প্রণয়ের_দহন পর্ব ১৫

#প্রণয়ের_দহন
#পর্ব_১৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

খুব সকালে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের রুমে সামনে এভাবে চিৎকার কেনো করছে? দরজাতে কেউ থাপ্পড় দিচ্ছে ধাম ধাম শব্দে হচ্ছে। বাইরে আব্বু, আম্মু, আনহা আর নিহানের গলা পাওয়া যাচ্ছে। আব্বু বেশ উত্তেজিত হয়ে বলছে,

এমন অসভ্যের মতো চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেনো? এটা ভদ্রলোকের বাসা। বেরিয়ে যাও এখান থেকে। আমি চাই না তুমি আমার ছেলে আর বউকে কোনো ভাবে ডিস্টার্ভ করো। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি তোমাকে এরেস্ট করতে বাধ্য হবো। তুমি একজন ভদ্রলোকের বাসায় গায়ের জুড় খাটিয়ে ঢুকছো আর ভিতরে ঢুকে চেঁচামেচি করছো।

আপনার যা ইচ্ছে করে নিন গিয়ে। আমি এখান থেকে যাব না। আমি আপনার মতো অনেক পুলিশ দেখছি। আপনার মতো পুলিশরা আমাকে কিছু করতে পারবে না। আপনি বড় জোর আমাকে এরেস্ট করতে পারবেন জেলে ঢুকাতে পারবেন নাহ।

বাইরে কী হয়ছে আরশি? সবাই এতো চিৎকার করছে কেনো? আর নিহানই বা এতো সকালে আমাদের বাসায় কী করছে?

উফ আমি কী করে বলবো? তুমি যেখানে আমিও সেখানে।

আচ্ছা তুমি শাওয়ার নিয়ে এসো। আমি বাইরে গিয়ে দেখছি ব্যাপারটা। আজকে যদি নিহান তোমার নামে আর একটাও খারাপ কথা বলে। তাহলে, ওকে আমি খুন করে ফেলবো।

আমি কিছু না বলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। আরিয়ান এখন অনেক রেগে আছে। আমি কিছু বললে তার উল্টোটা বুঝবে। তাই কথা না বাড়ানোই ভালো। আমি শাওয়ার নিয়ে নিলাম। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা ধাক্কি শুরু হয়ে যায়। আমি শরীরে ভালো করে উড়নাটা পেঁচিয়ে বের হয়ে এলাম। দরজার সামনে নিহানকে দেখে মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো। চিৎকার করে বললাম,

এমন অসভ্যের মতো ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেনো? প্রবলেমটা কী আপনার? আমার পারমিশন ছাড়া আমার আর আমার হাজবেন্ডের বেড রুমে ঢুকার অধিকার দিল কে আপনাকে?

এসব কী বলছো আরু? আর তুমি আমাকে আপনি আপনি করে ডাকছো কেনে? তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ করছো কেনো?

আমি আপনার সাথে তেমন বিহেভ করছি যেমন করার দরকার। আপনার সাথে ভালো বা খারাপ কোনো রকম বিহেভ করার আমার ইচ্ছে নেই। আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে। প্লিজ এখান থেকে চলে যান। আমি চাইনা আপনার আচারণের কোনো রকম প্রভাব আমার ম্যারিড লাইফে পড়ুক।

প্লিজ আরু তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো না। এখানটা ( বুকের দিকে ইশারা করে) জ্বলে যায়। আমি তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

আজ এই চরিত্রহীন মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছো কেনো? তার ওপর এখন তো বিবাহিত।

প্লিজ আরু আমাকে ক্ষমা করে দাও। জানি আমি একটা ভুল করেছি। ভুলটা হয়তো ক্ষমার অযোগ্য। তোমার আমাকে ক্ষমা করতে হবে না। তুমি শুধু আমার সাথে চল। তোমাকে আমি আমার লাইফে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

আপনি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেই যে আমিও আপনার সাথে চলে যাব। সেটা আপনি ভাবলেন কী করে? আপনি ভুল করেননি। আপনি আমার সাথে অন্যায় করেছ। যার কোনো ক্ষমা নাই। আপনি জানেন বিয়ের আসরে একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া কতটা অপমানজনক? আর বিয়েটা যদি ভেঙে দেওয়া হয় ছেলে পক্ষ থেকে তাহলে তো আর কথাই নাই। আপনি বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য রিজন হিসেবে দাঁড় করালেন আমি চরিত্রহীন। আপনি একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন না। আপনি ক্ষেত, আনস্মার্ট মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারবে না। তাহলে আজকে এই ক্ষেত আনস্মার্ট মেয়েটার কাছে কেনো এসেছন? আর আপনার শিক্ষিত স্মার্ট বউ কই? যাক গে আপনার বউ সম্পর্কে জানার বিন্দু মাত্র জানার ইচ্ছে নেই। ইনফ্যাক্ট আপনি রিলেটেড কোনো কথায় আমি শুনতে চাই না। চলে যান এখান থেকে। আপনার মতো মেরুদণ্ডহীন ছেলের সাথে আমি কোথাও যাব না। আপনার মতো ছেলের সাথে যাওয়ার থেকে মরে যাওয়া ভালো।

প্লিজ এভাবে বলো না। আমি ইচ্ছে করে ঐ দিন বিয়ে ভেঙ্গে দেইনি। বাধ্য হয়ে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিলাম। গাঁয়ে হলুদের আগের দিন জানতে পারি আমি ক্যান্সার নামক ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত। আমার হাতে সময় ছিল মাত্র দুই মাস। এটা জানার পর আমি তোমাকে কী করে আমার অনিশ্চিত জীবনে জড়াতাম? তাই আমি ভেবেছিলাম তোমাকে সবটা বলে দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিব। তাই গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান যখন হচ্ছিল তখন তোমাকে উপরে যেতে বলি। তুমি আমার কথা মতো উপরে যাও। কিন্তু ভুল করে আরিয়ানকে আমি ভেবে জড়িয়ে ধরো। তখনি আমি রুমে প্রবেশ করি। অজান্তেই তোমাদের জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ভিডিও করি ফেলি। আর ভিডিওটা গিয়ে আনিশাকে দেখাই। আনিশা ভিডিওটা দেখার পর বলে বিয়ের দিন তাকে বিয়ে করে নিয়ে তোমার গায়ে চরিত্রহীনা নামক তকমা লাগিয়ে দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে। তাহলে তুমি আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে আর আরিয়ানের সাথে সংসার শুরু করবে। সবকিছু আমাদের প্লেন মতোই হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর জানতে পারি আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত না। কেউ ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা ক্যান্সারের রিপোর্ট বানায়। সেই রিপোর্টটা আর কেউ না আনিশায় বানিয়েছিল। আনিশা আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আনিশাকে রিজেক্ট করে দেই। তার প্রতিশোধ নিতেই এমন একটা জঘন্য খেলা খেলেছে তোমার আর আমার সাথে। ওর জন্য আমাদের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমি খুব তাড়াতাড়ি আনিশাকে ডিভোর্স দিব আর তোমাকে বিয়ে করবো। আরু প্লিজ আমার সাথে চল।

যাস্ট সাট আপ মি. নিহান। আরেকবার জেনো আপনার মুখে আরু নামটা না শুনি। আর কতো নাটক করবেন আপনি? নাটক নাটক করতে আপনি ক্লান্ত হোন না? আপনি কী ভাবছেন আমি সত্যিটা জানি না?

তুমি কী জানো?

আপনি আনিশাকে ডিভোর্স দিতে চাইছেন কারণ আনিশা কখনো মা হতে পারবে না। আনিশার মা হওয়ার ক্ষমতা নাই। আপনি…….

এসব মিথ্যে কথা। ( চিৎকার করে)

চিৎকার করলেই সত্যিটা পাল্টে যাবে না বা সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে। আপনি হচ্ছেন একজন স্বার্থবাদী মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারেন। আপনার কোনো ক্যান্সার ফ্যান্সার হয়নি বা ক্যান্সারের কোনো নকল রিপোর্টও আপনাকে দেওয়া হয়নি। সবটাই ছিল আপনার আর আনিশার প্লেন। এটা ঠিক আনিশা আপনাকে প্রোপোজ করেছিল। কিন্তু আপনি রিজেক্ট করে দেন নাই। বরং প্রোপোজেলটা সাদরে গ্রহণ করে নেন। আনিশার মতো একটা মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে পাওয়া আপনার কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো ছিল। কারণ আনিশা যেমন সুন্দরী তেমনি স্মার্ট, টাকাওয়ালা বাবার মেয়ে। তাই আপনি আনিশাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান। আপনি জানতেন আরিয়ান আমাকে ভালোবাসে। আর আপনি সেই সুযোগটায় কাজে লাগালেন। গাঁয়ে হলুদের দিন আপনি সেইম আরিয়ানের মতো সেজে এসেছিলেন। আপনাদের প্লেন ছিল আরিয়ানের শরীরে পানি জাতীয় কিছু ফেলে দিবেন। আরিয়ান সেটা পরিষ্কার করার জন্য ওয়াশরুমে যাবে। আর আপনিও আমাকে সেখানে পাঠিয়ে দিবেন আমার শরীরে হলুদ লাগানোর কথা বলে। আমি আর আরিয়ান এক রুমে ঢুকতেই আপনারা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিবেন আর বাসার সবাইকে চিৎকার করে ডাকবেন। সবাই আমাদের দুজনকে এক রুম থেকে আবিষ্কার করলে আপনি আমাকে চরিত্রহীনা বলে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যাবেন। কিন্তু আপনাদের কাজটা আরেকটু সহজ করে দিল আরিয়ান। আরিয়ান নিজেই একটা রুমে চলে গেলো আর আপনিও আমাকে সেই রুমে পাঠিয়ে দিলেন। আমি অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্টে এতো খেয়াল না করে আরিয়ানকে আপনি ভেবে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আপনি তখনি ভিডিওটা করে ফেলেন। আর পরেরদিন সেই ভিডিও দেখিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে গেলেন। আর আমাকে আর আরিয়ানকে বানিয়ে গেলেন চরিত্রহীন। কাউকে ধোকা দিয়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না। সেটার জল জ্যান্ত প্রমাণ আপনি। আপনার বিবাহিত জীবনের তিনটা দিনও সুখের কাটলো না। বিয়ের তিন দিনের মাথায় জানতে পারলেন আনিশা কখনো মা হতে পারবে না। তাই এখন আনিশাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। কারণ আপনি ভেবেছিলেন আমি আপনার জীহনের সেকেন্ড অপশন হিসেবে চিরকাল থাকবো।

এসব মিথ্যে। বিশ্বাস করো আরু তোমার বলা একটা কথাও সত্যি না। তোমার আর আমার বিরুদ্ধে আবার কেউ ষড়যন্ত্র করছে। আর এই ষড়যন্ত্রকারী আর কেউ না এই আরিয়ান। এই পৃথিবীতে দুজন ব্যক্তিই আছে যারা চায় না আমরা দুজন এক হই।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here