প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব -৩১+৩২

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৩১

পুরানো ক্ষ’তগুলো তাজা হয়ে উঠেছে অতসীর। চেয়েছিল নিজের অতীত আড়াল করে রাখবে কিন্তু সেটা হলো না। সকলের সামনে সেই চলে আসলো নিজের পরিচয়। অতসী নিজেকে কয়েকদিন সবকিছু থেকে সম্পূর্ণ দূরে রেখেছিল, আবারো আসতে আসতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে লাগল।

কলেজে ক্লাস করে বের হবে, তখনি শাহানা অতসীর পেছন ডেকে বলল,

– অতসী।

অতসী শাহানার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

– আবার কিসের জন্য ডাকছ, আমি জানি তুমিই ওই মহিলাটিকে আমার বিরুদ্ধে সবকিছু বলেছিল। আচ্ছা বলো তো, আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি যার জন্য তুমি সেই প্রথম থেকে আমার পেছনে পড়ে আছো। প্লিজ এইসব ঝামেলা আমার সাথে করতে এসো না, আমার ভালো লাগে না এইসব।

অতসী কথাগুলো বলে চলে যায়। শাহানা অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। এখনো কি শাহানা শুধরে যাবে নাকি আবারো নতুন করে কোনো ঝামেলা করবে।

আদৃতের মা আদৃত কে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছিল। ওনার মনে খুব ইচ্ছা ছিল অতসীকে নিজের বাড়ির বউ করার কিন্তু যখন সত্যিটা জানল, তখন তিনি দোটানায় পড়ে গেছে। কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।

অতসী বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দরজায় টোকা পড়ল। অতসী এগিয়ে দরজা খুলে দেখল বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।

– কাকাবাবু আপনি।
– উপরে এসো কথা আছে।

উনি চলে গেলেন। অতসী কিছু বুঝতে পারল না, তবুও ওনার কথা মতো উপরে গেল। গিয়ে চমকে উঠল।

– অতসী মা।

অতসীর মা, বাবা, রুদ্র আর একটা নতুন মুখ যাকে অতসী চেনে না তবে আন্দাজ ওটা ওর ভাবি‌। অতসী সকলের সামনে কি রিয়াকশন দেবে সেটা বুঝে উঠতে পারল না। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

– কাকাবাবু আপনি কিছু মনে না করলে আমি কি ওনাদের নিয়ে আমার ঘরে যেতে পারি।
– হ্যাঁ অবশ্যই।
– চলুন আপনারা।

অতসী ওনাদের নিয়ে চলে যেতেই বাড়িওয়ালার বউ বলল,

– ওনারা কে? আর ওনাদের সাথে অতসীর কি সম্পর্ক।
– অতসীর বাবা মা।
– কি?
– হুম।

বাড়িওয়ালার চোখে মুখে একরাশ বিস্ময়। অতসীর পরিবার ছিল সেটা ওনার অজানা ছিল।

অতসীর ঘরে প্রবেশ করে আকরাম খাঁন সহ সকলে চারিদিকে দেখতে লাগল। অতসীর মায়ের চোখের কোনে পানি জমা হয়ে উঠল। অতসী কে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই অতসী বলে উঠল,

– আপনাদের কি বলার আছে বলুন। আমি কোনো ঝামেলা চায় না।

আকরাম খাঁন শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,

– বাড়ি ফিরে চলো অতসী।

আকরাম খানের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল। বিদ্রুপ করে বলে উঠল,,
– কেন আমাকে দিয়ে আবার কি স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন আপনি।

আকরাম খাঁনের হৃদয়ে আঘাত করল কথাটা। করুন কন্ঠে বলে উঠলেন,

– মারে আমাকে মাফ করে দে। আর কোনো স্বার্থ নয়, তুই আমার মেয়ে সেই পরিচয়েই ফিরে যাবি। আর কেউ কোনো কিছু নিয়ে তোকে জোর করবে না, যেটা তোর মনে হবে সেটাই করবি।
– আমি এইখানেই ভালো আছি। আপনারা ফিরে যান।
– অতসী মা কেন জেদ করছিস আর কতদিন সবার থেকে দূরে থাকবি। (অতসীর মা)
– দূরে তো থাকতে চাইনি। কিন্তু আপনারা আমাকে দূরে যেতে বাধ্য করেছেন। হাসিখুশি দুষ্টুমিতে ভরা মেয়েটাকে গম্ভীর মানুষ হয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। যেদিন আপনাদের আমার পাশে প্রয়োজন ছিল সেইদিন আমি আপনাদের পাইনি আজকে কিসের জন্য এসেছেন আপনারা। ফিরে যান আপনারা।
– বোন প্লিজ ফিরে চল। কেউ ভালো নেয় আমরা,তুই প্লিজ ফিরে চল আমাদের সুখের সংসারটা আবার পরিপূর্ণ হয়ে যাক।
– তোমরা শুধু আমার কথাই ভাবছ আর দিদিভাইয়ের কথা একবারো ভাবছ না। সেও তো ৭টা বছর তোমাদের থেকে দূরে আছে কই তাকে তো ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছ না।

রুহির কথা শুনতেই আকরাম খাঁনের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।

– ওই মেয়ের নাম আমার সাথে উচ্চারণ করবে না। ওর কারনেই আমার জীবনে এত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিজে তো পালিয়ে গেল আর তার সাথে আমার বাড়ির সুখ শান্তি সব নিয়ে গেল।
– দিদিভাই কিছু করিনি সবটাই আপনার জেদের ফল। আপনি যদি না এত জেদ করতেন তাহলে কখনোই এইসবের কিছুই হত না। আপনার পরিবার কখনোই ভেঙে যেত না।
– এইসব কথা বাদ দাও। ফিরে চলো আমাদের সাথে।
– না। বাড়ি থেকে যেদিন চলে এসেছিলাম সেইদিনই আমি বলেছিলাম ম/রে গেলেও আপনার পরিচয় আমার লাগবে না। জীবনে যখন ২টো বছর একা একা থাকতে পেরেছি ভবিষ্যতেও থাকতে পারব।
– এত জেদ কেন তোমার।
– আপনারই তো‌ রক্ত।

অতসী বিদ্রুপের কথা শুনে আকরাম খান চুপ করে গেলেন। অতসীর মা বলল,

– মা’রে আর কত বাবা মেয়ে রাগ করে থাকবি। এইদিকে আমরা তো‌ শেষ হয়ে যাচ্ছি।
– আমি তো কাউকে কিছু বলিনি। আমার তো কারোর সম্পর্কে কিছু অভিযোগ নেয়, ফিরে যান আপনারা আমি ফিরব না।

বাধ্য হয়েই ওনারা চলে গেলেন। অতসী যে কতটা জেদি হয়ে উঠেছে সেটা ওনারা ভালো করেই বুঝে গেছেন। তাই ঝামেলা বাড়ালেন না। ওনারা চলে যেতেই অতসী বিছানায় শুয়ে পড়ল, চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। কারোর আশ্রয়স্থলে প্রান খুলে কাঁদবে সেটাও তো ওর নেয়।

বিকালে অতসী আরুকে পড়াতে গেল। কিন্তু চুপচাপ আনমনা হয়ে বসে আছে। আরু পড়ে যাচ্ছে কিন্তু ওর সেইদিকে খেয়াল নেয়। আদৃত অতসীর সাথে কথা বলবে বলে উশখুশ করে চলেছে, কিন্তু অতসী কে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে কিছু বলতে পারল না। অতসী পড়ানো শেষ করে বের হতে যাবে তখনি আদৃত বলল,

– আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি চলো।

অতসী একটু অবাক হলো আদৃতের কথা শুনে। তবুও মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল,

– ধন্যবাদ। আমি একাই চলে যেতে পারব।
– একটু দরকার ছিল তোমার সাথে, প্লিজ।

অতসী আর কিছু বলতে পারল না। আদৃত অতসীর সাথে নিজ থেকে অনেকদিন কথা বলেনি, এমনকি সামনাসামনিও হয়নি। তাই আর অতসী কিছু বলল না, যাবার জন্য রাজি হয়ে গেল।

আদৃত ওকে সামনে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে নিতে বলে‌ গাড়ি স্টার্ট দিলো। অতসী এতটাই আনমনা হয়ে ছিল যে খেয়াল করেনি আদৃত ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। আদৃত পৌঁছে এসে ওকে নামতে বলল। অতসী সামনে তাকিয়ে এটা কোথায় সেটা বুঝতে পারল না। অতসী কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আদৃত বলল,

– বিশ্বাস করতে পারো আমাকে।

অতসী আর কিছূ বলল না। চুপচাপ নেমে দাঁড়াল। আদৃত ওকে নিয়ে একটা ব্রিজে নিয়ে আসলো।

– এইখানে নিয়ে আসলেন কেন?
– শান্ত পরিবেশ, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করো একটু।

আদৃতের কথা শুনে অতসী চোখ বন্ধ করে কয়েকটা বড়ো‌ বড়ো নিঃশ্বাস নিল। শীতল হাওয়া ওর শরীর স্পর্শ করতেই অতসী কেঁপে উঠল। চোখ খুলে সামনে শান্ত পরিবেশ, নদীর পানি, দূরে আলো দেখে নিমেষেই অতসীর মনটা ভালো হয়ে গেল। সামনের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল,

– আপনি এইখানে আমাকে আনলেন কেন?
– তোমার মনখারাপ ঠিক করতে।

অতসী কথাটা শুনে আদৃতের দিকে তাকাল। আদৃত সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, ওইদিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে‌ বলে উঠল,

– হুট করে আবারো তুমি ডাকছি বলে অবাক হচ্ছো তাই না।

অতসী মুখে কিছু না‌ বললেও কথাটা সত্যি। আদৃত যে হঠাৎ করে এইভাবে এইখানে নিয়ে আসবে, তুমি বলবে সেটা ভাবতে পারেনি। আর কেন করছে তার কারনটাও ওর অজানা।

– মিতু আমাকে সব বলেছে।
– কি।
– এই যে তুমি কার মেয়ে। কিন্তু অতসী বাড়ি ছেড়ে এইভাবে জীবন কাটানোর কারন কি?

এতগুলো দিন নিজের মধ্যে কষ্টগুলো চেপে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অতসী। আজকে আদৃতের প্রশ্নের উত্তর দিতে মন চাইছে ওর। তাই আর চুপ করে না থেকে বলে উঠল,

– আমার বাবার জেদ।
– মানে?

অতসী আদৃত কে বলল। সবটা শুনে আদৃত স্বব্ধ হয়ে গেল।

– সরি অতসী।
– আপনি কেন সরি বলছেন!
– কারন কোথাও না কোথাও তোমার এই জীবনটার জন্য আমি কিছুটা হলেও দায়ী।
– মানে?
– আমি রুহির হাসবেন্ড।
– কিসব বলছেন আপনি।রুহি মানে আমার দিদিভাই!
– হ্যাঁ।

অতসীর মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। পড়ে যেতে গেলে আদৃত ধরে নেয় ওকে।
#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_৩২
#তানজিলা_খাতুন_তানু

এতগুলো ধাক্কা একসাথে সহ্য করতে টাল সামলাতে হচ্ছে অতসী কে। সকাল থেকে একটার পর একটা ঘটনা সহ্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর আদৃতের কথা শুনে মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়েছে।রুহি যদি আদৃতের স্ত্রী হয় তারমানে ওর দিদিভাইয়ের আর এই পৃথিবীতে নেই। কথাটা মাথাতে আসতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অতসী।

– এই অতসী কাঁদছ কেন?
– দিদিভাই..

অতসী আর পুরোটা বলতে পারল না, তার আগেই কান্নায় ভেংগে পড়ল। আদৃত অতসীর কথার মানে বুঝতে পেরে ভাঙা গলাতে বলল,

– আমরা সুখেই ছিলাম। আমাদের সুখটা আরো দ্বিগুন করতে আরু রুহির গর্ভে আসে আর আরুকে জন্ম দিতে গিয়েই রুহি আমাদের ছেড়ে চলে যায়।

অতসীর কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেল। আদৃত অতসীকে কিছু বলল না। মেয়েটা না হয় আজ কেঁদেই নিজের কষ্টগুলোকে হালকা করুক।

অনেকক্ষন পর,

অতসী নিজেকে শান্ত করল। আদৃত অতসী কে থামতে দেখে বলল,

– ঠিক আছো তুমি।
– হুমম। আমি বাড়ি ফিরব।
– আচ্ছা চলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি।

আদৃত অতসী কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসলো। অতসী নিজের ঘরে ঢুকে কাঁদতে শুরু করল, এতদিন অনেক সহ্য করেছে কিন্তু আজকে সবকিছুর বাঁধ ভেঙে গেছে, রুহিকে হারিয়ে ফেলার আঘাতটা সহ্য করতে পারছে না। অতসী কেঁদে উঠছে বারেবারে, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেইদিকে ওর খেয়াল নেয়।

পরেরদিন অতসী নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করেও পারছে না। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখটা পুরো ফুলে আছে। বিট্টু অতসী কে দেখে বলল,

– কি হয়েছে দিদিভাই তোমার।
– আরে কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।
– কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমাও নি কিংবা কান্নাকাটি করেছ।
– কিছু না।‌ সর আমাকে কলেজ যেতে হবে।

অতসী ব্যস্ত হয়ে কলেজে যাবার জন্য রেডি হতে লাগল। বিট্টু কিছুক্ষন অতসীর দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেল। বিট্টু বেড়িয়ে যাবার পরেই অতসী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আজকে কতদিন পর নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চোখগুলো কিরকম একটা অদ্ভুত লাগছে লাল হয়ে আছে, চোখগুলো ঢুকে আছে। সত্যিই কি ওকে অদ্ভুত লাগছে, দেখে মনে হচ্ছে কান্না করেছে? কে জানে।

অতসী নিজেকে সামলে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মাথাতে অনেককিছুই ঘোরাঘুরি করে চলেছে।

অতসী কলেজে গিয়ে ক্লাস করার পর রুমেই বসে ছিল। শাহানা দূর থেকে লক্ষ্য করছিল অতসীকে, ইচ্ছা করেই অতসীকে তাঁতিয়ে দিতে লাগল।

– ওই দ্যাখ, মনে হয় সত্যি ব্রেকাপ হয়ে গেছে। কেঁদে কাটে চোখ লাল হয়ে আছে।

কথাটা বলেই বন্ধুরা সবাই মিলে হাসতে শুরু করে দিলো। অতসী চুপচাপ নিজের মতো ব্যস্ত ছিল, তারপরেও শাহানারা ক্রমাগত নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও অতসীকে নিয়ে মজা করতে থাকে।

– কি রে অতসী, মুখে কি তালা দিয়ে রাখলি নাকি।

অতসী শাহানার কথাতে পাত্তা না দিয়ে কাউকে একজনকে কল করে বলল,

– হ্যালো‌
– হ্যাঁ, কে বলছেন?
– আঙ্কেল আমি শাহানার ক্লাসমেট।
– ওহ।‌ কিছু কি হয়েছে?
– আঙ্কেল আমি না আপনাকে একটা ছোট্ট ভিডিও পাঠিয়েছি একটু কষ্ট করে ওটা দেখবেন প্লিজ।
– ওকে।

শাহানার বাবা ভিডিওটা দেখে রেগে গেলেন। অতসী ফোনটা লাউডস্পিকারে দিতেই শাহানারা নড়েচড়ে বসলো।

– এই তুমি আমাকে কিসব ভিডিও পাঠিয়েছ।
– কেন আঙ্কেল আপনার মেয়ের কাজকর্মের প্রমান পাঠিয়েছি, ভালো না।
– তুমি কে বলছো, তোমার সাহস কিভাবে হয়।
– আরে আঙ্কেল রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনার মেয়ে কলেজে পড়াশোনার নাম করে কি করে বেড়াচ্ছে সেটা তো আপনার জানা দরকার।
– আমার মেয়ে আমি বুঝে নেব, তুমি বাইরের মেয়ে হয়ে এইসবে মাথা গলাবেন না।
– এই আপনাদের মতো গার্জেনদের জন্যই বর্তমানে স্টুডেন্টদের এই অবস্থা হয়েছে। কলেজটা পড়াশোনা করার জায়গা আড্ডা দেবার কিংবা কারোর পেছনে পড়ে থাকার জায়গা নয়। আর আমি কে?

কথাটা বলেই বাঁকা হাসল অতসী। তারপরে শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল,

– আমি কে সেটা নয় একদিন সামনাসামনি দেখা হলেই বলব। আর আঙ্কেল আপনার মেয়েকে সাবধান করে দিন, নাহলে বড্ড পস্তাতে হবে।

কথাটা বলে অতসী ফোনটা কেটে দিলো। ফোনটা কেটে দিতেই শাহানা অতসীর দিকে তেড়ে এসে বলল,

– এই তোর সাহস কিভাবে হলো আমার পাপাকে কল করে এত কথা শোনানোর।
– আমার সাহস নিয়ে কোনো কথা হবে না শাহানা। আর এখনো অনেক ধামাকা বাকি আছে, ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

অতসী শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। শাহানা রাগে ফুঁসতে লাগল।

২দিন পর,

অতসী আর আদৃত আবারো আগের জায়গাতে মুখোমুখি হয়েছে তবে এইখানে আসার কারনটা আদৃতের অজানা। অতসী হুট করেই ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।

– কি হলো চুপ করে থাকবে।
– হুমম।
– কি বলবে বলো।

অতসী তবুও চুপ করে থাকল। আদৃত সামনের সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

– আমাকে আর রুহিকে না হয় তোমার বাবা ফিরিয়ে নিতে চাইনি। কিন্তু তুমি কেন ওই বাড়িতে ফিরে যাওনি?

অতসী আদৃতের দিকে একপলক তাকিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,

– ওই মানুষটাকে নিজের বাবা বলতেও আমার বিবেকে বাধে। মানুষটি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। নিজের রাগের বশে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। আমি জীবনে ৭টা বছরে কম যুদ্ধ করিনি। তবুও যতদিন নানুভাই বেঁ/চে ছিলেন ততদিন আমাদের কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু নানুবাড়ি চলে যাবার পর আমাদের জীবনে অনেককিছুই ঘটে যায়। সবকিছু হারিয়ে আজকে আমি একা।

অতসী ভাঙা গলাতে কথাগুলো বলল।

– অতসী। তবুও তোমার ফিরে যাওয়া উচিত ছিল।
– ফিরে যাবো? কেন ফিরে যাবো। যে মানুষটার জন্য আমার ইচ্ছাগুলো, স্বপ্নগুলো নিমিষে ভেঙ্গে গিয়েছিল সেইগুলো কি আমি কখনোই ফিরে পাবো। আমার জীবন থেকে সুখের ৭টা বছর আমি কি কখনো ফিরে পাবো। বলুন।

আদৃত কিছু বলল না। অতসী আবারো বলতে শুরু করল,

– জানেন আমার খুব ইচ্ছা ছিল, ডাক্তার হবো। নানুভাই বলেছিল তিনি আমাকে পড়াবেন, কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চলে যাওয়াতে আমার জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গেল। মায়ের দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরে গেলাম, কিন্তু সেইখানে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বাবা আমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। সেইদিনই কাউকে কিছু না বলে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। শুরু হলো আমার জীবনের নতুন অধ্যায়। সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে শুরু করলাম।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হয়তো রাস্তায় নরপশুদের সাথে শে’ষ হয়ে যেতাম তখনি আমার জীবনে একজন মানুষ আসে..

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here