প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৪৪

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৪
___________________________
হুমায়ুন আহমেদ বলে ছিলেন -‘মেয়েদের স্বভাব ই হচ্ছে হালকা জিনিস নিয়ে মাতামাতি করা।’

সূচনা আপাদত তাই করছে,অফিসে না গিয়ে বেচারা প্রণয় ফেসে গেছে। তার চেয়ে বড় ভুল হয়েছে টিভি দেখতে বসে।নাস্তা শেষে রুমে এসে টিভি দেখতে নিয়েছিল, চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একটা মুভি আসে সামনে,হলিউড মুভি।সমস্যা সেটা না,সমস্যা হচ্ছে মুভি তে ঠা*স করেই একটা ই*ন্টিমেট সিন এসে পড়েছে আর সেই সময় ই আগমন ঘটেছে সূচনার।যা হওয়ার তাই হয়েছে, আপাদত অ*গ্নি দৃষ্টি নিয়ে সূচনা তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে,প্রণয় চুপ।গত দশ থেকে পনোরো মিনিট ধরে সূচনা একাধারে বকবক করেই যাচ্ছে।সূচনা রা*গে ফোঁসফোঁস করতে করতে বললো-

–‘আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না আপনি এমন,ছি ছি ছি।

প্রণয় চুপ এখনও।সূচনা আবারও বললো-

–‘কথা বলছেন না কেন এখন?

–‘আরে আমি জানতাম না কী তখন ঔসব আসবে…

–‘আপনি জানতেন না?উফফ ইচ্ছে করছে আপনাকে…

সূচনা পুরো কথা শেষ করবে কী ত*ব্দ খেয়ে গেছে একদম।চুলে হাত বুলাতে বুলাতে প্রণয় বললো-

–‘কী ইচ্ছে করছে?কী করবে আমাকে?

–‘ এটা কী করলেন?

–‘তুমু থুক্কু চুমু খেয়েছি।

–‘কেন?

–‘কারণ ঔসব দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে।শান্তি এখন এসবই শুনতে চেয়েছিলে না?

–‘আমি আপনার মতো না।

–‘তুমি আমার মতো হতে যাবে কেন?তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে। আশ্চর্য।

–‘আপনার মাথা আসলেই গেছে।

–‘হ্যা তো?

–‘কিছু না আমার মাথা খান বসে বসে। যত্তসব।

–‘আমার অভাবের দিন আসেনি যে বউয়ের মাথা খাবো।’তুমি তো চি*বিয়ে খাচ্ছ আমাকে।

–‘আমার বরের ও অভাবের দিন আসেনি যে আপনাকে চি*বিয়ে খেতে যাব।

–‘ওহ আচ্ছা।

–‘হুম।

প্রণয় এবার ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো –

–‘একটা জিনিস খেয়াল করলাম।

ভ্রু উচিয়ে সূচনা জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

–‘এটাই যে তুমি..তুমি..

–‘কী আমি?

–‘ ঝ*গড়ুটে হয়ে গেছো আগে থেকে।আগেই ভালো ছিলে চুপচাপ,কেমন ভয়ে ভয়ে থাকতে,ঠোট উল্টিয়ে তাকিয়ে থাকতে,আমাকে ভয় ও পেতে,তোমার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য কত কিছু করতে হতো। আর এখন টেপ রেকর্ডার এর মতো বাজতেই থাকো।

–‘আমি টেপ রেকর্ডার?আগে ভালো ছিলাম? ভয় পেতাম আপনাকে?ঝ*গড়ুটে হয়ে গেছি,ঠোঁট উল্টিয়ে তাকিয়ে থাকতাম?

চোখ রা/ঙিয়ে জিজ্ঞেস করলো সূচনা।

–‘হ্য….মানে..

–‘সামনে থেকে সরুন।

–‘কেন?

–‘সরুন।

প্রণয়কে সরিয়ে দিয়ে বেডে বসে পড়লো সূচনা,প্রণয় ও পাশে বসতে বসতে বললো-

–‘আমি তো মজা করছিলাম,রাগ করেছো?

–‘…..

–‘সরি রা*গ করছো কেন?আচ্ছা আর বলব না কানে ধরে সরি।

–‘…….

–‘আ’ম সরি কাপ কেক।

মুখ ছোট করে বললো প্রণয়।মুখে কিছু বললো না সূচনা,ঠোট উল্টিয়ে,ভীড়ু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক,অতঃপর ছোট বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে ধরলো প্রণয় কে।প্রণয় বোকা বনে গেল,সাথে সাথে কিছু জিজ্ঞেস করলো না,সময় নিল একটু।কিছুটা অপ/রাধী স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘রা*গ করেছো?আ’ম সরি আর বলব না,প্রমিজ,পিংকি প্রমিজ।

–‘কেন?

–‘তুমি হার্ট হয়েছ না এজন্য। আ’ম সরি।

–‘আরে থামুন এত সরি সরি করার কী আছে?আপনার সরি শুনে মনে হচ্ছে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলে ও দেয়ালে কে বলবেন ‘সরি।’

চট করে প্রণয়কে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো সূচনা।

–‘এতক্ষণ কী ছিল ঔসব?

প্রণয় বোকা বোকা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। সূচনা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো-

–‘আপনি আগের আমিকে দেখতে চেয়েছিলেন তাই একটু দেখালাম আর কি।কিন্তু যেভাবে সরি বলছিলেন আমার নিজের কষ্ট লাগছিলো তাই বলে দিলাম।

–‘তুমি আমার একটা মাত্র বউ রা*গ করেছো সরি বলবই কিন্তু দেয়াল তো আমার কিছু না সরি বলতে যাব কেন?

–‘তার মানে দেয়ালের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক থাকলে দেয়ালকে সত্যি সত্যি সরি বলতেন?

–‘শাট আপ প্রণয়ী।রাগ কমেছে আপনার?

–‘…..

–‘কথা বলো না কেন?

–‘….

–‘উফফ আবার কি হয়েছে?

–‘আশ্চর্য মাত্র ই তো বললেন কথা না বলতে।

–‘আল্লাহ আমি নির্ঘাত পাগল হয়ে যাব।আমি শিওর আর কয়দিন পর পাগলাগারদে তোমার সাথে আমি দেখা করতে যাব।

–‘কেন?আমার সাথে দেখা করতে যাবেন কেন?

–‘কারণ আমি পাগল হয়ে যাব।

–‘তো আপনি পাগল হবেন আপনি যাবেন আমি কেন যাব?

–‘কারণ তুমি আমার জীবনের অংশ,আমার রুম,আমার কাবার্ড যেমন ভাগাভাগি করেছি তোমার সাথে তেমনই আমি পাগল হব চিকিৎসা তোমার করাবো।সিম্পল।

–‘কালকে থেকে আমি অফিসে যাব আপনি বাসায় থাকবেন। সিম্পল।

–‘ ধরে নাও আজকে সিড়ি থেকে পড়ে পা ভে*ঙে গেল।

–‘সিড়ি থেকে পড়লে না পা ভা*ঙবে।

–‘যদি ফেলে দেয়?

কিছু বলতে পারল না সূচনা,বিচলিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। পাত্তা দিল না প্রণয়,উঠে চলে গেল।
_________________________
হাতে ছোট এক কাগজ নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সূচনা।শেলফের বইগুলো গুছিয়ে রাখতে যেয়েই এই কাগজটা পেয়েছে। হয়তো কোনো বইয়ের ভেতরে ছিল নাড়াচাড়া করতে যেয়ে নিচে পড়ে গেছে।তেমন ছোট না,কাগজটাতে কেমন আঁকিবুঁকি করা,স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।সম্ভবত অনেক আগের আকা,কোনো বাচ্চা হাতের,একজন মহিলা নিচে পড়ে আছেন,তার সামনে একজন পুরুষ দাড়িয়ে আছে, ডান হাতে তার কিছু আছে বোধহয়,কাগজটার একেবারে নিচের দিকটায় ছোট্ট একটা তারিখ ও আছে।ছোট করে লেখা শুধু ডিসেম্বর ৩০।এতক্ষণ খুটিয়ে দেখার পর এতটুকুই কোনোরকমে মেলাতে পেরেছে সূচনা।সূচনা বুঝতে পারল না এমন আঁকি বুকি বা সেই তারিখের মানে ও কিছু বুঝলো না।কাগজটা উল্টে দেখতে নিলেই হাত থেকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেল।সূচনা চমকে উঠলো আচমকা আক্র*মনে।সামনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল,কাগজটা প্রণয় হাতে মুঠ করে ধরে রেখেছে, চোখমুখ শক্ত তার।সূচনা কিছু বলার আগেই প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-

–‘এটা কোথায় পেয়েছো?

সূচনা কোনোরকম ভয়ে ভয়ে জবাব দিল-

–‘শে..শেলফের কোনো বইয়ের ভেতর ছিল, গোছাতে নিয়ে দেখি নিচে পড়ে গেছে।

–‘পড়ে গেছে তাহলে সেটা নেড়েচেড়ে দেখছিলে কেন? আর তোমাকে নিষেধ করেছি না ছাদের ঔ রুমের আশেপাশে যেতে না, তাহলে কেন গিয়েছ আবার?

–‘আ..আসলে..

–‘না করেছিলাম?

ধ/মকে উঠলো প্রণয়,তার ধম/কে কেঁপে উঠল সূচনা,ঝাপসা হয়ে গেল চোখ জোড়া।কান্না আসছে তার,গলার ভেতরে আ*টকে যাচ্ছে শব্দ,কোনোরকম কাঠ গলায় বললো-

–‘সরি,আর যাব না।

এটুকু বলেই দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করলো সূচনা।এভাবে না বকলে হতো না?কী ছিল একটা কাগজই তো তার জন্য এমন ব্যবহার?কান্না করাটা কী অতিরিক্ত ইমোশান তার?মানুষ যতই শক্ত হোক না কেন যখন নিজের কাছের মানুষ টা তার সাথে একটু উচ্চ স্বরে ও কথা বলে তখন রাজ্যের কান্না আর মন খারাপ এসে ভিড় করে তার মনে।তার ক্ষেত্রে ও তাই হচ্ছে?

এদিকে সূচনা চলে যেতেই দুই হাত দিয়ে চুল খা*মচে ধরলো প্রণয়।বেডে বসে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে সে,এত বড় ভুল কীভাবে করলো সে্?এখন তো আর এই রুমটা তার একার না।এটা এখানে ভুলে ফেলে রেখেছে তার খেয়াল ই হয়নি, সূচনার হাতে যে পড়তে পারে।সূচনা বুঝেছে কিছু?আচ্ছা সে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে,দোষ তো সূচনার না তারই।ধ্যাত।মাথা চেপে ধরলো আবার।মহারাণীর রা*গ ভাঙাতে হবে।কিন্তু কীভাবে?
________________________
আজ দুইদিন কেটে গেছে সূচনা নিজের বাড়িতে। প্রণয় রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেনি,সূচনা তাই ভেবেছিল তার আব্বুর বাসায় চলে যাওয়ার কথা বললে প্রণয় আট*কাবে তাকে কিন্তু প্রণয় নিজেই তাকে দিয়ে গেছে বাসায়।মিসেস দিশা যখন জিজ্ঞেস করলেন হঠাৎ কিছু না বলে এসেছে যে?তখন জবাব টা প্রণয় নিজেই দিয়েছে। কত সুন্দরকরে মিথ্যা বললো-

–‘অনেকদিন ধরে মন খারাপ করছিলো আসার জন্য তাই নিয়ে আসলাম,আবার এসে নিয়ে যাব।

মিসেস দিশা তাই বিশ্বাস করলেন।এমন টা মোটেও আশা করেনি সূচনা,এখানে আসতে ও চায়নি,সেই যে দিয়ে চলে গেছে আর কল করেও খবর নেয় নি প্রণয়।সেদিনের ব্যবহারে যেমন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়েছিল, সেই মনে হওয়া টা ই এখন সত্যি মেনে নিয়েছে সূচনা।তার ভুল হয়েছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে, গতরাত ঘুমায়নি,চোখ জোড়া যেন অনশন করেছিল ঘুমাবে না বলে।কিন্তু আজকে রাত জাগবে না আর।বলা হয় প্রেম অতি তীব্র হয়ে গেলে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়,তুচ্ছ মনে করে নিজেকে,যার প্রেমে পড়েছে শুধু তার মাঝে নিজেকে খুজে পেতে চায়।এই কথাগুলো বোধ-হয় সত্যি। আজ খুব করে উপলব্ধি করছে সূচনা।সব ভুলে নিজেই আজকে কল দিবে ভেবেছিল।কিন্তু তার আগে কল আসলো প্রণয়ের।বুক ধ্বক করে উঠলো,স্ক্রিনে প্রণয় নামটা দেখেই বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শুরু হলো।ফোন রিসিভ করলো সে,মিনিট কয়েক এর নীরবতা,দুজনই নিশ্চুপ ছিল।নীরবতা ভাঙলো,প্রণয় শীতল কণ্ঠে ডাকলো-

–‘প্রণয়ী?

প্রণয়ের কণ্ঠ সূচনার কান অব্দি আসতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোতের প্রবাহ।অভিমান সব আবারও এক সাথে দলা পাকালো,কয়েক পল পরে ছোট্ট করে জবাব দিল-

–‘হু।

প্রণয় নীরব রইলো আরও কয়েক পল,অতঃপর পূর্বের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বললো-

–‘আই নিড ইউ।আই রিয়েলি নিড ইউ

চোখ জোড়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল সূচনার,হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল একদম,বুকের ধুকপুকানি বাড়লো।এক বাক্যে এত কিছু হয়ে গেল তার?কী ছিল তাতে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here