প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -০৬

#প্রণয়ের_আসক্তি
৬.
#WriterঃMousumi_Akter

আপনি যে আমাকে কথা দিয়েছেন ম্যামের ছেলের হাতে তুলে দিবেন তার কি হবে?

মৃথিলার মুখে এমন কথা শুনে আশ্চর্যজনক ভঙ্গিতে তাকালো নিরব।এমন একটা কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে নিরব সেটা ভাবতেই পারে নি।মুখটা ফ্যাকাশে নিরবের।কখনো প্রমিজ ব্রেক করার মতো ছেলে নয় সে।

মৃথিলা নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো আমি মজা করেই বলেছি আমি আপনাকে কোনো কঠিন কথার প্যাঁচে বাঁধবো না।

তবুও ভাবনার অন্যজগতে প্রবেশ করলো নিরব।আসলেই সে মৃথিলাকে কথা দিয়েছিলো।সেই কথা কোনভাবেই ভঙ্গ করা সম্ভব নয়।

নিরবের মিটিং এর টাইম হয়ে গিয়েছে।মিটিং টা যুম এপস এই করতে হবে।অন্য দিনের তুলনায় নিরব আজ বেশ চিন্তিত আর মন নেই মিটিং এ।নিরবের টিমমেট রা বুঝতে পেরেছে নিরব অন্য কিছু নিয়ে টেনশন করছে।মিটিং টা শেষ হলে নিরবের বন্ধু রিফাত কল করে।

-রিফাত বলে কি হয়েছে নিরব তোর?

-কই কিছু নাতো।

-সেদিনের সেই মেয়েটাকে নিয়ে কি চিন্তিত তুই।মেয়েটাকে কি বাসায় দিয়ে এসছিস।

-নাহ বিয়ে করে নিয়েছি।

-আরে বাহ!যদিও ফানি কথা তবুও বলবো মেয়েটাকে যদি সত্যি বিয়ে করতি না মানাতো খুব।একদম পরীর মতো দেখতে।অসম্ভব কিউট আর মায়াবতি মেয়ে।

-আমার এইদিকে টেনশনে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে ওই দিকে তুই আছিস পরী নিয়ে।

-কেনো কি হয়েছে?

-প্লিজ রিফাত হেল্প মি! ভাই।আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি আমার কি করা উচিত আমি বুঝতেই পারছি না।

-আরে ইয়ার খুলে তো বল কি হয়েছে?

-মেয়েটার সাথে কি কি ঘটেছিলো সেটা তো জানিস ই।তারপর মেয়েটাকে বাঁচাতে হোটেলে নিয়ে গেছিলাম সেখানে কি কি হয়েছিলো সেটাও জানিস।বাট একটা জিনিস গোপন করেছিলাম সেটা হলো মেয়েটাকে বাঁচাতে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছিলো।না হলে এমন ট্রাপে পড়ে ছিলাম মেয়েটা ওখান থেকেই আবার ওদের হাতেই পড়ে যেতো।ওইখানের সব ঘটনা নিরব খুলে বললো রিফাত বললো।

-পুরাটা শুনে রিফাত বললো,ওহ মাই গড!এত কিছু হয়ে গিয়েছে।

-হ্যাঁ বাট এখন তার থেকে বড় প্রব্লেম হয়েছে মৃথিলার বোন ই মেধা মানে আমার গফ।এইদিকে আম্মুর অনেক আগে থেকেই চাইতো আমি যেনো মৃথিলাকে বিয়ে করি।নিয়তির এক অদ্ভুত খেলায় সেই মৃথিলা ই আমার বউ হয়েছে যদিও পরিস্হিতির চাপে।আমি আবার মৃথিলাকে কথা দিয়েছিলাম যে ছেলের সাথে তোমার বিয়ের কথা হচ্ছিলো আমি নিজে তার সাথে তোমার বিয়ে দিবো এখন সেই ছেলেই তো আমি।আবার আম্মু মৃথিলাকে পেয়ে ভীষণ হ্যাপি।আম্মুর চোখে মুখে ভীষণ আনন্দ।
মাঝে খানে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা নিরব খুলে বললো রিফাত কে।

-রিফাত বললো কি করবি মেয়েটাকে কি ওর বাড়তে পাঠিয়ে দিবি আন্টিকে বুঝিয়ে?

-আম্মু আমাকে যা বলেছে তাতে মৃথিলাকে ওর বড়িতে পাঠানো সম্ভব নয়।

-কি বলেছে আন্টি?

-আম্মুর ই স্টুডেন্ট মৃথিলা।ক্লাসে রেগুলার মন খারাপ করে বসে থাকতো মৃথিলা।সেখান থেকেই আম্মু আর মৃথিলার মাঝে কথা হতো।মৃথিলার সাথে কথা বলতে বলতে মৃথিলাকে নিজের মেয়ের জায়গা দিয়েছে আম্মু।মৃথিলা এই পৃথিবীতে একমাত্র আম্মুকেই ভরসা করে।আম্মু মৃথিলাকে কথা দিয়েছিলো সে মৃথিলাকে তার ছেলের বউ বানাবে।আর মৃথিলা সেখান থেকেই আমাকে নিয়ে অনেক কল্পনা করতো।এক না দেখা অনুভূতি ছিলো আমার প্রতি মৃথিলার।মৃথিলার মা মৃথিলাকে এক বিন্দু ও ভালবাসেন না।ভালবাসেন তাদের কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে মেধাকে।মৃথিলার শরীরে প্রচন্ড মারের দাগ।ওদের বাড়িতে এক প্রকার কাজের মেয়ের মতোই থাকে সে।অথচ মেধা ওই বাড়ির আশ্রিতা মেয়ে হয়েও রাজরাণীর মতোই থাকে।সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো ওদের যা সম্পত্তি সেটাও মেধার নামেই।মৃথিলার নামে কিছুই নেই।তাছাড়া ওই বাড়িতেই বার বার আক্রমণ হয়েছে মৃথিলার প্রতি।আর আগেও কয়েকবার মৃথিলাকে ওখান থেকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে।গতকাল সারারাত একটা জিনিস ভেবে পেলাম না ওই বাড়িতেই যদি মৃথিলার কিডন্যাপ হয় বা বার বার কেউ আক্রমণ করে তাহলে কোনো পুলিশ কেইস কেনো হয় নি,কোনো জিডি কিছুই মৃথিলার নামে নেই।মানে কি ওর পরিবারের মানুষের কিছুই যায় আসে না মৃথিলার কোনো ক্ষতি হলে।কেউ বার বার কেনো মৃথিলার উপর আক্রমণ করছে।

-রিফাত এসব শুনে মাথায় হাত দিলো।চিন্তিত কন্ঠে বললো এগুলা কি বলছিস নিরব।এটা কেমন ফ্যামিলি।শোন নিরব আমার অনুমান ভুল না হলে যা হওয়ার ওই বাড়ি থেকেই হচ্ছে।এক হয় কেউ বা কারা জানে মৃথিলার বাবা অনেক কোটিপতি তাই তার মেয়েকে কিডন্যাপ করতে চাইছে।মেধা আশ্রিত মেয়ে তাই মেধাকে কিডন্যাপ করছে না।

-বাট রিফাত ওর পরিবারের রহস্য টা কি ভেবেছিস।

-ওই ফ্যামিলিতে মৃথিলার লাইফ রিস্ক আছে নিরব।

-হ্যাঁ এ কারণেই আমি ওখানে পাঠাবো না।কিন্তু কতদিন নিজের কাছে রাখবো। বিয়েটা নিজেদের ইচ্ছায় হয় নি,ওইদিকে মেধা কে বা কি বলবো।আমি রিলেশন এর ব্যাপারে লয়াল তুই তো জানিস ই।

-রিলেশন কোনটা আগে বেশী জরুরী নিরব প্রেমিকা নাকি ওয়াইফ।ভেবে দেখ না চাইতেও মৃথিলা জড়িয়ে গিয়েছে তোর জীবনের সাথে।বিয়ে সৃষ্টিকর্তার হাতেই।আর মৃথিলাকে নিয়ে যেগুলা বললি মানুষ হিসাবে কি উচিত হবে ওই অসহায় মেয়েটাকে ওই ফ্যামিলি তে ছেড়ে আসা।মৃথিলা এখন তোর দায়িত্ব। তাই মেধাকে ক্লিয়ার করে বলে দে তোর পক্ষে এখন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা সম্ভব নয়।এই মুহুর্তে মৃথিলা চলে গেলে কি তোর ভাল লাগবে।হয়তো খুব সময় মেয়েটার সাথে কাটিয়েছিস বাট ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ মেয়েটার হয়তো তোকেই চায় বাট বলতে পারছে না

-এই মুহুর্তে কিছুই মাথায় আসছে না।তোকে কিছু ইনফরমেশন দিয়েছি ওগুলার রিপোর্ট দে কুইক।

মিসেস শাহীনুর রান্না শেষ করে ডায়নিং এ খাবার দিয়ে নিরব আর মৃথিলাকে ডাকলেন।মৃথিলার পায়ে একটু চোট লাগাতে নিরব মৃথিলার হাত ধরে নিয়ে এসছে ডায়নিং।মিসেস শাহীনুর খাবার দিয়েছেন সবার প্লেটে।নিরব বললো আম্মু আজ এত কিছু রান্না করলে যে।

-কাল তো আবার চলে যেতে হবে বাবা।রোজ তো রান্না করে খাওয়াতে পারি না তাই।আর শোন, মৃথিলাকে কিন্তু একটুও কষ্ট দিবি না। আমি যেনো না শুনি মেয়েটা তোর ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে।

-নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো দেখেছো আমার আম্মু আমার থেকে তোমাকে বেশী ভালবাসে।ছেলেকে বকা দিচ্ছে অগ্রিম।

-দিবোই তো।দুপুরে খাওয়ার পর আমি বেরিয়ে যাবো। খেয়াল রাখিস মেয়েটার বাবা।আমি জানি একমাত্র তোর কাছেই নিরাপদ থাকবে।

-ডোন্ট ওরি আম্মু আমি আছি।
_________________________________
সাত দিন কেটে গিয়েছে এখনো ক্রিমিনাল দের খুজে বের করা যায় নি।নিরবের কাছে খবর এসছে মৃথিলা এখন কোথায় আছে ক্রিমিনাল রা জেনে গিয়েছে।সেই লোকটা আবার ও চিঠি পাঠিয়েছে।কে এই লোক টা যে আড়াল থেকে মৃথিলাকে সাহায্য করছে।নিরব কে ভীষণ ভাবে সাহায্য করছে সেই অজ্ঞাত মানুষ টা চিঠির মাধ্যমে।নিরবের মনে অনেক প্রশ্ন হতেও পারে ওই লোকটা ক্রিমিনাল দের খুব কাছাকাছি থাকে।

মধ্য রাতে নিরব মৃথিলাকে নিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো।মৃথিলা জানতে চাইলেও নিরব বলে না কোথায় যাচ্ছি।কি কারণে যাচ্ছে সেটাও বলে নি।নিরব চায় নি মৃথিলা চিন্তা করুক।

ঘড়িতে রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই মৃথিলার ভীষণ ঘুম পেয়েছে।সেটা ঘুমোচ্ছে আর পড়ে পড়ে যাচ্ছে। নিরব নিজের হাত মৃথিলার মাথার নিচে দিয়ে দিলো আর এক হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরলো।মৃথিলা ঘুমের মধ্য পড়ে যেতে গেলে নিরব হাত দিয়ে আগলে ধরছে।মৃথিলাকে আগলে ধরে নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছে নিরব।সারারাত গাড়ি চালিয়ে ভোর রাতে নড়াইলে এসে পৌছালো নিরব আর মৃথিলা।রিফাতের সাহায্য এখানে একটা দো’ তলা বাসা ভাড়া নিয়েছে।বাড়িওয়ালা এই ফ্ল্যাটের নিচ তলাতেই থাকে।

নিরব মৃথিলা আসবে তারা আগে থেকেই জানতো।গাড়ি থামতেই তারা এগিয়ে এসে নিরব মৃথিলাকে রিসিভ করলো।

নিরব ঘুমন্ত মৃথিলাকে ডাকছে আস্তে করে এই মৃথিলা ওঠো আমরা চলে এসছি।মৃথিলা চোখ খুলে দেখে গাড়ির বাইরে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।অচেনা একটা জায়গা তারা এসে পড়ছে।

গাড়ি থেকে নামতেই দুজন ভদ্র লোক আর ভদ্র মহিলা বললো আপনারা এসে পড়েছেন আমরা অপেক্ষা করছিলাম।নিরব স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললো অনেক কষ্ট দিলাম আপনাদের।তারা বললো কোনো কষ্ট না আসুন।

তারা বাড়ির দো’তলার চাবি দিয়ে দিলো।একটা বেডরুম,একটা ডায়নিং,একতা কিচেন একটা ওয়াশরুম টাইলস বিশিষ্ট বেশ পরিপাটি এ বাসাটা।বাসার পেছন দিকে বিশাল বাগান।

নিরব রুম ঢুকেই রুম টা ঝাড়ু দিয়ে নিলো।গাড়ির সাথে করে আনা তোশক নিয়ে ফ্লোরে বিছিয়ে দিলো। নিরব বেড সিট বিছিয়ে দিতে গেলে মৃথিলা নিরব কে বললো এটা না হয় আমাকে দিন সব কাজ কি আপনি একাই করবেন।এটা আমি করছি।মৃথিলা বিছানা ঠিক করছে নিরব গাড়ির সব জিনিস এনে রুমে রাখলো।বাড়িওয়ালা ভদ্র লোক আর ভদ্র মহিলা ওদের জন্য খাবার দিয়ে গেলেন আর বললেন আপনারা কোনো সমস্যা হলে বলবেন।নিজের বাড়ির মতোই থাকবেন।নিরব বললো সমস্যা হলে আমি অবশ্যই জানাবো।

খাওয়া শেষে ঘুমোনোর জন্য প্রস্তত হলো দুজনে।

মৃথিলা বললো,এখানে তো সোফা নেই কোথায় ঘুমোবেন।

হুম সোফা তো নেই মধ্যরাতে তুমি বা কিভাবে এসে আমাকে চুপি চুপি জড়িয়ে ধরে ঘুমোবে।বলতেই তো পারো আপনার বুকে একটু মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।

মৃথিলা হঠাত অবাক হয়ে গেলো।দশ দিন বিয়ে হয়েছে তাদের নিরব কখনো এইভাবে কথা বলে নি তার সাথে।হঠাত এভাবে কথা বলছে কেনো নিরব।মৃথিলাকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বললো ঘুমিয়ে পড়ো।দুজনেই বেশ খানিক টা দূরত্ব নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।নিরবের চোখে ঘুম নেই।

নিরব খেয়াল করেছে নিরবের সঙ্গ মৃথিলাকে সেফ রেখেছে।নিজের আম্মু খুশির জন্য হলেও মৃথিলাকে তার জীবনে রাখতেই হবে।মৃথিলার মাথায় হাত দিয়ে কথা ও দিয়েছে ম্যামের ছেলের হাতে তুলে দিবে,অনেক গুলো কঠিন ওয়াদা আর চ্যালেঞ্জ সে নিয়েছে।তাই মৃথিলাকেই নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নিবে।তাছাড়া সব খোজ নিয়ে সে জেনেছে মেধার জীবনে সেরকম কোনো কষ্ট বা সমস্যা নেই।সব কিছুতেই অপূর্ণ মৃথিলার জীবন।ছোট বেলা থেকে না পাওয়া সব অপুর্ণতা নিরব পূর্ণতা দিয়ে ভরিয়ে দিবে।গত চার মাসে মেধার প্রতি সেই মায়া জন্মে নি যে মায়া মাত্র দশ দিনে মৃথিলার প্রতি জন্ম নিয়েছে।নিরব একজন ইনটেলিজেন্ট ছেলে দশ দিনেই বুঝতে পেরেছে মৃথিলার সরলতায় কোনো খাঁদ নেই।মেধা বেশ কয়েক টা মিথ্যা বলে নিরবের সাথে রিলেশন এ জড়িয়েছে যার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে নিরব এমন কিছু জানতে পারে সেখানে মৃথিলার প্রতি ভীষণ মায়া এমনইতেই জন্ম নিয়েছে।আর মেধাকে ভালবাসলেও মায়া নিজে থেকেই কমে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে মৃথিলার পেটের উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে যায় নিরব।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here