প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -০৪

#প্রণয়ের_আসক্তি
৪.
#WriterঃMousumi_Akter

সদ্য বিবাহিত মৃথিলা নিরবের বুকে মাথা দিয়ে শান্তিতে ঘুমোচ্ছে।মৃথিলার নাকের নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে নিরবের বুকে।ঘন ঘন উষ্ণ নিঃশ্বাসে নিরব খানিক টা অপ্রস্তুতকর অবস্হায় পড়ে গিয়েছে। নিরব কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।মৃথিলাকে কি ডাকবে।ডাকলে তো মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে।নিরবের ইচ্ছা করছে না মেয়েটার ঘুম ভাঙাতে।গত দুই দিনে যে পরিমান ঝড় তুফান গিয়েছে মৃথিলার উপর দিয়ে।গত দুই দিন ঘুম হয় নি বললেই চলে।রুমের মধ্য বোঝা যাচ্ছে না বাইরে ভোরের আলো কত টুকু ছড়িয়েছে।নিরবের এক্সারসাইজ এর সময় ওভার হয়ে গেলো কিনা তার ও ঠিক নেই।রেগুলার ঘুম থেকে উঠেই তার একুরিয়াম এর মাছ দের খাবার দিয়ে এক্সসারসাইজে যায়।বেশ কিছুক্ষণ মৃথিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নিরব। মুখের উপর পড়ে থাকা এক গোছা চুল সরিয়ে দিলো।নিরবের থ্রি কোয়ার্টার মৃথিলার ঘুমের মাঝে হাটুর খানিক টা উপরে উঠে গিয়েছে।ধবধবে ফর্সা পা দেখা যাচ্ছে মৃথিলার।শার্ট সরে পেট ও নাভি দেখা যাচ্ছে।নিরব একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।কিছুক্ষণের মাঝেই মৃথিলার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখে সে নিরবের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।এইভাবে একটা ছেলেকে ঘনিষ্ট ভাবে আগে কখনো জড়িয়ে ধরে নি সে।মৃথিলা দ্রুত উঠে পড়ে ভীষণ লজ্জা ও পেয়ে যায়।কাল রাতে সে ভয়ের জন্য নিরবের পাশে এসে ঘুমিয়েছিলো।কিন্তু নিরব এখন তার চরিত্র খারাপ ভাবছে নাতো।ছি ছিঃ নিরব তাকে নিয়ে কি ভাবছে, কি উত্তর দিবে নিরব কে।ভয়ে ইতস্তত মৃথিলা।নিজের পোশাক ঠিক করে নিয়ে মাথা নিচু করে বললো প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন আমার খুব ভয় করছিলো।আমি একা ঘুমোতে পারছিলাম না তাই আপনার পাশে আপনার অনুমতি ছাড়া ঘুমিয়েছি আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ।আমাকে খারাপ ভাববেন নাতো আপনি।

নিরব সুয়ে থাকা অবস্থায় মৃথিলার মুখের দিকে তাকালো একবার।মেয়েটা এক্ষুণি কেঁদে দিবে দিবে এমন একটা ভাব।সদ্য ঘুম থেকে ওঠা একটা মেয়ের মুখে এমন বাচ্চাদের মতো ভয় আর অনুনয় বিনয় দেখে তার সরলতায় মুগ্ধ নিরব।মৃথিলার চোখে মুখে এতটা সরলতা আগে বুঝে নি নিরব।চোখের চাওনি তে সব সময় ভয় আর লজ্জা।মুখে মন কাড়া সরলতা। নিরব মৃথিলা কে যত দেখছে আর অবাক হচ্ছে।নিরব গায়ে গেঞ্জি পরতে পরতে বললো এই মেয়ে এই কাছে এসো।অন্যায় যখন করেই ফেলেছো শাস্তি ও পেতেই হবে।মৃথিলা ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে বললো আমাকে কি ওদের হাতে তুলে দিবেন।নিরব বুঝতে পারলো মেয়েটা মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ।স্বাভাবিক মেয়েদের মতো নয়।সব সময় অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে বেড়াচ্ছে।সব কিছুতেই ভীষণ ভয়।ফান,মজা এগুলোর প্রতি কোনো অনুভূতি নেই সব কিছুই সত্য মনে হয় তার।নিরব একটা নিঃশ্বাস টেনে বললো মেয়েটা তো সত্যি বাচ্চা মেয়ে।মৃথিলার সামনে গিয়ে বললো তোমাকে যদি ওদের হাতেই তুলে দিবো তাহলে জীবনের এত বড় একটা ইমপরটেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করতাম।মৃথিলা বললো এটা তো আর সারাজীবন এর জন্য বিয়ে নয়।আমাকে বাঁচানোর জন্য। নিরব কপালের চামড়া কয়েক টা ভাজ ফেলে বললো নিয়তি কি রেখেছে জানিনা।তুমি এতটা সিওর কিভাবে সারাজীবন নাকি ক্ষনিকের জন্য।তোমাকে বিয়ে করবো এটা কি ভেবেছিলাম তাও তো বিয়ে হয়েছে দেখো এটাই ভবিতব্য ছিলো।সামনে কি হবে সেটাও জানিনা।বাট তুমি এইভাবে সব সময় মাথা নিচু করে থাকবে না।এইভাবে মাথা নিচু করে থাকো কেনো?আমার সামনে এইভাবে মাথা নিচু করতে হবে কেনো বলোতো। এত ভয় পাও কেনো তুমি মৃথিলা কিসের এত ভয় তোমার।

–মৃথিলা একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো,আমাকে বাঁচাতে পারবেন না আপনি।কেনো আমাকে বিয়ে করে নিজের জীবনে ঝামেলা জড়ালেন।

–কেনো পারবো না বাঁচাতে হুয়াই?

–আমি তো কবেই মরে যেতাম, বেঁচে আছি বাবা আর আপুর জন্য।মৃত্যু সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়ে আছে।এই পৃথিবী আমার জন্য নিষিদ্ধ।

–এভাবে বলো না প্লিজ।তোমাকে আমি বাঁচাবোই মৃথিলা।নিরব থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।আমি চ্যলেঞ্জ নিতে খুব ভালবাসি।এই চ্যালেঞ্জ টা জিতবো আমি বাট আমাকে কি তুমি খুলে বলবে তোমার সাথে আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

–এর আগেও কয়েকবার কেউ বা কারা আমাকে মারতে চেয়েছে।সেই মানুষ গুলাকে আমি চিনি না।একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো বাবা বাঁচাতে গিয়ে তাদের কাছে অনেক মার খেয়েছে।বাবা সেবার মরার মতো হয়ে গেছিলো।প্রায় রাতে আমি একা ঘুমোলে কেউ বা কারা আসে আমার রুমে অনেক বার গলা চেপে, মুখ চেপে ধরেছে।আমি চিৎকার দিলে পালিয়েছে।তারা আমাকে বলেই দিয়েছে আমাকে মরতেই হবে। এই কথাটা সারাক্ষণ আমার কানে বাজে আমাকে মরতেই হবে।আমাকে ঘিরে নাকি অনেক বড় উদ্দেশ্য তাদের বাট কি আমি জানিনা।জানেন মানুষ কষ্ট পেলে মায়ের সাথে শেয়ার করে।আমার মা আমার কোনো কষ্ট শুনতেই চায় না।মা ভাবে আমি মরে গেলেই তো পারি।বেঁচে থাকার এত শখ কেনো আমার।মৃথিলা পিঠের দিকে জামা একটু উঁচু করে দেখালো অসংখ্য মারের দাগ শরীরে।নিরব দেখেই সহ্য করতে পারলো না।নিরব বললো, তোমার মা মেরেছে।মৃথিলা চোখের পানি ছেড়ে বললো হ্যাঁ আমার মা মেরেছে।বাড়িতে সব কাজ আমি ই করি কিছু ভুল হলেই খারাপ ব্যাবহার থেকে রক্ষা নেই।আপুর খাওয়া শেষ হলে আমাকে খেতে হয়। বাইরের কেউ জানেনা কিন্তু আমি জানি আমার বাড়িতে আমার অবস্থান।আজ আপনাকে বললাম আমার ভয়ঙ্কর জীবনের কথা। এর আগে একজন কে বলেছি সে আমার কলেজের ম্যাম।যে আমাকে মায়ের মমতা দিয়েছে।ম্যাম আমাকে ভীষণ ভালবাসেন।জানেন আমার একমাত্র বন্ধু ম্যাম যে আমার কষ্টের সাথী।কলেজে সব সময় আমার সাথে গল্প করেন।জানিনা কিসের টান আমার উপর এতটা ভাবেন কেনো আমাকে নিয়ে।একটু হেসে বললো মৃথিলা,ম্যাম আমাকে বলেন তার ছেলের বউ আমাকে বানাবে।আমাকে তার ছেলের বউ বানিয়ে আগলে রাখবে।ম্যাম যদি জানেন আমার বিয়ে হয়েছে অনেক কষ্ট পাবেন।আমার ভেতরের আমি টা মরে গিয়েছি অনেক আগেই।মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছা করে সবার মা আর আমার মা আলাদা হওয়ার কারণ কি?

নিরব মৃথিলার মাথায় হাত দিয়ে বললো কষ্ট পেও না মৃথিলা। আমি প্রমিজ করছি তোমার মাথা স্পর্শ করে যদিও আমি কোনো কিছু ছুঁয়ে বলাতে বিশ্বাসী না।তবুও তোমাকে বিলিভ করাতে স্পর্শ করলাম যে ম্যাম তোমাকে এতটা ভালবাসেন আমি নিজে হাতে তোমাকে তার হাতে তুলে দিয়ে আসবো।তোমাকে ভালো রাখাটা নিজে নিজে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি।এই তোমার মাথা ছুয়ে প্রমিজ করলাম ম্যামের কাছেই থাকবে তুমি আজীবন।ম্যামের ছেলের সাথেই আবার ও বিয়ে হবে তোমার।এই পৃথিবীতে আমি আমার আম্মুকে সব থেকে বেশী ভালবাসি।এই প্রথমবার আম্মুর নামে ওয়াদা করছি যেভাবেই হোক তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ আমি নিবোই কারা এর পেছনে খুজে বের করবো আর তোমাকে তোমার ম্যামের কাছে সারাজীবন থাকার ব্যবস্থা করে দিবো।নিজ দায়িত্বে ম্যামের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।আমি বুঝতে পারছি ম্যামের সাথে থাকলেই তুমি খুশি থাকবে।

মৃথিলা অবাক হয়ে বললো এমন ওয়াদা কেনো করলেন আপনি?এভাবে অনিশ্চিত জিনিস নিয়ে প্রমিজ করা ঠিক নয়।যদি রাখতে না পারেন।কি হবে সিসুয়েশন আমরা তো জানিনা।

সিসুয়েশন নিজে তৈরি করবো আমি।নিরব জানে কিভাবে কথা রাখতে হয়।

নিরব কতগুলো ড্রেস এনেছে মৃথিলার জন্য।দুপুরে মৃথিলা গোসল করে কালো গাউন আর চুরিদার পরলো।সাওয়ার থেকে এসে ভেজা চুল টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে রেখেছে।মৃথিলাকে কালো ড্রেসে পরীর মতো লাগছে।নিরব বাইরে থেকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে মৃথিলাকে।এমনিতেই কালো মানেই নিরবের উইকনেস।মৃথিলা সত্যি যে অসম্ভব সুন্দরী সেটা অস্বীকার করা যায় না।ঠোঁটের উপরের তিলটা আরো চকচক করছে।নিরব ঘরে প্রবেশ করে মৃথিলাকে বললো এত গুলো কালারের মাঝে তুমি কালো পরলে কেনো?মৃথিলা হেসে বললো কালো আমার ফেভারিট তাই।নিরব বললো এতটা মিল আমাদের।

-তাহলে আপুর সাথে আরো বেশী মিল তাইনা?

– মিল তাইনা?এটুকু বলেই চুপ নিরব।

বিকালে মেধা কল দিয়েছে মেধার কল রিসিভ করতে নিরব ছাদে গেলো, আর এই সুযোগে নিরবের আম্মু ও বাসায় প্রবেশ করলো।

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here