পূর্ণতায় তুমি পর্ব – ১

শুভর শার্টের বোতাম খুলে লোমে আবৃত বুকের মাঝখানে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে শুভর বুকে মাথা রেখে অবনী বললো,– সকাল হওয়া পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী, অন্তত এই রাতে আদরে আদরে ভরিয়ে দিন আমায়, জীবনে অন্য কোনো পুরুষের স্পর্শ পেতে যেন মন আগ্রহী না হয়। সকাল হলেই ডিভোর্স লেটার হাতে ধরিয়ে দেবেন আমি জানি! একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে একান্তে যেটা চায় সেটা আজ আমাকে আপনার দিতে হবে!”

শুভ কোনো কথাই বললো না।

অবনী শুভর বুকের লোমে আলতো করে হাত বুলোতে বুলোতে বললো,– এটা আমার সবথেকে প্রশান্তির স্থান, আপনার বুকটা, আপনার বুকে মাথা রাখলেই আমি সুখের সমুদ্রে হারাই। হয়তো সুখটা চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি এই সুখটুকুতেই অভ্যস্ত, এর বাইরে জীবনে আর কিছু চাওয়া ছিলনা, কিন্তু সব চাওয়াও যে পূর্নতা পায়না শুভ।

শুভ কেমন একটা বিরক্তির ভাব করছে দেখে অবনী বললো,– ভালোবাসার মানুষটার অতিরিক্ত ভালোবাসাও আমাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়, তারপর হারালে বোঝা যায়। আজ আপনি বিরক্ত হলেও আমার প্রাপ্তি আমি উশুল করে নেবোই, আমি এখন পর্যন্ত আপনার স্ত্রী, আজ আপনাকে সেরকম করেই চাই, যেরকম পেয়েছিলাম আমাদের প্রথম একান্ত মিলনের রাতে, আমি চাই আজ আপনি সেরকমই উন্মাদ হয়ে উঠবেন, আপনার মস্তিষ্কে আমি ছাড়া আর কিছু থাকবে না এই বিশেষ মুহূর্তে।

শুভ চুপচাপ।

অবনী শরীরের ওপরের অংশের কাপড় খুলে ফেলে দিয়ে শুভর ওপর ঝুঁকে পড়ে বললো,– হয়তো সেদিন আমার শারীরিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করেছিল বলেই কোটিপতি হয়ে সামান্য গ্রামের একটা মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন, আপনার উদ্দেশ্য হয়তো আমার মন ছিলনা, দেহ পাবার ছিল। প্রাপ্তি শেষে এখন আর সেই ভালোলাগা নেই বুঝেছি আমি, সমস্যা নেই ডিভোর্স পেপার হাতে ধরিয়ে দিলে আমি চুপচাপ চলে যাবো, তবে আজকের রাতটা আমায় দিতে হবে হাসিখুশি মনে!

শুভ বললো,– সকালেই কাগজ এসে যাবে, আর ড্রইং রুমে টেবিলের ওপর সাক্ষর করা ব্ল্যাংক চেকবুক পড়ে আছে, ওটা নিয়ে যেও, যত টাকা প্রয়োজন উঠিয়ে নিয়ো।

অবনী হেসেফেলে বললো,– টাকা দিয়ে আপনার বুকটা কিনতে পাওয়া যাবে? যেটা আমার চির শান্তির আশ্রয়। টাকা দিয়ে আপনাকে কিনতে পাওয়া যাবে? অথবা টাকার বিনিময়ে আপনার ভালোবাসা?! জীবনে সবচেয়ে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আমার জীবন মরণের প্রশ্ন, সেটাই যদি এই টাকা দিয়ে কিনতে না পাওয়া যায়, তাহলে সে টাকা দিয়ে কি হবে? বলুন তো শুভ।

শুভ বিরক্তি নিয়ে বললো,– এবার একটু থামবে প্লিজ!

অবনী আবারও হেসেফেলে শুভর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো,– একটা মেয়ে / স্ত্রী তার স্বামীর কাছে আসলে কি চায় সেটা কজন পুরুষ গভীর ভাবে ভেবেছে আমি জানিনা! যদি ভাবতো তবে চারিদিকে এত সুখের অসুখ বিস্তার লাভ করতো না হয়তো। আপনি সবসময় টাকার কথা বলেন, আসলে কি একটা মেয়ের চাওয়া বলতে টাকাপয়সা? স্বর্ণ অলঙ্কার? কখনও জানতে চেয়েছেন?

আপনাদের পুরুষদের সবচেয়ে বড়ো দোষ, শুনতে না চাওয়া, শুধু শোনাতে চাই মনোভাব। যত পারো শুনিয়ে যাও, যে কোনো বিষয়ে আর এগুলো বইছে জিনের পর জিনে, প্রজন্মের পর প্রজন্মে। যে যেমন দেখছে, সে তেমনিই শিখেছে। স্বামীরা বড্ড পরিশ্রমী ― স্ত্রীর বন্ধু হওয়ার মতো সময় নেই। দুটো গল্প করার মতো অবসর নেই। লাগবে, ঠিক আছে ব্যবস্থা করছি ― ব্যস!

মেয়ে বা বউ চায় তার কথাগুলো আগ্রহের সাথে, সম্মানের সাথে তার সঙ্গী শুনুক। সিদ্ধান্ত দিতে যাওয়ার দরকার নেই, যখন বলবে তখন না হয় ভাবা যাবে।

গয়না গাটি, শাড়ি বাড়ির আড়ালে একটু নিভৃতে সময় ― হ্যাঁ শুধু একটু সময়, সম্পদ নয়। আমাদের কাছে আপনার সময়ই সম্পদ।

একটু প্রশংসা করুননা, পয়সা তো লাগে না। চুল বাঁধার আর রাঁধার জন্য দুই মিনিট কিছু বলুন। আপনাকে আর জড়িয়ে ধরতে হবে না, সে নিজেই মনের অন্তরালে আপনাকে জড়িয়ে ধরে লম্বা একটা কিস দিয়ে দেবে ― তাতে আপনি ঘেমে নেয়ে, দুর্গন্ধে ভরে থকুন তবুও।

আপনার মা বাবার খবরের সাথে একটু টুক করে ওর মা বাবার খবর নিন, ওহঃ আপনাকে আর পায় কে! সাতদিনে একদিনই হোক না সেটাও ওর জন্য বিশাল পাওয়া।

আপনার কোনো ভুল ধরে ফেললে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করুন আর বলে দিন অকপটে এরপর আর হবে না, বলার সময় একটু স্মিত হাসি রাখুন। এক্ষেত্রে কিন্তু বহু পুরুষ পুরুষত্ব দেখানোর চেষ্টা করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অভিনয় করে। অভিনয় মেয়েরা বেশ ভালোই বোঝে।

এসব যে আমার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা তো নয়, আপনার স্ত্রী হয়ে থাকার ভাগ্য আমার নেই, আমার পরে যে আসবে অন্তত সে যেন পায়!

অবনীর কথার মধ্যেই শুভর ফোনে হিমির কল আসে। খপ করে ফোনটা হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে ফোন সুইচঅফ করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে অবনী বলে,– অন্তত আজকের রাতটা আমি ঐ মেয়ের উপস্থিতি চাইনা যে আমার সাজানো ভুবন এলোমেলো করে দিলো।

ডিম লাইটের অস্পষ্ট আলোয় নিজেকে অনাবৃত করে অবনী বললো,– হয়তো আমার প্রতি, মানে আমার শরীরের প্রতি ভালোলাগা ছিল আপনার, আমার প্রতি ভালোবাসা নয়। আর শরীর পেতে বিয়ে করা, নিন আপনার সেই ভালোলাগার শরীরটা আপনার সামনে শেষবারের মতো উন্মুক্ত করে দিলাম, আপনার স্পর্শে ধন্য করুন শেষবারের মতো।

শারীরিক আকর্ষণ এমনই ভয়ংকর হয় যে কারো ডাকে কেউ সাড়া না দিয়ে থাকা অসম্ভব প্রায়! অবনীকে টেনে কাছে এনে অবনীর ঠোঁটে কিস করে শুভ বললো,– ঠিক আছে, তোমার ইচ্ছে পূর্ণ হবে…

তারপর তাদের একান্ত সময়…

প্রতিটি সেকেন্ড অতিবাহিত হচ্ছে আর অবনীর অস্থিরতা বেড়ে চলছে, সকাল হবার অপেক্ষায়…

চলবে…

গল্পঃ পূর্ণতায় তুমি ( প্রথম পর্ব )

আবীর হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here