প্রহেলিকা পর্ব ২১+২২

#প্রহেলিকা
#পর্ব_২১
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

সেই ঘটনার দুইদিন পর খবর আসে রাফিদ হসপিটালে। রাফিদের বাবা মা পুলিশে কেস করলেও পুলিশ কোন ক্লু খুঁজে পায় না। রাফিদের অবস্থা খারাপ। শরীরে রক্তের পরিমাণ নেই বললেই চলে। তবুও ডাক্তাররা চেষ্টা করছে। এই খবর শোনার পর অনেক কেঁদেছিল জেবা। ইনশিতাও বাদ যায়নি। তবে লুকিয়ে, জেহেরের সামনে সে মন খারাপ করে রাখার সুযোগ পায়নি। একটু মন খারাপ করলেই জেহের গাল চেপে ধরে ধমকায়। সেই ভয়ে সর্বদা হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করেছে ইনশিতা।

এই দুইদিনে জেহের যেন আরো বেশি গম্ভীর হয়ে গেছে। আগের হাসিটুকুও মিলিয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে রুমের দুই একটা জিনিস আছড়ে ফেলে। তা দেখে ইনশিতা ভয় পেলে জেহের নিজেই সরি বলে নিজেই রুম ক্লিন করে। কোনো মেইডকে রুমে ঢুকতে দেয় না সে। ইনশিতাকেও নজরে নজরে রাখছে। বাথরুমে গেলে বেশিক্ষণ থাকলে জেহের দরজা ধাক্কানো শুরু করে। মনে হয় যেন, তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হারাতে চলেছে।

ইনশিতাকে বারান্দায়ও যেতে দেয় না তেমন একটা। রাতের বেলায় নিজের সাথেই ইনশিতাকে নিয়ে যায়, তবে একা যেতে দেয় না। জেহের যখন অফিসে থাকে সেই মুহুর্তটা ইনশিতা আলিশান রুমটাতে এক প্রকার বন্দী হয়ে থাকে। বারান্দার দরজা আটকে রাখার কারণে ইনশিতা ভেতর থেকেই উদাস নয়নে বাহিরে তাকিয়ে থাকে, অথবা বই পড়ে কাটায়। নয়নিকা বা মা বাবা ফোন দিলে লাউডস্পিকারে কথা বলতে আদেশ দেয় জেহের। এটা করো না, সেটা করো না, ওদিক যেয়ো না, এদিক যেয়ো না, নিজের ইচ্ছেটাই চাপিয়ে দেয় ইনশিতার উপর। বিয়ের এক সপ্তাহ ও ভালো করে হয় নি, এর মধ্যেই জেহেরের এত নিয়ম কানুন; আর বাকি দিন তো পড়েই আছে।

ইনশিতার যেন দমটাই বন্ধ হয়ে যায় এসব কারণে। প্রথম কিছু সময়ের জন্য ভালো লাগলেও পরে যেন গলায় ফাঁসের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাপারটা। একদিন মানা যায়, দুদিন মানা যায়, কিন্তু আর কত? নিজেকে জেলে থাকা বন্দীদের মতো মনে হয়। ইচ্ছে হয় একটু খোলা বাতাসে প্রাণ খুলে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে। কিন্তু জেহের কিছুতেই ইনশিতাকে উড়তে দিতে চায় না। খাঁচায় বন্দী পাখির মতো সবসময় নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

এই তো, একদিন আগে নয়নিকা ফোন দিয়েছিল ইনশিতাকে। জেহের তখন অফিসের ফাইল দেখছিল। ইনশিতার ফোন আসায় কাজ রেখে ইনশিতার সামনে বসে ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিতে বলেছিল। ইনশিতা চায়নি লাউডস্পিকারে কথা বলতে, কারণ নয়নিকা এমন সব কথা বলবে যা ইনশিতার কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও জেহের শুনে হয়ত রেগে যেতে পারে।

আর হলোও তাই। নয়নিকা বলেছিল, সে একটা ছেলের উপর ক্রাশ খেয়েছে, ছেলেটার সাথে নয়নিকার সেটিং করিয়ে দেওয়ার জন্য ইনশিতাকে ছেলেটার সাথে কথা বলতে। আগে ইনশিতা নয়নিকার এমন ব্যাপারে একটু আধটু হেল্প করত, তবে এখন পরিস্থিতি আলাদা। জেহের তা শুনে তখনই মোবাইলটা জোরে দেয়ালের সাথে আছাড় মেরে ভেঙেছে। আর ইনশিতাকে শাসিয়েছে নয়নিকার সাথে কথা বললে নয়নিকার শেষ দিন দেখতে হবে তাকে। পরবর্তীতে যদিও সেদিন আরেকটা মোবাইল দিয়েছিল ইনশিতাকে, তবে নজর সরেনি কথা বলার সময়।

পরদিন সকালে ইনশিতা ডিসিশন নেয় যে সে আজ থেকে কলেজ যাবে। বই খাতা বিয়ের সময়ই নিয়ে এসেছিল। জেহের তখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে মাত্র। ইনশিতা জেহেরের সামনে গিয়ে বলল,

-“একটা জরুরী কথা ছিল।”

জেহের গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-“বলো।”

-“আজ থেকে আমি কলেজে যাব ভেবেছি।”

তা শুনে জেহের শুধু ফিচেল হাসলো। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ইনশিতাকে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেল। ইনশিতা জেহেরের কাছে এসে ফের বলল,

-“কী হলো? আপনি কি শুনেছেন আমার কথা?”

জেহের উত্তর দিলো না। ইনশিতা জেহেরের মৌনতাকে সম্মতি ভেবে নিলো। ব্যাগ গুছাতে লাগল। তারপর জামা কাপড় নিয়ে গোসলে ঢুকে গেল। গোসল সেরে বের হতেই ইনশিতা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। ব্যাগের সব বই বের করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। কয়েকটা পাতা ছিঁড়েও গিয়েছে। আর ড্রেসিং টেবিলের সামনে অফিসের ড্রেস পরিহিত জেহের আঙুল দিয়ে চুল ঠিক করছে। ইনশিতা অবাক হয়ে বলে,

-“বইগুলোর এমন অবস্থা কেন? বই ব্যাগ থেকে বের করেছে কে?”

বলে ইনশিতা নিজেই তাড়াতাড়ি বই গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকাতে লাগল। ব্যাগে বই ঢুকাতে নিলে জেহের এসে ইনশিতার হাত ধরে ফেলে। ইনশিতা হতবাক হয়ে তাকায় জেহেরের দিকে। জেহের ইনশিতার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ইনশিতা রাগী গলায় বলে,

-“কী করছেনটা কী আপনি? ব্যাগ ফেললেন কেন?”

-“বুঝতে পারোনি?”

ইনশিতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যার মানে সে বুঝতে পারেনি। জেহের ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতে যেতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,

-“তোমার পড়াশোনা করতে হবে না। তাই এসব বই খাতারও প্রয়োজন নেই।”

ইনশিতা যেন আকাশ থেকে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। কানে জেহেরের কথাটা ঝাঁ ঝাঁ করে বাজতে থাকে। বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে,

-“মানে? আপনি পাগল হয়ে গেলেন না কি? আপনি তো বলেছিলেন বিয়ের পড় যত ইচ্ছা পড়াশোনা করা যাবে। আর আমাকে কথাও দিয়েছিলেন। তাহলে এখন উল্টো পথে হাঁটছেন কেন?”

ইনশিতার কথা শুনে জেহের এক পলক তাকাল। শান্ত দৃষ্টি যেন ঝড়ের পূর্বাভাস। তবে ইনশিতা থামল না। রাগে শরীর কাঁপছে তার। পড়াশোনায় সে মোটামুটি ধরনের ছাত্রী হলেও পড়াশোনা ছাড়তে নারাজ। একমাত্র পড়াশোনা করার মাধ্যমে সে নিজের একটা পরিচয় বানাতে পারবে। যাতে সবাই জেহেরের স্ত্রী হিসেবে না চিনে নিজ পরিচয়ে তাকে চিনে। ইনশিতার চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। তবে তা জেহেরের রাগের কাছে নস্যি। জেহের ডিভানে গিয়ে আরাম করে শুয়ে মোবাইল দেখতে লাগল।

তাতে ইনশিতার রাগ যেন আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। আকস্মাৎ সে জেহেরের মোবাইলটা খুব জোড়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে জেহেরের কলার ধরল। তবে ডিভান থেকে জেহেরের কলার ধরে টেনে উঠাতে পারল না। কী করেই বা পরবে? কখনো কী বিড়ালের শক্তি সিংহের শক্তির সাথে পেরে উঠে? উল্টো ইনশিতা জেহেরকে ওঠাতে না পেরে জেহেরের বুকের উপর উঠে বসে কলার চেপে ধরে। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে চিৎকার করে বলে,

-“উত্তর দিচ্ছেন না কেন? আপনি তো নিজেই আমায় কথা দিয়েছিলেন। তাহলে সেই কথার এখন কী হলো? নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েও পড়াশোনা ছাড়ার কথা ভাবতে পারিনি, সেখানে এখন এত সুযোগ পেয়ে কেন ছাড়বো আমি? হু?”

জেহের শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোজের দিকে। রাগলে রোজকে আরো বেশি কিউট দেখায়। চেহারাটা ফুলে উঠে আরও কিউট লাগে। চোখ দুটি বড় বড় করে তাকালে জেহেরের তখন ইচ্ছে করে, বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আরেকবার ভালোবাসার সাগরে ডুব দিতে। আর ঠোঁট দুটো! ইশ! এমনভাবে কাপেঁ না, যে জেহেরের ইচ্ছে করে আমের মতো খেয়ে ফেলতে। শান্ত কন্ঠেই বলে,

-“তখন টাকা পয়সার জন্যই তো পড়াশোনা করেছিলে, আর এখন যখন চারপাশে কোটি কোটি টাকা তখন পড়াশোনা করে তোমার লাভ কী? যত ইচ্ছা খরচ করো, আছে তো অনেক। কোনো দরকার নেই এই পড়াশোনার।”

ইনশিতা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জেহেরের কলার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। সে এতদিন টাকার জন্য পড়াশোনা করেছে? মানে জেহের তাকে ইনডাইরেক্টলি লোভী বলছে? হ্যাঁ, মানছে সে বাবা মায়ের অবস্থা স্বচ্ছল করার জন্য একদিক দিয়ে পড়াশোনা চালাচ্ছে। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য তো নিজের একটা পরিচয় বানানো। সেখানে জেহের তাকে টাকার পাহাড়ে এখন ডুবে থাকতে বলছে? ইনশিতা অস্ফুট স্বরে বলল,

-“আমি নিজের আলাদা পরিচয় বানাতে চাই জেহের। শুধুমাত্র ভালো চাকরি করে টাকা পাওয়ার লোভেই কিন্তু আমি পড়াশোনা করিনি।”

জেহের উঠে বসল। সে জানে যে রোজ টাকার লোভে পড়াশোনা করেনি। নিজের পরিচয়ের জন্যই করেছে। কিন্তু জেহের তা চায় না। রোজকে সকলে জানবে, চিনবে, এটা সে কিছুতেই চায় না। আর রোজ চাকরি করলে সবসময় তাকে জেহেরের থেকে দুরে থাকতে হবে সেটা তো আরো আগেই চায় না জেহের। আর সেই কারণে রোজকে পড়াশোনা করতে দেবে না সে। সকলের সাথে মিশবে, কথা বলবে, হাঁটবে, চলবে— এসব সহ্য করতে পারবে না জেহের। তখন রাগের মাথায় কি না কি করে বসে ঠিক থাকবে না।

জেহের ইনশিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে নরম স্বরে বলে,

-“আলাদা পরিচয় বানানোর কী দরকার রোজ? আমার পরিচয়েই তুমি পরিচিত হবে। তোমাকে আলাদা করে কেউ জানুক আমি তা চাই না।”

ইনশিতা এবার রণচণ্ডী হয়ে গেল। রাগে সে দিশেহারা হয়ে বলতে লাগল,

-“কেন রে? আমাকে পড়াশোনা করালে কি তোর জাত যাবে? না কি তোর সম্পদের ক্ষতি হবে?”

আর এটাই বোধহয় ইনশিতার কাল হয়ে দাঁড়াল। জেহেরকে কেউ তুই সম্বোধন করে বলুক তা একদম পছন্দ না তার। হয় আপনি নয় তুমি করেই বলে সবাই। কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে তাকে ছোট করে কথা বলাটা সে মেনে নিতে পারল না। ইনশিতাকে হেঁচকা টানে ডিভানে ফেলে দিল। ক্রুদ্ধ হয়ে ইনশিতার গলা চেপে বলতে লাগল,

-”বেশি বার বেড়ে গেছ, না? আমাকে তুই করে বলার সাহস কোথায় পেলে তুমি? ছাড় দিয়েছি বলে কী নিজের অবস্থান ভুলে গেলে না কি? আমাকে তুই করে বলা তাই না? আজকে তোমায়..”

বলে জেহের আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগল ইনশিতাকে শায়েস্তা করার। তার মেজাজ বিগড়ে গেছে। এদিকে ইনশিতার যেন জান যায় যায় অবস্থা। জিভ বেরিয়ে গেছে। চোখ উল্টে গেছে। জেহেরের দুই হাতের লোহার শক্তিতে ইনশিতা দুনিয়া ভুলতে শুরু করেছে। তখনি জেহের ইনশিতাকে ছেড়ে ওয়ারড্রোবের সামনে চলে গেল। ইনশিতা এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচল। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের শক্তি ফিরিয়ে আনতে চাইল। তার আগেই জেহের আবার তাকে টান মেরে উঠিয়ে খাটে ফেলে দিল। ইনশিতা উল্টে পড়ল খাটে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জেহের ইনশিতার একহাত বেঁধে দিলো খাটের কর্ণারের সাথে, দড়ি দিয়ে। ইনশিতা কিছুই করতে কিংবা বলতে পারল না। আগে সে নিজের জান তো ফিরে পাক। গলায় এখনো অসহ্য যন্ত্রণা করছে। মনে হয় জেহেরের আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে।

জেহের আবার কিছু একটা ভেবে ইনশিতার হাতের বাঁধন খুলে দিলো। তারপর আলমারির সবচেয়ে নিচে কিছু খুঁজে ইনশিতার কাছে আসল। খাটের সাথে একহাতে হ্যান্ডক্যাফ পরিয়ে দিলো। তারপর নিজে নিজেই স্বগতোক্তি করল,

-“তোমার জন্য হ্যান্ডক্যাফ আনাটা শেষ পর্যন্ত স্বার্থক হলো। ভেবেছিলাম লাগবে না, কিন্তু তুমি যেই লেভেলের বদমাশ, তোমাকে তো বেঁধে রাখতেই হয়। আমার সাথে জোর গলায় কথা বলার শাস্তি এটা। আজ পুরোদিন তুমি এভাবেই থাকবে।”

জেহের বাহির থেকে আটকে চলে গেল অফিসে। ইনশিতা উঠে বসতে পারল না। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়েই শুয়ে রইল। না চাইতেও চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে পড়ালেখা করতে চায়। জেহেরের পরিচয়ে না, নিজ পরিচয় বানাতে চায়। আসন্ন বিপদের আশংকায় তার মনটা কু ডেকে উঠল।

.#প্রহেলিকা
#পর্ব_২২
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

দুপুরে বেশ তাড়াতাড়ি করেই জেহের বাড়ি ফিরল। রুমে ঢুকে ইনশিতাকে সেই আগের মতোই পেল। তবে ঘুমন্ত অবস্থায়। সকাল থেকে দুপুর অবধি কিছুই খাওয়া হয়নি ইনশিতার। আর সেটা এতক্ষণে মনে পড়েছে জেহেরের, তাই তো তড়িঘড়ি করে ছুটে এলো। ফ্রেশ না হয়েই খাবার হাতে রুমে এসে হ্যান্ডক্যাফ খুলে দিলো। ইনশিতার গালে হাত দিয়ে আলতো স্বরে ডাকতে লাগল,

-“রোজ, উঠে পড়ো। রোজ।”

ইনশিতা পিটপিট করে চোখ মেলে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে সে। জেহের ইনশিতাকে ফ্রেশ হতে বলে। ফ্রেশ হলে ইনশিতাকে নিয়ে খেতে বসে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে খাওয়ার সময় ইনশিতা টু শব্দটিও করেনি। খাওয়া শেষ হলেও ইনশিতা সোফায় বসে থাকে। এছাড়া যে আর কিছুই করার নেই। বারান্দার দরজা লক, বাহিরে যেতে দেয় না, তাহলে সে কি করবে? বসে থাকা ছাড়া তো আর উপায় নেই। আর এটাই চায় জেহের। সবসময় তার চোখের সামনে বসে থাকা।

প্রায় একঘন্টা ইনশিতা বসেছিল সোফায়। জেহের খেয়াল করছিল রোজকে। অনেকটাই মনমরা হয়ে আছে রোজ। নিজের কাজ ফেলে ইনশিতাকে নিয়ে বের হয়। প্রায় তিনদিন পর ইনশিতা রুমের বাহিরে পা ফেলে। অচেনা অচেনা অনুভূতি হচ্ছে তার। জেহের ইনশিতার হাত শক্ত করে চেপে হাঁটতে লাগল। ড্রয়িংরুমে বসেছিল জিহাদ আর জেবা। ইনশিতাকে হঠাৎ দেখে জিহাদের মনটা হু হু করে কেঁদে উঠল। দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়তে শুরু করেছে। যে কেউ দেখলে বলবে, মেয়েটার মন ভালো নেই।

জিহাদকে এক ধ্যানে রোজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জেহের রেগে গিয়ে টেবিলের উপর রাখা পানি ছুঁড়ে দেয় জিহাদের মুখে। আচমকা মুখে ঠান্ডা পানি লাগায় হকচকিয়ে যায় জিহাদ। মুখের পানিটুকু হাত দিয়ে মুছে দেখে জেহের অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। জেহেরের রাগী চোখের ভাষা বুঝতে সময় লাগেনি জিহাদের। মাথা নিচু করে ফেলে সে। জেহের বাঁকা হেসে ইনশিতাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।

ইনশিতাকে নিয়ে আজ একটা নির্জন নদীর পাড়ে যায় জেহের। এটা সেটা বলে ইনশিতার সাথে কথা জমানোর চেষ্টা করে চলেছে। তবে ইনশিতা আগের মতোই চুপচাপ আছে। কোনো কথা বলছে না, এমনকি জেহেরের দিকে একবার চোখ তুলেও তাকায়নি সে।

.

.

রুমের জিনিস পত্র ভেঙে চুরমাচুর। ইনশিতা খাটের এক কোণায় কান চেপে ধরে বসে আছে। জেহেরের শার্টের বোতাম এলোমেলো করে খোলা। চুল অগোছালো। রেগে গিয়ে আরও জিনিস পত্র ভাঙতে শুরু করে জেহের। ইনশিতাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে শক্ত করে হাত চেপে ধরে জেহের। তর্জনী দিয়ে চিবুক তুলে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে,

-“কথা বলো আমার সাথে।”

ইনশিতা জেহেরের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আজ পুরোটা দিন সে জেহেরের সাথে কথা বলেনি। নদীর পাড়ে গিয়েও জেহের কথা বলার চেষ্টা করেছিল। ইনশিতা মুখে কুলুপ এঁটে ছিল ততক্ষণ। আজ যেন সে পণ করে নিয়েছে জেহেরের সাথে কথা বলবে না। আর জেহের ইনশিতার সাথে কথা না বলতে পেরে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কতরকম ভাবে কথা বলতে চেয়েছিল সে, কিন্তু ইনশিতা পাত্তাই দিচ্ছিল না।

ঘরে ফিরেও হাজারো কথা বলেছিল জেহের। ইনশিতা নিজের মতোই চুপ করে ছিল। জেহেরের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিল না। রোজের এই ইগ্নোরেন্স সহ্য করতে পারছিল না জেহের। রোজ ইচ্ছে করে তাকে কোনোভাবে অবহেলা করুক এটা সে একদমই চায় না। তার দম আটকে যায় এতে। তাই পুরো রুম চুরমার করেছিল, ভেবেছিল হয়ত রোজ তাকে থামাবে আর সেই সুযোগে কথা বলতে পারবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। উল্টো ইনশিতা খাটে কান চেপে বসেছিল।

রুমে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ইনশিতা খাট থেকে নামতে পারছিল না। ঘরে পরার জুতাও এখন পায়ে নেই। তাই উপায় না পেয়ে খাটের মধ্যিখানে উঠে বসে থাকে। জেহের রাগে মাথার চুল টেনে ধরে এপাশ ওপাশ হাঁটতে থাকে। জুতো থাকায় কোনো সমস্যাও হয় না। নিজে নিজে একা কতক্ষণ বিড়বিড় করে হঠাৎ করে জুতো পায়ে খাটে উঠে বসে। ইনশিতার কোলে থাকা হাতজোড়া নিজের গালে চেপে ধরে জেহের। কাতরস্বরে বলে,

-“এই রোজ, প্লিজ একটু কথা বলো না আমার সাথে। একটু। এভাবে ইগ্নোর করো না প্লিজ। আমা-আমার খুব কষ্ট হয় রোজ। এই যে, এইখানটায়, খুব খুব কষ্ট হয়।”

জেহের ইনশিতার এক হাত নিজের বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরে। ইনশিতা এক পলক একটু দেখে জেহেরকে। তবে জেহেরের চোখে কাতরতা দেখতে পাচ্ছে না একদমই। যা দেখছে সব হিংস্রতা। দিনে দিনে জেহের আর আগের মতো কাতর হয় না। শুধু গম্ভীর আর হিংস্র হয়ে উঠছে। আর এখন কাতরতার ছাপ মিছিমিছি লেগে আছে মুখে। রাগ চেপে কাতর হবার ভণিতা করছে। আর এই রাগ নিয়েই যেন এখন ইনশিতার সাথে কথা বলাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য।

ইনশিতার দয়া হলো না। আজ তারও তো খুব কষ্ট হয়েছে, যখন জেহের ও’কে কলেজ যেতে দিচ্ছিল না। আর সেই কষ্টটাই এখন বুকে পাথরের মতো চেপে বসেছে। ইনশিতা হাত ছাড়িয়ে নিলো জেহের হাত থেকে। চোখমুখ কুঁচকে বিরক্তিকর আওয়াজ তুলল সে। যেন জেহেরকে একদম দেখতেই পারে না।

বেড সাইড টেবিল থেকে একটা গল্পের বই বের করে তাতে দৃষ্টি স্থির করল। বইকে প্রাধান্য দেয়াতে জেহের রেগেমেগে বইটা টান মেরে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলল। ছিঁড়েও ক্ষান্ত হলো না। প্রতিটা পেজ টুকরো টুকরো করে কেটে ছুঁড়ে ফেলল নিচে। ইনশিতার বাহু টেনে নিজের কাছে এনে কটমট করে বলল,

-“কোনোকিছুকে আমার থেকে বেশি প্রায়োরিটি দিলে এভাবেই শেষ করে দেব আমি। তোমার ধ্যানজ্ঞান আমাতেই আবদ্ধ রাখবে। আদারওয়াইজ, তছনছ করে ফেলব সব।”

ইনশিতা কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইনশিতার মুখ ফিরিয়ে নেয়াতে জেহেরের চোখ দপ করে জ্বলে উঠল। খাটের মধ্যেই হাত দিয়ে ঘুষি মারল কয়েকটা। চোখ বন্ধ করে কয়েকটা বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ইনশিতার দু’গাল দু’হাতে চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরাল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

-“আমার রাগের পরীক্ষা করবে না। কখন কী করে ফেলতে পারি ঠিক নেই। এখন যদি কথা না বলো তাহলে আমি…”

আর কিছু বলল না জেহের। দু’গালে চাপ দেয়ার কারণে ইনশিতার ঠোঁট বেরিয়েছিল। সেই ঠোঁটেই ডুবে জেহের। তবুও ইনশিতার সাড়া পেল না। কামড়ে দিতেই ইনশিতা ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে জেহেরকে ধাক্কা মারল। জেহের না সরে আরও শক্ত করে চেপে ধরল ইনশিতাকে। ইনশিতা ডুকরে কেঁদে উঠলে জেহের ছেড়ে দেয়। ঘাড় কাত করে বাঁকা হাসে। যেখানে হিংস্রতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ইনশিতাকে কর্মের শাস্তি দিতে পেরে যেন সে মহা আনন্দ পেয়েছে। ইনশিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,

-“সবসময় যে ভালোবাসা দেখিয়ে রাগ ভাঙাবো—এটা ভেবো না রোজ। মাঝেমাঝে রাগের পরিবর্তে রাগ দেখিয়েও রাগ ভাঙানো যায়। আর সেটাই আমি করব।”

বলে ইনশিতাকে খাটে দুহাতে ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়ে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট মুছে বাঁকা হেসে নীচে চলে যায়।

ইনশিতা ঠোঁটে হাত দিয়ে কাঁদতে বসে। জেহেরের হঠাৎ হঠাৎ হিংস্রতায় প্রচুর কষ্ট পায় ইনশিতা। আজকের এই ব্যবহারের পর অভিমানের পাল্লা আরও ভারী হয়ে গেল তার।

.

.

জিহাদকে জেহেরের রুমের দরজার কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জেবা। জিহাদের মনের অবস্থা যেমন ভালো নেই তেমন জেবারও। জিহাদ তার ভালোবাসাকে পায়নি। আর জেবা চাইলেও তার ভালোবাসাকে পেতে পারে। কিছুটা হলেও চান্স আছে জেবার। আর জিহাদ! জিরো পারসেন্ট চান্স নিয়েই থাকতে হবে তাকে। তার ভাই কি এভাবেই নিজের ভালোবাসাকে অন্যের সাথে দেখে থাকতে পারবে? তাও আবার একই ঘরে।

জেহেরকে রুম থেকে বের হতে দেখে জিহাদ সরে যায়। জেহেরকে দেখে জেবার মনে রাগের আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। এই একটা মানুষের কারণে তার জিহাদ ভাই আর তার ভালোবাসা কষ্ট পাচ্ছে। তবুও কিছুই করতে পারছে না সে। কিছু করতে গেলেই জেসমিন চৌধুরী এসে বাঁধা দেয়। কান্নাকাটি করে মিনতি করে, জেহেরের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। জেবা ভেবে পায় না, যেই ভাই তার মাকে এতটা অবহেলা করে, সেই ভাইয়ের জন্য মায়ের এত দরদ কেন? আশ্চর্য!

রাত আটটা। রুমের দরজা অজান্তেই খুলে গিয়েছিল জেহের। ইনশিতা নিজেই তখন রুমের সব সাফ করেছিল। জেহের এতক্ষণেও একবারের জন্যও ঘরে আসেনি। কোথায় গেছে কে জানে? তবে ইনশিতা মনে মনে প্রার্থনা করে জেহের যাতে আজ ঘরে না আসে। জেহের কাছে না থাকলেই তার শান্তি লাগে। আবার এই ভেবেও মন খারাপ লাগে যে, জেহের তো তার স্বামী। আর এ’কে নিয়েই তার পুরোটা জীবন কাটবে। তাহলে সে কেন মানিয়ে নিতে পারছে না? মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে কি? না’কি না? দোটানায় ভুগছে ইনশিতা।

রুমের দরজা খোলা রাখায় ইনশিতা বের হয়ে নিচে যায়। দেখে জেবা সোফায় বসে মোবাইল দেখছে। আফজাল চৌধুরী চোখে চশমা লাগিয়ে মনোযোগ সহকারে টিভিতে খবর দেখছেন। আর একটু পর সকলে ডিনার করতে আসবে। ইনশিতার খুব ইচ্ছা হলো সকলের সাথে একসাথে বসে ডিনার করবে। বাড়িতেও তো তার বাবা মা সহ একসাথে ডিনার করত। একা একা খেতে তার ভালো লাগে না।

সোফার সামনে গিয়ে হালকা কাশি দিলে আফজাল আর জেবা চোখ তুলে তাকায়। আফজাল চৌধুরী হালকা হেসে ইনশিতাকে পাশে বসতে বলে। জেবা তাকিয়ে আছে ইনশিতার মনমরা মুখের দিকে। তার কষ্ট হচ্ছে ইনশিতাকে এভাবে দেখতে।

আফজাল চৌধুরী খবর থেকে চোখ সরিয়ে ইনশিতার দিকে মনোযোগ দেন। মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো এখনো ভাবতে পারছেন না একমাত্র জেহেরের কারণে। জেহের এখানে ইনশিতাকে দেখলেই তো বিপদ। কারো সাথেই মেয়েটাকে মিশতে দিচ্ছে না সে। ফুলের মতো মেয়েটা দিন দিন নেতিয়ে যাচ্ছে।

ইনশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,

-“মা’রে। তোমাকে এ বাড়ির বৌ করে আনতে পেরেছি ঠিকই। কিন্তু মেয়ে এখনো বানাতে পারিনি রে মা। কারণটা তোমারও জানা। এজন্য আমাদের ক্ষমা করো।”

ইনশিতা নীচু স্বরে বলে,

-“এভাবে বলবেন না আঙ্কেল। এখানে তো আপনাদের কোনো দোষ নেই। আর আপনারা যদি মন থেকে আমাকে মেয়ে হিসেবে মানেন তাহলেই হলো। এর চেয়ে বেশী আর কি চাই?”

আফজাল চৌধুরী মুখ গোমড়া করে বলেন,

-“মেয়ে তো ভাবি-ই সবসময়। তবে মেয়ে যে তার বাবাকে আঙ্কেল বলে ডাকবে এটা ভাবতে পারিনি কখনো।”

ইনশিতা জিভ কেটে বলে,

-“সরি বাবা। তবে বাবা, আপনি আমাকে তুমি তুমি করে বলবেন না, পর পর লাগে। তুই করে বলিয়েন।”

আফজাল চৌধুরী ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে বলেন,

-“ঠিকাছে মা। তোর কথাই রাখলাম।”

জেবাও এবার যোগ দিলো আড্ডায়। কিছুক্ষন পর জেসমিন চৌধুরীও আসলো। ইনশিতাকে হাসিখুশি দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে গেল। কিছুটা হলেও তো মন খারাপ দুর হয়েছে মেয়েটার।

একটু পর হৈচৈ শুনে চলে আসল জিহাদ। ইনশিতাকে দেখে তার মনটা ধুকপুক করতে লাগল। মনটা নেচে উঠল আনন্দে। সে ইচ্ছা করেই এবার কাছে গিয়ে ইনশিতার সাথে কথা বলার চেষ্টা চালাল। ইনশিতার অস্বস্তি লাগছিল জিহাদের সাথে কথা বলতে। তবুও কাউকে বুঝতে দিলো না। জেবা দেখল জিহাদের শুকনো মুখে খুশির ঝিলিক দিচ্ছে। মনে মনে শান্তি পেল জেবা। সকলেই এবার আড্ডা দিলো, লুডু খেলল। ইনশিতার মনে দুঃখ যেন এক নিমিষে হারিয়ে গেল। হাসি ঠাট্টায় পার হলো এক ঘন্টা। এত সুন্দর একটা পরিবার থাকতে জেহের যে কেন একা থাকে?

জেসমিন চৌধুরী টেবিল সাজাচ্ছেন। ইনশিতা হেল্প করতে চাইলে তিনি বাঁধা দেন। বাপ বেটিরা মিলে আড্ডা দিক এখন। খাবার টেবিল সাজানো হলে সবাই এসে বসে। জেহেরের কথা মাথা থেকে পুরোই বেরিয়ে গিয়েছিল ইনশিতার। তবে জেসমিন চৌধুরী বারবার দরজায় ছেলের অপেক্ষা করছিলেন। এখনো আসছে না কেন ছেলেটা? সবার সাথে একসাথে খেলেও তো মনটা শান্তি লাগতো তার। ইনশিতা খেয়াল না করলেও আফজাল আর জেবা ঠিকই খেয়াল করল ছেলের জন্য অস্থির থাকা মা’কে।

খাওয়া প্রায় মধ্যিপথে। খাওয়ার টেবিলে পরিবার মিলে একসাথে না খেলে খাওয়ার মজা কেউই বুঝবে না। আফজাল চৌধুরী খাওয়ার মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর সকলে হেসে উঠছে। এতক্ষণে জিহাদের সাথে ইনশিতাও কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। হাসি ঠাট্টা ছাড়া জিহাদ একটাও বাড়তি কথা বলেনি যাতে ইনশিতার অস্বস্তি হবে।

ঠিক সেই মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠে। মেইড গিয়ে দরজা খুলে দিলে জেহের ভেতরে ঢুকে। ইনশিতাকে হঠাৎ খাওয়ার টেবিলে পেয়ে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। তাও আবার তাদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠছে যাদের সে দুচোখেও সহ্য করতে পারে না।

বড় বড় পা ফেলে সাপের মতো ফণা তুলে হেঁটে যায় জেহের খাওয়ার টেবিলের দিকে।

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here