পুতুল বউ পর্ব -১৭+১৮

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৭

হসপিটালে মনে হয় রোগির থেকে গার্ড এর সংখ্যা বেশি।চেয়ারম্যান সাহেবের অসুস্থতার খবর কালকে বেশি সংখ্যাক মানুষ না জানলেও আজকে ছড়িয়েছে পুরো গ্রাম।তাই তো বড় বড় পদের মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামের সকলেই চেয়ারম্যানকে দেখতে আসছে।এখানে আবার শত্রুরও অভাব নেই,তাই গত কালের থেকে আজকে গার্ডের সংখ্যা বেশি বাড়ানো হয়েছে।গ্রামের একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন তিনি তাই সবার কাছেই বেশ পছন্দের মানুষ।বাহিরে প্রেস মিডিয়া!সবাই জানেনা চেয়ারম্যান এর গায়ে গুলি লেগেছে,শুধু জানে এক্সিডেন্ট হয়েছে।তবুও এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলছে মিডিয়া,কেউ কেউ বলছে চেয়ারম্যান এর কোনো শত্রু এই এক্সি’ডেন্টটা করিয়েছে যাতে করে তিনি এই পদ থেকে বাদ পরে যায়,আরো না না কিছু।এইগুলো সব সামাল দিচ্ছে প্রণয় সামির সাথে সিজান সহ!

কচ্ছপের গতিতে বাবার কেবিন থেকে করিডরের চেয়ারে বসে পড়লো পুতুল আর মারজিয়া।মারজিয়া ক্লান্ত হয়ে হিজাবের পিন ঠিক করতে করতে বলে,

-বাবা গো এর থেকে তো আমরা নরমাল মানুষরাই খুব ভালো আছি রে,,না আছে কোনো শত্রু আর না পোহাতে হয় এতো ঝড়!আর এই মিডিয়ার লোকেরা কি সব আজাইরা প্রশ্ন করছিলো,কিন্তু তোর সুপারম্যান ভাই আর স্মার্ট বয়ফ্রেন্ড তো সব সামলে নিলো।

শেষের কথাটুকু পুতুলের দু কাধে হাত রেখে অতি খুশি হয়ে বলল মারজিয়া।পুতুল ভ্রু কুঁচকে বলল,

-মানে তুই কি মিন করতে চাচ্ছিস?

-হু তুই যা ভাবছিস তাই,,এই ওয়েট এইইই পুতুলের বাচ্চা তুই কত দিন ধরে ওই কালো গোলাপ নেওয়ার জন্য কত কিছু করলি শেষ পর্যন্ত চোর বলেও উপাধি পেলি।আর এখন তো ওই বাড়িতে থাকিস নিশ্চয়ই সারাদিন কালো গোলাপ দিয়ে বেড বানিয়ে ঘুমিয়ে থাকিস!তুই না বলেছিলি ওই গোলাপ পেলে তুই রান্না করে খাবি,খেয়েছিলিস কেমনরে?আচ্ছা ঘ্রাণ কেমনরে নরমাল গোলাপের মতো নাকি??

পুতুল ভীষণ রকমের বিরক্ত হয়।এমনি তো মুডের বারোটা বেজে আছে তার উপর তার এই লজিকহীন কথা।পুতুল রাগি লুক নিয়ে মারজিয়ার দিকে তাকায়,মারজিয়া বুঝতে পারে পুতুলের এখন মেজাজ চাঙ্গা হয়ে আছে তাই আর কিছু বলে না চুপ করে থাকে।চোখ উল্টিয়ে বিড়বিড় করে বলে “না বললি হু”

মারজিয়া আবার নিজের হিজাব ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পরে,,পুতুল একবার নিজের দিকে তাকায়,সাদা ঘিয়ে কালার হাটু পর্যন্ত একটা নরমাল ফ্রক পড়া। সকালে সেন্ডেলটা বদলিয়ে সাদা কেস পরেছে,কারণ হসপিটালের টাইলস গুলো এতোই পিচলা যে পুতুলের হাঠতে কিছুটা ভয় হয়।

ভাবনার মাঝেই তার মনে হয় কেউ তাকে ডাকছে, কে সেটা দেখার জন্য সামনের দিকে চোখ তুলে তাকায় পুতুল।কিন্তু বেশি চোখ ঘুড়িয়ে খুজতে হয় না মানুষটাকে,,কারণ তখনি সিজান হালকা দৌড় দিয়ে পুতুলদের সামনে এসে পরে।তার মানে সেই ডাকছিলো।পুতুল হাত নাড়িয়ে হাই দিয়ে বলে,,

-হাই আপু!!

সিজান অস্থির হয়ে তাদের সামনে এসে পুতুলের আরেক পাশে বসে হাক ছেড়ে মেয়েদের মতো হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বলে,,

-উফফ বার্বি ডল বাংলাদেশের মেয়েদের রু’পের আ’গু’নে পুরে ছা’ই হয়ে যাচ্ছি,এতো রুপ নিয়ে তারা রাতে ঘুমায় কীভাবে?

পুতুল ফিক করে হেসে দেয়,,মারজিয়া চোখ ছোট ছোট করে সিজানের দিকে তাকায়।সিজান তা পাত্তা না দিয়ে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,

-এইই বার্বি ডল এক দিনে দেখি তুমি শুকিয়ে গেছ!এই গুলুমুলু ডলকে কিন্তু এরকম শুকনো দেখতে একদমি ভালো লাগে না,

পুতুল কোনো প্রতিত্তোর করে না।মারজিয়া পুতুলের হাত খপ করে ধরে এক টানদিয়ে দাড় করিয়ে বলে,

-চল এখান থেকে,

সিজান পুতুলের আরেক হাত ধরে টান দিয়ে আবার বসিয়ে দেয়,মারজিয়াও আবার একি কাজ টান দিয়ে দাড় করিয়ে দেয়,,পুতুল তো হতভম্ব হয়ে যায়,এদের দুজনের মাঝখানে থাকলে এখানেই সে আ’হ’ত হবে নিশ্চিত!পুতুল বিরক্ত হয়ে বলে,

-আরে হচ্ছেটাকি?

মারজিয়া আবার পুতুলের হাত টান দিয়ে দাড় করিয়ে বলে,

-পুতুল তুই আমার সাথে চল!!

একিভাবে সিজান পুতুলকে বসিয়ে দিয়ে বলে,

-বার্বি ডল তুমি এখানেই বসে থাকবে,আমি তোমাকে কোনো রুপনগরের পেত্নীদের সাথে যেতে দিবো না,এতে তোমার রিস্ক হতে পারে।

মারজিয়ে এইবার ব্যঙ্ক মেরে বলল,

-ইশশ আসছে আবার মানবতার ফেরিওয়ালা!দু দিন ধরে পরিচয় হয়ে এতো চিন্তা! আপনি জানেন পুতুল আর আমার কত বছরের সম্পর্ক?

সিজান তার চোখ মার্বেলের মতো করে অবাক হওয়ার ভান করে বলে,

-সম্পর্ক?কিসের সম্পর্ক তোমরা,,ছি ছি আমি এইসব কি ভাবছি আমার বার্বি ডল মোটেও এরকম না।

-যার যেমন মাইন্ড তার মনে সেরকম ভাবনা তো আসবেই,

পুতুল এইবার নিজের দুই কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে খানিকটা উচ্চ স্বরে বলে,

-চুপপপপপ..!

দু জনে চুপ হয়ে যায়,সামনে দিয়েই একটা নার্স হাতে একটা ট্রে নিয়ে যাচ্ছিলো পুতুলের হঠাৎ চিল্লানি শুনে খানিকটা কেপে উঠে নার্সটা,পুতুল বুঝতে পারে সে একটু বেশি জোরে বলে ফেলেছে।তাই একটা ঢোক গিলে কিছুক্ষণ চুপ থাকে।নার্সটা চলে যেতেই পুতুল মারজিয়ার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বলে,

-বস এখানে,,

-না আমি বসবোনা চলে যাবো!!

মারজিয়ার কথা শুনে সিজান মিটিমিটি হেসে বিড়বিড় কম নিচু কন্ঠে বেশি স্বরে বলে,,

-বনবাসের টিকিট লাগলে বলতে পারে,,

কিন্তু কথাটা পুতুল মারজিয়া উভয়েই শুনতে পায়,মারজিয়া হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়,তা দেখে পুতুল মারজিয়ার হাত ধরে অনুনয়ের স্বরে বলে,

-প্লিজ এখন আর কিছু করিস না,এটা হসপিটাল!

মারজিয়া ধুপ করে চেয়ারে বসে পড়ে,,পুতুল বড় করে শ্বাস নেয়।সিজান হালকা করে পুতুলের কাধে মাথা রেখে বলে

-হা আমি শেষ।

পুতুল ডেব ডেব করে সিজানের দিকে চায়।কয়েকবার পলক ফেলে অন্যপাশে ঘুরে মারজিয়ার দিকে তাকায়,দেখে মারজিয়া রাগে ফুসছে। এখনি মনে হয় বম ব্লাস্ট হবে।পুতুল ইশারা করে না করে,কিন্ত মারজিয়া পুতুলের কথা না শুনে পুতুলের কাধ থেকে সিজানের মাথা সরিয়ে দিয়ে বলে,

-একদম আমার পুতুলকে ছুবেননা।

-ইশশ যেনো একদম লিখিতো ভাবে নিয়ে নিয়েছে যে পুতুল তার!

বলে আবার পুতুলের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয় সিজান।এদিকে পুতুলের খুব আনইজি লাগছিলো,এখানে গ্রমের অনেক মানুষি তার বাবাকে দেখার জন্য আসা যাওয়া করছে,কেউ যদি দেখে ফেলে ভুল বুঝবে।

পুতুল একবার সিজানের দিকে তাকাচ্ছে একবার লম্বা করিডরের দিকে তাকাচ্ছে কেউ আসছে কিনা,ইমনের হাত থেকে বাচা সম্ভব কিন্তু গ্রামের মানুষের কথা থেকে বাচা সম্ভব না।সামনে কারো আসার শব্দ শুনে সামনে তাকায় পুতুল মারজিয়া।সামনে আসা মানুষটাকে স্পষ্ট দেখতে পেয়ে হালকা ভাব নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে আরামে বসে পরে মারজিয়া।পুতুল তো ভয়ে শেষ সিজানের কাছ থেকে ছাড়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

এদিকে পুতুলের বার বার কাধ নাড়ানোর ফলে সিজান খানিকটা বিরক্ত হয়ে ‘চ’ শব্দ করে বলে,

-প্লিজ বার্বি ডল, আমি খুব ক্লান্ত একটু থাকতে দাও এখানে,,

পুতুল তাও এরকম করতে থাকে,সিজান কপাল ভাজ করে চোখ খুলে সামনে তাকায়,দেখে আকাশি রঙের একটা ফরমাল ড্রেসের সাথে সটান হয়ে হাত ভাজ করে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সামির!এই মুহূর্তে তাকে এখানে আশা করে নি সিজান।দ্রুত পুতুলের কাছ থেকে সরে শার্টের কলার ঠিক করে বসে,সামির ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-এখানে কি হচ্ছে?

সিজান এইবার মনে সাহস নিয়ে সামিরকে পাল্টা প্রশ্ন করে

-তুই এতো গুলো মেয়ের মাঝখানে এসেছিস কেনো??

সামির এইবার শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,

-ওহহ সরি আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম তুইও তো মেয়ে..!

এইবার আর মারজিয়া তার হাসি দমিয়ে রাখতে পারলোনা,ফিক করে হেসে দেয়।সে যখন থেকে এসেছে একটা জিনিস খেয়াল করেছে যখনি সামির আর সিজান একসাথ হয় তখনি কোনোনা কোনো ভাবে সামির সিজানের কথার পাল্টা জবাব দিয়ে তাকে হেনস্তা করবেই।এইবারো তাই করলো, মারজিয়া মুখ চেপে হাসছে।পুতুল তার দাঁত দিয়ে নখ কামরাচ্ছে,সামিরের কথায় সিজান খানিকটা অপমান হয় তবুও সামলে নিয়ে বলে,

-একদম বাজে কথা বলবিনা,,

সামির সিজানের কথায় পাত্তা না দিয়ে পুতুল যে হাতের নখ কামরাচ্ছিলো সেই হাত শক্ত করে ধরে একটানে বসা থেকে তার পাশে দাড় করিয়ে দেয়।
“আবার হাত ধরে টান?” পুতুল এইবার নিজের হাত ধরে বলে,

-আজকে আমি শেষ,আ আমার হাত!!

সামির পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,

-কি হয়েছে,,

পুতুল কিছু বলার আগেই মারজিয়া লাফ দিয়ে উঠে বলে,

-আরে ভাইয়া আর বলিয়েন না এই আপু আক্তার ভাইয়া আমার পুতুলের হাত ধরে টানাটানি করছিলো তখন খুব ব্যথা পেয়েছে,,

পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকায়,প্রথমে শুরু করলো সে আর দোষ দিচ্ছে অন্যজনের। কি সাঙ্গাতিক ব্যপার স্যপার।

সামির আর কারো কথা না শুনে পুতুলকে নিয়ে চলে যায়।তারা চলে যেতেই সিজান মারজিয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,,

-এটা কি বললে?

-আমি আপনাকে কিছু বলেছি?

বলে মারজিয়া ব্যাগ কাধে নিয়ে কেবিনের দিকে চলে যায়।সিজান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পকেট থেকে ফোন বেড় করে ঘড়ির টাইম দেখে,”সময় হয়ে গিয়েছে।” সিজান আবার পকেটে ফোন রেখে চারোদিকে তাকিয়ে খুব সতর্ক ভাবে কোথাও চলে যায়।

মারজিয়া কেবিনে ঢুকার আগে একটু পেছনে তাকিয়ে নেয়,কিন্তু সিজানকে আর সেখানে দেখতে পায় না। ‘ও মা কোথায় গেলো?এক পলকে হাওয়া!’ সে ওতটা পাত্তা না দিয়ে ভেতরে চলে যায়।ভেতর গিয়ে দেখে পুতুল একটা চেয়ারে বসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে,মারজিয়া খানিকটা হাসে।এই বাবাটা কত ভালো পুতুলকে সবসময় আগলে রাখে,অথচ তার বাবাকে দেখো এক বেলা না খেয়ে থাকলেও তাদের খবর নেয় না,শুধু মাত্র পুতুলের বাবার সাহায্যে সে আর তার মা একটু শান্তিতে থাকতে পারছে ভালো স্কুলে পড়তে পারছে নাহলে কবেই মা মেয়েকে রাস্তায় পরে থাকতে হতো।তার আপন বাবার মার কাছ থেকে সে যতটা না আদর পেয়েছে তার থেকেও অধীক স্নেহ মায়া পেয়েছে এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের কাছ থেকে।

মারজিয়া ভেতরে ঢুকতেই সবাই তার দিকে তাকায়,মারজিয়াও মুচকি হাসে,পুতুলের বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে

-কেমন আছেন আঙ্কেল।

-হ্যা মা আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু সুস্থ!তুমি কেমন আছো।

-জ্বী আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ!

পুতুল সামনে তাকিয়ে দেখে সামির বসে ফোন চালাচ্ছে,হাতের গতি দেখে মনে হচ্ছে কারো সাথে মেসেজ করছে।তখন সামির তাকায়,দেখে পুতুল তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে,তার তাকানো দেখে দ্রুত গতিতে চোখ নামিয়ে নেয় পুতুল।খানিকটা লজ্জা পায়।সামির আরেকবার ফোনের দিকে চোখ বুলিয়ে পকেটে ফোনটা রেখে দাঁড়িয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-আঙ্কেল আন্টি আমি একটু বাহিরে যাবো,দুঃখিত আজকে হয়তো আর আসতে পারবোনা কিছু কাজ আছে,একটু পর আম্মু আব্বুরা এসে পড়বে।

সামিরের কথা শুনে পুতুল তার দিকে তাকায়।পুতুলের বাবা হেসে বলে,

-অসুবিধা নেই বাবা।আমরা তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো বাবা তোমরা আমাদের জন্য যা করলে,,

-না আঙ্কেল আপনাদের বিপদে পাশে দাড়াতে পেরেছি এটাই অনেক,এখন আমি আসি।ভালো থাকবেন আমি প্রণয়কে সব বুঝিয়ে দিবোনি।

-আচ্ছা বাবা যাও..!

সামির আর এক সেকেন্ড সময়ও অতিবাহিত না করে দ্রুত গতিতে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়

চলবে..!#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৮

মেইন রাস্তা ছেড়ে গাড়ি ঘুড়িয়ে এক জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেলো।হঠাৎ করেই এই কাঠ ফাটা রোদ ছেড়ে চলে গেলো এক নিকোশ কালো আধার জগতে,চারোদিকে সব কিছু কেমন নীরব আর শীতল লাগছে।শুধু রোদের তাপ কেনো,আকাশের আলোর একটা চিহ্ন অনুভব করা যাচ্ছে না।সাধারণত জঙ্গলে কখনোই আস্ত একটা গাড়ি নেওয়া সম্ভব না।কিন্তু অবাক করা বিষয় এই বিশাল জঙ্গলের এতো এতো বড় ছোট গাছ গাছালির ঠিক মাঝখান দিয়ে সোজা করে একটা রাস্তা বানানো।যেই রাস্তাটা দিয়ে অনায়াসে একটা গাড়ি যেতে পারবে তাও কোনো রকম রিস্ক ছাড়া!এই গুপ্তচর রাস্তাটা অধীক মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে,এমনকি গাড়িতে বসা সামিরেরও তা একদম অজানা।পাশে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে সিজান!এমন ভাবে রাস্তা গুলো পারি দিচ্ছে,মনে হচ্ছে এ জায়গা তার অনেক চেনা।এখানকার আনাচে কানাচেতে যা আছে সে চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে।

এভাবে প্রায় পচিশ মিনিট যাওয়ার পর তাদের সামনে একটা যায়গা আসে,সামির অবাক হয়ে যায়গাটা দেখে।এটা তো সে চিনে খুব ভালো করেই চিনে।কিন্তু সিজান ওকে এখানে নিয়ে আসলো কেনো,

-এই যায়গাটা তো আমি চিনি।

-হুম

-কিন্ত তুই এখানে নিয়ে আসলি কেনো?

-এখানেই মেইন কাজ,আমাদের চোখের সামনে এইসব ঘুরছিলো অথচ আমরা কিছুই বুঝতে পারি নি।

সামির শুধু অবাক হচ্ছে,এতোদিন ধরে তাদের শত্রু তাদের আশপাশ দিয়ে ঘুরছে অথচ তারা বুঝতেই পারে নি।

গাড়ি গিয়ে থামে জঙ্গলের শেষ সিমান্তে একটা বাংলোর সামনে, সামির আর সিজান গাড়ি থেকে নেমে বাংলোর ভেতরে যায়,,সিজান তার পকেট থেকে একটা চাবি বের করে ভেতরে ঢুকে,অন্ধকার এই রুমে কোনো মানুষের অস্তিত্বর সঙ্গা পাচ্ছে সামির।রুমে একজনকে বাধা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, একে চিনে সামির।এটা একটা মেয়ে,উপস্থিত মেয়েটাকে ভালোভাবে চিনতে পেরে চেয়াল শক্ত হয়ে আসে সামিরের,সবারটা আন্দাজ করতে পারলেও এই নারীকে এই অবস্থায় এই জঘন্যতম অপরাধে এখানে কল্পনাও করে নি সে।অবিশ্বাস্য চোখে একবার চেয়ারে হাত বাধা মেয়েটার দিকে তাকায়,তার পরনে ছোট টপস জিন্স ঘার অব্দি চুল!একে এক পলক দেখে বোঝার উপায় নি মেয়েটা আদৌকি মেয়ে নাকি।

সামির একবার পলক ফেলে আবার তাকায় তার দিকে,সামিরের উপস্থিতি টের পেয়ে চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটা ছটফট শুরু করে দেয়,সামিরের দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে বলতে থাকে

‘সামির, সামির তুই এসেছিস বিশ্বাস কর এতে আমার কোনো দোষ নেই’

সামির কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সিজান আঙুল উচিয়ে বলে,

-এটা তোর লাষ্ট চান্স ছিলো রাকি!

সামির মেয়েটার সামনে যায়,মেয়েটার মুখ বরাবর একটা চেয়ার টেনে বসে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

-আমি এটা তোকে দিয়ে আশা করি নি রাকি।

রাকি তাও ছোটার জন্য সামিরের কাছে ভুঙভাঙ বলে অনুনয় করতে থাকে,সামির আর তার নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রাকির গালের থা’প্প’ড় মারে,মুহূর্তেই চোখ দুটো লাল বর্নে ধারন করে তার।এই সেই একটা মাত্র মেয়ে ফ্রেন্ড যাকে সে অনেক বিশ্বাস করতো,তার পরিবারের একটা অংশ ভাবতো কলেজে এতো এতো মেয়েদের ভীরে সামির শুধু রাকির সাথেই মেলামেশা করতো।আর এই সিক্রেট বাংলোর কথা শুধু মাত্র ও ই জানতো,,শেষমেশ সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো?এটা যেনো মানতে পারছেনা সে,,

রাকি গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে বলে,

-বিশ্বাস কর…!

-কাকে বিশ্বাস করবো তোকে?বিশ্বাস এর মর্যাদা রাখতে জানিস তুই?তোকে তো আমার ফ্রেন্ড ভাবতেই ঘৃণা লাগছে,,

বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সামির,রাকি এইবার মাথা ঝাকিয়ে সামনের চুল গুলো পেছনে দেওয়ার চেষ্টা করে হেসে উঠে,,

“রাকির এমন পাগলামো দেখে গা জ্বলে উঠে সিজানের,কপালের রগগুলো ফুলে উঠে,আগে থেকেই এই মেয়ের ভাব সাব তার ভালোলাগতো না কিন্তু সামিরের সাথে চলতে বিধায় এই মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো,কিন্তু যেদিন শুনতে পেলো সাজি আর তার দাদুর এ’ক্সি’ডেন্ট এর সাথে সেও জড়িত ছিলো সেদিন বেশি অবাক হয় নি সে,শুধু সুযোগ মতো ধরার অপেক্ষায় ছিলো।সে চায়ছিলোনা কথাটা সামিরকে জানিয়ে তাকে কষ্ট দিতে,কিন্তু রাকির স্বামী আরাফাতের মৃ’ত্যু’র খবর শুনে তাকে সব খুলে বলতে হয় সামিরকে,,সে আগে থেকেই শিউর ছিলো কাজটা রাকি ই করেছে।অনেক দিন ধরে চুপিচুপি এর অভিযান চালায় সিজান অবশেষে তাদের ধরতে পারে।”

সিজান রাগ সামলাতে না পেরে রাকির গোলা টিপে ধরে,হাত পা বাধা থাকায় রাকি ছোটাছুটি করতে পারে না।সামির কপালে দুই আঙুল রেখে বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে সিজান কে বলে “ছাড় ওকে” সিজান নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে এনে রাকিকে ছেড়ে দেয়।

সিজান ছেড়ে দিতেই রাকি চিৎকার করতে থাকে,চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,

-হ্যা আমি খারাপ,আমি করেছি আরাফাতকে খু’ন ও কোনো কাজেরই ছিলোনা,,শুধু পারতো গুন্ডাদের চামচামি করতে।ওকে আমার হাসবেন্ড মানতেও রুচিতে বাধতো।কি দেখে বিয়ে করেছিলাম আমি ওকে?আমার লাইফটাই বরবাদ হয়ে গিয়েছিলো,এইবার আসি সাজি আর তোর দাদুর কথায়,সেদিন রাতে গাড়িতে শুধু সাজি আর দাদু ছিলো না,সাথে ছিলো সাজির ফ্রেন্ড পিয়া!সেদিন দাদু ড্রাইভিং সিটে থাকায় তার মাথায় বারি লাগে এবং প্রচন্ডভাবে আঘাত লাগে কিন্তু তখনো তার সেন্স ছিলো।পাশ দিয়েই মাতলামি করতে করতে কয়জন ছেলে যাচ্ছিলো নির্জন রাস্তায় দুটো মেয়েকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারে না প্রায় আটজন নর পি’চা’শ মিলে ছোট ছোট দুটো বাচ্চাকে ধ’র্ষ’ন করে,সব দাদুর চোখের সামনেই ঘটে কিন্তু দাদু কিছু করতে পারছিলোনা।হ্যা সেদিন আমিও ওই দৃশ্যটা নিজের চোখের সামনে দেখেছিলাম,কিন্তু আমি তখন কারো সাহায্য নেয় নি বা কখনো কাউকে বলার সাহস পাইনি,কেনো জানিস?কারণ সেখানে আরাফাত ও ছিলো তখন তাকে আমি প্রচুর ভালোবাসতাম,আমি জানতাম কথাটা যদি তুই জানতি তাহলে আরাফাতকে তুই মে’রে ফেলতি তখন আমি কীভাবে সহ্য করতাম বল?কিন্তু এখন আমি পস্তাচ্ছি খুব করে পস্তাচ্ছি, সেদিন যদি তোকে সব বলে দিতাম তাহলে আজ এতো কিছু হতোনা।

লম্বা সময় ধরে কথাগুলো শুনে রাকির দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামির।সেদিন সাজি ধ’র্ষ’ণ হয়েছিলো সেটা শুধু সেই যানে,বাবা মা সারাজীবন অপরাধের বোঝা বেয়ে বেড়াবে ভেবে সবার কাছ থেকে কথাটা লুকিয়ে এ’ক্সি’ডে’ন্ট বলে দেয়।সিজানের কথায় সেদিন পুতুলদের গ্রামের সেই ইমন জড়িত ছিলো,তবে আরাফাত ও এর মধ্যে ছিলো এটা অবিশ্বাস্য!সব কিছুই কেমন অচেনা অচেনা লাগছে সামিরের কাছে,এতোদিন যাদের ভরসা করে আসছে তারাই অবশেষে বিশ্বাসঘাতক বেড়ুচ্ছে!

সামির এখনো রাকির মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,কিছুক্ষণের জন্য যেনো তার কান স্তব্ধ হয়ে আছে,সব কিছু কেমন ভন ভন করছে,মনে হচ্ছে এই সব কিছুই তার ভ্রম!কিন্তু এর একটা কোথাও বিশ্বাস হচ্ছেনা সিজানের,তাই দাঁত কিড়মিড় করে বলল

-দেখ রাকি তোর এইসব বানোয়াট কথা বার্তা আমরা কেউ বিশ্বাস করবো না।

কিন্তু রাকি সিজানের কথা কানে নেয় না,সামিরের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে,

সামির আর সেখানে বসে থাকতে পারে না,ধুপ করে উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়,সিজানও রাকিকে এইভাবে রেখে সামিরের পেছন পেছন যায়,যাওয়ার আগে একবার পেছন মুরে নেয়,সিজানকে পেছনে ঘুরতে দেখে রাকি একটা বাকা হাসি দিয়ে দুই হাত দিয়ে লাভ সেড করে দেখায়।

সামির বাংলোর নিচ তোলায় এসে পকেট থেকে ফোন বের করে প্রণয়কে কল দেয়,কিন্তু এই জঙ্গলে নেট না থাকায় কল কোনো মতেই যাচ্ছিলো না তবুও সামির বার বার চেষ্টা করছিলো।পেছন থেকে সিজান দৌড়ে তার কাছে আসে,কিন্তু তার আগেই উপরের রুম থেকে কেমন একটা গু’লি জাতীয় কিছু শব্দ হয়,সামির আর সিজান আবার দৌড়ে উপরে গিয়ে দেখে,রাকির হাত পায়ের বাধন খোলা অন্যদিকে মুরে মাটিতে লুটিয়ে আছে,সিজান কাছে গিয়ে দেখে রাকির হাতে ব’ন্দু’ক নিজের কপালে নিজেই গু’লি করেছে রাকি।সিজান চেক করে দেখে শ্বাস নিচ্ছে নাকি,হ্যা এখনো কিছুটা ফুসফুস চলছে,

সামির নিশ্বাস নিচ্ছে,,

আপাতত কাউকে বলে এটাকে হসপিটালাইজ করার ব্যবস্থা কর,আমাকে ইমেডিয়েটলি পুতুলদের কাছে যেতে হবে,

বলে সামির আর একটুও সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে নিচে নেমে যায়,সিজানো কাউকে মেসেজ দিতে দিতে নিচে নেমে যায়।গাড়ির কাছে আসতে আসতে সামির অনেকবার প্রণয়কে কল করার ট্রাই করে কিন্তু একবার রিং হওয়ার পর আর নেট পায় না,মেসেজও সিন করছে না।সামির হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির ডোর খোলার ট্রাই করে,কিন্তু চাবি সিজানের কাছে,সামির পেছনে ফিরে সিজানকে তাড়া দিয়ে বলে,

-তারাতারি খুল!

সিজান সামিরের কাছে এসে বলে,”এখান থেকে যেতে মিনিমাম দের ঘন্টা লাগবে।”

-অত কিছু জানিনা যত দ্রুত পারিস যেখান দিয়ে পারিস নিয়ে চল।

-এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো এখন রাত হয়ে গিয়েছে,এখন শর্ট রাস্তা খোজা পসিবল না,এখান দিয়েই যেতে হবে, তা ছাড়া আঙ্কেল এখন সুস্থ আজকে তাদের ডিসচার্জ দিয়ে দিবে,

-আরে সেটাই তো ভয়।

সিজান ভ্রু কুঁচকে বলে,

-ভয়?কিসের ভয়,তা এই ভয়টাকি আঙ্কেলের পরিবার নিয়ে নাকি বার্বি ডল??

-বাজে বকিস না সিজান,

“ভালোবাসিস পুতুলকে?”

চলবে..!

{ বেশি অপেক্ষা করাবোনা।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here