প্রণয়ে দহন পর্ব -০৮

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৮
#writer_nahida_islam

টাকা না চান আমি চাই না করো করুনার পাত্র হয়ে থাকতে। যতদিন টাকা পরিশোধ না হবে আমি বেতন নিবো না।

কথাটা বলে ই অহনা চলে যতে চাইলে, শুভ্র পিছন দিয়ে অহনার হাত টেনে ধরে। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে ই শুভ্র জোরে টান দিয়ে অহনাকে একেবারে নিজের সামনে নিয়ে আসে।

-কি করছেন হে, ছাড়ুন আমাকে।

-তুমি কোথায় যাচ্ছো ঐটা বলো, ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি।

-আমার উপর আপনার কিসের এতো অধিকার?

-এতো প্রশ্নের উওর দিতে পারবো না। শান্ত হয়ে এখানে বসো।
অহনাকে চেয়ার টেনে বসতে দিয়ে শুভ্র উপরে চলে যায়। রেডি হয়ে নিচে এসে অহনাকে বলে

-আমি কোনো টাকা তোমার থেকে নিতে পারবো না।

-তাহলে আমি রিজাইন দিয়ে চলে আসবো।

-সে তুমি করতে ই পারো, কিন্তু চুক্তিতে যে সাইন দিয়েছো তা মনো আছে।

-মনে আছে কি করবেন হে।

-আমি আজ ই রিজাইন দিবো। দেখি পরে আপনি কি করেন। অন্যকোথায়ও কাজ করে আপনার টাকা পরিশোধ করে দিবো।

কথাটুকু বলে ই অহনা চলে গেলো শুভ্রের বাড়ি থেকে। অহনা চলে যেতে ই শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিন্তু গাড়ি নিয়ে বের হলে ও অহনা কে কোথাও পেলো না। হতাশ হয়ে অফিসে চলে গেলো।

শুভ্র অফিসে ঢুকতে ই নয়না কে দেখলো এতে তার আরো রাগ বেড়ে গেলো,

-শুভ্র তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?

-তোর সমস্যা কি বলবি?

-তুমি সব সময় এতো রেগে থাকো কেন।

-তোর এসব ন্যাকামি দেখে।

এর মধ্যে ই অহনা অফিসে ডুকে। ডুকে ই অহনার হাতে থাকা লেটার টা শুভ্রের হাতে দিতে ই শুভ্র রাগে ছিড়ে ফেলে।

-তোমার ইচ্ছে তে সব হবে না অহনা।

শুভ্র রেগে বললো,

-তুমি কল্পনা ও করতে পারবে না আমি ইচ্ছে করলে এখন কি করতে পারি।

অহনা শুভ্রের মুখের কাছে গিয়ে বললো,

-পারলে আটকে দেখান।

-অহনা প্লিজ রাগাবে না আমাকে।

নয়না দুইজনকে দুইদিকে ধাক্কা দিয়ে বললো,

-উফফ দুইজনের ঝগড়া বন্ধ করো তো। তোমাদের দুইজনের ই আমার জন্মদিনের দাওয়াত। তোমরা দুইজন ই আমার জন্মদিন যাবে। নয়তো আমি খুব কষ্ট পাবো। কি অহনা যাবে না।

অহনা খুব ভালো করে জানে শুভ্র নয়নার কথায় রাগ আরো এক ধাপ বেড়ে গেছে। তাই আরেকটু রাগানোর জন্য বললো,

-হে, অবশ্যই ই যাবো।

নয়না খুশি হয়ে বললো,

-কি শুভ্র তুমি যাবে না।

অহনার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শুভ্র হেসে উওর দিলো,

-অবশ্যই যাবো।

-আচ্ছা কালকে সন্ধ্যায় তোমরা দুজন ই পূর্বাশা রিসোর্টে চলে আসবে। আমি তোমাদেরকে এড্রেসটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু কোনো গিফট নেওয়া যাবে না।

অহনা শুভ্র দুইজন ই মাথা নাড়লো

অহনা আর দাড়ালো না। কাউকে কিছু না বলে সোজা বাসায় চলে আসলো।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অহনা বিছানায় শুয়ে পড়লো, নানা চিন্তাভাবনা করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লো। প্রায় সন্ধ্যায় শাহির ডাকে অহনার ঘুম ভাঙ্গলো।

-এই টাইমে ঘুমাচ্ছিস যে।

-কি করবে, সবই আমার কপাল।

-আবার কি হলো?

-এই অফিসে যাবো না আর রিজাইন দিয়েছি। যদিয় অব্যাহতি পত্রটি নেয়নি তাও বলেছি উনার অফিসে আর কাজ করবো না।

-এটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না? লোকটা তো চাচ্ছে তোকে সাহায্য করতে আর তুই এটা কি করলি।

-কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমি নিজে ইনকাম করে ই তো সব টাকা পরিশোধ করতে পারতাম আমাকে দয়া দেখানোর তো কিছু ছিলো না।

-সব কিছু নেগেটিভ ভাবে নিস কেনো পজিটিভ ভাবে নিলে ও তো পারিস।

-থাক না বাদ দে ঐসব কথা।

-আচ্ছা আমি না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তুই এখন কি করবি। বাসায় বসে থাকলে ই তো মা তোকে বিয়ে দিতে চাইবে।

-জানি না রে এতো প্রেশার নিতে পারছি না।তারউপর কালকে একটা দাওয়াত আছে। মুখের ঠেলায় তো বলে দিছি যাবো কিন্তু এখন কি পড়ে যাবো তা ই তো ভাবতেছি আর রাতের বেলা করে মামি যেতে দিবে নাকি।

ঐসব ভাবনা পরে হবে, আগে কালকের দিনটা আসতে দে।

_________________________________

সকালে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা শুনে উঠে দ্রুত দরজা খুলে গিয়ে ই মুখটা মলিন হয়ে যায়।

-কি দাদু ভাই আমাকে দেখে খুশি হওনি।

শুভ্র মুখে হাসি টেনে বললো,

-অনেক খুশি হয়েছি সুইটহার্ট।

-তাহলে মুখখানা মলিন করে রেখেছো কেনে দাদুভাই। মনে হচ্ছে অন্য কাউকে আশা করেছিলে।

-আরে তেমন কিছু না সুইটহার্ট। আমি তো ভাবছিলাম অ…

মুখ দিয়ে অ বের করে ই থেকে গেলো শুভ্র। তৎক্ষনাৎ দাদিমা বললো,

-অ কি দাদু ভাই।

-আরে আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি এসেছো যে।

শুভ্র নিজের মাথা নিজে ভারি মারে। আরেকটু হলে ই অহনার কথা দাদিমাকে বলে দিত।

শুভ্র ফ্রেশ হয়ে। দাদিমার জন্য খাবার আনিয়েছে। খাবার টেবিলে দিয়ে দাদিমাকে ডাকে। দাদামি বেশ শক্ত পোক্ত মানুষ। এখন ও নিজে চলাচল করতে পারে। নিচে এসে নাস্তার টেবিলে বসে ই বললো,

-বিয়ে করবে কবে দাদুভাই?

-দাদিমা জানো আমি একটা পরীর সন্ধান পেয়েছি। অন্যকারো কাছে সে কেমন বা তাকে দেখতে কেমন ঐটা, আমি জানি না। আমার চোখে সে পরী, তার রুপের তুলনা আমার মুখের ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব না। সে আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দর নারী। প্রথমজন আমার মা। দ্বিতীয় জন সে। ভালোবাসি আমি তাকে কিন্তু বলতে পারি না।

-আরে দাদু ভাইকে কে সে বলো আমাকে। আমি এখন ই তাকে নিয়ে আসবো।

-এটা ই তো সমস্যা। এই মেয়ে বড্ড পাকা, নিজে যা বলবে তাই আমার কথা পাত্তা ও দেয় না।

-এখন ই তো বললে সে সুন্দর। এখন ই আবার তার বদনাম করছো।

-আরে সুইটহার্ট এটা বদনাম না। সব কিছু ই তো ভালো খারাপ দিক আছে তার ও এইটা ই খারাপ দিক যে সে যা বলে তাই ই কারো কথা শুনতে চায় না।

-আচ্ছা দাদুভাই চিন্তা করো না বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

-এই মেয়েকে বিয়ে করা অসম্ভব। এই মেয়ে যে ঘাড় ত্যাড়া।

-তাহলে তো সারাজীবন তাকে নিয়ে স্বপ্ন ই দেখতে হবে।

শুভ্র আর কোনো কথা বললো না মনটা খারাপ করে বসে রইলো।

সন্ধ্যা হতে ই শুভ্র গাড়ি নিয়ে পাড়ার মোড়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু অহনার দেখা নাই। এই মেয়ের কাছে যে টাকা নাই তা শুভ্র খুব ভালো করে জানে তাই আগে থেকে ই এসে বসে আছে।

হঠাৎ শুভ্রে চোখ আটকে যায়। নীল রঙের শাড়ি পড়িহিত এক নারীর চোখে। এই চোখ বিষন পরিচিত আর মায়ার ভরা। যে চোখের দিকে তাকিয়ে এক জনম অনয়েশে পার করে দিতে পারবে সেই চোখ জোরার অধিকার সে।

অহনা আজ শাড়ি পড়েছে, দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে পাড়ার মোড়ে আসতে ই শুভ্রের গাড়ি চোখে পড়ে তাই দ্রুত হাটতে থাকে।

অহনার দ্রুত হাটা দেখে শুভ্র ও গাড়ি চালিয়ে অহনার পিছন পিছন যায়, অহনা বিরক্ত হয়ে শুভ্রের গাড়ির সাইডে এসে দাড়ায়। শুভ্র জানালার গ্লাস খুলে বললো,

-গাড়িতে আসো।
-আপনি অযথা এমন করছেন কেনো?

-আমি কি করলাম। তুমি গাড়িতে না উঠলে আমি এমন ই করবো।

-আমার পিছন পিছন আসবেন না।

-কেনো আসবো না, রাস্তার সব মানুষ তোমাকে দেখতেছে। এর থেকে ভালো না, আমার সাথে গাড়িতে চলো।

অহনা চারপাশে তাকিয়ে দেখলো, আসলে ই চারপাশে সকলে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে অহনা গাড়িতে উঠে বসলো।

শুভ্র একদৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে।

-আরে কি দেখছেন?

-দেখছি, তুমি যে সিট বেল পড়লোনি

অহনা চেষ্টা করে ও লাগেতে পারছে না। তাই শুভ্র অহনার দিকে আগাতে ই মিষ্টি একটা স্মেইল, শুভ্রকে সব কিছু ভুলিয়ে দিচ্ছে…..

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here