“প্রমত্ততা তুই পর্ব ৪

#প্রমত্ততা_তুই
#আফসানা_মিমি
|| ৪র্থ পর্ব ||

সময়টা বিকেল বেলা। আয়না, দর্পণ দুই ভাইবোন মিলে মহা আনন্দে আইসক্রিম খাচ্ছে আর রাস্তায় হেঁটে হেঁটে দুষ্টুমি করছে। আব্বাস নেতার ভাই মাসুমকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে দুই ভাই বোন হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। দূর থেকে এতক্ষণ জারিফ এদের ফলো করছিল। ছেলেটির সাথে থাকা আয়নাকে এখন পুরোপুরি বাচ্চা লাগছে মনের মতো হেলে দুলে চলাফেরা করছে সে। মনে হচ্ছে আয়নার মতো সুখী মানুষ আর কেউ নেই এখানে।
আপনি যদি প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান তাহলে সবকিছুই সুন্দর মনে হবে আয়নার বেলায়ও তাই।
জারিফ মনে মনে ভাবছে,

-আচ্ছা গুন্ডি মেয়েটা এত খোশি কেন আজ? কিছুক্ষণ আগেই না বোম্বাইমরিচের রুপ ধারণ করেছিল কিন্তু এখন! এখন দেখে মনে হচ্ছে তার চেয়ে হাসিখুশি মানুষ দুনিয়াতে আর একটাও নেই। আচ্ছা ছেলেটাকি তার বয়ফ্রেন্ড হবে? ওম না, দেখে তো মনে হচ্ছে ছেলেটা এই গুন্ডি মেয়ের ছোট হবে হয়তো ভাই বোন এরা। ভাই দোষ করে মার খেয়েছে তার বদলে বোন এসে এখন কেলানি দিয়েছে তাই হবে।
পরমুহূর্তেই জারিফ নিজেকে বকা শুরু করে,

– ছিহ্ জারিফ, তুই ঐ গুন্ডি মেয়েটাকে এত প্রাধান্য দিচ্ছিস কেন। আর এখন তো তুই মেয়েটার পিছু নিতে নিতে কোথায় চলে এসেছিস। ঐ মেয়ে যা ইচ্ছে করুক তোর কি?

জারিফ এসব আবল তাবল নিজেকে বকে রওনা হলো নিজ গন্তব্যে।

– আপাই চল শপিংয়ে যাবো।

হাতের আইসক্রিম খেতে খেতে দর্পণ আয়নাকে বলে।
দর্পণের কথা শুনে মাথায় এক বাড়ি দিয়ে আয়না বলে,
– আজ এতো মার খেয়েও তোর পেট ভরেনি যে আমার হাতে মার খেতে নিজেই এগিয়ে আসছিস?

– উফ আপাই, আমি একদম ফিট। ঐ বেটাকে তোর হাতের কেলানি খেতে দেখে সুস্থ হয়ে পড়েছি। আপাই চল না! কিছু জিনিস কেনার আছে।

আয়না ইদরের ছোট ভাইয়ের আবদার ফেলতে পারেনি রাজি হয়ে যায়। দুই ভাইবোন মিলে আজ সারা বিকেল সন্ধ্যা শপিং করবে তারপর ডিনার করে বাসায় যাবে। পথিমধ্যে ফারিয়াকেও ফোনে জানাতে ভুলেনি আয়না।

বড় শপিং মলের সামনে রিকশা দাঁড় করিয়ে নেমে যায় দুই ভাইবোন। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে প্রবেশ করে শপিং মলে।

– সাজিয়া পাজিয়া তোর জন্য ঘরেও ঢুকতে পারলাম না। কি এমন কিনবি যে ধরে বেঁধে আমাকে এখানে নিয়ে এলি? তুই জানিস না আমি এসব পছন্দ করিনা।

– উফ ভাইয়া তুমি সত্যিই আনরোমান্টিকের গোডাউন। এই সময়ে মানুষ দশ বিশটা প্রেম করে আর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে শপিং টপিং করে আর তুমি কি না নিজের বোনের সাথে এসেছো তাও আনইজি লাগছে এটা ঠিক না ভাই! রোমান্টিক হও বুঝলে! নয়তো বউ পাবে না। বাবা ভার বিবাহবার্ষিকীর কথা তুমি ভুলতে পারো কিন্তু আমি ভুলিনি।

সাজিয়া আর জারিফ একই শপিং মলে এসেছে কিছু কেনাকাটা করতে যেখানে আগে থেকেই আয়না দর্পণ উপস্থিত। সাজিয়ার কথায় জারিফ এবার রেগে সাজিয়ার মাথায় চাঁটি মেরে বলল,

– সারাদিন মুভি দেখতে দেখতে বেশি পাকা হয়ে গিয়েছিস তুই। মাকে আজই বলবো যেন তুই আর টিভি , মোবাইলের আশেপাশে না যেতে পারিস।

– উফ ভাইয়া, এখনকার জেনারেশনে ক্লাস থ্রির বাচ্চারাই সব প্রেম ভালোবাসা বুঝে সেখানে আমি তো ক্লাস নাইনে পড়ি।

– হয়েছে আমার ক্লাস নাইনে পড়ুয়া বুড়ি থাম এবার। কি কি কিনতে হবে দেখিয়ে দে।

দুজন মানব-মানবি নামাজরত অবস্থায় বসে আছে। মানবির পরনে পাঞ্জাবি আর মনবির পরনে হিজাব। আর তাঁদের সামনে স্টেন্টের উপর কোরআন শরীফ রাখা। দূর থেকে দেখে মনে হবে মানব- মানবি গুলো আসল কিন্তু প্রকৃতপক্ষেএরা কাঁচের তৈরি কৃত্রিম বস্তু মাত্র। গভীর মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ সাজিয়া শো-পিসটা দেখছিলো। বাবা-মার বিবাহবার্ষিকীতে এর চেয়ে সুন্দর উপহার আর একটাও ভালো মনে হচ্ছে না। সাজিয়া শো-পিসটাকে দেখতে যাবে ঠিক এমন সময় আরেকটা হাত এসে শো-পিসটাকে নিয়ে নিল। হাসিখুশি সাজিয়া হঠাৎই ভ্রূ কুঁচকে পাজিয়া হয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখে লম্বা চিকন একটা ছেলের হাতে শো-পিসখানা মুহূর্তেই ঝড়ের বেগে এসে ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

– এই যে লম্বু রোগী ভাইয়া আপনার হাতের ঐ শো-পিসটা আমার ঐটা আমাকে দিয়ে দিন।

– প্রথমেই বলে রাখি আমার নাম দর্পণ। আর আমি একদম ফিট কোনো রোগী না।

– ইয়েহ্ বললেই হলো রোগী না! আপনাকে দেখলেই মনে হবে আপনি হাসপাতাল পলাতক রোগী। আপনার নাম দর্পণ বা মিরর যাই হোক না কেনো তাতে আমার কি হুম। আমাকে আমার শো- পিস ফেরত দিন।

– এই শো- পিসে কারোর নাম লিখা নেই। যেহেতু আমি আগে হাতে নিয়েছি তাই এটা আমার।

– দেখুন এখন আমি খুব রেগে যাচ্ছি। ভালোয় ভালোয় শো-পিসটা ফেরত দিন নয়তো নয়তো,,,,

– নয়তো কি?
– আমি আমার ভাইয়া কে ডাকবো। ভাইয়া এসে তোমাকে আচ্ছা মতো কেলাবে।

সাজিয়ার এমন বাচ্চামি কথা শুনে দর্পণের অনেক মজা লাগছে। দর্পণ এবার হেসে বলে,

– এই যে চার ফুট দুই ইঞ্চ, আমারও আপু আছে। যাকে বলে গুন্ডি আপু। তোমার ঐ ভাইকে উল্টো করে লটকিয়ে ফেলে দিয়ে আসতে পারবে হা হা হা।

সাজিয়া আর দর্পণের ঝগড়ার মাঝেই জারিফ এসে হাজির হয়। জারিফ তার মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েছিল। হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে দেখে বিকেলের সেই ছেলেটা যাকে সে আয়নার সাথে দেখেছিল।

– এখানে কি হচ্ছে? সাজিয়া কে এই ছেলে?

– ভাইয়া দেখো না আমি প্রথমে এই শো-পিসটা বাবা-মার জন্য পছন্দ করেছি কিন্তু এই রোগী লম্বু ছেলেটা বলে এটা তার।
– আরে আমি আগে এই শো-পিসে হাত দিয়েছি এই পিচ্ছু মেয়ে যদি আগে হাতে নিতো তো নিতাম নাকি। আমি যেহেতু আগে হাতে নিয়েছি তাই এটা আমার। পিচ্ছু তুমি আরেকটা পছন্দ করো।

জারিফ এবার বিরক্ত হয়ে দুজনকেই ধমক দিলো,

– তোমরা দুজন চুপ করবে? সাজিয়া তুই অন্যকিছু পছন্দ করে নে। এই গিফ্ট যে নিতে হবে তেমন তো না।

সাজিয়া এবায কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বলল,

– ভাইয়া আমার এটা খুব পছন্দ হয়েছে।
– আচ্ছা দাঁড়া দেখি আরো আছে কি না।

দোকানদারের কাছে জিজ্ঞেস করার পর দোকানদার বলে দিলো যে তাঁদের ধোকানে প্রতিটা শো-পিস এক পিস করেই থাকে। কথাটি শুনে সাজিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। কোনো কথা না বলে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। সাজিয়া বের হতেই জারিফও বের হতে নিবে ঠিক তখন দর্পণ জারিফকে বলল,

– ভাইয়া আপনি শো-পিসটা নিয়ে যান। আমি অন্যকিছু কিনে নিবো। আমার মনে হচ্ছে এটা আপনাদের জন্য ঠিক হবে আসলে আমি আমার আপাইয়ের জন্য পছন্দ করেছিলাম। আজ আপাই আমাকে আঘাত যে করেছে তাকে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে তাই আপাইয়ের জন্য নিতে চেয়েছিলাম।আপনি নিয়ে যান।

– তোমার আইই তো সেই শেয়ানা।
-আমার আপাই অনেক ভালো শুধুমাত্র প্রিয়জনদের জন্য কিন্তু বাহিরের সবার জন্য গুন্ডি। আমার আপাই জীবন থেকে অনেককিছু শিক্ষা নিয়েছে তাই এমন। যাইহোক আপনার গিফ্ট। আর চার ফুট পাঁচ ইঞ্চকে আমার পক্ষ থেকে সরি বলে দিবেন।

– চার ফুট দুই ইঞ্চ কে?
– আপনার বোন।

কথাটি বলেই বাহিরে চলে যায় দর্পণ। দর্পণ বাহিরে বের হতেই আয়নাকে দেখতে পায় যার দুহাত ভরা শপিং ব্যাগ। প্রসস্থ হেসে দর্পণ আয়নার হাত ধরে শপিং মল থেকে বাহিরে বের হয়ে গেল। জারিফ দোকান থেকে দুজনকে একবার দেখে নিয়ে ছোট বোনকে খুশি করার জন্য আরো কিছু কিনে নিয়ে চলে গেল।

——-
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আগেরদিন। সকলে প্রস্তুতি নিচ্ছে নবীন বরন অনুষ্ঠানের। আয়না কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করেনি ইচ্ছে করেই। এতো রসকষ আয়নার পছন্দ না। হল রুমে সকলের রিহার্সাল দেখছে ঠিক এই সময় শিহাব এসে হাজির হয় হাতে এক কাগজ। কাউকে কিছু না বলে সোজা আয়নার সামনে এসে বলে
– এটা প্রিন্সিপাল স্যার তোমাকে দিতে বলল।

আয়না কাগজটা খুলে পড়া শুরু করে। পুরোটা পড়ার পর আয়নার মুখখানা বোম্বাইমরিচের মতো লাল হয়ে যায়। আয়নার চেহারা দেখে বলবে আসলেই জারিফের দেয়া নামটাই একদম পারফেক্ট
” বোম্বাইমরিচ ”

চলবে….

আমি খুবই অসুস্থ । দোয়া করবেন আমার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here