#প্রণয়ের_আসক্তি
৫.
#WriterঃMousumi_Akter
টুং টাং কলিং বেল এর সাউন্ড বেজে চলেছে মৃথিলা দরজা খুলতে সাহস পাচ্ছে না।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি কলিংবেল চেপেই যাচ্ছে।কে না কে সেই ভয়ে মৃথিলা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।উপর থেকে নিরব ফোন মিউট করে বলছে মৃথিলা দরজা টা খুলে দাও ভয় নেই এখানে বাইরের কেউ আসতে পারবে না,তুমি দরজা খুলে দাও।মৃথিলা দরজা খুলেই চমকে যায়।আকাশি কালারের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা টা মহিলাটি মৃথিলা কে দেখে কিছুক্ষণ থমকে গেলো।দুজন দুজনের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো।দুজনের মুখে আশ্চর্যজনক ভঙ্গি। মৃথিলা মুখ ফুটে হাসি দিয়ে বললো ম্যাম আপনি এখানে।আপনি আমার খোজ করে এখানে চলে এসেছেন ম্যাম।মৃথিলা নিজের ম্যাম কে অতিআনন্দে জড়িয়ে ধরলো।ম্যাম আজ বুঝেছি আপনি আমাকে সত্যি ভালবাসেন।মনের টান না থাকলে কি আর এখানে চলে আসতেন। মৃথিলার ম্যাম মিসেস শাহিনুর অবাক হয়ে গেলেন মৃথিলাকে এখানে এইভাবে দেখবেন ভাবতেই পারেন নি।মিসেস শাহিনুর মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লেন। মিসেস শাহীনুর বললেন মা মৃথিলা তুমি ঠিক আছো তোমার কিছুই হয় নি লাখ লাখ শুকরিয়া।তোমার বাবা ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছেন।আমার কাছে এসেছিলেন যে তুমি রাগ করে আমার কাছে এসেছো কিনা।তোমার বাবার অবস্থা ভাল না মৃথিলা।তোমাকে খুজতে শহরের অলি গলি তন্ন তন্ন করে ফেলেছেন তোমার বাবা।আমিও ভয় পেয়ে গেছিলাম তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছো তাই ভেবে।
–কিন্তু ম্যাম আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখানে?..
আমি তো জানতাম না মা তুমি এখানে আছো।আমার যে পাগল ছেলেটার কথা বলেছিলাম এটা ওর ই বাসা মা।আমার ছেলে ভীষণ মজা করে আমার সাথে।কাল দুষ্টুমি করে বলছে আম্মু আমি বিয়ে করেছি। কিন্তু আমি তো জানি আমার ছেলে এভাবে হুট করে বিয়ে করার নয়।কিন্তু আমি ভাবতেই পারিনি আমার ছেলে আমার ই পছন্দ করা মেয়েকে বাড়িতে এনে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ফোন দিচ্ছে আম্মু তোমার বউমা এনেছি এসে দেখে যাও।আসলেই আমার নিরবের মতো এত সারপ্রাইজড ছেলে কোথাও নেই।
তোমাকে বলতাম না মিথু আমার ছেলেকে দেখলে তোমার পছন্দ হবেই। আমার ছেলে খুব দায়িত্বশীল একটা ছেলে।যার মনে কোনো কোনো হিংসা অহংকার নেই।দেখেছো মা আমার পাগল টা কে।আমি নিশ্চিত এবার আর তুমি না করতে পারবে না।
মৃথিলার ম্যাম ই নিরবের আম্মু কথাটা শুনেই অবাক হয়ে গেলো মৃথিলা।মানে তার বিয়ে তার ই ম্যামের ছেলের সাথে হয়েছে।মৃথিলা অবাক হয়ে বললো ম্যাম নিরব মানে উনি আপনার ই ছেলে।
হ্যাঁ এটাই আমার ছেলের বাসা।যার কথা তোমাকে সব সময় বলেছি।কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে। তোমাকে দেখেই আমি উত্তেজিত হয়ে গেছি।কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে কিছুই তো জানিনা।আমি তো ভয় ই পেয়ে গেছিলাম না জানি আগের মতোই কিছুই ঘটেছে কিনা।ওই খারাপ মানুষ গুলো তোমার কিছু করেছে কিনা।
নিরব আর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। মৃথিলা আর তার মায়ের কথা শুনে নিরব নির্বাক হয়ে গিয়েছে।মানে মৃথিলা ই সেই মেয়ে যাকে তার মা তার বউ করতে চায়।নিয়তি কি একেই বলে।মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে অনেক বার তার মাকে নিষেধ করেছে অথচ আজ নিয়তির কি খেলা নিরব নিজের ইচ্ছাতেই সেই মেয়েকেই বিয়ে করেছে।
পেছন থেকে নিরব বললো, আম্মু তুমি কখন এসছো মেয়েটাকে চিনো তুমি?
চিনি মানে আমি তো ভাবতেই পারছি না মৃথিলা এখানে।বাট কই তোর বউ দেখাতো।এই মৃথিলাকেই কি বউ সাজিয়েছিস।খুজে পেলি কিভাবে ওই মেয়েই আমার পছন্দের মেয়ে।আমাকে সারপ্রাইজ দিতেই বলতি যে আমার পছন্দের মেয়ে তুই বিয়ে করবি না। নিজে হুট করেই আমার বউমা দেখাবি।নিরব তার আম্মুর মুখে ভীষণ খুশি দেখছে আজ।নিরব তার আম্মুকে এতটা খুশি এর আগে কখনো দেখে নি।নিরব কি বলবে বুঝতে পারছে না।মৃথিলা ও বাক রুদ্ধ।সবাইকে চুপ থাকতে দেখে নিরবের আম্মু বললো নিরব মৃথিলাকে কিভাবে খুজে পেলি তুই।
নিরব ভীষণ চিন্তা নিয়ে বললো,আম্মু আমি ওকে বিয়ে করেছি।তোমার অনুমতি ছাড়াই করেছি।তুমি তো জানোই আম্মু তোমার ছেলে তোমার পারমিশন ছাড়া কিছুই করে না।আমি নিরুপায় হয়েই করেছি।আমাকে তুমি ক্ষমা করো আম্মু।নিরবের আম্মু বললো কিসের ক্ষমা এই সেই মেয়ে নিরব যে মেয়েকে তোর বউ বানানোর কথা দিনের পর দিন ভেবেছি আমি।আমি অনেক খুশি হয়েছি বাবা এত খুশি সেটা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।আমার মৃথিলা এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে। নিরব তার মায়ের খুশির বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস ই পেলো না।নিরব বললো আম্মু তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার।নিরবের আম্মু মৃথিলার বাবাকে কল দিতে দিতে বললো সব কথা পরে শুনবো আগে ওর বাবাকে ফোন দিয়ে নেই।নিরব কিছুই বলার সুযোগ পেলো না।মৃথিলার বাবা কল রিসিভ করতেই মৃথিলা ফোন কানে নিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো,বাবা কেমন আছো তুমি?
রায়হা সাহেব কেঁদে দিয়ে বললেন মা মৃথিলা তুই কোথায় হারিয়ে গেছিলি মা।তোকে খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে গিয়েছি আমি।রায়হান সাহেব কাঁদতে কাঁদতে কথায় বলতে পারছেন না।মৃথিলা বললো,বাবা আমি এখন অনেক ভাল আছি আর ম্যামের কাছেই আছি তুমি আর কেঁদো না বাবা।সাইড থেকে মেধা এসে বললো বাবা কে মিথু ফোন দিয়েছে। মেধা ফোন নিয়ে বললো,মিথু কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই।কোথায় আছিস বল মিথু।তোকে ছাড়া ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।মৃথিলা বললো সে অনেক কথা আপু মা কি আমার জন্য মন খারাপ করেছে।মেধা বললো মা কি কখনো নিজের সন্তানের জন্য চিন্তা না করে পারে।যতই হোক আমি তো কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েরে মিথু তুই মায়ের নিজের পেটের মেয়ে।তোর জন্য কি চিন্তা হবে না।
মৃথিলার কথা শেষ হলে নিরবের আম্মু ফোনটা নিয়ে মৃথিলার বাবা রায়হান কে বললো ভাই মিথু আমার কাছে কয়েক দিন থাকবে তারপর আমি বাসায় দিয়ে আসবো চিন্তা করবেন না।
নিরবের আম্মু আজ ভীষণ খুশি মৃথিলাকে নিরবের বউ হিসাবে পেয়ে।রান্নাঘরে প্রবেশ করে মিসেস শাহীনুর নিজের মন মতো রান্না করছেন।মৃথিলা বললো জানেন ম্যাম আমাকে আবার ও সেই একদল মানুষ তুলে নিয়ে গেছিলো কিন্তু আপনার ছেলে আমাকে বাঁচিয়েছে।আমাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন ম্যাম।ম্যাম খুন্তি চালাতে চালাতে বললেন,আল্লাহ ওর পাজরের হাড় দিয়েই তোমাকে বানিয়েছেন তাই সময় মতো পৌছে গিয়েছে।আমার ছেলেকে কেমন লেগেছে বলোতো মা।মৃথিলা বললো যেমন শুনেছিলাম তার থেকেও অনেক ভাল।
নিরবের আম্মুর ভীষণ পছন্দ ছিলো মৃথিলাকে।নিরব কে সব সময় বলেছে তার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে।নিরব রাজি থাকলেও পরে হঠাত তার জীবনে মেধা আসায় মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।এটা নিয়ে মা ছেলের মাঝে চার মাস কথা হচ্ছে।নিরবের আম্মু অনেকবার মৃথিলাকে নিজের ছেলের কথা বলেছে অনেক গল্প বলেছে নিজের ছেলের।শুধুমাত্র ম্যামের কাছে থাকবে সেই কারণে ম্যামের ছেলের প্রতি না দেখেই আলাদা একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিলো।মৃথিলার অনেক আগ্রহ ছিলো তার ম্যামের ছেলের প্রতি।
নিরব বেলকনিতে বসেছে ল্যাপটপ নিয়ে মৃথিলার ক্রিমিনাল দের আইডেন্টি খোজার চেষ্টা করছে।মৃথিলা রুমের এলোমেলো জিনিস গুলো গোছাচ্ছে।যদিও এ বাসার সব কিছু পরিপাটি ভাবে সাজানো।নিরবের অসমম্ভব সুন্দর কিছু হাসি মাখা ছবি ওয়ালে টাঙানো।মৃথিলা একটা উঁচু টুল নিয়ে ওয়ালে টাঙানো ছবিটা মুছতে গিয়ে পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে নিরব এসে ধরে ফেলে।নিরবের কোলে ঢলে পড়ে মৃথিলা।দুজনেই চোখে চোখ পড়ে যায়।দুজন ই কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।নিরব মৃথিলাকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিলেই মৃথিলা নিরবের শার্টের কলার টেনে ধরে কেননা টুল সরে যাওয়াতে মৃথিলা পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে।নিরব বুঝতে পেরে মৃথিলাকে কোলে তুলেই বিছানায় বসিয়ে দিয়ে পায়ে তেল হলুদ লাগিয়ে মালিস করে দেয়। এটা মুরব্বিদের দেওয়া টোটকা।নিরব মৃথিলা কে বললো উপরে উঠেছো কেনো এখনি পা ভেঙে গেলে কি হতো।
-আঙুল দিয়া ইশারা দিয়ে দেখালো ওই ছবিটা খুব সুন্দর লাগছে।ধুলা পড়েছে কিনা তাই মুছতে গেছিলাম।
–তুমি কি এ ঘরের বউ নাকি কাজের মহিলা যে এগুলো করতে হবে।তুমি আমার দায়িত্ব তোমাকে অক্ষত রাখারা দায়িত্ব আমার।
–আমি এ ঘরের বউ না কিন্তু আপনার আম্মু তো তাই ভাবছে।
–তুমি বউ কিন্তু তুমি সেই বউ না মৃথিলা যেখানে কাজ করতে হবে সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে।
–এভাবে বসে থাকা যায়, আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।
–বসে থাকতে হবে না ওঠো আমার হাত ধরে হাঁটতে হবে।এক্ষুণি হাঁটাহাটি করলে পা ঠিক হয়ে যাবে।নিরব মৃথিলার হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করাচ্ছে।নিরব খুব যত্নে মৃথিলার হাত ধরে রেখেছে।মৃথিলার মনের মাঝে খুব খারাপ লাগছে।নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মৃথিলা।প্রতিটা মেয়েই তো এমন কেয়ারিং আর সুন্দর মনের মানুষ চায়।এই মানুষ টা আমার ও তো হতে পারতো।কেনো মিথ্যা করে আমার জীবনে এলো দুইদিনের জন্য।সত্যি করে কেনো এলো না।মাত্র কয়েক ঘন্টায় বুঝেছি মানুষ টা কত ভালো।যদি আপুর ভালবাসার মানুষ না হতো তাহলে আল্লাহর কাছে জীবনে এই একটা জিনিস ই চাইতাম। যাকে দূর্ভাগ্যবশত আমার জীবনে এনে দিয়েছো তাকে আমার ভাগ্য করে দাও।কিন্তু তাকে চাইলেও যে পাপ হবে।তাকে চাওয়া যে ভারী অন্যায়।নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃথিলা ভীষণ মন খারাপ নিয়ে ভেবে যাচ্ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মৃথিলা বললো তুমি মানে এক আকাশ দীর্ঘশ্বাস।নিরব আচমকা মৃথিলার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো কিছু বললে।মৃথিলা বললো আপুকে খুব ভালবাসেন তাইনা?সত্যি বলবো,আমি আমার কাজ কে বেশী ভালবাসি আমার দায়িত্ব আমার কাছে অনেক বেশী প্রয়োরিটি পায় আর যদি বলো তোমার আপু হুম তাকে আমি ভালবাসি।আমার ভালবাসা কে আমি সব থেকে আলাদা সাইডে রাখি।আপু অনেক লাকি আপনার মতো একজন মানুষ পেয়েছে।আপনাদের রিলেশন টা কিভাবে হলো।
একদিন বাসে মেধার পাশে আমার সিট পড়েছিলো।ও আমার নাম্বার নিয়েছিলো।ওইদিন ওই বাসে একটা ক্রিমিনাল উঠবে বলে তথ্য এসেছিলো কিন্তু ক্রিমিনাল টা ধরতে পারিনি আমি।সেখানে মেধা আমার ফেসবুক আইডি নিয়েছিলো।আমি ফ্রেন্ড হিসাবেই কথা বলতাম। বাট মেধা অনেকবার আমাকে ভালবাসার কথা বলেছে। অনেক পাগলামি করেছে।সত্যি বলতে আমি আমার আম্মুকে ভীষণ ভালবাসি আম্মু চেয়েছিলো আমি যেনো তার পছন্দের মেয়েকেই ভালবাসি আর বিয়ে করি।আম্মুকে বলেছিলাম যাকে ইচ্ছা তোমার বউমা করো আপত্তি নেই।কিন্তু মেধা একদিন বলছিলো ওর আসহায় জীবনে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।ছোট বেলা ওর মা বাবা ওকে ফেলে চলে গেছিলো আর সেখান থেকেই একটা পরিবার ওকে কুড়িয়ে নিয়ে যায় আর মানুষ করে।নিজের মা বাবাকে ভীষণ মিস করে ও।খুব কাঁদছিলো ওর কাঁন্নায় আমি ওকে ভালবাসতে বাধ্য হয়েছিলাম।আর আমি ওকে ভালবেসে ফেলি।বলতে পারো মেধাকেই জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়েছি আমি।চার মাসের পরিচয় আমাদের।চার মাস রিলেশন এ জড়িয়েছি।মেধাকে আমি কষ্ট দিতে পারবো না ইম্পসিবল ব্যাপার।
আমিও চাই না আপনি আপুকে কষ্ট দেন।কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে যে কথা দিয়েছিলেন আমাকে ম্যামের ছেলের হাতে তুলে দিবেন তার কি হবে।
চলবে,,,,
(