প্রণয়ের সূচনা পর্ব -২৩

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৩
___________________________
–‘ভাবী তোমাকে মেহেদী লাগিয়ে দিল কে?তুমি না বললে মেহেদী লাগাবে না।

দিনার রুমে আসতেই তিথি সূচনার হাত দেখে উক্ত প্রশ্নটা করে বসল।সূচনা কী উত্তর দিবে খুজে পেলনা।প্রণয় দিয়ে দিয়েছে সেটা সবার সামনে বলতে পারবেনা নাহয় ল/জ্জা দিয়ে একেবারে শেষ করে দিবে বজ্জা/ত মেয়েগুলো। দেখে দেখে ননদ ও পেয়েছে কয়টা,একেবারে ল/জ্জার ‘ল’ ও যেমন নেই।

–‘প্রণয় ভাইয়া দিয়ে দিয়েছে তাই না সূচি থুক্কু ভাবিইই। বাহ রং তো সুন্দর ই হবে, অবশ্য হওয়ার ই কথা বর নিজে তার বউকে মেহেদী পড়িয়ে দিয়েছে।

সূচনা মুখ ফুটে না বললেও মিহু ঠিকই বলে দিল।শুরু হয়ে গেছে তাদের নির্ল/জ্জা মা/র্কা কথা বার্তা।সূচনা দেরি করল না আর মিসেস আফিয়ার দেয়া চুনরি টা দিনাকে দিয়ে ছু/টে বের হলো যেন রুম থেকে।

দিনার রুম থেকে আসতে নিলে তারাহুরোয় ধা/ক্কা লাগল শক্তপোক্ত কোনো জিনিসের সাথে।পড়তে পড়তে বাঁচলো সূচনা। সামনে কোনো জিনিস না স্বয়ং দাড়িয়ে আছে নিষাদ।সূচনার বাম হাতটা নিষাদের হাতে বন্দী।চ/মকে উঠলো সূচনা,যার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে বলে ঠিক করেছে তার সাথেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।হাত ছাড়িয়ে এক প্রকার ছিট/কে সরে গেল সূচনা।নিষাদের ঠোটের কোনায় বা’কা হাসি,অদ্ভুত চাহনি।তার চাহনি তে সূচনা কেঁপে উঠলো খানিক।আর কোনো দিকে না তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে সোজা এগোলো রুমের দিকে।রুমে এসে দরজা লক করে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক বারে শেষ করে ফেলল পুরোটা।ধপ করে বসে পড়লো বিছানায়,তার কপাল বেয়ে চি/কন ঘামের রেখার অবস্থান। সেই ছোয়া,চাহনি তাকে এক পুরোনো, বিষাদময় স্মৃতির দাড় প্রান্তে নিয়ে গেল আবার। কিন্তু ডুব দিতে পারলনা সেই অন্ধকারে। তার আগেই প্রণয়ের গলার স্বর।

–‘এভাবে ঘামছ কেন?কী হয়েছে? খা/রাপ লাগছে।

তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সূচনা পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?

–‘ব্যালকনিতে ছিলাম।তোমার কী হয়েছে?

–‘ওহ

প্রণয়ের প্রশ্ন এড়াতে চেষ্টা করেও পারলনা সূচনা।আবার প্রশ্ন করলো প্রণয়।

–‘কী হয়েছে তোমার?

সূচনা জোরপূর্বক হেসে বললো-

–‘কিছু না, দিনাপুর রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে এসেছি তো তাই একটু ঘেমে গিয়েছি।

প্রণয় কেমন যেন বিরক্তিমাখা চাহনি নিক্ষেপ করলো যার মানে বুঝল না সূচনা।প্রণয় কড়া কণ্ঠে শোধালো-

–‘ব্যালকনিতে আসো।

প্রণয়ের দিকে না তাকিয়ে ই আমতা আমতা করে সূচনা বললো-

–‘আমাার ভালো লাগছে না,ফ্রেশ হয়ে ঘুমাব। আপনি যান।

কিছু বলল না প্রণয়, তার চোখ রাঙা নিতেই সূচনা উঠে দাড়ালো,চলে গেল তার পিছন পিছন ব্যালকনিতে।
______________________________
–‘আর কতক্ষণ বসে থাকব এভাবে?

ব্যালকনির ফ্লোরে বসে বিরক্তি সাথে ক্লান্তি মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো সূচনা। প্রণয় তার পাশেই বসা।দীর্ঘ এক থেকে দেড় ঘন্টা যাবৎ এভাবেই বসে আছে তারা। প্রণয়ের কোলে ল্যাপ্টপ, আঙুলগুলো যেন ট্রেনের গতিতে চলছে কী-বোর্ডে। সূচনা আবার তার প্রশ্ন টা করলো-

–‘আর কতক্ষণ বসে থাকব এভাবে? আপনি আপনার কাজ করছেন, আমার কাজ নেই কোনো আমাকে যেতে দিন।

পূর্বের থেকে এবার সূচনার কণ্ঠ ছিল কিছু টা উদাস।প্রণয় এখানে বসিয়ে রেখেছে কেন, সেই প্রশ্নের জবাব খুজতে যেয়ে তখনকার ঘটনাটা মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে আপাদত।সূচনার প্রশ্ন শুনে প্রণয় ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?

সূচনা হালকা করে ওপর নিচ করলো মাথা। প্রণয় সহসা জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী সমস্যা?

সূচনার নত দৃষ্টি।সহসা উত্তর দিতে পারলনা সে,ইতস্তত করতে করতে নিচু স্বরে বললো-

–‘ মে’য়ে’লি সমস্যা।

সূচনার জবাব দিতে দেরি প্রণয় তার ডান হাত ধরে বললো-

–‘চলো।

সূচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কোথায় যাব?

–‘চলো আগে,,উঠো।

সূচনার হাত ধরেই তাকে রুমে নিয়ে আসলো প্রণয়।কাবার্ডের সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো।কাবার্ড খুলে সামনে থেকে ঝোলানো কয়েকটা কাপড় সরাতেই দেখা গেল দু’টো স্যানি/টারি ন্যাপকি/নের প্যাকেট,একটা পলিথিন ব্যাগ ভর্তি চিপস আর চকলেট। সূচনার চোখ সেই দুটো প্যাকেটের ওপরই। তার মানে প্রণয় জানে,কিন্তু কিভাবে?মস্তিষ্কে কড়া নাড়লো প্রশ্নটা। সহসা কোনো উত্তর দাড় করাতে পারল না সে।জিজ্ঞেস ও করতে পারবেনা।লজ্জা লাগছে তার এমন পরিস্থিতি তে পড়ে। যদিও পি/রিয়ড এর বিষয় টা মোটেও ল/জ্জার কোনো বিষয় না। সবার সঠিক জ্ঞান থাকা উচিত।

প্রণয় পুনরায় চলে গেল ব্যালকনিতে।যাওয়ার আগে সূচনার দিকে তাকিয়ে বললো-

–‘ নিজের প্রয়োজন নিজে বুঝে নিতে শিখো।

মিনিট পাচেক থম মে’রে দাড়িয়ে থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সূচনা।

সূচনা ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর পর দেখল প্রণয় বিছানায়,হেলান দিয়ে বসে আছে। গুটিগুটি পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল সূচনা। তার দিকে একনজর তাকিয়ে শোয়ার জন্য উদ্যত হলো প্রণয়।সূচনা তড়িৎ গতিতে বললো-

–‘শুনুন

প্রণয় সহসা বললো-

–‘বলো

আমতা আমতা করতে করতে সূচনা বললো-

–‘আসলে,, আপনি

–‘আমি কী?

–‘আপনি কীভাবে জানলেন এই সময়ে আমি চকলেট,চিপস এগুলো,,

–‘মিহু বলেছে প্লাস আই হেভ অলসো থ্রী সিস্টার্স আর তাদের অবস্থা ও এমন। তাই জানাটা অত বিশাল ব্যাপার না।

–‘আপনি কিভাবে জানলেন যে,,

–‘সেটা বড় কথা না,,বড় কথা হচ্ছে তুমি বলো নি।তুমি কি বিয়েটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছ না?

প্রণয়ের কণ্ঠে গাম্ভীর্যের ছাপ।সূচনার বু/ক ধ্ব/ক করে উঠলো প্রণয়ের করা প্রশ্নে। সে তড়িৎ গতিতে বললো-

–‘ আপনি এভাবে বলছেন কেন? আমি তো বলেছিলাম আমার সময় লাগবে একটু।

প্রণয় ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো –

–‘সময় তো দেয়া হচ্ছে, দিব।আমরা একসাথে থাকছি, আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে তোমার সময় লাগবে এট লিস্ট বন্ধু তো মানতে পারো। নাহয় কোন বেসিস এ থাকছি একসাথে?আমরা স্বামী -স্ত্রী সেই বেসিসে, কিন্তু তোমার তো সময় লাগবে সেই সম্পর্ক মানতে।তাহলে কী করব বলো।

সূচনা জবাব দিতে পারলনা কোন।চুপ করে তাকিয়ে রইলো নিচের দিকে। প্রণয়ের এমন ব্যবহার তার কাছে নতুন।এই কয়দিনে তো একবারও তার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলেনি।তাহলে আজকে এত রে/গে আছে কেন?
অন্য দিকে ফিরে মিনিট পাচেক এর মতো চুপ করে রইল প্রণয়।তারপর সূচনার দিকে ঘুরে নরম স্বরে বললো-

–‘ শোনো,একটা মেয়ের যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন সে কোথায় থাকে?শশুর বাড়ী,কারণ সেটাই তখন তার ঠিকানা হয়।হ্যা তার বাবার বাড়ীর পরিবার আছে কিন্তু তখন শশুর বাড়ীর পরিবারটাই তখন তার বেশি আপন করে নিতে হয়।তোমাকে বিয়ে করেছি আমি,তোমার শশুর বাড়ী এটা।এখানকার লোকজন ও তোমার আপন। তাদের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন,পছন্দ -অপছন্দের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।আর সেটা নিজেরই রাখতে হবে। নিজের ভালো নিজেরই বুঝতে হয়, সবাই সবসময় থাকেনা।তুমি যার দরুন এই পরিবারে এসেছ সে ও একসময় থাকবেনা তাই এখন থেকেই শিখে নাও।

সূচনা চট করে তাকালো প্রণয়ের দিকে।যার দরুন সে এখানে এসেছে সে ও একসময় থাকবে না।কথাটা বুঝতে সমস্যা হয়নি তার। কোনো এক অজানা ভয়ে ই বু/কের ভেতর মোচ/ড় দিয়ে উঠলো তার। প্রণয় সূচনার দিকেই তাকিয়ে আছে।সূচনার ব্যথাতুর দৃষ্টি, বা’কা হাসি আনল প্রণয়ের অধরে। আর কথা বাড়ালো না প্রণয়।বললো-

–‘কী করবে ভেবে নিও।এতক্ষণ তোমার পিরিয়ডের ব্যাপারটা না বলার শাস্তিস্বরূপ ই আমার সা/থে বসিয়ে রেখেছিলাম। এখন ঘুমাও।

সূচনা কিছু বলতে নিলেই প্রণয় মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করলো।সূচনা আর কিছু বললো না তাই।
শুয়ে পড়ল দুজনই।প্রণয়ের দিক পিঠ করে শুয়েছে সূচনা।মাঝে প্রতিদিনের মতো একটা কোল/বালিশ দেয়া।সূচনা ঘুমায়নি,ঘুম ধরা দিচ্ছে না তার চোখে।আচ্ছা প্রণয় কী ঘুমিয়ে গেছে? প্রশ্ন টা আসতেই ভাবল উঁকি দিয়ে দেখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। পাশ ফিরে তাকাতেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল সূচনা। তার দিকে ফিরেই শুয়েছে প্রণয়।তার গভীর উন্মুক্ত নয়ন জোড়া।অন্ধকারে আবদ্ধ হলো দুজন দুজনের দৃষ্টিতে।
______________________________
বেলা গড়িয়ে অনেক এখন।সকাল থেকে দুপুর আর দুপুর পেড়িয়ে এখন বিকেল। সারাদিন কাজে কাজেই পেরিয়েছে সবার। কাজের ফা/কে অবশ্য সূচনার খবর নিতে ভুলেনি প্রণয়। হাত পরিষ্কার করে অয়েন্টমেন্ট ও লাগিয়ে দিয়েছে।সকাল আর দুপুর এর খাবারটা একসাথেই খেয়েছে সবাই।দিনার এই বাড়ির মেয়ে হিসেবে শেষ মূহুর্তগুলো যেন সুন্দর হয় তার প্রয়াস। তারপরে আসবে তবে তখন এ বাড়ির মেয়ে হওয়ার পাশাপাশি কারো বাড়ির বউ ও হবে তার আরেকটা পরিচয়।মাঝে সকালে ঘটে গেছে এক ঘটনা।সেটা হাস্যকর নাকি লজ্জাজনক বলা দায়।দিনার জন্য কিছু গিফ্ট পাঠিয়েছিল জাওয়াদ।ডেলিভারি বয় বাসায় পোঁছে দেয়ার পর তা প্রথম হাতে পড়ে মিহুর।দুষ্টুমির ছলে সেই গিফ্টের প্যাকেটের সাথে একটা চিঠি জুড়ে দেয় সে।তবে সেটা যেই সেই চিঠি না।বা/সর রাতে দিনার সাথে চন্দ্র বিলাস,বারান্দাবিলাস,গল্প করা,তার চুলে হাত বুলিয়ে দিবে,তাদের প্রেমকাহিনী, সব প্রেমপত্র আরও কত কি।সব লিখে দিয়েছে একেবারে।দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা যেয়ে পড়েছে ইসহাক সাহেব এর হাতে।কিন্তু ওনার প্রতিক্রিয়া ছিল শূণ্য।তবে মিসেস আফিয়ার চোখে ঠিকই পড়েছে,মুচকি হাসছিলেন উনি।মিসেস আফিয়া যখন জিজ্ঞেস করলেন –

–‘কী হয়েছে?

ইসহাক সাহেব কিছু টা নিচু স্বরে বললেন-

–‘আমাদের সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।চিঠি লিখতাম কত এক জন আরেকজনকে।এভাবেই তো প্ল্যান করতাম এটা করব, সেটা করব। রঙিন সময় ছিল কত।

মিসেস আফিয়া ও তখন লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়েছেন।
_______________________________
–‘এটা কী পড়েছো?

হলুদের জন্য তৈরি হচ্ছিল সূচনা।তার পড়নে মেরুন রঙের গাউন। সেটা দেখেই প্রশ্ন করলো প্রণয়।সূচনা ভ্রু কুচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘কেন কী হয়েছে? ভালো দেখাচ্ছে না?

–‘না সুন্দর লাগছে,কিন্তু এটা পড়বে না।

কাবার্ড থেকে একটা ব্যাগ সূচনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো-

–‘এইটা পড়বে, যাও চেন্জ করে আসো।কুইক

–‘কী এটা?

–‘আমার মাথা।

–‘আচ্ছা খু/লে দিন তাহলে।

–‘কী খু/লে দিব?

–‘কেন মাথা।

–‘বেশি কথা বলো কেন?যাও চেঞ্জ করে আসো।

–‘আমি চেন্জ করতে পারবনা এখন।

–‘যাবে না?

–‘নাহ।

প্রণয় চুপ থাকল কিছুক্ষণ।তারপর বললো –

–‘আমি কি চিন্তা করেছি জানো।

সূচনা উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

–‘এটাই যে তুমি আমার কথা না শুনলে আর আমার মুখের ওপর কথা বললে ব্যালকনি থেকে ছু/ড়ে ফেলে দিব।দোতলা থেকে পড়লে বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না।শুধু হাত-পায়ে ব্যথা পাবে,ভে/ঙেও যেতে পারে।এই তো।

–‘ভ/য় দেখাচ্ছেন?

–‘আরে না,,আমি তো ওয়া/র্নিং দিলাম।তাড়াতাড়ি যাও ঘটনা ঘটাতে আবার সময় লাগবে না আমার।

রা/গে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে প্রণয়ের দেয়া শপিং ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুক/লো সূচনা।

পার্পল কালার এর গাউন, তার মধ্যে হাতে গোল্ডেন রঙের কাজ করা,সাথে গোল্ডেন রঙের ওড়না। এতক্ষণ ক্যাচ/ক্যচ করলেও জামাটা বেশ পছন্দ হয়েছে তার।এই জামা পড়ার পর প্রণয় যখন দেখবে তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? নিজের মাথায় নিজেই চাটি মা/রল সূচনা।মনে মনে বললো –

–‘ইদানীং কী সব উল্টা পাল্টা ভাবছিস?মাথা টাথা গেছে একেবারে।

ওয়াশরুম থেকে বের হবার পর সূচনা উৎসুক দৃষ্টি রাখলো প্রণয়ের দিকে। কিন্তু প্রণয় কিছু ই বললো না।তার হাতে আরেকটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।অবাক না হয়ে পারলনা।মনে মনে গু/ষ্টি উদ্ধার করে হাতের ব্যাগটা খু/ললো।এক মুঠো বেগুনি রঙের কাচের চূড়ি,সাথে গোল্ডেন রঙের মোটা চূড়ি একটা,গোল্ডেন রঙের হিজাব, আর আংটি । মুচকি হাসলো সূচনা। প্রণয়ের দেয়া দ্বিতীয় উপহার এটা। তার পছন্দ মতো।সবকিছু নিয়ে রেডি হতে বসলো সে।

মিনিট তিরিশেক পরই ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেল,পার্পল কালারের পাঞ্জাবি পড়া প্রণয় বেড়িয়ে এলো।হলদেটে ফর্সা রঙে পার্পল কালার টা খুব মানিয়েছে।হুট করে খেয়াল হলো সে আর প্রণয় একই রঙ পড়েছে।তাহলে কি প্রণয় ইচ্ছে করে করেছে এমনটা?ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মতো করেই রেডি হচ্ছে প্রণয়।সূচনা আড় চোখে তাকাচ্ছে তার দিকে। আচ্ছা সে এখানে বসে আছে কেন? হুট করেই মনে হলো তার কথাটা।আসলেই তো এখানে বসে আছে কেন? সে আসুক তার মতো, তাকে তো আর বলেনি অপেক্ষা করতে।সূচনা বিছানা থেকে উঠে যাওয়া ধরলেই প্রণয় কড়া গলায় বললো –

–‘চুপচাপ বসে থাকো।আমার হয়নি এখনো।

প্রণয়ের কড়া কণ্ঠ পেয়ে আর কিছু বললো না সূচনা। প্রায়,দশমিনিট এর মাথায় প্রণয় বললো-

–‘চলো ল্যাভেন্ডার।

সূচনা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। প্রণয় সূচনার ওপর ঝুঁকে তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো-

–‘পার্পেল কালারে একদম ল্যাভেন্ডার লাগছে, ইচ্ছে করছে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখি।

প্রণয়ের ফিচেল কণ্ঠে বলা উক্তি।প্রণয়ের খোচাখোচা দাড়িগুলো সূচনার গা/লে লাগছে,মৃদু ব্যথা লাগলেও শিহরিত হলো সমস্ত কায়া।আখি জোরা বন্ধ থাকা অবস্থাতেই মন গহীনে উকি দিল কিছু ভাবনা। সে আর প্রণয় দুজনই পার্পল কালার পড়েছে, তাদের যদি একটা মেয়ে থাকত তাহলে তাকেও নিশ্চয়ই পার্পল কালারের ড্রেস ই পড়াতো।তখন তাদের পরিবার হতো ল্যাভেন্ডার পরিবার।আচ্ছা তার মেয়ের নাম কী হতো?”প্রাণ?” #প্রণয়ের_সূচনা সূচনার প্রাণ?

–‘যাবে না আমি চলে যাব?

ঘোর ভাঙ/লো সূচনার।প্রণয় সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে তার সামনে।একটু আগের ভাবনার কথাগুলো মনে পড়তেই সূচনা কুঁকড়ে গেল। কীসব ভাবছিলো সে?উদ্ভট সব ভাবনা। মেয়ে আবার মেয়ের নাম ও ভেবে ফেলেছে।হুমায়ূন আহমেদ এর বৃষ্টিবিলাস এর শামার মতো অবস্থা হয়ে গেছে তার।যদিও শামা বিয়ে না হতেই মেয়ের কথা ভাবছিল আর তার তো বিয়ে হয়েছে তাও।

–‘গেলাম আমি

–‘আরে দাড়ান আমি আসছি তো।

–‘ফাস্ট।

–‘হু।

পাশাপাশি দুজন পা বাড়ালো রুম থেকে বেরোতে।সূচনার ভাবনা অনুযায়ী ল্যাভেন্ডার পরিবার না হলেও ল্যাভেন্ডার কপোত-কপোতী লাগছে তাদের।
_________________________
–‘আপনি এখানে কী করছেন?দরজা লক করেছেন কেন?

রুমে একাই ছিল সূচনা।বাকিরা সবাই ব্যস্ত ছাদে, ছেলে পক্ষ থেকে দিনার জন্য হলুদ নিয়ে এসেছে জাওয়াদ এর কয়েকটা কাজিন।সবাই এখন ছাদেই তাদের নিয়ে ব্যস্ত।ফোন নিতে রুমে এসেছিল সূচনা।তখন তাড়াহুড়ায় নিতে ভুলে গিয়েছিল। দরজা লক করার শব্দে পেছনে ঘুরতেই দেখল দরজার সামনে নিষাদ দাড়িয়ে আছে।ঠোঁটে শয়/তানি হাসি তার।সূচনার তাকে দেখতে নিকৃ/ষ্ট লাগছে এই মুহূর্তে।ভয়ে বু/ক কা/পছে সূচনার।সূচনার প্রশ্ন শোনার পরে নিষাদ আস্তে
আস্তে এগোতে লাগল তার দিকে। সূচনা কাপ/ছে থরথর করে।চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে কিছু দৃশ্য।সেই দৃশ্য গুলো স্পষ্ট হওয়ার সাথে ঝাপসা হতে লাগল তার দৃষ্টি।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। আজকে অন্য পর্বগুলোর তুলনায় বিশাল পর্ব দিয়েছি।তাই সুন্দর,বড়,ভালো লাগার মতো মন্তব্য চাই🥺।ভালোবাসা ❣️। ফি আমানিল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here