প্রণয় রেখা পর্ব -০৪+৫

#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪.

‘সবকিছু পরে, আগে বল আমাদের মাঝে থেকে কে ঐ বিদেশি কে সাহায্য করছিস?’

এশার প্রশ্নে যেন সকলে আকাশ থেকে পড়ল। রাফাত কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

‘আমাদের মধ্যে থেকে আবার কে ওকে সাহায্য করবে?’

মোহনা জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,

‘কেউ একজন তো অবশ্যই করছে। নয়তো ঐ ছেলে ডিরেক্ট আমার বাসার ঠিকানা পেল কীভাবে। নিশ্চয়ই এমন কেউ ওকে সাহায্য করছে যে আমার খুব কাছের, আমার সম্পর্কে যে অনেক কিছু জানে এমন কেউ।’

সবার চোখে মুখে গাঢ় চিন্তার ছাপ পড়ল। সেখান থেকে কাউকেই সন্দেহজনক মনে হলো না। রাফাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

‘আরে এটা নিয়ে এত ভাবার কী আছে? আজকে ওর সাথে কথা বলার সময়ই তো সব জানা যাবে, তাই না?’

এশাও রাফাতের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,

‘হ্যাঁ তাই তো। এত দুশ্চিন্তা করছি কেন, দেখা হলে ঐ পোলার কাছ থেকেই তো সব কিছু জেনে নিব।’

একে একে সবাই প্ল্যান করতে লাগল, কীভাবে তারা লোকটাকে বোঝাবে। এই নিয়ে একেক জনের একেক মতামত। মোহনা কারোর উপরই তেমন ভরসা করতে পারছে না। দুশ্চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে যে, পরে আবার হিতে বিপরীত হবে না তো?

কফি শপের এক কর্ণারের বড়ো টেবিলটাতে সবাই পাশাপাশি বসল। বেশ কিছুক্ষণ আগে মোহনা লরিনকে জায়গার নাম মেসেজ করে দিয়েছে। সাথে বলেও দিয়েছে কীভাবে কীভাবে আসতে হবে। মোহনার পেটের ভেতরে যেন কেমন করছে। ভয় না অস্বস্তি সেটা সে ধরতে পারছে না। বাইরে প্রচণ্ড গরম। কপাল বেয়ে মোহনার ঘাম পড়ছে। ওড়না টা মাথা থেকে সরিয়ে মোহনা একটু নড়ে চড়ে বসল। পাশ থেকে এশা তার হাতের উপর হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করল।

বেশ কিছু সময় বাদে একজন ফর্সা দেখতে লম্বা করে লোক তাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়। লোকটার ঠোঁটে ঝুলে আছে চমৎকার এক হাসি। চোখগুলো তার খুশিতে ঝলমল করছে। সে এসেই হাত নাড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,

‘হ্যালো গাইস।’

সকলে বিস্ময় ভরা চোখে তার দিকে চাইল। মোহনা নির্বাক, নিষ্পলক। একটা মেয়ে সেখান থেকে বলে উঠল,

‘আর ইউ দ্যা বিলাতি ইন্দুর?’

লোকটি হা করে চেয়ে রইল। রাফাত মেয়েটির চুল টেনে বলল,

‘চুপ কর।’

তারপর সে লোকটি কে বলল,

‘হ্যালো লরিন, প্লীজ সিট ডাউন।

লরিন হেসে রাফাতের পাশের খালি চেয়ারটায় বসল। মোহনা এখনো নিস্তব্ধ। রাফাত একে একে সবার পরিচয় বলল। শেষে বাকি রইল কেবল মোহনা। তার দিকে তাকিয়ে রাফাত কিছু বলার আগেই লরিন বলে উঠল,

‘And here’s my mohona, am I right?’

“My Mhona”, শব্দ জোড়া শুনে মোহনা কেন যেন আঁতকে উঠল। সে ঢোক গিলে বলল,

‘Hi’

লরিনের চোখে মুখে যেন এক পশলা খুশির মেঘ নেমে এলো। সে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

‘Finally I got to see you. Ah, now my heart is cold.’

সবাই মোহনার দিকে চেয়ে আছে। মোহনার মাঝে কোনো ভাবাবেগ নেই। সেই বরাবরের মতোই নিরব।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মোহনা। এশার দিকে চাইল। এশা তখন রাফাত কে ইশারায় কিছু একটা বোঝাল। রাফাত তখন গলা ঝেড়ে বলল,

‘What would you like to order, lorraine?’

লরিন জবাবে বলল,

‘Just a cup of coffee.’

রাফাত সবার জন্য কফি অর্ডার দিল। সব কাজ শেষ এবার আসল কাজ শুরু করতে হবে। রাফাত একটু নড়ে চড়ে বসল। লরিনের দিকে হেসে তাকিয়ে বলল,

‘So bro, give me an answer. How could you get mohona’s home address? Did anybody help you?’

লরিন কিছু একটা ভেবে বলল,

‘I don’t know. Actually, when I came Bangladesh, I got a massage from an unknown number.And that’s Where I found mohona’s address.’

এশা প্রশ্ন করল,

‘Can you give us the number of that person?’

লরিন ইতস্তত কন্ঠে বলল,

‘Sorry, I can’t do that. It’s illegal.’

‘But you..’

রাফাত ইশারা দিয়ে এশাকে থামতে বলল। এশা মুখ গুঁজে বসল। রাফাত তখন বলল,

‘Ok look bro, we know everything. We know that you like mohona. And you came to Bangladesh just for see her. It’s a big thing, you know? But I’m Sorry to say that, Mohona don’t like you. Actually, it’s a dare which was given to mohona from us. And for complete this dare mohona proposed you, nothing else. Hope you understand all the matter. And we are really sorry for this. Please forgive us.

‘Hey it’s ok. I don’t mind.’

লরিন কে এতটা স্বাভাবিক দেখে সবাই ভীষণ অবাক হলো। অনেকক্ষণ পর মোহনা এবার মুখ খুলল। বলল,

‘I’m also so sorry. I will be very happy, if you forget all this misunderstanding and go back to your country.’

হুট করেই দুই ভ্রু এর মাঝে ভাঁজ পড়ে গেল লরিনের। সে সোজা হয়ে বসে বলল,

‘আমি আমার ডেশে কেন ব্যাক করব?’

লরিনের মুখে বাংলা শুনে সবাই চমকে গেল। চোখের পলক যেন কারোর পড়ছে না। মোহনা অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে বলল,

‘আপনি বাংলা জানেন?’

লরিন মুচকি হেসে বলল,

‘হা, আমি বাংলা জানি, বুঝি আর বলতেও পারি।’

সবাই একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। এর থেকে আশ্চর্য্যজনক ঘটনার সম্মুখীন এর আগে কখনো কেউ হয়নি। রাফাত শুকনো মুখে বলল,

‘আপনাকে বাংলা কে শেখাল?’

‘আমার একঠা বাঙালি বন্ঢু আছে, আমি তার কাছ থেকেই বাংলা শিখেছি।’

মোহনা মাথা চাপড়ে বসল। সবার কফিও তখন চলে এসেছে। লরিন তার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

‘আমি খুব ভালো বাংলা বলতে পারি না। তবে ঠোমরা আমাকে শিখিয়ে দিলে আমিও ঠোমাদের মতো সুন্দর বাংলা বলতে পারব।’

রাফাত তখন ফিচেল গলায় বলল,

‘তোমার আর বাংলা শিখতে হবে না ভাই। তুমি তোমার দেশে যাও। সেখানে গিয়ে বিয়ে শাদী করে বাচ্চা কাচ্চা পয়দা করো। অযথা আমাদের গলায় এসে ঝুলো না।’

লরিন হাসল। তার হাসি দেখে তাদের এক বান্ধবী দিশা বলল,

‘আপনার হাসি সুন্দর।’

সবাই বিরক্ত চোখে দিশার দিকে তাকালে দিশা বোকা বোকা হেসে কফির কাপে ঠোঁট ভেজায়। লরিন বলে,

‘বিয়ে করতেই তো এসেছি। মোহানা, আমাকে ঠোমার বাসায় নিয়ে চলো, আমি ঠোমার মা বাবার সাথে কথা বলতে চাই।’

মোহনা ঢোক গিলল। যতটা কঠিন সে ভেবেছিল ব্যাপারটা তার থেকেও অনেক বেশি কঠিন। সে জবাব না দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইল কেবল। এশা তখন কিছুটা রেগে বলল,

‘এই মি., আপনি কি কথা বোঝেন না? আমরা তো বললাম এটা একটা ডেয়ার ছিল। মোহনা আপনাকে পছন্দ করে না। শুধুমাত্র আমাদের চাপে পড়ে ও আপনাকে প্রপোজ করেছে। আর আপনি এত সিরিয়াস হচ্ছেন কেন? বললেই বিয়ে হয়ে যাবে তাই না? মামার বাড়ির আবদার নাকি?’

লরিন শান্ত গলায় বলল,

‘মোহানার পছন্দ করার ঢরকার নেই, আমি মোহানাকে পছন্দ করি সেঠাই যথেষ্ট।’

মোহনা বাকরুদ্ধ। তার চোখে মুখে এই মুহূর্তে ভীষণ হতাশা এসে ভর করেছে। রাফাত রেগে গেল। টেবিলের উপর চাপড় মেরে সে খুব রাগ দেখিয়ে কিছু বলার আগেই এশা থাকে থামিয়ে দিল। এশা এবার ধীর গলায় বলল,

‘দেখুন মি. লরিন, আপনি অবুঝ নন। আপনি বুঝতে পারছেন সমস্যাটা কোথায়। এইসবটাই একটা ছোট্ট মজা ছিল কেবল। বন্ধুরা বন্ধুরা এমন মজা করেই থাকে। এটা নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। এখন সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি আপনার দেশে ফিরে যান। এখানে থেকে কোনো লাভ নেই। আর সবকিছুর জন্য তো আমরা দুঃখিত, বললাম’ই। তাই প্লীজ এসব কিছু ভুলে যান, আর যার যার পথে ফিরে যান সেটাই ভালো হবে।’

লরিন কোনো জবাব না দিয়ে ঢকঢক করে পুরো কফি টা গিলল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে তার জবাবের অপেক্ষা করছে। এক পর্যায়ে অনেকটা সময় পর লরিন গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘Sorry, I can’t back to my country without mohona.’

কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লরিন সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। আর সবাই আশ্চর্য্য হয়ে হয়ে ভাবতে লাগল, এবার তারা কী করবে।

চলবে…#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫.

মোহনা আর ভার্সিটিতে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। মন মেজাজ ঠিক নেই তার। মন বলছে কোনো এক ঝামেলা অবশ্যই হবে। এশা তার সাথে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু সে কারোর সাথে কোনোরূপ কথা না বলে নিজে নিজেই চলে আসে।

লায়লা বেগম দরজা খুলে মেয়েকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী ব্যাপার, আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?’

মোহনা জুতা খুলতে খুলতে বলল,

‘শরীরটা ভালো লাগছিল না আম্মু, তাই চলে এসেছি।’

‘আচ্ছা যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’

রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মাথাটা টনটন করছে। ক্লান্ত লাগছে। ভালো লাগছে না কিছু। ঐ বিদেশির কথা মাথা থেকে কোনো ভাবেই বের হচ্ছে না তার। দুশ্চিন্তায় অস্থির সে। কোনো উপায়ও আওড়াতে পারছে না। দিন যত যাবে ঝামেলা ততই বাড়বে। আর কোনো ভাবে যদি এসব বাবার কানে যায়, তবে তার মৃত্যু অবধারিত।

ভেবে ভেবে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মন নিয়ে মোহনা ওয়াশরুমে ঢুকে গোসল করতে। সে গোসল করতে করতেই তার ছোট বোন মাহিয়াও স্কুল থেকে চলে আসে। সে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে মোহনার ওয়াশরুমের দরজায় বার কয়েকবার ধাক্কা দেয়। মোহনা খুব বিরক্ত হলেও ভেতর থেকে কোনপ্রকার জবাব দেয় না। মাহিয়া ড্রেস চেঞ্জ করে খাটের উপর আরাম করে বসে। তার মন আকুপাকু করছে সব শোনার জন্য। অশান্ত মন নিয়ে সে আরো দু বার বোন কে ডাকল।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই মোহনা মাহিয়াকে আগে একটা জোরে ধমক দিল। তার ডাকাডাকির জ্বালায় সে ঠিকমতো গোসলটাও করতে পারেনি। কিন্তু মাহিয়া এসবে মাথা না ঘামিয়ে উল্টো খুব উত্তেজিত হয়ে মোহনাকে জিজ্ঞেস করল,

‘এই আপু, কী কী হয়েছে বলোনা।’

মোহনা জবাব না দিয়ে চুল মুছতে লাগল। মাহিয়া তাকে পুনরায় একই প্রশ্ন করল। মোহনা বিরক্ত হলো এতে। বলল,

‘কী হবে? কিছুই হয়নি।’

‘আরে, তুমি না ঐ বিদেশি ছেলেটার সাথে না দেখা করবে বলেছিলে; তা করেছ দেখা?’

মোহনা ভেজা টাওয়াল টা বিছানার উপর ছুঁড়ে মারল। রাগি গলায় বলল,

‘হ্যাঁ, দেখা করেছি।’

মাহিয়া আরো বেশি চটপটে হয়ে পড়ল। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

‘কী কথা হয়েছে তোমাদের?’

মোহনা ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ঐ পোলা বলেছে সে নাকি আমাকে ছাড়া তার দেশে ফিরে যাবে না। সে নাকি আমাকে বিয়ে করবে। আমার বাসায় এসে মা বাবার সাথে কথা বলবে।’

‘আল্লাহ, কী সাংঘাতিক! তারপর তুমি কী বলেছ?’

‘আমরা সবাই ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ও মনে হয় খুব ত্যাড়া, এত সহজে মনে হচ্ছে না বুঝবে।’

মোহনার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ দেখে মাহিয়া বলল,

‘থাক, চিন্তা করো না আপু। তুমি ওকে আর পাত্তা দিও না তাহলেই হবে। আর ফেইসবুক থেকেও ব্লক করে দাও, যেন ও তোমার সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখতে না পারে।’

‘হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। দাঁড়া, এখনই ওকে ব্লক করছি।’

যেমন কথা তেমন কাজ। মোহনা সঙ্গে সঙ্গেই লরিনকে ফেইসবুক আর মেসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দিল। এবার যেন কিছুটা হলেও শান্তি পাচ্ছে সে। লোকটার ফোন আর আজাইরা মেসেজ থেকে তো অন্তত রেহাই পাবে সে।

মোহনার বাবা বাইরে থেকে আসার পর সবাই একসাথে খেতে বসল। খাওয়ার মাঝেই মোহনার বাবা বললেন,

‘জানোতো মোহনার মা, আগামী সপ্তাহে নাকি আব্দুলের ছেলে অরূপ দেশে আসছে। ভাবছি ও আসলে, আমাদের বাসায় ওকে একবার দাওয়াত করবো, তুমি কী বলো?’

লায়লা বেগম সম্মতি জানিয়ে বললেন,

‘হ্যাঁ অবশ্যই। কতদিন পর ছেলেটা আসছে, ওর পুরো পরিবারসহ দাওয়াত করবে বুঝেছ?’

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’

“অরূপ” নামের মানুষটার সাথে মোহনার খুব একটা পরিচয় নেই। বাবার বন্ধুর ছেলে হওয়ার সুবাদে যা একটু পরিচয় ঐটুকুই। কখনো “কেমন আছেন, ভালো আছি” ব্যতিত তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয়নি। তবে মানুষটা কে সে যতবারই দেখেছে ততবারই মনে হয়েছে; যদি তার কাছে কোনো পারফেক্ট মানুষের সংজ্ঞা চাওয়া হয় তাহলে সে তার কথাই বলবে। ভেতরে আর বাহিরে কারোর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য থাকলে তাকে আর অন্য সৌন্দর্য খুঁজে বেড়াতে হয় না। আর সেই সৌন্দর্যের’ই একনিষ্ঠ অধিকারী হলো “অরূপ” নামের ব্যক্তিটি।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আজ কেউ ছাদে যায়নি। দুই বোন আজ ঘুমিয়েছে। সেই ঘুম তাদের ভেঙেছে সন্ধ্যা সাত’টা নাগাদ। মোহনা উঠে গিয়ে চা বানাল। তার হাতের মালাই চা দারুণ মজা। মাহিয়ার মতে তার বোনের হাতের এই মালাই চা একবার যে খাবে সে আর অন্য কোনো চায়ের কথা চিন্তাও করতে পারবে না। মোহনা আজ আবার মালাই চা বানিয়েছে। মা বাবাকে দুই কাপ দিয়ে বাকি দুই কাপ নিয়ে নিজের রুমে এল সে। মাহিয়া তখন তার চুলে বেনী করছিল। মালাই চা দেখে মাহিয়ার মুখে চমৎকার হাসি ফুটে উঠল। চুল বাঁধা রেখে সে চা পান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মোহনাও তার পাশে বসল। চা খেতে খেতেই ফোনটা হাতে নিল সে। দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল এসেছে। সময় দেখে বুঝল, সে যখন ঘুমিয়েছিল তখনই কলগুলো এসেছে। ফোনটা সাইলেন্ট মুডে থাকায় আর টের পায়নি। নাম্বার টা মোহনার অচেনা। তাই তার আর সেই নাম্বারে কল ব্যাক করতে ইচ্ছে করল না। সে নাস্তা টাস্তা খেয়ে পড়তে বসে গেল।

রাতের খাবারের পর মোহনা নিজের রুমে আসে। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা তার ফোনটা ঠিক সেই সময়’ই বেজে উঠে। হাতে নিয়ে দেখে সেই আগের আননোন নাম্বার। কলটা এবার রিসিভ করল সে। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘হ্যালো, কে বলছেন?’

অপর পাশের লোকটি সালামের জবাব দিয়ে বলল,

‘আমাকে ব্লক কেন করলে, মোহানা? এক্ষুণি বারান্দায় এসো, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।’

মোহনার আর বুঝতে বাকি রইল না লোকটি কে। ভয়ে তার গলা তখন শুকিয়ে গেল। এত রাতে লোকটি তার বাসার নিচে। কী ভয়ানক ব্যাপার! ফাঁকা মস্তিষ্কে সে ভেবে পাচ্ছে না কী করবে। কলের ওপারের ব্যক্তিটি তখন বলল,

‘আমি অপেক্ষা করছি তো মোহানা। কাম ফাস্ট।’

মোহনা দ্রুত বারান্দার কাছে গেল। গিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই রাস্তার ওপারে লরিন দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা ঝাপসা। তবে শরীরের গঠন দেখে তাকে চেনা যাচ্ছে। লরিন দূর থেকে মোহনাকে দেখে তৃপ্তি পেল খুব। উল্লসিত কন্ঠে বলল,

‘I miss you, Mohona.’

মোহনা কপাল কুঁচকাল। বলল,

‘আপনি আমার নাম্বার কীভাবে পেলেন?’

লরিন হেসে বলল,

‘It’s a magic.’

মোহনা রেগে গিয়ে বলল,

‘আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? বলুন, আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন? কে দিয়েছে আমার নাম্বার আপনাকে?’

লরিন বলল,

‘কেউ দেয়নি।’

‘তাহলে নাম্বারটা কি আকাশ থেকে টুপ করে আপনার মোবাইলে এসে পড়েছে?’

‘হা হা, কিছুটা এমনই। আচ্ছা আমি বলব, আগে ঠুমি আমাকে আনব্লক করো।’

‘কখনোই না।’

‘তাসলে আমিও তোমাকে কখনোই কিছু বলব না।’

মোহনা রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিল। নাম্বারটাও সাথে সাথে ব্লক করে দিল সে। কিন্তু পরক্ষণেই সে দেখল আরেকটা আননোন নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসছে। সে বুঝতে পারল, এত সহজে এই বিলাতি ইন্দুরের কাছ থেকে সে রেহাই পাবে না।

চলবে…

(এখনই কিছু বুঝতে পারবেন না। তবে হ্যাঁ, লরিন সত্যি সত্যিই মোহনার জন্য খুব বিরক্তিকর একজন লোক হবে। অপেক্ষা করুন…😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here