পূর্ণতায় তুমি পর্ব – ৬

গল্পঃ পূর্ণতায় তুমি ( ষষ্ঠ পর্ব )

শুভর বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে অবনী বললো,– বিয়ের পরের বৈধ জিনিসটাকে বিয়ের আগে অবৈধ করে পাবার মাঝে কি এমন সুখ বলেনতো একটু, এতরাতে একটা যুবতী মেয়ের ঘরে এরকম খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসার মতো নিচু মনমানসিকতা আপনার থেকে আশা করিনি শুভ!

শুভ আবার জোর করেই অবনীকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে অবনীর বুকে হাত দিয়ে ঠোঁটে কিস খেয়ে বলে,– অপেক্ষায় থাকা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না অবনী, আর অপেক্ষা যদি হয় তোমাকে পাবার, তাহলে তো একদমই অসম্ভব!

কথা শেষে শুভ আরও বেশি করে অবনীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলোতে লাগলো। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি মেয়ে, জীবনে প্রথম এত ঘনিষ্ট ভাবে কোনো পুরুষের স্পর্শে অবনীর শরীরে কেমন অন্যরকম এক অনুভূতির উদয়! শুভর স্পর্শে দেহমন কেমন অন্যরকম আবেশে প্রবেশ করতে লাগলো। মন বাধা দিতে চাইলেও শরীর কেমন এই স্পর্শ পেতে চাইছে বেশি করে। একসময় জৈবিক চাহিদার বশে অবনীও শুভর ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলো না। সেই রাতে শুভর উদ্দেশ্য হাসিল হলো।

এরপর থেকেই অবনীর দ্বিধাদ্বন্দের দিন শুরু। যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলো তাকে কীভাবে ঠকাবে, শরীরটা যে অন্য কেউ লুটে নিয়েছে, আর অবনীর বাবার শেষ আবদার অবনী যেন শুভকে বিয়ে করে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত অবনী ও শুভর বিয়ে হয়েছিল।

অবনীর স্মৃতিচারণে ব্যাঘাত ঘটলো কারো পায়ের শব্দে, ঘুরে দাড়িয়ে অবনী দেখলো তার বাবা এসেছে। চোখের জল মুছে অবনী বললো,– কিছু বলবে বাবা?

অবনীর বাবা ব্যথা ভারাক্রান্ত মুখে বললো,– ছোটবেলা তুই কান্না করলে অথবা অভিমান করলে কোলে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরাতাম, কতকিছুই না করতাম! এখন তো তুই বড়ো হয়ে গেছিস, জানিনা ঠিক কি করলে তোর মনের কষ্টটা দূর হবে! তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তোর মতামতের মূল্য না দিয়ে তোকে শুভর সাথে বিয়ে দিয়ে আমরাই তোর জীবনটা নষ্ট করেছি! তোর এই অবস্থা দেখে প্রতিক্ষণ জ্বলেপুড়ে মরছি, নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না কোনদিন!

অবনী শুকনো ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,– এতে আপনার কোনো দোষ নেই আব্বু, সবই কপালের লিখন!

বাবা এগিয়ে এসে অবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,– আমার আর একটা কথা রাখবি মা!

: বলো বাবা!

: এভাবে ঘরে বসে থাকলে তুই আরও ভেঙে পড়বি নানান টেনশনে, বলছিলাম তোর যেহেতু এলএল.বি অনার্স করা, এবার যেকোনো ল কলেজে ভর্তি হয়ে এলএল.বি ডিগ্রি নিয়ে নে। ছোটবেলা থেকেই তো তোর উকিল হবার ইচ্ছে, তোর ইচ্ছেটাও পূর্ণ হোক!

: আচ্ছা বাবা আমি ভেবে দেখবো।

বাবা অবনীর রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। অবনী আবারও জানালার পাশে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, মেঘ কেটে রুপালী চাদের আলো ঝরে পড়ছে পৃথিবীতে, কত অদ্ভুত এই পৃথিবী!

অবনী হঠাৎ লক্ষ্য করলো পুকুর ঘাটে কেউ একজন বসে আছে! ঝাপসা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।

দরজা খুলে অবনী ধীর পায়ে পুকুর ঘাটের দিকে এগিয়ে যেতেই বসে থাকা সেই ছায়ামূর্তি বললো,– চাইলেই আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরানো যায়না, বৃষ্টি অমূল্য, তাই বৃষ্টি হলেই ছুঁয়ে দেখতে হয় অবনী।

অবনী বুঝতে পারলো এটা আকাশ।

অবনী বললো,– জ্বর হলেই বুঝতে পারবেন বৃষ্টি ছোঁয়ার মজা কত প্রকার, ও কি কি!

আকাশ হেসেফেলে বললো,– চাইলেই আমরা বৃষ্টির কাছে যেতে পারিনা, বৃষ্টি আমাদের আঙ্গিনায় আসে ভালোবেসে, তাকে ছুয়ে না দিলে হয় বলুন। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি ছিল, এখন নেই, কিছুক্ষন আগের মুহূর্ত অতীত, কিন্তু সেই অতীতের মূহুর্ত বৃষ্টিতে ভিজে স্মৃতির পাতায় টুকে রাখলাম। মূহুর্ত স্বাদহীন অবনী, মূহুর্তকে মধুর করে নিতে হয়।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবনী বললো,– জীবনের পাল্লায় সুখের চেয়ে দুঃখের মুহূর্ত বেশি ভারী হলে জীবন আর জীবন থাকেনা আকাশ।

পুকুরের পাড়েই কদম গাছটায় কদমফুল ফুটে আছে। আকাশ উঠে গিয়ে দুটি কদমফুল এনে অবনীর হাতে দিয়ে বললো,– এই যে আমার তরফ থেকে আপনাকে মুহূর্ত দিলাম, এই মূহুর্ত আপনার আজীবন মনে থাকবে, মনে পড়বে কোনো বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়, অথবা কদম গাছ দেখলেই। আমরা সুখের মুহূর্ত এড়িয়ে গিয়ে দুঃখ হতাশার মুহুর্তগুলো বেশি প্রশ্রয় দেই বলেই আমরা সুযোগ থাকলেও সুখী হতে পারিনা।

অবনী ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

পকেট থেকে কয়েকটি নীল চুড়ি বের করে অবনীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,– নীল চুড়ি, হাতে কদমফুল, দারুণ কিছু মুহূর্ত লিপিবদ্ধ হবে জীবনের ডায়েরিতে।

অবনী চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে বললো,– কিন্তু আপনার কাছে চুড়ি কীভাবে?!

আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– কেউ একজন ছিল যার নীল চুড়ি পছন্দ ভীষণ, তাকে তো আর দেয়া হয়নি। সময়ের সাথে চুক্তি করে হঠাৎ সে হারিয়ে গেল। সে যেদিন বলেছিল তার নীল চুড়ি পছন্দ, সেদিনই কিনে রেখেছিলাম। এখন ভাবলাম আর পকেটে নয়, চুড়ি গুলো অন্তত কারো হাতে শোভা পাক।

অবনী যতই আকাশের কথা শুনছে ততই মুগ্ধতা বাড়ছে, আর ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে আকাশের সম্পর্কে জানার।

আকাশ আবার বললো,– সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো চরম ভাবে হেরে যায় জানেন! হয়তো অপরদিকের মানুষটা ছেড়ে যায়, নয়তো পারিবারিক চাপে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবনী বললো,– দ্বিতীয় লাইনটার শিকার হতে হয় বেশীরভাগ মেয়েদের, পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত চুপ করে মেনে নিয়ে নিজের সুখ স্বপ্ন বিসর্জন! মেয়েরা আসলেই ভীষণ অসহায় আকাশ!

আকাশ বললো,– মেয়েরা অসহায় নয় মোটে, নিজেকে অসহায় ভাবার কারণে ওরকম মনে হয়, আমাদের সমাজের যুগ যুগ ধরে চলে আসা কিছু রীতি মেয়েদের ওরকম ভাবতে বাধ্য করে। তবে সবসময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখবেন! এত ভালোবাসার পরেও যে আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিবে, সে আপনার ভালোবাসা পাবার অযোগ্য, তার জন্য নিজের জীবন থামিয়ে না রেখে নতুন করে জীবনকে গতি দান করুন।

অবনী চুপচাপ।

আকাশ বললো,– কাল সকালেই আমাকে যেতে হবে!

: কোথায় যাবেন?

: যেদিকে দুচোখ যায়!

: আর কখনও দেখা হবেনা আমাদের?

: হয়তো! যদি বেচে থাকি তবে।

কথা শেষে আকাশ উঠে রুমে চলে এসে শুয়ে পড়লো।

অবনীর চোখে জলের উপস্থিতি, ভালোরাখার মানুষগুলোর উপস্থিতি খুব কম সময়ের হয় জীবনে।

সকালে আকাশ চলে গেল।

এরপর আড়াই বছর অতিবাহিত। এরই মধ্যে ল-কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে অবনী একজন উকিল।

একদিন সকালে সোফায় বসে চা খাচ্ছিল এবং নিউজ দেখছিল অবনী, একটা অপ্রত্যাশিত নিউজ দেখা থমকে যায় অবনী, হাত থেকে চায়ের কাঁপটা পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, নিজের চোখ এবং কানকে বিশ্বাস হয়না, এটা কি করে সম্ভব!…

চলবে…

আবীর হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here