের পায়ে স্প্রেটা করে দেয়।পুতুল হা করে আছে,’ব্যথা দিল হাতে আর স্প্রে করলো পায়ে আজিব!’

চলবে..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here