প্রথম প্রেম পর্ব ২৫+২৬

#প্রথম_প্রেম
২৫ তম পর্ব।

শাওন সকাল সাতটায় রাজীব কে ঘুমে রেখেই বেড়ি গিয়েছে। রাতে বাসায় এসে গোসল করে খেতে খেতেই রাত প্রায় সাড়ে তিন টা বেজে গিয়েছে। এতো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েছে শাওন, তবুও ভোর ছয়টায় ঘুম ভেঙে গিয়েছে শাওনের। কেন যেন ঘুম আর আসছেই না। তাই, রাজীব কে ঘুমে রেখেই বাইরে আসলো শাওন।

শাওন একটা টং দোকানে বসলো, রাতে সামান্য কুয়াশা পড়েছে হয়তো। তাই, বেঞ্চ গুলি হালকা ভেজা।দোকানদার বললো,
মামা, বেঞ্চ মুইছা দেই খাড়ান, একটু টাইম লাগবো।
– না, লাগবেনা। চা দেন!
– মামা, মাত্র খুলছি, আগুন ধরাইয়া চা দিতে মেলা টাইম লাগবো। আপনের সময় আছে?
– হ্যা, আছে।

শাওন চিন্তা করছে উর্মির কথা। উর্মি কে কি এখন একটা ফোন দেয়া যায়, সে একটু শান্তি মনেই ক্যাম্পাসে আসুক।

দুই বার রিং হওয়ার পর, উর্মি ফোন ধরলো,
হ্যালো।
– সুপ্রভাত।এখনো ঘুমাচ্ছেন ম্যাডাম?
– রাতে ঘুম হয়নি, তোমার চিন্তা করে। একটু আগেই যাস্ট শুয়েছি।
– আমি ঢাকায় এসেছি, এখন ধানমন্ডি আছি। তুমি আসবে কখন?
– সত্যি?
– হ্যা।
– থ্যাংক ইউ, ইশ আমার এক্ষুনি দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি এখনই আসছি।
– না, আস্তে আস্তে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি আছি।
– আমার তোমার হাত ধরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।
– আচ্ছা, সেটা দেখা যাবে।
– আমি কি শাড়ী পরবো?
– বাসায় সন্দেহ করবে! থাক।
– এতো আন রোনান্টিক তুমি! আচ্ছা, আমি আসছি। তুমি ক্যাম্পাসের গেইটে থাকবা।
– জি।
– রাখছি।
– হুম
– শোনো।
– খুউউব ভালবাসি।
– আমিও।

শাওন ফোন কেটে ভাবছে, মেয়েটা এতো ভালবাসে! কি খুশি হয়েছে সে। এমন রুপবতী মেয়ে যে কেন তার প্রেমে পরেছে, মাঝে মাঝেই এই অংক মিলেনা। তবে, উর্মির একদিক দিয়ে ভাগ্য খুউব ভালো, সে একজন সত্যি কারের মানুষ কে পেয়েছে, যে তাকে তার জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসে।

দোকানদার বললো মামা চা রেডি! বিস্কুট দিমু?
– হ্যা দেন।

শাওন সাড়ে নয়টায় বুয়েটের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছে, মেরুন রঙের একটা শার্ট। আর কালো প্যান্ট পরা শাওনের!

উর্মি রিকশা থেকে নেমেই দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, কেমন আছ তুমি?
– ভালো আছি। তোমার দৌড় দেওয়ার স্বভাব এখনো আছে।
– হুম আছে। তোমাকে দেখলেই দৌড়ে কাছে আসতে ইচ্ছে করে।
– তোমার বন্ধুরা কোথায়?
– ওরা,আমাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে আসবে। চলো বসি, এদিকে।

উর্মি হাঁটছে কিন্তু কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে, শাওন এটা খেয়াল করছে। শাওন বললো কি এতো লজ্জা কেন?
– কোথায়?
– দেখছি তো।
– কত দিন পর পর দেখা হয় লজ্জা তো পাওয়া উচিত।
– সেটাই।

উর্মি বললো ওই যে লম্বা ছেলে, এই হচ্ছে অনিক।
– তুমি কি আগেই বলে রেখেছিলে, আমি আসবো?
– আরে না। সাইয়ারা কে বলেছি ওদের নিয়ে বসতে।
– ওহ।

উর্মি অনিকের সামনে গিয়ে বললো কেমন আছ অনিক?
– ভালো।

সাইয়ারা তখন বললো আরে শাওন ভাই, কেমন আছেন। যাক, আপনার প্রেমিকা আজ তাহলে শান্তিতে আছে?

শাওন হাসছে

অনিক তখন দেখছে শাওন কে।

উর্মি বললো ওহ অনিক, হি ইজ মাই বয় ফ্রেন্ড।
– ও।

অনিক তখন কিছু বলছেনা শুধু শাওন কে দেখছে।

শাওন বললো কেমন আছেন অনিক?
– জি ভাইয়া ভালো আছি।

শাওনকে উর্মি তার বাকী বন্ধু-বান্দবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু অনিক যেন কেমন আড় চোখে দেখছে, উর্মির মতো এতো স্মার্ট একটা মেয়ের বয় ফ্রেন্ড এতো সাদামাটা। তাছাড়া বয়সের ও তো পার্থক্য অনেক!

সাইয়ারা বললো ভাইয়া আজ আমাদের খাওয়াতে হবে!
– কি খাবে?
– বিরিয়ানি!। কি বলিস তোরা?

উর্মি চুপিচুপি বললো কেন ওদের নিচে এতো টাকা খরচ করবে? বোকা নাকি?
– তোমার জামাই এখন সামান্য হলেও একটা চাকরি করে।

সাইয়ারা বললো ভাইয়া এখনই খাওয়াবেন?
– এই সকাল বেলা খাবে?
– আরে, আপনার প্রিয়দর্শনী কি, আপনাকে এভাবে সবার মাঝখানে রাখবে। একটু আলাদা আলাপ করার জন্য অপেক্ষা করছে!
– কি যে বলো তুমি!

অনিক তখন বললো ভাইয়া আমার একটা জরুরি কাজ আছে, আমি এখন আসছি। বিরিয়ানি অন্য একদিন হবে।

অনিক পার্কিং থেকে বাইক নিয়েই দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে গেল। শাওন সাইয়ারাকে বললো এই নাও টাকা, সবাই মিপে খেয়ে নিও,আমি আবার বিকালে বাড়ী যাবো।
– উর্মি কি আমাদের সাথে থাকবে?
– উর্মির ইচ্ছা!

উর্মি বললো আমি ওর সাথে একটু হাঁটতে যাচ্ছি। বিরিয়ানি কাল খাবো। সাইয়ারার কাছে থাকুক টাকা।
– যাও বান্দবী, বেস্ট অব লাক।

শাওন-উর্মি তাদের প্রিয় জায়গায় বসে আছে।

উর্মি বলছে দেখলে অনিক কিভাবে বেড়িয়ে গেল?
– হুম, দেখলাম। তবে, ও যেহেতু তোমাকে পছন্দ করে। ক্লিয়ারলি তুমি বললেই হয়ে যেতো আমার আসার দরকার ছিল না।
– ছিল। তুমি বুঝবেনা। ওর এই তিন লাখ টাকার বাইক নিয়ে কি অহংকার। কোচিং এ বাইক নিয়ে যেতো। আবার বাপ হচ্ছে ডাক্তার, মা হচ্ছেন নর্থসাউথের প্রফেসর, এজন্য ভাব বেশি। একমাত্র ছেলে, তাই যা ইচ্ছা করে।
– ভালই। আজ বাড়ী যাবো বিকালে।
– আমি তোমাকে একটা শার্ট কিনে দিতে চাই। আর মাকে একটা শাড়ি।
– না, কেন? লাগবেনা।
– তুমি চুপ, চলো, বসুন্ধরায় যাই।
– থাক।

উর্মি নাছোর বান্দা মেয়ে, শেষ পর্যন্ত শাওনকে নিয়ে সে বসুন্ধরায় গেলে, এবং হাত ধরে ধরে হাঁটলো। শাওনের কেমন লজ্জা লাগছে। কিন্তু উর্মি খুব খুশি। সে নীল একটা শার্ট কিনে দিল। আর জমিলা খাতুনের জন্য একটা সুন্দর সুতি শাড়ি।

দুপুরে খাওয়ার পর, শাওন বললো আমার রাজীবের বাসায় যেতে হবে, সেখানে আমার ব্যাগ রয়ে গিয়েছে। আর তোমার নীল শাড়ি বিয়ের পর পরবে, তাই আর আজ আনিনি।
– ভালো করেছো।কথা দাও, কাল যাওয়ার সময় দেখা করবে।
– কাল, আমি বাস চেঞ্জ করার জন্য ঢাকা আসবো উর্মি। আমি একদম সময় পাবো না।
– এসব আমি জানিনা।
– এখন বুঝতে হবে, বালিকা প্রেমিকার মতো এখন করলে হবেনা। আমি আছি, আর শুধুই তোমার হয়ে থাকবো।

উর্মি শাওন কাছ থেকে গেলেই, সেদিন সারাদিন মন খুব উদাসীন আর অস্থির হয়ে থাকে। কিছুই ভালো লাগেনা। শাওন কাছে থাকলে যেন সব কিছু সুন্দর লাগে।

সন্ধ্যার পর, শাওন বাসে বসে গন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছে, আর ভাবছে তার উর্মিমালার কথা!

উর্মি হাতে কফির মগ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই সাইয়ারা কল দিল। উর্মির মনে হলো ওর সাথে কথা বললেই মন ভালো হবে।

হ্যালো।
– এই, উর্মি। অনিক আমাকে কল দিয়েছে।
– কেন?
– আমাকে বলছে, কি তোমার বান্দবী তার কোন মামাকে সব পড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
– আমি বললাম মামা কেন হবে?
– এই লোক তো উর্মির মামা/চাচার বয়েসী।
– তুই বললি না যে, ওর দাদার বয়েসী। তোর সমস্যা কি?
-আমি বলেছি না না, ওদের প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্ক।
– তখন বলে, এরকম হাবলার মতো ছেলে, কি রঙের শার্ট, জুতাটা কত বছর পুরোনো এরকম একটা ছেলের সাথে রিলেশন! ছিঃ
– ওর সমস্যা কি?
– জানিনা। এসব জেলাস। শোন তুই আবার এগুলো শাওন ভাইয়া কে বলিস না, মন খারাপ করবে।
– শোন, আমাদের সম্পর্ক এতো ঠুনকো না কিন্তু!! আচ্ছা রাখি রে, ভালো লাগছেনা।

উর্মি ভাবছে, তার শাওন কি এতো বিশ্রি দেখতে। বয়েসে হয়তো ৭/৮ বছরের বড়। তাই বলে মামা লাগে। তার কাছে শাওন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ।
উর্মি ভাবছে শাওন কি এখনই কল দিয়ে জানাবে? সে কি মন খারাপ করবে? সে তো এখনো বাসে! বলবে কি না, ভাবছে উর্মি!শাওন কি রাগ করবে? নাকি কষ্ট পাবে? নাকি কিছু মনেই করবেনা! কি করবে সে? তাই নিয়ে ভাবছে উর্মি….
#প্রথম_প্রেম
২৬তম পর্ব।

শাওন রিকশা থেকে দেখলো জমিলা বেগম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন।
শাওন রিকশা থেকে নেমেই মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।

জমিলা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিচ্ছেন, আর বলছেন, বাবা, কতক্ষণ ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, এতো দেরী হইলো কেন?
– মা, তুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছ কেন? এই গরমের মাঝে? আমি তো ঘরে যাবোই।
– এতো দেরী দেইখা ভেতরে শান্তি লাগেনাই, তাই বাইরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি।
– এখন তো শান্তি?

জমিলা বেগম হাসছেন। আর বার বার ছেলের মুখ চোখ হাত দিয়ে দেখছেন।

শাওন বললো আম্মা, ভাইয়া কোথায়?
– সাগর বাজারে গিয়েছে। তুই আসবি শুনলে কেমন যে অস্থির হয়।
– বুবু কেমন আছে?
– আর বুবু! তার শান্তি হবেনারে বাপ।
– বুবু কোথায়?
– পড়শু গিয়েছে তার ননদের বাড়ী, ননদের ছেলের আকিকা। একটা ভালো জুতা নাই, পরে সাগর রে বইলা এক জোড়া জুতা কিনে দিলাম। এর পরার শাড়ি নাই, শিরিনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে গিয়েছে।কেন যে আমার মেয়েটার এমন খারাপ ভাগ্য হইলো, জানিনা বাপ।
– মা, তুমি নাও, এক হাজার টাকা। বুবুরে একটা শাড়ি কিনে দিও।
– টাকার যে কি দরকার বাবা! পশ্চিম পাড়ার মিলাদ মেম্বারের মেয়ের জন্য আলাপ দিছিলাম, আমার সাগরের জন্য!
– কি বলে?
– মেয়ে ডিগ্রিতে পড়ে, উঁচা লম্বা আছে।
– তাহলে ভালই।.
– না কইরা দিছে, কয় টিনের বেড়ার ঘর, আবার বইন থাকে বাড়িতে। মেয়ে বিয়ে দিব না।
– আমার ভাইয়ার মতো ছেলে আছে নাকি?
– আইজ কাল মানুষ, টাকা দেখে, মানুষ দেখে না বাপ। তা, উর্মি মেয়েটা আছে কেমন?
– ভালই আছে।
– তারে আমার পছন্দ। রেজাল্ট পাইয়া আমারে জানাইছে। খুব ভালো লাগছে বিষয়টা।
– ওহ।
– বাবা হাত মুখ ধুয়ে নাও৷ আমি একটু শরবত বানাইয়া জগে রাখছি, নিয়া আসি।

শাওন অন্ধকারে কল পাড়ে গিয়ে মুখ ধুয়ে, গামছা দিয়ে মুছে মুছে, প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। কারণ কলপাড়ে নেট ভালো আসে। উর্মি কে জানাতে হবে, নয়তো মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে, অভিমানের জাহাজ!

শাওন ফোন খুলে দেখে বত্রিশ টা মিসড কল। সব গুলি উর্মি দিয়েছে! শাওনের বুক কেঁপে উঠলো কোন সমস্যা হয়নি তো! মোবাইল কখন চাপ লেগে সাইলেন্ট মুডে গিয়েছে খেয়াল পর্যন্ত হয়নি।

শাওন কল দিতেই উর্মি রিসিভ করে বললো?
– এতোক্ষণে সময় হয়েছে? ব্যাক করলে কেন?
– আরে,ফোন সাইলেন্ট ছিল।
– কতটুকু চিন্তা করেছি জানো? পরে ছোট আপুকে কল দিলাম, উনি ও জানেনা।
– আচ্ছা সরি। এখন বলো কি হয়েছে?
– মেজাজ খারাপ বুঝেছো!
– কেন?
– ওই অনিক বলে তুমি নাকি আনস্মার্ট, বয়স্ক এই সেই।
– উর্মি স্টপ, আমি তোমার এই কথা গুলি শুনতে ইন্টারেস্টেড না।
– তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?
– শোন উর্মি কে আমাকে নিয়ে কি বলে আমি কেয়ার করিনা। আর তুমি অনিকের কথার এতো গুরুত্ব দাও কেন? সে যা ইচ্ছে বলুক। তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা? পছন্দ করো কিনা? এটাই বিষয়! অনিক কি বললো অমুক কি বললো? এগুলো শোনার সময় আমার নাই।
– শাওন।
– কথা শেষ করে উর্মি, আমাকে অনেকেই বলেছে তুমি ধনী, তুমি বাচ্চা মেয়ে, তুমি চলে যাবা। তুমি আমার থাকবে না। কিন্তু আমি সব সময় বলেছি উর্মি আমার, শুধুই আমার। কে কী বললো তা নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি।
– শাওন তুমি বুঝতেই চাইছো না। আমি কি বলতে চাচ্ছি!
– উর্মি আমি সব বুঝতে পারছি। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস। তাহলে কেন অনিককে নিয়ে এতো তোমার মাথা ব্যাথা? অনিকের সামনে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, অনিকে এই বলেছে সে ই বলেছে। অনিক বিষয়টি বাদ দাও। আমি জানি তুমি আমার, তুমিও জানবে আমি শুধুই তোমার। এখন রাখছি, কথা বলবো পরে।
– হুম।

সাগর মায়ের পাশে এসে বসেছে, আম্মা শাওন আসছে কখন?
– এই কিছুক্ষণ আগে।
-শিরিন ফোন দিয়েছে, ও পছন্দ করে যে মেয়েটা সে নাকি ফোন দিয়েছে। ও ফোন ধরেনাই টেনশন করছে।
– ওহ! এখন তো ওই মেয়ের সাথেই কথা বলছে।
– ভালো। এতো বড় লোক মেয়ে কি আসবে মা, এই ঘরে!
– আল্লাহ জানেন ভালো। তবে, মেয়েটারে আমার পছন্দ।

শাওন ঘরে ঢুকে বললো আরে, ভাইয়া কখন এলে?
– এখনই! কেমন আছিস রে?
– ভালো আছি।
– ঢাকা নাকি সকালে আসছস?
– হ্যা, কিছু কাজ ছিল।
– এখন কি ভাইজানের কলিগের মেয়ের সাথে আলাপ করছিলি?
– কি?
– না, শিরিনের কাছে নাকি কল দিয়েছে, এই মেয়ে। এই জন্য বললাম।
– হুম।

শাওন খাওয়া দাওয়ার পর, বারান্দায় বসে আছে। ভাইয়ার সামনে কি লজ্জা লাগছে! আপু ও যে কেন ফোন দিল ভাইয়াকে!

আজ উর্মির ব্যবহারে মন টা সত্যি ভীষণ খারাপ লাগছে। ও কি অনিক কে পছন্দ করে? তবে কেন বার বার এই ছেলে নিয়ে এতো চিন্তা করে! এই প্রথম বার উর্মিকে এভাবে কড়া কথা বলায়, মন কেমন খচ খচ করছে।

এদিকে, উর্মি মন খারাপ করে বসে আছে, আজ রাতে খায়নি। শাওনকে এভাবে বলাটা ভুল হয়েছে। কিন্তু সে ভেবেছিল শাওন বুঝবে যে, সে কষ্ট পায়, তার শাওনের কথা কেউ খারাপ বললে। অথচ সে কি বুঝে কষ্ট পেল!!

উর্মি, দুইবার ফোন দিল, শাওন ধরেনি। শাওনের এখন কথা বলতেই ইচ্ছা করছেনা। উর্মি যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য টেক্সট করলো,

মায়ের সাথে জরুরি কথা বলছি। কাল কথা হবে রাখি।

উর্মির এই ম্যাসেজ পেয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, এটা শাওনের অভিমানের ম্যাসেজ। উর্মির আজ নিজেকে এতো অসহায় লাগছে। শাওন ছাড়া সে একদম শূন্য একজন মানুষ। শাওন কথা না বললে তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। সে নিজেই নিজের কাছে প্রমিস করলো আর অনিকের বিষয় শাওনের সাথে আলাপ করবেনা।

শাওনের মা রাতে বললেন, বাবা বাড়ীঘরে দুই ভাই হাত দাও। দুইজনরে বিয়া দিতে হবে।
– হ্যা, মা। দেখি…
– পিডিভির চাকরির রেজাল্ট আইছে?
– আগামী মাসে, এটা হইলে বেতন কত বাড়বে। প্রথমেই পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা বেতন।
– আল্লাহ যদি কপালে রাখে। যাও ঘুমাইতে যাও।
– হ্যা না।

শাওনের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়েছে, ঘুম ভাংতেই দেখছে তার চোখ ভেজা। সে উর্মিকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছে, এবং ঘুমের মধ্যে হাউমাউ করে কেদঁছে। তার মন খুব অস্থির লাগছে, পাগল মেয়েটার সাথে কথা না বলায় কি আবার উলটা পালটা কিছু করেছে নাকি? শাওন বার বার নিজেকে বলছে, না এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি! কত কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই।

শাওন সাথে সাথে চিন্তা করলো সে গাড়ীতে উঠার আগে উর্মি কে এক নজর দেখে যাবে।

তাই টেক্সট করে রাখলো,
আজ দুপুর তিন টায় ফ্রি থাকবে, দেখা করবো। আমি আছি, এবং থাকবো।

চারিদিকে আযান হচ্ছে, শাওন ঘুম থেকে উঠে গেল, আর ঘুম হচ্ছেনা। ফযরের নামাযের পর, হাঁটাহাঁটি করবে, মন খুব অস্থির হয়ে আছে, দেখা করার পর শান্তি লাগবে….

চলবে…
আন্নামা চৌধুরী
বি.দ্রঃ বেড়াতে গিয়েছিলাম, তাই দিতে দেরী হলো।
চলবে….

আন্নামা চৌধুরী।
১৬.০৯.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here