#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|২৪তম পর্ব |
ঘুটঘুটে কলুষিত অন্ধকার। অদূরে হিজল গাছে ডাহুক পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। পাতার খচখচ শব্দ আর ঠান্ডায় কাঁপানো বাতাসে ভয়ংকর লাগছে। চোখ বন্ধ করেই আমি অনুভব করতে পারছি চারপাশে আনেক মানুষের পায়ের আওয়াজ। শারা শরীরের অসহনীয় ব্যথা হয়তো আমাকে টেনে হিঁচড়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে এজন্য।
– এই বোমা ডিফিউজ করার সব কাগজ পুড়ে ফেলা হয়েছে। শুধু এই একটা কাগজ আর এই পেন ড্রাইভ রয়েছে যার মধ্যে সকল প্ল্যান, প্রমাণ বিদ্যমান।
– সবই বুঝলাম বাবা। কিন্তু তুমি আমাকে বলছো কেন?
– তুই বুঝতে পারছিস না কেন বলছি? এই সামাদ সিকদারের একমাত্র ছেলে তুই। তোকে বলব না তো কাকে বলব? আমাদের এখানে কেউ জানে না যে তুই আমার ছেলে। আমি ইচ্ছে করে কাউকে জানাই নি। কারন আমার মাথায় তো অন্য কিছু চলছে। এই জিনিসগুলো রাখ আমি বাকিদের দেখছি।
– বাবা এভাবে তোমার সহযোগীদের ধোঁকা দিয়ে কি ঠিক করছো? ছেড়ে দাও না এসবকিছু! সব কিছু ফেলে চলো পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করি।
– তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? আমার এত বছরের সাধনা, সুখ-দুঃখ আমি কখনো বিফলে যেতে দেব না। টাকার জন্য আমি অনেক কিছু করতে পারি। আমার সহযোগীদেরকেও মেরে ফেলতে পারি। এখন একটা মাত্র কাজ আছে আর সেটা হচ্ছে তোর চাচার হত্যার জন্য যিনি দায়ী তাকে মারা। সব কাজ শেষ করে আগে আমি তাঁকে মারব তারপর এখান থেকে চলে যাব। ততক্ষণে তুই এখানেই থাকবি সাবধানে। আরেকটা কথা, কাগজ আর পেন ড্রাইভ যেন অন্য কারোর কারো হাতে না পড়ে।
এতক্ষণ বাবা ছেলের মধ্যে কথা হচ্ছিল। যতটুকু শুনেছি বুঝতে পারলাম আমি এখন জঙ্গিদের হাতে বন্দি আর এরাও জঙ্গী, যাদের কথোপকথন শুনলাম। এরাও জঙ্গি কিন্তু এরা প্ল্যান করছে আরো গভীরকিছু। এখন আমি চিন্তা করতে লাগলাম, কিভাবে এখান থেকে বের হবো। না জানি সাদা বিলাই এখন কি করছ। বাবা-মা হামি তারা কোথায় আছে। আচ্ছা! তারা কি এখনও টের পেয়েছে যে, আমি তাদের মধ্যে নেই! হয়তো বা পেয়েছে। কারণ, আমাকে যখন এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন ছিলো মধ্যদুপুর ছিল আর এখন মনে হচ্ছে গভীর রাত।
শোয়া থেকে উঠে বসে নখ কামড়াচ্ছি আর ভাবছি যে , এই জঙ্গিদের চোখে ঘুম নাই নাকি? এখন পর্যন্ত জেগে আছে! এরা এখন ঘুমাতো তো কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে পালিয়ে যেতাম আমি। যাইহোক, এখন অন্য বুদ্ধি খাটাতে হবে।
ঠক ঠক ঠক! আমাকে যে ঘরে রাখা হয়েছে সেটা মূলত একটি মাটির ঘর। এই ঘরের একটি জানালা দরজার রয়েছে। ঠক ঠক আওয়াজ মূলত ঘরের জানালা থেকে আসছে। জঙ্গির একটা কাজের কাজ করেছে আমার হাত-পা কোনটাই বাঁধেনি এবার। নয়তো প্রথমদিন সাদা বিলাই যখন আমাকে বিয়ে করার জন্য কিডন্যাপ করে তখন তো হাত বেঁধে কতক্ষণ রেখেছিল। শেষে আমার পরটপটরের জন্য বাধ্য হয়ে হাত খুলে দিয়েছিল। বসা থেকে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে জানালার কাছে গেলাম।
জানালায় আড়ি পেতে শুনতে চেষ্টা করলাম যে, ঐ পাশে কেউ কিছু বলছে কিনা! কিছুক্ষণ পর ফিসফিস শব্দ শুনতে পেলাম। কেউ আমাকে বলছে,
– আপা মনি আমি হামিদা জানালা টা খুলেন।
হামিদার কণ্ঠস্বর শুনে ভড়কে গেলাম। আমি এতক্ষণ ভেবেছিলাম হামিদা জঙ্গিদের সাথে যুক্ত আছে হয়তো। কিন্তু আমার ধারণা মনে হচ্ছে ভুল। কারন, হামিদা যদি এদের সাথে যুক্ত থাকত তাহলে এভাবে লুকিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসত না। যাইহোক, আস্তে করে জানালাটা খুলে দিলাম। জানালা খুলতেই হামিদার চিন্তিত চেহারা দেখতে পেলাম,
– আপনি ঠিক আছেন আপা?
– হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?
– আপনাকে এই ব্যাটারা ধইরা আনার সময় আমি দেখছিলাম। কিন্তু আমি দেখার সময় চিল্লাইয়া যে রাদ ভাইজানকে ডাকব তার সুযোগ পায় নাই। এইজন্য মাঠের মধ্যে জমিনে লেইখা রাইখা আইছি যে আপনার বিপদ। আমি আপনার পিছনে আছি। আর আসার সময় আমার জামার মধ্যে যেই পুতি পাথর ছিলো সেগুলো রাস্তার মাঝে ফালাইয়া দিয়া আসছি। যেন রাদ ভাইজান সহজেই আইতে পারে।
– বাহ তোমার তো দেখি অনেক বুদ্ধি হামিদা। কিন্তু এই জঙ্গিদের থেকে রেহাই পাবো কিভাবে?
– আপা এখন রাতের বারোটা বাজে। আমি পাশের ঝোপে লুকাইয়া আছি। আপনি এখন এখানেই থাকেন আমি সুযোগ বুঝে বের করে নিয়ে যামু আপনারে।
হামিদা কথা শুনে মুখটা মলিন হয়ে গেল। না জানি মেয়েটা আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়ে যায়। আমি হামিদাকে বললাম যে, রাদকে খবর পাঠাতে। কেননা রাদকে এখন আমার খুবই প্রয়োজন। আমি হামিদাকে কিছু বলব এমনিই হামিদা তাড়াহুড়া করে আমার উদ্দেশ্যে বলে,
– জানালা আটকে দেন আপা। কেউ আসছে এদিকে। আমি গিয়া লুকাই।
হামিদা যেতেই আমি জানালা আটকে দিলাম এবং সেই ঘরের মেঝের উপর বসে রইলাম। পায়ের আওয়াজ আস্তে আস্তে দরজার কাছে চলে এসেছে। তার মানে এই ঘরে এখন কেউ আসবে। আমি ঠাই মেরে বসে রইলাম দরজার দিকে মুখ করে।
দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলো পাঁচজন লোক। তাঁর মধ্যে সেলিম চাচা একজন। সেলিম চাচাকে এখন দেখে মনে হচ্ছে পয়ত্রিশ বছরের একজন লোক। বৃদ্ধ বয়সের দূর্বলতা তার মধ্যে বিরাজমান নেই এখন। এখন আমার চোখের সামনে যাকে দেখছি সে খুব শক্ত পোক্ত মানুষ। সেলিম চাচা আমার নিকট এগিয়ে এসে বলল,
– মামনি ভুলে গেলে আমাকে? আমি তোমার সেলিম চাচা যে! আর কি বলি আমি, আমিতো সেলিম না আমিতো সামাদ। সেই সামাদ, যে তোকে আরো পনেরো বছর আগে মাথায় আঘাত করেছিল। যেন তোর বাবা ভাই বোনদের সাথে সাথে তুইও মরে যাস। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস তুই বেঁচে গেলি সাথে তোর মাও বেঁচে গেল। কিন্তু আমি সেদিন পন করেছিলাম, আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়ব। এই যে তুই এখন আমার চোখের সামনে। আমি যে কোন সময় তোকে মেরে ফেলতে পারব। কোন আফসোস থাকবে না। কিন্তু এখন তো তোকে কিছু করব না! এখন আমাদের আরো কিছু কাজ আছে সেগুলো সম্পূর্ণ করে তারপরে তোকে মারব।
সেলিম চাচা ওরফে সামাদ লোকটার কথায় কিছু বললাম না। আমার দৃষ্টি এখন সামাদের সেই ছেলের উপর যার কাছে পেন ড্রাইভ এবং কাগজপত্র রয়েছে। ছেলেটি কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার পানে তাকিয়ে আছে। হয়তো বা আমাকে মনে ধরেছে তার! এই ভেবে আমি বাঁকা হাসলাম। কারণ, এই ছেলের দুর্বল জায়গায আমি পেয়ে গিয়েছি। একে একে সবার চেহারা দেখলাম যাদের কারোর আমাকে নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। তাদের একটাই লক্ষ্য মিশন বোমা হামলা এবং তা এ সপ্তাহের মধ্যেই করে ছাড়বে তারা। সামাদ নামক লোকটি আমাকে আরো কিছু বলে চলে যাওয়ার সময় তার ছেলেকে বলে গেল যেন আমাকে দেখে রাখে। কোনভাবেই যেন বাইরে বের হতে না পারি।
সামাদ এর সাথে তার সহযোগীরা চলে গেল বাকি রইল ছেলেটি যে নাকি একদৃষ্টিতে দৃষ্টিতে আমার পানে তাকিয়ে আছে।
– এই ছেমড়া, নাম কি?
– আহাদ।
– আমাকে ভালো লেগেছে?
ছেলেটি এবার করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উওর দিলো,
– আমার বড়ো বোনের মত দেখতে আপনি। আপনাকে কিছুক্ষণ আগে দেখেই আপার কথা মনে পড়েছে। কিছু মনে করবেন না, আমি কি আপনাকে আপা ডাকতে পারি? আমি এখানে আছি আর কয়েক ঘন্টা তারপর পালিয়ে চলে যাব।
ছেলেটির কথা শুনে বুঝলাম ছেলেটা শিক্ষিত এবং এখানে বাপের জোড় করাতে এসেছে। ছেলেটির কথার প্রত্যুত্তরে বললাম,
– বাবার সাথে পালিয়ে যাবে নাকি?
– না বাবাকে ফেলে চলে যাবো। আপনি কি আমাকে একটা সাহায্য করবেন?
– তোমার সাহায্য পরে। আগে তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমার সাদা বিলাইকে খবর দাও যে আমি এখানে।
– সাদা বিলাই মানে?
– আরে আমার জামাই সাদা বিলাই।
আমার কথায় ছেলেটির মাথা হয়তো ঘুরতে লাগলো। নিজের জামাইকে যে সাদা বিলাই বলতে পারে তা শুনে হয়তো। আমার কথা মত ছেলেটি কিছু কাজ করে বসলো। তারপর ছেলেটি নিজের জীবন বাজি রেখে আমার হাতে পেন ড্রাইভ আর কাগজ গুলো তুলে দিল।
– আমি আপনাকে এখান থেকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট চেষ্টা করব। আপাতত এগুলো আপনার কাছে রাখুন। মনে রাখবেন, এটা আপনার শহরের রক্ষা করার একমাত্র চাবিকাঠি। আপনার জীবন চলে গেলেও এগুলো আপনি কারোর হাতে দিবেন না। আপনি যেই আদেশ দিয়েছেন তা পালন করতে আমি চলে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন।
আহাদ নামের ছেলেটি চলে গিয়েছে তাই ভাবতে লাগলাম আমার জীবনটা কি থেকে কি হয়ে গেল। ভালোই তো ছিলাম বিয়ের পর। সাদা বিলাইকে নিয়ে বিন্দাস জীবন কাটাচ্ছিলিম। কেন এমন হলো? কেন আমার জীবনের জঙ্গিদের আগমন ঘটলো? আমার ভাবনার মাঝে সামাদ ঘরে প্রবেশ করল। সামাদ প্রবেশ করতেই রেগেমেগে একপ্রকার আমাকে টেনে হিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে গেল।
প্রায় পঞ্চাশ জনেরও বেশি লোকজন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর পাশে তিন থেকে চারজন মহিলা যাদের হাতে আপাতত হামিদা বন্দি। হামিদার ঠোঁটের কোনে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারা হয়তো হামিদাকে আঘাত করেছে এজন্য! হামিদার অবস্থা দেখে মায়া হলো। সামাদ আমাকে আমাকে নিয়ে পঞ্চাশজনের মাঝখানে দাঁড় করাল।
– তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।এতটুকু মেয়ে কিনা আমাকে ধরার জন্য লোক পাঠাচ্ছে? তুই কি ভেবেছিস তোর এই চারফুট মেয়ে আমাকে কিছু করতে পারবে! এ সামাদ কে? কিছু করতে পারবে না, কখনওই না। তুই এবার তাকিয়ে দেখ আমি কি করি এই মেয়েটার সাথে।
আমাকে দাঁড়াতে বলে সামাদ হামিদার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এদিকে সামাদের আগানো দেখে আমি সামাদকে বাঁধা প্রদান করতে চাইলে দুজন লোক আমাকে ধরে রাখে। সামাদ হামিদার কাছে গিয়ে হামিদার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিল তারপর কি যেন মনে করে চারপাশে চোখ বুলালো। সামাদের দৃষ্টি ঘুরানো দেখে আমিও সামাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে আশেপাশে দৃষ্টি ঘুরালাম। সামাদ ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আহাদকে দেখতে পেলাম। হয়তো সামাদের মনে কু-মতলব ছিল এজন্য আহাদকে দেখে সামাদ নিজের মাথা কিছুক্ষণ নাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে হামিদার গলায় পোচ দিয়ে বসলো। হামিদা সাথে সাথে জমিনে লুটিয়ে পড়ে। লাল রঙের রক্ত বয়ে যাচ্ছে জমিনখানা। ততক্ষণে আমার হাতও ছেড়ে দিয়েছে লোক দুটো। আমি চিৎকার করে দৌঁড়ে হামিদার কাছে গেলে হামিদা মুচকি হাসি দিয়ে আমার পানে তাকিয়ে বলল,
– মাফ করে দিয়েন আপা। আমি আপনাকে বাঁচাতে পারলাম না। কিন্তু কাজের কাজ ঠিকই করেছি। আমার উপকার যে করে তার উপকার করতে চেষ্টা করি আমি। আপনারও করেছি।
হামিদা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেল পরপারে। আমি তার মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে রইলাম। এই জঙ্গিগুলো এতটাই নির্দয়, ঘৃণিত যা আজ স্বচক্ষে দেখতে পেলাম।
সামাদ এবার আমার কাছে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে বলল,
– এভাবে তোকে আমি মেরে ফেলব। তুই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মরবি আমি হাসবো শান্তির হাসি হাসবো।
সামাদ নামক লোকটি যেভাবে টেনে হিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে এসেছিল ঠিক সেভাবে আমাকে আবারো সেই ঘরে নিয়ে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দরজা আটকে চলে গেল। এদিকে আমি দুই হাটুতে মুখ গুঁজে অনবরত কান্না করে চলেছি। খুবই আপন করে নিয়েছিলাম হামিদা মেয়েটিকে এই কয়েক ঘন্টায় কিন্তু আমার জন্য মেয়েটির প্রাণ চলে গেল।
কিছুক্ষণ আগে ফজরের আজান হয়েছে। জানালা একটু খুলে দেখলাম জঙ্গিরা এখন সবাই এখান থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। তার মানে এখন এখানে বেশি মানুষটাই থাকবে না।
বাহিরের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছি সাদা বিলাইয়ের কথা। আচ্ছা! সাদা বিলাই কি আমাকে খুঁজতে বের হয়নি? এতক্ষণে তো এখানে পৌঁছে যাবার কথা ছিল! নাকি জঙ্গিরা সাদা বিলাইয়ের সাথে খারাপ কিছু করে ফেলেছে? না আর ভাবতে পারছিনা আমার জীবনটা এত জটিল কেন? কিছুই ভালো লাগছে না। বাবা ভাই- বোনের সাথে যদি মারা যেতাম তাহলে খুব ভালো হতো।
আমার ভাবনার মাঝেই চারদিকে গুলির বর্ষণের আওয়াজ শুনতে পেলাম। জানালা এবার পুরোপুরি খুলে দেখতে পেলাম রাদ এবং আরো কিছু পুলিশ অফিসার আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলেছেন। প্রায় এক ঘন্টা পর গুলিবর্ষণ বন্ধ হয় আরে সাথে সাথে কেউ একজন ঘরের দরজা খুলে দেয়। আহাদ নামক ছেলেটা আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলল,
– আপা বাবার আর নেই। সবাই মারা গিয়েছে।তুমি বের হয়ে আসো।
আহাদের বালার মাঝেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে সাদা বিলাই। আমাকে দেখে দৌঁড়ে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,
– শুভ্রপরী, আজ আমি কতটা অসহায় ছিলাম জানো তুমি? কয়েক মিনিটের জন্যে মনে হচ্ছিল এ রাদ নামক লোকটা পৃথিবীতে এসে খুব খারাপ করেছ। যে নাকি নিজের জানকে বাঁচাতে পারেনি। আসলে আমি অক্ষম শুভ্রপরী! আমি দায়িত্বহীন। নয়তো আমার চোখের সামনে থেকে আমাদের শুভ্যপরীকে মানুষ কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে যায় আর আমি টের পাই না। অনেক ভালোবাসি শুভ্রপরী! এই কয়েকঘন্টা আমার কেমন কেটেছে তা শুধু আমিই জানি!
আজ হামিদা আর আহাদ নামক মানব মানবির নিকট ঋণী হয়ে গেলাম। এদের জন্য আমি আবারও সাদা বিলাইকে দেখতে পেলাম।
সাদা বিলাইয়ের চোখ মুখ নাক সব লাল টমেটো হয়ে আছে। সাদা বিলাইকে দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম,
জামাই আমার লালের লাল,
টমেটোর মত লাল লাল।
ইচ্ছে করছে কুটুস করে,
কামড়ে ফেলি ঐ লাল গাল।
চলবে…….
[