#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#আটত্রিশতম_পর্ব
সারাদিন এতো এতো নিয়ম-কানুন কাজ আর বন্ধু বান্ধবের হট্টগোল সোর সারাবা পেরিয়ে রুমে ঢুকলো শোভন৷ রুমে ঢুকেই ফুলে সজ্জিত বিছানার উপর বউ সেজে ওর জন্য অধির অপেক্ষায় বসে থাকা প্রেয়সীর সাথে চোখা-চোখি হলো শোভনের, পিছনে ঘুরে দরজাটা লাগিয়ে তেমন অবস্থায়ই বুকের বা পাশে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানলো শোভন৷ পরক্ষনে আবার স্বাভাবিক হয়ে সামনে ঘুরে বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
— ” ইসস অনেকক্ষন বসে থাকতে হয়েছে না? কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই? আমারই দোষ বাইরে দেরি করে ফেললাম৷ তোমার এগুলো পরে থাকতেও তো কষ্ট হচ্ছে তাই না? উঠো এসব খুলে পাতলা কিছু পরে নাও৷ ”
মেঘলা প্রসন্ন হাসলো, লোকটা ওকে নিয়ে এতো চিন্তা করছে তা দেখে ভালো লাগলো মেঘলার৷
সারাদিন পর দেখা হলো দু’জনের, সেই সকালে একবার দেখা হয়ে ছিলো তারপর আর কারোই দেখা হয়নি৷ মেঘলা উঠে দাড়ালো সত্যি এসব পরে থাকতে ওর বিরক্ত লাগছে৷ আয়নার সামনে নিয়ে শরীরের থেকে ভারি জিনিস গুলো খুললো আলমারি থেকে পাতলা একটা কালো শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো৷ সারাদিন ধকল এর পর গোসল না করলে থাকতেই পারবে না এখন তাই গোসল করেই বেরোলো৷ আজ মেঘলার লজ্জা লাগছে কেন যেন অথচ এ ছেলের সাথে এতোদিন ঘুমিয়েছে৷ রুমে ঢুকে দেখে শোভন নেই বারান্দার আলো জ্বালানো মেঘলাও সে দিকে গেলো মেঘলা যেতেই শোভন ইশারা করলো দোলনাটায় বসার জন্য মুচকি হেসে দোলনাটায় বসলো পাশে চেয়ার টেনে শোভনও বসলো মাঝখানে কিঞ্চিত দুরত্ব রয়েছে শোভনও সেরওয়ানি পালটে পাতলা পাঞ্জাবি পরেছে কালো রঙের৷ বসেও কিছু একটা ভেবে আবার রুমের দিকে গেলো, রুম থেকে ফিরে এলো চারটা লাল বক্স নিয়ে৷
বক্স গুলো মেঘলার হাতে দিলো না নিজেই আবার আগের জায়গায় বসে প্রথম বক্সটা খুললো তাতে দু-জোরা মাঝারি সাইঝের কানের দুল৷ মেঘলার কানের থেকে আগের পরনের টপ গুলো খুলতেই মেঘলা শোভনের আনা জিনিসের দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” এমা এতো জিনিস থাকতেও এগুলো আনলে কেন? ”
শোভন মেঘলার কান থেকে সে টপগুলো খুলতে খুলতে বলে,
— ” আমার বউকে আমি দিচ্ছি তাতে কার কি? ”
— ” কিছুই না তবুও আগে থেকেই তো মা কত কিছু দিয়েছে৷ ”
— ” সেগুলো তো মা দিয়েছে আমি না, আমি চাই আমার উপার্জিত টাকায় কেনা জিনিস আমার বউ পরুক৷ ”
মেঘলা হাসলো আবারো আজ নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে, এতো ভালোবাসা থাকলে আর কি চাই?
শোভন একে একে কানের দুল গলার চেইন নাকের ফুল আগের গুলো খুলে নিজে কিনে আনা জিনিসগুলো পরিয়ে দিলো৷ পরানো শেষ হতে মেঘলা ঝুকে শোভনের বক্ষস্থলে মিশে মিনমিনিয়ে বলে,
— ” ডাক্তার সাহেব আপনি খুব ভালো, ভালোবাসি৷ ”
শোভন ও ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” ভালোবাসি৷ ”
আজ আকাশে মস্ত চাঁদ উঠেছে পুরো ঘর আলোকিত করে দুজন কপোত-কপোতীর ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আছে৷ আজ পূর্নতা পেলো ভালোবাসা শুরু হলো আবার নতুন পথচলা৷
।
।
সময় পেরিয়েছে, মানুষ বদলেছে ভালোবাসা পাল্লা দিয়ে বেরেই চলেছে৷ আহানা এখন আর চুপ চাপ থাকে না ফুরফুরে মেজাজি চঞ্চলতা থাকেই সব সময়,বিয়ে করেনি এখনো, হয়তো এখনো কারো অপেক্ষায় প্রহর গুনছে এই ভেবে সে তার ভালোবাসা বুঝবেই৷ দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেছে৷
মেঘলা সারে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা আগে থেকে আরো বেশি চঞ্চল হয়ে গিয়েছে কথা তো আছেই৷ এমনও সময় যায় সারা রাত বসে একা বক বক করে আর শোভন ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে সারা রাত সে কথা শুনে, এক মূহুর্তও বিরক্ত হয় না৷
এই তো সে-দিনের কথা সে-দিন মেঘলা রাতে খেয়ে তারাতারি ঘুমিয়ে পরেছিলো, শোভন হসপিটাল থেকে এসে দেখে ঘুমিয়ে গেছে৷ দশটায় হসপিটাল থেকে এসে একটু স্টাডি করে রাত বারোটায় যখন শুতে যায় তখনই মেঘলা উঠে বায়না ধরে ও এতো রাতে আইস্ক্রিম আর মিল্ক সেক খাবে অথচ এই মেয়ে দুধের গন্ধ ও শুকতে পারে না৷ ভাগ্যক্রমে আইসক্রিম বাড়িতেই ছিলো তাই বাইরে যেতে হয়নি নিচে গিয়ে সে গুলো আনতে একটু দেরি হয়ে গেছে এসে দেখে আলমারি তে যত কাপড় আছে ভিজিয়েছে তা নাকি সে এতো রাতে ধুবে৷ শোভন জোর করে এনে বিছানায় বসালে দুধ আইস্ক্রিম ফেলে দেয় রাগে৷ ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় ধুতে থাকে তারপর শোভন অসহায় হয়ে বলে,
— ” তুমি বসে থাকো আমি ধুয়ে দিচ্ছি, তুমি ধুলে তো আমাদের প্রিন্সেস কষ্ট পাবে না?” মেঘলা সম্মতি জানায়, শোভন রুম থেকে চেয়ার নিয়ে ওয়াশরুমের এক সাইডে রেখে মেঘলাকে বসতে দেয় আর বেচারা বসে বসে ধোয়া নতুন কাপড় আবার ধোয়৷ ধোয়া শেষ হয়ে গেলে মেঘলা আবার এসে সুয়ে পরে শোভনও সব ঠিক ঠাক করে মেঘলাকে বুকে নিয়ে ঘুমায়৷ এই মেয়েটা যে ওর সব ওর বাচ্চামো গুলোকেই তো ভালোবাসে শোভন এতে বিরক্ত হবে কোথায়?
রাজ এক বছর হলো মেন্টাল এসাইলাম এ আছে রাজ মানুষিক সমস্যায় ভুগছে৷ বারান্দায় বসে মেঘলার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে শোভনের মা তখনই হঠাৎ রাজের কথা মনে পরলো মেঘলার৷ আধ তেল দেওয়া থেকে উঠেই ফোন আনতে চলে যায় শোভনকে ফোন করে শোভন ফোন তুলেতেই মেঘলা বলে,
— “ডাক্তার সাহেব রাজ ভাইয়া কোথায়?”
এতোদিন পর মেঘলার এহেন প্রশ্নে ইতস্ততায় পরে যায় শোভন৷ কি বলবে এখন? আর এ কথা জিগ্যেসই বা করছে কেন? এই মেয়ের মাথায় আবার অন্য কিছু ঘুরছে নাকি?
শোভনকে চুপ করে থাকতে দেখে মেঘলা আবার বলে,
— ” বললে না যে?
রাজ ভাইয়া কোথায়? আর মামা মামি?”
শোভন আমতা আমতা করে বলে,
— ” তোমার মামা মামি গ্রামেই আছে আর রাজ মেন্টাল এসাইলামে৷ ”
অবাক হয় শোভনের কথায় মেঘলা, রাজ মেন্টাল এসাইলামে? আহানা জানে? মেয়েটার ভালোবাসা যে গভীর এতোদিনে বেশ বুঝেছে মেঘলা কিন্তু রাজ মেন্টাল এসাইলামে কেন এটাই বোধগম্য হচ্ছে না৷
মেঘলা অবাক কন্ঠে বলে,
— ” মেন্টাল এসাইলামে? কেন? ”
শোভন বাকা হেসে বলে,
— ” তুমি বলেছিলে না পাপ বাপকেও ছাড়ে না? সেদিন ওই গোডাউনে ব্লাস্ট এর অর বেঁচে গিয়েছিলো ঠিকই তবে মানুষিক রোগী হয়ে গেছে৷ ”
মেঘলা এবার আর অবাক হলো না ওর সাথে অনেক অন্যায় করেছে তবুও ভাই তো রাজ না মানুক ও তো মানতো? আর সব চাইতে বড় কথা আহানা এতোটা ভালোবাসে ছেলেটাকে৷
মেঘলা মিহি কন্ঠে বলে,
— ” আমি আহানা আপুকে নিয়ে সেখানে যেতে চাই৷ ”
মেঘলার এমন কথায় শোভনের রাগ উঠে গেলো, মেয়েটা কি দিয়ে তৈরী? অদ্ভুত মেয়ে৷ এখন না করলেও এই মেয়ে শুনবে না শোভন জানে তবুও শান্ত কন্ঠে বলে,
— ” না সেখানে তোমাকে আমি নিয়ে যাবো না৷ ”
এইতো শোভনের কথায় মেঘলার আরো জেদ চরে বসলো আজ কাল ‘না ‘ শব্দটা ওর মোটেও ভালো লাগে না যা না করে তা আরো বেশি বেশি করে৷
মেঘলা জেদ করে বলে,
— ” আমি যাবো মানে যাবো৷ তুমি না নিয়ে গেলে একাই যাবো”
ফস করে নিশ্বাস ছাড়লো শোভন,মেয়েটা আজকাল বেশি জেদি হয়ে গেছে তাই ও নিজেই বলে,
— ” না একা যেতে হবে না আমি নিয়ে যাবো৷ ”
এসাইলামের সামনে গাড়ি থামতেই কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে গাড়ি থেকে নামলো আহানা, কষ্ট হচ্ছে ওর খুব ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা করতে এখানে যে আসতে হবে ভাবতেই পারেনি আহানা৷ ভাড়ি শরীর নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেঘলা৷ আজকাল একটুতেই হাপিয়ে যায়৷
তিনজনই কাঙ্ক্ষিত রুমটির সামনে আসতেই একজন স্টাফ তালা খুলে দিলো তালা খুলতেই আহানা আর মেঘলা ঢুকলো শোভনের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি৷ ভেতরে যেতেই ধক করে উঠলো আহানার বুকটা, এক কোনে গুটি-শুটি মেরে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঢুকরে চোখ বন্ধ করে আছে রাজ৷ আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে দরজার দিকে তাকালো হঠাৎই নিজের কাছের মানুষটাকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে এলো রাজ৷ মেঘলা রাজকে দেখে ভয় পেয়ে শোভনের বাহু চেপে ধরে৷ তা দেখে রাজ তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
— ” তুমি এসেছো মেঘ আমার কাছে এসেছো? আসো না আমার কাছে প্লিজ আসো আমি তোমায় একটু জড়িয়ে ধরবো৷ একি তুমি পালাচ্ছো কেন? তুমিও আমায় পাগল বলবে মেঘ সবার মতো?”
রাজ উত্তেজিত হয়ে পরেছে তা দেখে আহানার আরো কষ্ট হচ্ছে৷ হঠাৎই রাজ আহানার হাত ধরে বলে,
— ” আহান আমার মেঘ আমায় ভয় পাচ্ছে আগের মত, ওকে আসতে বল না আমার কাছে আমি ওকে চাই আহান আমার কষ্ট হচ্ছে আহান আমার ওকে চাই আমার ওকে চাই শেষ করে দিবো ভেঙে ফেলবো সব ওই শোভনকে আমি মেরে দিবো৷ মেঘলাকেও শেষ করে দিবো ও আমার না তো কারো না৷ ”
বলেই আরো উত্তেজিত হয়ে পরে রুমের জিনিস এদিক থেকে ওদিক ফেলা শুরু করে শোভন মেঘলাকে নিয়ে বাইরে যাবে এর আগেই রাজ গিয়ে শোভনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চায় শোভনের শরীরে ধাক্কাটা না লেগে মেঘলার শরীরে লাগে আর ধপ করে নিচে পরে যায় মেঘলা৷ ইট পাথরের কৃত্রিম মাটিতে পরার হলে এক কোনে মাথার পিছনটায় লাগে আর কোমরে ব্যাথা পায় যার ফলে ব্লিডিং হতে শুরু করে ততক্ষনাৎ শোভন গিয়ে মেঘলাকে ধরে পরার সময় হাত ফসকে পরে যায়৷ রক্তে ফ্লোর ভেসে গেছে শোভন যেমন স্থুগ্ধ হয়ে গেছে তা দেখে রাজ ও আরো উত্তেজিত হয়ে পরে তখনই আহানার কথায় হুস ফিরে শোভনের,
— ” ভাই ওঠ হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ওকে৷ ”
মেঘলা এখনো চোখ বন্ধ করেনি শোভন এর মাথা কাজ করছে না ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলে,
— ” চোখ বন্ধ করবে না জান চোখ খোলা রাখো৷ ”
শোভন মেঘলাকে উঠাবে তখনই রাজ আরো উত্তেজিত হয়ে মেঘলাকে চেপে ধরে এক পর্যায়ে আহানা রাজকে ধাক্কা মারতে থাকে তখনই ডাক্তার ছুটে এসে রাজকে ইনজেকশন পুশ করে৷
রাজ আদো আদো চোখ বন্ধ করতে করতে বলে,
— ” আমার হিংস্রতা তোমার প্রতি বরাদ্ধ ছিলো, আমি তোমার আশে পাশে কাউকে ঘেষতে দেখলে আরো হিংস্র হয়ে উঠতাম অনেক শাস্তিও দিয়েছি তোমায় কিন্তু সব খারাপের মাঝে একটা সত্যি কি জানো মেঘ আমি তোমায় ভালোবাসি আমি তোমায় ভালোবাসি আমার তোমাকে চাই হুম এখনো বলবো আমার তোমাকে চাই তুমি আমার প্রনয়ে প্রণয়স্পর্শী না তো কারো না৷ ”
মেঘলার কানে হয়তো পৌছালো না কথা গুলো৷ শোভন মেঘলাকে উঠিয়ে গাড়ির দিকে যেতে থাকে তখনো হাল্কা হাল্কা চোখ খোলা৷ মেঘলা মিনমিনিয়ে বলে,
— ” ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব, আমাদের পথ চলা হয়তো এখানেই শেষ আর হয়তো দেখা হবে না৷ আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব ওকে বাঁচাবেন প্লিজ৷ ভালোবাসি আপনাদের৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#অন্তিম_পাতা
প্রিয় মানুষটার উপর অভিমান জমলে সে অভিমান ভাঙ্গতে চায় না সহজে, যখন মন বলে না এবার কথা বলা উচিৎ তখনই মস্তিষ্ক প্রিয় মানুষটার বলা কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়৷
পনেরো দিন হসপিটালে থেকে দু-দিন আগে বাড়ি ফিরেছে মেঘলা৷ শোভন মেঘলার সাথে কথা বলা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে এমন কি এখন আর খোজ ও নেয় না৷ সময় মতো নিজের মেয়ের খেয়াল রাখে মেয়েকে যত্ন নেয় মেয়ের সাথে খেলে মেঘলার সাথে কথা বলে না এমনকি মেয়েকেও দেয় না মেঘলার কাছে৷
দিবে কেন? তখন তো খুব করে বলছিলো বাচ্চাকে খেয়াল রাখতে ও আর বাঁচবে না৷ এতোদিন হাজার কথা বোঝানোর পরেও মেয়েটা ওকে কষ্ট দিলো৷ এখন বুঝোক কেমন লাগে৷ সে-দিন এর কথা মনে পরতেই রুহ কেঁপে উঠে শোভনের, বেবি আর ও দু’দিকে অসুস্থ হয়ে পরে ছিলো দু’জনের লাইফ রিস্ক ছিলো ও এদিকে কেমন করে দুজনের খেয়াল রেখেছে নিজ হাতে ডেলিভারি ও করেছে আবার বেবির চিকিৎসা আর মেঘলার চিকিৎসা করে ছিলো সবদিক সামলাতে গিয়ে নিজেই দূর্বল হয়ে পরেছিলো শোভন কি করবে এর পর কুল কিনার খুজে পাচ্ছিলো না৷
মেঘলা অনেকটা অসুস্থ এখনো এমনি জ্ঞান ফিরলেও অনেকটা দূর্বল৷ বেবি ও অসুস্থ সারে আট মাসে জন্ম নেওয়ায় ওজন অনেকটা কম ছিলো তার সাথে হার্ট ও দূর্বল ছিলো বেশ তাই বেবিকে অন্য কেবিনে নিয়ে আলাদা ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে৷ মেঘলা জ্ঞান ফিরে নিজের বাচ্চাকে না দেখতে পেরে উত্তেজিত হয়ে পরে ছিলো তখন সাথে শোভনও ছিলো না বেশি উত্তেজিত হওয়ার কারনে আবার অচেতন হয়ে পরে গিয়ে ছিলো৷
তখন এর পর মেঘলার জ্ঞান ফিরে পুরো দু’দিন পর৷ জ্ঞান ফেরার পরও উত্তেজিত হয়ে পরে ছিলো তখন আহানা বুঝিয়েছে বেবির অসুস্থর কথা শুনে আবারো উত্তেজিত হয়ে পরে তখন শোভন না পেরে জোরে জোরে থাপ্পড় দিয়ে রেগে বলে,
— ” এমন করছো কেন? কেন বাচ্চার প্রতি দরদ হয়েছে? ওই রাজের কাছে যাওয়ার আগে মনে ছিলো না? তখন ভাবলে না ওই খুনিটা যদি কিছু করে দেয়? যা হয়েছে তোমার জন্য হয়েছে, বার বার বারন করার পরেও সেখানে গিয়েছিলে? তোমার তখন ওই অবস্থা দেখে কি হয়েছিলো আমার জানো? হসপিটালে আনার পর যখন ডাক্টার বললো তোমাদের কন্ডিশন ভালো না তখন আমার কি হয়েছিলো বুঝতে পারছো তুমি? আমাকে কষ্ট দিতে তো ভালো লাগে তোমার তাই না? আগের শোধ তুলছো? আমি না হয় ভুল করেছিলাম আমার মেয়েটা? ও কি ভুল করেছে? তুমি তো জানো তুমি আর একা নও তবুও কেন জেদ ধরে গিয়ে ছিলে? আমার এতো খারাপ অবস্থায় ও ডক্টরের সাথে আমি অপরেশন থিয়েটারে ছিলাম শুধু তোমার কথা রাখতে৷ যখন আমার সদ্য জন্মানো ফুটফুটে মেয়েটাকে কোলে নেওয়ার পর বুঝতে পারলাম ওর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম আমার কি অবস্থা হয়ে ছিলো তুমি বুঝতে পারছো? যাকে ছাড়া আমি এক মূহুর্ত ও ভাবি না যে আমার বাঁচার এক একটা কারন যে প্রতি নিয়ত আমারে নিশ্বাসে থাকে সে তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে কিভাবে ছিলাম তুমি জানো? কেন এমন করছো মেঘলা? কেন কষ্ট দিচ্ছো আমায়? সেদিন তোমার বলা কথা গুলো আমার জন্য কতটা কষ্ট-দায়ক ছিলো তুমি জানো তা? আমার কষ্ট দেখে তুমি খুশি তাই না?
তুমি বলে ছিলে না বেবির খেয়াল রাখতে? হুম আমিই বেবির খেয়াল রাখবো আমার মেয়ের আশে-পাশেও তুমি ঘেষবে না আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি তখন তুমিও দেখো কেমন লাগে কাছের মানুষ কষ্ট দিলে৷ ”
বলেই বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় শোভন, শোভনের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলা৷ শোভন যাওয়ার পরই মেঘলা আহানার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” আপু তোমার ভাইকে বোঝাও না এমন কেন করছে? আমার বাচ্চাটার আমাকে প্রয়োজন আপু৷ আমি ভুল করেছি ক্ষমা চাইছি কেন এমন করছে উনি? তোমার ভাইকে বোঝাও না আপু প্লিজ৷ ”
এইটুকু বলেই মেঘলা ঢুকরে কেঁদে উঠলো আহানা কিছু বললো না কি আর বলবে? ওর ভাইটা যে এমন ও তো ভালো করেই জানে৷ কিন্তু তখন মেঘলা ওইরকমটা না বললে কি শোভন এমন করতো? তখন নিজের সন্তানের কথা মনে ছিলো না?
তখন মনে ছিলো না আমার বেবির আমাকে প্রয়োজন, শোভনের ওকে প্রয়োজন? তখন তো পাশের মানুষটার কথা না ভেবে এক নাগারে এতো কিছু বলে গেছে৷
সে-দিনের পর প্রায় আরো পনেরো দিন হসপিটালে থাকতে হয় মেঘলা আর বেবিকে৷ পনেরো দিনে বেবির ওজন প্রায় স্বাভাবিক শিশুদের মতো হয়ে আসে৷ এখন পুরো-পুরি সুস্থ৷
শোভনই নিজের মেয়ের নাম রেখেছে মেহভীন নূর সে-দিন থেকে বেবিকে ফিডিং করানো ছাড়া মেঘলার কাছে একটুও দেয়নি শোভন৷ নূরকে খাওয়ানো শেষ হলে সাথে সাথেই নিয়ে যেতো শোভন৷ বাড়িতে আসার পরও এমনটাই করছে শোভন৷ মেঘলা মাঝে মাঝে ভাবে লোকটা মেয়েকে পেয়ে বউ এর প্রতি আর খেয়াল নেই৷
মানছে মেঘলা ভুল করেছে তাই বলে এতো বড় শাস্তি দিবে?
সকাল নয়টা বিশ বাজে শোভন নূরের সাথে ঘরে খেলছে আর আহানাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ওর মেয়ের কিভাবে খেয়াল রাখবে আর কড়াকড়ি নির্দেশ দিয়েছে মেঘলার কাছে না দিতে৷ আজ দু’দিন পর শোভন হসপিটালে যাচ্ছে ইম্পর্টেন্ট অটি আছে৷ মেঘলা বারান্দার দোলনায় বসে বসে ফ্যাচ ফ্যাচিয়ে কাঁদছে আর বলছে,
— ” মারে তোর বাবা তোকে পেয়ে আমায় ভুলে গেছে, আমায় আর ভালোবাসে না রে এমনকি তোকেও তোর মায়ের আদোর পেতে দেয় না৷ আমি ভেবে ছিলাম মেয়ে এলে আমার প্রতি আরো ভালোবাসা বাড়বে কিন্তু না উনি এখন একা মেয়েকেই ভালোবাসে৷ ”
বলে আবার ফ্যাচ ফ্যাচ করে ন্যাকা কান্না জুরে দিলো৷ আহনা অসহায় ভাবে শোভনের দিকে তাকালো শোভন দীর্ঘ-শ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে মেয়েকে বলে,
— ” তোমার মায়ের উপর রাগ করে থাকা দুষ্কর, তোমার মা তোমার উপরও জেলাস দেখছো প্রিন্সেস? কিন্তু না আমরা কথা বলবো না তোমার মায়ের সাথে গলবো না ওই মেয়ের ওই বাচ্চামো কথায়৷ আমরা আমাদের অভিমান জারি রাখবো ঠিকাছে প্রিন্সেস?”
কে জানে ওই বিশ-দিনের বাচ্চা মেয়েটা কি বুঝলো বাবার কথা শুনে হাল্কা নড়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ তা দেখে আহানা আর শোভন দু-জনেই চোখ জুরালো৷ মেয়েটার গায়ের রঙ মায়ের মত আর চেহারা পুরো বাবার মতো৷
আহানা নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ” ভাই তোর মেয়ে কিন্তু মায়ের মতই দুষ্টু হবে, দেখনা তোর কথা শুনে হাসছে৷ পাকনি একটা৷ ”
আহানার কথা শুনে হেসে দিলো শোভন, শোভনের হাসি দেখে মেঘলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে৷
শোভন যেতেই আহানার থেকে কোলে নেয় মেঘলা, এই প্রথম মেয়েকে আদর করতে পারছে৷ মা মেয়ের কান্ড দেখে হাসলো আহানা৷
মেঘলা ভবলো শোভনের অভিমান ভাঙ্গাতেই হবে যেভাবেই হোক৷ এমন করে থাকা যায় কি?
রাত প্রায় নয়টা বাজে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকলো শোভন, ঢুকেই ড্রইং রুমে ওর মায়ের সাথে মেয়েকে খেলতে দেখে তৃপ্তি মাখা হাসলো শোভন৷ আশে পাশে চোখ বুলালো আহানা আছে, ওর মা আছে বাবাও আছে মেঘলাকে দেখলো না৷ কোথায় গেলো আবার? ভাবলো রুমে আছে কিন্তু রুমেও পেলো না বুকটা ধক করে উঠলো শোভনের৷ কোথায় গেলো আবার? যতই রাগ করুক না কেন মেঘলাকে না দেখলে ওর ভালো লাগে না রাতে যখন ঘুমে মত্ত থাকে মেঘলা তখন নিজের বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে ঘুম পাগল মেয়েটা টের ও পায় না৷ ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে মেয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে সোফায় বসে আহানা কে বিরবির করে বলে,
— ” মেঘলা কইরে? উপরে দেখলাম না এখানেও নেই৷ ”
আহানা বলে,
— ” মেয়েকে চেয়েছিলো তুই বলেছিস তাই দেই নি সেই বিকেল থেকে ছাদে কে জানে কি করছে সবাই ডেকেছেও আসেনি৷ ”
আহানার কথা শুনা মাত্রই উঠে ছাদের দিকে গেলো শোভন৷ এই মেয়ের যা উলটো পালটা বুদ্ধি কিছু করলো না তো আবার?
ছাদে এসে সব অন্ধকার পেলো আশে পাশে কোথাও আলো নেই কাউকে দেখাও যাচ্ছে না৷ শোভনের এবার সত্যি চিন্তা হচ্ছে৷
নিচে যাওয়ার জন্য আবার পা বাড়াতেই হঠাৎ কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো শোভনের বুঝতে আর বাকি রইলো না কে এ৷
মেঘলা মিনমিনিয়ে বলে,
— ” রাগ করে আছেন ডাক্তার সাহেব? প্লিজ রাগ করে থাকবেন না আমার যে কষ্ট হয়৷ ”
কিছু বললো না শোভন মেঘলা আবার বলে,
— ” তখন মাথা ঠিক ছিলো না আমার, ভুল করে ফেলেছি নূরের বাবাই কি ক্ষমা করবে না নূরের মাম্মা কে?”
মেঘলার কথা শুনে হেসে ফেললো শোভন মেঘলাকে সামনে ঘুরিয়ে শাড়ির নিচে দিয়ে মুক্ত কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে মিশিয়ে বলে,
— ” নূরের মাম্মা যদি নূরের মতো বাচ্চামো করে তাহলে নূরের বাবাই কি মাফ না করে থাকতে পারে তার প্রণয়স্পর্শী কে? ভালোবাসি যে তাকে৷ ”
মেঘলা পরম আবেশে শোভনের বুকের সাথে মিশে চোখ বন্ধ করে মিনমিনিয়ে বলে,
— ” আমি আজ পূর্ন আমার প্রনয়ে আপনাকে আমি আসক্ত করেছি ডাক্তার সাহেব, যে প্রণয় থেকে মুক্ত পাওয়া দুষ্কর৷ ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি৷ ”
সময় পাল্টেছে প্রণয়ের পাল্লা আরো তীব্র হচ্ছে, দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আরো চার বছর৷ নূর এখন গুটি গুটি পায়ে হেটে আদো আদো কন্ঠে সবাইকে মাতিয়ে রাখে, শোভন মেঘলার ভালোবাসা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে৷ আহানার বিয়ে হয়েছে রনির সাথে আহানাও প্রেগন্যান্ট তিন মাসের৷
নদীর ধারে বসে আছে শোভন মেঘলা আর পাশে পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তাদের ভালোবাসা নূর৷ একটু আগে সেই মসজিদ থেকে এসেছে যে মসজিদে সাত বছর আগে শোভন মেঘলার বিয়ে হয়েছিলো৷ হুম আজ ওদের বিয়ের পুরো-পুরি সাত বছর চলছে, তা ভেবেই হাসলো মেঘলা প্রথম থেকে ভাবলো আবার ওর জীবনটাকে কি ছিলো কি আছে শোভন কেমন ছিলো এখন কেমন৷ অদ্ভুৎ প্রকৃতির খেলা, কখন দুঃখ কখনো সুখ৷
ছোট ছোট হাত দিয়ে চিপস এর প্যাকেট থেকে চিপস বের করে খাচ্ছে আর মা বাবার দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে৷ হাসার কারন ওর বাবা ওর মাকে নিজের পায়ের উপর বসিয়ে রেখেছে৷
চিপসটা সাইডে রেখে হাতে ভর দিয়ে উঠে হামি দিতে দিতে আদো আদো গলায় বলে,
— ” বাবাই আমিও বসবো৷ ”
মেয়ের কথায় হেসে দেয় শোভন, মেঘলা সরে গিয়ে ঘাসের উপর বসে আর নূর গিয়ে ওর বাবাইয়ের কোলে বসে৷ মেয়ে ছোট থেকেই বাবার পাগল বাবা থাকলে আর কিছুই চাই না৷
শোভন মেয়েকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে, সকাল থেকে হাটা হাটি করছে তাই ঘুমিয়ে যেতে সময় লাগে না৷ মেঘলা সামনে গিয়ে মেয়ের হাতে মুখে লেগে থাকা চিপসের গুড়ো ঝেড়ে দিয়ে পেছেনে সরবে তখনি শোভন মেঘলার কোমরে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,
— ” আমার পৃথিবী৷ ”
মেঘলাও হেসে বুকে মাথা রেখে বলে,
— ” ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব, আপনার প্রণয়ে শত শত বার প্রণয়স্পর্শী হতে চাই৷ ”
— ” ভালোবাসি৷ ”
শোভনের মুখের ভালোবাসি কথাটা শুনে হয়তো লজ্জা পেলো সূর্যটা তাই আপন মনে হারিয়ে গেলো গোধুলির আকাশে?
দুজন কপোত কপতির ভালোবাসায় মুগ্ধ হলো এই আলো আধার মাখা গধুলিটা৷ পূর্ন হোক ভালোবাসা পরিনয় হোক সুখের৷ বেঁচে থাকুক হাজার ভালোবাসা৷
,,,,,,,,,,,,,,,,,,, সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,