পুরোনো ডাকবাক্স পর্ব -০৮

#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৮(একটু কাছে আসা)

কথা শেষ না করতেই দ্রুম করে শব্দ হয়, রিভা’*লবার সাইলেন্ট করা না থাকায় এরকম শব্দ হয়েছে। শব্দ পাওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত সবার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আরসাল জোড়ে ” আলিজা” বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। অতঃপর চারপাশের পরিবেশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিশ্চুপ…..!!

আলিজা আর ওই লোক দুজনই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। দুইটা রিভা*’লবার থেকে গুলি চলেছিল একটা লোকের রিভা*’লবার থেকে আর অন্যটা পুলিশ অফিসারের। লোকটার হাতের কব্জিতে গু*’লি লাগার সাথে সাথে নিজেও গু*’লি করে দেয় সেটা আলিজার মাংসপেশিতে গিয়ে লাগে। আরসাল দৌঁড়ে গিয়ে আলিজার মাথা নিজের কোলের ওপর নেয়। আরসাল আলিজার দিকে তাকাতে পারছিল না, সে থাকতে আলিজার এমন কিছু হয়ে গেল!

” কিচ্ছু হবে না আলিজা আপনার, আমি আছি না! আমি আপনার কিছু হতে দেব না। স্যার গাড়ি বের করুন না প্লিজ আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে(পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে)।

” আ আমার আবার ক কি হবে? আমার তো এ এখনও আপনার ভালোবাসা পাওয়া বাকি। তবে কিছু হয়ে গেলেও ভালো হয়, এই পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসা আমি বোকার মত আশা করে বসে আছি কিন্তু এই মানুষগুলো তো আমার নয়। আমি মা*’রা গেলে কারও কারও পথ পরিষ্কারও হয়। আমার চলে যাওয়াই ভালো আমি তো তাই চাইছিলাম।

কথাগুলো বলার সময় দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আলিজার চোখ থেকে। এবার যেন আরসালের বুকের ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সে কিভাবে পারছে এই মেয়েটাকে কষ্ট দিতে! নিজেকে খুব অপ*’রাধী লাগছিল তার। তার মনে হচ্ছিলো কিছু একটা তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে যেটা তার কাছে থাকা খুব জরুরি।

কিছুক্ষণের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাথে আরিশকে উদ্ধার করা হয়। রাতেই গু*’লি বের করে ফেলা হয়। কিন্তু সারারাতে আলিজার জ্ঞান ফিরে নি। দুই বাসার সবাই হাসপাতালে ছিল রাতে কিন্তু আরসাল এক মুহূর্তের জন্য আলিজার কাছে থেকে সরে নি। বলতে গেলে সারারাত জেগে ছিল সে। আমজাদ শেখ এর খু*’নীকেও হাসপাতালে কড়া পাহাড়ায় রাখা হয়েছে। বিকেলবেলা তার থেকে জবানবন্দি নিতে হবে।
ভোরবেলার দিকে চেয়ারে বসে আলিজার হাত শক্ত করে ধরে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায় আরসাল।

নয়টার দিকে রুমে কথাবার্তার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আরসালের। তাকিয়ে দেখে আলিজারও জ্ঞান ফিরেছে। আলিজাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফুটে যায় আরসালের। খেয়াল করে সে আলিজার হাত ধরে ঘুমাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি করে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
আলিজার হাতে রাতেই ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে সে এখন পুরোপুরি সুস্থ শুধু হাতটা কম নাড়াচাড়া করতে হবে যেন ব্যথা না করে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার। আরিশ এসে আলিজার পাশে বসে আছে। আরিশের মার চোখেও আলিজার জন্য সম্মান আর ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে। তিনি কৃতজ্ঞ হয়ে আছেন আলিজার প্রতি।

বিকেলে আলিজাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা হলে সে আগে থানায় যেতে চায় কারণ বাবার মৃত্যুর কারণ তার জানতে হবে। যদিও আরসালের বাবা মিস্টার নেওয়াজ জানান বিষয়টা তিনি দেখে নিবেন তবুও আলিজা সেটা নিজের চোখে দেখতে চায় জানতে চায়। আলিজার কথায় আর কেউ না করে না। সবাই বাসায় ফিরে যায় শুধু আরসাল থেকে যায় বিকেলে সে আলিজাকে নিয়ে থানায় যাবে তারপর ওখান থেকে বাসায় যাবে।

****
আরসাল রাত থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। তিথিকে বলেছিল আলিজার অবস্থা খুব খারাপ তারপরও সে বারবার দেখা করতে বলছিল জন্য আরসাল রাগ করে কলটাই কেটে ফোন বন্ধ করে রাখে। বাহিরে এসে ফোন অন করে সে, ফোন অন করতেই যেন মেসেজ নোটিফিকেশনের ঝড় উঠে গিয়েছে। এবার সে মেসেজে সীমাবদ্ধ না থেকে তিথিকে কল দেয় কিন্তু তিথি কোনভাবেই রিসিভ করছিল না। অপেক্ষা করে করে আরসাল যখন আবার আলিজার কাছে যাবে ঠিক তখন তিথির কল আসে। অনায়াসেই রিসিভ করে নেয় সে।

” হ্যাঁ তিথি কল রিসিভ করছিলে না কেন?

” আমাকে কল দিয়ে আর আপনার কি হবে? বিয়ে করে বউ তো পেয়েই গিয়েছেন যখন ইচ্ছে কাছে যেতে পারছেন যা ইচ্ছে করতে পারছেন আমাকে আর কেন লাগবে?

” নোংরা কথা বল না তো তিথি। তোমাকে আমি রাতে বলেছি সব তারপরও এরকম করে কিভাবে বলতে পারো তুমি? ইদানীং তোমাকে খুব অচেনা লাগে এমন তো ছিলে না হঠাৎ এত উ*’গ্র মেজাজের কেন হয়ে যাচ্ছো?

” আমি তোমাকে ওই মেয়ের সাথে জাস্ট নিতে পারছি না।

” নিতে বলেছে কে তোমাকে। তোমাদের মেয়েদের দোষ একটা কিছু হলেই সন্দেহ আর খোঁচা দিয়ে কথা বল। সামনে থাকা মানুষের অবস্থা একটু বুঝবে তো তাই না! এখন আমি ফোন রাখছি, কালকে দেখা করব।

তিথিকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে সিম অফ করে রাখে। কারণ সে চাচ্ছে না এই ব্যাপারে আবার আলিজার খারাপ লাগুক। মেয়েটার এখন একটু ভালো থাকা দরকার, শরীর ও মন উভয়ের সুস্থতা প্রয়োজন।

****
আলিজার কেবিনে ঢুকে দেখে আলিজা বেডে নেই। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওখানে চলে যায় আরসাল। আলিজা আরসালের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনে ঘুরে তাকায়। আরসাল দূরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আলিজা আরসালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” সবসময় এত দূরে দূরে কেন থাকেন আপনি? এখনও কি আমাকে ভালো লাগে নি? আরও সময় লাগবে আপনার? আমার কিন্তু আর সময়ের প্রয়োজন নেই আমি বুঝে গিয়েছি আমি আপনাকে……

” কি?

“আপনি তো বলেছিলেন আপনার পছন্দের কেউ নেই তাহলে আমাকে কেন নিজের করে নিচ্ছেন না আরসাল?

আলিজার এমন স্পষ্ট কথায় আরসাল একটু ভরকে যায়। সেদিন জ্বরের ঘোরে এক কথা বলল আর এখন আরেক কথা। তবে এতদিনে যা বুঝেছিল আলিজার অনেক জড়তা কাজ করে ইদানীং তার ধারণা পাল্টে দিচ্ছে এই মেয়ে।

আরসাল কিছু বলছে না দেখে, তার সবচেয়ে কাছে গিয়ে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে জড়িয়ে ধরে আলিজা। আলিজার এমন ব্যবহারে এবার আকাশ থেকে জমিনে পড়ার মত অবস্থা তার। আরসালের হৃদক্রিয়া বেড়ে গিয়েছে, বুকের মধ্যে দ্রুমদ্রুম শব্দ হচ্ছে সেটা হয়তো আলিজা শুনতেও পাচ্ছে।

” কি করছেন আলিজা! বাহিরে মানুষ আছে তারা দেখবে তো…

” দেখুক তাতে আমার কি? আমি তো অন্য কারও প্রিয়জনকে বা বরকে জড়িয়ে ধরি নি তাই না?

” তা ধরেন নি কিন্তু ব্যাপারটা কেমন লাগে না দেখতে?

” সবাইকে কে দেখতে বলেছে? আর একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আপনি আমার সাথে তুমি করে কেন বলেন না? আপনার মুখে তুমি শুনতে কি কি করতে হবে? (আরসালের বুকে থেকে মাথা একটু উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে।)

” তুমি?

“হ্যাঁ তুমি।

” আচ্ছা বলব

” আমি যেন আর আপনি করে বলতে না শুনি, খারাপ লাগে খুব।

” আচ্ছা ঠিক আছে এবার তো ছাড়ো।

” পুরো দুনিয়া তো আমার সাথে বিট্রে করেছে, আপনি প্লিজ আমার সাথে এরকম কিছু করবেন না। আমি না আপনাকে খুব ভালোবাসি আপনি আমার সাথে বিট্রে করলে আমি সহ্য করে নিতে পারব না আরসাল।

” হুম।

আরসাল আর কিছু বলতে পারে না কিই বা বলবে সে! এই মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেও তার বাধে আর সে কি না ঠকাতে চাইছে। আরসাল এবার সিদ্ধান্ত নেয় তিথির ব্যাপারটা আলিজার সামনে তুলে ধরবে। সে নিজে থেকে বললে একরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে আর অন্যভাবে জানলে পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যেতে পারে। সব বলার পর নিশ্চয়ই আলিজা তার সাথে থাকতে চাইবে না সে নিশ্চয়ই প্রতা*’রকের সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখবে না। আজকেই বাড়ি ফিরে সব বলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আরসাল এতে যা হওয়ার হবে। এভাবে একটা বিষয় আর কত চাপা রাখবে সে!

****

বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হওয়ার আগেই আলিজা আর আরসাল থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। থানায় পৌঁছানোর আগেই আলিজা মিস্টার নেওয়াজকে কল দিয়ে সেখানে যেতে বলে।
আরসাল আর আলিজা গাড়িতে বসে আছে, পিছনের গাড়িতে আলিজার ছোটমাও আসছে। আলিজা চুপচাপ আরসালের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। আরসালও আজ তাকে দূরে থাকতে বলছে না মেয়েটা অসুস্থ বলে।

” আমার যদি কালকে কিছু হয়ে যেত তাহলে আপনার জন্য ভালো হতো তাই না আরসাল?(কাধে মাথা রেখে হঠাৎ বলে ওঠে)

” হ্যাঁ আমি বিয়ে করতে চাই নি, তবে এটা না যে আপনার খারাপ কিছু হোক সে কারণে ত আমার জীবন থেকে চলে যান এটা আমি কখনই চাই না।

” তখন বিয়ে করতে চান নি আর এখন কি আমার সাথে থাকতেও চান না?( কাধ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে)

আরসাল আর কিছু বলতে পারে না, কি বলবে সে? সে তো চায় না আলিজা তার থেকে দূরে থাকুক। আলিজা তার কাছে থাকলে পাশে থাকলে এরকম হুটহাট জড়িয়ে ধরলে যে তার কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করে। চোখের দিকে তাকালে যেন কোন অতলে ডুবে যায় সে, চরিত্র*’হীনের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে যে অন্যকারো কাছে কমিটেড(প্রতিজ্ঞাবদ্ধ)। কিভাবে সে তিথিকে ঠকাবে আবার আলিজাকে ছাড়লে তার সাথে খুব বড় অন্যা*’য় করা হবে।

আলিজা আরসালের কাছে কোন জবাব না পেয়ে বাহিরের রাস্তায় মন দেয়, আরসাল ও বুঝতে পারে আলিজা নিজের কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে মন খারাপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

****
কিছুক্ষণের মধ্যে আরসাল ও আলিজা থানায় পৌঁছে যায়। অল্প কিছু সময় তিনজন (নেওয়াজ, আরসাল, আলিজা) অপেক্ষা করার পর দুজন কন্সটেবল এসে তাদের একটা রুমে নিয়ে যায় যেখান থেকে তারা আলিজার বাবার খু*’নীকে দেখতে পাবে। তিনজন চেয়ার টেনে বসে ততক্ষণে লোকটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হলো প্রথমে কিছু না বলতে চাইলেও কয়েকটা আ*’ঘাত গায়ে পরলেই চিৎকার করে স্বীকার করল যে সে সব বলবে। লোকটার আচরণে বোঝা যায় হয়তো মাথার সমস্যা হয়েছে থেকে থেকে হাসে আবার গম্ভীর হয়ে যায় আবার কান্নাও করে। পুলিশের ধারণা তাকে ডাক্তার দেখাতে হতে পারে। সে যদি এমনই থাকে তাহলে তো শা*’স্তির ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে যাবে।

বল কেন তুই মন্ত্রী সাহেবকে খু*’ন করেছিস বল, তোর এত সাহস হলো কিভাবে?(অফিসার)

প্রশ্ন করার সাথে সাথে লোকটি অফিসারের নাক বরাবর জোরে একটা আঘা*’ত করে। অফিসার ছিটকে মেঝেতে পড়ে যায়। উপস্থিত সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়।

গল্প দুইদিন পর পাবেন। ইদানীং গল্পে আগের মতো রেস্পন্স পাই না কবে যে আমার পাঠকগুলো জেগে উঠবে!! যারা পড়েন তারা অন্তত লাইক দিয়ে রাখবেন অনুরোধ রইলো। একটু কষ্ট করে কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগছে কারণ নেক্সট না চাইলেও পেয়ে যাবেন😊
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here