প্রথম প্রেম পর্ব ২৭+২৮

#প্রথম_প্রেম
২৭ তম পর্ব।

সকাল বেলা মায়ের হাতের ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে উঠেছেন শাওন, ঘড়িতে তখন আট্টার কিছু বেশি বাজে।

শাওন প্যান্ট পরে, টি শার্ট গায়ে দিচ্ছেন, জমিলা বেগম ছেলের রেডি হওয়া দেখছেন।

শাওন বললো কি দেখো আম্মা?
– কত বড় হয়ে গিয়েছিস!
– কি যে বলো আম্মা!
– এতো কম সময় নিয়ে আসার দরকার নাই বাবা, কত কষ্ট হয়! এতো বড় রাস্তা, আমার যে কি অশান্তি লাগে, চিন্তায় মাথা খারাপ হয়। মন টাও খুব খারাপ লাগছে, এতো সকালেই বের হয়ে যাইবা?
– আম্মা, আমার ঢাকা যেতে হবে, তারপর রাজশাহী। কাল সকাল দশটায় অফিস ধরতে হবে।
– দুইটা দিন থাক, শনিবারে যা।
– বস আগেই না করে দিয়েছেন।

জমিলা বেগম চোখের পানি, বার বার আঁচল দিয়ে মুছেই যাচ্ছেন।

শাওন বললো আম্মা, এমন করো কষ্ট পাও কেন? আমি তো আসবোই।
– আমার খুব খারাপ লাগতেছে বাপ, তুমি এমন কইরা আইসো না, আর। কিছু রানতে ও পারলাম না।
– আম্মা, আমি আগামী মাসে আবারও আসবো।

জমিলা খাতুন ছেলের বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন। তার ছেলে তার চেয়ে অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে। শাওন হাত দিয়ে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, আর বলছে আম্মা আমি সত্যি আসবো!

শাওনের জন্য সাগর রিকশা নিয়ে এসেছেন, শাওন রিকশা উঠেছে, সাথে সাগর। জমিলা খাতুন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, চোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে। শাওন বার বার রিকশা থেকে মাকে দেখছে।

সাগর রিকশায় উঠে বললো কি রে, তুই এতো কম ছুটি নিয়ে আসলি কেন?
– ছুটি পাওয়া যায়না ভাইয়া। মার কান্না দেখে খুব খারাপ লাগছে।
– আজ সারাদিন আম্মা কান্নাকাটি করবে কিচ্ছু খাবেওনা। ভাইজান আসলেও তাই করে। শাওন দোয়া কর, আমাদের একটা শুভ সংবাদ আসতে পারি!
– কি ভাইয়া?
– আমাদের পুকুরের দক্ষিন পাশে একটা কলেজ হবে, এখন আমাদের পুকুরের দক্ষিন পাশ পরে যায়, কলেজের ভবনের পিছনের দিক। এখন যদি কলেজ করে পুকুরের অংশ কিনতে হবে। সেটা বেশ ভালো দামে কিনবে।
– দেখো ভাইজান কি বলে?
– ভাইজান বলছে, বাড়ীঘর ঠিক কর, যদি জায়গা বিক্রি করতে পারিস।
– কত শতক হবে?
– এখন শতক পঞ্চাশ হাজার ও হবেনা। কলেজ চালু হলে, শতক এক থেকে দেড় লক্ষ হবে। জায়গা আছে পাঁচ শতক।
– ভালোই। দেখো কি হয়!
– হুম।

শাওন বাসে বসে দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে, শাওন কল দিল, উর্মিকে!
– হ্যালো, সুপ্রভাত।
– হুম, কি কর?
– বাসে। আমার ঘন্টা দুই লাগবে, তুমি ধানমন্ডি লেইক আসো।
-সত্যি?
– হুম। পারলে শাড়ী পরে আইসো, তোমাকে দেখবো।
-.ও মা! আজ আমার জামাইয়ের হলো কি? এতো রোমান্টিক!
– তোমার শাওন কতটা রোমান্টিক বিয়ের পরে বুঝবা! তুমি আসো।
– আচ্ছা! আসছি।

উর্মি একটা নীল সুতির শাড়ি পরলো, সাথে নীল টিপ। হাতে কাঁচের চুড়ি, এতো সুন্দর লাগছিল। রুনা খানম মেয়ের রুমে এসে বললেন কি রে? আজ কি? এতো সাজছিস?
– আম্মু, আজ আমাদের অন্য ডিপার্টমেন্ট এর নবীন বরণে দাওয়াত, আর আমি এখন ভার্সিটিতে পড়ি, এতো কৈফিয়ত ভালো লাগেনা।
– এতো বড় হয়ে গিয়েছিস নাকি?
– ইয়েস।

শাওন আর উর্মি পাশাপাশি বসে আছে, দুজনে অনেক গল্প করছে। কালকে রাতের প্রসঙ্গে কোন ভাবেই যাচ্ছেনা দুজন। এই প্রথম বার শাওন নিজেই উর্মির হাতে ধরে বসে আছে। শাওনের বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা এভাবে পাশে থাকলে আর কিছুই চাওয়ার নেই।

বিকাল চার টায় সময় বাস, শাওন সারাদিন উর্মির সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিল। যাওয়ার সময় শুধু শাওন আবার হাত ধরে বললো উর্মি, তুমি শুধু আমার থাকবে, শুধুই আমার। আর আমার কিছুই চাওয়ার নাই। উর্মি বলছে আমি অনেক আগে থেকেই শুধুই তোমার হয়ে গিয়েছি।

শাওনের এবার উর্মির কাছ থেকে বিদায় নিতে খুব কষ্ট হলো, যাওয়ার আগে উর্ম দুটি কাগজ নিল, এবং লিখলো। শাওন বললো এই গুলির দরকার ন্রি, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। উর্মি বললো না, দরকার আছে, তুমি খালি সাইন দিবা, আমি দুইবারই লিখবো।

উর্মি লিখছে,

আমি উর্মি, চিরদিন শাওনের থাকবো। পরিবারের সম্মতি নিয়েই বিয়ে করবো। কখনো পালিয়ে যাবো না।
আমি অলিখিত ভাবে শাওনের হয়ে গিয়েছি। পরিবারের মতামতের জন্য সুন্দর ভাবে পড়াশোনা করে, সবার মন জয় করে শাওনের বউ হবো। শাওন ছাড়া আমার জীবনে কেউ নাই, শাওন আমার জীবনের সব।

এই একই লিখা দুই কাহজে লিখে শাওন আর উর্মি দুজনে সাইন করলো। উর্মি শাওন কে বললো আমি এটা লিখেছি, কারণ যাতে সব সময় এটা তোমার আমার চোখের সামনে থাকে।।

শাওন বললো সামনে থাকবে সমস্যা নেই, সামনে না থাকলেও আমি তোনাকেই ভালবাসি।

প্রায় দুই মাস পরের কথা।

এরমধ্যে শাওনের বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, শাওনের পিডিবির চাকরি হয়নি। তবে, তাদের জায়গা বিক্রি করে প্রায় সাত লক্ষ টাকা পেয়েছে, তাদের চার রুম দিয়ে টিন শেড বাড়ী হচ্ছে। বাড়ীর কাজ শেষ হলেই সাগরের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু হবে।

শাওন উর্মি দুজনেই ঘুমানোর আগে তাদের
প্রিয় কাগজ বার বার পড়ে, উর্মির যে কি আনন্দ লাগে পড়তে! শাওন ও চিন্তা করছে, বিসিএস হলেই সে দাঁড়াতে পারবে উর্মির পরিবারের সামনে। দুজনে বিয়ের কত পরিকল্পনা করে প্রতিদিন।

এদিকে অনিক উর্মির পিছনে পরে আছে, উর্মি বার বারই বলছে, আমি শাওনের। তাছাড়া আমরা বিয়ে করবো। সুতরাং অন্য কারো হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আগামী কাল বন্ধু দিবস তাই অনিক শুধু একটা দাবী করেছে যেন উর্মি তার বন্ধু হয়। বন্ধু হতে কি সমস্যা।

উর্মি বেশ দুটানায় আছে, কি করবে বুঝতে পারছেনা। তাছাড়া শাওনের সাথে, এই ব্যাপারে কথা বলা ও যাবেনা। এই দিকে প্রতিদিনই ক্লাসে গিয়ে এই ছেলের মুখ দেখতে হয়, ইগ্নোর করতে করতে সে ক্লান্ত, এখন কি তাকে বন্ধু বানালে সে স্বাভাবিক আচরণ করবে? কি জানি, কাল কি বলবে অনিক কে ভেবে পাচ্ছেনা উর্মি!

চলবে….#প্রথম_প্রেম
২৮ তম পর্ব।

সকাল বেলা ক্লাসে গিয়ে খাতা বের করেছে উর্মি, কি যেন লিখছে। অনিক পিছন থেকে এসে বললো হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে বন্ধু। আমি বন্ধু বলেছি উর্মি নট বান্দবী।
– হুম।
– এখন তো বন্ধু হতে সমস্যা নেই?
– এক ক্লাসে পড়ি যখন, তখন তো বন্ধু। তাইনা?
– সবাই বন্ধু হয়না, ক্লাস মেইট হয়। বাই দ্যা ওয়ে, আমি একটা কার্ড এনেছি আর ছোট্ট গিফট, তুমি নিবে আশা করে?
– সরি অনিক। এগুলি আমি পছন্দ করিনা। আর আমি একটু শাওন কে কল দিব, বাইরে যাচ্ছি।
– আমি কিন্তু তোমার প্রেমিক হতে চাইনি এখন, স্রেফ বন্ধু। এখনো ইগ্নোর?
– আমি ইগ্নোর করিনি, ওকে তুমি কার্ড দিও, গিফট নিতে পারছিনা সরি।

উর্মি কথা শেষ করেই ফোন হাতে নিয়ে ক্লাসের বাইরে এসে শাওন কে কল দিল।
হ্যালো?
– জরুরি কিছু উর্মি?
– না, এমনি।
– আমি ফিল্ড ওয়ার্কে। পরে কল দেই?
– শুধু বলো, বিয়ে কবে করবে?

শাওন হাসছে,
– হাসো কেন?
– আমার উর্মিমালার কথায় প্রখর রোদে হেঁটেও, হাসি আসছে। একটু সময় দাও, বিয়ে আমি তোমাকেই করবো, পাগল। আচ্ছা রাখি, লাঞ্চ আওয়ারে ত্রিশ মিনিট কথা বলবো।
– মাথায় ছাতা দাও।
– বউ আছে মাথায়, ছাতা লাগবেনা।
– আচ্ছা।

উর্মি হেসে হেসে ফোন কেটে দিয়েছে। বউ শব্দ টা শুনলেই কেমন শিহরণ লাগে। ইশ কবে শাওনের বউ হবে উর্মি!

অনিক কার্ড নিয়ে এসে বললো, শুধুই কার্ড দিলাম।
– থ্যাংক ইউ।
– থ্যাংক ইউ তোমাকে, কার্ড নেওয়ার জন্য।
চলো আজ তোমাকে ট্রিট দেই।
– না, না। আমার স্কুল ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা আছে, আমি এক ক্লাস করে বেড়িয়ে যাবো।
– ওহ।

উর্মি এটা একদম মিথ্যা কথা বললো আসলে কোন আড্ডা না, শুধু মাত্র এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই বলা। এখন মিথ্যা বলার জন্য ক্লাস ফাঁকি দিতে হবে। উর্মি সাইয়ারাকে কল দিয়ে এক ঘন্টা পরে, বাইরে আস্তে বললো।

উর্মি সাইয়ারা পাশাপাশি বসে, সাইয়ারা বললো, তুই এই কার্ড নিয়ে ঠিক করিস নি! কারণ তুই অন্য একজিনের ফিউওন্সি।
– আমি কি প্রেম করছি নাকি?
– শাওন ভাই, অনিক কে পছন্দ করেনা। তুই আবার ওর কাছ থেকে কার্ড নিস।
– এই কার্ড আমি খুলিনি, তুই দেখ। আমার নেওয়ার ইচ্ছা নাই সত্যি।

সাইয়ারা কার্ড খুললো, শুধু লিখা।

বন্ধু হয়ে থাকবে প্লিজ।
অনিক।

সাইয়ারা উর্মিকে কার্ড দিয়ে বললো নেয়, তোর দামী কার্ড। চল, ক্ষিধা লাগছে, বাইরে যাই।
– হুম।

শাওনের আজ চিঠি এসেছে, বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি হয়েছে, জয়েনিং সেলারি বিয়াল্লিশ হাজার টাকা। শাওন চিঠি পেয়ে বার বার দেখছে! ফোন হাতে নিয়েই মাকে কল দিল,

মা, আমার চাকরি হইছে, ব্যাংকে চাকরি হইছে, বিয়াল্লিশ হাজার টাকা বেতন।
– আলহামদুলিল্লাহ বাবা। আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে চাইছেন। বাবা, আইজ আরেক খবর ও আছে?
– কি?
– তোর বড় বুবুর জামাই ও তারে একবারে নিতে আসছে, হের নাকি বিদেশে যাওয়ার সব ভিসা রেডি। বউ ছেলে-মেয়ে বাড়ীতে রেখে যাইবো।
– আল্লাহ, কি খুশি হইলাম মা! বুবু কতদিন পর শান্তি হবে।
– সাগরের জন্য মেয়ে দেখছি, তুমি আমারে আমার, উর্মি মায়েরে আইনা দাও। একসাথে দুই ভাইরে দিয়া দেই বিয়া।
– না, ভাইয়ার বিয়ে হউক, বাড়ীর কাজ ও শেষ হউক। দেখি বিসিএস এর কি হয়!
– বিসিএস লাগবেনা, বউ আনো। এই চাকরি পোস্টিং কোথায়?
-চট্টগ্রাম মা। ছোট আপুর বাসার কাছে অফিস।
– এটা ভালো সংবাদ।
– আচ্ছা মা এখন রাখি।
– বাড়ী আইবা কবে?
– এই চাকরির রিজাইন দেই, নতুন চাকরি জয়েন করে আসবো।
– আল্লাহ যদি আনেন। রাখি বাবা।
– আচ্ছা।

উর্মি কে কল দিয়েছে শাওন, উর্মি খবর শুনেই বলছে তুমি আজকে আব্বু কে কল দিবা, বিয়ের কথা বলবা।
– পাগল হয়ে গিয়েছ বিয়ের জন্য?
– আজ নাকি? সেই কবে?
– জয়েন করি, তারপর বলছি।

উর্মির কথা চলছেই, আর বলছে এই চাকরি রিজাইন দিবা, বস বেশি কিছু বললে রিজাইন আরও আগে, দিয়ে দিবা।
– তাই?
– হ্যা। তুমি নতুন বউয়ের সাথে আলাপ করবেনা, সামনে বিয়ে।
– হ্যা, তাইতো।

এক মাসের মধ্যে শিরিনের বাসার গেস্ট রুমে উঠে শাওন। যদিও শাওন মেসেই উঠতে চেয়েছিল, কিন্তু শিরিনের হাজবেন্ড জোর করেই শালাকে নিজের বাসায় তুলেছেন। ইদানীং তিনিও উর্মির সাথে শালার বউদের মতোই কথা বলেন, উর্মির এক কথা দুলাভাই আপনার শালাকে বলুন তো প্রুপোজাল পাঠাতে, আর কত দিন অপেক্ষা করবো।

কিন্তু, শাওন বিসিএস রিটেন এর রেজাল্টের অপেক্ষায়। শাওন পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে তোফায়েল সাহেবের সামনে দাঁড়াতে চায়। সে কোন ভাবেই চায়না, যেন তিনি না করেন। কারণ উর্মি তার বেঁচে থাকার শক্তি!

রাজিব ফোন দিয়েছে, রিটেনের রেজাল্ট দিয়েছে, শাওন সাইবার ক্যাফে তে যাচ্ছে রেজাল্ট জানিতে। প্রচন্ড জ্যামে বসে আছে, টেনশনে পুরো মাথা ঘেমে আছে, রেজাল্ট কি ভালো আসবে নাকি? কি হবে? চিন্তায় ভালো লাগছেনা, আর এদিকে রিকশা জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু জায়গা সামনে যাচ্ছেনা….

চলবে…

আন্নানা চৌধুরী।
২৮.০৯ ২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here